জেদ্দা থেকে বলছি ( পর্ব-৩ )
মনের কষ্টটা প্রকাশ করা হল না, মনের গভীরেই রেখে দিয়েছি। স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলাম। কিন্তু আরেক ঝামেলার মুখোমুখি হলাম সবাই। এখানের হাজ্জ এজেন্সির লোকেরা ঘিরে ধরল আমাদের। তাদের গাড়ীতে মক্কা যেতে হবে। বাবুল ভাই অনেক বোঝানর চেষ্টা করল যে আমার মা আর ভাই, এদেরকে আমার সাথেই নিয়ে যাবো, আমার সাথে ওমরা করবে তোমাদের সাথে কেন যাবে? কিন্তু ওরা কিছুতেই বুঝতে চাইল না। আমার হাত থেকে পাসপোর্ট কেড়ে নেয়া হল। এতোটা দুর্ব্যবহার করতে লাগল যা মেনে নেয়া খুবই কষ্টের। বাবুল ভাইও মেনে নিতে পারছিলেন না। তার মাকে তার সাথে যেতে দেবে না এটা কোন ধরনের মানবতা, কেমন আইন? এক পর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু হল। আমি এহরাম পরা আমাকেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হল! পক্ষে কথা বলার কেউ নাই। জোড় করে তাদের গাড়ীতে ওঠাতে চাইল। ওদের ব্যবহারে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। সৌদিতে এসেই ধাক্কা খাওয়া শুরু, তাও এহেরাম অবস্থায়? ওরা হাজ্জ এজেন্সির লোক অথচ এহরামকেও সম্মান করল না?
এক পর্যায়ে দুজন বাংলাদেশী আমার কাছে এসে দাঁড়াল। আমাকে বলল, আপনি নতুন আসছেন? বললাম, জী। বলল এক কাজ করেন ওদের কিছু টাকা দিয়ে দেন ওরা চলে যাবে। আমি বললাম- কেন? উত্তর দিল- এখানে কিছুই বলার নাই, টাকা না দিলে ওদের সাথেই যেতে হবে। বাড়াবাড়ি না করে আপনার ভাইকে বলুন। আমি বাবুল ভাইকে বললাম, তিনি প্রথমে রাজি হয়নি পরে জিজ্ঞাস করল কত দিতে হবে? লোকটা বলল দুইজনের জন্য চারশত রিয়াল।
বুঝতে পারলাম লোক দুইটা ওদের দালাল, শেষমেশ দুইশত রিয়েল ঘুষ দিয়ে বাবুল ভাইর সাথে তার গাড়ীতে মক্কার উদ্যেশ্যে রওনা দিলাম। কিছু দূর যাবার পরেই মাগিবের আজান হল, একটা মসজিদে গাড়ী দাঁড়াল, সবাই মিলে মাগরিবের নামাজ পরে হালকা বিস্কুত-পানি খেয়ে আবারও যাত্রা।
হেরেম শরীফের খুব কাছেই বাবুল ভাইর বাসা। এশা নামাজের আগেই আমরা তার বাসায় পৌঁছে গেলাম। এখন আর ঐ বাসা গুলো নাই, সেই সময় পাহারের কোল ঘেঁষে অনেক ছোট ছোট বাড়ি ছিল, যেখানে বেশীর ভাগই বাঙ্গালী, বিশেষ করে বর্মার বাঙ্গালী মুসলিম যাদের আয় খুবই স্বল্প তারাই থাকতো। এখন ওখানে বিশাল বড় বড় ইমারত।
সে যাই হোক, এশার নামাজ পরে খানা খেলাম, তারপরে একটু রেস্ট নিয়ে হেরেমের দিকে যাত্রা, পায়ে হেটেই। আগে থেকেই আমার এক মামা ওখানে অবস্থান করছিলেন। হাজী সাহেব আর বাবুল ভাইর সাথে উনি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছিলেন। দশ মিনিটের মধ্যে আল্লাহর ঘরে পৌঁছে গেলাম। মামার সাথেও দেখা হল, বাবুল ভাইর কাছ থেকে বিদায় নিলাম।
আর দেখা হয়নি তবে মাঝে মাঝে কথা হত, খালার শারীরিক খোঁজ খবর নিয়েছি, খালা ছমাস ছিলেন এখানে কিন্তু আমি আর যেতে পারিনি তার কাছে। ঐ একদিনের স্মৃতি আজও ভুলতে পারিনা। ভুলতে পারিনা তার আন্তিকতার কথা। বাবুল ভাইয়ের নাম্বারটা এখন আর চালু নাই, তাই প্রায় তিন বছর ধরে খালার খবর আর জানিনা।
মামার সাথে আধা ঘণ্টা কথা বললাম হেরেমের সামনের খোলা মাঠে বসে। আগে একবার দেখা হয়েছিল বাংলাদেশে তখন এতোটা আন্তরিক ভাবে কথা বলার সুযোগ ছিল না। তিনি আমার বউয়ের মামা, তাই আমারও ।
দেশের টুকিটাকি খোঁজখবর আর নিজেদের কিছু কথা। তিনি আমাকে অভয় দিলেন। নিজের কথা বললেন, তিনি একজন কোরানের হাফেজ, যিনিও ওমরায় এসে অনেক কষ্ট করেছেন নিজের সেই দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা অকপটে বললেন। আর পরিশেষে জানালেন তার উত্থানের কথা, কি ভাবে প্রতিকূল অবস্থা থেকে আজ এই পর্যায়ে - আমাকে জানান হল এখন তিনি একটা বড় মসজিদের ইমাম। আল্লাহর রাহমাতেই সব কিছু সম্ভব হয়েছে, আমাকেও বললেন , ভেঙ্গে পরনা। সব ঠিক হয়ে যাবে ইন'শা’আল্লাহ।
মামার কথাগুলো টনিকের মতো লাগছিল। মনের জোড়টা কয়েকগুণ বেড়ে গেল। কথা শেষ করে হেরেমে প্রবেশ করলাম। ওমরা করার সব কিছু নিখুঁত ভাবে তিনি শিখিয়ে দিলেন, আমি তাঁকে অনুসরণ করলাম। তওয়াফ শেষ করে হেরেমের দেয়ালে বুক লাগিয়ে অঝোর ধারায় কাঁদতে লাগলাম। কোথায় লুকিয়েছিল এতো পানি? কিশের জন্য বেড়িয়ে আসছে তাও জানিনা! থামাতে পারছিলাম না, আশপাশ থেকেও শুধু কান্নার আওয়াজ। পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্রতম স্থানে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ প্রতিটা মুহূর্তে কি পরিমান অশ্রু বিসর্জন দেয় এখানে যারা না আসে তারা কল্পনাও করতে পারবেনা। এতো শান্তিময় এতো সুশৃঙ্খল স্থান আর কি হতে পারে? আল্লাহর সরাসরি পরিচালনা ছাড়া যেখানে প্রতিদিন লাখো নারীপুরুষের পদচারনা সেখানে এতো সুন্দর শৃঙ্খলা মানুষের পক্ষে দেয়া সম্ভব কি?
ওমরার আনুস্ঠানিকতা শেষে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছি,, যতবার ওখানে গিয়েছি ততবারই এই প্রশ্ন মনের মাঝে উকি দিয়েছে ।
চলবে-
এক পর্যায়ে দুজন বাংলাদেশী আমার কাছে এসে দাঁড়াল। আমাকে বলল, আপনি নতুন আসছেন? বললাম, জী। বলল এক কাজ করেন ওদের কিছু টাকা দিয়ে দেন ওরা চলে যাবে। আমি বললাম- কেন? উত্তর দিল- এখানে কিছুই বলার নাই, টাকা না দিলে ওদের সাথেই যেতে হবে। বাড়াবাড়ি না করে আপনার ভাইকে বলুন। আমি বাবুল ভাইকে বললাম, তিনি প্রথমে রাজি হয়নি পরে জিজ্ঞাস করল কত দিতে হবে? লোকটা বলল দুইজনের জন্য চারশত রিয়াল।
বুঝতে পারলাম লোক দুইটা ওদের দালাল, শেষমেশ দুইশত রিয়েল ঘুষ দিয়ে বাবুল ভাইর সাথে তার গাড়ীতে মক্কার উদ্যেশ্যে রওনা দিলাম। কিছু দূর যাবার পরেই মাগিবের আজান হল, একটা মসজিদে গাড়ী দাঁড়াল, সবাই মিলে মাগরিবের নামাজ পরে হালকা বিস্কুত-পানি খেয়ে আবারও যাত্রা।
হেরেম শরীফের খুব কাছেই বাবুল ভাইর বাসা। এশা নামাজের আগেই আমরা তার বাসায় পৌঁছে গেলাম। এখন আর ঐ বাসা গুলো নাই, সেই সময় পাহারের কোল ঘেঁষে অনেক ছোট ছোট বাড়ি ছিল, যেখানে বেশীর ভাগই বাঙ্গালী, বিশেষ করে বর্মার বাঙ্গালী মুসলিম যাদের আয় খুবই স্বল্প তারাই থাকতো। এখন ওখানে বিশাল বড় বড় ইমারত।
সে যাই হোক, এশার নামাজ পরে খানা খেলাম, তারপরে একটু রেস্ট নিয়ে হেরেমের দিকে যাত্রা, পায়ে হেটেই। আগে থেকেই আমার এক মামা ওখানে অবস্থান করছিলেন। হাজী সাহেব আর বাবুল ভাইর সাথে উনি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছিলেন। দশ মিনিটের মধ্যে আল্লাহর ঘরে পৌঁছে গেলাম। মামার সাথেও দেখা হল, বাবুল ভাইর কাছ থেকে বিদায় নিলাম।
আর দেখা হয়নি তবে মাঝে মাঝে কথা হত, খালার শারীরিক খোঁজ খবর নিয়েছি, খালা ছমাস ছিলেন এখানে কিন্তু আমি আর যেতে পারিনি তার কাছে। ঐ একদিনের স্মৃতি আজও ভুলতে পারিনা। ভুলতে পারিনা তার আন্তিকতার কথা। বাবুল ভাইয়ের নাম্বারটা এখন আর চালু নাই, তাই প্রায় তিন বছর ধরে খালার খবর আর জানিনা।
মামার সাথে আধা ঘণ্টা কথা বললাম হেরেমের সামনের খোলা মাঠে বসে। আগে একবার দেখা হয়েছিল বাংলাদেশে তখন এতোটা আন্তরিক ভাবে কথা বলার সুযোগ ছিল না। তিনি আমার বউয়ের মামা, তাই আমারও ।
দেশের টুকিটাকি খোঁজখবর আর নিজেদের কিছু কথা। তিনি আমাকে অভয় দিলেন। নিজের কথা বললেন, তিনি একজন কোরানের হাফেজ, যিনিও ওমরায় এসে অনেক কষ্ট করেছেন নিজের সেই দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা অকপটে বললেন। আর পরিশেষে জানালেন তার উত্থানের কথা, কি ভাবে প্রতিকূল অবস্থা থেকে আজ এই পর্যায়ে - আমাকে জানান হল এখন তিনি একটা বড় মসজিদের ইমাম। আল্লাহর রাহমাতেই সব কিছু সম্ভব হয়েছে, আমাকেও বললেন , ভেঙ্গে পরনা। সব ঠিক হয়ে যাবে ইন'শা’আল্লাহ।
মামার কথাগুলো টনিকের মতো লাগছিল। মনের জোড়টা কয়েকগুণ বেড়ে গেল। কথা শেষ করে হেরেমে প্রবেশ করলাম। ওমরা করার সব কিছু নিখুঁত ভাবে তিনি শিখিয়ে দিলেন, আমি তাঁকে অনুসরণ করলাম। তওয়াফ শেষ করে হেরেমের দেয়ালে বুক লাগিয়ে অঝোর ধারায় কাঁদতে লাগলাম। কোথায় লুকিয়েছিল এতো পানি? কিশের জন্য বেড়িয়ে আসছে তাও জানিনা! থামাতে পারছিলাম না, আশপাশ থেকেও শুধু কান্নার আওয়াজ। পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্রতম স্থানে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ প্রতিটা মুহূর্তে কি পরিমান অশ্রু বিসর্জন দেয় এখানে যারা না আসে তারা কল্পনাও করতে পারবেনা। এতো শান্তিময় এতো সুশৃঙ্খল স্থান আর কি হতে পারে? আল্লাহর সরাসরি পরিচালনা ছাড়া যেখানে প্রতিদিন লাখো নারীপুরুষের পদচারনা সেখানে এতো সুন্দর শৃঙ্খলা মানুষের পক্ষে দেয়া সম্ভব কি?
ওমরার আনুস্ঠানিকতা শেষে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছি,, যতবার ওখানে গিয়েছি ততবারই এই প্রশ্ন মনের মাঝে উকি দিয়েছে ।
চলবে-
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
জিয়াউর ০৯/১১/২০১৩cholche choluk....
-
ইসমাত ইয়াসমিন ০৯/১১/২০১৩আপনার লেখা পরার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। আপনার লেখার হাত খুব সুন্দর। সবাই মনের দুঃখ কস্ট টাকে কালির অক্ষরে ফুটিয়ে তুলতে পারেনা, আপনি পেরেছেন। শুভকামনা রইল,