জেদ্দা থেকে বলছি ( পর্ব-১ )
গত সাত বছর আগে অবৈধ পথে এখানে আসি একান্ত বাধ্য হয়েই। বিশ্বাস করেছিলাম একজন নিকট আত্মীয়কে। তার হাতেই তুলে দিয়ে ছিলাম শেষ সম্বল টুকু এক মাসের মধ্যে সৌদি আরবে পাঠাবেন এমন প্রতিশ্রুতি পেয়ে। কিন্তু তিনি সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। দুই বছর পাগলের মতো তার পিছনে ছুটেছিলাম সোনার হরিণ ধরবো বলে। কখনও বলেছেন পনের দিনের মধ্যে ভিসা আসবে কখনও বা বলছে এক সপ্তাহ। এই ভাবে ওয়াদা আর ফুঁড়ায় না। আমিও কোন কাজে নিজেকে আবধ্য রাখতে পারিনি। অবশেষে দুবছর পরে আমাকে জানানো হল ভিসা বন্ধ, ওমরা ভিসা চালু আছে যদি রাজি থাকো তবে ব্যবস্থা করতে পারি।
আমার তখন আর কোন বিকল্প ছিল না। কারণ দু'বছর বেকার। এক মাসের মধ্যে বিদেশ যাবো বলে কোন কাজও ধরতে পারিনি। সংসার চলেছে ধার আর সুদের টাকায়। বিদেশ যাবো বলে ধার চাইলেই পেয়েছি । বছর চারেক আগেই বিয়েটা করে ফেলেছিলাম। তাই খরচাটা নেহাত কম ছিল না। যে পরিমাণ ঋন আমার মাথায় বাংলাদেশে থেকে এই ঋন জীবনেও শোধ করতে পারবনা এটা বুঝে গেছিলাম তাই রাজি হয়ে গেলাম জীবনের চরম প্রতিকূলতায় নিজকে ঠেলে দিতে।
আমার ঐ আত্মীয় তখন জেদ্দাতেই থাকেন, আমাকে ফোন করে বললেন তুমি ঢাকায় যাও। পুরাণ পল্টনে তার পরিচিত এক আদম ব্যবসায়ীর ঠিকানা দিয়েছিলেন। তার কথা মতো ঢাকা এলাম, বউয়ের সামান্য গহনা ছিল, ওইটুকু বন্দক রেখে যা পেলাম তাই নিয়ে ঢাকা এসে হাজির হলাম। আমি তখন লোক চক্ষুর অন্তরালে, কারণ অনেক পাওনাদার আমাকে হন্য হয়ে খুঁজছে।
ঢাকা এসেই ঐ আদম বেপারীর কাছে গেলাম, তিনি আমার ছবি নিলেন আর বললেন আগে পাসপোর্ট করি আগামী সপ্তাহে দেখা করবেন। তার কথা মতো এলাম কিন্তু তিনি আর অফিসে নাই, তার কর্মচারী আছে দু'জন ওরা আমাকে জানাল আপনার পাসপোর্ট একটু দেরি হবে আমাদের দালাল পাঁচশত পাসপোর্টসহ র্যাবের হাতে ধরা পরছে একটু সবুর করেন। কি আর করা ! নিয়তি এখানেও আমার বিপক্ষে!
দিনের পর দিন ঢাকাতে আদমের অফিস আর মিরপুরে খালার বাসায় আসাযাওয়া করতে করতে হাতের টাকা শেষ। কোথায় টাকা পাবো ? কি হবে কিছুই বুঝতে পারছি না। তখন আমার খালা বললেন তুমি এক কাজ করো- বসে না থেকে গার্মেন্টসে ভর্তি হও। মাস শেষ কিছু টাকা আসবে আর তোমার টেনশনও কমবে, বিদেশের খবর হলে চলে যেও আর না হলেও কাজ শিখতে পারলে ভালো বেতন পাবে। ভেবে দেখলাম বুদ্ধিটা মন্দ না। গাজীপুরে কোণাবাড়িতে তার এক পরিচিত লোক যিনি একটা গার্মেন্টসের পি এম, তাকে অনুরোধ করল আমাকে যেন একটা কাজের ব্যবস্থা করে দেয়, অতপর নতুন ঠিকানায় জীবন তরী । গাজীপুর কোণাবাড়িতে চলে গেলাম শূন্য হাতে, সপ্তা খানিকের মধ্যে বউ এসে হাজির সে তখন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা । এ যেন মরার উপর খরার ঘা।
সেই দিনগুলোর কথা আজও মনে পড়লে শরীরে কাঁটা ধরে। জীবনের বাস্তবতা ঠিক তখন উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম। আমার স্ত্রী বায়না ধরল সেও চাকরি করবে, আমাকে একা কাজ করতে দেবে না, আমাকে যুক্তি দিতে লাগল ভারি কাজ করতে পারবোনা কিন্তু বসে বসে বোতাম তো লাগাতে পারবো! তার শরীরের কথা মনে করিয়ে দিয়ে অনেক বুঝিয়ে তাকে থামিয়ে রাখলাম আর আমার জীবনের প্রকৃত বন্ধুকে চিনে নিলাম, আমার কষ্টে যার বুকে কান্নার তুফান ওঠে, আমার দুঃখকে সমান ভাগ করে নিতে যে কঠিন বিপদেও নিজেকে সপে দিতে রাজি, যাকে বিয়ের পর থেকে ভাল একটা শাড়ি কিনে দিতে পারিনি, যার কোন বায়না নাই, অনুযোগ নাই।
গার্মেন্টসে কাজ করতে লাগলাম প্রথম মাসের বেতন পাবো এই মুহূর্তে ঢাকা থেকে ফোন আসল আমার তিন দিন পরে আমার ফ্লাইট। আমি যেন আজই তাদের সাথে দেখা করি। তখনই ঢাকার পথে রওনা দিলাম। আবার খালার বাসায়, বউকে তার কাছে রেখে আমি জেদ্দার উদ্যেশ্যে যাত্রা করি ২০০৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর।
(চলবে- )
আমার তখন আর কোন বিকল্প ছিল না। কারণ দু'বছর বেকার। এক মাসের মধ্যে বিদেশ যাবো বলে কোন কাজও ধরতে পারিনি। সংসার চলেছে ধার আর সুদের টাকায়। বিদেশ যাবো বলে ধার চাইলেই পেয়েছি । বছর চারেক আগেই বিয়েটা করে ফেলেছিলাম। তাই খরচাটা নেহাত কম ছিল না। যে পরিমাণ ঋন আমার মাথায় বাংলাদেশে থেকে এই ঋন জীবনেও শোধ করতে পারবনা এটা বুঝে গেছিলাম তাই রাজি হয়ে গেলাম জীবনের চরম প্রতিকূলতায় নিজকে ঠেলে দিতে।
আমার ঐ আত্মীয় তখন জেদ্দাতেই থাকেন, আমাকে ফোন করে বললেন তুমি ঢাকায় যাও। পুরাণ পল্টনে তার পরিচিত এক আদম ব্যবসায়ীর ঠিকানা দিয়েছিলেন। তার কথা মতো ঢাকা এলাম, বউয়ের সামান্য গহনা ছিল, ওইটুকু বন্দক রেখে যা পেলাম তাই নিয়ে ঢাকা এসে হাজির হলাম। আমি তখন লোক চক্ষুর অন্তরালে, কারণ অনেক পাওনাদার আমাকে হন্য হয়ে খুঁজছে।
ঢাকা এসেই ঐ আদম বেপারীর কাছে গেলাম, তিনি আমার ছবি নিলেন আর বললেন আগে পাসপোর্ট করি আগামী সপ্তাহে দেখা করবেন। তার কথা মতো এলাম কিন্তু তিনি আর অফিসে নাই, তার কর্মচারী আছে দু'জন ওরা আমাকে জানাল আপনার পাসপোর্ট একটু দেরি হবে আমাদের দালাল পাঁচশত পাসপোর্টসহ র্যাবের হাতে ধরা পরছে একটু সবুর করেন। কি আর করা ! নিয়তি এখানেও আমার বিপক্ষে!
দিনের পর দিন ঢাকাতে আদমের অফিস আর মিরপুরে খালার বাসায় আসাযাওয়া করতে করতে হাতের টাকা শেষ। কোথায় টাকা পাবো ? কি হবে কিছুই বুঝতে পারছি না। তখন আমার খালা বললেন তুমি এক কাজ করো- বসে না থেকে গার্মেন্টসে ভর্তি হও। মাস শেষ কিছু টাকা আসবে আর তোমার টেনশনও কমবে, বিদেশের খবর হলে চলে যেও আর না হলেও কাজ শিখতে পারলে ভালো বেতন পাবে। ভেবে দেখলাম বুদ্ধিটা মন্দ না। গাজীপুরে কোণাবাড়িতে তার এক পরিচিত লোক যিনি একটা গার্মেন্টসের পি এম, তাকে অনুরোধ করল আমাকে যেন একটা কাজের ব্যবস্থা করে দেয়, অতপর নতুন ঠিকানায় জীবন তরী । গাজীপুর কোণাবাড়িতে চলে গেলাম শূন্য হাতে, সপ্তা খানিকের মধ্যে বউ এসে হাজির সে তখন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা । এ যেন মরার উপর খরার ঘা।
সেই দিনগুলোর কথা আজও মনে পড়লে শরীরে কাঁটা ধরে। জীবনের বাস্তবতা ঠিক তখন উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম। আমার স্ত্রী বায়না ধরল সেও চাকরি করবে, আমাকে একা কাজ করতে দেবে না, আমাকে যুক্তি দিতে লাগল ভারি কাজ করতে পারবোনা কিন্তু বসে বসে বোতাম তো লাগাতে পারবো! তার শরীরের কথা মনে করিয়ে দিয়ে অনেক বুঝিয়ে তাকে থামিয়ে রাখলাম আর আমার জীবনের প্রকৃত বন্ধুকে চিনে নিলাম, আমার কষ্টে যার বুকে কান্নার তুফান ওঠে, আমার দুঃখকে সমান ভাগ করে নিতে যে কঠিন বিপদেও নিজেকে সপে দিতে রাজি, যাকে বিয়ের পর থেকে ভাল একটা শাড়ি কিনে দিতে পারিনি, যার কোন বায়না নাই, অনুযোগ নাই।
গার্মেন্টসে কাজ করতে লাগলাম প্রথম মাসের বেতন পাবো এই মুহূর্তে ঢাকা থেকে ফোন আসল আমার তিন দিন পরে আমার ফ্লাইট। আমি যেন আজই তাদের সাথে দেখা করি। তখনই ঢাকার পথে রওনা দিলাম। আবার খালার বাসায়, বউকে তার কাছে রেখে আমি জেদ্দার উদ্যেশ্যে যাত্রা করি ২০০৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর।
(চলবে- )
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী. ০৭/১১/২০১৩জানি এটা বাস্তবতা।কেননা গল্প কখনোই এমন হয়না।এর প্রতিটি বর্ণে প্রতিটি শব্দে রয়েছে হাজার দিশেহারা পথহারা অভাগাা মানুষের. করুন আর্তনাদ।ভাই আমি জানি প্রবাস কত কঠিন, যাদের তকদির করেছে তাদের বন্ধু হীন।আপনি লিখতে থাকুন।ভালবাসা সবসময় আপনার জন্য।
-
אולי כולנו טועים ০৭/১১/২০১৩অসাধারণ লিখেছেন।
আমি ঠিক জানিনা এটি গল্প নাকি বাস্তব আপনার নিজের জীবনের। আমি শুধু একটি কথাই বলব -
অবৈধভাবে বিদেশ যাওয়া বা কোনো কাজই ঠিক নয়।
কত হাজার মৃত্যুই তো খবরে পড়ি এই অবৈধভাবে বিদেশ পারি দেয়া শ্রমিকদের। -
ইসমাত ইয়াসমিন ০৭/১১/২০১৩সুন্দর বর্ণনা, চোখ ভিজে গেল, কারন এ কাহিনী যে অনেকের জীবনের সাথে মিলে যাবে। ভাইয়া অপেক্ষায় থকলাম ...শুভকামনা রইল।
-
কবীর হুমায়ূন ০৭/১১/২০১৩বাস্তবতার এমন সুন্দর প্রকাশ দুর্দান্ত সাহসী আর প্রচন্ড সৎ-মানসিকতার না হলে তুলে আনা যায় না। পড়তে পড়তে জীবনের গহীনেই চলে গিয়েছিলেম। এক সময় মনে হলো- চোখটা কি ভিজে গেলো!
তোমার সহধর্মীনিকে আমার শ্রদ্ধা মাখানো ভালোবাসা দিও। তাঁকে দেখার সাধ একদিন পূরণ করবো।
আজ সকালে পড়লাম- জেদ্দাতে ৩,৯১৮ জন অভিবাসী আটক করেছে, সে দেশের পুলিশ। তোমার কী খবর? চিন্তিত ও মনোকষ্টে আছি।
ভালো থেকো কামনা করি। -
rahat siddiki ০৬/১১/২০১৩theme thakar name jibon na...jibone cholar pothe onk badha- bipotti ashbe ar amra aita shojjjo korey samne agabo... apner life er sob kishuy jani ami bt tapor o akhon shune kmon jeno sorir er lom khara hoye gese......
amar suggestion hocche ondhokar joto ghobir hobe diner alo toto kache ashbe...insha allah valo kishu amader jonno wait kortese aita vebe nijeke alwasy santona dewa dorkar... -
আহমাদ সাজিদ ০৬/১১/২০১৩ভাল লাগল বর্ণনাধারা। আশা করি শেষ করতে পারবে তুমি বাকি পর্বগুলো ভালভাবেই। ধন্যবাদ।
-
Înšigniã Āvî ০৬/১১/২০১৩jiboner kotha.......
baki porber opekhai -
ফাল্গুনী আলম ০৬/১১/২০১৩জীবন আসলেই নির্মম। ভালো লাগলো প্রকাশ ভঙ্গিটা...