এক রাশ শূন্যতা
এক রাশ শূণ্যতা
মোমিনুল হক আরাফাত
জয় মধ্য বিত্ত পরিবারের সন্তান। তবে তার মনমানসিকতা খুব এগিয়ে। মানুষের জীবনে কখনো সখনো হিসাব মিলে না। হয় তো তারও তাই হয়েছিল। জয় ছোট বেলায় খুব দুষ্ট স্বভাবের ছিল। প্রতিদিন দু একটা ঝগড়া করতে না পারলে। দু চোখে ঘুম আসে না তার ।
তখন রাত এগারটা জয় সারা দিন না-না ব্যস্ততায় দিন কাটাল। জয় বিছনাই ছটপট করতেছে তার দু চোখে ঘুম আসতেছে না। হয় তো দু একটা কাজ এখনো বাকি রয়ে গেল। জয় বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। অল্প হেঁটে দেখা পেল নারিকেলের বাগান। জয়ের, গাছে উঠা, নারিকেল ডাব চুরি করে খাওয়া এইটা নতুন কোন অধ্যায় না। আজও তাই হল। রাতের ঘন অন্ধকারের মাঝেও একটি ডাবও রেহাই পেল না। জয়ের সব কিছু ভিন্ন ছিল। তার ডাব খাওয়ার নিয়মটাও ভিন্ন ছিল। একটি ডাবও ছিড়ে মাটিতে পেলল না। শুধু কাঁট বিড়ালির মত ছিদ্র করে ডাবের পানি গুলো খেয়ে মনটা শান্ত করল। এখন গাছ থেকে নেমে বাড়িতে ফিরে এসে চোখ পুরে ঘুমাল, সকালে উঠে রীতি মত দু তিন জনকে নাক মুখ পাটিয়ে দিল। তার কাজ শুধু মারা-মারি করা না। মানুষের উপকার করাও তার স্বভাব। তবে কেউ বাঁকা পথে চললে তার সহ্য হয় না। তাই ঝগড়াই জড়িয়ে যেত।
জয় বিলের মাঝ খান দিয়ে হেঁটে সোজা চলে আসল ইছামতি নদীর পাড়ে হিন্দু পাড়ায়। কোথায় পাখিরা বাচ্ছা দে সে কথা যদি পাখিরাও না জানে তবে জয়ের জানা থাকত। জয় মাটিতে দাঁড়িয়ে থেকে পাখির বাসাটা দেখতে লাগল। তবে সমস্যা হচ্ছে। পাখির বাসাটা ছিল ছোট্ট একটি ডালে; যদি ডাল ভেঙ্গে পড়ে যায়। বাঁচার রাস্তা খোঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। কারণ যেখানে সে পড়ব সেখানে তো বেত ঝোঁপ।
জয়, হাত দিয়ে মাথা চুলকাতে লাগল। আর ভাবতে লাগল কী করবে? এখন কী পাখির বাচ্ছা দের না নিয়ে ফিরে যাবে। তার তো পাখিদের প্রতি অনেক দয়া-মায়া। পাখির বাচ্ছাদেরকে বাসায় নিয়ে গিয়ে, লালন পালন করতে না পারলে তার ভাল লাগে না।
জয় মাথা চুল কাতে চুল কাতে বিলের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেল তার বন্ধু আদি আসতেছে। তাকে দেখে জয় একটু সস্তি ভোদ করল।
আদি এসে উপস্থিত।
জয় আদিকে দেখাল পাখির বাসাটা। আদি বলল, তুই তো বানরের চেয়ে কম না। তুই উপরে উঠে গিয়ে ভাল করে ডালটা নড়া-ছড়া করতে থাক দেখবি পাখির বাচ্চারা সব নিচে পড়ে যাবে। আর আমি নিচ থেকে ঝুড়ি করে বাসায় নিয়ে যাব। জয় রাজি।
জয় গাছের উপরে উঠে ডালটা ভাল করে নড়া ছড়া করতেছে। একটি বারও ভাবল না। পাখিরা সব কোথায় পড়তেছে? এই গুলো কী আদি ঝুড়ি ভর্তি করতেছে? না’কি নদীর স্রোতে ভেসে যাচ্ছে? অনেক ক্ষণ নাড়া-ছড়া করার পর আদিকে বলল, কয়টা হয়েছে? আদি বলল, একটিও হয় নি সব তো নদীর স্রোতে ভেসে নিয়ে গেল।
জয় চমকে গিয়ে বলল, এত ক্ষণ এত পরিশ্রম করলাম সব ব্যর্থ হয়ে গেছে? তার মাথা আর ঠিক থাকল না। একেবারে রেগেগিয়ে এমন জোরে ডালটা নড়া দিল একে বারে ডালটা ভেঙ্গে বেত কাঁটার উপর গিয়ে পড়ল।
অনেক কষ্ট বিষ্ট করে জয় বেত ঝার থেকে বেরিয়ে এল। তাকে দেখে আদি ভয় পেয়ে গেল ভূত ভেবে। তার চেহেরাটা বেতের কাটাই কেটে গেল।
জয় আর আদি মন খারাপ করে ইছামতি নদীর পাড়ে বসে আছে। আদি বলল, তোর চেহেরার যে অবস্থা হয়ে গেল, আজ তো বাসায় ফিরতে পারবি না।
জয় বলল, তাই তো-তবে এখন কী হবে? আমার তো পেটে ভিষণ খিধা লাগছে। আদি বলল, চল হোটেলে গিয়ে খেয়ে আসি। জয় বলল, তোর পকেটে টাকা আছে? আদি বলল, না। জয় বলল, একটু অপেক্ষা কর আমি ব্যবস্থা করতেছি।
জয় অল্প হেঁটে দেখতে পেল একটি মুরগী, জয় আর দেরি না করে, মুরগীটা ধরে বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে ভাল করে খেয়ে নিল। রাতে নদীর পাড়ে ঘুমিয়ে পড়ল। নদীর জলের কল কল ধ্বণীতে ঘুম ভালই হয়েছিল।
অল্পদিন পর শহরে চলে গেল এখন তার জীবনে পরিবর্তন গঠল। এখন সে অনেক বড় হয়েছে। জয় আগের মত নাই। পাখির বাসাইও হানা দে না। এখন বুঝে ভাল মন্দ। মানুষের সেবা করা তার স্বভাবে পরিণত হল। এক দিন জয় রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। তখন দেখতে পেল একটি যুবক হাইজাকের কবলে পড়ল। জয় নিজের জীবন বাঝি রেখে হাইজাকের হাত থেকে যুবকটাকে উদ্ধার করল। তার মনে ভয় বলতে কিছূই নাই বললে চলে।
সেদিন শুক্র বার। কলেজ বন্ধ ছিল। জয় পার্কে গিয়ে বসল। হাতে একটি সিগেরেটও ছিল। এমন সময় দেখতে পেল। একটি সতের আটার বছরের তরুণীকে কিছু বকাটে ছেলে বিরক্ত করতেছে। জয় প্রথমে গিয়ে তাদেরকে বুঝাতে চেষ্টা করতেছে। জয় বলল, এই মেয়েটা কারো না কারো বোন। আজ যদি অন্য কেউ তোমাদের বোনকে এইভাবে বিরক্ত করত তোমাদের কেমন লাগত? তারা জয়ের কথার কোন মূল্য না দিয়ে মেয়েটির সাথে বকাটগিরি করতে থাকল। জয়ও এত ভাল হয় নি যে সেখান থেকে ফিরিয়ে আসবে। তার বাম হাতে প্রচুর শক্তি ছিল।
জয় এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে পেল একটি লোহার বার। জয় লোহার বারটা ভেঙ্গে হাতে নিয়ে যখন তাদের সামনে দাঁড়াল ওরা সবাই পালিয়ে গেল। রক্ত খয়ের কোন প্রয়োজন হয় নি। তার জীবন সংক্ষেপে বর্ণনা করেতে চাইলেও অনেক সময়ের প্রয়োজন। তবে আমি চেষ্টা করতেছি সংক্ষেপে বর্নণা করার জন্য।
এখন জয় মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকতে চাই। স্বার্থ পরের এই পৃথিবীটা তার আর ভাল লাগে না। সে নিজের মাঝে প্রশ্ন খোঁজে বেড়ায়। মানুষকে ভালবাসা আর ভাললাগা কী অপরাধ? সে কী অপরাধ করেছিল? কেন তার স্মৃতি ভেসে এসে বারে বারে কাঁদায়? মানুষ কী ভাবে এত পাষাণ হতে পারে?
বাংলা অর্নাস শেষ করে চাকরিতে জয়েন হয়েছে জয়। সেখানে তার একি সাথে চাকরি রত ছিল শুভ। একদিন শুভ জয়কে তাদের বাড়িতে নিয়ে গেল। সেখানে তামান্নার সাথে তার পরিচয়। জীবনে প্রথম সেদিন বুঝতে পারল। মেয়ে বলতে যে পৃথিবীতে কিছু আছে। কেন এত মায়া হয় তার প্রতি? তাকে কী জয় ভালবেসে পেলছে?
জয়, তামান্নার কাছে গিয়ে জিঞ্জাস করল বসতে পারি? তামান্না, হাসি মুখে বলল, বসতে না দি কী করে? আপনি তো আমাদরে মেহামান। জয় বলল, আপনার পরিচয়টা জানতে পারি? তামন্না বলল, অবশ্যই পারবেন একটু অপেক্ষা করুণ এই বলে তামান্না কোথায় হারিয়ে গেল। জয় একা একা বসে বিরক্ত বোদ করতেছে। অল্পক্ষণ পর দেখতে পেল তামানা নাস্তা নিয়ে আসল। জয় এক দৃষ্টিতে তামান্নার দিকে তাকিয়ে রইল।
তামান্নার বুঝতে দেরি হল না। জয়ের কী হল। তামান্না বলল, ভাইয়া নাস্তা করে নিন। জয় বলল খিধা তো নাই।
তামান্না বলল, খিধা না থাকলেও খেতে হবে না হয়-
জয় বলল, না হয় কী করবে?
তামান্নাঃ কিছু করব না শুধু অভিমান করব।
জয়ঃ তাহলে তো খেতে হবে।
বন্ধুর বাড়ি থেকে বিদায়ের পালা। জয়ের মন খারাপ হয়ে গেল কিছুই ভাল লাগে না। ঠিক মত অফিসেও যাই না। জয় বাসার ছাদের উপরে বসে আকাশের তারা গোনতেছে আর মাঝে-মাঝে দুই একটা টান লাগায় সিগেরেটে। মন ভাল নাই-মনে হয় তামান্নাকে সরংং করতেছে। হঠাৎ করে মোবাইল বেঝে উঠল। জয় মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখল একটি অপরিচিত নান্বার। তাই রিসিভ করল না। কিছুক্ষণ পর মোবাইলে একটা মেসেজ আসল ( Miss You) জয় কিছুই বুঝতে পারল না মোবাইলে আজ কী হল? জয় কল ব্যাক দিয়ে শোনতে পেল একটি মেয়ের কণ্ঠ। বুঝতে আর দেরি হলো না মেয়েটি কে।
তামান্না জয়ের সাথে রাগ করল; কারণ জয় এতদিন একবারও তামান্নাকে কল করে নাই। জয় বলল, আসলে তার কাছে নাম্বার ছিল না তাই কল দিতে পারে নাই।
দীর্ঘ দিন প্রেম হওয়ার পর দু জনের মাঝে বিয়ে হয়েছিল। এক জন অপর জনকে খুব বেশি ভালবাসে। জয় ঘুম থেকে উঠে দেখতে পেল তামান্না নাস্তা রেড়ি করে টেবিলে বসে আসে। জয় বলল, তুমি নাস্তা কর নাই কেন?
তামান্নাঃ একটু মৃদু হেসে বলল, দু জন তো জীবন একি সাথে বেঁধে নিয়েছি তোমাকে ঘুমে রেখে কী করে আমি নাস্তা করে নি?
জয়ঃ ঠিক আছে তা হলে আমাকে ভোরে ঘুম থেকে ডেকে দিয়।
তামান্নাঃ না তাও পারব না। আসলে আমি সুখ খুঁজে বেড়ায়। বিয়ের আগে তোমার কথা ভাবতে আর তোমার সাথে দেখা করার অপেক্ষায় থাকতে ভাল লাগত। এখনো তোমার জন্য অপেক্ষা করতে ভাল লাগে। জয়ের অফিসের সময় হয়ে গেল।
তামান্না বলল, অফিসের সময় হয়ে গেছে। তাড়া তাড়ি নাস্তা করে অফিসে চলে যাও। জয় অফিসের উদ্দেশ্য রওনা হল। দরজার পাশে গিয়ে একবার পিছনে তাকিয়ে হাত দেখিয়ে তামান্নার কাছ থেকে বিদায় নিল। অফিস শেষে করে এদিক ওদিক না তাকিয়ে সোজা বাসায় চলে আসল।
জয় বলল, চল আজ মার্কেটে যাব। দু জন মার্কেটে গিয়ে শপিং করে ফিরে আসল। অফিসে থাকা ব্যতিত এক মুহূর্তের জন্য ও যদি তামান্না জয়কে দেখতে না পাই। তবে পাগল হয়ে যায়।
জয়, এখন আর সিগেটেও খায় না। কারণ তামান্না এই গুলো পছন্দ করে না।
জয় বলল, আজ আমাদের বিবাহ বাষিকি চল কোথাও বেড়াতে যায়। তামান্না বলল, না আমার যেতে ইচ্ছা নাই। একটু পরে তামান্না জয়কে ঝড়িয়ে ধরে বলল, এই! রাগ করছ না’কি? জয় বলল, রাগ কেন করব? তামান্না বলল, তোমার সাথে বাইরে ঘুরতে যায়নি তাই রাগ করো নাই? জয় হাসি মুখে বলল, না আমি তোমার সাথে রাগ করি না কখনো। তামান্না বলল, তুমি একটু অপেক্ষা করো আমি প্রস্তুত হয়ে আসি। আজ ঘুরতে যাব। তামান্না শাড়ি পরে আসল। বাসা থেকে নেমে ঘাড়িতে বসল। জয় নিজে ডাংবিং করল। গাড়ি থামার পর তামান্না চমকে উঠল। গাড়ি একেবারে তামান্নার বাসার সামনে গিয়ে থামল।
তামান্না জয়ের দিকে তাকিয়ে রইল।
জয় বলল, আজ আমাদের বিবাহ বাষিকি তাই ভাবলাম বাবা মাকে স্মরণ করব। যাই হোক! বাসায় পৌছে তামান্নার পরিবার তাদের দু জনকে অনেক আঁদর যত্ন করল। রাতে দু জন বাসায় ফিরতে চাইল। তামান্নার পরিবার বলল, এতদিন পর মেয়েকে কাছে পেয়েছি তাকে এইভাবে বিদায় দেওয়া তাঁদের ভাল লাগতেছে না। মেয়েকে দু এক দিন তাদের কাছে থাকতে বলল।
জয় হাসি মুখে বলল, ঠিক আছে। তামান্না চেহেরা গম্ভীর করে রইল । তামান্না জয়কে বলল, তোমাকে ছাড়া একা থাকতে আমার কষ্ট হবে। তুমিও থেকে যাও। জয় তামান্নার মাথার উপর হাত রেখে বলল, অনেক দিন পর বাবা-মায়ের সাথে দেখা হল তোমার। অনেক কথা বার্তা হবে তোমাদের মধ্যে। আমার থাকার কোন প্রয়োজন নাই। দুই এক দিন পর আমি এসে তোমাকে নিয়ে যাব। জয় বাসায় চলে আসল।
অফিস সেরে তামান্নাকে কল দিল। কিন্তু কেউ ফোন রিসিভ করতেছে না। জয় অস্তির হয়ে পড়ল। অবশেষে জয়, তামান্নার বাসায় পৌছে গেল। বাসায় গিয়ে তার সাথে কথা বলতে চাইল। কিন্তু তামান্না তার সাথে কোন কথা বলল না। তামান্না শুধু এইটুকু বলল, আমি জয় নামের কাউকে চিনি না। তোমার সাথে আমার যা হয়েছিল। তা শুধু অবেগ। অবেগ দিয়ে জীবন চলে না। তুমি ফিরে যাও। তারপর থেকে জয় জীবন থেকে অনেক দূরে সরে গেল। এখন মানুষ দেখলে ভয় পাই। মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে থাকে। কেন এমন হয়েছিল বা কেন এমন করে ছিল তামান্না। জয় এখনো বুঝে উঠতে পারে নি।
১৬ই আশ্বিন ১৪২২ বাংলা
১৫-১০-২০১৫ ইংরেজী
মোমিনুল হক আরাফাত
জয় মধ্য বিত্ত পরিবারের সন্তান। তবে তার মনমানসিকতা খুব এগিয়ে। মানুষের জীবনে কখনো সখনো হিসাব মিলে না। হয় তো তারও তাই হয়েছিল। জয় ছোট বেলায় খুব দুষ্ট স্বভাবের ছিল। প্রতিদিন দু একটা ঝগড়া করতে না পারলে। দু চোখে ঘুম আসে না তার ।
তখন রাত এগারটা জয় সারা দিন না-না ব্যস্ততায় দিন কাটাল। জয় বিছনাই ছটপট করতেছে তার দু চোখে ঘুম আসতেছে না। হয় তো দু একটা কাজ এখনো বাকি রয়ে গেল। জয় বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। অল্প হেঁটে দেখা পেল নারিকেলের বাগান। জয়ের, গাছে উঠা, নারিকেল ডাব চুরি করে খাওয়া এইটা নতুন কোন অধ্যায় না। আজও তাই হল। রাতের ঘন অন্ধকারের মাঝেও একটি ডাবও রেহাই পেল না। জয়ের সব কিছু ভিন্ন ছিল। তার ডাব খাওয়ার নিয়মটাও ভিন্ন ছিল। একটি ডাবও ছিড়ে মাটিতে পেলল না। শুধু কাঁট বিড়ালির মত ছিদ্র করে ডাবের পানি গুলো খেয়ে মনটা শান্ত করল। এখন গাছ থেকে নেমে বাড়িতে ফিরে এসে চোখ পুরে ঘুমাল, সকালে উঠে রীতি মত দু তিন জনকে নাক মুখ পাটিয়ে দিল। তার কাজ শুধু মারা-মারি করা না। মানুষের উপকার করাও তার স্বভাব। তবে কেউ বাঁকা পথে চললে তার সহ্য হয় না। তাই ঝগড়াই জড়িয়ে যেত।
জয় বিলের মাঝ খান দিয়ে হেঁটে সোজা চলে আসল ইছামতি নদীর পাড়ে হিন্দু পাড়ায়। কোথায় পাখিরা বাচ্ছা দে সে কথা যদি পাখিরাও না জানে তবে জয়ের জানা থাকত। জয় মাটিতে দাঁড়িয়ে থেকে পাখির বাসাটা দেখতে লাগল। তবে সমস্যা হচ্ছে। পাখির বাসাটা ছিল ছোট্ট একটি ডালে; যদি ডাল ভেঙ্গে পড়ে যায়। বাঁচার রাস্তা খোঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। কারণ যেখানে সে পড়ব সেখানে তো বেত ঝোঁপ।
জয়, হাত দিয়ে মাথা চুলকাতে লাগল। আর ভাবতে লাগল কী করবে? এখন কী পাখির বাচ্ছা দের না নিয়ে ফিরে যাবে। তার তো পাখিদের প্রতি অনেক দয়া-মায়া। পাখির বাচ্ছাদেরকে বাসায় নিয়ে গিয়ে, লালন পালন করতে না পারলে তার ভাল লাগে না।
জয় মাথা চুল কাতে চুল কাতে বিলের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেল তার বন্ধু আদি আসতেছে। তাকে দেখে জয় একটু সস্তি ভোদ করল।
আদি এসে উপস্থিত।
জয় আদিকে দেখাল পাখির বাসাটা। আদি বলল, তুই তো বানরের চেয়ে কম না। তুই উপরে উঠে গিয়ে ভাল করে ডালটা নড়া-ছড়া করতে থাক দেখবি পাখির বাচ্চারা সব নিচে পড়ে যাবে। আর আমি নিচ থেকে ঝুড়ি করে বাসায় নিয়ে যাব। জয় রাজি।
জয় গাছের উপরে উঠে ডালটা ভাল করে নড়া ছড়া করতেছে। একটি বারও ভাবল না। পাখিরা সব কোথায় পড়তেছে? এই গুলো কী আদি ঝুড়ি ভর্তি করতেছে? না’কি নদীর স্রোতে ভেসে যাচ্ছে? অনেক ক্ষণ নাড়া-ছড়া করার পর আদিকে বলল, কয়টা হয়েছে? আদি বলল, একটিও হয় নি সব তো নদীর স্রোতে ভেসে নিয়ে গেল।
জয় চমকে গিয়ে বলল, এত ক্ষণ এত পরিশ্রম করলাম সব ব্যর্থ হয়ে গেছে? তার মাথা আর ঠিক থাকল না। একেবারে রেগেগিয়ে এমন জোরে ডালটা নড়া দিল একে বারে ডালটা ভেঙ্গে বেত কাঁটার উপর গিয়ে পড়ল।
অনেক কষ্ট বিষ্ট করে জয় বেত ঝার থেকে বেরিয়ে এল। তাকে দেখে আদি ভয় পেয়ে গেল ভূত ভেবে। তার চেহেরাটা বেতের কাটাই কেটে গেল।
জয় আর আদি মন খারাপ করে ইছামতি নদীর পাড়ে বসে আছে। আদি বলল, তোর চেহেরার যে অবস্থা হয়ে গেল, আজ তো বাসায় ফিরতে পারবি না।
জয় বলল, তাই তো-তবে এখন কী হবে? আমার তো পেটে ভিষণ খিধা লাগছে। আদি বলল, চল হোটেলে গিয়ে খেয়ে আসি। জয় বলল, তোর পকেটে টাকা আছে? আদি বলল, না। জয় বলল, একটু অপেক্ষা কর আমি ব্যবস্থা করতেছি।
জয় অল্প হেঁটে দেখতে পেল একটি মুরগী, জয় আর দেরি না করে, মুরগীটা ধরে বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে ভাল করে খেয়ে নিল। রাতে নদীর পাড়ে ঘুমিয়ে পড়ল। নদীর জলের কল কল ধ্বণীতে ঘুম ভালই হয়েছিল।
অল্পদিন পর শহরে চলে গেল এখন তার জীবনে পরিবর্তন গঠল। এখন সে অনেক বড় হয়েছে। জয় আগের মত নাই। পাখির বাসাইও হানা দে না। এখন বুঝে ভাল মন্দ। মানুষের সেবা করা তার স্বভাবে পরিণত হল। এক দিন জয় রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। তখন দেখতে পেল একটি যুবক হাইজাকের কবলে পড়ল। জয় নিজের জীবন বাঝি রেখে হাইজাকের হাত থেকে যুবকটাকে উদ্ধার করল। তার মনে ভয় বলতে কিছূই নাই বললে চলে।
সেদিন শুক্র বার। কলেজ বন্ধ ছিল। জয় পার্কে গিয়ে বসল। হাতে একটি সিগেরেটও ছিল। এমন সময় দেখতে পেল। একটি সতের আটার বছরের তরুণীকে কিছু বকাটে ছেলে বিরক্ত করতেছে। জয় প্রথমে গিয়ে তাদেরকে বুঝাতে চেষ্টা করতেছে। জয় বলল, এই মেয়েটা কারো না কারো বোন। আজ যদি অন্য কেউ তোমাদের বোনকে এইভাবে বিরক্ত করত তোমাদের কেমন লাগত? তারা জয়ের কথার কোন মূল্য না দিয়ে মেয়েটির সাথে বকাটগিরি করতে থাকল। জয়ও এত ভাল হয় নি যে সেখান থেকে ফিরিয়ে আসবে। তার বাম হাতে প্রচুর শক্তি ছিল।
জয় এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে পেল একটি লোহার বার। জয় লোহার বারটা ভেঙ্গে হাতে নিয়ে যখন তাদের সামনে দাঁড়াল ওরা সবাই পালিয়ে গেল। রক্ত খয়ের কোন প্রয়োজন হয় নি। তার জীবন সংক্ষেপে বর্ণনা করেতে চাইলেও অনেক সময়ের প্রয়োজন। তবে আমি চেষ্টা করতেছি সংক্ষেপে বর্নণা করার জন্য।
এখন জয় মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকতে চাই। স্বার্থ পরের এই পৃথিবীটা তার আর ভাল লাগে না। সে নিজের মাঝে প্রশ্ন খোঁজে বেড়ায়। মানুষকে ভালবাসা আর ভাললাগা কী অপরাধ? সে কী অপরাধ করেছিল? কেন তার স্মৃতি ভেসে এসে বারে বারে কাঁদায়? মানুষ কী ভাবে এত পাষাণ হতে পারে?
বাংলা অর্নাস শেষ করে চাকরিতে জয়েন হয়েছে জয়। সেখানে তার একি সাথে চাকরি রত ছিল শুভ। একদিন শুভ জয়কে তাদের বাড়িতে নিয়ে গেল। সেখানে তামান্নার সাথে তার পরিচয়। জীবনে প্রথম সেদিন বুঝতে পারল। মেয়ে বলতে যে পৃথিবীতে কিছু আছে। কেন এত মায়া হয় তার প্রতি? তাকে কী জয় ভালবেসে পেলছে?
জয়, তামান্নার কাছে গিয়ে জিঞ্জাস করল বসতে পারি? তামান্না, হাসি মুখে বলল, বসতে না দি কী করে? আপনি তো আমাদরে মেহামান। জয় বলল, আপনার পরিচয়টা জানতে পারি? তামন্না বলল, অবশ্যই পারবেন একটু অপেক্ষা করুণ এই বলে তামান্না কোথায় হারিয়ে গেল। জয় একা একা বসে বিরক্ত বোদ করতেছে। অল্পক্ষণ পর দেখতে পেল তামানা নাস্তা নিয়ে আসল। জয় এক দৃষ্টিতে তামান্নার দিকে তাকিয়ে রইল।
তামান্নার বুঝতে দেরি হল না। জয়ের কী হল। তামান্না বলল, ভাইয়া নাস্তা করে নিন। জয় বলল খিধা তো নাই।
তামান্না বলল, খিধা না থাকলেও খেতে হবে না হয়-
জয় বলল, না হয় কী করবে?
তামান্নাঃ কিছু করব না শুধু অভিমান করব।
জয়ঃ তাহলে তো খেতে হবে।
বন্ধুর বাড়ি থেকে বিদায়ের পালা। জয়ের মন খারাপ হয়ে গেল কিছুই ভাল লাগে না। ঠিক মত অফিসেও যাই না। জয় বাসার ছাদের উপরে বসে আকাশের তারা গোনতেছে আর মাঝে-মাঝে দুই একটা টান লাগায় সিগেরেটে। মন ভাল নাই-মনে হয় তামান্নাকে সরংং করতেছে। হঠাৎ করে মোবাইল বেঝে উঠল। জয় মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখল একটি অপরিচিত নান্বার। তাই রিসিভ করল না। কিছুক্ষণ পর মোবাইলে একটা মেসেজ আসল ( Miss You) জয় কিছুই বুঝতে পারল না মোবাইলে আজ কী হল? জয় কল ব্যাক দিয়ে শোনতে পেল একটি মেয়ের কণ্ঠ। বুঝতে আর দেরি হলো না মেয়েটি কে।
তামান্না জয়ের সাথে রাগ করল; কারণ জয় এতদিন একবারও তামান্নাকে কল করে নাই। জয় বলল, আসলে তার কাছে নাম্বার ছিল না তাই কল দিতে পারে নাই।
দীর্ঘ দিন প্রেম হওয়ার পর দু জনের মাঝে বিয়ে হয়েছিল। এক জন অপর জনকে খুব বেশি ভালবাসে। জয় ঘুম থেকে উঠে দেখতে পেল তামান্না নাস্তা রেড়ি করে টেবিলে বসে আসে। জয় বলল, তুমি নাস্তা কর নাই কেন?
তামান্নাঃ একটু মৃদু হেসে বলল, দু জন তো জীবন একি সাথে বেঁধে নিয়েছি তোমাকে ঘুমে রেখে কী করে আমি নাস্তা করে নি?
জয়ঃ ঠিক আছে তা হলে আমাকে ভোরে ঘুম থেকে ডেকে দিয়।
তামান্নাঃ না তাও পারব না। আসলে আমি সুখ খুঁজে বেড়ায়। বিয়ের আগে তোমার কথা ভাবতে আর তোমার সাথে দেখা করার অপেক্ষায় থাকতে ভাল লাগত। এখনো তোমার জন্য অপেক্ষা করতে ভাল লাগে। জয়ের অফিসের সময় হয়ে গেল।
তামান্না বলল, অফিসের সময় হয়ে গেছে। তাড়া তাড়ি নাস্তা করে অফিসে চলে যাও। জয় অফিসের উদ্দেশ্য রওনা হল। দরজার পাশে গিয়ে একবার পিছনে তাকিয়ে হাত দেখিয়ে তামান্নার কাছ থেকে বিদায় নিল। অফিস শেষে করে এদিক ওদিক না তাকিয়ে সোজা বাসায় চলে আসল।
জয় বলল, চল আজ মার্কেটে যাব। দু জন মার্কেটে গিয়ে শপিং করে ফিরে আসল। অফিসে থাকা ব্যতিত এক মুহূর্তের জন্য ও যদি তামান্না জয়কে দেখতে না পাই। তবে পাগল হয়ে যায়।
জয়, এখন আর সিগেটেও খায় না। কারণ তামান্না এই গুলো পছন্দ করে না।
জয় বলল, আজ আমাদের বিবাহ বাষিকি চল কোথাও বেড়াতে যায়। তামান্না বলল, না আমার যেতে ইচ্ছা নাই। একটু পরে তামান্না জয়কে ঝড়িয়ে ধরে বলল, এই! রাগ করছ না’কি? জয় বলল, রাগ কেন করব? তামান্না বলল, তোমার সাথে বাইরে ঘুরতে যায়নি তাই রাগ করো নাই? জয় হাসি মুখে বলল, না আমি তোমার সাথে রাগ করি না কখনো। তামান্না বলল, তুমি একটু অপেক্ষা করো আমি প্রস্তুত হয়ে আসি। আজ ঘুরতে যাব। তামান্না শাড়ি পরে আসল। বাসা থেকে নেমে ঘাড়িতে বসল। জয় নিজে ডাংবিং করল। গাড়ি থামার পর তামান্না চমকে উঠল। গাড়ি একেবারে তামান্নার বাসার সামনে গিয়ে থামল।
তামান্না জয়ের দিকে তাকিয়ে রইল।
জয় বলল, আজ আমাদের বিবাহ বাষিকি তাই ভাবলাম বাবা মাকে স্মরণ করব। যাই হোক! বাসায় পৌছে তামান্নার পরিবার তাদের দু জনকে অনেক আঁদর যত্ন করল। রাতে দু জন বাসায় ফিরতে চাইল। তামান্নার পরিবার বলল, এতদিন পর মেয়েকে কাছে পেয়েছি তাকে এইভাবে বিদায় দেওয়া তাঁদের ভাল লাগতেছে না। মেয়েকে দু এক দিন তাদের কাছে থাকতে বলল।
জয় হাসি মুখে বলল, ঠিক আছে। তামান্না চেহেরা গম্ভীর করে রইল । তামান্না জয়কে বলল, তোমাকে ছাড়া একা থাকতে আমার কষ্ট হবে। তুমিও থেকে যাও। জয় তামান্নার মাথার উপর হাত রেখে বলল, অনেক দিন পর বাবা-মায়ের সাথে দেখা হল তোমার। অনেক কথা বার্তা হবে তোমাদের মধ্যে। আমার থাকার কোন প্রয়োজন নাই। দুই এক দিন পর আমি এসে তোমাকে নিয়ে যাব। জয় বাসায় চলে আসল।
অফিস সেরে তামান্নাকে কল দিল। কিন্তু কেউ ফোন রিসিভ করতেছে না। জয় অস্তির হয়ে পড়ল। অবশেষে জয়, তামান্নার বাসায় পৌছে গেল। বাসায় গিয়ে তার সাথে কথা বলতে চাইল। কিন্তু তামান্না তার সাথে কোন কথা বলল না। তামান্না শুধু এইটুকু বলল, আমি জয় নামের কাউকে চিনি না। তোমার সাথে আমার যা হয়েছিল। তা শুধু অবেগ। অবেগ দিয়ে জীবন চলে না। তুমি ফিরে যাও। তারপর থেকে জয় জীবন থেকে অনেক দূরে সরে গেল। এখন মানুষ দেখলে ভয় পাই। মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে থাকে। কেন এমন হয়েছিল বা কেন এমন করে ছিল তামান্না। জয় এখনো বুঝে উঠতে পারে নি।
১৬ই আশ্বিন ১৪২২ বাংলা
১৫-১০-২০১৫ ইংরেজী
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সোলাইমান ১৫/১২/২০১৬চমৎকার কথামালায় সুন্দর ছন্দে দারুণ।ভাল লিখুন ভাল থাকুন সবসময় প্রিয় কবি।
-
মোমিনুল হক আরাফাত ১২/১২/২০১৬প্রকাশের প্রতীক্ষায় আছি।