www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আম্মুর ডাইরী

----------------------------------
আজ রাতের আকাশে ইয়া বড়ো এক চাঁদ উঠেছে । তার সমস্ত জোছনা যেন আমার বারান্দায় এসে ঝড়ে পড়েছে । কি সুন্দর একটা রাত ! এমন রাতে কি আর চুপটি করে ঘরে বসে থাকা যায় ?
তাই দেরী না করে ছাদে চলে গেলাম ।

মাথার উপরে মস্ত চাঁদ , জোছনায় জোছনায় প্লাবিত পৃথিবী । চাঁদটা যেন আমায় কাছে ডাকছে , আমার খুব ইচ্ছে করছে উড়ে উড়ে ঐ চাঁদের বুকে চলে যাই । কিন্তু আমার তো আর ডানা নেই ! আমি কি করে ঐ চাঁদের বুকে যাব ? চাঁদটা এতো সুন্দর আর আমি কিনা এই পৃথিবীতে পড়ে আছি !
আমি অনুভব করতে পারলাম , আমার চক্ষু গলে উষ্ণ তরলধারা বেয়ে পড়ছে ।
নিজেকে প্রশ্ন করলাম ,
" আচ্ছা আমার এত আবেগ কেন ?
আমি এতো অল্পতেই কাঁদি কেন ! "
তখন মনে পড়ে গেল আম্মুর কথা ,
আম্মুর ডাইরীর কথা ,
আম্মু সেখানে লিখেছেন ;
" কোনো এক জোছনার রাত্রিতে ,
হারিয়ে যাবো ঐ চাঁদের বুকেতে । "
আমিও হয়তো আম্মুর মতোই হয়েছি তাই চাঁদকে এতো ভালো লাগে , যেমনটা ভালো লাগতো আমার আম্মুর ।

আমি রুহান। এবার অনার্স ১ম বর্ষে পড়াশোনা করছি । আজ থেকে উনিশ বছর আগে কোনো এক শীতের রাতে এই পৃথিবীতে এসেছিলাম ।
একটা নবজাতকের আগমনে তার পরিবার কতোটা খুশি হয় বলে বোঝানো যাবে না , আর তা যদি প্রথম কোনো সন্তান হয় তাহলে তো আর কোন কথায় নেই ।
কিন্তু আমার জন্ম কারো মুখে হাসি ফোটায় নি , বরং আমি যেদিন জন্মেছিলাম সেদিন সবাই অঝোড়ে কেঁদেছিলো , হয়তো একটুখানি হেসেছিল আমার আম্মু , কিন্তু তাও ক্ষণিকের জন্য , কারণ আমার জন্মের কিছুক্ষণ পরেই তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে ওপারে চলে যান ।

জীবনে কখনো মায়ের ভালোবাসা বুঝিনি , কিন্তু বিশাল এক শূণ্যতা অনুভব করি । মনে হয় আমার সব থেকেও আমি নিঃস্ব ।
আম্মুকে আমি কখনো দেখিনি , তাঁর মুখয়ব কেমন তাও জানিনা , তবে তাঁর একটা ডাইরী আমার কাছে আছে । যেখানে তাঁর হাজারো কথা , আমার প্রতি তাঁর হাজারো উপদেশ বাণী লিখে গেছেন ।
সেই ডাইরীটাই আমার সবকিছু , যেখানে আমি আমার আম্মুকে খুঁজে পাই।

এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে রাত বেড়ে গেছে বুঝতেই পারিনি , হঠাৎই দেখতে পেলাম কোথা থেকে জানি একরাশ কালো মেঘ এসে চাঁদটাকে ঢেকে ফেলেছে , অগত্যা রুমে চলে এলাম ।
ইলেকট্রিসিটি চলে গেছে তাই একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে আলমারি থেকে আম্মুর ডাইরীটা বের করে পড়তে শুরু করলাম ।
ডাইরীর দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় একটি কবিতার কয়েকটি চরণ আছে যার অর্থ আমি আজ পর্যন্ত খুঁজে পাইনি ,
চরণগুলি হলো এই ,
" নিকষ কালো রাতের আঁধারে
সবাই ঘুমিয়েছিল বিভোরে ,
সেদিন কেঁদেছিলাম আমি
হেসেছিল অর্ন্তযামী । "

এই চরণগুলি নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম । অনেকক্ষণ ভাবার পর চরণগুলোর প্রকৃত অর্থ খুঁজে পেলাম , ততক্ষণে রাত ১২ টা বেজে গেছে ‌। চরণগুলোর অর্থ হলো আজ আম্মুর জন্মদিন ।

যাইহোক ডাইরীটা রেখে ছাদে চলে গেলাম । ততক্ষণে মেঘ কেটে গেছে , চাঁদটা আবার জোছনা ছড়াচ্ছে মাটির পৃথিবীতে ।
অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি চাঁদের পাণে ,
মনে মনে চাঁদকে প্রশ্ন করলাম ,
-- আচ্ছা , তুমি এত দূরে থাকো কেন ?
-- সব‌ই বিধাতার ইচ্ছা । ( চাঁদ )
-- আচ্ছা, তুমি কি মানুষকে ভালোবাসো না , তাদের কাছে আসতে চাও না ।
-- মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব , তাঁদেরকে অবশ্যই ভালোবাসি , কিন্তু তাঁদের কাছে আসার স্পর্ধা আমার নেই ।
-- আমি যে তোমার কাছে যেতে চাই ।
-- না , তুমি তো মানুষ , আমার এখানে আসতে চেও না , আমি তোমার মর্যাদা দিতে পারব না । এখানে অক্সিজেন নেই , তুমি কষ্ট পাবে তা আমি চাই না । ( চাঁদ )
-- এসব কি বলো । ( কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম )
-- মন খারাপ করো না , আল্লাহর ইবাদত করো । আল্লাহ তোমাকে পরকালে এর চেয়ে বড় কোন পুরষ্কার দিবে । ( চাঁদ )
-- ঠিক আছে , পরকালে আমি তোমার বুকেই যেতে চাইব ।

" এই রুহান ! এই রুহান !! এখানে বসে কি বকবক করছিস ? রাত তো অনেক হয়েছে এবার যা ঘুমিয়ে পড় । "
হঠাৎ ফুপির ডাকে সম্বিত ফিরে পেলাম ।
" তাইতো আমি কি পাগল হয়ে গেছি ?
চাঁদ কি করে কথা বলে ? "
ছাদ থেকে নেমে এসে শুয়ে পড়লাম ।
চাঁদটা না হয় একাই পাহারা দিক , মায়াবী রাত , একাই না হয় জোছনা বিলাক ।
আম্মুর ডাইরীতে লিখা একটা কবিতা আবৃত্তি করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লাম ,
" এই শহর ঘুমিয়ে আছে ,
নির্জনতার মায়ায়
একলাই জেগে আছি
কালো মেঘের ছায়ায় । "
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৬৮৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৪/০১/২০১৯

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast