ভালবাসা এতযে কাঁদায়
জীবনের হিসাব
লেখক- মোমিনুল হক আরাফাত
এপি বরুয়ার সাথে জয়ের পরিচয়, ফেসবুকে। এপির বাসা চট্টগ্রাম, রাওজান, পাহাড়তলি গ্রামে। আসলে এপি মেয়েটি অনেক লক্ষ্ণী ছিল। জয়, এপিকে ঠিক ততটা ভালবেসেছিল। যতটা ভালবাসলে একজন মানুষ নিজেকে ভুলে যায়। এপিরও কোন অপরাধ ছিল না। এপি তো জয়কে কখনো ভালবাসে নি। এপির হৃদয়টা তো ইদুরে কেঁটে দিয়ে ছিল। মানে তার---।
জয়ঃ একা নদীর পাড়ে বসে আছে। আসলে জয় তো শত বার চেষ্টা করেছিল। এপিকে ভুলে যেতে। তবু ভুলা সম্ভব হয় নি। জয় যেমন শান্ত স্বভাবের ছিল তেমনি যখন রেগে যায়। তখন আর কিছূ বুঝে উঠার সময় তার থাকে না।
জয় একটি ছুরি নিয়ে নিজের হাতে বেশ কয়েকটি আঘাত করল। আর যখন হতে যন্ত্রণা করতে লাগল। তখন মনের যন্ত্রণা একটু হ্রাস পেল। অল্পক্ষণ পরে দোকানে এসে বসল।
আদিঃ জয়কে লক্ষ্য করে বলল, জয়! তোর কী মন খারাপ?
জয় বলল, আরে আমার মন খারপ ছিল না কখনো। আমি তো জন্ম নিয়ে ছিলাম মন খারাপ করে। জন্মের পর থেকে আজো কখনো প্রাণ খুলে হাসতে পারি নাই। আগামীতেও পারব না।
আদিঃ আচ্ছা তোর সমস্যাটা কি? তুই সারাক্ষণ মন খারাপ করে বসে থাকিস কেন?
জয়ঃ তুই কী করে বুঝবি? তুই তো আর জয়ের স্থানে নাই। যদি জয়ের মত এপিকে ভালবাস-তি তবে বুঝতে পারতি জীবনটা কত কষ্টের শালা।
আদিঃ দোস্ত! তুই কথাই কথাই রেগে যাস্ কেন?
জয়ঃ রেগেগিয়ে শালা বললেও তো তোর সমস্যা নাই। তোর তো কোন বোন নাই যে, তোকে শালা ডাকলে সমস্যা হচ্ছে। এপি কী তোর বোন ছিল নাকি?
আদিঃ তা কী করে হবে সে তো এপি বরুয়া। আর আমি তো আদি-অন্ত। দেখলি না নামের মধ্যে কত ব্যবদান। আর তোর কী হয়েছে? তুই তো দেখছি আগের চেয়েও বেশি ভেঙ্গে পড়েছিস।
জয়ঃ কিছু হয় নি। বয়স যত বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোগটাও তত বৃদ্ধি পাচ্ছে-এপিকে বারে বারে মনে পড়তেছে।
আদিঃ হাতটা দেখি? আরে তুই তো এখনো পাগল রয়ে গেলি। তুই হাতটা কাটলেও কী? না কাটলেও এপির কী আসে যায়। তুই কেন নিজেকে কষ্ট দিবি?
জয়ঃ এইটাই স্বাভাবিক, আমি যদি গলাও কাটি। এপির কিছু যায় আসে না। সে তো কখনো আমাকে ভালবাসে নাই। বাসবেও না। অবশ্য আমি তাকে পাওয়ার জন্য হাত কাটি নাই। আমি একটু সুখ চেয়েছি তাই হাত কেঁটেছি। আমার হৃদয়টা জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। তাই মাঝে মাঝে একটু সুখ খুঁজি।
আদিঃ এপির সাথে কথা হয়েছে?
জয়ঃ না। আর কোন কথা হবে না। আমি তাকে কথা দিয়েছিলাম তার জীবন থেকে সরে দাঁড়াব, তাকে ভুলে যাব, আর কখনো ফেসবুকে মেসেজ দিব না।
আদিঃ তুই কী তাকে ভুলতে পেরেছিস?
জয়ঃ পারি কি পারি নাই। সেইটা তাকে বুঝতে দিব না।
আদিঃ তাহলে এত পাগলামি করতেছিস কেন?
জয়ঃ আমি নিজেও জানি না। তার মাঝে কী এমন আছে? কেন তাকে এতটা ভালবেসে যাচ্ছি। কিছুই তো জানি না।
আদিঃ জয় এসব ভুলে যা। দেখবি জীবনটা অনকে সুন্দর।
জয়ঃ আদিকে বুকে টেনে নিয়ে বলল, যদি ভুলা যেত। অনেক আগে ভুুলে যেতাম।
আদিঃ তাহলে কী করবি?
জয়ঃ নষ্ট হয়ে যাব।
আদিঃ মানে?
জয়ঃ একে বারে সহজ, আমি তো দরিদ্র তাই এপি, আমাকে ভালবাসে নাই। তাই সিন্ধান্ত নিলাম আমি মাপিয়া হয়ে যাব।
আদিঃ আরে পাগলামি করিস না।
জয়ঃ হ্যাঁ। মাঝে মাঝে কী হয় জানিস?
আদিঃ কী হয়?
জয়ঃ আমারা ইচ্ছা হয় অমানুষ হয়ে যেতে। আর আমার ইচ্ছা হয় খুন করতে। কিন্তুু তাও পারি না।
আদিঃ তুই তো বুঝি পাগল হয়ে যাচ্ছিস। না হয় এই ধরণের চিন্তা আসবে কেন?
জয়ঃ সময়ে আমাকে পাগলে করে তুলছে। আমি নিজেকে বারে বারে প্রশ্ন করে দেখে ছিলাম? এপি কেন আমার হল না? আমার অপরাধ কী ছিল? আমি তো কোন দূর চরিত্রের ছিলাম না। তবে উত্তরও আমি পেয়ে গেছি।
আদিঃ কী উত্তর পেলি?
জয়ঃ আমি সৎ ছিলাম, তবে দরিদ্র। আজ কাল তো কেউ সততাকে ভালবাসে না। আমারা তো তাকে ভাল মানুষ বলে দাবি করে যাচ্ছি। যার কোন বিবেক নাই। যে ব্যাক্তি নানা ধরণের অপরাধ করে ধন সম্পদ অর্জন করল তারা রাজাত্ব করে যাচ্ছে এই জগতে আমার আর আদির কোন স্থান নাই।
আদিঃ ঠিক বলছিস। তবে তুই কী অমানুষ হতে পারবি?
জয়ঃ না তাও পারতেছি না। তবে এপিকেও ভুলতে পারতেছি না। দেখি কী করা যায়।
সাকাল থেকে জয়কে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আদি এদিক ওদিক ঘুরে খুঁজ করতে লাগল।
রাত দশটার দিকে জয় বাসায় ফিরে আসল।
আদিঃ এই তুই কি পাগল হয়ে গেলি? সারাদিন কোথায় ছিল খাওয়া দাওয়া তো হল না মনে হয়? তুই কি বুঝিছ না? তুই ছাড়া এই জগতে আমার আর কে আছে? জয়ঃ চুপ হয়ে রইল।
আদিঃ কাছে গিয়ে বুঝতে দেরি হল না। জয়ের কি হল।
আদিঃ এই তুই কি মদ খেয়ে ছিস? তুই তো দেখলাম সত্যি নষ্ট হয়ে গেলি।
জয়ঃ হ্যাঁ নষ্ট হওয়ার প্রশিক্ষণ দিচ্ছি তাই সকাল থেকে নিখুঁজ হয়ে গিয়েছিলাম। আর মন ভরে মদ খেয়েছি। তোর জন্যও নিয়ে এসেছি। এত রাগা রাগির প্রয়োজন নাই। তোকে না দিয়ে তো একা হজম করলাম না।
আদিঃ না! আমি এত বাজে না। আমি মদ খাব না।
জয়ঃ ঠিক বলছিস আমি নষ্ট হয়ে গেছি। তুই কী জানিস? আমি সকালে কেন বের হয়েছিলাম?
আদিঃ কি করে জানব? তুই তো কিছু বলে যাস নি।
জয়ঃ আজ ঠিক করেছিলাম এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব। আমি যদি মরে যায়। এপির স্মৃতি আমাকে আর ব্যাতিত করতে পারত না। তাই রেল-লাইনে শুয়ে ছিলাম কিন্ত।
আদিঃ কিন্তু আবার কি?
জয়ঃ ট্রেনটা না, যে জোরে শব্দ করে আসতেছে আর শুয়ে থাকতে পারলাম না। তাই মদ খেয়ে ফিরে আসছি।
আদিঃ আরে তুই না মৃত্যুকে ভয় পেলি না। আর ট্রেনের শব্দকে ভয় পেলি?
জয়ঃ ভয় পাই নি। তবে অসহ্য লাগে। তুই তো ভাল করে জানিস। আমি নিরজন ভালবাসি। শব্দ একে বারে সয্য হয় না।
আদিঃ তুই কি সত্যি সত্যি মরতে চেয়েছিলি?
জয়ঃ না মরে উপায় নাই। ছোট বেলা থেকে শুধু হেরে যাচ্ছি। আর কত হারব? সারা দিন জীবনের সাথে যুদ্ধ করেও দু বেলা খাবার জুটেনা মাঝে মাধ্যে। আমাদের বেঁচে থেকে লাভ কি? যত দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখা পড়া করেছিলাম। ততদিন মাত্র একটি জামা ছিল। বিদ্যালয়ের ছেলে মেয়েরা আমাকে দেখে হাসা হাসি করত।
বাবা মা তো ওপাড়ে খুব সুখে আছে। শুধু আমি ধোকে ধোকে মরে যাচ্ছি।
আদিঃ তাহালে আমকে সঙ্গে নিয়ে যাস নাই কেন? আর কখনো মরতে গেলে আমাকেও সঙ্গে নিয়ে যাস।
জয়ঃ নারে আর মরতে যাব না। পৃথিবীতে সুখ খোঁজে পাচ্ছি না বলে যদি অকালে ওপাড়ে চলে যাই। ওখানেও সুখী হতে পারব না। ওখানেও পিটাবে।
আদিঃ আমাকেও দে আমার আজ যন্ত্রণা বেড়ে গেল। আদিও অল্প খেয়ে মাতালামি করতেছে। দু জন বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়ে ঠিক রাস্তার মাঝে শুয়ে আছে।
আদি বলল, দোস আমরা অন্যায় করতেছি।
জয়ঃ কী অন্যায়?
আদিঃ এইভাবে রাস্তায় হেঁটে হেঁটে মাতলামি করা কিন্তু ঠিক না। সমাজ বলে তো কিছু একটা আছে।
জয়ঃ সমাজকে দোষ দেওয়া যাবে না। তবে এই সমাজের মানুষেরা তো আমাদের মাতালে পরিণত করে। দিনের পর দিন না খেয়ে পরে থাকলে তখন কি কেউ আমাদরে পাশে এসে দাঁড়ায়? এখনো শত-শত নারী দু বেলা খাওয়ার জোগাড় করার জন্য দেহ বিক্রি করে যাচ্ছে। আমরা তাদেরকে পতিতা হতে বাদ্ধ করতেছি। তখন সমাজ কোথায় থাকে? আর জয়, মদ খেয়ে মাতলামি করলে সামাজ...
আদিঃ আচ্ছা মন খারাপ করিস না। দেখবি “এপি” এক দিন তোর বুকে ছুটে আসবে।
জয়ঃ এই! তুই কী জীবনটাকে বাংলা ছায়াছবি মনে করছিস নাকি? বাস্থবে তো কাউকে কারো বুকে ছুটে আসতে দেখি নাই। বাংলা ছবিতে দেখেছি অপু বিশ্বাস সাকিবের বুকে ছুটে আসতে। আর তাঁদের প্রেমটা ধাক্কা খাওয়ার পর সৃষ্টি হয়। এপি তো কখনো আমার সাথে ধাক্কা খায় নি। হয়তো তাই সে আমাকে ভালবাসে নাই।
আদিঃ রাওজান গিয়ে ধাক্কা খেয়ে আয়। দেখবি এপিও অপুর মত তোর বুকে ছুটে আসবে।
জয়ঃ বেলা তো শেষ হয়ে গেল, অবেলাই এসে কী লাভ? আর আমার আগে সিকাত খেয়ে ছিল।
আদিঃ আচ্ছা এপি যদি কখনো তোর কাছে এসে বলত, জয় আমি তোমাকে বিয়ে করব তখন তুই কী করতি?
জয়ঃ আমার কিছুই করার থাকত না। আমি এপিকে বলতাম, এপি! আমিও তোমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম তবে তোমাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না। প্রেম করতে আমার বাঁধা ছিল না। তবে বিয়ে করতে বাঁধা আছে। তোমাকে বিয়ে করে তোমাকে সুখী করার সামর্থ্য আমার ছিল না। আমার জীবনটা তো নষ্ট হয়ে গেল। আমি চাই না তোমার ছেলেরও জীবন আমার মত নষ্ট হয়ে যাক। আমাদরে বিয়ের পর যে সন্তান জন্ম নিবে তাকে তো মানুষের মত মানুষ করতে পারব না। তাকে ভাল খাওয়াতে পারব না। ভাল পরাতে পারব না। তার জীবন নষ্ট করার অধিকার আমার নাই। এপি তুমি অন্য কাউকে নিয়ে সুখে ঘর কর। আমি সারা জীবন তোমাকে ভালবেসে যাব।
আদিঃ এত দিন পর সত্যিটা বললি, তাও মাল খাওয়ার পর বের হল-যাই হোক! আর চিন্তা করে লাভ নাই। এপি যা করেছিল তোর ভালর জন্য করে ছিল।
জয়ঃ তবুও এ মন আজো খুঁজো বেড়ায় তাকে। আজে নিতে চায় তার একটু ঘ্রাণ।
৩০শে কার্তিক ১৪২২ বাংলা,
১৪ নভেম্বর ২০১৫ খিষ্টাব্দ
লেখক- মোমিনুল হক আরাফাত
এপি বরুয়ার সাথে জয়ের পরিচয়, ফেসবুকে। এপির বাসা চট্টগ্রাম, রাওজান, পাহাড়তলি গ্রামে। আসলে এপি মেয়েটি অনেক লক্ষ্ণী ছিল। জয়, এপিকে ঠিক ততটা ভালবেসেছিল। যতটা ভালবাসলে একজন মানুষ নিজেকে ভুলে যায়। এপিরও কোন অপরাধ ছিল না। এপি তো জয়কে কখনো ভালবাসে নি। এপির হৃদয়টা তো ইদুরে কেঁটে দিয়ে ছিল। মানে তার---।
জয়ঃ একা নদীর পাড়ে বসে আছে। আসলে জয় তো শত বার চেষ্টা করেছিল। এপিকে ভুলে যেতে। তবু ভুলা সম্ভব হয় নি। জয় যেমন শান্ত স্বভাবের ছিল তেমনি যখন রেগে যায়। তখন আর কিছূ বুঝে উঠার সময় তার থাকে না।
জয় একটি ছুরি নিয়ে নিজের হাতে বেশ কয়েকটি আঘাত করল। আর যখন হতে যন্ত্রণা করতে লাগল। তখন মনের যন্ত্রণা একটু হ্রাস পেল। অল্পক্ষণ পরে দোকানে এসে বসল।
আদিঃ জয়কে লক্ষ্য করে বলল, জয়! তোর কী মন খারাপ?
জয় বলল, আরে আমার মন খারপ ছিল না কখনো। আমি তো জন্ম নিয়ে ছিলাম মন খারাপ করে। জন্মের পর থেকে আজো কখনো প্রাণ খুলে হাসতে পারি নাই। আগামীতেও পারব না।
আদিঃ আচ্ছা তোর সমস্যাটা কি? তুই সারাক্ষণ মন খারাপ করে বসে থাকিস কেন?
জয়ঃ তুই কী করে বুঝবি? তুই তো আর জয়ের স্থানে নাই। যদি জয়ের মত এপিকে ভালবাস-তি তবে বুঝতে পারতি জীবনটা কত কষ্টের শালা।
আদিঃ দোস্ত! তুই কথাই কথাই রেগে যাস্ কেন?
জয়ঃ রেগেগিয়ে শালা বললেও তো তোর সমস্যা নাই। তোর তো কোন বোন নাই যে, তোকে শালা ডাকলে সমস্যা হচ্ছে। এপি কী তোর বোন ছিল নাকি?
আদিঃ তা কী করে হবে সে তো এপি বরুয়া। আর আমি তো আদি-অন্ত। দেখলি না নামের মধ্যে কত ব্যবদান। আর তোর কী হয়েছে? তুই তো দেখছি আগের চেয়েও বেশি ভেঙ্গে পড়েছিস।
জয়ঃ কিছু হয় নি। বয়স যত বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোগটাও তত বৃদ্ধি পাচ্ছে-এপিকে বারে বারে মনে পড়তেছে।
আদিঃ হাতটা দেখি? আরে তুই তো এখনো পাগল রয়ে গেলি। তুই হাতটা কাটলেও কী? না কাটলেও এপির কী আসে যায়। তুই কেন নিজেকে কষ্ট দিবি?
জয়ঃ এইটাই স্বাভাবিক, আমি যদি গলাও কাটি। এপির কিছু যায় আসে না। সে তো কখনো আমাকে ভালবাসে নাই। বাসবেও না। অবশ্য আমি তাকে পাওয়ার জন্য হাত কাটি নাই। আমি একটু সুখ চেয়েছি তাই হাত কেঁটেছি। আমার হৃদয়টা জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। তাই মাঝে মাঝে একটু সুখ খুঁজি।
আদিঃ এপির সাথে কথা হয়েছে?
জয়ঃ না। আর কোন কথা হবে না। আমি তাকে কথা দিয়েছিলাম তার জীবন থেকে সরে দাঁড়াব, তাকে ভুলে যাব, আর কখনো ফেসবুকে মেসেজ দিব না।
আদিঃ তুই কী তাকে ভুলতে পেরেছিস?
জয়ঃ পারি কি পারি নাই। সেইটা তাকে বুঝতে দিব না।
আদিঃ তাহলে এত পাগলামি করতেছিস কেন?
জয়ঃ আমি নিজেও জানি না। তার মাঝে কী এমন আছে? কেন তাকে এতটা ভালবেসে যাচ্ছি। কিছুই তো জানি না।
আদিঃ জয় এসব ভুলে যা। দেখবি জীবনটা অনকে সুন্দর।
জয়ঃ আদিকে বুকে টেনে নিয়ে বলল, যদি ভুলা যেত। অনেক আগে ভুুলে যেতাম।
আদিঃ তাহলে কী করবি?
জয়ঃ নষ্ট হয়ে যাব।
আদিঃ মানে?
জয়ঃ একে বারে সহজ, আমি তো দরিদ্র তাই এপি, আমাকে ভালবাসে নাই। তাই সিন্ধান্ত নিলাম আমি মাপিয়া হয়ে যাব।
আদিঃ আরে পাগলামি করিস না।
জয়ঃ হ্যাঁ। মাঝে মাঝে কী হয় জানিস?
আদিঃ কী হয়?
জয়ঃ আমারা ইচ্ছা হয় অমানুষ হয়ে যেতে। আর আমার ইচ্ছা হয় খুন করতে। কিন্তুু তাও পারি না।
আদিঃ তুই তো বুঝি পাগল হয়ে যাচ্ছিস। না হয় এই ধরণের চিন্তা আসবে কেন?
জয়ঃ সময়ে আমাকে পাগলে করে তুলছে। আমি নিজেকে বারে বারে প্রশ্ন করে দেখে ছিলাম? এপি কেন আমার হল না? আমার অপরাধ কী ছিল? আমি তো কোন দূর চরিত্রের ছিলাম না। তবে উত্তরও আমি পেয়ে গেছি।
আদিঃ কী উত্তর পেলি?
জয়ঃ আমি সৎ ছিলাম, তবে দরিদ্র। আজ কাল তো কেউ সততাকে ভালবাসে না। আমারা তো তাকে ভাল মানুষ বলে দাবি করে যাচ্ছি। যার কোন বিবেক নাই। যে ব্যাক্তি নানা ধরণের অপরাধ করে ধন সম্পদ অর্জন করল তারা রাজাত্ব করে যাচ্ছে এই জগতে আমার আর আদির কোন স্থান নাই।
আদিঃ ঠিক বলছিস। তবে তুই কী অমানুষ হতে পারবি?
জয়ঃ না তাও পারতেছি না। তবে এপিকেও ভুলতে পারতেছি না। দেখি কী করা যায়।
সাকাল থেকে জয়কে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আদি এদিক ওদিক ঘুরে খুঁজ করতে লাগল।
রাত দশটার দিকে জয় বাসায় ফিরে আসল।
আদিঃ এই তুই কি পাগল হয়ে গেলি? সারাদিন কোথায় ছিল খাওয়া দাওয়া তো হল না মনে হয়? তুই কি বুঝিছ না? তুই ছাড়া এই জগতে আমার আর কে আছে? জয়ঃ চুপ হয়ে রইল।
আদিঃ কাছে গিয়ে বুঝতে দেরি হল না। জয়ের কি হল।
আদিঃ এই তুই কি মদ খেয়ে ছিস? তুই তো দেখলাম সত্যি নষ্ট হয়ে গেলি।
জয়ঃ হ্যাঁ নষ্ট হওয়ার প্রশিক্ষণ দিচ্ছি তাই সকাল থেকে নিখুঁজ হয়ে গিয়েছিলাম। আর মন ভরে মদ খেয়েছি। তোর জন্যও নিয়ে এসেছি। এত রাগা রাগির প্রয়োজন নাই। তোকে না দিয়ে তো একা হজম করলাম না।
আদিঃ না! আমি এত বাজে না। আমি মদ খাব না।
জয়ঃ ঠিক বলছিস আমি নষ্ট হয়ে গেছি। তুই কী জানিস? আমি সকালে কেন বের হয়েছিলাম?
আদিঃ কি করে জানব? তুই তো কিছু বলে যাস নি।
জয়ঃ আজ ঠিক করেছিলাম এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব। আমি যদি মরে যায়। এপির স্মৃতি আমাকে আর ব্যাতিত করতে পারত না। তাই রেল-লাইনে শুয়ে ছিলাম কিন্ত।
আদিঃ কিন্তু আবার কি?
জয়ঃ ট্রেনটা না, যে জোরে শব্দ করে আসতেছে আর শুয়ে থাকতে পারলাম না। তাই মদ খেয়ে ফিরে আসছি।
আদিঃ আরে তুই না মৃত্যুকে ভয় পেলি না। আর ট্রেনের শব্দকে ভয় পেলি?
জয়ঃ ভয় পাই নি। তবে অসহ্য লাগে। তুই তো ভাল করে জানিস। আমি নিরজন ভালবাসি। শব্দ একে বারে সয্য হয় না।
আদিঃ তুই কি সত্যি সত্যি মরতে চেয়েছিলি?
জয়ঃ না মরে উপায় নাই। ছোট বেলা থেকে শুধু হেরে যাচ্ছি। আর কত হারব? সারা দিন জীবনের সাথে যুদ্ধ করেও দু বেলা খাবার জুটেনা মাঝে মাধ্যে। আমাদের বেঁচে থেকে লাভ কি? যত দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখা পড়া করেছিলাম। ততদিন মাত্র একটি জামা ছিল। বিদ্যালয়ের ছেলে মেয়েরা আমাকে দেখে হাসা হাসি করত।
বাবা মা তো ওপাড়ে খুব সুখে আছে। শুধু আমি ধোকে ধোকে মরে যাচ্ছি।
আদিঃ তাহালে আমকে সঙ্গে নিয়ে যাস নাই কেন? আর কখনো মরতে গেলে আমাকেও সঙ্গে নিয়ে যাস।
জয়ঃ নারে আর মরতে যাব না। পৃথিবীতে সুখ খোঁজে পাচ্ছি না বলে যদি অকালে ওপাড়ে চলে যাই। ওখানেও সুখী হতে পারব না। ওখানেও পিটাবে।
আদিঃ আমাকেও দে আমার আজ যন্ত্রণা বেড়ে গেল। আদিও অল্প খেয়ে মাতালামি করতেছে। দু জন বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়ে ঠিক রাস্তার মাঝে শুয়ে আছে।
আদি বলল, দোস আমরা অন্যায় করতেছি।
জয়ঃ কী অন্যায়?
আদিঃ এইভাবে রাস্তায় হেঁটে হেঁটে মাতলামি করা কিন্তু ঠিক না। সমাজ বলে তো কিছু একটা আছে।
জয়ঃ সমাজকে দোষ দেওয়া যাবে না। তবে এই সমাজের মানুষেরা তো আমাদের মাতালে পরিণত করে। দিনের পর দিন না খেয়ে পরে থাকলে তখন কি কেউ আমাদরে পাশে এসে দাঁড়ায়? এখনো শত-শত নারী দু বেলা খাওয়ার জোগাড় করার জন্য দেহ বিক্রি করে যাচ্ছে। আমরা তাদেরকে পতিতা হতে বাদ্ধ করতেছি। তখন সমাজ কোথায় থাকে? আর জয়, মদ খেয়ে মাতলামি করলে সামাজ...
আদিঃ আচ্ছা মন খারাপ করিস না। দেখবি “এপি” এক দিন তোর বুকে ছুটে আসবে।
জয়ঃ এই! তুই কী জীবনটাকে বাংলা ছায়াছবি মনে করছিস নাকি? বাস্থবে তো কাউকে কারো বুকে ছুটে আসতে দেখি নাই। বাংলা ছবিতে দেখেছি অপু বিশ্বাস সাকিবের বুকে ছুটে আসতে। আর তাঁদের প্রেমটা ধাক্কা খাওয়ার পর সৃষ্টি হয়। এপি তো কখনো আমার সাথে ধাক্কা খায় নি। হয়তো তাই সে আমাকে ভালবাসে নাই।
আদিঃ রাওজান গিয়ে ধাক্কা খেয়ে আয়। দেখবি এপিও অপুর মত তোর বুকে ছুটে আসবে।
জয়ঃ বেলা তো শেষ হয়ে গেল, অবেলাই এসে কী লাভ? আর আমার আগে সিকাত খেয়ে ছিল।
আদিঃ আচ্ছা এপি যদি কখনো তোর কাছে এসে বলত, জয় আমি তোমাকে বিয়ে করব তখন তুই কী করতি?
জয়ঃ আমার কিছুই করার থাকত না। আমি এপিকে বলতাম, এপি! আমিও তোমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম তবে তোমাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না। প্রেম করতে আমার বাঁধা ছিল না। তবে বিয়ে করতে বাঁধা আছে। তোমাকে বিয়ে করে তোমাকে সুখী করার সামর্থ্য আমার ছিল না। আমার জীবনটা তো নষ্ট হয়ে গেল। আমি চাই না তোমার ছেলেরও জীবন আমার মত নষ্ট হয়ে যাক। আমাদরে বিয়ের পর যে সন্তান জন্ম নিবে তাকে তো মানুষের মত মানুষ করতে পারব না। তাকে ভাল খাওয়াতে পারব না। ভাল পরাতে পারব না। তার জীবন নষ্ট করার অধিকার আমার নাই। এপি তুমি অন্য কাউকে নিয়ে সুখে ঘর কর। আমি সারা জীবন তোমাকে ভালবেসে যাব।
আদিঃ এত দিন পর সত্যিটা বললি, তাও মাল খাওয়ার পর বের হল-যাই হোক! আর চিন্তা করে লাভ নাই। এপি যা করেছিল তোর ভালর জন্য করে ছিল।
জয়ঃ তবুও এ মন আজো খুঁজো বেড়ায় তাকে। আজে নিতে চায় তার একটু ঘ্রাণ।
৩০শে কার্তিক ১৪২২ বাংলা,
১৪ নভেম্বর ২০১৫ খিষ্টাব্দ
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মোনালিসা ০৯/০২/২০১৭খুব?
-
মোঃ ইমরান হোসেন (ইমু) ০৫/০২/২০১৭স্বার্থক ছোট গল্প!!
দারুণ হয়েছে,
লিখুন আরো.. সাথে আছি -
প্রশান্ত কুমার ঘোষ ০৩/০২/২০১৭বাঃ বেশ
-
মুহাম্মদ রুমান ০২/০২/২০১৭সুন্দর
-
দীপঙ্কর বেরা ০২/০২/২০১৭খুব ভাল
-
ফয়জুল মহী ০১/০২/২০১৭বই কিনুন,পড়ুন অন্যকে পড়তে উৎসাহিত করুন
-
মেহেদী হাসান (নয়ন) ০১/০২/২০১৭সুন্দর
-
সজীব ০১/০২/২০১৭ভাললাগল