ওষুধ শিল্পে নতুন দিগন্ত সূচনার সম্ভাবনা
বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় খাত হলো ঔষধ শিল্প। বর্তমানে প্রায় ৩০০টি ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বর্তমান বাজার সাইজ প্রতিবছর প্রায় ৩০,০০০ মিলিয়ন টাকা। বর্তমানে মাত্র ৩% ঔষধ আমদানি করতে হয় আর ৯৭% দেশীয় চাহিদা অভ্যন্তরীণ উৎপাদন থেকেই মেটাতে হচ্ছে। বিশ্বের ৯৭টি দেশে বাংলাদেশের প্রস্তুতকৃত ঔষধ রফতানি হয়। বর্তমানে প্রায় ৫, ৫০০ কোটি টাকার ঔষধ দেশে তৈরি হচ্ছে। 'কার্ভিডিলোল'_মরণব্যাধি হৃদরোগ প্রতিরোধী এই ওষুধটি স্বপ্ন পূরণের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে দিল বাংলাদেশকে। ওষুধ তৈরির কাঁচামাল রফতানির মাধ্যমে প্রায় দুই যুগ আগে স্বপ্নযাত্রার শুরু এ শিল্প খাতে। এক সময় বাংলাদেশ ছিল ওষুধ আমদানি নির্ভর দেশ। সে অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটেছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশের বাজারে যাচ্ছে এ দেশের ওষুধ। ১৯৯২ সালে ইরান, হংকং, ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ কোরিয়ায় পেনিসিলিন তৈরির কাঁচামাল রফতানি করে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। পরবর্তী বছরে প্যারাসিটামল গ্রুপের নাপাসহ ১৮ আইটেমের ওষুধ রাশিয়ার বাজারে রফতানি করে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর থেকে প্রতি বছরই রফতানির তালিকায় যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশের নতুন নতুন কোম্পানির ওষুধ। তবে চলতি মাসে এ শিল্পে আবারও স্বপ্ন পূরণের মাইলফলক স্পর্শ করল বাংলাদেশ_ 'কার্ভিডিলোল' সেই গৌরব নিয়ে এলো এ দেশের জন্য। এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও পাওয়া যাবে 'মেড ইন বাংলাদেশে'র এ ওষুধ। বাংলাদেশের আরও কয়েকটি কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ওষুধ রফতানির পর্যায়ে রয়েছে। শিগগিরই বেক্সিমকোর পাশাপাশি অন্য কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে ওষুধ রফতানিতে শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলবে।' গত অর্থবছর দেশে মোট রফতানি আয় হয়েছে তিন হাজার ৪২৪ কোটি ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী, যা দুই লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ওষুধ শিল্প খাতে আয় আট কোটি ২১ লাখ ডলার বা ৬৫০ কোটি টাকা। বাংলাদেশে জেনেরিক ওষুধের বিরাট বাজার রয়েছে এবং দেশিয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে স্কয়ার ও বেক্সিমকো বহির্বিশ্বে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছে। এত উৎপাদন ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও খুব কম সংখ্যক কোম্পানির ঔষধ সম্পর্কিত গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ রয়েছে। সমগ্র বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৪৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ভেষজ উদ্ভিদের চাহিদা রয়েছে। সুতরাং এলোপ্যাথিক ঔষধের পাশাপাশি ভেষজ ঔষধ তৈরি করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে আগামী দশ বছরে বর্তমানের ৩৩০০ কোটি ডলারের রপ্তানি রাজস্বকে ৭৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত করার পথে ঔষধ শিল্পের রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রাণীদের ওষুধও বাংলাদেশে উৎপাদন সম্ভব। যা বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পে জীব প্রযুক্তিবিদদের পদচারণা ওষুধ শিল্পের উন্নয়নে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করবে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
পরশ ১২/০৮/২০১৬আপু আপনাকে ধন্যবাদ
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ১০/০৮/২০১৬এটি জাতির জন্য শুভসংবাদ।
-
স্বপ্নময় স্বপন ১০/০৮/২০১৬বেশ তথ্যবহুল লেখা। অনেক ভালো লাগলো!