শেষ সঙ্গী
গায়ের শেষ প্রান্তে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে ছিল একটি বিশাল বটগাছ। বিস্তীর্ণ তার ডাল-পালা, শীতল তার ছায়া। কত পথিক তার ছায়ায় বসে ক্লান্তি দূর করত, কিন্তু সে ছিল নির্বাক, নিশ্চুপ।
মানুষেরা যখন তার ছায়ায় এসে বসত তখন সে ঝিরঝিরি বাতাস বইয়ে মানুষকে শান্তির পরশ বুলিয়ে দিত। তার খুব ইচ্ছে করতো তাদের সাথে কথা বলতে, কিন্তু আল্লাহ তাকে সেই ক্ষমতা দেয় নি।
গাছেরা কথা বলে পাখিদের সাথে, পশুদের সাথে। কিন্তু সেই গাছে কোন পাখির বাসা ছিল না এবং কি সেখানে কোন পাখি আসতোও না। বাধ্য সে হয়ে নিঃসঙ্গ ভাবেই জীবন কাটাচ্ছিল।
এভাবে বহুবছর কেটে গেছে, সময়ের সাথে বটগাছটিও বৃদ্ধ হয়ে গেছে।
.
একদিন চৈত্রের অলস দুপুরে বটগাছটি ঘুমিয়ে ছিল, হঠাৎই সে টের পেল; কে যেন তার ডালে বসে গান গাইছে আর নাচানাচি করছে। এতে তার ঘুম ভেঙ্গে যায় এবং চোখ মেলে দেখে একটি ছোটপাখি কিচিরমিচির করে গান গাইছে আর নাচছে। বটগাছটি ছোটপাখিকে বলল;
-জীবন কত সুন্দর! তুমি কে ছোটপাখি? (বটগাছ)
-জীবন কত সুন্দর! আমি হাবু পিকপিক। (ছোটপাখি)
-তুমি কোথা থেকে এসেছো পিক পিক আর তোমার বাবা মা কোথায়?
-আমি পাহাড় থেকে এসেছি, আমার বাবা কেউ নেই।
-ওহ, তাই বুঝি।
-হুম,, গাছ ভাই
-তো এখন কি করো পিকপিক?
-এখন দেশে দেশে ঘুরে বেড়ায় গাছ ভাই।
-ওহ ভালো তো।
-হুম ভালো, আচ্ছা তুমি অসময়ে ঘুমাচ্ছিলে কেন?
-রাতে তো ভালো ঘুম হয়নি তাই।
-রাতে ঘুম হয়নি কেন গাছ ভাই?
-রাত জেগে তারাদের সাথে গল্প করেছিলাম তাই।
-রাত জাগো কেন গাছ ভাই?
-ঘুম হয় না তাই?
-ঘুম হয় না কেন?
-একা একা থাকতে হয় তাই।
-একা একা থাকো কেন?
-আমার তো কোন বন্ধু নেই।
-ওমা, বল কি তোমার এখানে পাখি আসে না?
-না।
-কেন আসেনা, তাদের তুমি ডাকো না?
-ডাকি তো, তাদের কত গান শুনাতে চায় তবুও তারা আসেনা।
-তাই বুঝি।
-হুম।
-এখন কি করবে?
-ছোটপাখি তুমি কিন্তু বেশি কথা বলছো।
-আচ্ছা, আমি যাই, আরেক দিন এসে কিন্তু তোমার গান শুনব।
-আচ্ছা যাও।
.
ছোটপাখিটি ফুরুৎ করে উড়ে গেল এরপর বটগাছটি আবার ঘুমিয়ে পড়ল। বিকেলে যখন তার ঘুম ভাঙলো তখন তার ছোটপাখিটি কে খুব মনে পড়লো।
কে জানে আবার আসবে কি না?
আর না আসলেই বা কি!
নীল আকাশে সাদা মেঘ উড়ে বেড়ায় তাদের দেখে সময় কাটে, নির্ঘুম রাতের আকাশে জ্বলে থাকা তারাদের সাথে কথা বলে সময় কাটে।
.
এভাবে কিছুদিন চলার পর বৈশাখ মাস এলো। কাল বৈশাখ।
হঠাৎ একদিন রাতের কথা, বটগাছটি জেগে জেগে তারাদের সাথে গল্প করছিল। হঠাৎই কালো মেঘে আকাশ ছেয়ে গেল, তারারা সব নিভে গেল, জোরে জোরে বাতাস বইতে লাগল।
তখন বটগাছটি ভয়ে কাপতে লাগল, কিন্তু কি আর করার আছে। ঝড় ওঠে গেল, ঝড়! কাল বৈশাখী ঝড়!
বৃদ্ধ বটগাছের একটা ডাল মরমর করে ভেঙে গেল। এতে বটগাছ অনেক কষ্ট পেল, তাই আর রাত জেগে তারাদের সাথে গল্প করতে পারে না।
এরই মাঝে একদিন দেখা গেল ছোটপাখি হাবু পিক পিক কে। এসেই জিজ্ঞেস করল;
.
-জীবন কত সুন্দর! কেমন আছো গাছ ভাই?
-জীবন কত সুন্দর! ভালো আছি ছোটপাখি। তুমি কেমন আছো?
-জীবন কত অসুন্দর! তোমার একটা ডাল ভেঙে গেছে।
-তুমি কেমন আছো?
-ভালো আছি তবে তোমাকে দেখে অনেক কষ্ট লাগলো।
-বুড়ো হয়ে গেছি তো তাই, অনেক বছর বাচলাম।
-তবুও আরো কয়েকশত বছর বেচে থাকো।
-একা একা বাচতে ভালো লাগে না।
-আমি তো আছি, আমার সাথে গল্প করবে, গান শুনাবে, সেদিন তো তাড়িয়ে দিলে।
-সেদিনের পর তো আর এলে না।
-আর যাবো না, তোমার এখানে থাকতে দেবে?
-আচ্ছা, থাকো।।
-ঠিক আছে। এখন একটা গান শুনাও।
বটগাছটি গান ধরলো,
.
এসো পথিক, বসো ছায়ায়
ঘুম পাড়ানি গান শোনায়,
বটের ছায়া শীতল ভীষণ
জুড়িয়ে যায় দেহ মন,
ক্লান্ত দেহ শান্ত করো
তারপর আবার পথ ধরো।
.
বটগাছের গান শোনে ছোটপাখি মুগ্ধ হলো, তাই সে খুশি হয়ে বলল,
এবার আমি একটা গান শোনাব।
.
জীবন কত সুন্দর
গাছে নাচে বান্দর,
ঝিকিমিকি তারা জ্বলে
জোনাক নাচে রাতের কালে,
তিরিং বিরিং ছাগল ছানা
রাতে ঝড়ে চাঁদের কণা।
.
ছোটপাখির গান শোনে বুড়ো বটগাছ অনেক আনন্দ পেল এবং বলল তুমি এখানেই থাকো।
তাই ছোটপাখি বিভিন্ন জায়গা থেকে খড়কুটো এনে বটগাছের ডালে একটা বাসা বানালো এবং সেখানেই থাকতে লাগলো।
এরপর বহুদিন কেটে গেছে, ছোটপাখিও বুড়ো হয়ে গেছে, ভালোই চলছিল সবকিছু।
হঠাৎই একদিন ঝড় উঠল। কাল বৈশাখী ঝড়!
তখন বটগাছটি ছোটপাখিটি কে নিরাপদে আশ্রয় নিতে বলল, কিন্তু সে কিছুতেই বটগাছকে ছেড়ে যাবে না।
.
📖গল্প : শেষ সঙ্গী
✍লেখক : Mohiuddin Ramzan
⚛উৎসর্গ : N
মানুষেরা যখন তার ছায়ায় এসে বসত তখন সে ঝিরঝিরি বাতাস বইয়ে মানুষকে শান্তির পরশ বুলিয়ে দিত। তার খুব ইচ্ছে করতো তাদের সাথে কথা বলতে, কিন্তু আল্লাহ তাকে সেই ক্ষমতা দেয় নি।
গাছেরা কথা বলে পাখিদের সাথে, পশুদের সাথে। কিন্তু সেই গাছে কোন পাখির বাসা ছিল না এবং কি সেখানে কোন পাখি আসতোও না। বাধ্য সে হয়ে নিঃসঙ্গ ভাবেই জীবন কাটাচ্ছিল।
এভাবে বহুবছর কেটে গেছে, সময়ের সাথে বটগাছটিও বৃদ্ধ হয়ে গেছে।
.
একদিন চৈত্রের অলস দুপুরে বটগাছটি ঘুমিয়ে ছিল, হঠাৎই সে টের পেল; কে যেন তার ডালে বসে গান গাইছে আর নাচানাচি করছে। এতে তার ঘুম ভেঙ্গে যায় এবং চোখ মেলে দেখে একটি ছোটপাখি কিচিরমিচির করে গান গাইছে আর নাচছে। বটগাছটি ছোটপাখিকে বলল;
-জীবন কত সুন্দর! তুমি কে ছোটপাখি? (বটগাছ)
-জীবন কত সুন্দর! আমি হাবু পিকপিক। (ছোটপাখি)
-তুমি কোথা থেকে এসেছো পিক পিক আর তোমার বাবা মা কোথায়?
-আমি পাহাড় থেকে এসেছি, আমার বাবা কেউ নেই।
-ওহ, তাই বুঝি।
-হুম,, গাছ ভাই
-তো এখন কি করো পিকপিক?
-এখন দেশে দেশে ঘুরে বেড়ায় গাছ ভাই।
-ওহ ভালো তো।
-হুম ভালো, আচ্ছা তুমি অসময়ে ঘুমাচ্ছিলে কেন?
-রাতে তো ভালো ঘুম হয়নি তাই।
-রাতে ঘুম হয়নি কেন গাছ ভাই?
-রাত জেগে তারাদের সাথে গল্প করেছিলাম তাই।
-রাত জাগো কেন গাছ ভাই?
-ঘুম হয় না তাই?
-ঘুম হয় না কেন?
-একা একা থাকতে হয় তাই।
-একা একা থাকো কেন?
-আমার তো কোন বন্ধু নেই।
-ওমা, বল কি তোমার এখানে পাখি আসে না?
-না।
-কেন আসেনা, তাদের তুমি ডাকো না?
-ডাকি তো, তাদের কত গান শুনাতে চায় তবুও তারা আসেনা।
-তাই বুঝি।
-হুম।
-এখন কি করবে?
-ছোটপাখি তুমি কিন্তু বেশি কথা বলছো।
-আচ্ছা, আমি যাই, আরেক দিন এসে কিন্তু তোমার গান শুনব।
-আচ্ছা যাও।
.
ছোটপাখিটি ফুরুৎ করে উড়ে গেল এরপর বটগাছটি আবার ঘুমিয়ে পড়ল। বিকেলে যখন তার ঘুম ভাঙলো তখন তার ছোটপাখিটি কে খুব মনে পড়লো।
কে জানে আবার আসবে কি না?
আর না আসলেই বা কি!
নীল আকাশে সাদা মেঘ উড়ে বেড়ায় তাদের দেখে সময় কাটে, নির্ঘুম রাতের আকাশে জ্বলে থাকা তারাদের সাথে কথা বলে সময় কাটে।
.
এভাবে কিছুদিন চলার পর বৈশাখ মাস এলো। কাল বৈশাখ।
হঠাৎ একদিন রাতের কথা, বটগাছটি জেগে জেগে তারাদের সাথে গল্প করছিল। হঠাৎই কালো মেঘে আকাশ ছেয়ে গেল, তারারা সব নিভে গেল, জোরে জোরে বাতাস বইতে লাগল।
তখন বটগাছটি ভয়ে কাপতে লাগল, কিন্তু কি আর করার আছে। ঝড় ওঠে গেল, ঝড়! কাল বৈশাখী ঝড়!
বৃদ্ধ বটগাছের একটা ডাল মরমর করে ভেঙে গেল। এতে বটগাছ অনেক কষ্ট পেল, তাই আর রাত জেগে তারাদের সাথে গল্প করতে পারে না।
এরই মাঝে একদিন দেখা গেল ছোটপাখি হাবু পিক পিক কে। এসেই জিজ্ঞেস করল;
.
-জীবন কত সুন্দর! কেমন আছো গাছ ভাই?
-জীবন কত সুন্দর! ভালো আছি ছোটপাখি। তুমি কেমন আছো?
-জীবন কত অসুন্দর! তোমার একটা ডাল ভেঙে গেছে।
-তুমি কেমন আছো?
-ভালো আছি তবে তোমাকে দেখে অনেক কষ্ট লাগলো।
-বুড়ো হয়ে গেছি তো তাই, অনেক বছর বাচলাম।
-তবুও আরো কয়েকশত বছর বেচে থাকো।
-একা একা বাচতে ভালো লাগে না।
-আমি তো আছি, আমার সাথে গল্প করবে, গান শুনাবে, সেদিন তো তাড়িয়ে দিলে।
-সেদিনের পর তো আর এলে না।
-আর যাবো না, তোমার এখানে থাকতে দেবে?
-আচ্ছা, থাকো।।
-ঠিক আছে। এখন একটা গান শুনাও।
বটগাছটি গান ধরলো,
.
এসো পথিক, বসো ছায়ায়
ঘুম পাড়ানি গান শোনায়,
বটের ছায়া শীতল ভীষণ
জুড়িয়ে যায় দেহ মন,
ক্লান্ত দেহ শান্ত করো
তারপর আবার পথ ধরো।
.
বটগাছের গান শোনে ছোটপাখি মুগ্ধ হলো, তাই সে খুশি হয়ে বলল,
এবার আমি একটা গান শোনাব।
.
জীবন কত সুন্দর
গাছে নাচে বান্দর,
ঝিকিমিকি তারা জ্বলে
জোনাক নাচে রাতের কালে,
তিরিং বিরিং ছাগল ছানা
রাতে ঝড়ে চাঁদের কণা।
.
ছোটপাখির গান শোনে বুড়ো বটগাছ অনেক আনন্দ পেল এবং বলল তুমি এখানেই থাকো।
তাই ছোটপাখি বিভিন্ন জায়গা থেকে খড়কুটো এনে বটগাছের ডালে একটা বাসা বানালো এবং সেখানেই থাকতে লাগলো।
এরপর বহুদিন কেটে গেছে, ছোটপাখিও বুড়ো হয়ে গেছে, ভালোই চলছিল সবকিছু।
হঠাৎই একদিন ঝড় উঠল। কাল বৈশাখী ঝড়!
তখন বটগাছটি ছোটপাখিটি কে নিরাপদে আশ্রয় নিতে বলল, কিন্তু সে কিছুতেই বটগাছকে ছেড়ে যাবে না।
.
📖গল্প : শেষ সঙ্গী
✍লেখক : Mohiuddin Ramzan
⚛উৎসর্গ : N
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মোবারক হোসেন ২১/০৭/২০১৮Very nice
-
মোশতাক সাব্বির২ ১০/০৭/২০১৮ভাল লাগল
-
মোঃ ইমরান হোসেন (ইমু) ০৭/০৭/২০১৮সুন্দর ::::::::::::
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ০৫/০৭/২০১৮বেশ তো।
-
মোঃ নূর ইমাম শেখ বাবু ০৫/০৭/২০১৮মুগ্ধ হলাম।