গিটারের সুরে তোমায় খুঁজেছি
গিটারের সুরে তোমায় খুঁজেছি
মোমিনুল হক আরাফাত
জয় নামের ছেলেটা সদা আনমনে থাকে এই জগত সংসার তার কাছে ভাল লাগে না। মানুষের সাথে কথা বলা গল্প করা আড্ডা দেওয়া এসব তার একে বারে ভাললাগে না। জয়, অনেক বড় হয়ে গেছে তবু আগের মত রয়ে গেল এখনো নিজেকে বারে বারে প্রশ্ন করে যাচ্ছে কে আমি? আমার পরিচয় কি।
হঠাৎ চমকে উঠল জয়, হাই! আমি কে আবার আমি তো একজন মানুষ । আচ্ছা আমি কী পাগল হয়ে যাচ্ছি? কেন ঐ ছবিটা বারে বারে ভেসে আসে। কে সে? কেন সে আমায় ভাবায়? কেন ভাবি তাকে? আমি তো কখনো তাকে দেখি নাই। সে কী মানুষে না জ্বিন? কেন সে আমায় এত কষ্ট দিচ্ছে? তার সাথে আমার কি শত্রুতা ছিল? না বন্ধুত্ব? না তাকে কেন বন্ধু ভাবব? চেনা নাই জানা নাই কোথাকার মেয়ে একটা। ক্লাসে গিয়েও একি অবস্থা। কারো সাথে কোন কথা বলে না। পিছনের চেয়ারে গিয়ে বসে থাকে।
তামান্নাঃ তার দিকে অনেক ক্ষণ ধরে তাকিয়ে আছে। জয়, আনমনে কার সাথে যেন কথা বলতেছে। তামান্না, কাছে আসার সাথে সাথে জয়, চমকে উঠল। তামান্না, বুঝতে পারল ছেলেটার কোন সমস্যা হচ্ছে। তামান্না, জয়কে বলল, আচ্ছা তোমার কী মন খারাপ?
জয়ঃ না ।
তামান্নাঃ তবে পিছনে বসে আছ কেন? আর ওরা তো তোমার বন্ধু ওদের সাথে কাথা বললে মন ভাল থাকবে।
জয়ঃ হ্যাঁ জানি ওরা আমার বন্ধু আর আপনি আমার বান্ধবী।
তামান্নাঃ আচ্ছা তোমার বাসায় কে কে আছে?
জয়ঃ আমার বাসা চট্টগ্রামে আমার বাবা মা সবাই বাংলাদেশে থাকে কিন্তুু- (জয় চুপ হয়ে গেল।)
তামান্নাঃ তবে কী! তুমি কি একা এই শহরে থাক?
জয়ঃ হ্যাঁ বাবা মা চাই আমি লেখা পড়া করে মানুষ হই।
তামান্নাঃ তাঁরা তো তোমার ভালর জন্য এইখানে পাঠিয়েছে। আর তুমি কি চাও?
জয়ঃ হেসে উঠে বলল, আমার ইচ্ছা হয় এদিক ওদিক ঘুরতে লেখা পড়া একে বারে ভাললাগে না। আর আপনার কী ইচ্ছা?
তামান্নাঃ আমার কী ইচ্ছা হয় আমার জানা নাই। জয়, তার দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার জানা না থাকলেও আমার জানা আছে।
তামান্নাঃ বলো তো দেখি কি?
জয়ঃ না আমি কিছু-ই জানি না।
তামান্নাঃ জয়! কিছু গোপন করবে না। আমি কিন্ত তোমাকে অনেক ক্ষণ ধরে দেখে বুঝতে পারলাম তোমার মাঝে-
জয়ঃ বাঁধ দেন এসব ।
তামান্নাঃ ঠিক আছে যদি কোন সমস্যা হয় আমাকে জানিও।
জয়ঃ ঠিক আছে। একটি উপকার করতে পারবেন?
তামান্নাঃ বল কী করতে হবে?
জয়ঃ আসলে না হোস্টেলে থাকতে বেশ কষ্ট হয়। চারি দিকে না, ছেলে গুলো পড়া লেখা নিয়ে ব্যস্ত। আর আমার তো পড়া লেখা মুটেও ভাল লাগে না।
তামান্নাঃ তুমি এই শহরে কেন এসেছ? এইখানে তো তোমার বাবা মা পাঠিয়েছে তোমাকে ভাল ভাবে লেখা পড়া করার জন্য।
জয়ঃ উত্তরটা এইখানে দেওয়া যাবে না অন্য কোথাও গিয়ে দিব।
তামান্নাঃ ঠিক আছে আমার বাসার ঠিকানাটা রাখ।
তামান্নাঃ কী হল চুপ করে আছো কেন? ঠিকানাটা রাখ।
জয়ঃ আমার জানা আছে।
তামান্নাঃ কী আশ্চর্যরে বাবা! এ কেমন লোক?
তামান্না ঃ বাসাই টিভি দেখতেছে হঠাৎ দরজার বেল বেজে উঠল।
তামান্নাঃ উঠে এসে দরজা খুলে দিয়ে। জয়কে দেখে অবাক হয়ে রইল।
জয়ঃ অবাক হওয়ার কিছুই নাই আপানকে ভাবতেছি তো, তাই চলে আসলাম। আর বাসায় তো কেউ নাই।
তামান্নাঃ মানে! তুমি কী বলতে চাও?
জয়ঃ ভয়ের কারণ নাই। ভাবলাম আপনার এত বড় বাসা খালি পড়ে আছে। একটা রুম তো আমাকে দিলে হয়ে যাচ্ছে। আর আামি কিন্তু মোটেও বাজে ছেলে না। আচ্ছা তোমার কী একা থাকতে ভয় হয় না?
তামান্নাঃ এই! আবার ভয় কীসের?
জয়ঃ তোমরা হয় তো বিশ্বাস করো না। জ্বিন ভুত বলতে তো কিছু একটা আছে ওরা কিন্তু মানুষকে একা পেলে ক্ষতি করে। জয়ের কথা শোনে তামান্না সত্যি সত্যি ভয় পেয়ে গেল। তামান্না বলল, আচ্ছা তোমাকে একটি কথা জিঞ্জাস করব।
জয়ঃ হ্যাঁ বলো।
তামান্নাঃ আচ্ছা তুমি এত গুলো মেয়ে থাকতে আমার পিছনে লাগছ কেন? আমার সাথে লাইন মারার কী খুব ইচ্ছা?
জয়ঃ সরী মেম! আপনার ভুল হচ্ছে। কারো সাথে লাইন মারতে আসি নাই । আমি তাকে খোঁজতে এসেছি।
তামান্নাঃ কাকে?
জয়ঃ যে মেয়েটা আমার চোখের ঘুম কেঁড়ে নিল।
তামান্নাঃ কে সে আবার? আর আমার বাসায় থেকে আরেক জনকে লাইন মারবে মানে টা কী?
জয় সব কথা তামান্নাকে বুঝাল।
জয়ঃ এই শুন না। তোমর যদি ইচ্ছা হয় এক সাথে দুইটা লাইন চালিয়ে যাব।
তামান্নাঃ মনে?
জয়ঃ না মানে হতাস হওয়ার কিছুই নাই তোমার সাথেও লাইন মরাব। তামান্না হেসে উঠে বলল, আরে তা কখনো হয় না। আমার তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে আর তুমি-
জয়ঃ কী?
তামান্নাঃ না মানে অন্য বাসায় থাকলেও তো তাকে খোঁজে পেতে...।
জয়ঃ হ্যাঁ আমিও তাই ভাবি। তবে মনে হচ্ছে কী তোমার বাসায় থাকলে কাজটা সহজ হবে।
তামান্নাঃ আমি কিছুই বুঝলাম না?
জয়ঃ আসলে আমিও বুঝতেছি না। তবে আমার এমন মনে হচ্ছে যে তোমার বাসায় থাকলে তাকে খোঁজে পাওয়া সহজ হবে।
তামান্নাঃ আচ্ছা সত্যি করে বলো তো? তুমি কি উদ্দেশ্য নিয়ে এইখানে আসছ?
জয়ঃ অবশ্যই জানা থাকলে বলতাম। তবে এইটুকু জানি শুধু তাকে চাই।
জয় সকালে থেকে উঠে, তামান্নাকে বলল, আমি বেরুচ্ছি বাসায় ফিরতে দেরি হবে।
তামান্নাঃ এই তুমি কি ক্লাস করবে না?
জয়ঃ না আমি তো লেখাপড়া করতে আসি নাই। যাকে খোঁজতে এসেছি তাকে খোঁজতে বেরুচ্ছি।
সন্ধ্যায় বাসয় ফিরল জয়।
তামান্নাঃ জয়, তাকে খোঁজে পেয়েছ?
জয়ঃ না।
তামান্নঃ আমার মনে হয় এই জনমে আর খোঁজে পাবে না।
জয়ঃ আমারও তাই মনে হয়।
রাত অনেক হল। জয়, চেয়ারে বসে আছে। তামান্না এসে জয়কে বলল, জয় তুমি কী ঘুমাও নাই?
জয়ঃ চমকে উঠে বলল, তুমি কি করতেছ এত রাতে? আমি কী করে ঘুমাব? আমি তো তাকে দেখতে পাচ্ছি।
তামান্নাঃ কোথায়?
জয় আকাশের দিকে হাত প্রসারিত করে বলল, ঐ তো! সে তো আমায় ডাকতেছে।
তামান্নাঃ আসলে তুমি পাগল হয়েছ। এখন দেখলাম আমাকেও পাগল করে ছাড়বে। ঠিক আছে! কাল সকালে তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব।
জয়ঃ তামান্না? তোমার কী তাই মনে হয়?
তামান্নাঃ হ্যাঁ।
জয়ঃ কিছু ক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর জানলা দিয়ে তাকিয়ে তামান্নাকে বলল, এইবার কিছু দেখতে পাও কিনা দেখ।
তামান্নাঃ হ্যাঁ একটি গ্রহ আমাদের দিকে দ্রুত এগিয়ে আসতেছে। গ্রহটি কাছে আসার পর তামান্না দেখতে পেল একটি বাড়ি আর বাড়ির দেওয়ালে দুইটি ছোট ছেলে মেয়ের ছবি। তাদের মধ্যে একজন জয় আর অপর জনটা কে। তা চিনতে দেরি হল না তামান্নর।
ঐ মেয়েটি তো তামান্না নিজেই।
তামান্না বলল, জয় এসব কী?
জয়ঃ এসব আবার কি হবে? আমি তো পাগল।
তামান্নাঃ জয় ঐ মেয়েটিকে তুমি চিনতে পার নাই?
জয়ঃ না। আমার চেনা নাই জানা না্ই কোথায় সে আছে। যদি জানতাম তবে তার কাছে চলে যেতাম। আমি তো তাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না।
তামান্নাঃ যদি ঐ মেয়েটি অন্য কাউকে বিয়ে করে ঘর সাজায়। তবে তুমি কী করবে?
জয় হেসে উঠে বলল, নিয়তির দাবি মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোন কিছু কারার থাকবে না।
তামান্নাঃ জয়ের হাত ধরে তার রুমে নিয়ে গেল। তারপর ব্যাগ থেকে একটি ছবি বের করে নিয়ে জয়কে বলল, দেখ তো এই মেয়েটি কে?
জয়ঃ স্তব্ধ হয়ে গেল।
জয় বলল, এই ছবিটা এইখানে কী করে এল? এই মেয়েটিকে তো আমি বারে বারে দেখতে পাই।
তামান্নাঃ জয়কে বলল, শান্ত হও জয়। আমি এত দিন সকলের চোখে ফাঁকি দিয়েছিলাম। আর তুমি যাই দেখছিলে তাই সত্যি তবে আমি এত দিন তোমাকে চিনতে পারি নাই। আমি খেলার চলে পৃথিবীতে আসার পর আর তোমার কাছে ফিরে যেতে পারি নাই। আমি যাওয়ার রাস্তা ভুলে গিয়েছিলাম। তারপর নিরুপাই হয়ে, নিজের রূপ পাল্টিয়ে মানুষের সাথে বাস করতে লাগলাম। এক প্রর্যায়ে আমি সব অতীত ভুলে যায়। আর-
জয়ঃ আর বলতে হবে না। তুমি তো আর কারো অধিকারে চলে গেছ। এখন তুমি সুপার ষ্টার তোমার সাড়া পাওয়ার অধিকার আমিই হেরে ফেলেছি। তোমাকে বলার কিছু নাই, শুধু এইটুকু বলব, যেখানে থাক সুখে থাক।
পরদিন সকালে জয় বাসা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে এমন সময় তামান্না, এসে বলল, জয়, আর কয় একটা দিন থেকে গেলে হত না।
জয়ঃ না তামান্না, আমি তোমার এত বড় ক্ষতি করতে পারব না। যদি তোমার স্বামী জানতে পারে। তোমার অনেক বিপদ হবে।
তামান্নঃ জয় তুমি যদি আমার পাশে থাক এ পৃথিবীতে এমন কোন বাঁধা নাই। যে বাঁধা আমাকে আঘাত করতে পারবে।
জয়ঃ জানি না। এখন আমি চলি।
তামান্নাঃ তুমি কোথায় যাবে?
জয়ঃ বাংলাদেশে যে কোন স্থানে একটি থাকার জায়গা করে নিব।
বেশ কিছু দিন “জয়” সুন্দরবনের মধ্যে একা কাটিয়ে দিল। হঠাৎ মনে হল পরিবারের কথা। জয়, আর দেরি না করে সাতকানিয়া ফিরে আসল। তবে কাউকে দেখতে পেল না। তার পরিবারের কোন সদস্য,সেখানে নাই। জয়, বুঝতে পারল অনেকটা দিন পার হয়ে গেল। প্রায় তিনশ বছর কাঁটিয়ে গেল সুন্দরবনে। একটি দিনও কোন মানুষের দেখা পেল না এই তিনশ বছরে। “জয়” আনমনে হাঁটতে লাগল। আর তামান্নার স্মাৃতি তাকে ব্যতিত করতে লাগল।
শীতের রাত জয়, গায়ের চাদরটা জড়িয়ে বসে আছে এমন সময় আবার দেখতে পেল সেই ছবি সহ গ্রহটা তার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। গ্রহটা কাছে আসার সাথে সাথে দেখতে পেল তামান্নাকে।
তামান্নাঃ জয়কে বুকে ঝড়িয়ে ধরে বলল, জয়! আমরা চির জীবনরে সঙ্গী। আর কোন বাঁধায় আমাদেরকে আলাদা করতে পারবে না। যার সাথে আমার বিয়ে হয়েছিল সে কখনো আমাকে স্পর্শও করে নাই। সে তো অনেক আগে পৃথিবী থেকে বিদায় নিল। আর আমিও ফিরে যাওয়ার পথ খোঁজে পেয়ে ছিলাম। এতদিন ঐ গ্রহে অপেক্ষা করেছিলাম তোমার জন্য। তবে তুমি আর ফিরে যাও নি। এই তুমি কি আর কারো প্রেমে পড়েছ নাকি?
জয় হেসে উঠে বলল, না। প্রেমে পড়ার স্বাদ মনে আর জন্মায় নি। শুধু আগের প্রেমটা আমাকে ব্যতিত করে তুলত। তাই ফিরে যাই নি।
তামান্নাঃ ঠিক আছে এখন চল।
জয় কোথায়?
তামান্নাঃ আমাদের বাস স্থানে এই পৃথিবী গ্রহে থাকতে ভয় লাগে, এইখানে থাকলে দু জন দু জনাকে ভুলে আবার নতুন কষ্টের সূচনা করতে পারি। তারপর দু জন চলে গেল।
৮ই অগ্রহায়ণ ১৮২২ বাংলা,
২২শে নভেম্বর ২০১৫
মোমিনুল হক আরাফাত
জয় নামের ছেলেটা সদা আনমনে থাকে এই জগত সংসার তার কাছে ভাল লাগে না। মানুষের সাথে কথা বলা গল্প করা আড্ডা দেওয়া এসব তার একে বারে ভাললাগে না। জয়, অনেক বড় হয়ে গেছে তবু আগের মত রয়ে গেল এখনো নিজেকে বারে বারে প্রশ্ন করে যাচ্ছে কে আমি? আমার পরিচয় কি।
হঠাৎ চমকে উঠল জয়, হাই! আমি কে আবার আমি তো একজন মানুষ । আচ্ছা আমি কী পাগল হয়ে যাচ্ছি? কেন ঐ ছবিটা বারে বারে ভেসে আসে। কে সে? কেন সে আমায় ভাবায়? কেন ভাবি তাকে? আমি তো কখনো তাকে দেখি নাই। সে কী মানুষে না জ্বিন? কেন সে আমায় এত কষ্ট দিচ্ছে? তার সাথে আমার কি শত্রুতা ছিল? না বন্ধুত্ব? না তাকে কেন বন্ধু ভাবব? চেনা নাই জানা নাই কোথাকার মেয়ে একটা। ক্লাসে গিয়েও একি অবস্থা। কারো সাথে কোন কথা বলে না। পিছনের চেয়ারে গিয়ে বসে থাকে।
তামান্নাঃ তার দিকে অনেক ক্ষণ ধরে তাকিয়ে আছে। জয়, আনমনে কার সাথে যেন কথা বলতেছে। তামান্না, কাছে আসার সাথে সাথে জয়, চমকে উঠল। তামান্না, বুঝতে পারল ছেলেটার কোন সমস্যা হচ্ছে। তামান্না, জয়কে বলল, আচ্ছা তোমার কী মন খারাপ?
জয়ঃ না ।
তামান্নাঃ তবে পিছনে বসে আছ কেন? আর ওরা তো তোমার বন্ধু ওদের সাথে কাথা বললে মন ভাল থাকবে।
জয়ঃ হ্যাঁ জানি ওরা আমার বন্ধু আর আপনি আমার বান্ধবী।
তামান্নাঃ আচ্ছা তোমার বাসায় কে কে আছে?
জয়ঃ আমার বাসা চট্টগ্রামে আমার বাবা মা সবাই বাংলাদেশে থাকে কিন্তুু- (জয় চুপ হয়ে গেল।)
তামান্নাঃ তবে কী! তুমি কি একা এই শহরে থাক?
জয়ঃ হ্যাঁ বাবা মা চাই আমি লেখা পড়া করে মানুষ হই।
তামান্নাঃ তাঁরা তো তোমার ভালর জন্য এইখানে পাঠিয়েছে। আর তুমি কি চাও?
জয়ঃ হেসে উঠে বলল, আমার ইচ্ছা হয় এদিক ওদিক ঘুরতে লেখা পড়া একে বারে ভাললাগে না। আর আপনার কী ইচ্ছা?
তামান্নাঃ আমার কী ইচ্ছা হয় আমার জানা নাই। জয়, তার দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার জানা না থাকলেও আমার জানা আছে।
তামান্নাঃ বলো তো দেখি কি?
জয়ঃ না আমি কিছু-ই জানি না।
তামান্নাঃ জয়! কিছু গোপন করবে না। আমি কিন্ত তোমাকে অনেক ক্ষণ ধরে দেখে বুঝতে পারলাম তোমার মাঝে-
জয়ঃ বাঁধ দেন এসব ।
তামান্নাঃ ঠিক আছে যদি কোন সমস্যা হয় আমাকে জানিও।
জয়ঃ ঠিক আছে। একটি উপকার করতে পারবেন?
তামান্নাঃ বল কী করতে হবে?
জয়ঃ আসলে না হোস্টেলে থাকতে বেশ কষ্ট হয়। চারি দিকে না, ছেলে গুলো পড়া লেখা নিয়ে ব্যস্ত। আর আমার তো পড়া লেখা মুটেও ভাল লাগে না।
তামান্নাঃ তুমি এই শহরে কেন এসেছ? এইখানে তো তোমার বাবা মা পাঠিয়েছে তোমাকে ভাল ভাবে লেখা পড়া করার জন্য।
জয়ঃ উত্তরটা এইখানে দেওয়া যাবে না অন্য কোথাও গিয়ে দিব।
তামান্নাঃ ঠিক আছে আমার বাসার ঠিকানাটা রাখ।
তামান্নাঃ কী হল চুপ করে আছো কেন? ঠিকানাটা রাখ।
জয়ঃ আমার জানা আছে।
তামান্নাঃ কী আশ্চর্যরে বাবা! এ কেমন লোক?
তামান্না ঃ বাসাই টিভি দেখতেছে হঠাৎ দরজার বেল বেজে উঠল।
তামান্নাঃ উঠে এসে দরজা খুলে দিয়ে। জয়কে দেখে অবাক হয়ে রইল।
জয়ঃ অবাক হওয়ার কিছুই নাই আপানকে ভাবতেছি তো, তাই চলে আসলাম। আর বাসায় তো কেউ নাই।
তামান্নাঃ মানে! তুমি কী বলতে চাও?
জয়ঃ ভয়ের কারণ নাই। ভাবলাম আপনার এত বড় বাসা খালি পড়ে আছে। একটা রুম তো আমাকে দিলে হয়ে যাচ্ছে। আর আামি কিন্তু মোটেও বাজে ছেলে না। আচ্ছা তোমার কী একা থাকতে ভয় হয় না?
তামান্নাঃ এই! আবার ভয় কীসের?
জয়ঃ তোমরা হয় তো বিশ্বাস করো না। জ্বিন ভুত বলতে তো কিছু একটা আছে ওরা কিন্তু মানুষকে একা পেলে ক্ষতি করে। জয়ের কথা শোনে তামান্না সত্যি সত্যি ভয় পেয়ে গেল। তামান্না বলল, আচ্ছা তোমাকে একটি কথা জিঞ্জাস করব।
জয়ঃ হ্যাঁ বলো।
তামান্নাঃ আচ্ছা তুমি এত গুলো মেয়ে থাকতে আমার পিছনে লাগছ কেন? আমার সাথে লাইন মারার কী খুব ইচ্ছা?
জয়ঃ সরী মেম! আপনার ভুল হচ্ছে। কারো সাথে লাইন মারতে আসি নাই । আমি তাকে খোঁজতে এসেছি।
তামান্নাঃ কাকে?
জয়ঃ যে মেয়েটা আমার চোখের ঘুম কেঁড়ে নিল।
তামান্নাঃ কে সে আবার? আর আমার বাসায় থেকে আরেক জনকে লাইন মারবে মানে টা কী?
জয় সব কথা তামান্নাকে বুঝাল।
জয়ঃ এই শুন না। তোমর যদি ইচ্ছা হয় এক সাথে দুইটা লাইন চালিয়ে যাব।
তামান্নাঃ মনে?
জয়ঃ না মানে হতাস হওয়ার কিছুই নাই তোমার সাথেও লাইন মরাব। তামান্না হেসে উঠে বলল, আরে তা কখনো হয় না। আমার তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে আর তুমি-
জয়ঃ কী?
তামান্নাঃ না মানে অন্য বাসায় থাকলেও তো তাকে খোঁজে পেতে...।
জয়ঃ হ্যাঁ আমিও তাই ভাবি। তবে মনে হচ্ছে কী তোমার বাসায় থাকলে কাজটা সহজ হবে।
তামান্নাঃ আমি কিছুই বুঝলাম না?
জয়ঃ আসলে আমিও বুঝতেছি না। তবে আমার এমন মনে হচ্ছে যে তোমার বাসায় থাকলে তাকে খোঁজে পাওয়া সহজ হবে।
তামান্নাঃ আচ্ছা সত্যি করে বলো তো? তুমি কি উদ্দেশ্য নিয়ে এইখানে আসছ?
জয়ঃ অবশ্যই জানা থাকলে বলতাম। তবে এইটুকু জানি শুধু তাকে চাই।
জয় সকালে থেকে উঠে, তামান্নাকে বলল, আমি বেরুচ্ছি বাসায় ফিরতে দেরি হবে।
তামান্নাঃ এই তুমি কি ক্লাস করবে না?
জয়ঃ না আমি তো লেখাপড়া করতে আসি নাই। যাকে খোঁজতে এসেছি তাকে খোঁজতে বেরুচ্ছি।
সন্ধ্যায় বাসয় ফিরল জয়।
তামান্নাঃ জয়, তাকে খোঁজে পেয়েছ?
জয়ঃ না।
তামান্নঃ আমার মনে হয় এই জনমে আর খোঁজে পাবে না।
জয়ঃ আমারও তাই মনে হয়।
রাত অনেক হল। জয়, চেয়ারে বসে আছে। তামান্না এসে জয়কে বলল, জয় তুমি কী ঘুমাও নাই?
জয়ঃ চমকে উঠে বলল, তুমি কি করতেছ এত রাতে? আমি কী করে ঘুমাব? আমি তো তাকে দেখতে পাচ্ছি।
তামান্নাঃ কোথায়?
জয় আকাশের দিকে হাত প্রসারিত করে বলল, ঐ তো! সে তো আমায় ডাকতেছে।
তামান্নাঃ আসলে তুমি পাগল হয়েছ। এখন দেখলাম আমাকেও পাগল করে ছাড়বে। ঠিক আছে! কাল সকালে তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব।
জয়ঃ তামান্না? তোমার কী তাই মনে হয়?
তামান্নাঃ হ্যাঁ।
জয়ঃ কিছু ক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর জানলা দিয়ে তাকিয়ে তামান্নাকে বলল, এইবার কিছু দেখতে পাও কিনা দেখ।
তামান্নাঃ হ্যাঁ একটি গ্রহ আমাদের দিকে দ্রুত এগিয়ে আসতেছে। গ্রহটি কাছে আসার পর তামান্না দেখতে পেল একটি বাড়ি আর বাড়ির দেওয়ালে দুইটি ছোট ছেলে মেয়ের ছবি। তাদের মধ্যে একজন জয় আর অপর জনটা কে। তা চিনতে দেরি হল না তামান্নর।
ঐ মেয়েটি তো তামান্না নিজেই।
তামান্না বলল, জয় এসব কী?
জয়ঃ এসব আবার কি হবে? আমি তো পাগল।
তামান্নাঃ জয় ঐ মেয়েটিকে তুমি চিনতে পার নাই?
জয়ঃ না। আমার চেনা নাই জানা না্ই কোথায় সে আছে। যদি জানতাম তবে তার কাছে চলে যেতাম। আমি তো তাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না।
তামান্নাঃ যদি ঐ মেয়েটি অন্য কাউকে বিয়ে করে ঘর সাজায়। তবে তুমি কী করবে?
জয় হেসে উঠে বলল, নিয়তির দাবি মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোন কিছু কারার থাকবে না।
তামান্নাঃ জয়ের হাত ধরে তার রুমে নিয়ে গেল। তারপর ব্যাগ থেকে একটি ছবি বের করে নিয়ে জয়কে বলল, দেখ তো এই মেয়েটি কে?
জয়ঃ স্তব্ধ হয়ে গেল।
জয় বলল, এই ছবিটা এইখানে কী করে এল? এই মেয়েটিকে তো আমি বারে বারে দেখতে পাই।
তামান্নাঃ জয়কে বলল, শান্ত হও জয়। আমি এত দিন সকলের চোখে ফাঁকি দিয়েছিলাম। আর তুমি যাই দেখছিলে তাই সত্যি তবে আমি এত দিন তোমাকে চিনতে পারি নাই। আমি খেলার চলে পৃথিবীতে আসার পর আর তোমার কাছে ফিরে যেতে পারি নাই। আমি যাওয়ার রাস্তা ভুলে গিয়েছিলাম। তারপর নিরুপাই হয়ে, নিজের রূপ পাল্টিয়ে মানুষের সাথে বাস করতে লাগলাম। এক প্রর্যায়ে আমি সব অতীত ভুলে যায়। আর-
জয়ঃ আর বলতে হবে না। তুমি তো আর কারো অধিকারে চলে গেছ। এখন তুমি সুপার ষ্টার তোমার সাড়া পাওয়ার অধিকার আমিই হেরে ফেলেছি। তোমাকে বলার কিছু নাই, শুধু এইটুকু বলব, যেখানে থাক সুখে থাক।
পরদিন সকালে জয় বাসা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে এমন সময় তামান্না, এসে বলল, জয়, আর কয় একটা দিন থেকে গেলে হত না।
জয়ঃ না তামান্না, আমি তোমার এত বড় ক্ষতি করতে পারব না। যদি তোমার স্বামী জানতে পারে। তোমার অনেক বিপদ হবে।
তামান্নঃ জয় তুমি যদি আমার পাশে থাক এ পৃথিবীতে এমন কোন বাঁধা নাই। যে বাঁধা আমাকে আঘাত করতে পারবে।
জয়ঃ জানি না। এখন আমি চলি।
তামান্নাঃ তুমি কোথায় যাবে?
জয়ঃ বাংলাদেশে যে কোন স্থানে একটি থাকার জায়গা করে নিব।
বেশ কিছু দিন “জয়” সুন্দরবনের মধ্যে একা কাটিয়ে দিল। হঠাৎ মনে হল পরিবারের কথা। জয়, আর দেরি না করে সাতকানিয়া ফিরে আসল। তবে কাউকে দেখতে পেল না। তার পরিবারের কোন সদস্য,সেখানে নাই। জয়, বুঝতে পারল অনেকটা দিন পার হয়ে গেল। প্রায় তিনশ বছর কাঁটিয়ে গেল সুন্দরবনে। একটি দিনও কোন মানুষের দেখা পেল না এই তিনশ বছরে। “জয়” আনমনে হাঁটতে লাগল। আর তামান্নার স্মাৃতি তাকে ব্যতিত করতে লাগল।
শীতের রাত জয়, গায়ের চাদরটা জড়িয়ে বসে আছে এমন সময় আবার দেখতে পেল সেই ছবি সহ গ্রহটা তার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। গ্রহটা কাছে আসার সাথে সাথে দেখতে পেল তামান্নাকে।
তামান্নাঃ জয়কে বুকে ঝড়িয়ে ধরে বলল, জয়! আমরা চির জীবনরে সঙ্গী। আর কোন বাঁধায় আমাদেরকে আলাদা করতে পারবে না। যার সাথে আমার বিয়ে হয়েছিল সে কখনো আমাকে স্পর্শও করে নাই। সে তো অনেক আগে পৃথিবী থেকে বিদায় নিল। আর আমিও ফিরে যাওয়ার পথ খোঁজে পেয়ে ছিলাম। এতদিন ঐ গ্রহে অপেক্ষা করেছিলাম তোমার জন্য। তবে তুমি আর ফিরে যাও নি। এই তুমি কি আর কারো প্রেমে পড়েছ নাকি?
জয় হেসে উঠে বলল, না। প্রেমে পড়ার স্বাদ মনে আর জন্মায় নি। শুধু আগের প্রেমটা আমাকে ব্যতিত করে তুলত। তাই ফিরে যাই নি।
তামান্নাঃ ঠিক আছে এখন চল।
জয় কোথায়?
তামান্নাঃ আমাদের বাস স্থানে এই পৃথিবী গ্রহে থাকতে ভয় লাগে, এইখানে থাকলে দু জন দু জনাকে ভুলে আবার নতুন কষ্টের সূচনা করতে পারি। তারপর দু জন চলে গেল।
৮ই অগ্রহায়ণ ১৮২২ বাংলা,
২২শে নভেম্বর ২০১৫
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।