যুদ্ধ চায় না
উৎসর্গ-সকল যুদ্ধ গ্রস্থ দেশ
যুদ্ধ চাই না
মোমিনুল হক আরাফাত
সিকাত, সে এক মহান রাজা। সে সব চেয়ে বেশি ভালবাসে তার স্ত্রীকে। আর যুদ্ধ করা তার এক প্রকারে নেশা হয়ে দাঁড়াল। অন্যের রজ্য দখল করে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা, হাজার হাজার মানুষকে মারার মধ্যে সে যথেষ্ট সুখ পায়।
সেই রাজ্যের এক বীর যোদ্ধার স্ত্রী হলো এপি।
ঠিক তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে সূর্য বিদায় নেওয়ার পালা। এপি ছাদের উপর দাঁড়িয়ে নীরবে পাখিদের ফিরে যাওয়া দেখতেছে হয়তো কী যেন ভাবতেছে। হঠাৎ পিছন থেকে কার যেন পায়ের শব্দ পেয়ে চমকে ওঠে-পিছনে ফিরে দেখতে পেল। তার ননদী নিহা।
নিহাঃ আরে ভয় পেয়েছ নাকি?
এপিঃ না ভয় পাওয়ার কি আছে? একটু আনমনে ছিলাম তাই।
নিহাঃ ভাবি! আনমনে থেকে কাকে ভাবতেছো?
এপিঃ না তো কাউকে ভাবতেছি না।
নিহাঃ আর ভাবতে হবে না একটু বাসায় এসে দেখে যাও-
এপিঃ মানে! আবার কি দেখবো?
নিহাঃ তোমার বর চলে আসছে। শুনলাম তিন মাসের লম্বা ছুঠি নিয়ে আসছে। এখন তো আর তোমাকে খোঁজে পাওয়া যাবে না। ভাইয়া তো সারাক্ষণ তোমাকে চোখের সামনে রেখে দিতে চায়।
এপিঃ একটু মৃদু হেসে বলল, তোমার ভাইয়া তো সারাক্ষণ যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত থাকে তাই তাঁর মনে ভয়। কখন যে আবার আমায় একা রেখে ওপাড়ে চলে যাই। তাই যখন সময় পাই তখন আমাকে ছাড়া অন্য কিছু দেখতে চায় না।
নিহাঃ আরে! আমার ভাইয়াকে পৃথিবীথেকে সরাবে এমন কউে জন্মনে নি। আমাদের দেশের সৈন্যরা বিশ্ব সেরা। তার মধ্যে ভাইয়ার তো তুলনাও হয় না। তারনা কত সুনাম কত অর্জন।
এপিঃ সব কিছুর একদিন শেষ হয় আগুন নিয়ে যারা খেলে। তারা তো সবাই আগুনে পুড়ে মরে। আর সব কিছুর স্থায়িত্ব বেশি দিন হয় না। একদিন না একদিন নিঃশেষ হয়ে যায় সব।
নিহাঃ যাক! এসব বাঁধ দিয়ে ভাইয়ার কাছে যাও। নাহয় রাগ করবে।
রুদ্র তখন বিছনার উপর শুয়ে ছিল। হয়তো ক্লান্ত লাগতেছে অনেক দূর থেকে আসছে। তবে এইবার তিন মাসের ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরছে। বিয়ে হয়েছে বেশ কিছু দিন আগে। তবে যুদ্ধের কারণে স্ত্রীর পাশে বেশি দিন থাকা হয়নি। এপিও এখনো গর্ভ ধারণ করতে পারেনি।
এপিঃ রুমের মধ্যে আসার সাথে-সাথে রুদ্র বিছনা থেকে উঠে গেল।
রুদ্রঃ এপিকে বুকে ঝড়িয়ে নিয়ে তার কপালে একটি চুমু করল। এপি তখন চোখ দুটি বন্ধ কওে রেখেছিল। যদিও তারও ইচ্ছা ছিল রুদ্রকে একটি চুমু করবে । তবে পারে নাই হয়তো লজ্জা পেয়েছিল।
রাতের খাওয়া শেষ হলো। নিহা এসে বলল, ভাবি আজ তুমি যাও। আমি টেবিলটা গুছিয়ে নিচ্ছি।
এপিঃ না। তুমি যাও আমি পারব।
নিহাঃ আরে ভাবি এত ভাববার কি আছে? তুমি তো প্রতিদিন করতেছ। তবে আজ ভাইয়া বাসায় আছে যাওনা? ভাইয়া তো সৈনিক মানুষ কখন আবার যুদ্ধে চলে যেতে হবে তার কোন ঠিক নাই।
এপিঃ একটি দীর্ঘশ্বাস দিয়ে নিহার কপালে একটি চুমু করে রুমে চলে আসল।
এপিঃ রুদ্রকে লক্ষ্য করে বলল, তুমি আমার কাছে কী চাও?
রুদ্রঃ আমি এমন একজন বীর সন্তান চাই। যে আমার চেয়েও বড় বীর হবে। তার চোখে আমাকে তো ভীরু মনে হবে। এমন একটি ছেলে কী আমাকে উপহার দিতে পারবে না? যে পুরো বিশ্বটাকে কাঁপিয়ে তুলবে? যে এনে দিবে এই দেশটাকে অনেক ধন-সম্পদ যে হাজার হাজার বীরদেরকে পায়ের তলায় পিশিয়ে দিবে।
এপিঃ না আমি এমন কোন সন্তান দিব না। আমি একটি নিরহ সন্তান উপহার দিব। যে যুদ্ধ চাই না, যে মানবতার জয় চাই।
পরদিন খবর এল তাদের দেশের রাজা নতুন একটি রাজ্য জয় করতে চাচ্ছে। এখন সব সৈন্যরা তৈরি, তারা রুদ্রেরের অপেক্ষায় আছে। রুদ্রেরের বাহুতে যত শক্তি অন্যদের বাহুতে তত শক্তি ছিল না। শুধু শক্তি না। তার মাথায়ও যথেষ্ট উপস্থিত বুদ্ধি ছিল। তাই তাকে যুদ্ধে হারানোটা কারো পক্ষে সম্ভব ছিল না। রুদ্র আর দেরি না করে এপির কাপালে একটি চুমু দিয়ে বিদায় নিল।
এপি এখন গর্ভবতী! তার কথাটা তার গর্ভের বাচ্ছাটা রাখতে পারবে কিনা সন্দেহ হচ্ছে। এইযে মাত্র চার মাস হলো গর্ভে এল। এপির তো মনে হচ্ছে। তার পেটটাকে তার সন্তান যুদ্ধের ময়দান বানিয়ে নিল। এর আগে তো মেয়েদের অনেক সন্তান জন্ম নিল। তবে কারো অবস্থা এপির মতো হলো না। সারাক্ষণ তার পেটের ভিতর যন্ত্রণা করতে লাগল। তার মনে হচ্ছে এই বীর সিংহটা তার পেটের ভিতর এত বেশি দিন থাকাটা পছন্দ করতেছে না। তারও ভয় হচ্ছিল কারণ বীর সিংহটা যে ভাবে যুদ্ধ শুরো করেদিল। মা-নে কখন যে আবার সে যুদ্ধের ময়দানটা পেটে বের হয়েগিয়ে মা বাচ্ছা দু জন মারা পড়বে।
যাই হোক! এইভাবে পার হলো আটটি মাস। বাচ্ছা আর এই ছেট্ট ময়দানে যুদ্ধ করাটা পছন্দ করল না। সে চলে আসল পৃথিবীর বুকে। যদিও সে আট মাসে পৃথিবীতে চলে আসল। তবু তার দেহ দেখে মনে হয়েছিল পুরো দুইটি বছর মায়ের পেটে আরামে ঘুমিয়ে ছিল। যুদ্ধের কোন চিহ্ন বা হতাশা, ক্লন্ততা তার মাঝে ছিল না। আহা! কি সুন্দর পুটপুটে বাচ্ছা চোখ দুটি বড় বড় দেখে বুঝা গেল বীরের বাচ্ছা বীর হবেই।
যাই হোক! ছেলেটির নাম দেওয়া হলো জয়। কারণ তার মাঝে পরাজয়ের কোন চিহ্ন ছিল না। রুদ্র আর ফিরে আসল না। রুদ্র এখনো যুদ্ধে নিয়জিত। কে জানে কত সুনাম এতদিনে জমিয়েছে?
এপিঃ ছেলেটিকে কোলে নিয়ে বলতে লাগল। বাবা! তোকে আমি বীর হতে দিব না। তোকে আমি যুদ্ধ করতে দিব না। যুদ্ধ কখনো শান্তি দিতে পাওে না।
জয় ধীরে ধীরে বড় হতে লাগল। আস্তে আস্তে এপির সন্দেহটা কেটে গেল। যদিও জয় মায়ের গর্ভের মধ্যে যুদ্ধ শুরো করে দিয়েছিল। কিন্ত পৃথিবীর আলো বাতাস পেয়ে তা পরিবর্তন হতে লাগল। জয় যুদ্ধ করা পছন্দ কওে না। যখন তার বয়স ৯-১০ হলো তখন সে বুঝতে পারল। ঐ দেশ তাকে বীর বানিয়ে ছাড়বে। বাবার চেয়েও বড় বীর তাকে হতে হবে। যদিও জয় এখনো বাবাকে দেখে নাই। তবে বাবার বেশ কীর্তি শুনেছিল মানুষের কাছে।
একদিন জয় বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেল। আর মাকে বলে গেল। এই দেশ তাকে বীর বানিয়ে ছাড়বে। তাই সে এই দেশ ত্যাগ করে অন্য কোথাও গিয়ে আশ্রয় করে নিবে। তাই এপি সন্তান হারিয়ে বেশি চিন্তা করে নাই। কারণ জয় যেখান আছে সুখে আছে। ঐ দেশটা তো তাকে বাবার মতো বীর বানিয়ে ছাড়ত।
নিহাঃ ভাবি মন খরাপ নাকি?
এপিঃ হ্যাঁ মন ভিষণ খারাপ।
নিহাঃ ভাবি দূর চিন্তা করো না জয় একদিন না একদিন ফিরে আসবে।
এপিঃ জয় কখনো এই রাজ্যে ফিরে আসবে না। তাই আমি তাকে নিয়ে দূর চিন্তা করি না। আমার কোন ভয় নাই। আমার ছেলে যেখানে আছে সুখে আছে।
নিহাঃ তাহলে মন খারাপ কেন? আরে! ভাইয়ার কিছু হবে না। হয়তো ব্যস্ত আছে তাই চিঠি দিতে পারতেছে না।
এপিঃ তোমার ভাইয়াকে নিয়ে আমার কোন দূর চিন্তা হচ্ছে না।
নিহাঃ কি হলো? তোমাকে দেখেতে বিষন্ন মনে হচ্ছে কেন? কি হয়েছে একটু জানতে পারি?
এপিঃ তোমার ভাইয়া যাদের বুকের উপর আঘাত হানতেছে তাদের জন্য আমার মন কাঁদতেছে?
নিহাঃ তাদের জন্য কেন মন কাঁদবে? তারা তো ভিন্ন দেশী, ভিন্ন জাতি, ভিন্ন ধর্মের লোক। তাদের নিয়ে যদি মন কাঁদে পাপ হবে।
এপিঃ পাপ পণ্যেূর হিসাব যদি তোমাদের রাজাই করত। তবে পাপ হতো। একইশ্বর যখন পাপ পণ্যেূর হিসাব নিবে। পাপ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই। আজ অমি এই দেশে জন্ম না নিয়ে যদি ঐ যুদ্ধ গ্রস্থ দেশে জন্ম নিতাম তখন আমার স্ব-জাতি হতো তারা। আর ধর্ম নিয়ে কথা বলার আগে ধর্মে সম্পের্কে জানা তো দরকার। স্রষ্টা তো বলে নাই যে ভিন্ন জাতিকে ধ্বংস করে দিতে। তবে অপরাধীরা শাস্তি যোগ্য। তাই বলে একটি জাতিকে ধ্বংস করে দেওয়া উচিত না। তাদের মধ্যে অনেক এখনো ধর্ম বা জাতি কী তা বুঝে উঠার সময় পাইনি। অনেক মায়ের গর্ভে থেকে পৃথিবীতে আসার সুযোগ পাইনি। বোমার আঘাতে সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। শত শত নারী, শিশু, বৃদ্ধ, আর্তাকার করে যাচ্ছে। তারা বলতেছে আমরা যুদ্ধ চাই না। আমরা বাঁচতে চাই। দু বছরের শিশুটা বারে বারে মৃত্যু মায়ের স্তনের দিকে তাকিয়ে রইল। এক ফুটা দুধ খাবে বলে। তৃষ্ণক্ত তুরুণী চাচ্ছে এক ফুটা জল।
আট বছর বালকটা চিৎকার দিয়ে বলতেছে কোথায় গেল মানবতা? কী অপরাধ করেছি আমি? কেন আমার একটি পা বোমার আঘাতে উড়ে গেল। আমি কী মানুষ নয়? আমাকে কি স্রষ্টা সৃষ্টি করে নাই? হাই! স্রষ্টা তো আমাকে খুব সুন্দর করে সৃষ্টি করেছিল। তবে প্রতি হিংসার আগুনে আমাকে পুড়িয়ে মারলে তোমরা। আমি মানুষ! এর চেয়ে বড় পরিচয় আর কী হতে পারে?
জয়ঃ নিজ দেশ ত্যাগ করে একটি ছয় ঋতুর দেশে বাস করতেছে। জয় ভিন্ন একটি দেশে গিয়ে এক দরবেশের কাছে আশ্রয় করে নিল।
ইতি মেয়েটি দেখতে শোনতে বেশ ভাল। ইতি আর জয় পাশা পাশি বাড়িতে বাস করে। তারা দু জন দু জনাকে বেশ পছন্দ করে।
দরবেশঃ জয়কে লক্ষ্য করে বলল, বাবা তোমার তো বাহুতে বেশ শক্তি দেখা যাচ্ছে। এক কাজ করো, তুমি প্রতিদিন সকালে ওঠে আমার সাথে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দাও।
জয়ঃ না, আমি তা পারব না। এসব আমি পছন্দ করি না। তাইতো নিজ দেশ ছেড়ে এইখানে এসেছি। এখানেও যদি যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখি এইখান থেকে পালাব।
দরবেশঃ জয় তোমাকে যুদ্ধ করতে বলতেছি না। তবে এইটা শিখে রাখলে তো কোন সমস্যা নাই।
জয়ঃ আমার এসবের প্রতি ঘৃণা জন্মে গেছে।
দরবেশঃ জয়! সব সময় বীররা অন্যের রাজ্য দখল করার জন্য যুদ্ধ করে না। কখনো কখনো নিজের দেশ বাঁচানোর জন্যও যুদ্ধ করতে হয়।
জয়ঃ তাই! ঠিক আছে আমি রাজি।
ভোর সকালে ঘুম থেকে উঠে জয় যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। প্রথমে তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধে শিখতেছে। পরে অন্য সব রকমের যুদ্ধও শিখে নিবে।
ইতিঃ রিতি মতো জয়কে বিরক্ত করে যাচ্ছে। আর হাসা হাসি করতেছে ।
ইতিঃ জয়! তোমার মাথায় কি পোঁকা ডুকছে। এই সব যুদ্ধ-টুদ্ধ দিয়ে কী করবে?
জয়ঃ আমি তো আর যুদ্ধ করতে যাচ্ছি না। আমাকে নিয়ে এত ভয় কিসের?
ইতিঃ ভয় করতেছে না। তবে বিরক্ত লাগতেছে। তুমি যুদ্ধের পশিক্ষণ দিয়ে যে সময়টা ব্যয় করতেছে। এই সময়টা যদি আমার পিছনে দাও অনেক ভাল হতো।
জয়ঃ আমি তো তোমর জন্য করেতেছি এসব।
ইতিঃ মানে! আবার আমাকে কেন জড়াচ্ছ? আমার সাথে যুদ্ধের কোন সম্পর্ক নাই।
জয়ঃ নাই! তবে যদি কোন বীর পুরুষ এসে তোমাকে হরণ করতে চাই-তখন আমার বীরত্ব প্রমাণ করে দিব।
ইতিঃ জয় তুমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছ? তোমার মাথায় এমন যুদ্ধের মায়া কেন জন্মাল? তুমি তো দেখছি যুদ্ধ ছাড়া কিছুই বুঝতেছ না।
জয়ঃ মায়া নাই। তবে ভয় আছে।
বেশ কিছু দিন পার হয়ে গেল। জয় তখন ক্ষেতে গিয়ে বসে আছে। দরবেশ কাছে এসে বলল, জয় তোকে তো দেখতেছি বেশ আনন্দে আসিছ। ঠিক আছে এইবার তো ফসলও ভাল হয়েছে। আর তোকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করতে হবে না।
জয়ঃ আপনি কী বলতেছেন কিছুই বুঝতেছি না?
দরবেশঃ আমি আজ ইতির বাসায় গিয়েছিলাম। তার পরিবারের সাথে আমার কথা হয়েছে। আগামী ১২ই ফাল্গুন তোদের বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়ে গেল।
জয়ঃ লজ্জায় চেহেরাটা নিচু করল।
জয় একা আনমনে জানলার পাশে বসে আছে। তার চেহেরাটা বেশ মলীন। দরবেশ বাড়িতে ডুকা মাত্র জয় দাঁড়িয়ে গেল। দরবেশ তার চেহেরার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারল তার ভিতর কী হচ্ছে।
দরবেশঃ জয়! মন খারাপ করিস না। তুই বিয়ের পর নিজ দেশে ফিরে যাস। ইতিকে নিয়ে এইখানে থাকার কোন প্রয়োজন নাই।
জয়ঃ না বাবা! আমি ওখানে কখনো যাব না। যদিও আমার মন চাই বারে-বারে যেতে। ওখানের মাটির সাথে তো যুদ্ধের গন্ধ লেগে আছে। ওখানে থাকলে সদা মৃত্যুর গন্ধ পাওয়া যাবে। আমি ইতিকে নিয়ে ওখানে থাকতে পারব না।
ইতি আর জয় শষ্য ক্ষেতের পাশে বসে গল্প করতেছে।
ইতিঃ জয়! আমি কিন্তু আর দেখা করতে পারব না।
জয়ঃ কেন? সমস্যা কী-তোমাকে কী কেউ বাঁধা দিচ্ছে?
ইতিঃ না বাঁধা দিচ্ছে না। তবে সংকোচ লাগতেছে। আর দু দিন পর তো আমাদের বিয়ে। বিয়ের পর তো প্রতিদিন দেখতে পাবে।
জয়ঃ প্রতিদিন না, প্রতিক্ষণ দেখতে পাব। আমি তো তোমাকে এক মুহূর্তের জন্যও আঁড়াল করব না।
ইতিঃ আমি এইবার যাই। বাসায় অনেক কাজ পড়ে আছে। এইবার একটু বাসায় সময় দিব। এতদিন তো শুধু জয়কে দিয়েছি শেষ সময়ে একটু-
রাতের খাবার শেষ করে জয় ঘুমাতে গেল। হঠাৎ চারিদিকে দিক থেকে চিৎকার চেচামেছি শুনা যাচ্ছে। কামানের শব্দ কানে ভেসে আসতেছে। তুরুণী নারীর চিৎকার শোনা যাচ্ছে। জয় বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল।
চারি দিকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতেছে। পশু পাখি সব পুড়িয়ে মরল। ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। বুঝতে আর দেরি হলো না-
কোন যুদ্ধ প্রিয় নিষ্ঠুর জাতি এই অসহায় মানুষদের উপর ঝাপিয়ে পড়ল। জয় যুদ্ধের সাজে সজ্জিত হয়ে হাতে একটি তলোয়ার নিয়ে বেরিয়ে যেত চাইল।
তখন দরবেশ তাকে বাঁধা দিয়ে বলল, জয় তোর এখনো যাওয়ার সময় হয়নি। দরবেশ নিজেও যুদ্ধের সাঝে সজ্জিত হলো।
দরবেশ বলল, জয় আমি যাচ্ছি আর ফিরে আসা হবে কিনা জানি না। তুই ইতির দিকে দৃষ্টি রাখ।
তুমল যুদ্ধ শুরো হয়ে গেল। গাভীর স্তনে দুধ শুকিয়ে গেল। সবাই ক্ষুধায় কাতর হয়ে আছে। তার উপর যুদ্ধের ভয়। কখন বোমা ফুটবে? কখন হাত পা একটি হারিয়ে যাচ্ছে? এখন তাদের বেঁচে থাকাটা মরে যাওয়ার চেয়েও বেশি কঠিন হয়ে দাঁড়াল।
জয়র বুকের মাঝে ইতি মাথাটা রেখে ঘুমিয়ে ছিল। জয়েরও ঘুম আসল।
এই সে বীর। যার কীর্তি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে। আজ সে জয়ের মুখো মুখী। দু জনের মধ্যে তুমল যুদ্ধ হচ্ছে। অবশেষে রুদ্র হার মানল।
জয়ঃ বাবা! আমি তোমার সন্তান। যুদ্ধের ভয়ে এই দেশে পালিয়ে আসলাম। তবু আমাকে বাঁচতে দিলে না। কী অপরাধ করেছিলাম আমরা? বাবা আমি তোমাকে ক্ষমা করতে পারব না। এই বলে জয় রুদ্রেরের বুকে চুরি চালিয়ে দিচ্ছে। এমন সময় জয় চিৎকার করে ঘুম থেকে ওঠে গেল।
ইতিঃ জয়কে বুকে জড়য়ে ধরে বলল, তুমি ভয় পাচ্ছ? আমাদের কিছুই হবে না। আমরা তো কোন পাপ করি নাই।
জয়ঃ আমার ভয় হচ্ছে না। তবে দূর স্বপ্ন দেখছি-
ইতিঃ কী দূর স্বপ্ন দেখছো?
জয়ঃ তোমাকে তো আগে বলা হয়নি-আমার বাবা বিশ্ব শ্রেষ্ট বীর। আর এই যুদ্ধে আমার বাবা নিজেও যুদ্ধ করে যাচ্ছে। আমি স্বপ্ন দেখছি বাবার বুকে চুরি চালাচ্ছি।
ইতিঃ না জয়! তা কখনো হতে পারে না। তুমি দূর চিন্তা করো না।
জয়ঃ যদি চোখের সামনে পড়ে তাই হবে-
ইতিঃ মানে?
জয়ঃ কাউকে ক্ষমা দিব না। যারা এই ঘুমন্ত শহরের উপর ঝাপিয়ে পড়ছে-কী অপরাধ করেছিল এই দেশের জনগন? কীসের বাবা? কার বাবা? আমার পরিচয় আমি একজন মানুষ। আর আমার বাবার হাতে যে সন্তানরা মারা গেছে তারাও মানুষ তারাও কারো না কারো সন্তান।
ইতিঃ চুপ করো জয়! এমন কথা বলতে নাই।
দেশে দূরভিক্ষ শুরো হয়ে গেল। কোথাও এক ফুঁটা জলও পাওয়া যাচ্ছে না। ইতি তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়ে রইল। মাইল দু এক দূরে একটি নদী আছে। জয় সেখানে গিয়েও ব্যর্থ হলো। নদীতে আর পানি নাই। নদীর পানি রক্তে পরিণত হলো। জয় ফিরে এসে দেখত পেল। ইতি তাকে বিদায় জানাল। জয় আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না।
জয়ের বীরত্ব এখন তার বাবাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববাসি জানতে পারল এমন একজন। বীর জন্ম নিলে যে কোন বাঁধাকে ভয় করে না।
জয়ের বিপক্ষে শত্রু পক্ষ দুর্ভল হয়ে পড়ল। তারা পালাবার রাস্তা খোঁজতেছে।
রুদ্রঃ সঙ্গী দের লক্ষ্য করে বলল, কে সে এমন বীর? আমি তার সাথে লড়তে চাই। ভাগ্য ক্রমে তাই হয়েছিল। যুদ্ধের এক পর্যায়ে। জয় আর রুদ্র মুখো মুখী হলো। জয়, চিনতে পারল এই সে বীর যে তার জন্ম দাতা। তবু প্রাণ পণে যুদ্ধে চালিয়ে যাচ্ছে। অবশেষে তাই হতে যাচ্ছে রুদ্র মাটিতে পড়ে গেল-সেই সাথে জয় আর দেরি না করে রুদ্রেরের গলার উপর চুরিটা বসাল। পিছন থেকে একজন তাকে স্পর্শ করল।
জয়ঃ পিছনে ফিরে দেখল দরবেশ।
জয়ঃ দরবেশের দিকে তাকাল।
দরবেশঃ মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিল। চুরি না চালাতে।
জয়ঃ তার কথা রাখল। তবে চুরি না চালিয়ে থামল না। জয় চুরিটা নিজের দিকে চলিয়ে দিয়ে বলল, “হে যুদ্ধ প্রিয় বাবা! বিদায় তোমায়! বিদায়! বাবা ! কী অপরাধ করেছিল এই শহরের ঘুমন্ত মানুষেরা? কী অপরাধ করেছিল আমার ইতি?
দরবেশঃ জয়কে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, জয়! তুই কি করেসিছ? জয়! কাথা বল-জয় কথা বল!
রুদ্রঃ জয়কে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, জয় আমি তোর বাবা! আমার দিকে তাকা আমি আর যুদ্ধ করব না। বাবা তোর সব কথা রাখব আমি-
তবে জয়কে আর ফেরা গেল না।
রুদ্র সকল সৈন্যদের নির্দেশ দিল যুদ্ধ বন্ধ করতে। তারপর নিজে দেশে ফিরে গিয়ে-তাদের যুদ্ধ প্রিয় রাজকে কেটে টুকরো- টুকুরো করল। তবু জয় ফিরে এল না।
রুদ্রঃ এখন পাগল হয়ে এদিক-ওদিক ঘুরে আর জয়কে খোঁজে। আর চিৎকার করে বলে-আমি যুদ্ধ চাই না! আমি যুদ্ধ চাই-না বাবা। বাবা আমি যুদ্ধ চায় না। যুদ্ধ কখনো শান্তি দিতে পারে না। ফিরে আয় জয় ফিরে আয়।
সমাপ্ত
যুদ্ধ চাই না
মোমিনুল হক আরাফাত
সিকাত, সে এক মহান রাজা। সে সব চেয়ে বেশি ভালবাসে তার স্ত্রীকে। আর যুদ্ধ করা তার এক প্রকারে নেশা হয়ে দাঁড়াল। অন্যের রজ্য দখল করে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা, হাজার হাজার মানুষকে মারার মধ্যে সে যথেষ্ট সুখ পায়।
সেই রাজ্যের এক বীর যোদ্ধার স্ত্রী হলো এপি।
ঠিক তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে সূর্য বিদায় নেওয়ার পালা। এপি ছাদের উপর দাঁড়িয়ে নীরবে পাখিদের ফিরে যাওয়া দেখতেছে হয়তো কী যেন ভাবতেছে। হঠাৎ পিছন থেকে কার যেন পায়ের শব্দ পেয়ে চমকে ওঠে-পিছনে ফিরে দেখতে পেল। তার ননদী নিহা।
নিহাঃ আরে ভয় পেয়েছ নাকি?
এপিঃ না ভয় পাওয়ার কি আছে? একটু আনমনে ছিলাম তাই।
নিহাঃ ভাবি! আনমনে থেকে কাকে ভাবতেছো?
এপিঃ না তো কাউকে ভাবতেছি না।
নিহাঃ আর ভাবতে হবে না একটু বাসায় এসে দেখে যাও-
এপিঃ মানে! আবার কি দেখবো?
নিহাঃ তোমার বর চলে আসছে। শুনলাম তিন মাসের লম্বা ছুঠি নিয়ে আসছে। এখন তো আর তোমাকে খোঁজে পাওয়া যাবে না। ভাইয়া তো সারাক্ষণ তোমাকে চোখের সামনে রেখে দিতে চায়।
এপিঃ একটু মৃদু হেসে বলল, তোমার ভাইয়া তো সারাক্ষণ যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত থাকে তাই তাঁর মনে ভয়। কখন যে আবার আমায় একা রেখে ওপাড়ে চলে যাই। তাই যখন সময় পাই তখন আমাকে ছাড়া অন্য কিছু দেখতে চায় না।
নিহাঃ আরে! আমার ভাইয়াকে পৃথিবীথেকে সরাবে এমন কউে জন্মনে নি। আমাদের দেশের সৈন্যরা বিশ্ব সেরা। তার মধ্যে ভাইয়ার তো তুলনাও হয় না। তারনা কত সুনাম কত অর্জন।
এপিঃ সব কিছুর একদিন শেষ হয় আগুন নিয়ে যারা খেলে। তারা তো সবাই আগুনে পুড়ে মরে। আর সব কিছুর স্থায়িত্ব বেশি দিন হয় না। একদিন না একদিন নিঃশেষ হয়ে যায় সব।
নিহাঃ যাক! এসব বাঁধ দিয়ে ভাইয়ার কাছে যাও। নাহয় রাগ করবে।
রুদ্র তখন বিছনার উপর শুয়ে ছিল। হয়তো ক্লান্ত লাগতেছে অনেক দূর থেকে আসছে। তবে এইবার তিন মাসের ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরছে। বিয়ে হয়েছে বেশ কিছু দিন আগে। তবে যুদ্ধের কারণে স্ত্রীর পাশে বেশি দিন থাকা হয়নি। এপিও এখনো গর্ভ ধারণ করতে পারেনি।
এপিঃ রুমের মধ্যে আসার সাথে-সাথে রুদ্র বিছনা থেকে উঠে গেল।
রুদ্রঃ এপিকে বুকে ঝড়িয়ে নিয়ে তার কপালে একটি চুমু করল। এপি তখন চোখ দুটি বন্ধ কওে রেখেছিল। যদিও তারও ইচ্ছা ছিল রুদ্রকে একটি চুমু করবে । তবে পারে নাই হয়তো লজ্জা পেয়েছিল।
রাতের খাওয়া শেষ হলো। নিহা এসে বলল, ভাবি আজ তুমি যাও। আমি টেবিলটা গুছিয়ে নিচ্ছি।
এপিঃ না। তুমি যাও আমি পারব।
নিহাঃ আরে ভাবি এত ভাববার কি আছে? তুমি তো প্রতিদিন করতেছ। তবে আজ ভাইয়া বাসায় আছে যাওনা? ভাইয়া তো সৈনিক মানুষ কখন আবার যুদ্ধে চলে যেতে হবে তার কোন ঠিক নাই।
এপিঃ একটি দীর্ঘশ্বাস দিয়ে নিহার কপালে একটি চুমু করে রুমে চলে আসল।
এপিঃ রুদ্রকে লক্ষ্য করে বলল, তুমি আমার কাছে কী চাও?
রুদ্রঃ আমি এমন একজন বীর সন্তান চাই। যে আমার চেয়েও বড় বীর হবে। তার চোখে আমাকে তো ভীরু মনে হবে। এমন একটি ছেলে কী আমাকে উপহার দিতে পারবে না? যে পুরো বিশ্বটাকে কাঁপিয়ে তুলবে? যে এনে দিবে এই দেশটাকে অনেক ধন-সম্পদ যে হাজার হাজার বীরদেরকে পায়ের তলায় পিশিয়ে দিবে।
এপিঃ না আমি এমন কোন সন্তান দিব না। আমি একটি নিরহ সন্তান উপহার দিব। যে যুদ্ধ চাই না, যে মানবতার জয় চাই।
পরদিন খবর এল তাদের দেশের রাজা নতুন একটি রাজ্য জয় করতে চাচ্ছে। এখন সব সৈন্যরা তৈরি, তারা রুদ্রেরের অপেক্ষায় আছে। রুদ্রেরের বাহুতে যত শক্তি অন্যদের বাহুতে তত শক্তি ছিল না। শুধু শক্তি না। তার মাথায়ও যথেষ্ট উপস্থিত বুদ্ধি ছিল। তাই তাকে যুদ্ধে হারানোটা কারো পক্ষে সম্ভব ছিল না। রুদ্র আর দেরি না করে এপির কাপালে একটি চুমু দিয়ে বিদায় নিল।
এপি এখন গর্ভবতী! তার কথাটা তার গর্ভের বাচ্ছাটা রাখতে পারবে কিনা সন্দেহ হচ্ছে। এইযে মাত্র চার মাস হলো গর্ভে এল। এপির তো মনে হচ্ছে। তার পেটটাকে তার সন্তান যুদ্ধের ময়দান বানিয়ে নিল। এর আগে তো মেয়েদের অনেক সন্তান জন্ম নিল। তবে কারো অবস্থা এপির মতো হলো না। সারাক্ষণ তার পেটের ভিতর যন্ত্রণা করতে লাগল। তার মনে হচ্ছে এই বীর সিংহটা তার পেটের ভিতর এত বেশি দিন থাকাটা পছন্দ করতেছে না। তারও ভয় হচ্ছিল কারণ বীর সিংহটা যে ভাবে যুদ্ধ শুরো করেদিল। মা-নে কখন যে আবার সে যুদ্ধের ময়দানটা পেটে বের হয়েগিয়ে মা বাচ্ছা দু জন মারা পড়বে।
যাই হোক! এইভাবে পার হলো আটটি মাস। বাচ্ছা আর এই ছেট্ট ময়দানে যুদ্ধ করাটা পছন্দ করল না। সে চলে আসল পৃথিবীর বুকে। যদিও সে আট মাসে পৃথিবীতে চলে আসল। তবু তার দেহ দেখে মনে হয়েছিল পুরো দুইটি বছর মায়ের পেটে আরামে ঘুমিয়ে ছিল। যুদ্ধের কোন চিহ্ন বা হতাশা, ক্লন্ততা তার মাঝে ছিল না। আহা! কি সুন্দর পুটপুটে বাচ্ছা চোখ দুটি বড় বড় দেখে বুঝা গেল বীরের বাচ্ছা বীর হবেই।
যাই হোক! ছেলেটির নাম দেওয়া হলো জয়। কারণ তার মাঝে পরাজয়ের কোন চিহ্ন ছিল না। রুদ্র আর ফিরে আসল না। রুদ্র এখনো যুদ্ধে নিয়জিত। কে জানে কত সুনাম এতদিনে জমিয়েছে?
এপিঃ ছেলেটিকে কোলে নিয়ে বলতে লাগল। বাবা! তোকে আমি বীর হতে দিব না। তোকে আমি যুদ্ধ করতে দিব না। যুদ্ধ কখনো শান্তি দিতে পাওে না।
জয় ধীরে ধীরে বড় হতে লাগল। আস্তে আস্তে এপির সন্দেহটা কেটে গেল। যদিও জয় মায়ের গর্ভের মধ্যে যুদ্ধ শুরো করে দিয়েছিল। কিন্ত পৃথিবীর আলো বাতাস পেয়ে তা পরিবর্তন হতে লাগল। জয় যুদ্ধ করা পছন্দ কওে না। যখন তার বয়স ৯-১০ হলো তখন সে বুঝতে পারল। ঐ দেশ তাকে বীর বানিয়ে ছাড়বে। বাবার চেয়েও বড় বীর তাকে হতে হবে। যদিও জয় এখনো বাবাকে দেখে নাই। তবে বাবার বেশ কীর্তি শুনেছিল মানুষের কাছে।
একদিন জয় বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেল। আর মাকে বলে গেল। এই দেশ তাকে বীর বানিয়ে ছাড়বে। তাই সে এই দেশ ত্যাগ করে অন্য কোথাও গিয়ে আশ্রয় করে নিবে। তাই এপি সন্তান হারিয়ে বেশি চিন্তা করে নাই। কারণ জয় যেখান আছে সুখে আছে। ঐ দেশটা তো তাকে বাবার মতো বীর বানিয়ে ছাড়ত।
নিহাঃ ভাবি মন খরাপ নাকি?
এপিঃ হ্যাঁ মন ভিষণ খারাপ।
নিহাঃ ভাবি দূর চিন্তা করো না জয় একদিন না একদিন ফিরে আসবে।
এপিঃ জয় কখনো এই রাজ্যে ফিরে আসবে না। তাই আমি তাকে নিয়ে দূর চিন্তা করি না। আমার কোন ভয় নাই। আমার ছেলে যেখানে আছে সুখে আছে।
নিহাঃ তাহলে মন খারাপ কেন? আরে! ভাইয়ার কিছু হবে না। হয়তো ব্যস্ত আছে তাই চিঠি দিতে পারতেছে না।
এপিঃ তোমার ভাইয়াকে নিয়ে আমার কোন দূর চিন্তা হচ্ছে না।
নিহাঃ কি হলো? তোমাকে দেখেতে বিষন্ন মনে হচ্ছে কেন? কি হয়েছে একটু জানতে পারি?
এপিঃ তোমার ভাইয়া যাদের বুকের উপর আঘাত হানতেছে তাদের জন্য আমার মন কাঁদতেছে?
নিহাঃ তাদের জন্য কেন মন কাঁদবে? তারা তো ভিন্ন দেশী, ভিন্ন জাতি, ভিন্ন ধর্মের লোক। তাদের নিয়ে যদি মন কাঁদে পাপ হবে।
এপিঃ পাপ পণ্যেূর হিসাব যদি তোমাদের রাজাই করত। তবে পাপ হতো। একইশ্বর যখন পাপ পণ্যেূর হিসাব নিবে। পাপ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই। আজ অমি এই দেশে জন্ম না নিয়ে যদি ঐ যুদ্ধ গ্রস্থ দেশে জন্ম নিতাম তখন আমার স্ব-জাতি হতো তারা। আর ধর্ম নিয়ে কথা বলার আগে ধর্মে সম্পের্কে জানা তো দরকার। স্রষ্টা তো বলে নাই যে ভিন্ন জাতিকে ধ্বংস করে দিতে। তবে অপরাধীরা শাস্তি যোগ্য। তাই বলে একটি জাতিকে ধ্বংস করে দেওয়া উচিত না। তাদের মধ্যে অনেক এখনো ধর্ম বা জাতি কী তা বুঝে উঠার সময় পাইনি। অনেক মায়ের গর্ভে থেকে পৃথিবীতে আসার সুযোগ পাইনি। বোমার আঘাতে সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। শত শত নারী, শিশু, বৃদ্ধ, আর্তাকার করে যাচ্ছে। তারা বলতেছে আমরা যুদ্ধ চাই না। আমরা বাঁচতে চাই। দু বছরের শিশুটা বারে বারে মৃত্যু মায়ের স্তনের দিকে তাকিয়ে রইল। এক ফুটা দুধ খাবে বলে। তৃষ্ণক্ত তুরুণী চাচ্ছে এক ফুটা জল।
আট বছর বালকটা চিৎকার দিয়ে বলতেছে কোথায় গেল মানবতা? কী অপরাধ করেছি আমি? কেন আমার একটি পা বোমার আঘাতে উড়ে গেল। আমি কী মানুষ নয়? আমাকে কি স্রষ্টা সৃষ্টি করে নাই? হাই! স্রষ্টা তো আমাকে খুব সুন্দর করে সৃষ্টি করেছিল। তবে প্রতি হিংসার আগুনে আমাকে পুড়িয়ে মারলে তোমরা। আমি মানুষ! এর চেয়ে বড় পরিচয় আর কী হতে পারে?
জয়ঃ নিজ দেশ ত্যাগ করে একটি ছয় ঋতুর দেশে বাস করতেছে। জয় ভিন্ন একটি দেশে গিয়ে এক দরবেশের কাছে আশ্রয় করে নিল।
ইতি মেয়েটি দেখতে শোনতে বেশ ভাল। ইতি আর জয় পাশা পাশি বাড়িতে বাস করে। তারা দু জন দু জনাকে বেশ পছন্দ করে।
দরবেশঃ জয়কে লক্ষ্য করে বলল, বাবা তোমার তো বাহুতে বেশ শক্তি দেখা যাচ্ছে। এক কাজ করো, তুমি প্রতিদিন সকালে ওঠে আমার সাথে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দাও।
জয়ঃ না, আমি তা পারব না। এসব আমি পছন্দ করি না। তাইতো নিজ দেশ ছেড়ে এইখানে এসেছি। এখানেও যদি যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখি এইখান থেকে পালাব।
দরবেশঃ জয় তোমাকে যুদ্ধ করতে বলতেছি না। তবে এইটা শিখে রাখলে তো কোন সমস্যা নাই।
জয়ঃ আমার এসবের প্রতি ঘৃণা জন্মে গেছে।
দরবেশঃ জয়! সব সময় বীররা অন্যের রাজ্য দখল করার জন্য যুদ্ধ করে না। কখনো কখনো নিজের দেশ বাঁচানোর জন্যও যুদ্ধ করতে হয়।
জয়ঃ তাই! ঠিক আছে আমি রাজি।
ভোর সকালে ঘুম থেকে উঠে জয় যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। প্রথমে তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধে শিখতেছে। পরে অন্য সব রকমের যুদ্ধও শিখে নিবে।
ইতিঃ রিতি মতো জয়কে বিরক্ত করে যাচ্ছে। আর হাসা হাসি করতেছে ।
ইতিঃ জয়! তোমার মাথায় কি পোঁকা ডুকছে। এই সব যুদ্ধ-টুদ্ধ দিয়ে কী করবে?
জয়ঃ আমি তো আর যুদ্ধ করতে যাচ্ছি না। আমাকে নিয়ে এত ভয় কিসের?
ইতিঃ ভয় করতেছে না। তবে বিরক্ত লাগতেছে। তুমি যুদ্ধের পশিক্ষণ দিয়ে যে সময়টা ব্যয় করতেছে। এই সময়টা যদি আমার পিছনে দাও অনেক ভাল হতো।
জয়ঃ আমি তো তোমর জন্য করেতেছি এসব।
ইতিঃ মানে! আবার আমাকে কেন জড়াচ্ছ? আমার সাথে যুদ্ধের কোন সম্পর্ক নাই।
জয়ঃ নাই! তবে যদি কোন বীর পুরুষ এসে তোমাকে হরণ করতে চাই-তখন আমার বীরত্ব প্রমাণ করে দিব।
ইতিঃ জয় তুমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছ? তোমার মাথায় এমন যুদ্ধের মায়া কেন জন্মাল? তুমি তো দেখছি যুদ্ধ ছাড়া কিছুই বুঝতেছ না।
জয়ঃ মায়া নাই। তবে ভয় আছে।
বেশ কিছু দিন পার হয়ে গেল। জয় তখন ক্ষেতে গিয়ে বসে আছে। দরবেশ কাছে এসে বলল, জয় তোকে তো দেখতেছি বেশ আনন্দে আসিছ। ঠিক আছে এইবার তো ফসলও ভাল হয়েছে। আর তোকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করতে হবে না।
জয়ঃ আপনি কী বলতেছেন কিছুই বুঝতেছি না?
দরবেশঃ আমি আজ ইতির বাসায় গিয়েছিলাম। তার পরিবারের সাথে আমার কথা হয়েছে। আগামী ১২ই ফাল্গুন তোদের বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়ে গেল।
জয়ঃ লজ্জায় চেহেরাটা নিচু করল।
জয় একা আনমনে জানলার পাশে বসে আছে। তার চেহেরাটা বেশ মলীন। দরবেশ বাড়িতে ডুকা মাত্র জয় দাঁড়িয়ে গেল। দরবেশ তার চেহেরার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারল তার ভিতর কী হচ্ছে।
দরবেশঃ জয়! মন খারাপ করিস না। তুই বিয়ের পর নিজ দেশে ফিরে যাস। ইতিকে নিয়ে এইখানে থাকার কোন প্রয়োজন নাই।
জয়ঃ না বাবা! আমি ওখানে কখনো যাব না। যদিও আমার মন চাই বারে-বারে যেতে। ওখানের মাটির সাথে তো যুদ্ধের গন্ধ লেগে আছে। ওখানে থাকলে সদা মৃত্যুর গন্ধ পাওয়া যাবে। আমি ইতিকে নিয়ে ওখানে থাকতে পারব না।
ইতি আর জয় শষ্য ক্ষেতের পাশে বসে গল্প করতেছে।
ইতিঃ জয়! আমি কিন্তু আর দেখা করতে পারব না।
জয়ঃ কেন? সমস্যা কী-তোমাকে কী কেউ বাঁধা দিচ্ছে?
ইতিঃ না বাঁধা দিচ্ছে না। তবে সংকোচ লাগতেছে। আর দু দিন পর তো আমাদের বিয়ে। বিয়ের পর তো প্রতিদিন দেখতে পাবে।
জয়ঃ প্রতিদিন না, প্রতিক্ষণ দেখতে পাব। আমি তো তোমাকে এক মুহূর্তের জন্যও আঁড়াল করব না।
ইতিঃ আমি এইবার যাই। বাসায় অনেক কাজ পড়ে আছে। এইবার একটু বাসায় সময় দিব। এতদিন তো শুধু জয়কে দিয়েছি শেষ সময়ে একটু-
রাতের খাবার শেষ করে জয় ঘুমাতে গেল। হঠাৎ চারিদিকে দিক থেকে চিৎকার চেচামেছি শুনা যাচ্ছে। কামানের শব্দ কানে ভেসে আসতেছে। তুরুণী নারীর চিৎকার শোনা যাচ্ছে। জয় বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল।
চারি দিকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতেছে। পশু পাখি সব পুড়িয়ে মরল। ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। বুঝতে আর দেরি হলো না-
কোন যুদ্ধ প্রিয় নিষ্ঠুর জাতি এই অসহায় মানুষদের উপর ঝাপিয়ে পড়ল। জয় যুদ্ধের সাজে সজ্জিত হয়ে হাতে একটি তলোয়ার নিয়ে বেরিয়ে যেত চাইল।
তখন দরবেশ তাকে বাঁধা দিয়ে বলল, জয় তোর এখনো যাওয়ার সময় হয়নি। দরবেশ নিজেও যুদ্ধের সাঝে সজ্জিত হলো।
দরবেশ বলল, জয় আমি যাচ্ছি আর ফিরে আসা হবে কিনা জানি না। তুই ইতির দিকে দৃষ্টি রাখ।
তুমল যুদ্ধ শুরো হয়ে গেল। গাভীর স্তনে দুধ শুকিয়ে গেল। সবাই ক্ষুধায় কাতর হয়ে আছে। তার উপর যুদ্ধের ভয়। কখন বোমা ফুটবে? কখন হাত পা একটি হারিয়ে যাচ্ছে? এখন তাদের বেঁচে থাকাটা মরে যাওয়ার চেয়েও বেশি কঠিন হয়ে দাঁড়াল।
জয়র বুকের মাঝে ইতি মাথাটা রেখে ঘুমিয়ে ছিল। জয়েরও ঘুম আসল।
এই সে বীর। যার কীর্তি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে। আজ সে জয়ের মুখো মুখী। দু জনের মধ্যে তুমল যুদ্ধ হচ্ছে। অবশেষে রুদ্র হার মানল।
জয়ঃ বাবা! আমি তোমার সন্তান। যুদ্ধের ভয়ে এই দেশে পালিয়ে আসলাম। তবু আমাকে বাঁচতে দিলে না। কী অপরাধ করেছিলাম আমরা? বাবা আমি তোমাকে ক্ষমা করতে পারব না। এই বলে জয় রুদ্রেরের বুকে চুরি চালিয়ে দিচ্ছে। এমন সময় জয় চিৎকার করে ঘুম থেকে ওঠে গেল।
ইতিঃ জয়কে বুকে জড়য়ে ধরে বলল, তুমি ভয় পাচ্ছ? আমাদের কিছুই হবে না। আমরা তো কোন পাপ করি নাই।
জয়ঃ আমার ভয় হচ্ছে না। তবে দূর স্বপ্ন দেখছি-
ইতিঃ কী দূর স্বপ্ন দেখছো?
জয়ঃ তোমাকে তো আগে বলা হয়নি-আমার বাবা বিশ্ব শ্রেষ্ট বীর। আর এই যুদ্ধে আমার বাবা নিজেও যুদ্ধ করে যাচ্ছে। আমি স্বপ্ন দেখছি বাবার বুকে চুরি চালাচ্ছি।
ইতিঃ না জয়! তা কখনো হতে পারে না। তুমি দূর চিন্তা করো না।
জয়ঃ যদি চোখের সামনে পড়ে তাই হবে-
ইতিঃ মানে?
জয়ঃ কাউকে ক্ষমা দিব না। যারা এই ঘুমন্ত শহরের উপর ঝাপিয়ে পড়ছে-কী অপরাধ করেছিল এই দেশের জনগন? কীসের বাবা? কার বাবা? আমার পরিচয় আমি একজন মানুষ। আর আমার বাবার হাতে যে সন্তানরা মারা গেছে তারাও মানুষ তারাও কারো না কারো সন্তান।
ইতিঃ চুপ করো জয়! এমন কথা বলতে নাই।
দেশে দূরভিক্ষ শুরো হয়ে গেল। কোথাও এক ফুঁটা জলও পাওয়া যাচ্ছে না। ইতি তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়ে রইল। মাইল দু এক দূরে একটি নদী আছে। জয় সেখানে গিয়েও ব্যর্থ হলো। নদীতে আর পানি নাই। নদীর পানি রক্তে পরিণত হলো। জয় ফিরে এসে দেখত পেল। ইতি তাকে বিদায় জানাল। জয় আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না।
জয়ের বীরত্ব এখন তার বাবাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববাসি জানতে পারল এমন একজন। বীর জন্ম নিলে যে কোন বাঁধাকে ভয় করে না।
জয়ের বিপক্ষে শত্রু পক্ষ দুর্ভল হয়ে পড়ল। তারা পালাবার রাস্তা খোঁজতেছে।
রুদ্রঃ সঙ্গী দের লক্ষ্য করে বলল, কে সে এমন বীর? আমি তার সাথে লড়তে চাই। ভাগ্য ক্রমে তাই হয়েছিল। যুদ্ধের এক পর্যায়ে। জয় আর রুদ্র মুখো মুখী হলো। জয়, চিনতে পারল এই সে বীর যে তার জন্ম দাতা। তবু প্রাণ পণে যুদ্ধে চালিয়ে যাচ্ছে। অবশেষে তাই হতে যাচ্ছে রুদ্র মাটিতে পড়ে গেল-সেই সাথে জয় আর দেরি না করে রুদ্রেরের গলার উপর চুরিটা বসাল। পিছন থেকে একজন তাকে স্পর্শ করল।
জয়ঃ পিছনে ফিরে দেখল দরবেশ।
জয়ঃ দরবেশের দিকে তাকাল।
দরবেশঃ মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিল। চুরি না চালাতে।
জয়ঃ তার কথা রাখল। তবে চুরি না চালিয়ে থামল না। জয় চুরিটা নিজের দিকে চলিয়ে দিয়ে বলল, “হে যুদ্ধ প্রিয় বাবা! বিদায় তোমায়! বিদায়! বাবা ! কী অপরাধ করেছিল এই শহরের ঘুমন্ত মানুষেরা? কী অপরাধ করেছিল আমার ইতি?
দরবেশঃ জয়কে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, জয়! তুই কি করেসিছ? জয়! কাথা বল-জয় কথা বল!
রুদ্রঃ জয়কে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, জয় আমি তোর বাবা! আমার দিকে তাকা আমি আর যুদ্ধ করব না। বাবা তোর সব কথা রাখব আমি-
তবে জয়কে আর ফেরা গেল না।
রুদ্র সকল সৈন্যদের নির্দেশ দিল যুদ্ধ বন্ধ করতে। তারপর নিজে দেশে ফিরে গিয়ে-তাদের যুদ্ধ প্রিয় রাজকে কেটে টুকরো- টুকুরো করল। তবু জয় ফিরে এল না।
রুদ্রঃ এখন পাগল হয়ে এদিক-ওদিক ঘুরে আর জয়কে খোঁজে। আর চিৎকার করে বলে-আমি যুদ্ধ চাই না! আমি যুদ্ধ চাই-না বাবা। বাবা আমি যুদ্ধ চায় না। যুদ্ধ কখনো শান্তি দিতে পারে না। ফিরে আয় জয় ফিরে আয়।
সমাপ্ত
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আবু ইসহাক ২১/০৭/২০১৭সত্য, সত্য
-
ন্যান্সি দেওয়ান ১৪/০৭/২০১৭Good
-
শাহানাজ সুলতানা (শাহানাজ) ১২/০৭/২০১৭ভাল