ক্রেডিট কার্ড
ক্রড়িট কার্ড়
লেখক-মোমিনুল হক আরাফাত
ছেলেটার নাম “জয়” নিজ বাসা চট্টগ্রামে। পরিবারের সকল চট্টগ্রামে থাকে। জয় একা এই ফ্লাটে থাকে। কেন থাকে তা জানতে চান? অন্য সকলের মতো বলতে গেলে ছেলেটা নষ্ট হয়ে গেছে। তবে কতটা নষ্ট হয়েছে তা বলা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়াল।
নিপা মেয়েটি নাইট ক্লাবে আসে নাকি ক্লাবে থেকে যায়? অবশ্যই আগে মাঝে মাঝে ক্লাব থেকে বাহির হতে দেখেছিলাম। তবে কখনো বাসায় ফিরে যেতে দেখি নাই। ক্লাব থেকে বেরিয়ে ব্যাংক’কে যেতে দেখেছিলাম। পরে জানা গেল “নিপা” শুধু তখন ক্লাব থেকে বেরুতো, যখন তার টাকা পুরিয়ে যেত। এখন তো আর ব্যাংক’কে যেতে হয় না। ব্যাংক তো পাশেই আছে। এখন “জয়” তার ব্যাংক। টাকা শেষ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই।
দু জন টেবিলে মুখো-মুখি বসে আছে।
নিপাঃ নেশা করে মাতাল হয়ে আছে। নিপা জয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি একটু খাও।
জয়ঃ না। আমার খাওয়ার প্রয়োজন নাই।
নিপাঃ কেন?
জয়ঃ তুমি তো আমার নেশা। আমাকে মাতাল করার জন্য কোন মদের প্রয়োজন নাই। তুমি পাশে থাকলে আমি এমনে মাতাল হয়ে যায়।
নিপাঃ সত্যি তুমি আমাকে দেখলে মাতাল হও? আমিও যদি এভাবে কাউকে দেখে মাতাল হতে পারতাম; তবে এত নেশা করার প্রয়োজন হত না।
জয়ঃ হবে একটু সময়ের প্রয়োজন আছে, সব হবে।
নিপাঃ ওঠে দাঁড়াল। দু এক পা এগিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। কারণ হেঁটে যাওয়ার শক্তিটা তার ছিল না। জয়, বুঝতে পারল তার সাহায্য নিপার একান্ত প্রয়োজন। জয়, নিপার কাছে গিয়ে বলল, কোথায় যাচ্ছ?
নিপাঃ বাত রুমে যা-ব।
জয়ঃ চুপ হয়ে গেল। নিপার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করে যাচ্ছে। তবে এইবার একটু গায়ে লাগল।
জয়, একটু রাগনিত্ব কণ্ঠে বলল, যাও! দাঁড়িয়ে আছ কেন?
নিপাঃ তুমি আমকে নিয়ে চলো আমি হাঁটতে পারতেছি না।
জয়ঃ নিপা তুমি কী পাগল হয়ে গেছ?
নিপাঃ না তো?
জয়ঃ ঠিক বলছ, তুমি পাগল হওনি। পাগল আমি হয়েছি। তাই তোমার পিছু নিয়েছি।
নিপাঃ এত রাগা-রাগির কি আছে? আমাকে ভাল না লাগলে চলে যাও। আমার জীবনে জয়ের অভাব হবে না।
জয়ঃ হ্যাঁ তাই তবে শোন, জয়ের জীবনেও নিপার অভাব হয় না- চ-ল।
নিপাকে পৌঁছে দিয়ে জয় দরজার পাশে মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। প্রায় আধ ঘন্টা পর নিপা বেরিয়ে আসল।
জয়ঃ নিপার দিকে তাকিয়ে বলল, এত অল্প সময়ের মধ্যে চলে আসলে কেন? আরো কয়েক ঘন্টা থেকে গেলে হতো না?
নিপাঃ তোমার কষ্ট হবে। তাই অচিরে চলে আসলাম।
জয়ঃ চল এইবার-
নিপা টেবিলে এসে বসে পড়ল।
জয়ঃ নিপার হাতটা ধরে তাকে ক্লাব থেকে বাহিরে নিয়ে যাচ্ছে।
নিপাঃ “জয়” তুমি আ-মা-কে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?
জয়ঃ যেখানে খুশি সেখানে নিয়ে যাচ্ছি।
নিপাঃ মা-নে?
জয়ঃ আমিতো তোমাকে খুশি রাখার জন্য সারাক্ষণ তোমার সাথে পড়ে আছি। আর নিজেকে ব্যাংক’কে পরিণত করলাম। তুমি কী আমাকে খুশি করার জন্য কিছুই করতে পারবে না?
নিপাঃ জয়কে জড়িয়ে ধরে একটি চুমু দিয়ে বলল, সোনা তোমাকে খুশি রাখার জন্য আমি সব করতে পারি তুমি তো আমার ক্রেডিট কার্ড। কোথায় যেতে হবে?
জয়ঃ রেগেগিয়ে বলল, আর কখেনো আমাকে চুমু করবে না।
নিপাঃ কেনরে জান? তোমার কি এসব ভাল লাগে না?
জয়ঃ ভাল লাগত যদি কোন মেয়ে করত।
নিপাঃ আমি কি মেয়ে না?
জয়ঃ মেয়ের কী আছে তোমার?
নিপাঃ সব আছে দেখতে চাও-
নিপা ব্যস্ত হয়ে উঠল সে মেয়ে তা প্রমাণ করার জন্য তবে-জয় তাড়া তাড়ি নিপার হাত দুটি ধরে বলল, এখন না পরে দেখব। এইবার বাসায় চল।
দু জন বাসায় এসে উপস্থিত।
জয়ঃ নিপাকে বলল, তোমার খিদা পেয়েছে?
নিপাঃ হ্যাঁ।
জয়ঃ আদিকে কল দিয়ে বলল, দুইটা খাবার নিয়ে আয়।
আদি এসে উপস্থিত। আদি, নিপার দিকে তাকিয়ে বলল, দাদা মেয়েটি কে?
জয়ঃ জানি না।
আদিঃ ভাবি মনে হয়?
জয়ঃ একজন মানুষ কয়টা বিয়ে করতে পারে? আমার বাসায় প্রতি মাসে একটি করে মেয়ে আসে। ওরা কী সবাই আমার বউ?
আদিঃ না দাদা। সরি!
জয়ঃ সরি বলার প্রয়োজন নাই। নিপাকে নিয়ে টেবিলে গিয়ে খেয়েনে । আদি বলল, দাদা তুমি খাবে না?
জয়ঃ না। আমার খিদা নাই।
জয়ঃ বিছনাই পা দুটি লম্বা করেদিয়ে একটি বই নিয়ে পড়তে লাগল। এদিকে আদি টেবিল থেকে উঠে চলে আসল।
জয়ঃ কী হল আদি, তুই এইখানে কেন?
আদিঃ দাদা এইটি কী মেয়েরে বাবা?
জয়ঃ কেন? কি হয়েছে?
আদিঃ মেয়েটি তো নেশা করে।
জয়ঃ হ্যাঁ সমস্যা নাই। বড় লোকের একমাত্র মেয়ে তাই নেশা করে। দরিদ্র ঘরের মেয়ে হলে নেশা করার সময় থাকত না। বাবার এত টাকা নেশা না করলে কি শেষ হবে?
আদিঃ এত বড় লোকের সাথে জড়ালে কেন? পরে যদি কোন সমস্যা হয়?
জয়ঃ কোন সমস্যা হলে আমি দেখব? তোর ভয় পাওয়ার কোন প্রয়োজন নাই। এইবার গিয়ে খাবার খেয়েনে। আর পাশের রুমটা খালি আছে। মেয়েটিকে ওখানে ঘুমাতে বলিছ। আর তুইও ঘুমিয়ে যাস।
আদিঃ ঘুমিয়ে পড়ল। একটু পরে আদির কানে জয়ের ডাক আসল- “আদি? এই আদি, তুই কোথায়?
আদি জয়ের কাছে আসার পর।
আদিঃ জি দাদা? আমি আমার রুমে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম দাদা বিশ্বাস করুন।
জয়ঃ লাইট-টা দে।
বাতি জ্বলে উঠার সাথে সাথে “আদি” চেহেরাটা নিচু করে পেলল, কারণ আদি, দেখতে পেল জয়ের বিছনাই “নিপা” নামের সে মেয়েটি।
জয়ঃ আদি! তুই মেয়েটিকে রুমটা দেখিয়ে দিলি না কেন?
আদিঃ দাদা আমি তো দেখিয়ে দিলাম। মেয়েটি বলল, সে একা যেতে পারবে না। তাই নিজে গিয়ে রুমে পৌঁছে দিয়েছিলাম। তবে ভুলটা হচ্ছে দরজাটার বাহিরে বন্ধ করে দিই নাই।
জয়ঃ ঠিক আছে তুই যা।
নিপাঃ না! ওনার কী দোষ? ওনি ভুল করে ঐ রুমটা দেখিয়ে দিয়েছিল। আমি তো চলে আসলাম।
জয়ঃ লক্ষ্ণী এইবার আবার ভুল করে তোমার রুমে চলে যাও, নাহয় আমি ছাদের উপর থেকে সোজা নিচে পাঠিয়ে দিব তোমায়।
নিপাঃ না! আমার একা থাকতে ভয় হয়।
এভাবে কাটিয়ে গেল অনেকটা দিন এইবার জয়ের কাছ থেকে বিদায় নিল নিপা। তবে নিপার স্থানটা খালি পড়ে থাকে নাই। একের পর এক নিপা এসে জয়ের সাথে সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছে।
এক সময় আদিও জয়ের কাছ থেকে বিদায় নিল। সে দিনও নতুন একটি মেয়ে জয়ের বাসাই এসে উপস্থিত।
আদি বলল, দাদা আমি তোমার এইখানে আর থাকতে পারব না। তুমি তো জানো সামনের ফ্লেটের বাড়াটিরা আমার পরিচিত। তারা-
জয়ঃ তারা আমার দূর চরিত্রের কথা তোর পরিবারের কাছে জানিয়ে দিল তাই না? ঠিক আছে চলে যা। যদি কখনো বিপদে পড়িছ আমাকে স্মরণ করিস। আর টাকা পয়সার প্রয়োজন হলে আমাকে জানাস।
জয়কে বেশ কিছু দিন ধরে লক্ষ্য করে যাচ্ছে পাশের ফ্লেটের ইতি।
ইতির ছোট বোনটি জয়কে শ্রদ্ধা করত।
ইতি আর জুই আজও লুকাল বাসের জন্য রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
জয়ঃ গাড়ি নিয়ে বেরুচ্ছে। জয় খুব ভাল করে জানত ইতি তাকে কতটা অপছন্দ করে।
জয়ঃ জুইকে দেখে ঘাড়ি থাময়ে ঘাড়ি থেকে নেমে পড়ল।
জুইঃ কেমন আছো ভাইয়া? কোথায় যাচ্ছ?
জয়ঃ না, কোথাও যাচ্ছি না। এমনে ঘুরতেছি তোমারা কোথায় যাচ্ছ?
জুইঃ ভাইয়া কলেজে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ হয়ে গেল কিন্তু-
জয়ঃ চলো আমি পৌছে দিচ্ছি।
ইতিঃ না, একটু পরে গাড়ি চলে আসবে।
জুইঃ আপু আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকব? আমার ক্লাসে দেরি হয়ে যাচ্ছে। আর দাঁড়াতে পারতেছি না পা ব্যথা করতেছে।
জয়ঃ তুমি চল।
জুই গাড়িতে বসে পড়াল।
ইতিঃ নিজেকে আর সামলে রাখতে পারল না। কারণ জুই ছাড়া আর কেউ তার আপন বলতে নাই। জয় তো-
ইতিও গাড়িতে বসে পড়ল। জয়ের মোবাইল বেঁজে উঠল, কলটি ছিল একটি মেয়ের। মেয়েটি জয়ের সাথে দেখা করতে চাইল। জয় তাকে বলল, “আমার কাজ শেষের দিকে আমি আর কারো সাথে দেখা করব না। আমি দু একদিনের মধ্যে বাংলাদেশে থেকে চলে যাব।
জয় সন্ধ্যায় বাসাই পৌঁছল।
ইতি এসে উপস্থিত। তার চেহেরা দেখে জয়ের বুঝতে দেরি হল না সে কতটা ক্লান্ত। আর রাগের চিহ্নটা চেহেরার উপর ভেসে উঠল।
জয়ঃ তোমার কি মন খরাপ?
ইতিঃ তার কথার কোন উত্তর না দিয়ে বলল, দেখ জয়! আমরা দরিদ্র তবে নষ্ট না। তুমি অন্য কোন মেয়ে...
জয়ঃ দেখ ইতি, জুই আমার ছোট বোনের মত তুমি ভুল বুঝতেছ কেন?
ইতিঃ জয়, আমি তো তোমাকে অনেক দিন ধরে দেখে আসতেছি তোমার সম্পর্কে আমরা চেয়ে কেউ বেশি জানে না।
জয়ঃ তুমি আমাকে ভুল দেখেছিলে তাই ভুল বুঝেছিলে আমার আসল রূপ তোমারা কেউ দেখ নাই।
ইতিঃ জয় তুমি কি চাও? তুমি আমার কাছে যা চাইবে তা দিব তবে আমার অবুঝ বোনটির দিকে তাকাইয় না।
জয়ঃ ইতির দিকে তাকিয়ে বলল, দিতে পারবে?
ইতিঃ চুপ হয়ে গেল।
জয়ঃ আদি তোমাদের পরিচিত তাই না।
ইতিঃ হ্যাঁ।
জয়ঃ ব্যাগ থেকে একটি মেয়ের ছবি বাহির করে বলল, এইরকম আরো অনেক মেয়ের সাথে আমার সম্পর্ক ছিল তবে কাউকে বিয়ে করি নাই। আমি ছাড়া ওরা সবাই এখন সুখে আছে। আমি কাউকে বিয়ে করতে চাই নি। তবে তোমাকে বিয়ে করতে আমার আপত্তি নাই।
ইতিঃ জয় মুখ সামলে কথা বলো।
জয়ঃ ঠিক আছে ভয়ের কোন কারণ নাই। আমি আজ রাতে এইখান থেকে চলে যাচ্ছি। তবে একটি অনুরোধ রইল। একটিবার আদির কাছে গিয়ে এই ছবিটা পৌঁছে দিয়ে বলিও। সেও আমাকে চিনতে ভুল করেছিল। এই মেয়েটি তাকে আমার সম্পর্কে জানিয়ে দিবে।
ইতিঃ ছবিটা দেখে অবাক হয়ে গেল।
ইতি বলল, জয়! তুমি এত বাঝে? আদি নামারে যে ছেলেটা তোমাকে নিজের ভাইয়ের মত দেখতো, তুমি তার বোনের দিকে চোখ দিয়েছিলে? ছি!
জয়ঃ চোখ আছে তাই দিয়েছিলাম। আমার কিছুই করার ছিল না। এসব তো আমার কাজ ছিল। তাদের কাছে না যাওয়াটা অপরাধ ছিল তাই গিয়েছিলাম।
ইতি আদির বাসায় এসে উপস্থিত।
আদিঃ ইতিকে জিঞ্জাস করল “জয়” কেমন আছে?
ইতিঃ ঐ বাঝে ছেলেটার কথা বাঁধ দাও।
আদিঃ আসলে আমার মনে হচ্ছে কোথাও যেন ভুল হচ্ছে।
ইতিঃ ভুল তো এইখানে-তুমি জয়কে নিজের ভাইয়ের মত আপন ভেবেছিলে। আর সে তোমার বোনের সাথেও-
আদিঃ আমি দেখেছিলাম তার কাছে আপুর ছবি। তবে তাকে জিঞ্জাস করার সাহস আমার ছিল না। তাই নিজে বাসা থেকে সরে গিয়েছিলাম। আর জয় অতটা খারাপ ছিল না। তুমি যে বাসাটিতে থাক, ঐ বাসাটাও জয়ের কিনা। সে কথাটা গোপন রাখতে বলেছিল। নাহয় এত অল্প বাড়া দিয়ে ঢাকা শহরে বাসা পাওয়া যায় না।
আদি আর ইতি এপির বাসাই এসে উপস্থিত। তাদেরকে দেখে এপি, বেশ আনন্দিত হল।
এপি জানাতে চাইল তারা কেমন আছে?
আদিঃ ভাল আছি আপু, তুমি কেমন আছ?
এপিঃ এখন বেশ ভালই আছি। আমি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বিয়ে করে অন্যায় করেছিলাম। তাই বলে এতটা দিন আমার কোন খবর নিলি না কেন?
আদিঃ আসলে এতদিন কোথায় ছিলে জানতাম না। তাই দেখা করতে পারি নাই।
এপিঃ বেশ ভালই করেছিলি এত দিন দেখা না করে। যাক এসব কথা বাবা-মা কেমন আছে?
আদিঃ বেশ ভালই আছে। আপু আমি একটা কথা জানতে চাই।
এপিঃ ঠিক আছে বল, কী জানতে চাস?
আদিঃ আপু তুমি কি “জয়” নামের কাউকে চিনতে।
এপিঃ জয়ের নাম শোনে বসা থেকে ওঠে দাঁড়াল।
এপিঃ হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন? তুই কি জয়কে চিনিস?
আদিঃ হ্যাঁ চিনি। তবে প্রশ্নটা আমার না প্রশ্নটা ইতির।
এপিঃ ইতির দিকে তাকিয়ে বলল, জয়কে তোমার কি মনে হয়?
ইতিঃ সে একটি নষ্ট ছেলে।
এপিঃ আসলে ঠিক বলছ! সে নষ্ট ছেলে।
তুমি জয়ের বাইরের রূপ দেখেছিলে। ভিতরটা দেখো নাই। “জয়” এখন কোথায় আছে?
ইতিঃ জানি না-দু একদিন আগে বাসা থেকে চলে গেছে।
এপিঃ কিছু মানুষ নিজের জীবনের সকল চাওয়া পাওয়া ত্যাগ করে, অন্যের সুখের জন্য “জয়” তাঁদের একজন। সে চেয়েছিল একটি আদর্শ সমাজ গড়তে।
আমি যাকে ভালবেসে বাসা ছেড়ে পালিয়ে ছিলাম। সে আমাকে আশ্রায় দিল না। তারপর আমি নষ্ট হয়ে গিয়েছিলাম। নেশার রঙ্গিন মায়ায় জীবনটাকে রাঙ্গিয়ে ছিলাম। সে সাথে নানা অপরাধের সাথে জড়িয়ে গিয়েছিলাম। জয় আমাকে তার বাসায় স্থান দিয়েছিল। ধীরে ধীরে তার প্রেমে পড়ে আমি আবার পূনরাই জীবন ফিরে পেলাম। আমি নেশা ছেড়ে দিলাম। জয় কখনো আমাকে স্পর্শ করে নাই। আমি তাকে বলেছিলাম আমাকে বিয়ে করতে। সে বলেছিল আমাকে বিয়ে করতে পারবে না। কারণ আমার মতো আরো অনেক নষ্ট মেয়কে আলোর দিকে নিয়ে আসতে হবে। এখনো জয়েকে আমি ভুলতে পারি নাই। আসলে জয়কে কাছে পেলে অনেকটা সুখী হতাম আমি। তবে দুঃখ করি না। জয় তো আমার হৃদয়ের মাঝে আছে। আমি তার সম্পর্কে অনেক কিছু জানতাম “জয়” বলেছিল এই সমাজ তাকে ভুল বুঝতে লাগল। এমনকি তার পরিবারের লোকেরাও তাকে ভুল বুঝতেছে। সে বলেছিলে একদিন সে আমাদের সবইকে ছেড়ে বহু দূরে চলে যাবে। জয়ের সে সময়টা হল। তাই তোমারা তাকে আটকে রাখতে পারলে না। “জয়” তার বন্ধুর সাথে আমাকে বিয়ে পরিয়ে দিয়ে আমার জীবন থেকে সরে দাঁড়িয়ে ছিল।
ইতি নিজের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত কারার জন্য ঘর-সংসার করে নাই। “জুই” এসে মাঝে মাঝে মনে করে দেয় জয়ের কথা।
আদিঃ দেশান্তর হয়ে নিজেকে জয়ে পরিণত করল। জয়ের আদর্শ বুকে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তার মনে আশা ছিল জয় একদিন ফিরে আসবে। ইতি মধ্যে আদির জানা মতে, যে সব মেয়ের সাথে জয়ের সম্পর্ক ছিল সবার কাছ থেকে জানতে চাইল জয় কোথায়? কেউ উত্তর দিতে পারল না।
আদি পার্কের মধ্যে দেখতে পেল একটি মেয়ে তার হাত ধরা ছোট্টি একটি বালিকা সাথে বালিকাটির বাবাও ছিল।
আদিঃ মেয়েটিকে চিনতে পারলেও কথা বলার সাহাস ছিল না। তাই নিজেকে আঁড়াল করতে চাইল। তবে মেয়েটি সুযোগ দিল না। মেয়েটি কাছে এসে তার স্বামীকে বলল, এইতো আদি, এইটা জয়ের বিশ্বাস্ত বন্ধু।
তারা দু জনের মধ্যে অনেক কথা হল।
আদি নিপার কাছে জানতে চাইল, জয়ের কোন খুঁজ তার কাছে আছে কিনা?
নিপাঃ তেমন কোন ঠিকানা জানা নাই। তবে এটুকু জানা আছে। যেদিন আমি পুরো পুরি সুস্থ হয়েছিলাম। সেদিন “জয়” বলেছিল। এই সমাজ ছেড়ে সে বহু দূরে চলে যাবে। তার একটি বাড়ি রয়েছে পশ্চিম বঙ্গের এক নিরজন গ্রামে। সেখানে আমিও বেশ কিছু দিন কাটিয়ে ছিলাম। পরিবেশটা বেশ মনোরম ছিল।
ইতি আদি, আর জুই এসে পশ্চিম বঙ্গে উপস্থিত।
জয়ঃ আদির দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলল, তোকে শালা বানানোর ইচ্ছা ছিল তবে পারলাম না।
আদিঃ সে ইচ্ছাটা পূরণ করার জন্য এসেছি। দেখতে তো পাচ্ছ সাথে কে?
জয়ঃ সময় তো শেষ হয়ে গেছে। অসময়ে দীপ জ্বেলে কি আর হবে? আমার ক্যান্সার ধরা পড়েছিল সেদিন আমি মনোবল হারিয়ে এখানে চলে আসি। এখানে বেশ ভালই কাটে দিন। বাতাসের সাথে সবুজ ঘাসের গন্ধ পাওয়া যায় এখানে। শহরের জীবনে এসব পায় না। তাই মৃত্যুর আগে কয়েকটা দিন ভাল থাকার জন্য এখানে চলে আসলাম।
৮ই পৌষ ১৪২২বাংলা
২২শে ডিসেম্বর ২০১৫ ইংরেজি।
লেখক-মোমিনুল হক আরাফাত
ছেলেটার নাম “জয়” নিজ বাসা চট্টগ্রামে। পরিবারের সকল চট্টগ্রামে থাকে। জয় একা এই ফ্লাটে থাকে। কেন থাকে তা জানতে চান? অন্য সকলের মতো বলতে গেলে ছেলেটা নষ্ট হয়ে গেছে। তবে কতটা নষ্ট হয়েছে তা বলা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়াল।
নিপা মেয়েটি নাইট ক্লাবে আসে নাকি ক্লাবে থেকে যায়? অবশ্যই আগে মাঝে মাঝে ক্লাব থেকে বাহির হতে দেখেছিলাম। তবে কখনো বাসায় ফিরে যেতে দেখি নাই। ক্লাব থেকে বেরিয়ে ব্যাংক’কে যেতে দেখেছিলাম। পরে জানা গেল “নিপা” শুধু তখন ক্লাব থেকে বেরুতো, যখন তার টাকা পুরিয়ে যেত। এখন তো আর ব্যাংক’কে যেতে হয় না। ব্যাংক তো পাশেই আছে। এখন “জয়” তার ব্যাংক। টাকা শেষ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই।
দু জন টেবিলে মুখো-মুখি বসে আছে।
নিপাঃ নেশা করে মাতাল হয়ে আছে। নিপা জয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি একটু খাও।
জয়ঃ না। আমার খাওয়ার প্রয়োজন নাই।
নিপাঃ কেন?
জয়ঃ তুমি তো আমার নেশা। আমাকে মাতাল করার জন্য কোন মদের প্রয়োজন নাই। তুমি পাশে থাকলে আমি এমনে মাতাল হয়ে যায়।
নিপাঃ সত্যি তুমি আমাকে দেখলে মাতাল হও? আমিও যদি এভাবে কাউকে দেখে মাতাল হতে পারতাম; তবে এত নেশা করার প্রয়োজন হত না।
জয়ঃ হবে একটু সময়ের প্রয়োজন আছে, সব হবে।
নিপাঃ ওঠে দাঁড়াল। দু এক পা এগিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। কারণ হেঁটে যাওয়ার শক্তিটা তার ছিল না। জয়, বুঝতে পারল তার সাহায্য নিপার একান্ত প্রয়োজন। জয়, নিপার কাছে গিয়ে বলল, কোথায় যাচ্ছ?
নিপাঃ বাত রুমে যা-ব।
জয়ঃ চুপ হয়ে গেল। নিপার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করে যাচ্ছে। তবে এইবার একটু গায়ে লাগল।
জয়, একটু রাগনিত্ব কণ্ঠে বলল, যাও! দাঁড়িয়ে আছ কেন?
নিপাঃ তুমি আমকে নিয়ে চলো আমি হাঁটতে পারতেছি না।
জয়ঃ নিপা তুমি কী পাগল হয়ে গেছ?
নিপাঃ না তো?
জয়ঃ ঠিক বলছ, তুমি পাগল হওনি। পাগল আমি হয়েছি। তাই তোমার পিছু নিয়েছি।
নিপাঃ এত রাগা-রাগির কি আছে? আমাকে ভাল না লাগলে চলে যাও। আমার জীবনে জয়ের অভাব হবে না।
জয়ঃ হ্যাঁ তাই তবে শোন, জয়ের জীবনেও নিপার অভাব হয় না- চ-ল।
নিপাকে পৌঁছে দিয়ে জয় দরজার পাশে মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। প্রায় আধ ঘন্টা পর নিপা বেরিয়ে আসল।
জয়ঃ নিপার দিকে তাকিয়ে বলল, এত অল্প সময়ের মধ্যে চলে আসলে কেন? আরো কয়েক ঘন্টা থেকে গেলে হতো না?
নিপাঃ তোমার কষ্ট হবে। তাই অচিরে চলে আসলাম।
জয়ঃ চল এইবার-
নিপা টেবিলে এসে বসে পড়ল।
জয়ঃ নিপার হাতটা ধরে তাকে ক্লাব থেকে বাহিরে নিয়ে যাচ্ছে।
নিপাঃ “জয়” তুমি আ-মা-কে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?
জয়ঃ যেখানে খুশি সেখানে নিয়ে যাচ্ছি।
নিপাঃ মা-নে?
জয়ঃ আমিতো তোমাকে খুশি রাখার জন্য সারাক্ষণ তোমার সাথে পড়ে আছি। আর নিজেকে ব্যাংক’কে পরিণত করলাম। তুমি কী আমাকে খুশি করার জন্য কিছুই করতে পারবে না?
নিপাঃ জয়কে জড়িয়ে ধরে একটি চুমু দিয়ে বলল, সোনা তোমাকে খুশি রাখার জন্য আমি সব করতে পারি তুমি তো আমার ক্রেডিট কার্ড। কোথায় যেতে হবে?
জয়ঃ রেগেগিয়ে বলল, আর কখেনো আমাকে চুমু করবে না।
নিপাঃ কেনরে জান? তোমার কি এসব ভাল লাগে না?
জয়ঃ ভাল লাগত যদি কোন মেয়ে করত।
নিপাঃ আমি কি মেয়ে না?
জয়ঃ মেয়ের কী আছে তোমার?
নিপাঃ সব আছে দেখতে চাও-
নিপা ব্যস্ত হয়ে উঠল সে মেয়ে তা প্রমাণ করার জন্য তবে-জয় তাড়া তাড়ি নিপার হাত দুটি ধরে বলল, এখন না পরে দেখব। এইবার বাসায় চল।
দু জন বাসায় এসে উপস্থিত।
জয়ঃ নিপাকে বলল, তোমার খিদা পেয়েছে?
নিপাঃ হ্যাঁ।
জয়ঃ আদিকে কল দিয়ে বলল, দুইটা খাবার নিয়ে আয়।
আদি এসে উপস্থিত। আদি, নিপার দিকে তাকিয়ে বলল, দাদা মেয়েটি কে?
জয়ঃ জানি না।
আদিঃ ভাবি মনে হয়?
জয়ঃ একজন মানুষ কয়টা বিয়ে করতে পারে? আমার বাসায় প্রতি মাসে একটি করে মেয়ে আসে। ওরা কী সবাই আমার বউ?
আদিঃ না দাদা। সরি!
জয়ঃ সরি বলার প্রয়োজন নাই। নিপাকে নিয়ে টেবিলে গিয়ে খেয়েনে । আদি বলল, দাদা তুমি খাবে না?
জয়ঃ না। আমার খিদা নাই।
জয়ঃ বিছনাই পা দুটি লম্বা করেদিয়ে একটি বই নিয়ে পড়তে লাগল। এদিকে আদি টেবিল থেকে উঠে চলে আসল।
জয়ঃ কী হল আদি, তুই এইখানে কেন?
আদিঃ দাদা এইটি কী মেয়েরে বাবা?
জয়ঃ কেন? কি হয়েছে?
আদিঃ মেয়েটি তো নেশা করে।
জয়ঃ হ্যাঁ সমস্যা নাই। বড় লোকের একমাত্র মেয়ে তাই নেশা করে। দরিদ্র ঘরের মেয়ে হলে নেশা করার সময় থাকত না। বাবার এত টাকা নেশা না করলে কি শেষ হবে?
আদিঃ এত বড় লোকের সাথে জড়ালে কেন? পরে যদি কোন সমস্যা হয়?
জয়ঃ কোন সমস্যা হলে আমি দেখব? তোর ভয় পাওয়ার কোন প্রয়োজন নাই। এইবার গিয়ে খাবার খেয়েনে। আর পাশের রুমটা খালি আছে। মেয়েটিকে ওখানে ঘুমাতে বলিছ। আর তুইও ঘুমিয়ে যাস।
আদিঃ ঘুমিয়ে পড়ল। একটু পরে আদির কানে জয়ের ডাক আসল- “আদি? এই আদি, তুই কোথায়?
আদি জয়ের কাছে আসার পর।
আদিঃ জি দাদা? আমি আমার রুমে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম দাদা বিশ্বাস করুন।
জয়ঃ লাইট-টা দে।
বাতি জ্বলে উঠার সাথে সাথে “আদি” চেহেরাটা নিচু করে পেলল, কারণ আদি, দেখতে পেল জয়ের বিছনাই “নিপা” নামের সে মেয়েটি।
জয়ঃ আদি! তুই মেয়েটিকে রুমটা দেখিয়ে দিলি না কেন?
আদিঃ দাদা আমি তো দেখিয়ে দিলাম। মেয়েটি বলল, সে একা যেতে পারবে না। তাই নিজে গিয়ে রুমে পৌঁছে দিয়েছিলাম। তবে ভুলটা হচ্ছে দরজাটার বাহিরে বন্ধ করে দিই নাই।
জয়ঃ ঠিক আছে তুই যা।
নিপাঃ না! ওনার কী দোষ? ওনি ভুল করে ঐ রুমটা দেখিয়ে দিয়েছিল। আমি তো চলে আসলাম।
জয়ঃ লক্ষ্ণী এইবার আবার ভুল করে তোমার রুমে চলে যাও, নাহয় আমি ছাদের উপর থেকে সোজা নিচে পাঠিয়ে দিব তোমায়।
নিপাঃ না! আমার একা থাকতে ভয় হয়।
এভাবে কাটিয়ে গেল অনেকটা দিন এইবার জয়ের কাছ থেকে বিদায় নিল নিপা। তবে নিপার স্থানটা খালি পড়ে থাকে নাই। একের পর এক নিপা এসে জয়ের সাথে সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছে।
এক সময় আদিও জয়ের কাছ থেকে বিদায় নিল। সে দিনও নতুন একটি মেয়ে জয়ের বাসাই এসে উপস্থিত।
আদি বলল, দাদা আমি তোমার এইখানে আর থাকতে পারব না। তুমি তো জানো সামনের ফ্লেটের বাড়াটিরা আমার পরিচিত। তারা-
জয়ঃ তারা আমার দূর চরিত্রের কথা তোর পরিবারের কাছে জানিয়ে দিল তাই না? ঠিক আছে চলে যা। যদি কখনো বিপদে পড়িছ আমাকে স্মরণ করিস। আর টাকা পয়সার প্রয়োজন হলে আমাকে জানাস।
জয়কে বেশ কিছু দিন ধরে লক্ষ্য করে যাচ্ছে পাশের ফ্লেটের ইতি।
ইতির ছোট বোনটি জয়কে শ্রদ্ধা করত।
ইতি আর জুই আজও লুকাল বাসের জন্য রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
জয়ঃ গাড়ি নিয়ে বেরুচ্ছে। জয় খুব ভাল করে জানত ইতি তাকে কতটা অপছন্দ করে।
জয়ঃ জুইকে দেখে ঘাড়ি থাময়ে ঘাড়ি থেকে নেমে পড়ল।
জুইঃ কেমন আছো ভাইয়া? কোথায় যাচ্ছ?
জয়ঃ না, কোথাও যাচ্ছি না। এমনে ঘুরতেছি তোমারা কোথায় যাচ্ছ?
জুইঃ ভাইয়া কলেজে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ হয়ে গেল কিন্তু-
জয়ঃ চলো আমি পৌছে দিচ্ছি।
ইতিঃ না, একটু পরে গাড়ি চলে আসবে।
জুইঃ আপু আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকব? আমার ক্লাসে দেরি হয়ে যাচ্ছে। আর দাঁড়াতে পারতেছি না পা ব্যথা করতেছে।
জয়ঃ তুমি চল।
জুই গাড়িতে বসে পড়াল।
ইতিঃ নিজেকে আর সামলে রাখতে পারল না। কারণ জুই ছাড়া আর কেউ তার আপন বলতে নাই। জয় তো-
ইতিও গাড়িতে বসে পড়ল। জয়ের মোবাইল বেঁজে উঠল, কলটি ছিল একটি মেয়ের। মেয়েটি জয়ের সাথে দেখা করতে চাইল। জয় তাকে বলল, “আমার কাজ শেষের দিকে আমি আর কারো সাথে দেখা করব না। আমি দু একদিনের মধ্যে বাংলাদেশে থেকে চলে যাব।
জয় সন্ধ্যায় বাসাই পৌঁছল।
ইতি এসে উপস্থিত। তার চেহেরা দেখে জয়ের বুঝতে দেরি হল না সে কতটা ক্লান্ত। আর রাগের চিহ্নটা চেহেরার উপর ভেসে উঠল।
জয়ঃ তোমার কি মন খরাপ?
ইতিঃ তার কথার কোন উত্তর না দিয়ে বলল, দেখ জয়! আমরা দরিদ্র তবে নষ্ট না। তুমি অন্য কোন মেয়ে...
জয়ঃ দেখ ইতি, জুই আমার ছোট বোনের মত তুমি ভুল বুঝতেছ কেন?
ইতিঃ জয়, আমি তো তোমাকে অনেক দিন ধরে দেখে আসতেছি তোমার সম্পর্কে আমরা চেয়ে কেউ বেশি জানে না।
জয়ঃ তুমি আমাকে ভুল দেখেছিলে তাই ভুল বুঝেছিলে আমার আসল রূপ তোমারা কেউ দেখ নাই।
ইতিঃ জয় তুমি কি চাও? তুমি আমার কাছে যা চাইবে তা দিব তবে আমার অবুঝ বোনটির দিকে তাকাইয় না।
জয়ঃ ইতির দিকে তাকিয়ে বলল, দিতে পারবে?
ইতিঃ চুপ হয়ে গেল।
জয়ঃ আদি তোমাদের পরিচিত তাই না।
ইতিঃ হ্যাঁ।
জয়ঃ ব্যাগ থেকে একটি মেয়ের ছবি বাহির করে বলল, এইরকম আরো অনেক মেয়ের সাথে আমার সম্পর্ক ছিল তবে কাউকে বিয়ে করি নাই। আমি ছাড়া ওরা সবাই এখন সুখে আছে। আমি কাউকে বিয়ে করতে চাই নি। তবে তোমাকে বিয়ে করতে আমার আপত্তি নাই।
ইতিঃ জয় মুখ সামলে কথা বলো।
জয়ঃ ঠিক আছে ভয়ের কোন কারণ নাই। আমি আজ রাতে এইখান থেকে চলে যাচ্ছি। তবে একটি অনুরোধ রইল। একটিবার আদির কাছে গিয়ে এই ছবিটা পৌঁছে দিয়ে বলিও। সেও আমাকে চিনতে ভুল করেছিল। এই মেয়েটি তাকে আমার সম্পর্কে জানিয়ে দিবে।
ইতিঃ ছবিটা দেখে অবাক হয়ে গেল।
ইতি বলল, জয়! তুমি এত বাঝে? আদি নামারে যে ছেলেটা তোমাকে নিজের ভাইয়ের মত দেখতো, তুমি তার বোনের দিকে চোখ দিয়েছিলে? ছি!
জয়ঃ চোখ আছে তাই দিয়েছিলাম। আমার কিছুই করার ছিল না। এসব তো আমার কাজ ছিল। তাদের কাছে না যাওয়াটা অপরাধ ছিল তাই গিয়েছিলাম।
ইতি আদির বাসায় এসে উপস্থিত।
আদিঃ ইতিকে জিঞ্জাস করল “জয়” কেমন আছে?
ইতিঃ ঐ বাঝে ছেলেটার কথা বাঁধ দাও।
আদিঃ আসলে আমার মনে হচ্ছে কোথাও যেন ভুল হচ্ছে।
ইতিঃ ভুল তো এইখানে-তুমি জয়কে নিজের ভাইয়ের মত আপন ভেবেছিলে। আর সে তোমার বোনের সাথেও-
আদিঃ আমি দেখেছিলাম তার কাছে আপুর ছবি। তবে তাকে জিঞ্জাস করার সাহস আমার ছিল না। তাই নিজে বাসা থেকে সরে গিয়েছিলাম। আর জয় অতটা খারাপ ছিল না। তুমি যে বাসাটিতে থাক, ঐ বাসাটাও জয়ের কিনা। সে কথাটা গোপন রাখতে বলেছিল। নাহয় এত অল্প বাড়া দিয়ে ঢাকা শহরে বাসা পাওয়া যায় না।
আদি আর ইতি এপির বাসাই এসে উপস্থিত। তাদেরকে দেখে এপি, বেশ আনন্দিত হল।
এপি জানাতে চাইল তারা কেমন আছে?
আদিঃ ভাল আছি আপু, তুমি কেমন আছ?
এপিঃ এখন বেশ ভালই আছি। আমি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বিয়ে করে অন্যায় করেছিলাম। তাই বলে এতটা দিন আমার কোন খবর নিলি না কেন?
আদিঃ আসলে এতদিন কোথায় ছিলে জানতাম না। তাই দেখা করতে পারি নাই।
এপিঃ বেশ ভালই করেছিলি এত দিন দেখা না করে। যাক এসব কথা বাবা-মা কেমন আছে?
আদিঃ বেশ ভালই আছে। আপু আমি একটা কথা জানতে চাই।
এপিঃ ঠিক আছে বল, কী জানতে চাস?
আদিঃ আপু তুমি কি “জয়” নামের কাউকে চিনতে।
এপিঃ জয়ের নাম শোনে বসা থেকে ওঠে দাঁড়াল।
এপিঃ হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন? তুই কি জয়কে চিনিস?
আদিঃ হ্যাঁ চিনি। তবে প্রশ্নটা আমার না প্রশ্নটা ইতির।
এপিঃ ইতির দিকে তাকিয়ে বলল, জয়কে তোমার কি মনে হয়?
ইতিঃ সে একটি নষ্ট ছেলে।
এপিঃ আসলে ঠিক বলছ! সে নষ্ট ছেলে।
তুমি জয়ের বাইরের রূপ দেখেছিলে। ভিতরটা দেখো নাই। “জয়” এখন কোথায় আছে?
ইতিঃ জানি না-দু একদিন আগে বাসা থেকে চলে গেছে।
এপিঃ কিছু মানুষ নিজের জীবনের সকল চাওয়া পাওয়া ত্যাগ করে, অন্যের সুখের জন্য “জয়” তাঁদের একজন। সে চেয়েছিল একটি আদর্শ সমাজ গড়তে।
আমি যাকে ভালবেসে বাসা ছেড়ে পালিয়ে ছিলাম। সে আমাকে আশ্রায় দিল না। তারপর আমি নষ্ট হয়ে গিয়েছিলাম। নেশার রঙ্গিন মায়ায় জীবনটাকে রাঙ্গিয়ে ছিলাম। সে সাথে নানা অপরাধের সাথে জড়িয়ে গিয়েছিলাম। জয় আমাকে তার বাসায় স্থান দিয়েছিল। ধীরে ধীরে তার প্রেমে পড়ে আমি আবার পূনরাই জীবন ফিরে পেলাম। আমি নেশা ছেড়ে দিলাম। জয় কখনো আমাকে স্পর্শ করে নাই। আমি তাকে বলেছিলাম আমাকে বিয়ে করতে। সে বলেছিল আমাকে বিয়ে করতে পারবে না। কারণ আমার মতো আরো অনেক নষ্ট মেয়কে আলোর দিকে নিয়ে আসতে হবে। এখনো জয়েকে আমি ভুলতে পারি নাই। আসলে জয়কে কাছে পেলে অনেকটা সুখী হতাম আমি। তবে দুঃখ করি না। জয় তো আমার হৃদয়ের মাঝে আছে। আমি তার সম্পর্কে অনেক কিছু জানতাম “জয়” বলেছিল এই সমাজ তাকে ভুল বুঝতে লাগল। এমনকি তার পরিবারের লোকেরাও তাকে ভুল বুঝতেছে। সে বলেছিলে একদিন সে আমাদের সবইকে ছেড়ে বহু দূরে চলে যাবে। জয়ের সে সময়টা হল। তাই তোমারা তাকে আটকে রাখতে পারলে না। “জয়” তার বন্ধুর সাথে আমাকে বিয়ে পরিয়ে দিয়ে আমার জীবন থেকে সরে দাঁড়িয়ে ছিল।
ইতি নিজের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত কারার জন্য ঘর-সংসার করে নাই। “জুই” এসে মাঝে মাঝে মনে করে দেয় জয়ের কথা।
আদিঃ দেশান্তর হয়ে নিজেকে জয়ে পরিণত করল। জয়ের আদর্শ বুকে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তার মনে আশা ছিল জয় একদিন ফিরে আসবে। ইতি মধ্যে আদির জানা মতে, যে সব মেয়ের সাথে জয়ের সম্পর্ক ছিল সবার কাছ থেকে জানতে চাইল জয় কোথায়? কেউ উত্তর দিতে পারল না।
আদি পার্কের মধ্যে দেখতে পেল একটি মেয়ে তার হাত ধরা ছোট্টি একটি বালিকা সাথে বালিকাটির বাবাও ছিল।
আদিঃ মেয়েটিকে চিনতে পারলেও কথা বলার সাহাস ছিল না। তাই নিজেকে আঁড়াল করতে চাইল। তবে মেয়েটি সুযোগ দিল না। মেয়েটি কাছে এসে তার স্বামীকে বলল, এইতো আদি, এইটা জয়ের বিশ্বাস্ত বন্ধু।
তারা দু জনের মধ্যে অনেক কথা হল।
আদি নিপার কাছে জানতে চাইল, জয়ের কোন খুঁজ তার কাছে আছে কিনা?
নিপাঃ তেমন কোন ঠিকানা জানা নাই। তবে এটুকু জানা আছে। যেদিন আমি পুরো পুরি সুস্থ হয়েছিলাম। সেদিন “জয়” বলেছিল। এই সমাজ ছেড়ে সে বহু দূরে চলে যাবে। তার একটি বাড়ি রয়েছে পশ্চিম বঙ্গের এক নিরজন গ্রামে। সেখানে আমিও বেশ কিছু দিন কাটিয়ে ছিলাম। পরিবেশটা বেশ মনোরম ছিল।
ইতি আদি, আর জুই এসে পশ্চিম বঙ্গে উপস্থিত।
জয়ঃ আদির দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলল, তোকে শালা বানানোর ইচ্ছা ছিল তবে পারলাম না।
আদিঃ সে ইচ্ছাটা পূরণ করার জন্য এসেছি। দেখতে তো পাচ্ছ সাথে কে?
জয়ঃ সময় তো শেষ হয়ে গেছে। অসময়ে দীপ জ্বেলে কি আর হবে? আমার ক্যান্সার ধরা পড়েছিল সেদিন আমি মনোবল হারিয়ে এখানে চলে আসি। এখানে বেশ ভালই কাটে দিন। বাতাসের সাথে সবুজ ঘাসের গন্ধ পাওয়া যায় এখানে। শহরের জীবনে এসব পায় না। তাই মৃত্যুর আগে কয়েকটা দিন ভাল থাকার জন্য এখানে চলে আসলাম।
৮ই পৌষ ১৪২২বাংলা
২২শে ডিসেম্বর ২০১৫ ইংরেজি।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
রাবেয়া মৌসুমী ২১/০৩/২০১৭আর একটু যতনের প্রয়োজন ছিল,ভালো।
-
পরশ ১৯/০৩/২০১৭ঠিক
-
মোঃ ইমরান হোসেন (ইমু) ১৯/০৩/২০১৭অনেক ধৈর্য নিয়ে একটা সুন্দর প্লট নিয়ে কাজ করা হয়েছে।
একটি স্বার্থক ছোট গল্পের প্রায় সব উপাদানই বিদ্যমান।
ধন্যবাদ -
মোঃআব্দুল্লাহ্ আল মামুন ১৯/০৩/২০১৭সুন্দর।।।।এগিয়ে যাও
-
আব্দুল হক ১৮/০৩/২০১৭নাইস , লম্বা,,