কুরবানীর ইতিহাস
কুরবানীর ইতিহাস
মুহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন
মানব ইতিহাস যত না প্রাচীন তেমনি তত প্রাচীন কুরবানীর ইতিহাস। আল্লাহর নৈকট্য লাভ করাই এর উদ্দেশ্য। কুরবানী শব্দের অর্থই হচ্ছে নিকটবর্তী হওয়া। কাছাকাছি থাকা। ইসলামী পরিভাষায় বলা হয় নির্দিষ্ট দিবসে নির্দিষ্ট ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পুরষ্কার লাভের আশায় পশু জবেহের মাধ্যমে কুরবানী করা।
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা আল কুরআনে বলেন: তুমি তাদেরকে আদম (আলাইহিস সালাম)-এর দুই পুত্রের (হাবিল ও কাবিলের) বৃত্তান্ত যথাযথভাবে শোনাও। যখন তারা উভয়ে কুরবানি করেছিল। তখন একজনের কুরবানী কবুল হল এবং অন্য জনের কুরবানি কবুল হল না। (তাদের একজন) বলল, আমি তোমাকে অবশ্যই হত্যা করব। (অপরজন) বলল, আল্লাহ তো সংযমীদের কুরবানিই কবুল করে থাকেন।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ২৭)
সে (হাবিল) বলল, যদি তুমি আমাকে হত্যা করতে আমার দিকে হস্ত প্রসারিত কর, তবুও আমি তোমাকে হত্যা করতে তোমার প্রতি হস্ত প্রসারিত করব না। কেননা আমি বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ২৮)
তারপর থেকে প্রত্যেক যুগেই ধারাবাহিকভাবে কুরবানির এ বিধান সব শরিয়তেই বিদ্যমান ছিল। মানব সভ্যতার সুদীর্ঘ ইতিহাস থেকে জানা যায়, পৃথিবীতে যুগে যুগে সব জাতি ও সম্প্রদায়ের মানুষ কোনো না কোনোভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তার প্রিয় বস্তু উৎসর্গ করতেন। আর আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে প্রিয়বস্তু উৎসর্গই আজকের কুরবানি। এ কথার প্রমাণে
মহান আল্লাহ বলেন-‘আমি প্রতিটি সম্প্রদায়ের জন্য (কুরবানির) নিয়ম করে দিয়েছি। তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে যে রিজিক দেওয়া হয়েছে সেগুলোর উপর তারা যেন আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে (এই বিভিন্ন নিয়ম-পদ্ধতির মূল লক্ষ্য কিন্তু এক- আল্লাহর নির্দেশ পালন)। কারণ তোমাদের মাবুদই একমাত্র উপাস্য। কাজেই তাঁর কাছেই আত্মসমর্পণ কর আর সুসংবাদ দাও সেই বিনীতদেরকে।’ (সুরা হজ : আয়াত ৩৪)
তারপর নবী হযরত ইবরাহীম আলাইহিসসালমের ঘটনাবলী থেকেও কুরবানীর ইতিহাস জানা যায়। যার বর্ণনা আল কুরআনে এভাবে্ এসেছে।
‘অতঃপর যখন সে তার সাথে চলাফেরা করার বয়সে পৌঁছল, তখন সে বলল, ‘হে প্রিয় বৎস, আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ করছি, অতএব দেখ তোমার কী অভিমত?; সে বলল, ‘হে আমার পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, আপনি তাই করুন। আমাকে ইনশাআল্লাহ আপনি অবশ্যই ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন।’ (সুরা সাফফাত : আয়াত ১০২)
‘অতঃপর বাবা-ছেলে উভয়েই যখন আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইবরাহিম (আলাইহিস সালাম) তাকে জবেহ করার জন্য তাকে কাত করে শুইয়ে দিলেন।’ (সুরা সাফফাত : আয়াত ১০৩)
‘নিশ্চয়ই এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আর আমি তার (সন্তান কুরবানির) পরিবর্তে জবেহযোগ্য এক মহান জন্তু দিয়ে (কুরবানি করিয়ে) তাকে (সন্তানকে) মুক্ত করে নিলাম।’ (সুরা সাফফাত : আয়াত ১০৬-১০৭)
আর এ (কুরবানির) বিষয়টি পরবর্তীদের জন্য স্মরণীয় করে রাখলাম। (সুরা সাফফাত : আয়াত ১০৮)
আল্লাহ বলেন, ‘আমি প্রত্যেক উম্মাতের জন্য কুরবানির বিধান রেখেছি।’ (সুরা হজ্জ : আয়াত ৩৪)।
মহান আল্লাহ আরো বলেন অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের জন্য সালাত আদায় করো এবং কুরবানী দাও। সূরা আল কাউসার, আয়াত-২।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
‘বলুন: নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন এবং আমার মৃত্যু সমগ্র জগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই নিবেদিত।’ আল আনআম আয়াত-১৬২।
এ আয়াত দ্বারা স্পষ্ট হয়ে গেল, কোরবানি শুধু আল্লাহর উদ্দেশ্যেই হতে হবে।
লৌকিকতা বা সামাজিকতার উদ্দেশ্যে নয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘আল্লাহর নিকট তাদের গোশত-রক্ত পৌঁছায় না; বরং পৌঁছায় তাঁর কাছে তাদের তাকওয়া বা আল্লাহ ভীরুতা।’ (সুরা হজ, আয়াত: ৩৭)।
উপরোক্ত কুরআনের বিধান আলোচনা দ্বারা কুরবানীর সুষ্পষ্ট ইতিহাস জানতে পারা যায়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে লোক দেখানোর জন্য কুরবানি নয় বরং পশুকে জবাইয়ের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে পাপাচার, কদাচার,হীনতা ,নীচুতা,পাশবিকতা, হিংস্রতাসহ এবং মনের পশু ও আমিত্বকে জবাই করার তাওফিক দান করুন। কুরবানির মাধ্যমে নিজেকে তাকওয়াবান হিসেবে তৈরি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সংকলনের তারিখ: ১৫ জুন ২০২৩
মুহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন
মানব ইতিহাস যত না প্রাচীন তেমনি তত প্রাচীন কুরবানীর ইতিহাস। আল্লাহর নৈকট্য লাভ করাই এর উদ্দেশ্য। কুরবানী শব্দের অর্থই হচ্ছে নিকটবর্তী হওয়া। কাছাকাছি থাকা। ইসলামী পরিভাষায় বলা হয় নির্দিষ্ট দিবসে নির্দিষ্ট ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পুরষ্কার লাভের আশায় পশু জবেহের মাধ্যমে কুরবানী করা।
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা আল কুরআনে বলেন: তুমি তাদেরকে আদম (আলাইহিস সালাম)-এর দুই পুত্রের (হাবিল ও কাবিলের) বৃত্তান্ত যথাযথভাবে শোনাও। যখন তারা উভয়ে কুরবানি করেছিল। তখন একজনের কুরবানী কবুল হল এবং অন্য জনের কুরবানি কবুল হল না। (তাদের একজন) বলল, আমি তোমাকে অবশ্যই হত্যা করব। (অপরজন) বলল, আল্লাহ তো সংযমীদের কুরবানিই কবুল করে থাকেন।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ২৭)
সে (হাবিল) বলল, যদি তুমি আমাকে হত্যা করতে আমার দিকে হস্ত প্রসারিত কর, তবুও আমি তোমাকে হত্যা করতে তোমার প্রতি হস্ত প্রসারিত করব না। কেননা আমি বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ২৮)
তারপর থেকে প্রত্যেক যুগেই ধারাবাহিকভাবে কুরবানির এ বিধান সব শরিয়তেই বিদ্যমান ছিল। মানব সভ্যতার সুদীর্ঘ ইতিহাস থেকে জানা যায়, পৃথিবীতে যুগে যুগে সব জাতি ও সম্প্রদায়ের মানুষ কোনো না কোনোভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তার প্রিয় বস্তু উৎসর্গ করতেন। আর আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে প্রিয়বস্তু উৎসর্গই আজকের কুরবানি। এ কথার প্রমাণে
মহান আল্লাহ বলেন-‘আমি প্রতিটি সম্প্রদায়ের জন্য (কুরবানির) নিয়ম করে দিয়েছি। তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে যে রিজিক দেওয়া হয়েছে সেগুলোর উপর তারা যেন আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে (এই বিভিন্ন নিয়ম-পদ্ধতির মূল লক্ষ্য কিন্তু এক- আল্লাহর নির্দেশ পালন)। কারণ তোমাদের মাবুদই একমাত্র উপাস্য। কাজেই তাঁর কাছেই আত্মসমর্পণ কর আর সুসংবাদ দাও সেই বিনীতদেরকে।’ (সুরা হজ : আয়াত ৩৪)
তারপর নবী হযরত ইবরাহীম আলাইহিসসালমের ঘটনাবলী থেকেও কুরবানীর ইতিহাস জানা যায়। যার বর্ণনা আল কুরআনে এভাবে্ এসেছে।
‘অতঃপর যখন সে তার সাথে চলাফেরা করার বয়সে পৌঁছল, তখন সে বলল, ‘হে প্রিয় বৎস, আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ করছি, অতএব দেখ তোমার কী অভিমত?; সে বলল, ‘হে আমার পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, আপনি তাই করুন। আমাকে ইনশাআল্লাহ আপনি অবশ্যই ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন।’ (সুরা সাফফাত : আয়াত ১০২)
‘অতঃপর বাবা-ছেলে উভয়েই যখন আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইবরাহিম (আলাইহিস সালাম) তাকে জবেহ করার জন্য তাকে কাত করে শুইয়ে দিলেন।’ (সুরা সাফফাত : আয়াত ১০৩)
‘নিশ্চয়ই এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আর আমি তার (সন্তান কুরবানির) পরিবর্তে জবেহযোগ্য এক মহান জন্তু দিয়ে (কুরবানি করিয়ে) তাকে (সন্তানকে) মুক্ত করে নিলাম।’ (সুরা সাফফাত : আয়াত ১০৬-১০৭)
আর এ (কুরবানির) বিষয়টি পরবর্তীদের জন্য স্মরণীয় করে রাখলাম। (সুরা সাফফাত : আয়াত ১০৮)
আল্লাহ বলেন, ‘আমি প্রত্যেক উম্মাতের জন্য কুরবানির বিধান রেখেছি।’ (সুরা হজ্জ : আয়াত ৩৪)।
মহান আল্লাহ আরো বলেন অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের জন্য সালাত আদায় করো এবং কুরবানী দাও। সূরা আল কাউসার, আয়াত-২।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
‘বলুন: নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন এবং আমার মৃত্যু সমগ্র জগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই নিবেদিত।’ আল আনআম আয়াত-১৬২।
এ আয়াত দ্বারা স্পষ্ট হয়ে গেল, কোরবানি শুধু আল্লাহর উদ্দেশ্যেই হতে হবে।
লৌকিকতা বা সামাজিকতার উদ্দেশ্যে নয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘আল্লাহর নিকট তাদের গোশত-রক্ত পৌঁছায় না; বরং পৌঁছায় তাঁর কাছে তাদের তাকওয়া বা আল্লাহ ভীরুতা।’ (সুরা হজ, আয়াত: ৩৭)।
উপরোক্ত কুরআনের বিধান আলোচনা দ্বারা কুরবানীর সুষ্পষ্ট ইতিহাস জানতে পারা যায়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে লোক দেখানোর জন্য কুরবানি নয় বরং পশুকে জবাইয়ের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে পাপাচার, কদাচার,হীনতা ,নীচুতা,পাশবিকতা, হিংস্রতাসহ এবং মনের পশু ও আমিত্বকে জবাই করার তাওফিক দান করুন। কুরবানির মাধ্যমে নিজেকে তাকওয়াবান হিসেবে তৈরি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সংকলনের তারিখ: ১৫ জুন ২০২৩
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
শুভজিৎ বিশ্বাস ২৯/০৭/২০২৩তথ্যসমৃদ্ধ লেখা
-
আব্দুর রহমান আনসারী ০৯/০৭/২০২৩অনুপম তথ্যবহুল লেখা
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ০৬/০৭/২০২৩নাইস
-
ফয়জুল মহী ০৫/০৭/২০২৩Good post
-
অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী ০৫/০৭/২০২৩ভালো লাগলো