যেখানে তুমি নাই
বিবাহিত একটি মেয়ের প্রেমে পড়ে ঘর সংসার ত্যাগ দিয়ে প্রায় ৯টি বছর পাগল হয়ে দিন পাড়ি দিল জয়।
গল্প-যেখানে তুমি নাই
লেখক-মোমিনুল হক আরাফাত
ভদ্র স্বভাবের ছেলে জয়। মানুষের মৌলিক চাহিদা পাঁচটি হলেও। জয়, কিন্তু একটি পেলে সন্তুষ্ট। তার শুধু বস্ত্রের প্রয়োজন। লজ্জা থেকে বেঁচে থাকার জন্য বস্ত্র খুব গুরত্ব। তাও কোন নতুন জামা হতে হবে এমন নয়। পুরানো-টুরানো কোন রকম হলে তার চলে।
খাদ্য বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন। জয়, আর বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে না। জীবনের শুরো থেকে আজ ও কোন সুখ তাকে স্পর্শ করে নাই। বাঁচার স্বপ্ন বহু আগে আহত বুকের মাঝে ঘুমিয়ে পড়েছিল। আর সে যদি উপোস থাকে, তা তো আর কেউ দেখতেছে না।
অথবা তার মতো এইটা তো পেঠের ভিতর চলে যাবে। বাইরে নয়। যদি খাদ্যটা পেঠের বাহিরে থেকে লজ্জা স্থান এর মতো কিছু ডাকা যেত। তবে জয়ের মৌলিক চাহিদা দুইটি হত।
আর বাস স্থানঃ জয়ের আছে ছোট্ট একটি বাড়ি। যদিও তা না থাকে কোন সমস্যা হত না। পৃথীবীটা অনেক বড়। যে কোন স্থানে আকাশকে ছাদ বানিয়ে থাকা যেত। যাই হোক! জয়ের ছোট পরিবারে বাবা মা ভাই বোন নিয়ে বেশ সুখে আছে। দুঃখের কারণ তো “অতিরিক্ত স্বপ্ন দেখা” জয় তো কোন স্বপ্ন দেখে না। স্বাদ বাসনা এই গুলো জয়ের মাঝে নাই। আর প্রেম ভালবাাস এখনো পর্যন্ত স্পর্শ করে যেতে পারে নাই। তবে যে দিন প্রেম জেগে ছিল। সে দিন জয় পৃথিবী জগত থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছিল। প্রেমে পড়ার পর নয়টি বছর দেশান্তর হয়ে একা নিরজনে কাটিয়ে ছিল। অবশেষে আদি তাকে খুঁজে পাওয়ার পর। জয় আবার ঞ্জান ফিরে পেয়েছিল। তবে যার কারণে সে পাগল হয়ে ছিল তাকে ফিরে পায় নি। আর সব চেয়ে বড় দুঃখ হলো, নীলিমা জানতেও পারেনাই আজো; জয় তাকে ভালবেসেছিল।
দু এক দিন ধরে জয়কে অন্য রকম লাগতেছে। বাসায় ঠিক মতো যাই না। খাওয়া দাওয়ার কোন ঠিক নাই। তাকে দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটি গোপন করে যাচ্ছে।
বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়াটা জয়ের পুরাণো স্বভাব। তবে এখন তাদের কাছ থেকেও দূরে থাকতে চায়।
জয়ের সব চেয়ে কাছের বন্ধু ছিল আদি।
তখন রাত এগারটা বেঝেছিল। জয় একা মাঠের মধ্যে বসে রইল । আদি কাছে এসে বলল, জয় কী হয়েছে তোর? আমরা কি তোকে কোন কষ্ট দিয়েছি? তুই আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছিস কেন?
জয়ঃ একটু হেসে উঠে বলল, তোরা কেন কষ্ট দিবি? আসলে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। তাই তোদের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। পাগলের তো কোন বন্ধু থাকতে পারে না।
আদিঃ সত্যিই তাই; না হলে তুই আমাদের থেকে দূরে থাকবি কেন? আর আমি বুঝতে পেরেছি পাগল কার জন্য হয়ে যাচ্ছিস।
জয়ঃ আরে! তুই আবার কী বুঝলি? আমি তো এখনো পাগল হয় নি? পাগল হওয়ার আগে কী করে বুঝে গেলি-রে?
আদিঃ জয়! তুই কী আমাকে এখনো ছোট্ট শিশু মনে করিস না’কি? আমি সব বুঝি তুই তো নীলিমার জন্য পাগল হয়েছিস। আচ্ছা! তুই কোন চিন্তা করিস না। আমি নীলিমাকে এনে দিব তোর কাছে। তবু তোকে পাগল হতে দিব না।
জয়ঃ আদিকে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল, দোস! আর কখনো এই কথাটা বলিছ না। আমি জানি তুই আমার কথা রাখবি। তাই শপত দিলাম না। কথাটা মনে থাকে যেন।
আদিঃ অবাক দৃষ্টিতে জয়ের দিকে তাকাল-এর আগে কখনো এভাবে তাকাই নি। তার চেহেরাই এক প্রকার হতাসার চিহ্ন ভেসে উঠল। আদি মৃদু কণ্ঠে বলল, জয় আমি বুঝতে পারি নাই। কোন কথাটি না বলতে বলেছিস?
জয়ঃ নীলিকে আমার কাছে নিয়ে আসবি। আমি তো এই কথাটা স্বপ্নেও ভাবি না।
আদিঃ মানে! তুই তো বলেছিস তুই তাকে ভালবাসিছ-তো সমস্যা কোথায়?
জয়ঃ সমস্যা তো আছে। এই গুলো বলে তো শেষ করা যাবে না। দেখ ভালবাসার সৃষ্টি হয় হৃদয় থেকে। দেহের সাথে ভালবাাসর কোন সম্পর্ক নাই। ভালবেসে তার দেহটা ভোগ কারার মানে তো ভালবাসা না। ভালবাসার মানে আজীবন তাকে স্মরণ করে যাওয়া। আর তা ছাড়া নীলিমা এখন-
আদিঃ জয় থেমে গেলি কেন? নীলিমা এখন কি?
জয়ঃ আদির কাদের উপর হাতটা রেখে বলল, কিছু না।
আদিঃ আগে বল- কী বলতে চেয়ে ছিলি?
জয়ঃ একটু হেসে বলল, সে এখন বিবাহিত-নীলিমা আমার আকাশের সব চন্দ্র তারা নিয়ে অন্যর ভূবন আলোকিত করল। আর আমার ভূবনটা অন্ধকারে ডেকে গেল। অবশ্যই কার অপরাধ জানি না নিজে-কেন সে হলো না আমার। অবশ্যই এতটুকু জানে আছে। এই সব নিয়তির খেলা নিয়তির যেমন ইচ্ছা তেমন সে খেলে যাবে যত বাধা দে তারে কোন কাজ হবে নারে শালা।
জয়ের কথা শোনে আদি না হেসে পারল না। আদি হেসে উঠে জয়ের পিটে একটি থাপ্পর দিয়ে বলল, সত্যিই তো তুই পাগল হয়ে গেলি। না হয় কি কেউ একজন বিবাহিত মেয়ের প্রেমে পড়ে?
জয়ঃ না দোস! অতটা পাগল এখনো হয় নি-তাই কথাটা কাউকে প্রকাশ করলাম না-যে আমি একটি বিবাহিত মেয়ের প্রেমে পড়েছি। আর তোকে না বললে তো পাপ হবে। তুই তো আমার প্রাণের বন্ধু তোকে যদি মনের কথা না বলি আর কাকে বলব?
আদিঃ ঠিক আছে দোস! অনেক রাত হয়েছে। চল এইবার বাসায় যাই।
জয়ঃ তুই যা আমি একটু আকাশটা দেখে নি। আজ আকাশটা বেশ দারুণ লাগতেছে। জানি না এই আকাশ আর কত দিন দেখতে পাব? আমি তো পাগল হয়ে যাচ্ছি।
আদিঃ জয়! পাজলামি করিস না কিন্তু-চল বাসায়।
এভাবে কয়েকটা দিন কেটে গেল। তবে জয় খুব বেশি ভেঙে পড়তেছে। আদি ও অন্যান্য বন্ধুরা হাতাস হয়ে পড়ল।
এইতো শেষ দিনের কথাঃ তারপর থেকে আর মাঠে বসে আড্ডা দেওয়া হলো না। জয়ের অনুপস্তিতে সব যেন এলোমেলো হয়ে গেল। এখন আর কেউ মাঠে বসে মধ্য রাত পর্যন্ত গল্প করে না। তাদের চেহেরার দিকে তাকালে বুঝো যায়। সে দিন সত্যিই তাদের উপর এক তুমোল ঝড় ভয়ে গিয়েছিল।
সে দিনের কথাঃ জয় তখনো উপস্থিত ছিল না। আদি, অন্যদের লক্ষ্য করে বলল, জয়ের কি হলো কিছুই বুঝতেছি না? সে তো এখনো আসেনাই। তাদের মধ্য থেকে এক জন বলল, হ্যাঁ ফোন তো বন্ধ দেখা যাচ্ছে। আর একজন বলে উঠল, বাসায়ও তো ছিল না।
আদিঃ কিছুই তো বুঝে উঠেতে পারতেছি না এখন কী করা যায়?
তাদের মধ্যে থেকে একজন চমকে উঠে বলল, “এইতো জয়! চলে আসছে”
জয়ঃ তাদের পাশে বসে। রীতি মতো আদির সামনে থেকে সিগেরেটের প্যাক থেকে একটি সিগেরেট নিয়ে মুখে দিয়ে বলল, তোরা কী আমাকে নিয়ে দূর চিন্তা করছিস? আসলে আমি ঠিক আছি আমার কিছু হয় নাই।
আদিঃ তুই কী অভিনয় করেছিলি? জানিস না আমরা কত কষ্ট পেয়েছি?
জয়ঃ একটু গম্ভীর কণ্ঠে বলল, জানি না এই কী অভিনয় না অন্য-কথা শেষে না হতে জয় আবার বলে উঠল, আরে তোরা তো দেখছি অনেক বদলে গেলি? আরে এতক্ষণ ধরে সিগেরেট মুখে নিয়ে বসে আছি কেউ তো আগুন দিলি না?
তাদের মাঝ থেকে একজন আগুন দিয়ে বলল, ভুল হয়ে গেল দোস্ত! আসলে আমারা তোকে নিয়ে অনেক চিন্তাই ছিলাম। তাই একটু অনমনা হয়ে গেলাম।
জয়ঃ দেখ! জীবনটা বড় কঠিন, বাস্তবতা তার চেয়েও বেশি কঠিন। এত আবেগময় হলে চলবে না। জয় কী আজীবন তোদের পাশে থেকে যাবে? দেখ! আমাকে নিয়ে এত ভাবিস না।
আদিঃ বলে উঠল, কেন! তুই কি নীলিমার কাছে চলে যাবি না’কি?
জয়ঃ না তো। তোদের ছেড়ে কেন নীলিমার কাছে যাব? আর আমাদের মতো দরিদ্র হলে তাদের তো ঘর সংসার না করাই ভাল।
আদিঃ নীলিমা কেমন আছে?
জয়ঃ দেখি! এই বলে মোবাইলটা হাতে নিয়ে প্রথমে পাওয়ার অন করল। তারপর নীলিমাকে কল দিয়ে কথা বলতে-বলতে তাদের কাছ থেকে দূরে সরে গেল। বন্ধুরা সবাই হাসা হাসি করে বলতে লাগল-দেখলি জয় কতটা পরিবর্তন হয়ে গেল?
এখন বুঝেছি কেন তাকে পাওয়া যায় না।
একটুপর জয় এসে তাদের পাশে বসল। কিন্তু জয়ের চেহেরাটা তখন ভিষন্ন দেখাচ্ছে।
আদিঃ জয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, আরে তোর মন কী আবার খারাপ হয়ে গেল? নীলিমা কী তোকে কষ্ট দিয়েছে?
জয়ঃ না নীলিমা কখনো আমায় কষ্ট দেনা-দিবেও না।
আদিঃ তাহলে তোর এই অবস্থা কেন? আর নীলিমা কী স্বর্গে থেকে আসছে না’কি? কষ্ট দিবে না সেইটা নিশ্চিত কি করে হয়েছিস?
জয়ঃ জানি না সে কোথায় থেকে আগত। শুধু এইটুকু মনে হয় কোথায় যেন দেখছি আগে...মানে স্রষ্টা তাঁকে আমার জন্য এই পৃথিবীতে পাঠিয়ে ছিল।
আদিঃ তো তোর এই অবস্থা কেন?
জয়ঃ শুধু এইটুকু বলল, প্রথমঃ নীলিমা! নিলীমা-তারপর সম্পূর্ণ থেমে গিয়ে বসা থেকে আবার উঠে দাঁড়াল। জয়ের এই অবস্থা দেখে বন্ধুরা সবাই উঠে দাঁড়াল।
আদিঃ জয়কে বুকে টেনে বলল, জয় নীলিমার কী হয়েছে?
জয়ঃ গায়ে জ্বর হয়েছে-আর ডাক্তা...এইটুকু বলে জয় নিজের মাথাটা দু হাত দিয়ে চেপে ধরে মাটিতে বসে পড়ল।
সাবাই তো অবাক হয়ে পড়ল। জয়ের কী হয়েছে? কেন সে এমন করতেছে? একটুপর জয় তাদের দিকে তাকিয়ে বলল, আমাকে ক্ষমা করে দিস-এইটুকু বলে সেখান থেকে উঠে জয় চলে গেল। একটু পরে এসে বসল । আর জয়ের অস্বাভাবিক আচরণ শুরো হয়ে গেল। মুখ দিয়ে যা আসতেছে তাই বলতেছে। আদি যখন একটু কাছে আসল। তাকে ধাক্কা দিয়ে বহু দূরে পেলে দিল। তবু কোন বন্ধু তার উপর রাগ অভিমান করল না। তারা সবাই বুঝতে পারল জয়ের মানসিক সমস্যা হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর জয় আবার মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল। তখন আদিও অন্য বন্ধুরা তাকে বুকে ঝড়িয়ে রাখল। একটুপর জয় বলল, আমি কোথায়?
আদিঃ ভাঙ্গা ভাঙ্গা কণ্ঠে বলল, জয় তোর কী হয়েছে? কেন তুই এমন করেতেছিস? তোর কী মনে আছে একটু আগে কী বলেছিলি আর কী করতেছিলি?
জয়ঃ মাথাটা নেড়ে বলল, না।
তারপর জয় বাসায় ফিরে এল।
ভোরে সকালে ঘুম থেকে উঠে বন্ধু দের সাথে আর দেখা হল না। জয় রাতে কোথায় চলে গেল কেউ জানে না। এখন সবাই অন্য রকম হয়ে গেল-কেউ আগের মত নাই। কে কোথায় চলে গেল তারা নিজেরাও জানে না। আর আদি তো এখন মানুষের জগতে নাই। জয়কে হারিয়ে হয়ে গেল আন্ডারওয়াল্ডএর ডন। বর্তমানে ঢাকা শহরে আছে আদি।
আদিকে একটু দেখে নিনঃ তার সাথে ছিল আরও চার পাঁচ জন। বাসা থেকে সবাই বেরিয়ে একটি মাইক্রো বাস নিয়ে কলেজের দিকে অগ্রসর হল। তাদের সামনে মটর সাইকেল নিয়ে ছিল আদি। ঘাড়িটা একটু দূরে রেখে ছিল। একটি মেয়েকে বেশ কিছুক্ষণ ধরে লক্ষ্য করে যাচ্ছে তারা। আদি মেয়েটির কাছে গিয়ে তার মুখটা চেপে ধরে ঘাড়ির দিকে নিয়ে আসতেছে। কেউ যদিও দেখেছিল তবু প্রতিবাদ করে নাই। কারণ প্রতিবাদ করলে। সোজা ওপাড়ে পাঠিয়ে দিবে।
বাসায় এনে মেয়েটির বলল, বাসার ফোন নাম্বার দিতে। কিন্তু কোন শব্দ আসতেছে না মেয়েটির কাছ থেকে। আদি একটু জোর কণ্ঠে পিস্তলটা মেয়েটির মাথায় লাগিয়ে বলল, বাসার নাম্বারে কল দিতে না হয় টেনে দিচ্ছি। পিছ থেকে একটি শব্দ এল- দাদা, ওর মুখ বন্ধ তাই নাম্বার বলতে পরতেছে না।
আদিঃ হ্যাঁ তাই তো! মুখের বাঁধনটা খুলে দে। বাঁধান খুলার সাথে সাথে মেয়েটি বেশ কয়েকটি নিশ্বাস নিল। আদি, তার দিকে তাকিয়ে, বন্ধু দের লক্ষ্য করে বলল, মেয়েটি হয়রান হয়ে গেল। হাতের বাঁধনটা খুলে দে আর এক গ্লাস পানি দে। না হয় কথা বলতে পরবে না। মেয়েটিকে মোবাইলটা হাতে দিল। মেয়েটি কল দিয়ে মোবাইলটা তাদের দিকে বাড়িয়ে দিল। কল রিসিভ করার সাথে সাথে শব্দ এল- কে?
আদিঃ আমি অপহরণ কারি তোমার মেয়েকে অপহরণ করছে বিশ লাখ টাক নিয়ে এসে মেয়েকে নিয়ে যাও না হয় ওপাড়ে পাঠিয়ে দিব।
কল রিসিভ কারিঃ দে! গুলি করে দে। আমার কিছু যায় আসে না। ওই হত ভাগি মরলে আমি মুক্ত হব।
আদিঃ এই! টেনে দিচ্ছি।
কল রিসিভ কারিঃ শালা দে না! এত দেরি কেন?
আদিঃ মেয়েটির দিকে এমন ভাবে তাকাল মেয়েটি ভয় পেয়ে গেল। (যে মেয়েটিকে তুলে এনেছিল।) তাদের মধ্যে একজন বলল, ভাই টেনে দিন কথায় বুঝা গেল টাকা আসবে না।
আদিঃ টাকা আসবে না তবে টেনেদিলেও টাকা আসবে না। এক কাজ কর মেয়েটিকে যেখান থেকে নিয়ে আসলি সেখান দিয়ে আয়।
মেয়েটিঃ আপনার পায়ে পড়ি! আমাকে ওখান আর পাঠাবেন না। আমার মরতে হলে আপনার পায়ের নিচে মরব। আমাকে ওখানে পাঠাবেন না। আমার সৎ মা আমাকে গলা ঠিপে মেরে পেলবে। যদি মরতে হয়, এখানে মরব!
আদিঃ এই মেয়েটিকে থাকার ব্যবস্তা করে দে আজ থেকে রান্না বান্না সে করবে।
বর্তমানে জয়ঃ নিরজন এক নদীর পাড়ে বসে আছে। চুল গুলো অনেক লম্বা হয়ে গেছে। দেখে বুঝা গেল জন্মের পর থেকে ছেলেটা পাগল। খাওয়া দাওয়া করে না। শুধু একা অন মনে বসে থাকে। আদি অনেক খুঁজে জয়ের সন্ধান পেয়েছে।
জয়ঃ নীরবে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে। আদি খাওয়ার নিয়ে এসে উপস্থিত। প্রতিবারের মতো, খাওয়ারটা হাতে নিয়ে খাওয়াতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে নদীতে ভাসিয়ে দিল।
আদিঃ আমি এখন অনেক টাকার মালিক। আমার ঘাড়ি বাড়ি সব হয়েছে। শুধু তুই পাশে নাই। দোস! চলে আয় আমি জানি তুই পাগাল না। তুই কখনো পাগল হতে পারিস না। তুই আমাদের কষ্ট দেওয়ার জন্য পাগরের অভিনয় করে যাচ্ছিস। বল তোর কী চাই? আমি সব এনে দিব। না হয় #নীলিমা নামের যত মেয়ে আছে সব এনে দিব। তখন জয় সেখান থেকে উঠে চলে যাচ্ছে। আদিও বুঝতে পারল জয় অসুন্তষ্ট। আদি বাসায় ফিরে আসল।
পরের দিন সকালে আবার গিয়ে উপস্থিত আদি।
আদিঃ দোস! দোয়া করিস আজ কাজটা করতে পারলে অনেক টাকা পাব। অনেক বড় লোকের মেয়ে-তুই যদি দোয়া না করিস বিপদে পড়ব। আর আমি মানুষকে কষ্ট দি না। এমনে ভয় দেখায়।
এভাবে কেটে গেল বেশ কিছু দিন।
আদি জায়ের কাছে এসে বলল, তুই কি জানিস? বই মেলা শুরু হচ্ছে? তুই তো অনেক কবিতা লিখেছিস। তোর তো তখন টাকা ছিল না। তাই বই প্রকাশ করতে পারিস নাই। বাংলাদেশে তো টাকা ছাড়া প্রতিভা মূল্য হীন। পরিচিত ছাড়া প্রতিভা দিয়ে আজ পর্যন্ত কেউ বড় হতে পারে নি। এখন দোস অনেক টাকা- আমি পেইজ- থেকে তোর সব কবিতা নিয়ে কাব্য গ্রন্থ করতেছি। আর বই এর নাম কি দিয়েছি জানিস? বইয়ের নাম হলঃ “নীলিমা আমার আকশ”। নীলিমা তো তোকে আকাশ হয়ে ঘিরে রেখেছে। যেখানে যাস সেখান নীলিমাকে দেখতে পাস। কথাটা শোনে মনে হল জয় আনন্দিত হল। আদি জয়কে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, সত্যি তুই পেরেসিছ। আমি হলে অনেক আগে ভুলে যেতাম।
বই মেলা শুরো হয়ে গেল। আদি নদীর পাড়ে এসে দেখতে পেল। জয় নাই। আদি এদিক ওদিক চিৎকার করে ডাকল। কোন সাড়া পাওয়া গেল না। কোথাও জয়কে আর দেখা যাচ্ছে না।
আদি বই মেলাই আসতেছে। মেলাই যাওয়ার পথে দেখতে পেল। পাগলটা বসে আছে। একটি মেয়ে তাকে দশটা টাকা দিল ভিক্ষুক ভেবে। জয়ও টাকাটা নিয়ে নিল।
আদি একেবারে রেগে গিয়ে মেয়েটিকে যা মুখে দিয় আসল তা বলল-
আদি আপনি কী ভাবছেন ওনি কী ভিক্ষুক? কেন তাকে টাকা দিলেন?
আবার জয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, দোস আমি কী অপরাধ করছি? আমাকে পোড়াতে ভাললাগে? তোর কত টাকা লাগবে? তুই এইটাকা কেন নিলি?
মেয়েটিঃ আরে আপনি পাগলের মত চেচ্ছাছেন কেন? ভিক্ষুক না হলে কী এইভাবে বসে থাকত?
আদিঃ আর নিজেক ধরে রাখতে পারল না। পিস্তলটা হাতে নিল। আজ প্রথম পিস্তলটি প্রস্তত গুলি বের করতে। কিন্তু সুযোগটা পেল না। আদি দেখতে পেল জয়, উঠে এসে তার কাঁদে হাত দিলে।
আদিঃ তার দিকে তাকিয়ে বুকে টেনে নিয়ে বলল, দোস তুই আমাকে চিনতে পারছিস? আজ নয়টা বছর পর তুই আমাকে স্পর্শ করলি।
জয়ঃ আদি আমি পাগাল ছিলাম না। আমি তো এই নয়টা বছর নীলিমার সাথে ছিলাম। আমি প্রতি মুহূর্তে নীলিমাকে দেখতে পেতোম। আজ মনে হচ্ছে নীলিমা আমার ভুবন থেকে সরে দাঁড়াল। সেই দিন এই কথাটা বলতে চেয়েছিলাম। আমি শুনে ছিলাম। নীলিমার ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে। এই কথাটা শুনার পর থেকে আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারিনাই। আমি কখনো মেনে নিতে পরবা না নীলিমার অকাল মৃত্যু। তাই পাগল হয়ে জীবনটা পাড়ি দিয়েছি। আর ওনি হচ্ছে নীলিমা। যে আমাকে ভিক্ষা দিল।
তখন নীলিমা তাদের কাছ থেকে কিছু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল।
নীলিমাঃ এসবের মানে কিছুই বুঝতে পারল না। নীলিমা বলল, আরে! তুমি জয় না? তোমার কি হয়েছিল এতদিন তোমার কোন খুঁজ পাই নি কেন?
জয়ঃ আমার কিছুই হয় নি। এইটুকু বলে চলে আসল। আদি চল এইবার বাসায়।
জয়ঃ আমি তোর সাথে থাকতে পারব না।
আদিঃ দোস! বিশ্বাস রাখ আমি এই পথ ছেড়ে দিয়েছি। আর সব টাকা পয়সা অনাত আশ্রমে দিয়ে দিলাম
জয়ঃ শুনে খুব খুশি হলাম।
আদি ঃ আচ্ছা দোস! তোর মনে কী নীলিমাকে নিয়ে কোন স্বাদ আছে?
জয়ঃ নাই। যা কখনো সম্ভব না। তা কী করে চাইব? শুধু একটি বার সামনে দাঁড়িয়ে বলতে চাই তুমি আমার সে অ-প্রকাশিত প্রেমিকা নীলীমা। তুমি আমার আকাশ, তুমি যদি আমার উপর থেকে সরে দাঁড়াও সে দিন নিশ্চত মৃত্যু হবে আমার।
বিঃ দ্রঃ গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। কারো জীবনের সাথে কোন দিকে মিল থাকলে তার জন্য লেখক দ্বায়ী নয়।
২৫শে মাঘ ১৪২২ বাংলা-৭ই ফেব্্রুয়ারী ২০১৬
গল্প-যেখানে তুমি নাই
লেখক-মোমিনুল হক আরাফাত
ভদ্র স্বভাবের ছেলে জয়। মানুষের মৌলিক চাহিদা পাঁচটি হলেও। জয়, কিন্তু একটি পেলে সন্তুষ্ট। তার শুধু বস্ত্রের প্রয়োজন। লজ্জা থেকে বেঁচে থাকার জন্য বস্ত্র খুব গুরত্ব। তাও কোন নতুন জামা হতে হবে এমন নয়। পুরানো-টুরানো কোন রকম হলে তার চলে।
খাদ্য বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন। জয়, আর বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে না। জীবনের শুরো থেকে আজ ও কোন সুখ তাকে স্পর্শ করে নাই। বাঁচার স্বপ্ন বহু আগে আহত বুকের মাঝে ঘুমিয়ে পড়েছিল। আর সে যদি উপোস থাকে, তা তো আর কেউ দেখতেছে না।
অথবা তার মতো এইটা তো পেঠের ভিতর চলে যাবে। বাইরে নয়। যদি খাদ্যটা পেঠের বাহিরে থেকে লজ্জা স্থান এর মতো কিছু ডাকা যেত। তবে জয়ের মৌলিক চাহিদা দুইটি হত।
আর বাস স্থানঃ জয়ের আছে ছোট্ট একটি বাড়ি। যদিও তা না থাকে কোন সমস্যা হত না। পৃথীবীটা অনেক বড়। যে কোন স্থানে আকাশকে ছাদ বানিয়ে থাকা যেত। যাই হোক! জয়ের ছোট পরিবারে বাবা মা ভাই বোন নিয়ে বেশ সুখে আছে। দুঃখের কারণ তো “অতিরিক্ত স্বপ্ন দেখা” জয় তো কোন স্বপ্ন দেখে না। স্বাদ বাসনা এই গুলো জয়ের মাঝে নাই। আর প্রেম ভালবাাস এখনো পর্যন্ত স্পর্শ করে যেতে পারে নাই। তবে যে দিন প্রেম জেগে ছিল। সে দিন জয় পৃথিবী জগত থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছিল। প্রেমে পড়ার পর নয়টি বছর দেশান্তর হয়ে একা নিরজনে কাটিয়ে ছিল। অবশেষে আদি তাকে খুঁজে পাওয়ার পর। জয় আবার ঞ্জান ফিরে পেয়েছিল। তবে যার কারণে সে পাগল হয়ে ছিল তাকে ফিরে পায় নি। আর সব চেয়ে বড় দুঃখ হলো, নীলিমা জানতেও পারেনাই আজো; জয় তাকে ভালবেসেছিল।
দু এক দিন ধরে জয়কে অন্য রকম লাগতেছে। বাসায় ঠিক মতো যাই না। খাওয়া দাওয়ার কোন ঠিক নাই। তাকে দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটি গোপন করে যাচ্ছে।
বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়াটা জয়ের পুরাণো স্বভাব। তবে এখন তাদের কাছ থেকেও দূরে থাকতে চায়।
জয়ের সব চেয়ে কাছের বন্ধু ছিল আদি।
তখন রাত এগারটা বেঝেছিল। জয় একা মাঠের মধ্যে বসে রইল । আদি কাছে এসে বলল, জয় কী হয়েছে তোর? আমরা কি তোকে কোন কষ্ট দিয়েছি? তুই আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছিস কেন?
জয়ঃ একটু হেসে উঠে বলল, তোরা কেন কষ্ট দিবি? আসলে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। তাই তোদের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। পাগলের তো কোন বন্ধু থাকতে পারে না।
আদিঃ সত্যিই তাই; না হলে তুই আমাদের থেকে দূরে থাকবি কেন? আর আমি বুঝতে পেরেছি পাগল কার জন্য হয়ে যাচ্ছিস।
জয়ঃ আরে! তুই আবার কী বুঝলি? আমি তো এখনো পাগল হয় নি? পাগল হওয়ার আগে কী করে বুঝে গেলি-রে?
আদিঃ জয়! তুই কী আমাকে এখনো ছোট্ট শিশু মনে করিস না’কি? আমি সব বুঝি তুই তো নীলিমার জন্য পাগল হয়েছিস। আচ্ছা! তুই কোন চিন্তা করিস না। আমি নীলিমাকে এনে দিব তোর কাছে। তবু তোকে পাগল হতে দিব না।
জয়ঃ আদিকে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল, দোস! আর কখনো এই কথাটা বলিছ না। আমি জানি তুই আমার কথা রাখবি। তাই শপত দিলাম না। কথাটা মনে থাকে যেন।
আদিঃ অবাক দৃষ্টিতে জয়ের দিকে তাকাল-এর আগে কখনো এভাবে তাকাই নি। তার চেহেরাই এক প্রকার হতাসার চিহ্ন ভেসে উঠল। আদি মৃদু কণ্ঠে বলল, জয় আমি বুঝতে পারি নাই। কোন কথাটি না বলতে বলেছিস?
জয়ঃ নীলিকে আমার কাছে নিয়ে আসবি। আমি তো এই কথাটা স্বপ্নেও ভাবি না।
আদিঃ মানে! তুই তো বলেছিস তুই তাকে ভালবাসিছ-তো সমস্যা কোথায়?
জয়ঃ সমস্যা তো আছে। এই গুলো বলে তো শেষ করা যাবে না। দেখ ভালবাসার সৃষ্টি হয় হৃদয় থেকে। দেহের সাথে ভালবাাসর কোন সম্পর্ক নাই। ভালবেসে তার দেহটা ভোগ কারার মানে তো ভালবাসা না। ভালবাসার মানে আজীবন তাকে স্মরণ করে যাওয়া। আর তা ছাড়া নীলিমা এখন-
আদিঃ জয় থেমে গেলি কেন? নীলিমা এখন কি?
জয়ঃ আদির কাদের উপর হাতটা রেখে বলল, কিছু না।
আদিঃ আগে বল- কী বলতে চেয়ে ছিলি?
জয়ঃ একটু হেসে বলল, সে এখন বিবাহিত-নীলিমা আমার আকাশের সব চন্দ্র তারা নিয়ে অন্যর ভূবন আলোকিত করল। আর আমার ভূবনটা অন্ধকারে ডেকে গেল। অবশ্যই কার অপরাধ জানি না নিজে-কেন সে হলো না আমার। অবশ্যই এতটুকু জানে আছে। এই সব নিয়তির খেলা নিয়তির যেমন ইচ্ছা তেমন সে খেলে যাবে যত বাধা দে তারে কোন কাজ হবে নারে শালা।
জয়ের কথা শোনে আদি না হেসে পারল না। আদি হেসে উঠে জয়ের পিটে একটি থাপ্পর দিয়ে বলল, সত্যিই তো তুই পাগল হয়ে গেলি। না হয় কি কেউ একজন বিবাহিত মেয়ের প্রেমে পড়ে?
জয়ঃ না দোস! অতটা পাগল এখনো হয় নি-তাই কথাটা কাউকে প্রকাশ করলাম না-যে আমি একটি বিবাহিত মেয়ের প্রেমে পড়েছি। আর তোকে না বললে তো পাপ হবে। তুই তো আমার প্রাণের বন্ধু তোকে যদি মনের কথা না বলি আর কাকে বলব?
আদিঃ ঠিক আছে দোস! অনেক রাত হয়েছে। চল এইবার বাসায় যাই।
জয়ঃ তুই যা আমি একটু আকাশটা দেখে নি। আজ আকাশটা বেশ দারুণ লাগতেছে। জানি না এই আকাশ আর কত দিন দেখতে পাব? আমি তো পাগল হয়ে যাচ্ছি।
আদিঃ জয়! পাজলামি করিস না কিন্তু-চল বাসায়।
এভাবে কয়েকটা দিন কেটে গেল। তবে জয় খুব বেশি ভেঙে পড়তেছে। আদি ও অন্যান্য বন্ধুরা হাতাস হয়ে পড়ল।
এইতো শেষ দিনের কথাঃ তারপর থেকে আর মাঠে বসে আড্ডা দেওয়া হলো না। জয়ের অনুপস্তিতে সব যেন এলোমেলো হয়ে গেল। এখন আর কেউ মাঠে বসে মধ্য রাত পর্যন্ত গল্প করে না। তাদের চেহেরার দিকে তাকালে বুঝো যায়। সে দিন সত্যিই তাদের উপর এক তুমোল ঝড় ভয়ে গিয়েছিল।
সে দিনের কথাঃ জয় তখনো উপস্থিত ছিল না। আদি, অন্যদের লক্ষ্য করে বলল, জয়ের কি হলো কিছুই বুঝতেছি না? সে তো এখনো আসেনাই। তাদের মধ্য থেকে এক জন বলল, হ্যাঁ ফোন তো বন্ধ দেখা যাচ্ছে। আর একজন বলে উঠল, বাসায়ও তো ছিল না।
আদিঃ কিছুই তো বুঝে উঠেতে পারতেছি না এখন কী করা যায়?
তাদের মধ্যে থেকে একজন চমকে উঠে বলল, “এইতো জয়! চলে আসছে”
জয়ঃ তাদের পাশে বসে। রীতি মতো আদির সামনে থেকে সিগেরেটের প্যাক থেকে একটি সিগেরেট নিয়ে মুখে দিয়ে বলল, তোরা কী আমাকে নিয়ে দূর চিন্তা করছিস? আসলে আমি ঠিক আছি আমার কিছু হয় নাই।
আদিঃ তুই কী অভিনয় করেছিলি? জানিস না আমরা কত কষ্ট পেয়েছি?
জয়ঃ একটু গম্ভীর কণ্ঠে বলল, জানি না এই কী অভিনয় না অন্য-কথা শেষে না হতে জয় আবার বলে উঠল, আরে তোরা তো দেখছি অনেক বদলে গেলি? আরে এতক্ষণ ধরে সিগেরেট মুখে নিয়ে বসে আছি কেউ তো আগুন দিলি না?
তাদের মাঝ থেকে একজন আগুন দিয়ে বলল, ভুল হয়ে গেল দোস্ত! আসলে আমারা তোকে নিয়ে অনেক চিন্তাই ছিলাম। তাই একটু অনমনা হয়ে গেলাম।
জয়ঃ দেখ! জীবনটা বড় কঠিন, বাস্তবতা তার চেয়েও বেশি কঠিন। এত আবেগময় হলে চলবে না। জয় কী আজীবন তোদের পাশে থেকে যাবে? দেখ! আমাকে নিয়ে এত ভাবিস না।
আদিঃ বলে উঠল, কেন! তুই কি নীলিমার কাছে চলে যাবি না’কি?
জয়ঃ না তো। তোদের ছেড়ে কেন নীলিমার কাছে যাব? আর আমাদের মতো দরিদ্র হলে তাদের তো ঘর সংসার না করাই ভাল।
আদিঃ নীলিমা কেমন আছে?
জয়ঃ দেখি! এই বলে মোবাইলটা হাতে নিয়ে প্রথমে পাওয়ার অন করল। তারপর নীলিমাকে কল দিয়ে কথা বলতে-বলতে তাদের কাছ থেকে দূরে সরে গেল। বন্ধুরা সবাই হাসা হাসি করে বলতে লাগল-দেখলি জয় কতটা পরিবর্তন হয়ে গেল?
এখন বুঝেছি কেন তাকে পাওয়া যায় না।
একটুপর জয় এসে তাদের পাশে বসল। কিন্তু জয়ের চেহেরাটা তখন ভিষন্ন দেখাচ্ছে।
আদিঃ জয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, আরে তোর মন কী আবার খারাপ হয়ে গেল? নীলিমা কী তোকে কষ্ট দিয়েছে?
জয়ঃ না নীলিমা কখনো আমায় কষ্ট দেনা-দিবেও না।
আদিঃ তাহলে তোর এই অবস্থা কেন? আর নীলিমা কী স্বর্গে থেকে আসছে না’কি? কষ্ট দিবে না সেইটা নিশ্চিত কি করে হয়েছিস?
জয়ঃ জানি না সে কোথায় থেকে আগত। শুধু এইটুকু মনে হয় কোথায় যেন দেখছি আগে...মানে স্রষ্টা তাঁকে আমার জন্য এই পৃথিবীতে পাঠিয়ে ছিল।
আদিঃ তো তোর এই অবস্থা কেন?
জয়ঃ শুধু এইটুকু বলল, প্রথমঃ নীলিমা! নিলীমা-তারপর সম্পূর্ণ থেমে গিয়ে বসা থেকে আবার উঠে দাঁড়াল। জয়ের এই অবস্থা দেখে বন্ধুরা সবাই উঠে দাঁড়াল।
আদিঃ জয়কে বুকে টেনে বলল, জয় নীলিমার কী হয়েছে?
জয়ঃ গায়ে জ্বর হয়েছে-আর ডাক্তা...এইটুকু বলে জয় নিজের মাথাটা দু হাত দিয়ে চেপে ধরে মাটিতে বসে পড়ল।
সাবাই তো অবাক হয়ে পড়ল। জয়ের কী হয়েছে? কেন সে এমন করতেছে? একটুপর জয় তাদের দিকে তাকিয়ে বলল, আমাকে ক্ষমা করে দিস-এইটুকু বলে সেখান থেকে উঠে জয় চলে গেল। একটু পরে এসে বসল । আর জয়ের অস্বাভাবিক আচরণ শুরো হয়ে গেল। মুখ দিয়ে যা আসতেছে তাই বলতেছে। আদি যখন একটু কাছে আসল। তাকে ধাক্কা দিয়ে বহু দূরে পেলে দিল। তবু কোন বন্ধু তার উপর রাগ অভিমান করল না। তারা সবাই বুঝতে পারল জয়ের মানসিক সমস্যা হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর জয় আবার মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল। তখন আদিও অন্য বন্ধুরা তাকে বুকে ঝড়িয়ে রাখল। একটুপর জয় বলল, আমি কোথায়?
আদিঃ ভাঙ্গা ভাঙ্গা কণ্ঠে বলল, জয় তোর কী হয়েছে? কেন তুই এমন করেতেছিস? তোর কী মনে আছে একটু আগে কী বলেছিলি আর কী করতেছিলি?
জয়ঃ মাথাটা নেড়ে বলল, না।
তারপর জয় বাসায় ফিরে এল।
ভোরে সকালে ঘুম থেকে উঠে বন্ধু দের সাথে আর দেখা হল না। জয় রাতে কোথায় চলে গেল কেউ জানে না। এখন সবাই অন্য রকম হয়ে গেল-কেউ আগের মত নাই। কে কোথায় চলে গেল তারা নিজেরাও জানে না। আর আদি তো এখন মানুষের জগতে নাই। জয়কে হারিয়ে হয়ে গেল আন্ডারওয়াল্ডএর ডন। বর্তমানে ঢাকা শহরে আছে আদি।
আদিকে একটু দেখে নিনঃ তার সাথে ছিল আরও চার পাঁচ জন। বাসা থেকে সবাই বেরিয়ে একটি মাইক্রো বাস নিয়ে কলেজের দিকে অগ্রসর হল। তাদের সামনে মটর সাইকেল নিয়ে ছিল আদি। ঘাড়িটা একটু দূরে রেখে ছিল। একটি মেয়েকে বেশ কিছুক্ষণ ধরে লক্ষ্য করে যাচ্ছে তারা। আদি মেয়েটির কাছে গিয়ে তার মুখটা চেপে ধরে ঘাড়ির দিকে নিয়ে আসতেছে। কেউ যদিও দেখেছিল তবু প্রতিবাদ করে নাই। কারণ প্রতিবাদ করলে। সোজা ওপাড়ে পাঠিয়ে দিবে।
বাসায় এনে মেয়েটির বলল, বাসার ফোন নাম্বার দিতে। কিন্তু কোন শব্দ আসতেছে না মেয়েটির কাছ থেকে। আদি একটু জোর কণ্ঠে পিস্তলটা মেয়েটির মাথায় লাগিয়ে বলল, বাসার নাম্বারে কল দিতে না হয় টেনে দিচ্ছি। পিছ থেকে একটি শব্দ এল- দাদা, ওর মুখ বন্ধ তাই নাম্বার বলতে পরতেছে না।
আদিঃ হ্যাঁ তাই তো! মুখের বাঁধনটা খুলে দে। বাঁধান খুলার সাথে সাথে মেয়েটি বেশ কয়েকটি নিশ্বাস নিল। আদি, তার দিকে তাকিয়ে, বন্ধু দের লক্ষ্য করে বলল, মেয়েটি হয়রান হয়ে গেল। হাতের বাঁধনটা খুলে দে আর এক গ্লাস পানি দে। না হয় কথা বলতে পরবে না। মেয়েটিকে মোবাইলটা হাতে দিল। মেয়েটি কল দিয়ে মোবাইলটা তাদের দিকে বাড়িয়ে দিল। কল রিসিভ করার সাথে সাথে শব্দ এল- কে?
আদিঃ আমি অপহরণ কারি তোমার মেয়েকে অপহরণ করছে বিশ লাখ টাক নিয়ে এসে মেয়েকে নিয়ে যাও না হয় ওপাড়ে পাঠিয়ে দিব।
কল রিসিভ কারিঃ দে! গুলি করে দে। আমার কিছু যায় আসে না। ওই হত ভাগি মরলে আমি মুক্ত হব।
আদিঃ এই! টেনে দিচ্ছি।
কল রিসিভ কারিঃ শালা দে না! এত দেরি কেন?
আদিঃ মেয়েটির দিকে এমন ভাবে তাকাল মেয়েটি ভয় পেয়ে গেল। (যে মেয়েটিকে তুলে এনেছিল।) তাদের মধ্যে একজন বলল, ভাই টেনে দিন কথায় বুঝা গেল টাকা আসবে না।
আদিঃ টাকা আসবে না তবে টেনেদিলেও টাকা আসবে না। এক কাজ কর মেয়েটিকে যেখান থেকে নিয়ে আসলি সেখান দিয়ে আয়।
মেয়েটিঃ আপনার পায়ে পড়ি! আমাকে ওখান আর পাঠাবেন না। আমার মরতে হলে আপনার পায়ের নিচে মরব। আমাকে ওখানে পাঠাবেন না। আমার সৎ মা আমাকে গলা ঠিপে মেরে পেলবে। যদি মরতে হয়, এখানে মরব!
আদিঃ এই মেয়েটিকে থাকার ব্যবস্তা করে দে আজ থেকে রান্না বান্না সে করবে।
বর্তমানে জয়ঃ নিরজন এক নদীর পাড়ে বসে আছে। চুল গুলো অনেক লম্বা হয়ে গেছে। দেখে বুঝা গেল জন্মের পর থেকে ছেলেটা পাগল। খাওয়া দাওয়া করে না। শুধু একা অন মনে বসে থাকে। আদি অনেক খুঁজে জয়ের সন্ধান পেয়েছে।
জয়ঃ নীরবে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে। আদি খাওয়ার নিয়ে এসে উপস্থিত। প্রতিবারের মতো, খাওয়ারটা হাতে নিয়ে খাওয়াতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে নদীতে ভাসিয়ে দিল।
আদিঃ আমি এখন অনেক টাকার মালিক। আমার ঘাড়ি বাড়ি সব হয়েছে। শুধু তুই পাশে নাই। দোস! চলে আয় আমি জানি তুই পাগাল না। তুই কখনো পাগল হতে পারিস না। তুই আমাদের কষ্ট দেওয়ার জন্য পাগরের অভিনয় করে যাচ্ছিস। বল তোর কী চাই? আমি সব এনে দিব। না হয় #নীলিমা নামের যত মেয়ে আছে সব এনে দিব। তখন জয় সেখান থেকে উঠে চলে যাচ্ছে। আদিও বুঝতে পারল জয় অসুন্তষ্ট। আদি বাসায় ফিরে আসল।
পরের দিন সকালে আবার গিয়ে উপস্থিত আদি।
আদিঃ দোস! দোয়া করিস আজ কাজটা করতে পারলে অনেক টাকা পাব। অনেক বড় লোকের মেয়ে-তুই যদি দোয়া না করিস বিপদে পড়ব। আর আমি মানুষকে কষ্ট দি না। এমনে ভয় দেখায়।
এভাবে কেটে গেল বেশ কিছু দিন।
আদি জায়ের কাছে এসে বলল, তুই কি জানিস? বই মেলা শুরু হচ্ছে? তুই তো অনেক কবিতা লিখেছিস। তোর তো তখন টাকা ছিল না। তাই বই প্রকাশ করতে পারিস নাই। বাংলাদেশে তো টাকা ছাড়া প্রতিভা মূল্য হীন। পরিচিত ছাড়া প্রতিভা দিয়ে আজ পর্যন্ত কেউ বড় হতে পারে নি। এখন দোস অনেক টাকা- আমি পেইজ- থেকে তোর সব কবিতা নিয়ে কাব্য গ্রন্থ করতেছি। আর বই এর নাম কি দিয়েছি জানিস? বইয়ের নাম হলঃ “নীলিমা আমার আকশ”। নীলিমা তো তোকে আকাশ হয়ে ঘিরে রেখেছে। যেখানে যাস সেখান নীলিমাকে দেখতে পাস। কথাটা শোনে মনে হল জয় আনন্দিত হল। আদি জয়কে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, সত্যি তুই পেরেসিছ। আমি হলে অনেক আগে ভুলে যেতাম।
বই মেলা শুরো হয়ে গেল। আদি নদীর পাড়ে এসে দেখতে পেল। জয় নাই। আদি এদিক ওদিক চিৎকার করে ডাকল। কোন সাড়া পাওয়া গেল না। কোথাও জয়কে আর দেখা যাচ্ছে না।
আদি বই মেলাই আসতেছে। মেলাই যাওয়ার পথে দেখতে পেল। পাগলটা বসে আছে। একটি মেয়ে তাকে দশটা টাকা দিল ভিক্ষুক ভেবে। জয়ও টাকাটা নিয়ে নিল।
আদি একেবারে রেগে গিয়ে মেয়েটিকে যা মুখে দিয় আসল তা বলল-
আদি আপনি কী ভাবছেন ওনি কী ভিক্ষুক? কেন তাকে টাকা দিলেন?
আবার জয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, দোস আমি কী অপরাধ করছি? আমাকে পোড়াতে ভাললাগে? তোর কত টাকা লাগবে? তুই এইটাকা কেন নিলি?
মেয়েটিঃ আরে আপনি পাগলের মত চেচ্ছাছেন কেন? ভিক্ষুক না হলে কী এইভাবে বসে থাকত?
আদিঃ আর নিজেক ধরে রাখতে পারল না। পিস্তলটা হাতে নিল। আজ প্রথম পিস্তলটি প্রস্তত গুলি বের করতে। কিন্তু সুযোগটা পেল না। আদি দেখতে পেল জয়, উঠে এসে তার কাঁদে হাত দিলে।
আদিঃ তার দিকে তাকিয়ে বুকে টেনে নিয়ে বলল, দোস তুই আমাকে চিনতে পারছিস? আজ নয়টা বছর পর তুই আমাকে স্পর্শ করলি।
জয়ঃ আদি আমি পাগাল ছিলাম না। আমি তো এই নয়টা বছর নীলিমার সাথে ছিলাম। আমি প্রতি মুহূর্তে নীলিমাকে দেখতে পেতোম। আজ মনে হচ্ছে নীলিমা আমার ভুবন থেকে সরে দাঁড়াল। সেই দিন এই কথাটা বলতে চেয়েছিলাম। আমি শুনে ছিলাম। নীলিমার ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে। এই কথাটা শুনার পর থেকে আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারিনাই। আমি কখনো মেনে নিতে পরবা না নীলিমার অকাল মৃত্যু। তাই পাগল হয়ে জীবনটা পাড়ি দিয়েছি। আর ওনি হচ্ছে নীলিমা। যে আমাকে ভিক্ষা দিল।
তখন নীলিমা তাদের কাছ থেকে কিছু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল।
নীলিমাঃ এসবের মানে কিছুই বুঝতে পারল না। নীলিমা বলল, আরে! তুমি জয় না? তোমার কি হয়েছিল এতদিন তোমার কোন খুঁজ পাই নি কেন?
জয়ঃ আমার কিছুই হয় নি। এইটুকু বলে চলে আসল। আদি চল এইবার বাসায়।
জয়ঃ আমি তোর সাথে থাকতে পারব না।
আদিঃ দোস! বিশ্বাস রাখ আমি এই পথ ছেড়ে দিয়েছি। আর সব টাকা পয়সা অনাত আশ্রমে দিয়ে দিলাম
জয়ঃ শুনে খুব খুশি হলাম।
আদি ঃ আচ্ছা দোস! তোর মনে কী নীলিমাকে নিয়ে কোন স্বাদ আছে?
জয়ঃ নাই। যা কখনো সম্ভব না। তা কী করে চাইব? শুধু একটি বার সামনে দাঁড়িয়ে বলতে চাই তুমি আমার সে অ-প্রকাশিত প্রেমিকা নীলীমা। তুমি আমার আকাশ, তুমি যদি আমার উপর থেকে সরে দাঁড়াও সে দিন নিশ্চত মৃত্যু হবে আমার।
বিঃ দ্রঃ গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। কারো জীবনের সাথে কোন দিকে মিল থাকলে তার জন্য লেখক দ্বায়ী নয়।
২৫শে মাঘ ১৪২২ বাংলা-৭ই ফেব্্রুয়ারী ২০১৬
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
০।।০ ১৯/০৪/২০১৭
-
মোঃআব্দুল্লাহ্ আল মামুন ১১/০৩/২০১৭সুন্দর
-
পরশ ১০/০৩/২০১৭ভাল লাগল
-
পরশ ২৪/০২/২০১৭মোটামুটি
-
মোঃ ইমরান হোসেন (ইমু) ১৭/০২/২০১৭চমৎকার প্রয়াস
:::::::::::::::::::
.........................
সুস্থ থাকুন সর্বদা ।। শুভ কামনা নিরন্তর...