এটাই এখন সময়ের দাবি
বাংলাদেশে ২০১৪ সালের নভেম্বরের ১ তারিখে দেশব্যাপী বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে সারা দেশ বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় ছিল প্রায় ১০ ঘণ্টা। দেশের সব ঘরবাড়ি, অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বিমানবন্দর, রেলওয়ে স্টেশন বিদ্যুৎবিহীন হওয়ায় উৎপাদন ও সেবাখাত বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাখ্যা দেয়া হলেও এর কোন সঠিক কারণ আজও পর্যন্ত অজানা। গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা লুট হয়ে ফিলিপাইনে অবস্থিত ক্যাসিনোর জুয়ার বোর্ডে চলে গিয়েছে। এর কয়েক দিন পরই বেসরকারি কিছু ব্যাংকের ইন্টারনেট ব্যাংকিং সিস্টেমে আক্রমণের খবর পাওয়া যায়। সর্বশেষ বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানির (বিটিসিএল) সার্ভারে বাংলাদেশের জন্য গুগলের সাইট তথা গুগলডটকমডটবিডির (google.com.bd) ইন্টারনেট ঠিকানা পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে। তবে শুধু গুগলডটকমডটবিডি নয়, আরও কয়েকটি সার্ভারের ইন্টারনেট ঠিকানাও পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছিল। সামগ্রিক উপাত্ত বিশ্লেষনে অনুমিত হয়, তথ্য বিপ্লবের এই যুগে পৃথিবীর বহু দেশের ন্যায় বর্তমানে বাংলাদেশেও সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা হুমকির সম্মুখীন। বিগত কয়েক মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য সাইবার হামলা গুলোর পরিপ্রেক্ষিতে দেশের ‘কি পয়েন্ট ইনস্টলেশনের’ (কেপিআই) বা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন এটা সহজেই অনুমেয়। দেশে আমাদের রয়েছে দুটি ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র, রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনীর ডিজিটাল নেটওয়ার্ক। রয়েছে সামরিক ও বেসামরিক বিমান ও নৌ চলাচল ব্যবস্থা। রয়েছে মোবাইল নেটওয়ার্ক। রয়েছে টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশনের নিজস্ব নেটওয়ার্ক। রয়েছে বন্দর ব্যবস্থাপনা, রয়েছে বিভিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ কেন্দ্র। এ বছরই আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট উদ্বোধন করা হবে। তাই এখনই প্রশ্ন উঠেছে - তখন এই সব কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে? আর এদের নিরাপত্তা কিভাবে নিশ্চিত করা হবে? এখন থেকেই সম্ভাব্য দুর্ঘটনাগুলো চিহ্নিত করতে হবে, আপৎকালীন সময়ে করণীয়গুলো কি কি? কখনো কোন দুর্ঘটনা ঘটলে কার কি দায়িত্ব, সেগুলো এখনই ঠিক করে ফেলতে হবে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বর্তমানে রাষ্ট্রের আচরণ ও চেহারায় প্রতিনিয়ত পরিবর্তন ঘটছে। তাই এই পোস্ট কোল্ড ওয়ার বা স্নায়ু যুদ্ধোত্তর সময়কালের ভূ-রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, শুধু বাস্তব দুনিয়া মানে রিয়েল ওয়ার্ল্ডেই নয় সাইবার ওয়ার্ল্ডেও নানা ধরণের নিরাপত্তা হুমকি ক্রমশ দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। কিছু রাষ্ট্র তাদের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতাকে পুঁজি করে প্রতিনিয়ত অন্য রাষ্ট্রের গোপন তথ্য চুরি করছে। তারা শুধু সেটা করেই ক্ষান্ত থাকছে না; সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করে আক্রমণ করছে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো, সামাজিক, অর্থনৈতিক এমনকি রাজনৈতিক ব্যবস্থায়। এর থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় দুর্ভেদ্য সাইবার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা। তাই রাষ্ট্রকে এখন নিজস্ব স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আর্থ-সামাজিক অবকাঠামোর নিরাপত্তা রক্ষায় প্রচলিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার (সশস্ত্র বাহিনী) আধুনিকায়নের পাশাপাশি দুর্ভেদ্য করে গড়ে তুলতে হবে রাষ্ট্রের সাইবার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকেও। বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার ইতোমধ্যে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নে সময়োপযোগী উদ্যোগ গ্রহণের ধারাবাহিকতায় লক্ষ্যনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। দেশের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার অনতিবিলম্বে কার্যকর সাইবার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলাড় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে – এটাই এখন সময়ের দাবি।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
দীপঙ্কর বেরা ১৫/০১/২০১৭ভাল লাগল
-
মোহাম্মদ ১১/০১/২০১৭সময়উপোযোগী!
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ১১/০১/২০১৭সবকিছু দেশের মঙ্গলের কথা ভেবে করতে হবে।