জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সরকারের সাহসী পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যত কর্মকৌশল
একজন মানুষ কীভাবে জঙ্গীতে পরিণত হচ্ছে তার ভেতরের বিষয়টি নিয়ে আমরা খুব একটা ভাবছি না। মানুষ থেকে জঙ্গীতে রূপান্তরের জন্য আমাদের ডারউইনের বিবর্তনবাদের মতো জটিল বিষয় বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন প্রকৃত বাস্তবতাকে উপলব্ধি করা। সম্প্রতি জঙ্গীবাদের ঘটনাগুলো মানুষকে আতঙ্কিত করেনি বরং মানুষের মধ্যে এর বিরুদ্ধে এক ধরনের সচেতনতা ও প্রতিরোধের মনোভাব গড়ে তুলেছে। এটি আমাদের জন্য নিশ্চয়ই আনন্দের। বিশ্বের কিছু দেশ বাংলাদেশের জঙ্গীবাদ নিয়ে তোলপাড় করলেও তারা তাদের দেশে জঙ্গীবাদকে নির্মূল করতে তো পারেইনি বরং এর উল্টো চিত্রটি চোখে পড়ছে। তাদের আক্রমণগুলো তারা আইএসের হামলা না বলে অন্যভাবে বলার চেষ্টা করছে কিন্তু আমাদের দেশে আইএসের কোন অস্তিত্ব না থাকলেও তা প্রমাণ করার চেষ্টায় দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। এখানে আমাদের ভাবনার জগতটাকে আমরা প্রসারিত করতে পারছি না। মানুষের ভাবনা যখন বাস্তবতাকে বিবেকের আয়নায় দেখতে পায়, তখন জঙ্গীবাদের শিকড় ওদের থাকে না। বিভিন্নভাবে আমরা জঙ্গী দমনের কথা বলে থাকি কিন্তু তরুণদের ভাবনার দিগন্ত উন্মোচনের কথা ভাবি না। যদি ভাবতে পারতাম তবে কখনও একজন তরুণ জঙ্গীবাদের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করত না। আমাদের দেশে জঙ্গীবাদের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে যাদের পরিচয় পাচ্ছি তারা কানাডা, মালয়েশিয়া, আমেরিকা অথবা ইংল্যান্ড ফেরত অথবা সেই দেশগুলোতে বসে বাংলাদেশে কীভাবে জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটানো যায় তার নীলনক্সা আঁকছে। সুদূর প্রবাসে ধর্মান্ধ ও জঙ্গীগোষ্ঠী সেই মেধাবী ছাত্রটির একাকিত্বের সুযোগ গ্রহণ করছে। তারা প্রথমে তার সঙ্গে বিভিন্নভাবে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার কৌশল অবলম্বন করছে। তার অভাব অনটনগুলো পূরণ করছে। এভাবে তরুণ মেধাবী ছাত্রটির মন জয়ের চেষ্টা করছে ও তাদের ভ্রান্তমতাদর্শে তাকে আকৃষ্ট করছে। এরপর সেই ছেলেটি যখন উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশে ফিরে আসছে তখন তার ব্যক্তিত্বের প্রকৃত বিকাশ না ঘটে সংকীর্ণ ও উগ্র মনোবৃত্তির লক্ষণগুলো প্রকট হয়ে উঠছে। একসময় সে যেভাবে জঙ্গীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল একইভাবে সে তার ছাত্রদের জঙ্গীবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে যারা দেশ থেকে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে তাদের প্রকৃত সংখ্যা এবং বিদেশে তাদের চলাফেরা ও অন্যান্য কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে না। ইদানীং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ইমো, স্ক্যাইপি ইত্যাদি মাধ্যম ব্যবহার করে জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটানোর প্রচেষ্টা চলছে। বাংলাদেশ থেকে যারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশে মাইগ্রেশনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব অর্জন করেছে তাদের মাধ্যমেও অপপ্রচারের ব্যাপারটি ঘটছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে চাকরি নিয়ে যারা অবস্থান করছে তাদের ক্ষেত্রেও এ বিষয়টি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ পর্যায়ে সরকারের এর বিরুদ্ধে সাহসী পদক্ষেপ ও কর্মকৌশল গ্রহণের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের যে দূতাবাসগুলো রয়েছে তারা তাদের জনবল বাড়িয়ে সেখানে অবস্থানরত সকল বাংলাদেশীকে পর্যবেক্ষণের মধ্যে আনতে পারে। তবে জঙ্গীবাদ বিস্তারে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশের সকল নাগরিককে ঢালাওভাবে দোষারোপ করা উচিত হবে না। অনেক বাংলাদেশী বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি বাড়ানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। এছাড়া আমাদের অর্থনীতিতে বিদেশ থেকে বাংলাদেশের নাগরিকদের পাঠানো রেমিটেন্সের অর্থ আমাদের অর্থনীতির ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। শুধু দরকার বিদেশে অবস্থানরত সকল নাগরিকের প্রতি নজরদারি বাড়ানো ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
বাবুল বাদশা ০২/১২/২০১৬খুব সুন্দর
-
আব্দুল হক ০২/১২/২০১৬very nice
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ০২/১২/২০১৬পশুগুলো জঙ্গি হবেই।