www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ডাইনির স্বর্গ

সেদিন অন্ধকার ছিল
আমার আত্মাটা কি দেখে চমকে উঠছিল।
জ্ঞান ফেরার পর কিছু মানুষকে দেখলাম আমার দেহ মাটির ঘরে রেখে যাচ্ছে।
বড্ড অসহায় লাগছিল তখন।চোখ ফেটে কান্না আসছিল।শরীরটা নিথর। এক গাদা মাটির নীচে চাপা পড়ে আছে।সন্ধে নামছিল গোরের পাশ থেকে কেউ একজন আমাকে দেখে চমকে গেল।যেমনি আমি চমকে ছিলাম।এখন সে ও আমি বন্ধু।আঁধার রাতে দু'জনে চমকে দেই দু-একজন কে।

শায়লাকে নাকি ডাইনি বিদ্যেয় ধরেছে।সবার পেটের বাচ্চা খেয়ে ফেলছে। খুব অসহায় লাগছে ওকে।কি করবে, ওর কোন দোষ নেই।ইচ্ছে হলে মরেও যেতে পারবে না।ডাইনি বিদ্যে কাউকে দিতে হবে।নইলে মরবে না।

আজ রাতে আসছিল আমার গোরের পাশে।চমকে দিতে চাচ্ছিলাম কিন্তু পারলাম না।খুব মায়া লাগছিল ওর জন্য।বিকেলে ওর বান্ধবী অসুস্থ হয়ে পড়ছে।সাত মাসের গর্ভবতী ছিল।ভর দুপুরে আসছিল ঘাটে।শায়লার জানালা দিয়ে ঘাট দেখা যায়।

হঠাৎ চোখ যায় মালার দিকে।কিন্তু একি! ও বান্ধবীর পেটের বাচ্চাটার দিক থেকে চোঁখ ফেরাতে পারছেনা।হাজারো চেষ্টা করেও পারলনা।চোঁখের দৃষ্টি ধীরে ধীরে তীক্ষ্ণ হতে লাগল।মালা চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে গেল।রক্তপাত হচ্ছিল ওর নীচ দিয়ে।

কারো বুঝতে বাকি রইলনা এটা ডাইনি শায়লার কাজ।মালার মা এসে এক বিকেল শুধু অভিশাপ দিয়ে গেল।গ্রামের মানুষ ভয়ে ওর দিকে তাকায় না।মাতব্বরের নির্দেশে ওঝা এসে প্রচন্ড মন্ত্র-তাবিজ দিয়ে ঝেড়ে দিয়ে গেছে মালাকে।

কাল ওর ওপর ঝাড় ফুক চলবে।এত কষ্টের পরেও মরবেনা ও।না মরার কষ্টই ওকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।আমার গোরের পাশে বসে কাঁদছে।অভিযোগ দিচ্ছে।কাজল চোখটা এখন ভয়ংকয় হয়ে গেছে।কালো মসৃণ চুল গুলো কেমন ঝাকড়া আর লালচে হয়ে আছে।কেমন বিভৎস সুন্দর লাগছে ওকে।ওর কান্নায় এখন মায়াবী সুর নেই।কেমন ব্যাঘ্র কণ্ঠে কান্না করছে ও।

আমার এখন এগুলোই ভাল লাগছে কিন্ত কেনো।আমিতো এগুলো পছন্দ করতাম না।ওর মসৃণ কালো কেশ,মায়াবী কন্ঠের গান আর কাজল কালো চোখ পছন্দ করতাম।দু'দিনেই রুচির এত তফাৎ কেমন অদ্ভুত লাগছে নিজের কাছে।মরে গেলে মানুষের রুচি পাল্টে যায় সব কিছু উল্টো হয়ে যায়।ভাল মানুষগুলো খারাপ হয় আর খারাপেরা ভাল হয়।

আমি কি সত্যিই মরে গেছি। নাহ একবার শায়লাকে জিজ্ঞেস করে দেখি।কিন্ত হায়! ও আমার কথা শুনছে না কেনো।ও আমার দিকে তাকালোও না।কেনো ও কি আমায় ভালবাসেনা,নাহ! এ জীবন আর রাখবো না।ওহ! আমার তো জীবন-ই নেই।তাহলে এত কষ্ট হচ্ছে কেনো আমার।

ও চলে গেছে। মালা এখনো অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।সবাই শায়লার বাড়ির সম্মুখে হাজির হয়েছে।ওঝা আর তার দু'জন শাগরেদও এসেছে।মরিচ পোড়া দেয়া হয়েছে।আমার কেমন যেন লাগল।মনে হল আবার মরে যাবো।কিছুই বুঝতে পারছি না।মরিচ পোড়ায় এত কষ্ট লাগছে কেনো।তিনদিন আগেও তো নিজে সাকাল বেলা পোড়া মরিচ দিয়ে ভাত খেলাম।ওকি শায়লা চিৎকার পাড়ছে কেনো। তবে ও কি মরে গেছে! পোড়া মরিচ দিয়ে তো ও-ই আমাকে খাইয়ে দিয়েছিল।তাহলে গ্রামবাসী ওকে দেখতে পাচ্ছে কি করে।

হঠাৎ করেই ওঝা হাক ছাড়ল, ডাইনি এখনি তার বিদ্যে অন্যের উপর দিবে।সবাই ওর চোখের আড়ালে চলে যাও।মন্ত্র পড়ে ওঝা আগুনের মশালের উপর কি যেন ছুড়ে মারছে আর আকাশ বাতাস কাপিয়ে শায়লা চিৎকার করতেছে।আমার হাসি পাচ্ছে ওর অবস্থা দেখে।আমিতো ওর দুঃখে কান্না করতাম কিন্ত আজ এত হাসি পাচ্ছে কেনো।ওহ! আমিতো ভূত হয়ে গেছি।ভূতেরা কষ্ট পেলে হাসে করে আর আনন্দে কাঁদে।

মাতব্বরের নাতনি শিলা কলাপাতার ফোকর দিয়ে ডাইনির মৃত্যু যন্ত্রনা দেখছে।ওর মায়া হচ্ছে।মালা ওঝার পাশে এখনো। ওর হুশ ফিরেছে ওঝা দেখেনি।মিটিমিটি চোখে শায়লার দিকে তাকিয়ে আছে।শায়লা আবছা চোখে শিলাকে দেখছে।ও এখনি বেচে যাবে, ওর বিদ্যে শিলার দেহে দিয়ে দিবে।ওঝা এক হাক দিয়ে আবারো কি যেন আগুনে দিল।আকাশ বাতাস কাপিয়ে শায়লা চিৎকার করে উঠল।ধীরে ধীরে ও ঢলে পড়তে লাগল।ওঝা আবারো মন্ত্র ঝাড়ল।কিন্তু শায়লা নিথর হয়ে আছে।

শায়লা এখন আমার দিকে আসছে।গ্রাম বাসী হইচই করে আনন্দে আটখানা হয়ে উঠছে।শায়লার লাশ পড়ে আছে মাটিতে।সমস্ত কলরবের মাঝে মালা গোঙ্গাচ্ছে।কেউ খেয়াল করছেনা।কেমন অদ্ভুত সে গোঙ্গানি।শায়লার মত বিভৎস।আমি শায়লার দিকে আগাচ্ছি। ভূতে হয়েও তবে পেলাম ওকে।কান্না আসতেছে আমার।গোরের কাছাকাছি আসতেই শায়লা কেমন জানি উপরের দিকে তাকিয়ে রইল।কিছুক্ষণ পরে দেখলাম ও আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে উপরে চলে যাচ্ছিল স্বর্গের সিড়ি বেয়ে।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৫২৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৩/০৪/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ন্যান্সি দেওয়ান ২০/০৪/২০২০
    Besh valo...
  • মনোমুগ্ধকর রচনা।
  • সীমন্ত মৈত্র ১৯/০৪/২০২০
    অনবদ্য লেখনী
  • বাহ
  • খুব ভালো
  • পি পি আলী আকবর ১৪/০৪/২০২০
    অনবদ্য
  • অনবদ্য।
  • ফয়জুল মহী ১৩/০৪/২০২০
    নববর্ষে জাতীর জন্য সুখবর কামনা করি। শুভেচ্ছা আপনকে ।
 
Quantcast