www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

এইটা কি প্রেম না অভিশাপ

এইকি প্রেম না অভিশাপ?
মোমিনুল হক আরাফাত
সে দিন ছিল পূণিমার রাত আকাশ চেয়ে গেল তারাই-তারাই। জোৎস্নাই সরে দিল কালো অন্ধকার। সে দিনেই জয়ের সাথে তার স্ত্রী চাঁদনির বিয়ে হয়। দুঃখের বিষয় এই পূণিমার চাঁদ বেশি দিন থাকে নাই। মানে তাদের সংসার বেশি দিন ঠিকে নাই। না ঠিকার কারণ হচ্ছে, জয় ছিল খুব অলস কাজ কর্ম তার ভাললাগে না। তাই তার কাছে ঘর সংসারও তেমন ভাল লাগত না। স্ত্রীর সাথে প্রতিদিন দু একটা ঝগড়া লেগে থাকত। তাদের সংসার এক প্রর্যায়ে ভাঙ্গার পথে এমন সময় তাদের ঘরে এক সন্তানের জন্ম হয়। সে দিনটা ছিল আমবর্ষার কোন খানে আলোর দেখা মিলছে না। আকাশে ছিল না একটিও তারা। তবু হত ভাগি মার, তার ছেলে শুভকে পেয়ে মনে হল। আকাশের সব তারা যেন নিজ হাতে ধরতে পেরেছে।
এদিকে জয় তার উপর অত্যচারের মাত্রা আরো বেশি বাড়িয়ে দিল। এক সময় চাঁদনির কাছে সব আলো অন্ধকারে পরিণত হল, শুভর চাঁদ মুখটার আর চাদের মত লাগতেছে না।
সে দিন এক বর্ষর রাত। তুমল বৃষ্টি পড়তেছে আকাশ হতে। মাঝে মাঝে বজ্ররের শব্দে শরীর শেউরে উঠতেছে। এমন সময় নিষ্টুর স্বামী জয়, তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিল। চাঁদনির বুক থেকে কেঁড়ে নিল শুভকে। হতভাগি মা চোখে আর কিছু দেখতে পারতেছে না। অবশেষে নিরুপাই হয়ে বাপের বাড়িতে চলে গেল। অভাগি মায়ের শেষ ইচ্ছা ছিল এক বার তার ছেলে শুভকে দেখার। সেই ইচ্ছাটুকুও পূরণ করতে দিল না, নিষ্টুর স্বামী জয়। শেষ পর্যন্ত হতভাগি মা সন্তানকে দেখতে নাপেয়ে পাগল হয়ে গেল।
শুভ দাদির আঁদরে ধীরে ধীরে বড় হতে লাগল।
জয় আবার বিয়ে করতে মনো যোগি হল। এখন বিয়ে করে নুতুন ঘর সাঝাল। সে ঘরে তার তিন কন্যার জন্ম হয়। এখন তার সংসার খূব আনন্দে আছে। জয়, এখন আগের মতো নাই। এখন সুন্দর একটি পরিবার সাঝিয়েছে জয়।
হঠাৎ ষ্টোক করে শুভর, দাদি মারা যায়। সেই সাথে শুভর জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়।
শুভর সাথে খুব বেশি সম্পর্ক ছিল পাশের গ্রামের রাশেদের সাথে। তারা দু জনের মাঝে এত বেশি সম্পর্ক ছিল এক জন অপর জন কে মনের ভিতর লুকিয়ে থাকা সব কথা বলত।
শুভ রাশেদের কাছে এসে বলল, রাশেদ আজ তোকে একটি কথা বলব। রাশেদ বলল বলে দে আপত্তি কীসের? শুভ বলল, আমি এই জীবনে সর্ব প্রথম একটি মেয়েকে খুব বেশি ভালবেসে পেলেছি। কিন্তুু তোকে সে মেয়েটির কথা কখনো বলা যাবে না। কারণ মেয়েটিকে পাওয়ার য্যেগতা আমার নাই।
রাশেদ বলল, আরে কেন বলা যাবে না? একশ বার বলা যাবে। আমি না তোর বন্ধু- আমাকে না বলল আর কাকে বলবি?
শুভ বলল, আমার তো মায়ের পরিচয় নাই, বাবা থেকেও নাই। ওরা হচ্ছে সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোক আর ঐ মেয়েটি এই পরিবারের সকলের আঁদরের মেয়ে। তা ছাড়া কেউ জেনে শোনে আমার মতো হত ভাগাকে জীবন সঙ্গী করবে না।
রাশেদ বলল, আরে না তা কিছু না। সব তোর মনের ভয়, আমি বেঁচে থাকতে তোকে হতাস হতে হবে না। এই রকম মেয়ে একটি না। দশটা এনে দিব। এই কথা শোনে শুভ হেসে উঠে বলল, না দোস দশটা নয় একটি হলে চলবে।
পরদিন খুব ভোরে রাশেদ মেয়েটির সাথে দেখা করার উদ্দের্শে রওনা হল।
রাশেদঃ প্রথমে মেয়েটিকে দাঁড়াতে বলল, তার পর বন্ধুর মনের মাঝে লুকিয়ে থাকা সব কথা বুঝাল। এই সব কথা শোনে শম্পার পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেল। তার সুন্দুর চেহেরাটা আর সুন্দর রইল না। কাজল বরণ চোখ দুটু রক্ত বরণ দারণ করল। এই সব অবস্তা দেখে রাশেদ, একটু ভয় পেয়ে গেল। রাশেদ, আর কিছু না বলে মাথাটা নিচু করে চলে গেল। রাশেদ আর শুভর সাথে দেখা হওয়ার পর। সব কথা বলল, এই কথা গুলো শোনে শুভ একটু হতাস হয়ে পড়ল।
রাশেদ শুভর দিকে তাকিয়ে বলল, দোস তুই হতাস হইস না। আমি তো এখনো বেঁচে আছি। আমি মরে যাওয়ার পর চিন্তা করিস। এখন করতে হবে না। এই কথা বলে একটু মিষ্টি হাসি দিয়ে রাশেদ চলে গেল। যাবার সময় বলল, আমি আবার যাব শম্পার কাছে।
রাশেদ আবার গিয়ে শম্পকে বলল, কেমন আছেন?
শম্পাঃ একটু মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিল মুটামুটি ভাল আছে। রাশেদ তাকে বুঝালে প্রেমর উপকার। ধীর ধীরে শম্পা মোমের মতো গলে গিয়ে শুভর প্রেমে পড়ে গেল। তারা বেশ জমিয়ে প্রেম চালিয়ে যাচ্ছে। এমন সময় শম্পার মা-বাবা জানতে পারল। তাদের সম্পর্কের কথা। তারাতো ভিক্ষারীর সাথে মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি নয়। শম্পার পরিবার তাকে গৃহ বন্ধি করে রাখল।
এই কথা রাশেদ জানার সাথে সাথে শুভর কাছে ছুটে আসল। শুভ এই কথা শোনে অস্তির হয়ে পড়ল। তার চোখ থেকে ঘুম চলে গেল । রাশেদ, ভাবতে লাগল কী ভাবে শম্পাকে উদ্ধার করা যায়। এখন রাশেদরও ঘুম চলে গেল যে পর্যন্ত শুভর সাথে শম্পার বিয়ে দিতে পারবেনা সে পর্যন্ত রাশেদেরও ঘুম হবে না। এখন রাশেদও অনেক ব্যস্তা ।
এক গভীর রাতে রাশেদ, শম্পর বাড়ির উদ্দের্শে রওনা হল। অপর দিকে শম্পার পরিবারও খুব সজাগ ছিল যাতে বাইরের ইদুর বাড়িতে ডুকতে না পারে। রাশেদ তাদের বাড়ির দেওয়াল বেয়ে উঠার সময় শম্পার বাবা তাকে দেখে পেলল, দেখার পর ধরার ব্যবস্তা করে নিল, পরক্ষণে রাশেদ ধরা পড়ে গেল। তাকে ধরে বেশি কিছু না বলে মার ধর দিয়ে ছেড়ে দিল।
রাশেদ ছাড়া পেয়ে আর ডানে বায়ে না দেখে সোজা বাড়িতে চলে গেল।
রাশেদ পর দিন শুভর সাথে দেখা করে সব কথা বুঝাল। ভাববার বিষয় হচ্ছে যে ভাবে মার খেয়ে ছিল। সে ভাবে তার ব্যথা হল না। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে তার কাছে এইটা কোন নতুন অধ্যায় নয়। এর আগে আরো অনেকের কাছে খেয়ে ছিল। তই মার খাওয়াটা তার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেল।
রাশেদের মাথায় অনেক বুদ্ধি ছিল। রাশেদ আর শুভ দুই বুন্ধু মিলে চিন্তা করতে লাগল এখন কী করা যায়। এইতো রাশেদের মাথায় বুদ্ধি চলে আসল। রাশেদ বলল, একটু গভীর রাত করে গেলে ভাল হয়। তখন তো সবাই ঘুমিয়ে পড়বে।
পরদিন রাত সাড়ে তিনটাই। শম্পার বাড়িতে গিয়ে উপস্তিত হল রাশেদ আর শুভ।
দঃখের বিষয় একটাই, শম্পার রুমে তার গর্ভ ধারণী মা শুয়ে আছেন। দুই বন্ধু জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখে খুব আনন্দিত হল, তাঁকে শম্পা ভেবে। রাশেদ খুব পূরাণো টেডিং প্রাপ্ত লোক। তাই বাড়িতে ডুকাটা তার কাছে কঠিন কাজ না। রাশেদ শুভর কাঁদের উপর দাঁড়িয়ে জানলাটা ধরল। ধরার পর কষ্ট বিষ্ট করে ছাদের উপর উঠে গেল। ছাদ থেকে সিঁড়ি ভেয়ে নিচে চলে আসল।
রাশেদ আস্ত আস্তে শম্পার রুমে ডুকে পড়ে- “ভবি বলে ডাক দিল”। ডাক শোনা মাত্র শম্পার মায়ের ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘুম থেকে উঠে রাশেদের দিকে একটু তাকাল। তাকানোর পর একটু লজ্জা পেল রাশেদ। লজ্জা পাওয়ার কারণ হচ্ছে; সেইটা তার আন্টি মানে ভাবি নয়। লজ্জাটাও তেমন বেশি পাই নি। এর আগে আরো অনেক জায়গায় পেয়েছিল তাই একটু কমে গেল। শম্পার মা তাদের দু জনকে ধরার ব্যবস্তা করে নিলে। রাশেদ হত ভাগা বন্ধুর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। কিছুক্ষণ তাকানোর পর রাশেদ শুভকে বলল, তুই শম্পাকে নিয়ে পালা।
শুভ পালাতে রাজি হল না রাশেদকে একা রেখে। রাশেদ, তাকে হাত জোর করে বলল, শুভ তুই শম্পাকে নিয়ে পালা। আমার কিছুই হবে না। এই কথা শোনে শুভ একটু মুখ অন্ধকার করে পেলল, কারণ শম্পার চেয়ে রাশেদ কম নয়।
শুভ রাশেদের কথা মতো শম্পাকে নিয়ে পালাল। শম্পার মা খুব চালাক। সে বুঝতে পারল শুভ শম্পাকে নিয়ে পালাল। রাশেদ তো পালাতে পারেনাই। তাই শম্পার পরিবার তেমন চিন্তিত হল না। রাশেদকে পিটালে সব ক্ষত মুছে যাবে।
শুভ আর শম্পা এক পাহাড়ের উপর গিয়ে থামল। রাতের অন্ধকার সরে যাচ্ছে প্রভাতের আলো মিছিল নিয়ে দোয়ারে পৌঁছল। তারা দু জন এত বেশি দৌঁড়ে ছিল যে, শম্পা এক বারে ক্লান্ত হয়ে চোখ দুটি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ।
শম্পা শুভর বুকের উপর ঘুমিয়ে পড়ল। প্রভাত হয়ে গেল পাখির কলখলানি শুলো করে দিল। দূর থেকে ভেসে আসতেছে ঘুঘুর ডাক। তখন শম্পার ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘুম মানব হীন পাহাড়ের উপর দেখে একটু আনমনা হয়ে ভয় পেয়েছিল। সেই ভয় শুভকে দেখে কেটে গেল। তারা দুজন আজ নিজেকে ধন্য মনে করতেছে । কারণ তাদের ভালবাসার জয় হল।
অপর দিকে রাশেদের বারটা বাঝিয়ে দিচ্ছে শম্পার স্বজনরা| রাশেদকে প্রচুর মার ধর করল তবু শিকার নিতে পারতেছে না। শম্পা আর শুভ কোথায় আছে। অবশেষে রাশেদকে প্রাণ নেওয়ার ভয় দেখাল তাতেও একটুও ভিত হল না রাশেদ হাসি মুখে বলল, বলাটা তত সহজ না যত সহজ ভাবতেছেন। এত সহজে বলি কী করে?
এই কথা শোনে শম্পার স্বজনরা বলল, শম্পা আর শুভকে লাগবেনা। তোকে মেরে পেলল সব সমাধান হবে। এই কথা শোনে রাশেদ একটু হাসল।
তাকে এক গহীন জঞ্জলে নিয়ে গিয়ে একটি গাছের সাথে বেঁধে পেলল। হয়তো ভাবতেছে কী ভাবে প্রাণ কেঁড়ে নিলে তারা সুখ পাবে।
তখন রাশেদ একটি কথা বলে ছিল-তোমরা আইনের সাহায্য নাও। তাতে তারা রাঝি হল না কারণ রাশেদ শম্পা শুভর অপরাধ ছিল প্রেম করাটা। তাতো তত বেশি অপরাধ না। মানে কলা চোরর ফাঁসি হয় না। তাই তারা শান্তি পাবে না। তাতে ও রাশেদ একটুও কষ্ট নিল না। রাশেদ আর একটি কথা বলে ছিল তাকে এক বার মায়ের কাছে নিয়ে যেতে। দীর্ঘ দিন ধরে পরিবারের সাথে রাশেদের সম্পর্ক ছিল না। সেই সুযোগটাও হল না রাশেদের কপালে। তার মৃত্যুর ঘড়ি দ্রুত বেগে চলতে লাগল। প্রথমে তার হাত মুখ বেঁধে পেলল, তারপর সর্ব অঙ্গ কেরোসিন দিয়ে ভিজিয়ে নিল। এই সব দেখে রাশেদ অর্দ মরা হয়ে গেল। গায়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার পর বাকি প্রাণটাও আগুনে নিযে গেল। এই ভাবে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করল রাশেদ। তার আত্নত্যাগের কথা শোনে শুভ ছুটে আসে। এসব দৃশ্য দেখে শুভও ঘর সংসার ত্যাগ করে পাগল হয়ে দেশ দেশান্তরে গুরে রাশেদকে খোঁজে। তবে এখনো পাইন রাশেদের দেখা।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭০৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৯/১২/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • বেশ ভালো!
  • সোলাইমান ১৩/১২/২০১৬
    অসাধারণ বাক্যরচনা।
  • মোনালিসা ১১/১২/২০১৬
    আবার লিখ্বেন
  • আব্দুল হক ০৯/১২/২০১৬
    বাহ বাহ
 
Quantcast