বিনোদনের মাঝে শিক্ষা
বর্তমানে শিশুদের শিক্ষাজীবন পাঠ বইয়ের বোঝায় ভারাক্রান্ত, অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উন্মুক্ত স্থানের স্বল্পতায় শিশুরা বহিরাংগনে ছুটোছুটির আনন্দ থেকেও বঞ্চিত। গতানুগতিকতায় আবদ্ধ জীবনে শিশুরা যেন প্রতিনিয়ত হাঁপিয়ে উঠছে। ঢাকা শহরের নাগরিক যান্ত্রিকতায় মুসড়ে পড়া শিশুদের জন্য একমুঠো আনন্দের পসরা সাজিয়ে বসে আছে বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার। এখানে শিশুরা নির্মল আনন্দের মাঝে শিখতে পারে বিজ্ঞানের নানা বিষয়াবলী, আবার সুযোগ আছে নিরবিচ্ছিন্ন বিনোদনেরও – এ যেন শিশুদের জন্য এক কল্পরাজ্য। এখানে ক্যাপসুল রাইট সিমুলেটর চড়ে যাওয়া যায় প্রাচীন পিরামিডের মধ্যে। ডিজিটাল ও সায়েন্টিফিক গ্যালারিতে নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ সূত্রের প্রদর্শনীতে কিভাবে আপেলটি মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বলে ভূমিতে আসে দেখে শিশুরা পেতে পারে আধুনিক রোলার কোস্টারে চড়ে আনন্দ উল্লাসের শিহরণ। নিজের ছবিকে যে কোন প্রাণীর ছবিতে পরিণত করে আনন্দে ভাসতে পারবে সবাই মিলে। মোশন ম্যাজিক মিররে নিজের প্রতিবিম্বের নানারূপ তাদেরকে পুলকিত করবে। শুধু কি তাই, ফাইভ-ডি মুভি দর্শনে নিজের পাশে ‘হররের’ জীবন্ত অস্তিত্ব তাদের শিহরিত করবে। নক্ষত্রশালার গম্বুজে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পৃথিবী এবং নীল আকাশকে। সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে নির্মিত এখানকার থিয়েটারে তারা ত্রিমাত্রিক পরিবেশে মহাশূন্যে হারিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন গ্রহে যাওয়ার অনুভূতি অর্জন করবে। থিয়েটারের বাঁকানো ছাদে আকাশ এবং গ্রহ নক্ষত্রকে ঘূর্ণয়মান অবস্থায় দেখানো হয় ১২০ ডিগ্রি কোণে একটি বড় পর্দায় প্রতিফলিত করে। মহাকাশের নক্ষত্ররাজির আদ্যপান্তের খোঁজের পাশাপাশি পেয়ে যাবে মহাকাশে ভ্রমণের অনুভূতি। সমাজ থেকে কুসংস্কার এবং অন্ধবিশ্বাস দূর করে মানুষের মনে ইতিবাচক বৈজ্ঞানিক ধ্যান-ধারণা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ২০০৪সালে বিজ্ঞান ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় প্রায় ২২০৯৬ বর্গমিটার জায়গার উপর প্রতিষ্ঠা করেছে একটি অনানুষ্ঠানিক বিজ্ঞান শিক্ষা কেন্দ্র- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নভোথিয়েটার। বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ১২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এই নভোথিয়েটারটি নির্মিত হয়েছে, এর জন্য জাপান, আমেরিকা, কোরিয়া, ফ্রান্স, ইতালি এবং ভারত থেকে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়। এই নভোথিয়েটারে রয়েছে নক্ষত্রশালার প্রদর্শনী, আকর্ষণীয় সিমুলেটর রাইড, ৫ডি মুভি থিয়েটার, ৫ডি ইণ্টেরিয়েকটিভ এডুটেইনমেণ্ট সিমুলেটর, গ্রহ এবং সৌরজগতের প্রতিরূপ। বিজ্ঞানভিত্তিক ডিজিটাল এক্সিবিটস গ্যালারিতে নতুনভাবে সংযুক্ত হয়েছে ৩০টি প্রদর্শনী। এই প্রদর্শনীতে আছে পদার্থ বিদ্যার সূত্রের পর্যবেক্ষণ, টাচ মিতে আলোর প্রতিবিম্বের মাধ্যমে ডায়নোসরের ছবি দেখা, দেখা যাবে নিজের ইচ্ছেমতো প্রাণী তৈরি করে নিজের অনুগত করার খেলা, বিভিন্ন গ্রহে আপনার ওজন কত তা জানা, মনিটরের মাধমে পিয়ানো বাজানো, টর্নেডো সিস্টেম দেখা, ডিজিটাল গেমসহ নানা প্রদর্শনী। ৫ডি মুভি থিয়েটার প্রদর্শিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপর ৩০ মিনিটের ডিজিটাল ফিল্ম, ডাউন অব দ্যা স্পেস এজ, মিশন টু ব্ল্যাক হোল, জার্নি টু দ্যা ষ্টার্স, গুডনাইট গলডিলকম, সিমফোনি অব দ্যা ষ্টারি স্কাই ও জার্নি টু দ্যা ষ্টার্স। নভোথিয়েটারে টিকিটের মূল্য - প্লানেট শো’এর জন্য ১০০টাকা, ডিজিটাল এক্সিবিটস এর জন্য ৫০ টাকা, ৫ডি মুভি থিয়েটার এর জন্য ৫০ টাকা এবং সিমুলেটর রাইড এর জন্য ৫০টাকা। সাপ্তাহিক ছুটি বুধবার। এছাড়া শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এবং অন্যদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত খোলা। বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষা এবং ভবিষ্যতের বিজ্ঞানমনষ্ক জাতি গঠনে বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারের মতো উদ্যোগ দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া হবে এটাই সকলের প্রত্যাশা।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সুরজিৎ দাস ০৭/১১/২০১৬বাহঃ পশ্চিমবঙ্গে বসে ঢাকার নভোথিয়েটার সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পারলাম। ভারত এর ভূমিকা শুনেও ভালো লাগলো
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ০৭/১১/২০১৬ভালো লিখেছেন।