বাংলাদেশের চীন
মোটরগাড়ি কিংবা কলকারখানার প্রকৌশল যন্ত্রপাতি বদলানোর কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশের জোগান দিয়ে উৎপাদনমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে সচল রাখার ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন রাজধানীর ধোলাইখাল এলাকার ব্যবসায়ীরা। ফেলে দেয়া যন্ত্রপাতি থেকে ভালো অংশগুলো সংগ্রহ করে সেগুলোকেই আবার ব্যবহার উপযোগী করে তুলছেন ধোলাইখালের মেরামত শিল্পীরা। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা আর সামান্য কিছু টাকা পুঁজি করে জীবিকার প্রয়োজনে বিশাল এ যন্ত্রাংশের ভাণ্ডার গড়ে তুলেছেন এখানকার অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত কারিগররা। পুরান ঢাকার ধোলাইখালের গাড়ি মেরামতের মার্কেটটি এখন গাড়ি ব্যবহারকারীদের শেষ ভরসাস্থল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। দুষ্প্রাপ্য গাড়ির যন্ত্রাংশ কেনা ও গাড়ির জটিল সমস্যা সমাধানে সবাই ছুটে যান ধোলাইখালে। পরিবহন খাতের নির্ভরতার পুরনো ও রিকন্ডিশন্ড যানবাহনের অনেক যন্ত্রাংশই নতুন পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। এখানে সবই পাওয়া যায়। ধোলাইখাল মাকেটের এই খ্যাতি গড়ে উঠেছে ১৯৬৮ সাল থেকে। মার্কেটটি এখন পরিণত হয়েছে দেশের মোটরগাড়ির প্রধান মেরামত কেন্দ্রে। সেখানে রয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় ওয়ার্কশপ। যেগুলো বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রাংশ উৎপাদন ও মেরামত করছে প্রতিনিয়ত। বিশ্বব্যাপী চীনের কদর প্রযুক্তি ব্যবহার করে অভিনব সব যন্ত্রাংশ উদ্ভবনের জন্য। তেমনি যে কোনো ধরনের যন্ত্রাংশ ঠিক করতে কিংবা তৈরি করতে ধোলাইখালের জুড়ি নেই। অনেকে পুরান ঢাকার ধোলাইখালকে বলেন বাংলাদেশের চীন। ধোলাইখালের ব্যবসায়ীদের দাবি এখানে শতভাগ যন্ত্রাংশ মেরামত করা সম্ভব। কিছু কিছু যন্ত্রাংশ নিজেরাই তৈরি করে এখানকার দক্ষ কারিগররা। তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা নেই, ছোটবেলা থেকেই কাজ করতে করতে রপ্ত করেছেন অসাধারণ দক্ষতা। শুধু গাড়ির ইঞ্জিন মেরামতই নয়, ধোলাইখালের দক্ষ কারিগররা জাহাজ, পাওয়ার প্লান্ট, জেনারেটরসহ ইঞ্জিনচালিত সব ধরনের যন্ত্রের সমস্যা সমাধান করতে পারেন। এখানকার শীর্ষস্থানীয় ওয়ার্কশপগুলোর একটি এমএন ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ। এখানে জাহাজ, বৈদ্যুতিক পাওয়ার প্লান্টসহ বড় ধরনের যন্ত্রাংশের মেরামত করা হয়। ধোলাইখালের তৈরি হালকা প্রকৌশল শিল্পের কিছু পণ্য বিদেশে রফতানির সুযোগ হয়েছিল। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে সুযোগটি হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। দেশীয় বাজারে ধোলাইখাল মার্কেট সুনাম অর্জন করলেও ব্যবসায়ীরা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাইরেও তাদের পণ্য রফতানি করতে চান। সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হলে ভবিষ্যতে ধোলাই খাল বাংলাদেশের চীনে রুপান্তর সম্ভব।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
বাবুল বাদশা ০২/১২/২০১৬Very nice
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ২৯/১১/২০১৬দেখেশুনে মনে হলো ধোলাইখালের ভবিষ্যৎ ভালো।