একজন ‘কল্যাণী’র উপাখ্যান
ছয় বছর আগেও রংপুরের পীরগাছা উপজেলার জরাজীর্ণ ভবনের কল্যাণী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ছিল আবর্জনার স্তূপ। জোড়াতালি দিয়ে চলা বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীরাও নিয়মিত আসত না। কিন্তু এক কল্যাণীর মমতার স্পর্শে এখন বদলে যেছে সেই চিত্র। গড়ে উঠেছে দুটি পাকা ভবন, স্কুলের বারান্দায় হরেক রকম ফুলগাছের টব, সাজানো-গোছানো শ্রেণিকক্ষগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে নান্দনিকতার দ্যুতি। শিক্ষার্থীদের ফলাফলেও ঈষর্ণীয় সাফল্য, গত ছয় বছরে চারবার উপজেলায় ‘শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। যাঁর কল্যাণে কল্যাণী নামের এই বিদ্যালয়টির পরিবর্তন, তিনি হলেন প্রধান শিক্ষক সুফিয়া বেগম। শিশুদের পাঠদানের নিজস্ব কৌশল, কর্তব্যনিষ্ঠা ও একাগ্রতার জন্য তিনি এবার রংপুর বিভাগের ‘শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক’ নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত কল্যাণী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০০৯ সালে সুফিয়া বেগম যখন প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন, তখন স্কুলটির ঐতিহ্য অনেকটাই বিলীন, রীতিমতো ভগ্নদশা। তখন আধা পাকা জরাজীর্ণ তিনটি ঘর, মাঠে নোংরা-আবর্জনার দুর্গন্ধ আর টিনের চালের ফুটো দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়া স্কুলটিতে কাগজে-কলমে শিক্ষার্থী থাকলেও তারা নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসত না। বিদ্যালয়ে পড়ালেখার পরিবেশ ফিরিয়ে আনাকে নিজের ধ্যানজ্ঞান করে তিনি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের নিয়ে পরিষ্কার করেছেন বিদ্যালয়ের মাঠ। এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেয়া আর বেঞ্চ, চেয়ার ও টেবিল তৈরি করে নিশ্চিত করেছেন শিক্ষা সহায়ক পরিবেশ। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মা ও অভিভাবক সমাবেশের মাধ্যমে প্রাপ্ত পরামর্শের বাস্তবায়ন করে বাড়িয়েছেন শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার। ইতিবাচক এই পরিবর্তনে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফলও ভালো হতে থাকে। গত তিন বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় এই স্কুলের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। বিদ্যালয়ের সামনে এখন সবুজ খেলার মাঠ, মাঠের চারদিকে গাছ। প্রতিটি শ্রেণি কক্ষ সুসজ্জিত, শিশু শ্রেণির কক্ষটি যেন খেলাঘর। অভিভাবক ও শিক্ষকদের সচেতনতার জন্য শিশুরা কিভাবে বেড়ে উঠলে ভালো কিছু শিখবে তার গাইডলাইন সাঁটানো আছে স্কুলের দেয়ালে। সংগীত চর্চার জন্য আছে নানা রকম বাদ্যযন্ত্র ঢোল-তবলা, হারমোনিয়াম ইত্যাদি। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে রয়েছে শিক্ষার্থীদের আঁকা ছবি। পেশার প্রতি নিবেদিত প্রাণ, আন্তরিকতা আর নিষ্ঠার সাথে নিজের দায়িত্ব পালনে যত্নবান সুফিয়া বেগমের মত হাজারও কল্যাণীর মমতার স্পর্শে বদলে যাবে এ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা – পরম মমতা আর যত্নে দেশের প্রতিটি শিশু গড়ে উঠবে আগামীর সুনাগরিক হয়ে এটাই সকলের প্রত্যাশা।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মলয় ঘটক ২৩/১০/২০১৬Lekhati valoi laglo
-
ডঃ সুজিতকুমার বিশ্বাস ২১/১০/২০১৬বা! খুব সুন্দর লিখেছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপর আমার লেখা একটি বই কলকাতার দীপ প্রকাশন গত বছর প্রকাশ করেছিল। বইটির নাম " নির্মল বিদ্যালয়ের রুপরেখা"। আপনার লেখার প্রতি আমার আগ্রহ বেড়ে গেল।