মিথ্যা বলেছিলাম অনেক কেঁদে ছিলাম
গল্পঃ মিথ্যা বলেছিলাম, অনেক কেঁদে ছিলাম
লেখকঃ মোমিনুল হক আরাফাত
জয় ঘুম থেকে উঠে তাড়া-হুড়া করে বাইক নিয়ে আদির বাড়ির সামনে এসে উপস্থিত। কিন্তু আজ আদি এখনো রেড়ি হয় নি। জয় বাইকের উপর বসে রইল। কারণ বাড়িতে জয়ের যাওয়াটা নিষেধ আছে।
আপনারা নিশ্চয় ভাবছেন জয় এতো তাড়া-হুড়া করে কোথায় যাচ্ছে?
আরে না, বেশি দূর না, অল্প দূরে একটি প্রশিড়্গণ কেন্দ্র আছে। যেখানে শিখানে হয় কীভাবে বড় মাপের মানুষ হওয়া যায়। ওখানে জয়ের মতো কিছু ছেলে-মেয়ে যায়, তবে বড় মাপের মানুষ হতে নয়, শুধু মাত্র সময় পার করতে। আর যেখান জয় আছে সেখানে তো মেয়েদের জন্য বিশেষ সুবিধা নিশ্চয় থাকবে। ছেলেদের সময় যেমন যাক, মেয়েরা কিন্তু খুব আরামে কাটায় দিন ওখানে।
আদি এসে উপস্থিত, জয় তাকে লড়্গ্য করে বলল, “কিরে শালা এতো দেরি করলি কেনো? বড় মাপের মানুষ হওয়য়ার কোর্সে দেরি হয়ে যাবে তো?
আদিঃ তুই কি বড় মাফের মানুষ হতে যাবি? নাকি কাউকে মেরে ছোট করে দিতে যাবি? (কথাটা এই কারণে বলছিল-জয় বাড়ি থেকে বের হয়ে, কখনো খালি হাতে ফিরে নাই। মানে হচ্ছে দু এক জনের সাথে মার-মারি না করলে তার সময়টা ঠিক মতো কাটে না।)
জয়ঃ আরে আমি কি কারো সাথে নিজ থেকে ঝগড়া করি, কেউ যদি ব্যতিক্রম করে তখন তো দু একটা দিতে হবে, শৃঙ্খলা বলে তো কিছু একটা আছে, মান বা না মান। এইটা তো অস্বীকার করতে পারবি না। এই শহরের ছেলেদেরে শৃঙ্খলা বলতে কিছু নাই। আদব-কায়দা যা আছে, সব মেয়েদের দিয়ে ছেলেরা একেবারে দেওলিয়া হয়ে গেল। কি মারাত্নকরে বাবা!
আদিঃ দোসত্ম, তুই একা যা, আমার অন্য একটা কাজ আছে।
জয় ঃ বাইক থেকে নেমে বলল, কি হলো? এত পরিবর্তন রাতের মধ্যে। ঘুমে দুর স্বপ্ন দেখছিস নাকি? দেখ আমি থাকতে তোর কোনো ড়্গতি হবে না। আর তুই কি বড় মাপের মানুষ হওয়ার কথা ভুলে গেলি। এসব ভুললে চলবে না। মানুষ হওয়াটা প্রথম শর্ত!
আদিঃ তা না, অন্য একটা কাজ..
জয়ঃ এই মুহূর্তে দেখতে পেল বাড়ির সামনে একটি বাইক। অবশ্য এইটা মেয়েদের। জয় বলল, বুঝলাম শালা তোর সমস্যা এখানে। তোর বাবা তোর জন্য বাইক কিনছে, তাই আমার পিছনে বসতে পারবি না।হুম দেখি-দেখি-কথা বলতে-বলতে জয় বাইকের কাছে চলে গেল।
জয়ঃ বাইকে একটি লাতি মেরে বলল, এইটা তোকে মানাই না। তুই আমার পিছনে বস।
আদিঃ আরে কি করতেছিস?
জয়ঃ লাতি মেরে দেখতেছি, দেখতে তো পারছিস। আবার জিজ্ঞাস করার কি দরকার?
আদি জয়কে টেনেনিয়ে গিয়ে বলল, দোসত্ম এই ভুল করিস না। এইটা আমার না, এইটা হচ্ছে তুরিনের সে দেখলে। একেবারে জীবিত কবর দিয়ে দিবে।
জয় এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল, কই সে? ডাক্তার বলেছিল, কোনো তরম্ননী যখন আমায় ছুয়ে যাবে তখন আমি খুব লড়্গ্নী হয়ে যাবে। কথা শেষ না হতে শব্দ এলো “আদি চলো-চলো, ক্লাসে দেরি হয়ে যাবে।” আদি ও আর দেরি না করে শানত্ম ছেলেটির মতো বাইকে গিয়ে তুরিনের পিছে বসে পড়ল আর জয়কে লড়্গ্য করে বলল, জয় তুইও ও চলে আয়। না হয় ক্লাসে দেরি হয়ে যাবে।
জয়ঃ রাসত্মার পাশের হকারের দোকানে এসে এককাপ চা নিল। আর দু এক টান সিগেরেট খেল। ইতিমধ্যে অনিক দৌঁড়ে এসে বলল, জয় একটি বিপদ হয়ে গেল..
জয়ঃ কী হলো? তোর কোন প্রেমিকার ভাই তোকে দৌঁড়াচ্ছে বল। শালাকে মেরে প্রমাণ করে দি আমার বন্ধুর ভালোবাসা কত খাঁটি।
অনিকঃ দোসত্ম সব সময় মজা করিস কেনো?
জয়ঃ মজার কি আছে? এইটা তো নিত্য দিনের সমস্যা। তোকে শালা বাবুরা দৌঁড়াবে আর আমাকে গিয়ে সমাধান দিতে হবে।
অনিকঃ আজ তা না-দাদা এঙিডেন্ট করছে। জরম্নরী রক্তের প্রয়োজন, আমার আর দাদার রক্তের গ্রম্নপ এক। এখন আমি যদি সময় মতো পৌছাতে না পারি ভাই ওপাড়ে যাবে আর ভাবি বিধবা হবে।
জয়ঃ চল আর দেরি করা ঠিক হবে না।
অনিকঃ সমস্যা হচ্ছে, তোকে ওখানে যাওয়া নিষেধ আছে, তোকে দেখলে দাদা এমনিতেই ষ্ট্রোক করে মারা যাবে। তোর মতো বড় মাপের মানুষদের দেখলে দাদার তো এমনি বস্নাড পেশার বেড়ে যায়। নিজেকে বেশি ছালাক ভাবিস না, দাদা কিন্তু এমনিতেই সব জেনে গেছে ওখানে কীসের প্রশিড়্গণ দেওয়া হয়।
তারপর অনিক বাইক নিয়ে রওনা হলো।
জয় প্রশিড়্গণ কেন্দ্রে এসে উপস্থিত। তার পর শানত্ম ছেলের মতো ক্লাসের পিছনে গিয়ে জেসির পাশে গিয়ে বসল। আর যাই হোক না কেনো, ক্লাসের সব মেয়েরা কিন্তু জয়ের পাশে বসতে ভালোবাসে।
এদিকে ক্লাস চলতেছে আর ওদিকে জয় তার ক্লাস চালাচ্ছে। মানে কিছুড়্গণ জেসির হাতে হাত রাখতেছে। জেসি যদি বিরক্ত বোদ করে হাতটা সারিয়ে দে তানির দিকে। না হয় অন্য কারো দিকে।
এসব কিছু অনেকড়্গণ ধরে দেখে যাচ্ছে তুরিন। আর সে রাগে একেবারে গলে গিয়ে এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করেতে চাচ্ছে। তবে আদি বার-বার বাঁধা দিচ্ছে।
জয়ও বুঝতে পারল তার কর্ম কান্ডে তুরিন বিরক্ত। তা অবশ্য হওয়ার কথা কারণ তুরিন আজ প্রথম ক্লাসে আসল। এখনো জয়ের সম্পর্কে তার ধারণা খুবই কম।
তুরিনের বিবরণটা একটু দি। সে একটি গেঞ্জি ও জিন্সের প্যান পড়াছিল। আর ক্লাসের প্রথম বেঞ্চে আদির পাশে বসল। আর মাঝে মধ্যে পিছনে তাকিয়ে জয়ের অসভ্য কান্ড লড়্গ্য করে।
ইতিমধ্যে জয় তার পা দুটা জেসির কোলে তুলে দিয়ে আরামে মোবাইলে গেইম খেলতেছে। এই দৃশ্য তুরিন দেখতে পেয়ে আর সহ্য করতে পারল না। সে জয়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছে প্রতিবাদ করার জন্য। সে মুহূর্তে জয়ের মোবাইলে একটি কল আসল, অল্পড়্গণ কথা বলার পর তাড়া-হুড়া করে জেসির কোল থেকে পা দুটি নামিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে ঠিক দু বেঞ্চের মাঝ দিয়ে জয় যাচ্ছে আর তুরিন আসতেছে জয়কে একটি থাপ্পর দেওয়ার জন্য।
দুজনেই খুব কাছা-কছি চলে আসলে। তুরিন হাত উপরে উঠালে জয়কে থাপ্পর দেওয়ার জন্য। আর জয় নিজের হাতটা নিচে নামাল। তারপর ক্লাসের সবাই হেসে উঠল।
জয় ইতিমধ্যে ক্লাসের বাইরে। আর তুরিন অনেকটা সত্মম্ভিত হয়ে রইল। কারণ জয় যখন নিজের হাতটা নিচে নামিয়ে ছিল। তখন তার দুষ্ট হাতটা একটু করে তুরিনের পেটের সাথে লেগে ছিল। সেই সাথে তার গেঞ্জির অনেকেটা অংশ জয়ের হাতের সাথে বেড়াতে চলে গেল। আর তুরিন পেটের অংশটা তখন দেখা না যায় মতো গেঞ্জিটাকে টেনে বড় করে নিচের অংশটা ঢাকতে চাচ্ছে, তবে বেশি টানলে উপরের অংশটাও ছিড়ে গিয়ে একবারে পুরোটা স্বাধীন হয়ে যাবে।
তুরিন সে মুহূর্তে ব্যগটা হাতে নিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেল। আর আদিও তার পিছনে পিছন চলে আসল।
আদি তুরিনকে লড়্গ্য করে বলল, তোমাকে তো বলেছিলাম, ওরা সাথে পেছে না ঝড়াতে। তুমি তো আমার কোনো কথা শুনলে না। এখন দেখ..
তুরিনঃ তো কি হয়েছে? আমি কি তাকে এমনে ছেড়ে দিব ভাবছ?
আদিঃ ছেড়ে দাও বা না দাও আজ তো সবাই দেখে পেলল।
তুরিনঃ নিজের গেঞ্জিটা আর একটু টেনে নিচে নামাতে চেষ্টা করে বলল, সবাই কি দেখতে পেল আবার?
আদিঃ গেঞ্জেটা ছিড়ে গেল এইটা। (কথা গুলো তারা হাঁটতে হাঁটতে বলেছিল।) তারা এখন মাঠে এসে দেখতে পেল বাইক নাই। তুরিন বলল, আমার বাইক কই দেখতে পাচ্ছি না। আদি এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল, মনে হয় জয় নিয়ে গেছে।
তুরিনঃ মানে?
আদিঃ সমাস্যা নাই, বাইক ফিরে পাবে। আর অন্য কেউ নিয়ে গেলেও জয় ঠিকেই খোঁজে দিবে। আমি জয়ের বন্ধু আর তুমি আমার বন্ধু সুতারং অন্য কেউ নিয়ে গেলেও দিয়ে যাবে।
জয়কে কলটা অনিক করেছিল, আর বলেছিল, দোসত্ম আমাকে ড়্গামা করে দিস। আমি তোর সাথে মিথ্যা বলেছিলাম, আমার দাদার কিছু হয় নি, এখন হয়েছে আমার, আমি রিনার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম, তার বড় ভাই তা জানতে পেরে আমাকে এমন মারা-মারল যা আমি কখনো ভুলতে পারব না। এখন আমাকে আটকে রেখেছে, কিছুড়্গণ পর আমাকে আবার পিঠাতে-পিঠাতে ওপাড়ে পাঠিয়ে দিবে, বিরতির আগে সে কথাটা জানিয়ে গেল।
জয় রিনার ভাইয়ের কাছে এসে বলল, অনিক কই? তাকে ছেড়ে দিন। দাদা! আপনি অনেক বড় মাসত্মান। তাই আপনাকে সম্মানও করি। আমরা যারা মাসত্মানি করি তারা এক অপরকে সম্মান করা উচিত। আমরা আমাদেরকে সম্মান না করলে কে আর করবে? তাই বলে আমার বন্ধুকে এভাবে মারবেন তা কখনো সহ্য করা যাবে না।
রিনার ভাই বলল, এইবার তোমার পরিণতিও তার মতো করবো। এই বলে জয়ের দিকে হাত উঠাল।
জয় প্রথমে হাতটা ভাঙ্গে দিল। পরে পুরো শরীরটা।
জয় অনিককে রম্নম থেকে বের করে বলল, তুই রিনাকে নিয়ে বাড়িতে যা। আমি তোর শালা বাবুকে হাসপাতালে ভর্তি করেদিয়ে আসি। ছোট বেলায় যদি তোর শ্বশুর মশায়, শালা বাবুকে স্কুলে ভর্তি করেদিত আজকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হতো না। আর শুন! ঐ বাইকটা আদির বাসার সামনে রেখে দিস।
তখন রাত এগারোটা পেরিয়ে গেলে। আদি খুব চিনিত্মত। কারণ জয় এখনো বাসায় ফিরে নাই। কি হলো কে জানে।
তুরিন এসে বলল, তোমার বন্ধু কি এখনো ফিরে নাই?
আদিঃ না তো, বাসায় তালা লাগানো আছে। ওর অনেক শত্রম্ন আছে, তাই ভয় হচ্ছে। আসেল জয় মুটেও খারাপ না। তবে কেউ অন্যায় করেল তার সাথে বিবাধে লিপ্ত হয়।
তুরিনঃ হ্যাঁ তা বোঝতে পেরেছি। তোমাকে আর বোঝাতে হবে না। জয় হলো একেবারে শেষ দরজার বাজে ছেলে। ক্লাসে শুধু আমার কাঁপড় ছিড়ে নাই। আরো অনেক কীর্তি দেখেছি তার।
পর দিন আদি আর তুরিন জয়ের বাসায় গেল। তখন রাত ১০ঃ১২ মিনিট। ওরা দরজায় আঘাত করল। জয় ভিতর থেকে শব্দ করে বলল, কে? ওরা দু জন কোনো জবাব না দিয়ে দরজায় আঘাত করতে লাগল। জয় পিসত্মলটা হাতে নিয়ে দরজা একটু করে খুলে দেখতে পেল আদি আর তুরিনকে। জয় পিসত্মলটা কেউ না দেখে মতো সামলে নিয়ে বলল, এভাবে কেউ চুরের মতো চুপি চুপি আসে? এইটা কিন্তু ঠিক না।
তুরিন বলল, আসলে সমস্যা কি?
জয়ঃ না, তোমন সমস্যা নাই। তবে চিনতে একটু দেরি হলে টেনে দিতাম।
তুরিনঃ কি বলছো?
জয়ঃ না মানে, দরজাটা টেনে বন্ধ করে দিতাম বললাম।
তুরিনঃ ওহ!
জয়ঃ কি খাবে, চা, কপি না’কি কিছু খাবে না? আর আমি আনত্মরিক ভাবে দুঃখিত, আসলে আমি তোমার কাঁপট’টা ছিটতে চায় নি। তা ভুলে চলে আসল। আমার তো কাঁপড়ের প্রয়োজন ছিল না। শুধু বাইকের ছাবিটার প্রয়োজন ছিল।
তুরিনঃ অনেক হয়েছে এইবার চুপ করো-একটি বারও জানতে চায়লে না আমি কেনো এত রাতে তোমার কাছে আসলাম।
জয়ঃ তেমন কিছু জানার প্রয়োজন বোধ করি না। যা জানার তা এমনিতেই প্রকাশ হয়ে যাবে।
তুরিনঃ তোমাকে ধন্যবাদ দিতে আসছি। অনিক আমাকে সব বলছে। যাই হোক! খুব ভালো করছো। তবে নিজের বেলায় এতো অবহেলা কেনো?
জয়ঃ জানি না। আর তুমি কি বলতেছো তা বোঝতে পারার মতো ড়্গমতাও আমার নাই।
তুরিনঃ যাক! না বোঝলে কিছু করার নাই। কাল যদি ফ্রী থাকো একটু আমায় সময় দিও। অনেক দিন হচ্ছে আকাশ দেখা হচ্ছে না। তোমার অনুপস্থিতে সব যেন বদলে গেছে। আজ যায়, চলো আদি।
আদি বলল, তোমাদের কথা তো কিছু বোঝতে পারি নাই।
তুরিনঃ ওহ্ঃ তুমি তো জানো আমার স্মৃতি শক্তি হরিয়ে গিয়েছিল, জয় আমার পরিচিত, তাকে প্রথমে দেখে মনে হয়েছিল তাই। কিন্তু সে তো নিজেকে আড়াল রাখতে চায়। এখন ঠিকেই চিনতে পেরেছি।
সন্ধ্যার কাছা-কাছি সময় দু জন নদীর পাড়ে বসে আছে। তুরিন আর জয় এক দৃষ্টিতে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ কোনো কথা বলছে না।
কিছুড়্গণ চুপ থাকার পর তুরিন বলল, জয় তুমি কি মনে করো আমি তোমাকে ভুলে গেছি? বা ভুলে থাকতে পারি? বিশ্বাস করো, আমি কখনো তোমাকে এক মুহূতের্র জন্যও আড়াল করতে পারি নাই।
জয়ঃ আমার সাথে দেখা হয়ে যাওয়ার জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করতেছি। তুমি আমাকে খুঁজে না পাও মতো আমি এতদুর চলে আসলাম তার মাঝে তুমি আবার এসে সব এলো মেলো করে দিলে।
তুরিনঃ তোমার হৃদয়ে কি আমার জন্য এক বিন্দু ভালোবাসা নাই?
জয়ঃ জানি না। কাউকে ভালোবেসে সব কিছু হারিয়ে পেলেছি, আমি আর কাউকে ভালোবসাতে চায় না। ভালোবাসা নামের শব্দটা শুনলে আমার ঘৃণা লাগে।
তুরিনঃ আজ আমার দিকে তাকিয়ে দেখো, একটিবার আমাকে বিশ্বাস করার চেষ্টা করো।
জয়ঃ বিশ্বাস! কাকে করব? তোমাকে করব? তোমার জন্য হারাতে হলো সিদরাত্কে।
তুরিনঃ না জয়! এইটা তোমার ভুল ধারণা। আমার ভাই সিদরাত্কে হত্যা করে লুকিয়ে পেলছে, এইটা কি করে সম্ভব? আমার তো কোনো ভাই ছিল না।
জয়ঃ মানে?
তুরিনঃ ভুলটা আমার আমি মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিলাম, তবে কখনো ভাবি নাই এই মিথ্যার কারণে এতো কাঁদতে হবে । আমি কখনো ভাবতেও পারি নাই পৃথিবীর এমন কোনো শক্তি আছে। যার আঘাতে দুজনকে আলাদা হতে হবে।
আমাদের সম্পর্কটা তো ছিল মেসেজ বা কলে। কখনো কারো সাথে দেখা হয় নি। আমি কিন্তু প্রতিদিন তোমাকে দেখতাম, আমিও তোমাদের পাশের বাড়িতে বাড়া থাকতাম। আমার মা অসুস্থ আমাকে সাংসারের হাল ধরতে হয়েছিল। আমার কোনো ভাই ছিল না। ছোট দুইটি বোনের লেখা পড়ার খরচটা আমাকে যোগাড় করতে হতো। তাছাড়া নিজের লেখা পড়াটাও চালিয়ে যেতে হচ্ছিল। দেখো, আমারা মধ্যেবিত্ত পরিবারের মেয়ে। অন্য মেয়েদের মতো চলা-পেরা করা আমার পড়্গে সম্ভব না। প্রতিদিন তোমার সাথে দেখা করা, তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া রাত করে বাড়িতে পেরা এসব একেবারে সম্ভব ছিল না। আমি যদি এসব করি আমার ছোট বোনরা কি শিখবে। তাই তোমাকে বলতাম আমার পরিবার অনেক কঠোর, আমার ভাই যদি জানতে পারে আমাদের সম্পর্কের কথা, তোমাকে একেবারে শেষ করেদিবে। আমার পড়্গে তোমার সাথে দেখা কারা সম্ভব না।
আর সে দিন তোমাকে দেখার জন্য বিষণ মন ইচ্ছা করেছিল। তাই তোমাকে আসতে বলেছিলাম। অবশ্য সে দিনের আগে যে কইটা দিন আমার ফোন বন্ধ ছিল তাতে তুমি ভেবে নিয়েছিলে আমার পরিবার আমাকে আটকে রেখেছে তাই না? কথা গুলো বলার সময় তুরিনের চোখে জল চলে আসল।
একটু থেমে বলল, কে বাঁধা দিবে? তার কয়েক দিন আগে আমার মা আমাদেরকে ছেড়ে ওপাড়ে চলে যায়। তাই আমার ফোন বন্ধ ছিল। আর সে দিন তোমাকে ডেকে সব কিছু বলে তোমার হাত ধরে তোমার সঙ্গে অজানা কোথাও চল যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি তা হতে দিলে না। আর সিদরাত্েরও কিছু হয় নি। সে তোমার অপেড়্গায় আছে।
জয়ঃ সিদরাত্ বেঁচে আছে?
তুরিনঃ সে যখন আমার কাছে আসছিল তখন দেখতে পেল একটি মেয়েকে কিছু লোক জোর করে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। সিদরাত্ মেয়েটিকে ওদরে হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তাকে নিয়ে এই শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়। আর মেয়েটিকে বিয়ে করে ওখানে সংসার শুরো করল। সিদরাত্ আর না ফেরাই তুমি যখন তার খোঁজ নিতে আসছিলে তখন, রাসত্মার পাশের দোকানদারটা বলেছিল একটি ছেলেকে কিছু লোক গুলি করে তার চোখের সামনে মেরে পেলছে। এইটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। লোকটার সামনে ওরা সিদরাত্কে মারছিল, তবে সিদরাত্ ওদের কাছ থেকে মেয়েটাকে নিয়ে পালিয়েছিল। লোকটা কি ভেবে, কে জানে এভাবে বাড়িয়ে বলল। যাই হোক, আমাদের সমাজে তো মিথ্যা বলার ও বাড়িয়ে বলার লোকের অভাব হয় না। আর তুমি ভাবছ..। তুরিন চোখের জল মুছে নিয়ে থেমে গেল।
একটু পর বলল, আদি আমার পরিচিত কেউ না শুধু তোমাকে কথা গুলো বলার জন্য আদির কাছে সাহায্য চেয়ে এখানে আসলাম। আমি এসব কোর্স করার জন্য আসি নাই। এখানে কি হয় তাও আমার ভালো করে জানা ছিল। এখন আমার ডাক্তারি পড়া শেষ হয়ে গেছে।
জয়ঃ তুরিনের হাতটা ধরে বলল, তাহলে চল।
তুরিনঃ এক মিনিট, তুমি তো আমাকে কখনো দেখ নাই। তোমার কি মনে হচ্ছে আমি সে মেয়েটি যাকে তুমি না দেখে ভালোবেসেছিলে?
জয়ঃ আমি তোমাকে দেখেছিলাম, তখন তুমি একটি কালো কাঁপড় পড়ে রাসত্মার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলে। তোমার পাশে একটি আকাশি রংয়ের কার ছিল। তার পর একটি দোকান থেকে ফোনে টাকা রিচার্জ করেছিলে। যার কাছ থেকে টাকা রিচার্জ করেছিলে ও আমার পরিচিত ছিল তার কাছে থেকে নাম্বার নিয়েছিলাম। তবে তোমার পরিবার সর্ম্পকে কিছু জানতাম না।
তুরিনঃ আচ্ছা তুমি তো আগে এমন ছিলা না, মানে কোনো মেয়েদের দিকে তাকাতেও না। এখন তো দেখলাম..
জয়ঃ মেয়েদের প্রতি বিশ্বাস উঠে গিয়েছিল, আর মনে হয়েছিল চারিদিকে অন্ধকার। এই অন্ধকার থেকে উদ্ধারের পথ খুঁজে ছিলাম।
তুরিনঃ চল।
জয়ঃ যেতে পারি তবে একটি শর্ত মানতে হবে তোমাকে?
তুরিনঃ কি শর্ত আবার?
জয়ঃ আর কখনো মিথ্যা কথা বলবে না।
তুরিনঃ হ্যাঁ মেনে নিলাম শর্তটা, মিথ্যা বলা বা বাড়িয়ে বলাটা কত ভয়ঙ্কর রূপ নে মানুষের জীবনে তা বোঝতে পেরেছি আমি। তবে আমারও একটি শর্ত আছে?
জয়ঃ কি শর্ত?
তুরিনঃ তুমিও এসব মেয়েটেয়েদের সাথে নোংরামি করতে পারবে না আর। এসব আমার একেবারে সহ্য হয় না।
জয়ঃ তুরিন আমি এতোটা খারাপ না। এইখানে যে কোর্সটা হয় তা আমি পরিচালনা করি। আমি মানুষকে উপদেশ দি সৎ হওয়ার জন্য আর সুন্দর মনের মানুষ হতে ওদরে অনুপ্রেরণা দি। আমি কি করে এতো খারাপ হতে পারি? জেসি আমার ভালো বন্ধু। তোমার উপস্থিতি দেখে জেসিকে কল করে আমি বললাম, “জেসি আমাকে একটু সাহায্য করতে হবে, আমার সাথে একটু অভিনয় করতে হবে।” আমি চেয়েছিলাম তোমাকে এখান থেকে সরিয়ে দিতে। কারণ তোমাকে দেখলে আমার অনেক বেশি খারাপ লাগে আর ইচ্ছা হতো তোমার কাছে ছুটে যেতে।
২৬-১০-২০১৭ ইং
লেখকঃ মোমিনুল হক আরাফাত
জয় ঘুম থেকে উঠে তাড়া-হুড়া করে বাইক নিয়ে আদির বাড়ির সামনে এসে উপস্থিত। কিন্তু আজ আদি এখনো রেড়ি হয় নি। জয় বাইকের উপর বসে রইল। কারণ বাড়িতে জয়ের যাওয়াটা নিষেধ আছে।
আপনারা নিশ্চয় ভাবছেন জয় এতো তাড়া-হুড়া করে কোথায় যাচ্ছে?
আরে না, বেশি দূর না, অল্প দূরে একটি প্রশিড়্গণ কেন্দ্র আছে। যেখানে শিখানে হয় কীভাবে বড় মাপের মানুষ হওয়া যায়। ওখানে জয়ের মতো কিছু ছেলে-মেয়ে যায়, তবে বড় মাপের মানুষ হতে নয়, শুধু মাত্র সময় পার করতে। আর যেখান জয় আছে সেখানে তো মেয়েদের জন্য বিশেষ সুবিধা নিশ্চয় থাকবে। ছেলেদের সময় যেমন যাক, মেয়েরা কিন্তু খুব আরামে কাটায় দিন ওখানে।
আদি এসে উপস্থিত, জয় তাকে লড়্গ্য করে বলল, “কিরে শালা এতো দেরি করলি কেনো? বড় মাপের মানুষ হওয়য়ার কোর্সে দেরি হয়ে যাবে তো?
আদিঃ তুই কি বড় মাফের মানুষ হতে যাবি? নাকি কাউকে মেরে ছোট করে দিতে যাবি? (কথাটা এই কারণে বলছিল-জয় বাড়ি থেকে বের হয়ে, কখনো খালি হাতে ফিরে নাই। মানে হচ্ছে দু এক জনের সাথে মার-মারি না করলে তার সময়টা ঠিক মতো কাটে না।)
জয়ঃ আরে আমি কি কারো সাথে নিজ থেকে ঝগড়া করি, কেউ যদি ব্যতিক্রম করে তখন তো দু একটা দিতে হবে, শৃঙ্খলা বলে তো কিছু একটা আছে, মান বা না মান। এইটা তো অস্বীকার করতে পারবি না। এই শহরের ছেলেদেরে শৃঙ্খলা বলতে কিছু নাই। আদব-কায়দা যা আছে, সব মেয়েদের দিয়ে ছেলেরা একেবারে দেওলিয়া হয়ে গেল। কি মারাত্নকরে বাবা!
আদিঃ দোসত্ম, তুই একা যা, আমার অন্য একটা কাজ আছে।
জয় ঃ বাইক থেকে নেমে বলল, কি হলো? এত পরিবর্তন রাতের মধ্যে। ঘুমে দুর স্বপ্ন দেখছিস নাকি? দেখ আমি থাকতে তোর কোনো ড়্গতি হবে না। আর তুই কি বড় মাপের মানুষ হওয়ার কথা ভুলে গেলি। এসব ভুললে চলবে না। মানুষ হওয়াটা প্রথম শর্ত!
আদিঃ তা না, অন্য একটা কাজ..
জয়ঃ এই মুহূর্তে দেখতে পেল বাড়ির সামনে একটি বাইক। অবশ্য এইটা মেয়েদের। জয় বলল, বুঝলাম শালা তোর সমস্যা এখানে। তোর বাবা তোর জন্য বাইক কিনছে, তাই আমার পিছনে বসতে পারবি না।হুম দেখি-দেখি-কথা বলতে-বলতে জয় বাইকের কাছে চলে গেল।
জয়ঃ বাইকে একটি লাতি মেরে বলল, এইটা তোকে মানাই না। তুই আমার পিছনে বস।
আদিঃ আরে কি করতেছিস?
জয়ঃ লাতি মেরে দেখতেছি, দেখতে তো পারছিস। আবার জিজ্ঞাস করার কি দরকার?
আদি জয়কে টেনেনিয়ে গিয়ে বলল, দোসত্ম এই ভুল করিস না। এইটা আমার না, এইটা হচ্ছে তুরিনের সে দেখলে। একেবারে জীবিত কবর দিয়ে দিবে।
জয় এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল, কই সে? ডাক্তার বলেছিল, কোনো তরম্ননী যখন আমায় ছুয়ে যাবে তখন আমি খুব লড়্গ্নী হয়ে যাবে। কথা শেষ না হতে শব্দ এলো “আদি চলো-চলো, ক্লাসে দেরি হয়ে যাবে।” আদি ও আর দেরি না করে শানত্ম ছেলেটির মতো বাইকে গিয়ে তুরিনের পিছে বসে পড়ল আর জয়কে লড়্গ্য করে বলল, জয় তুইও ও চলে আয়। না হয় ক্লাসে দেরি হয়ে যাবে।
জয়ঃ রাসত্মার পাশের হকারের দোকানে এসে এককাপ চা নিল। আর দু এক টান সিগেরেট খেল। ইতিমধ্যে অনিক দৌঁড়ে এসে বলল, জয় একটি বিপদ হয়ে গেল..
জয়ঃ কী হলো? তোর কোন প্রেমিকার ভাই তোকে দৌঁড়াচ্ছে বল। শালাকে মেরে প্রমাণ করে দি আমার বন্ধুর ভালোবাসা কত খাঁটি।
অনিকঃ দোসত্ম সব সময় মজা করিস কেনো?
জয়ঃ মজার কি আছে? এইটা তো নিত্য দিনের সমস্যা। তোকে শালা বাবুরা দৌঁড়াবে আর আমাকে গিয়ে সমাধান দিতে হবে।
অনিকঃ আজ তা না-দাদা এঙিডেন্ট করছে। জরম্নরী রক্তের প্রয়োজন, আমার আর দাদার রক্তের গ্রম্নপ এক। এখন আমি যদি সময় মতো পৌছাতে না পারি ভাই ওপাড়ে যাবে আর ভাবি বিধবা হবে।
জয়ঃ চল আর দেরি করা ঠিক হবে না।
অনিকঃ সমস্যা হচ্ছে, তোকে ওখানে যাওয়া নিষেধ আছে, তোকে দেখলে দাদা এমনিতেই ষ্ট্রোক করে মারা যাবে। তোর মতো বড় মাপের মানুষদের দেখলে দাদার তো এমনি বস্নাড পেশার বেড়ে যায়। নিজেকে বেশি ছালাক ভাবিস না, দাদা কিন্তু এমনিতেই সব জেনে গেছে ওখানে কীসের প্রশিড়্গণ দেওয়া হয়।
তারপর অনিক বাইক নিয়ে রওনা হলো।
জয় প্রশিড়্গণ কেন্দ্রে এসে উপস্থিত। তার পর শানত্ম ছেলের মতো ক্লাসের পিছনে গিয়ে জেসির পাশে গিয়ে বসল। আর যাই হোক না কেনো, ক্লাসের সব মেয়েরা কিন্তু জয়ের পাশে বসতে ভালোবাসে।
এদিকে ক্লাস চলতেছে আর ওদিকে জয় তার ক্লাস চালাচ্ছে। মানে কিছুড়্গণ জেসির হাতে হাত রাখতেছে। জেসি যদি বিরক্ত বোদ করে হাতটা সারিয়ে দে তানির দিকে। না হয় অন্য কারো দিকে।
এসব কিছু অনেকড়্গণ ধরে দেখে যাচ্ছে তুরিন। আর সে রাগে একেবারে গলে গিয়ে এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করেতে চাচ্ছে। তবে আদি বার-বার বাঁধা দিচ্ছে।
জয়ও বুঝতে পারল তার কর্ম কান্ডে তুরিন বিরক্ত। তা অবশ্য হওয়ার কথা কারণ তুরিন আজ প্রথম ক্লাসে আসল। এখনো জয়ের সম্পর্কে তার ধারণা খুবই কম।
তুরিনের বিবরণটা একটু দি। সে একটি গেঞ্জি ও জিন্সের প্যান পড়াছিল। আর ক্লাসের প্রথম বেঞ্চে আদির পাশে বসল। আর মাঝে মধ্যে পিছনে তাকিয়ে জয়ের অসভ্য কান্ড লড়্গ্য করে।
ইতিমধ্যে জয় তার পা দুটা জেসির কোলে তুলে দিয়ে আরামে মোবাইলে গেইম খেলতেছে। এই দৃশ্য তুরিন দেখতে পেয়ে আর সহ্য করতে পারল না। সে জয়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছে প্রতিবাদ করার জন্য। সে মুহূর্তে জয়ের মোবাইলে একটি কল আসল, অল্পড়্গণ কথা বলার পর তাড়া-হুড়া করে জেসির কোল থেকে পা দুটি নামিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে ঠিক দু বেঞ্চের মাঝ দিয়ে জয় যাচ্ছে আর তুরিন আসতেছে জয়কে একটি থাপ্পর দেওয়ার জন্য।
দুজনেই খুব কাছা-কছি চলে আসলে। তুরিন হাত উপরে উঠালে জয়কে থাপ্পর দেওয়ার জন্য। আর জয় নিজের হাতটা নিচে নামাল। তারপর ক্লাসের সবাই হেসে উঠল।
জয় ইতিমধ্যে ক্লাসের বাইরে। আর তুরিন অনেকটা সত্মম্ভিত হয়ে রইল। কারণ জয় যখন নিজের হাতটা নিচে নামিয়ে ছিল। তখন তার দুষ্ট হাতটা একটু করে তুরিনের পেটের সাথে লেগে ছিল। সেই সাথে তার গেঞ্জির অনেকেটা অংশ জয়ের হাতের সাথে বেড়াতে চলে গেল। আর তুরিন পেটের অংশটা তখন দেখা না যায় মতো গেঞ্জিটাকে টেনে বড় করে নিচের অংশটা ঢাকতে চাচ্ছে, তবে বেশি টানলে উপরের অংশটাও ছিড়ে গিয়ে একবারে পুরোটা স্বাধীন হয়ে যাবে।
তুরিন সে মুহূর্তে ব্যগটা হাতে নিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেল। আর আদিও তার পিছনে পিছন চলে আসল।
আদি তুরিনকে লড়্গ্য করে বলল, তোমাকে তো বলেছিলাম, ওরা সাথে পেছে না ঝড়াতে। তুমি তো আমার কোনো কথা শুনলে না। এখন দেখ..
তুরিনঃ তো কি হয়েছে? আমি কি তাকে এমনে ছেড়ে দিব ভাবছ?
আদিঃ ছেড়ে দাও বা না দাও আজ তো সবাই দেখে পেলল।
তুরিনঃ নিজের গেঞ্জিটা আর একটু টেনে নিচে নামাতে চেষ্টা করে বলল, সবাই কি দেখতে পেল আবার?
আদিঃ গেঞ্জেটা ছিড়ে গেল এইটা। (কথা গুলো তারা হাঁটতে হাঁটতে বলেছিল।) তারা এখন মাঠে এসে দেখতে পেল বাইক নাই। তুরিন বলল, আমার বাইক কই দেখতে পাচ্ছি না। আদি এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল, মনে হয় জয় নিয়ে গেছে।
তুরিনঃ মানে?
আদিঃ সমাস্যা নাই, বাইক ফিরে পাবে। আর অন্য কেউ নিয়ে গেলেও জয় ঠিকেই খোঁজে দিবে। আমি জয়ের বন্ধু আর তুমি আমার বন্ধু সুতারং অন্য কেউ নিয়ে গেলেও দিয়ে যাবে।
জয়কে কলটা অনিক করেছিল, আর বলেছিল, দোসত্ম আমাকে ড়্গামা করে দিস। আমি তোর সাথে মিথ্যা বলেছিলাম, আমার দাদার কিছু হয় নি, এখন হয়েছে আমার, আমি রিনার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম, তার বড় ভাই তা জানতে পেরে আমাকে এমন মারা-মারল যা আমি কখনো ভুলতে পারব না। এখন আমাকে আটকে রেখেছে, কিছুড়্গণ পর আমাকে আবার পিঠাতে-পিঠাতে ওপাড়ে পাঠিয়ে দিবে, বিরতির আগে সে কথাটা জানিয়ে গেল।
জয় রিনার ভাইয়ের কাছে এসে বলল, অনিক কই? তাকে ছেড়ে দিন। দাদা! আপনি অনেক বড় মাসত্মান। তাই আপনাকে সম্মানও করি। আমরা যারা মাসত্মানি করি তারা এক অপরকে সম্মান করা উচিত। আমরা আমাদেরকে সম্মান না করলে কে আর করবে? তাই বলে আমার বন্ধুকে এভাবে মারবেন তা কখনো সহ্য করা যাবে না।
রিনার ভাই বলল, এইবার তোমার পরিণতিও তার মতো করবো। এই বলে জয়ের দিকে হাত উঠাল।
জয় প্রথমে হাতটা ভাঙ্গে দিল। পরে পুরো শরীরটা।
জয় অনিককে রম্নম থেকে বের করে বলল, তুই রিনাকে নিয়ে বাড়িতে যা। আমি তোর শালা বাবুকে হাসপাতালে ভর্তি করেদিয়ে আসি। ছোট বেলায় যদি তোর শ্বশুর মশায়, শালা বাবুকে স্কুলে ভর্তি করেদিত আজকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হতো না। আর শুন! ঐ বাইকটা আদির বাসার সামনে রেখে দিস।
তখন রাত এগারোটা পেরিয়ে গেলে। আদি খুব চিনিত্মত। কারণ জয় এখনো বাসায় ফিরে নাই। কি হলো কে জানে।
তুরিন এসে বলল, তোমার বন্ধু কি এখনো ফিরে নাই?
আদিঃ না তো, বাসায় তালা লাগানো আছে। ওর অনেক শত্রম্ন আছে, তাই ভয় হচ্ছে। আসেল জয় মুটেও খারাপ না। তবে কেউ অন্যায় করেল তার সাথে বিবাধে লিপ্ত হয়।
তুরিনঃ হ্যাঁ তা বোঝতে পেরেছি। তোমাকে আর বোঝাতে হবে না। জয় হলো একেবারে শেষ দরজার বাজে ছেলে। ক্লাসে শুধু আমার কাঁপড় ছিড়ে নাই। আরো অনেক কীর্তি দেখেছি তার।
পর দিন আদি আর তুরিন জয়ের বাসায় গেল। তখন রাত ১০ঃ১২ মিনিট। ওরা দরজায় আঘাত করল। জয় ভিতর থেকে শব্দ করে বলল, কে? ওরা দু জন কোনো জবাব না দিয়ে দরজায় আঘাত করতে লাগল। জয় পিসত্মলটা হাতে নিয়ে দরজা একটু করে খুলে দেখতে পেল আদি আর তুরিনকে। জয় পিসত্মলটা কেউ না দেখে মতো সামলে নিয়ে বলল, এভাবে কেউ চুরের মতো চুপি চুপি আসে? এইটা কিন্তু ঠিক না।
তুরিন বলল, আসলে সমস্যা কি?
জয়ঃ না, তোমন সমস্যা নাই। তবে চিনতে একটু দেরি হলে টেনে দিতাম।
তুরিনঃ কি বলছো?
জয়ঃ না মানে, দরজাটা টেনে বন্ধ করে দিতাম বললাম।
তুরিনঃ ওহ!
জয়ঃ কি খাবে, চা, কপি না’কি কিছু খাবে না? আর আমি আনত্মরিক ভাবে দুঃখিত, আসলে আমি তোমার কাঁপট’টা ছিটতে চায় নি। তা ভুলে চলে আসল। আমার তো কাঁপড়ের প্রয়োজন ছিল না। শুধু বাইকের ছাবিটার প্রয়োজন ছিল।
তুরিনঃ অনেক হয়েছে এইবার চুপ করো-একটি বারও জানতে চায়লে না আমি কেনো এত রাতে তোমার কাছে আসলাম।
জয়ঃ তেমন কিছু জানার প্রয়োজন বোধ করি না। যা জানার তা এমনিতেই প্রকাশ হয়ে যাবে।
তুরিনঃ তোমাকে ধন্যবাদ দিতে আসছি। অনিক আমাকে সব বলছে। যাই হোক! খুব ভালো করছো। তবে নিজের বেলায় এতো অবহেলা কেনো?
জয়ঃ জানি না। আর তুমি কি বলতেছো তা বোঝতে পারার মতো ড়্গমতাও আমার নাই।
তুরিনঃ যাক! না বোঝলে কিছু করার নাই। কাল যদি ফ্রী থাকো একটু আমায় সময় দিও। অনেক দিন হচ্ছে আকাশ দেখা হচ্ছে না। তোমার অনুপস্থিতে সব যেন বদলে গেছে। আজ যায়, চলো আদি।
আদি বলল, তোমাদের কথা তো কিছু বোঝতে পারি নাই।
তুরিনঃ ওহ্ঃ তুমি তো জানো আমার স্মৃতি শক্তি হরিয়ে গিয়েছিল, জয় আমার পরিচিত, তাকে প্রথমে দেখে মনে হয়েছিল তাই। কিন্তু সে তো নিজেকে আড়াল রাখতে চায়। এখন ঠিকেই চিনতে পেরেছি।
সন্ধ্যার কাছা-কাছি সময় দু জন নদীর পাড়ে বসে আছে। তুরিন আর জয় এক দৃষ্টিতে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ কোনো কথা বলছে না।
কিছুড়্গণ চুপ থাকার পর তুরিন বলল, জয় তুমি কি মনে করো আমি তোমাকে ভুলে গেছি? বা ভুলে থাকতে পারি? বিশ্বাস করো, আমি কখনো তোমাকে এক মুহূতের্র জন্যও আড়াল করতে পারি নাই।
জয়ঃ আমার সাথে দেখা হয়ে যাওয়ার জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করতেছি। তুমি আমাকে খুঁজে না পাও মতো আমি এতদুর চলে আসলাম তার মাঝে তুমি আবার এসে সব এলো মেলো করে দিলে।
তুরিনঃ তোমার হৃদয়ে কি আমার জন্য এক বিন্দু ভালোবাসা নাই?
জয়ঃ জানি না। কাউকে ভালোবেসে সব কিছু হারিয়ে পেলেছি, আমি আর কাউকে ভালোবসাতে চায় না। ভালোবাসা নামের শব্দটা শুনলে আমার ঘৃণা লাগে।
তুরিনঃ আজ আমার দিকে তাকিয়ে দেখো, একটিবার আমাকে বিশ্বাস করার চেষ্টা করো।
জয়ঃ বিশ্বাস! কাকে করব? তোমাকে করব? তোমার জন্য হারাতে হলো সিদরাত্কে।
তুরিনঃ না জয়! এইটা তোমার ভুল ধারণা। আমার ভাই সিদরাত্কে হত্যা করে লুকিয়ে পেলছে, এইটা কি করে সম্ভব? আমার তো কোনো ভাই ছিল না।
জয়ঃ মানে?
তুরিনঃ ভুলটা আমার আমি মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিলাম, তবে কখনো ভাবি নাই এই মিথ্যার কারণে এতো কাঁদতে হবে । আমি কখনো ভাবতেও পারি নাই পৃথিবীর এমন কোনো শক্তি আছে। যার আঘাতে দুজনকে আলাদা হতে হবে।
আমাদের সম্পর্কটা তো ছিল মেসেজ বা কলে। কখনো কারো সাথে দেখা হয় নি। আমি কিন্তু প্রতিদিন তোমাকে দেখতাম, আমিও তোমাদের পাশের বাড়িতে বাড়া থাকতাম। আমার মা অসুস্থ আমাকে সাংসারের হাল ধরতে হয়েছিল। আমার কোনো ভাই ছিল না। ছোট দুইটি বোনের লেখা পড়ার খরচটা আমাকে যোগাড় করতে হতো। তাছাড়া নিজের লেখা পড়াটাও চালিয়ে যেতে হচ্ছিল। দেখো, আমারা মধ্যেবিত্ত পরিবারের মেয়ে। অন্য মেয়েদের মতো চলা-পেরা করা আমার পড়্গে সম্ভব না। প্রতিদিন তোমার সাথে দেখা করা, তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া রাত করে বাড়িতে পেরা এসব একেবারে সম্ভব ছিল না। আমি যদি এসব করি আমার ছোট বোনরা কি শিখবে। তাই তোমাকে বলতাম আমার পরিবার অনেক কঠোর, আমার ভাই যদি জানতে পারে আমাদের সম্পর্কের কথা, তোমাকে একেবারে শেষ করেদিবে। আমার পড়্গে তোমার সাথে দেখা কারা সম্ভব না।
আর সে দিন তোমাকে দেখার জন্য বিষণ মন ইচ্ছা করেছিল। তাই তোমাকে আসতে বলেছিলাম। অবশ্য সে দিনের আগে যে কইটা দিন আমার ফোন বন্ধ ছিল তাতে তুমি ভেবে নিয়েছিলে আমার পরিবার আমাকে আটকে রেখেছে তাই না? কথা গুলো বলার সময় তুরিনের চোখে জল চলে আসল।
একটু থেমে বলল, কে বাঁধা দিবে? তার কয়েক দিন আগে আমার মা আমাদেরকে ছেড়ে ওপাড়ে চলে যায়। তাই আমার ফোন বন্ধ ছিল। আর সে দিন তোমাকে ডেকে সব কিছু বলে তোমার হাত ধরে তোমার সঙ্গে অজানা কোথাও চল যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি তা হতে দিলে না। আর সিদরাত্েরও কিছু হয় নি। সে তোমার অপেড়্গায় আছে।
জয়ঃ সিদরাত্ বেঁচে আছে?
তুরিনঃ সে যখন আমার কাছে আসছিল তখন দেখতে পেল একটি মেয়েকে কিছু লোক জোর করে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। সিদরাত্ মেয়েটিকে ওদরে হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তাকে নিয়ে এই শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়। আর মেয়েটিকে বিয়ে করে ওখানে সংসার শুরো করল। সিদরাত্ আর না ফেরাই তুমি যখন তার খোঁজ নিতে আসছিলে তখন, রাসত্মার পাশের দোকানদারটা বলেছিল একটি ছেলেকে কিছু লোক গুলি করে তার চোখের সামনে মেরে পেলছে। এইটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। লোকটার সামনে ওরা সিদরাত্কে মারছিল, তবে সিদরাত্ ওদের কাছ থেকে মেয়েটাকে নিয়ে পালিয়েছিল। লোকটা কি ভেবে, কে জানে এভাবে বাড়িয়ে বলল। যাই হোক, আমাদের সমাজে তো মিথ্যা বলার ও বাড়িয়ে বলার লোকের অভাব হয় না। আর তুমি ভাবছ..। তুরিন চোখের জল মুছে নিয়ে থেমে গেল।
একটু পর বলল, আদি আমার পরিচিত কেউ না শুধু তোমাকে কথা গুলো বলার জন্য আদির কাছে সাহায্য চেয়ে এখানে আসলাম। আমি এসব কোর্স করার জন্য আসি নাই। এখানে কি হয় তাও আমার ভালো করে জানা ছিল। এখন আমার ডাক্তারি পড়া শেষ হয়ে গেছে।
জয়ঃ তুরিনের হাতটা ধরে বলল, তাহলে চল।
তুরিনঃ এক মিনিট, তুমি তো আমাকে কখনো দেখ নাই। তোমার কি মনে হচ্ছে আমি সে মেয়েটি যাকে তুমি না দেখে ভালোবেসেছিলে?
জয়ঃ আমি তোমাকে দেখেছিলাম, তখন তুমি একটি কালো কাঁপড় পড়ে রাসত্মার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলে। তোমার পাশে একটি আকাশি রংয়ের কার ছিল। তার পর একটি দোকান থেকে ফোনে টাকা রিচার্জ করেছিলে। যার কাছ থেকে টাকা রিচার্জ করেছিলে ও আমার পরিচিত ছিল তার কাছে থেকে নাম্বার নিয়েছিলাম। তবে তোমার পরিবার সর্ম্পকে কিছু জানতাম না।
তুরিনঃ আচ্ছা তুমি তো আগে এমন ছিলা না, মানে কোনো মেয়েদের দিকে তাকাতেও না। এখন তো দেখলাম..
জয়ঃ মেয়েদের প্রতি বিশ্বাস উঠে গিয়েছিল, আর মনে হয়েছিল চারিদিকে অন্ধকার। এই অন্ধকার থেকে উদ্ধারের পথ খুঁজে ছিলাম।
তুরিনঃ চল।
জয়ঃ যেতে পারি তবে একটি শর্ত মানতে হবে তোমাকে?
তুরিনঃ কি শর্ত আবার?
জয়ঃ আর কখনো মিথ্যা কথা বলবে না।
তুরিনঃ হ্যাঁ মেনে নিলাম শর্তটা, মিথ্যা বলা বা বাড়িয়ে বলাটা কত ভয়ঙ্কর রূপ নে মানুষের জীবনে তা বোঝতে পেরেছি আমি। তবে আমারও একটি শর্ত আছে?
জয়ঃ কি শর্ত?
তুরিনঃ তুমিও এসব মেয়েটেয়েদের সাথে নোংরামি করতে পারবে না আর। এসব আমার একেবারে সহ্য হয় না।
জয়ঃ তুরিন আমি এতোটা খারাপ না। এইখানে যে কোর্সটা হয় তা আমি পরিচালনা করি। আমি মানুষকে উপদেশ দি সৎ হওয়ার জন্য আর সুন্দর মনের মানুষ হতে ওদরে অনুপ্রেরণা দি। আমি কি করে এতো খারাপ হতে পারি? জেসি আমার ভালো বন্ধু। তোমার উপস্থিতি দেখে জেসিকে কল করে আমি বললাম, “জেসি আমাকে একটু সাহায্য করতে হবে, আমার সাথে একটু অভিনয় করতে হবে।” আমি চেয়েছিলাম তোমাকে এখান থেকে সরিয়ে দিতে। কারণ তোমাকে দেখলে আমার অনেক বেশি খারাপ লাগে আর ইচ্ছা হতো তোমার কাছে ছুটে যেতে।
২৬-১০-২০১৭ ইং
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
দীপঙ্কর বেরা ০৭/১১/২০১৭দারুণ
-
স্বপন রোজারিও (মাইকেল) ০৩/১১/২০১৭good
-
মধু মঙ্গল সিনহা ০২/১১/২০১৭ভালো সুন্দর লেখা।
-
ফয়জুল মহী ০২/১১/২০১৭মনোরম ভাষার সুন্দর রচনা
-
সানশাইন ০২/১১/২০১৭Nice Story! Carry on!
-
আব্দুল হক ০১/১১/২০১৭বেশ সত্য কথা বলেছেন!!
-
আজাদ আলী ০১/১১/২০১৭Valo galpo
-
Mahbubur Rahman ০১/১১/২০১৭ভাল লেগেছে
-
সোলাইমান ০১/১১/২০১৭বেশ ভালো লাগলো। শুভ কামনা।