www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

পরীর দেশের রাজ কন্যা

পরীর দেশের রাজ কন্যা
মোমিনুল হক আরাফাত।

জয় একদিন হাটঁতে হাটঁতে এমন এক জায়গায় পৌঁছে গেল। সেখানে কোন মানুষের চিহ্ন নাই। নীরব নিস্তব্ধ ঘন ছায়া। আর ঝিরি ঝিরি হাওয়া। পাশে দেখা গেল বিশাল একটি দিঘী। জয় ঐ দিঘী থেকে জল পাণের জন্য মন স্থির করল। অতঃপর দিঘীতে নেমে ইচ্ছা মত জল প্রাণ করে হৃদয়টা শীতল করে তুলল।
দিঘী থেকে উঠে আসার সময় তার নয়ন গিয়ে পড়ল। দিঘীর অগ্নি কোণে। জয়, দেখতে পেল। এক রূপসী রাজ কন্যা ঘাঠে বসে স্নান করতেছে। তাকে দেখে জয়, বিস্মিত হয়ে গেল। তার মন চায়ল মেয়েটির কাছে যেতে। অতঃপর জয় মেয়েটির দিকে পা বাড়াল। অল্প হেঁটে-জয় থমকে দাঁড়াল। ভাবতে লাগল চেনা নাই জানা নাই এমন একটি মেয়ের কাছে যাওয়া-কথা বলা কতটা ভদ্রতা দেখায়? জয় আর সামনে না এগিয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইল। দেখতে না দেখতে হঠাৎ মেয়েটি বিলীন হয়ে গেল।
জয় এদিক ওদিক তাকাতে লাগল। তবে রূপসী রাজ কন্যা তুলির আর দেখা মিলল না। জয়ের মনটা একবারে ভেঙ্গে পড়ল। তার মাথাটাও ভার হয়ে গেলে। মনে খারাপ করে সোজা বাসায় চলে আসল।
জয়ঃ সারা দিন চট পট করতে-করতে সন্ধ্যা শেষ হয়ে পশ্চিমা আকাশ রক্ত বরণ ধারণ করল। সন্ধ্যা পেরিয়ে গেল। রাতের আগমন ঘটল। জয়ের কিছুতেই ঘুম আসতেছে না। তার দু চোখের সামনে বাসতে লাগল। শুধু রাজ কন্যা তুলির ছবি।
পরের দিন জয়, ঠিক ঐ নিরজন স্থানে গিয়ে উপস্থিত হল। অল্পক্ষণ অপেক্ষা করার পর দেখতে পেল। রূপসী তার দিকে অগ্রসর হতে লাগল।

দু জনের মধ্যে অনেক কথা বার্তা বলল, এইভাবে কেটে গেল অনেক দিন। প্রতিদিন রাজ কন্যা তুলির সাথে দেখা হয় কাথা হয়-
একদিন জয়, অসুস্থ হয়ে পড়ল, তাই প্রতিদিনের মত আজ কিন্তুু জয়, তুলির সাথে দেখা করতে পারল না। রূসপসীর মনে জয়কে দেখার স্বাদ রয়ে গেল। সে দিন গভীরে রাতে রাজ কন্যা তুলি জয়ের কক্ষে এসে উপস্থিত হল। জয় তাকে দেখে আনন্দিত হল। সেই সাথে চিন্তিতও হল; এই কারণে যে মেয়েটি এত রাতে কী ভাবে তার বাসায় আসল? কী করে সম্ভব? যাই হোক! রাজ কন্যাকে তো জয় ভালই বেসে যাচ্ছে।

জয়ের মনে হল এইভাবে মনের কথা গোপন করে রাখাটা মারাত্নক অন্যায় ব্যতিত আর কিছু নয়। জয় আজ রাজ কন্যা তুলিকে মনের ভাব প্রকাশ করল। তুলি, তার কথার কোন উত্তর দিল না। যাই হোক তুলিও কিন্ত জয়কে ভালবেসে যাচ্ছে।
আজ তুলি একটু চিন্তিত হল। মানুষ আর পরী দুইটি ভিন্ন জাত। তাদের স্বভাব চরিত্র বাস স্থান আলাদা। দুইটি পাড় এক হওয়া কখনো সম্ভব না। তবু একজন অপর জনকে প্রাণ পণে ভাল+বেসে যাচ্ছে। যত দিন রাত অতিক্রম হচ্ছে, দু জনার ভালবাসা তত গভীর হচ্ছে। এক দিন জয়, রাজ কন্যা তুলির কাছে তার পরিবার-পরিচয় জানতে চাইল। জবাবে রাজ কন্যা তুলি বলল, আমি যদি একেবারে নিন্ম শ্রেনীর কোন নারী হই। তবে কি তুমি আমায় ভুলে যাবে?
জয়ঃ আরে না। তা কেন হবে? আমি তো তোমাকে ভুলে যাওয়ার কথা বলি নাই। এমনে মুখ দিখে কথাটা চলে আসছে। বোঝেছে কী যে হয়? এই-যে মাঝে মাঝে যখন কোন কথা বলার থাকে না। তখন এই ধরণের আঝে- বাঝে কথা চলে আসে। তুমি রাগ করো না।
রাজ কন্যাঃ আরে রাগ অভিমানের কী আছে?

জয় জানত না এই রূপসী মানব কন্যা না তবে তার স্বভাব চরিত্র দেখে বেশ সন্দেহ জন্মে ছিল মনে। জয় বুঝতে পারল আসেলে তুলি মানব কন্যা নয়। তারপরও তুলিকে দূরে সরা যাবে না। কারণ তুলির ভালবাসা জয়ের রক্তের সাথে মিশে আছে। জয় নিয়মিত রাজ কন্যা তুলিকে বিরক্ত করে যাচ্ছে। তার আসল রূপ দেখার জন্যা। একদিন রাজ কন্যা তার আসল পরিচয় দিল। তুলি বলল, আমি মানব না। আমি পরীর দেশের রাজ কন্যা।
জয়ঃ আরো বেশি আকৃষ্ট হল। তুলির সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে মন চাই। জয় বলল, তুলি তুমি তো আমাদের সম্পর্কে অনেক কিছূ জান ও দেখ। অথচ আমরা তোমাদের সম্পর্কে কিছু-ই জানি না। যতটুকু জানি তাও গল্প শুনেছি মানুষের কাছে। এইবার বুঝি সময় হল বাস্থবে উপলব্ধি করার।

রাজ কন্যা তার কথার কোন জবাবও দিল না।
জয় বলল, আচ্ছা বলো তো দেখি তোমাদেরও কি বাবা-মা আছে আমাদের মত। এই কথা শুনে রাজ কন্যা হেসে উঠে বলল, আরে গাঁধা! বাবা মা ছাড়া কেউ কী জন্ম নে?
জয়, আবার বলল, আচ্ছা তোমাদেরও কি খাওয়া দাওয়া হয় মানুষের মত?
রাজ কন্যা বলল, হ্যাঁ সব হয় তোমাদের মত, ভিন্ন কিছু নয়। এই কথা শুনে জয়, একটু সাত্বনা বোধ করল। তার মনে ভয় ছিল চাল-চলন যদি ভিন্ন হয় তবে তাকে কী ভাবে বিয়ে করে গাড়ে চাপাবে? মানে প্রেম করাটা ব্যর্থ।

তার পর দীর্ঘ সময় অতিক্রম হল। একদিন রূপসী জয়কে তাদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করল। জয় রূপসীর হাত ধরে বিমানের মত উড়ে পরীর দেশে চলে আসল। জয়কে দেখার জন্য অনেক পরী আগমন করল।
এখন খাওয়া দাওয়ার পালা, জয়কে টেবিলে অনেক বিচিত্র রকমের খাওয়া দিল। জয়, এসব কিছুই মুখে দিল না। জয়, অবাক দৃষ্টিতে রাজ কন্যা তুলির দিকে তাকিয়ে রইল।
রূপসী জয়কে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে নিজ বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হল। রাজ কন্যা দু তিন পা এগিয়ে থমকে দাঁড়াল। তুলি কিছুক্ষণ জয়ের দিকে তাকিয়ে রইল। ঐ সময় তার নয়ন কোণে দু পোটা অশ্রু গড়িয়ে এল। তুলি কোন কিছু না বলে নিজ গন্তব্যের দিকে অগ্রসর হল।
জয়, এসবের মানে কিছুই বুঝতে পারল না। তুলি চোখে জল দেখ নিজেও অস্থির হয়ে পড়ল।

কিছু দিন রূপসী জয়ের সাথে দেখা করতে আসে নাই। জয় রাজ কন্যা তুলিকে দেখার জন্যা অস্থির হয়ে পড়ল। এক দিন মাঝ রাতে তুলি এসে উপস্থিত, জয় আনন্দে তাকে কাছে টেনে নিয়ে বলল, তুলি তুমি এতদিন কোথায় ছিলে? আমি তো তোমাকে না দেখে অর্ধ পাগল হয়ে গেলাম। আমি বুঝেছি, আসলে তুমি আমাকে পরীক্ষা করতেছ আমি তোমাকে কত ভালবাসি তাই না? এখন তো তুমি বুঝতে পেরেছ আমি তোমাকে কতটা ভাল+বাসি। রূপসী চুপ করে রইল।
জয়ঃ কী হল? যে তুমি চুপ করে আছো। কিছু কী বলার নাই? রূপসী একটি দীর্ঘশ্বাস দিয়ে বলল, যা বলার আছে তা না বললে ভাল, তাই চুপ করে আছি।
জয় বলল, তোমার যা ইচ্ছা তাই বলো আমি মন খারাপ করব না। রাজ কন্যা বলার সাহস পেল।
তুলি বলল, হয়তো তুমি আমাকে ক্ষমা করতে নাও পার। আমি তোমার সাথে যা করেছিলাম তা তো ছলনাই পরিণত হল। তোমাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে কখনো সম্ভব না। কারণ দু জনের মাঝে বড় একটি দেওয়াল রয়েছে। আমারও ইচ্ছা ছিল তোমাকে নিয়ে ঘর সাজার তবে নিয়তি তো, তা করতে দিল না। এই কাথা বলে তুলি বিলীন হয়ে গেল।
জয় এখন আর অর্ধ পাগলও নাই মানবও নাই। মানব সন্তান হয়ে পরীর মেয়েকে ভালবেসে। মানব থেকে এখন দানবে পরিণত হয়েছে। এখন সে বোবা হয়ে গেছ। কারো সাথে কোন কথা বলে না। পৃথিবী জগৎ থেকে বহু দূরে জয় এখন।
সমাপ্ত
গল্পটা লিখে ছিলাম
১৪ই চৈত্র ১৪১৬ বাংলা,
২৮-৩-২০১০ ইংরেজি
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৯৩৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০১/০১/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • দ্বীপদেশ ১০/০১/২০১৭
    ভালো লাগলো
  • সোলাইমান ০৯/০১/২০১৭
    তির্যক ভাবনায় বাস্তব ফুটে উঠেছে গল্পটি।
  • খুব সুন্দর হয়েছে।
  • খালেদ আহমদ ০৪/০১/২০১৭
    খুব ভালো হয়েছে
  • ফয়জুল মহী ০৩/০১/২০১৭
    দৃষ্টিগোচর পূর্ন লিখনী
  • মোনালিসা ০৩/০১/২০১৭
    সুন্দর
 
Quantcast