নীপের দিনলিপি
পণ্ডশ্রম শেষে বিকেলের হাওয়া খেতে খেতে বাসায় ফিরছে নীপ।আকাশী থ্রিপিস, সাদা পাজামা,ধবল ওড়না।নাকে কানে দুল নেই।বাইশ বছরের তরুণী। মনে দুঃখবোধ নেই তার।সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়।দু'মিনিট আগে বেরোলেও মাইনে কাটা যায়।আজ একঘেয়েমি লাগছিলো।চারটা নাগাদ কাজে ইস্তফা দিয়ে বের হয়ে পড়েছে।যাক না টাকা তাতে কি!আগে মন ভালো হবে তারপরে সব দেখা যাবে।
ছোট বেলায় বাবা-মা হারানোর পরে ঢাকায় আসে গৃহকর্মী হিসেবে,তখন মাত্র দশ বছরের বালিকা।প্রথমদিকে বোকাসোকা ছিলো, বাসার বুড়ো লোকটা কোলে নিত সবার সামনে,নাতনি বলে চুমু খেতো, জড়িয়ে ধরত,বিশ্রী ভাবে হাত বুলিয়ে দিতো সারা গায়ে।রাতে মাঝে মাঝে পা টিপতে ডাকত তারপরে মাথা বানাতে বলে কাছে টেনে নিতো,চুলে হাত দিতো। একটা বিশ্রী হাসি দিয়ে হাত বুলিয়ে দিতো।প্রতিদিন এরকমই হতো।সহ্যের বাঁধ ভাঙ্গলো একদিন।হাত ঝাকি দিয়ে সরিয়ে নিলো নিজেকে,চিৎকার পাড়লো।সবাই ছুটে আসলো।সব কিছু বুঝলো তারপর না বোঝার ভান করে তাড়িয়ে দিলো দূর দূর করে।
সেখান থেকে বেরিয়ে আশ্রয় নেয় এক বিধবার কাছে।পরে গার্মেন্টস এ কাজ নেয়।একটা রুম নিজে নিয়ে নেয় অর্ধেক ভাড়া দিয়ে।সকাল সকাল কাজে যায়।ফজরের আজনের পর পর দল বেধে বেরোয় কাজে।রানীমহল থেকে লেগুনায় চিটাগংরোড,সেখান থেকে পায়ে হেটে কাচপুর বিজ্রের নীচ দিয়ে হাতের ডানে ওয়াসা অফিসের কালবাট পেরিয়ে সোজা মিনিট দশেকের পথ।তারপরে মাঝারি আকারের গার্মেন্টস।
যেদিন ভালো লাগেনা সেদিন বের হয় আগেই।টাকার চিন্তা নেই তেমন।একলা মানুষ অল্পতেই তুষ্ট।আজকে বের হয়ে গেছে আগেভাগে। গার্মেন্টস থেকে মিনিট দশেক সামনে হাটলে ব্রিটিশ আমলের রেল লাইন চোখে পড়ে।তারই শেষ মাথায় বিশ্ব খাদ্য গুদাম।বিশাল প্রচীর দিয়ে ঘেরা চারিদিক।ফিরতি পথে চোখে পড়ে আধা পুরাতন কিছু বড় বড় পাটকল।থমকে আছে যেনো মহা কলরোল।কিছু কাল আগেও এখানে কোলাহল ছিলো,বিশ্বখ্যাত পাট তৈরি হত এসব জায়গায়।সোনার বাংলার সোনা।আর কিছুদূর এগোলে ওয়াসার থেকে মিনিট তিনেকের দূরত্বে বড় বড় দুটো তেলের ডিপো খালি পড়ে আছে।চিনক সিড়ি দিয়ে অনেকে উপরে উঠে।নীপ একদিন উঠেছিল।শিরশির করছিল তার মেরুদণ্ড।উপরে উঠে ডান পাশের মাঠ দেখে হা-হ'য়েছিল।দুবলা ঘাস চিরে সাপের মত এঁকেবেকে বের হয়েগেছে পায়ে হাটা রাস্তাগুলো।উপর থেকে পাখির চোখের মত দেখে এক নিবিষ্টে।
মাঝে মাঝে দু'টাকার বাদাম কিনে বসে যায় দামাল ছেলেদের খেলা দেখতে।লাল টেপ প্যাঁচানো বলগুলো ঘাস ফেড়ে বেরিয়ে যায় সীমানায়,ছেলেদের দল উল্লাসে ফেটে পড়ে।ও তখন ছোটবেলায় কুতকুত খেলায় কয়টি ঘর আঁকতে হতো তা ভেবে চুলে জোরে জোরে বিল কাটতে থাকে।কিছুতেই মনে পড়েনা।মাঠের মধ্য দিয়ে হালকা উত্তর পশ্চিমে ছোট্ট একটা নড়বড়ে কালবাট।দু-তিনটে কাঠ ছুটে গেছে।একজন উঠলেই মাতালের মত দুলতে থাকে।নীচে ময়লা কালো পানি।ও মাঝে মাঝে উঠে,কাঁপতে শুরু করলো ওর শিহরণ খেলে যায় শরীরে।লোমগুলো কাটা দিয়ে ওঠে।নীচে তাকিয়ে হাসে। আসেপাশের দুএকজন ভাব করার চেষ্টা করে।কেউবা বিশ্রী হাসি দিয়ে শয্যা সঙ্গী হবার প্রস্তাব দেয়।ও আনমনে তাকায় আকাশের দিকে।শ্যামল চিকন কটির মেয়েটি।তিলকগুলো যার ঢেকে গেছে শ্যামল আবহে।পড়নে সাদা পাজামা,আকাশী জামা,ধবল ওড়না।নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ও মিশে যেতে চায় আকাশে।ওর হাসি পায়।শ্রান্ত দেহে ফিরে আসে শীতালক্ষ্যার পাড়ে।বিশাল শাখা যুক্ত আমগাছের ফাঁক দিয়ে সূর্যাস্ত নামে। সন্ধ্যার আঁধার ঝিমিয়ে নামে।ছন্নছাড়া কয়েকটা পাখি দেয়ালের আশ্রয়ে ফিরে।ও দেখে আর মুগ্ধ হয়।হাটতে থাকে শীতলক্ষ্যার পাড় দিয়ে ফ্রেশ মিল্কের ফ্যাক্টরি ছাড়িয়ে।বাবা-মা হীন যুবতী।বখাটের দলের লেলুপ দৃষ্টি মাড়িয়ে বেচে থাকে ইটে বোনা শহরের খোপে।আজ আগেভাগে বাসায় যাচ্ছে, শীতলক্ষ্যার দিকে তাকিয়ে হাসে।এই যৌবন থমকে যাবে,ম্লান হয়ে যাবে শীতালক্ষ্যার মত।শ্যামল মেয়েটি সাদা চুলে গল্প করবে নাতি-নাতনীদের সাথে।যৌবনের পায়ে হাটা সময়ের গল্প।একটা মোমবাতি নিভে আসে, নীপের চোখে ঘুম আসে।আধোঘুমে স্বপ্ন দেখে;শহরের এক সন্ধ্যায় সে মিশে গেছে মিহি কুয়াশায়।
ছোট বেলায় বাবা-মা হারানোর পরে ঢাকায় আসে গৃহকর্মী হিসেবে,তখন মাত্র দশ বছরের বালিকা।প্রথমদিকে বোকাসোকা ছিলো, বাসার বুড়ো লোকটা কোলে নিত সবার সামনে,নাতনি বলে চুমু খেতো, জড়িয়ে ধরত,বিশ্রী ভাবে হাত বুলিয়ে দিতো সারা গায়ে।রাতে মাঝে মাঝে পা টিপতে ডাকত তারপরে মাথা বানাতে বলে কাছে টেনে নিতো,চুলে হাত দিতো। একটা বিশ্রী হাসি দিয়ে হাত বুলিয়ে দিতো।প্রতিদিন এরকমই হতো।সহ্যের বাঁধ ভাঙ্গলো একদিন।হাত ঝাকি দিয়ে সরিয়ে নিলো নিজেকে,চিৎকার পাড়লো।সবাই ছুটে আসলো।সব কিছু বুঝলো তারপর না বোঝার ভান করে তাড়িয়ে দিলো দূর দূর করে।
সেখান থেকে বেরিয়ে আশ্রয় নেয় এক বিধবার কাছে।পরে গার্মেন্টস এ কাজ নেয়।একটা রুম নিজে নিয়ে নেয় অর্ধেক ভাড়া দিয়ে।সকাল সকাল কাজে যায়।ফজরের আজনের পর পর দল বেধে বেরোয় কাজে।রানীমহল থেকে লেগুনায় চিটাগংরোড,সেখান থেকে পায়ে হেটে কাচপুর বিজ্রের নীচ দিয়ে হাতের ডানে ওয়াসা অফিসের কালবাট পেরিয়ে সোজা মিনিট দশেকের পথ।তারপরে মাঝারি আকারের গার্মেন্টস।
যেদিন ভালো লাগেনা সেদিন বের হয় আগেই।টাকার চিন্তা নেই তেমন।একলা মানুষ অল্পতেই তুষ্ট।আজকে বের হয়ে গেছে আগেভাগে। গার্মেন্টস থেকে মিনিট দশেক সামনে হাটলে ব্রিটিশ আমলের রেল লাইন চোখে পড়ে।তারই শেষ মাথায় বিশ্ব খাদ্য গুদাম।বিশাল প্রচীর দিয়ে ঘেরা চারিদিক।ফিরতি পথে চোখে পড়ে আধা পুরাতন কিছু বড় বড় পাটকল।থমকে আছে যেনো মহা কলরোল।কিছু কাল আগেও এখানে কোলাহল ছিলো,বিশ্বখ্যাত পাট তৈরি হত এসব জায়গায়।সোনার বাংলার সোনা।আর কিছুদূর এগোলে ওয়াসার থেকে মিনিট তিনেকের দূরত্বে বড় বড় দুটো তেলের ডিপো খালি পড়ে আছে।চিনক সিড়ি দিয়ে অনেকে উপরে উঠে।নীপ একদিন উঠেছিল।শিরশির করছিল তার মেরুদণ্ড।উপরে উঠে ডান পাশের মাঠ দেখে হা-হ'য়েছিল।দুবলা ঘাস চিরে সাপের মত এঁকেবেকে বের হয়েগেছে পায়ে হাটা রাস্তাগুলো।উপর থেকে পাখির চোখের মত দেখে এক নিবিষ্টে।
মাঝে মাঝে দু'টাকার বাদাম কিনে বসে যায় দামাল ছেলেদের খেলা দেখতে।লাল টেপ প্যাঁচানো বলগুলো ঘাস ফেড়ে বেরিয়ে যায় সীমানায়,ছেলেদের দল উল্লাসে ফেটে পড়ে।ও তখন ছোটবেলায় কুতকুত খেলায় কয়টি ঘর আঁকতে হতো তা ভেবে চুলে জোরে জোরে বিল কাটতে থাকে।কিছুতেই মনে পড়েনা।মাঠের মধ্য দিয়ে হালকা উত্তর পশ্চিমে ছোট্ট একটা নড়বড়ে কালবাট।দু-তিনটে কাঠ ছুটে গেছে।একজন উঠলেই মাতালের মত দুলতে থাকে।নীচে ময়লা কালো পানি।ও মাঝে মাঝে উঠে,কাঁপতে শুরু করলো ওর শিহরণ খেলে যায় শরীরে।লোমগুলো কাটা দিয়ে ওঠে।নীচে তাকিয়ে হাসে। আসেপাশের দুএকজন ভাব করার চেষ্টা করে।কেউবা বিশ্রী হাসি দিয়ে শয্যা সঙ্গী হবার প্রস্তাব দেয়।ও আনমনে তাকায় আকাশের দিকে।শ্যামল চিকন কটির মেয়েটি।তিলকগুলো যার ঢেকে গেছে শ্যামল আবহে।পড়নে সাদা পাজামা,আকাশী জামা,ধবল ওড়না।নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ও মিশে যেতে চায় আকাশে।ওর হাসি পায়।শ্রান্ত দেহে ফিরে আসে শীতালক্ষ্যার পাড়ে।বিশাল শাখা যুক্ত আমগাছের ফাঁক দিয়ে সূর্যাস্ত নামে। সন্ধ্যার আঁধার ঝিমিয়ে নামে।ছন্নছাড়া কয়েকটা পাখি দেয়ালের আশ্রয়ে ফিরে।ও দেখে আর মুগ্ধ হয়।হাটতে থাকে শীতলক্ষ্যার পাড় দিয়ে ফ্রেশ মিল্কের ফ্যাক্টরি ছাড়িয়ে।বাবা-মা হীন যুবতী।বখাটের দলের লেলুপ দৃষ্টি মাড়িয়ে বেচে থাকে ইটে বোনা শহরের খোপে।আজ আগেভাগে বাসায় যাচ্ছে, শীতলক্ষ্যার দিকে তাকিয়ে হাসে।এই যৌবন থমকে যাবে,ম্লান হয়ে যাবে শীতালক্ষ্যার মত।শ্যামল মেয়েটি সাদা চুলে গল্প করবে নাতি-নাতনীদের সাথে।যৌবনের পায়ে হাটা সময়ের গল্প।একটা মোমবাতি নিভে আসে, নীপের চোখে ঘুম আসে।আধোঘুমে স্বপ্ন দেখে;শহরের এক সন্ধ্যায় সে মিশে গেছে মিহি কুয়াশায়।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
এম. আশিকুর রহমান ০৭/০৫/২০২০চমৎকার।
-
মোহন দাস (বিষাক্ত কবি) ০২/০৫/২০২০Besh...
-
স্বপন রোজারিও (মাইকেল) ০১/০৫/২০২০খুব সুন্দর হয়েছে।
-
ফয়জুল মহী ০১/০৫/২০২০Kub valo laglo