গদ্য কবিতা ও পাঠক সম্পর্কিত ঠিক ভুল
"গদ্য কবিতার আলাদা একটা ছন্দ থাকে, যা খালি চোখে আনমনে দেখা যায় না আর শোনাও যায় না । গদ্য কবিতা গভীর অনুভবের রচনা, এতে মিশে যেতে পারলেই হৃদয় শিহরিত হয় , তা বোঝা যায় বা মনে আনন্দ দেয় , তা ছাড়া বই পড়ার মতন গড়গড় করে গদ্য কবিতা পড়ে কিছুই অনুভব করা যায় না ।"
"গদ্য কবিতা শান্ত নীবির নিঝুম রাতের মতো ।
নীরবতা পালনের ছলে ধিরে ধিরে পড়লে তবেই এর মহাত্ম বোঝা যায় ।"
যদিও একালের নতুন ছোট ছোট লেখক লেখিকা দু'চার লাইন অন্তমিল রেখে মনের ভাব প্রকাশকেই ছন্দের কবিতা ভাবে, হয়তো তারা অনেকেই এই অনুপ্রাস কে এই ছন্দবদ্ধ কাব্য ভাবে । যদিও একালের শ্রেষ্ঠ কবিতা কেবল গদ্য কবিতা, এবং বিশাল আধুনিকও বটে । ছন্দের কাল পেড়িয়ে গেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় থেকেই । তবু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং সমকালীন কবি/লেখক রা বহু অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত, পয়ার ষ, মহাপয়ার, সনেট, ত্রিপদি কবিতা লিখেছেন, একালেও বহু কবি লিখছেন । তবু একটাই কথা ফিরে ফিরে আসে গদ্য কবিতা আধুনিক কালের কবিতা ।
"যতটা সহজ ভাবা হয় গদ্য কবিতা কে, এক বিন্দু ততটা সহজ নয়, শুধু লাইন গুলোই গল্পের মতো এলোমেলো থাকে, এলো মেলো চিন্তাও থাকে বটে কিন্তু তা অদৃশ্য অনুভবের শিকলে বাঁধা ।"
"গল্প লিখলেও গদ্য কবিতা রচনা করা হয় না, এর ভিতর অন্যরকম আর্ট আছে । গদ্য কাব্য রচনা মানে শিল্পীর পরিচয় দেওয়া, যদি তা যতার্থ গদ্যকাব্য হয় । এর ভিতর অন্য বৈশিষ্ট লুকিয়ে থাকে যা সকল পাঠক বা লেখক ধরতে পারে না । যারা ধরতে পারে তারা নিশ্চিত সাহিত্য প্রেমিক অথবা গভীর ভাবে সাহিত্য তথা কাব্যকে অনুভব করেছেন এবং নিবীর ভাবে কাব্যের সাথে জড়িয়ে গেছেন ।"
আপাতত দৃষ্টিতে গদ্য কবিতা কিছু ছন্নছাড়া লাইন, কিন্তু মন সেই লাইনে এনে দেখলে অন্য পরিচয় পাওয়া যায় নিজের, গদ্য রচনা থেকে ।
যেমন ধরা যায় - " আমার এ শরীর রাতের আঁধারে, দুঃস্বপ্নের মতন তোমাকে ছুঁয়ে দিয়েছে বহুবার,
রজনীগন্ধা সুবাসে অশরীরী সহবাসে তবু এ মন
তোমার মনটি পারেনি ছুঁতে ---- আজও তাই তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখ খোঁজে
রাত্রি সরিয়ে, তোমার হৃদয় দুয়ার ।"
এই কথা গুলি মন দিয়ে পড়লেই কেবল অন্তর্নিহিত অর্থ খুঁজে পাই তা সরল রুপে লিখলে অনেকটা গল্পের মত লাগবে, কিন্তু বাক্য গুলি এভাবেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একটু অন্য স্বদের ভাব রেখে লিখলে তবে তা কাব্য রুপ পাই এবং একটি অনুভূতি মূলক স্বাদও পাওয়া যায় । আর যদি এই কথা গুলিই গল্পের মতন হুড়মুড় করে পড়ি খামখেয়ালিপনায় তবে তা গল্পও বোধহয় লাগে না, এলো মেলো ফাল্তু কথায় লাগে ।
কাজেই এটুক স্পষ্ট যে গদ্য কবিতার ভাব,ছন্দ,মাত্রা,পঙক্তি আর বিন্যাস অক্ষরবৃত্ত কিংবা সনেট জাতিয় কিংবা পয়ার জাতিয় কবিতার মতন নয়, এর সমস্ত ব্যাপার টাই অন্যরকম ভাবনাময় গভীর এক । পাঠকের চিন্তা শক্তি, পঠন ধরন ও সাহিত্যের প্রতি আনুগত্য থাকার উপর নির্ভরশীল ।
ছন্দযুক্ত কাব্য আমিও রচনা করি এবং এও আমার অত্যন্ত প্রিয়, ছন্দহীন কাব্যে রস থাকে না । কিন্তু ভালো করে বিচার করে দেখলে এটা বোঝা যায় যে গদ্য কবিতার ও একটি ছন্দ থাকে, তা অন্তমিল হোক, অনুপ্রাষ হোক বা শ্লেষ । ছন্দ বিষয় টা অনেক বড়, এক জন সাহিত্যিকের এ বিষয়ে সাধারন দক্ষতা থাকে, সকল পাঠকের এ বিষয়ে জ্ঞান নাও থাকতে পারে । ছন্দ কেবল কাব্যে নয় গল্পেও থাকে , তা আবিষ্কার করার মতো দক্ষতা প্রয়োজন হয় । তবে আমি সেখানে বলেছি মাত্রা বৃত্ত বা অক্ষর বৃত্ত যে ছন্দ আমরা আজ কাল কাব্যে ব্যবহার করি তা প্রাচিন কালের আধুনিক রচনার প্রধান বৈশিষ্ট ছিল । একালের কাব্যে তা খুব কম দেখা যায়, কেননা আধুনিক কবিতা কেবল গদ্যকেই বলা হয়েছে সেকালে, স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ই বলেছেন । এবং এও বলেছেন যে " গদ্য কবিতা বাঁধন ছাড়া কবিতা" এর ভিতরেও ছন্দ বিরাজমান, তা অলংকারে সজ্জিত হতে পারে আবার কেবল ছন্দের কোনো একটি নিয়ম যুক্ত ।
সেকালে অর্থাৎ আধুনিক কালের পূর্বের কবি বিহারীলাল চক্রবর্তী, ঈশ্বর গুপ্ত প্রমুখ সাহিত্যিক গন সে সময় ছন্দযুক্ত কাব্য রচনা করে বিখ্যাত হয়েছেন, সেটা সেকালে আধুনিক ছিলো । একালে তা যথেষ্ট কমেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গদ্য ছন্দ, মধুসূদনের অমিত্রাক্ষর ছন্দ এসে । একালে ছন্দযুক্ত কাব্যের তুলনায়, গদ্য কাব্যকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়, একালের বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিক গনের রচনাতে দেখবেন গদ্য কবিতা কতটা যুক্তিযুক্ত । কবি সুনীল গঙ্গোপাযায়, কবি জয় গোস্বামী, কবি শ্রীজাত এবং তসলিমা নাসরিন কে সকলেই জানেন, তাঁরাও ছন্দযুক্ত কাব্য রচনা করেছেন এবং গদ্য রচনাও করেছেন তা বিশেষ ভাবে আধুনিক একারনেই যে একালের কবিরাই এ ধরনের রচনার স্রষ্ঠা (যদিও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গদ্য কবিতার জন্মদাতা) । সেকালের কবিরা বিহারীলাল, ঈশ্বর গুপ্ত কিন্তু গদ্য কবিতা লেখেন নি । তাঁরদের এ বিষয়ে ধারনা ছিল না ।
আমরা বিভিন্ন "সাহিত্য পত্রিকা" গুলোতে দেখতে পাই প্রথম পাতা গুলোতে কেবল অখ্যাত লেখক হলেও গদ্য কবিতাই ছাপা হয় বিশিষ্ট কবিদের ছন্দযুক্ত কবিতাও শেষের পাতায় । এমনকি এটাও ভালো করে দেখতে পাই যে যখন একটি শ্রেষ্ট ছন্দযুক্ত কবিতা সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশের জন্য পাঠানো হয় তখন সম্পাদক মহাশয় তা এত ভালো লেখা দেখেও শেষ পাতায় ছাপায় এবং যখন নিকৃষ্ঠ মানের গদ্য কবিতা পাঠানো হয় তখন তা প্রথম পাতায় প্রকাশ পাই । এর থেকে সবটুকু না বোঝা গেলেও ---
এটুক বোঝা যায় গদ্য কবিতা কতটা আধুনিক তথা একালের জন্য গুরুত্বপূর্ণ । আমাকে একজন বিশিষ্ট কবি বলেছিলেন (যখন আমি ছন্দের কবিতা লিখতাম) --- " আপনি গদ্য কবিতা লিখুন আপনার ভাষা ভালো, একালে গদ্য কবিতাকে আধুনিক মানা হয়" তার পর আমি গদ্য কবিতা নিয়ে বেশ চর্চা শুরু করি, তার কিছু অভিজ্ঞতা প্রকাশ এখানে ।
গ্রহন যোগ্য কথা বলেছি কি জানি না, তবে যেটা বাস্তব এবং প্রমানিত তা বলেছি । ছন্দের সময় পেড়িয়ে গেছে সেই রবীন্দ্রনাথের সময়েই বলতে আমি শুধু এটুক বুঝিয়েছি যে --- একালে গদ্য কবিতা অধিক খ্যাত এবং এর স্রষ্ট্রা রবীন্দ্রনাথ তিনিই শেষ প্রাচীন কালের এবং তিনিই শুরু আধুনিক কালের (যদিও ঈশ্বর গুপ্তের সময় কাল থেকে আধুনিক যুগ শুরু হয়) । একালের খ্যাতনামা সাহিত্যিক তথা সম্পাদক মন্ডলীরা গদ্য কবিতাকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন । ছন্দ কবিতা একালের বিখ্যাত কবিরাও লেখেন, তবে তা প্রাচীন কালের বৈশিষ্ট । আধুনিক কালে অনেক কিছুই বদলে এসেছে সেকাল আর এ কালের ব্যবধান খুব । যেমন ধরুন সেকালে কবিতা ছিল - সাধু ভাষায় কিন্তু একালে চলিত ভাষা, যদিও ছোট ছোট অখ্যাত বহু লেখক তাদের লেখায় সাধু ভাষা ব্যবহার করেন, তবে আধুনিক কালে খ্যাত কবিরা তা করেন না । এমনকি আমি এখনকার উঠতি কিছু লেখককে দেখেছি সাধু আর চলিত ভাষা মিশিয়ে কবিতা রচনা করতে, "গুরুচন্ডালি আরকি" । তবে আধুনিক সাহিত্য এসব মানে না । চলিত ভাষায় গদ্য কবিতা একালের কবিতা, এবং চলিত ভাষা,সাধু ভাষার ছন্দের কবিতা কিছুটা পুরানো । এটাই আমার কথা । সকলের কাছে, সঠিক নাও লাগতে পারে তবে এটাই বাস্তব সত্য ।
হ্যাঁ, পাঠকরা তবে একটু মশলাও পছন্দ করেন । গদ্য কবিতায় হয়তো একটু মশলা কম থাকে, তাই পাঠকশ্রেনী দেখেও না দেখার মতন চলে যান । কখনো কখনো গদ্য কবিতার প্রথম দু'এক লাইন পড়ে তাতে যদি কোনো ছন্দের দোলা অনুভব না করতে পারেন তবে তো আগেই সে লেখা পরিত্যাগ । তবে এমনো বেশ কিছু পাঠক আছেন যারা কবিতাকে হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে পারেন, তারাই কেবল গদ্য কবিতা পড়ার পর, মতামত দিতে বাধ্য হন । তবে একালে কিছু সংখক পাঠক/পাঠিকা যেমন ছন্দযুক্ত কবিতা চান, তেমনি কিছু সংখক পাঠক/পাঠিকা গদ্য কবিতা চান । কেননা এর মাঝে এক অন্য তৃপ্ততা আছে । হ্যাঁ তবে গদ্য কবিতা, গদ্য কবিতার মতন লিখতে হবে, যেন তা পড়ামাত্র শরীরে শিহরণ লাগে, হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, কখনো চোখে জল, কখনো দীর্ঘশ্বাস । এমন ধরনের লেখক কম আমার মনে হয় যিনি লেখার মাধ্যমে পাঠক/পাঠিকাকে বশ করতে পারেন, তাই হয়তো গদ্য কবিতা পড়ার মতো পাঠকও কম ।
Mohan Das
26.02.2020
"গদ্য কবিতা শান্ত নীবির নিঝুম রাতের মতো ।
নীরবতা পালনের ছলে ধিরে ধিরে পড়লে তবেই এর মহাত্ম বোঝা যায় ।"
যদিও একালের নতুন ছোট ছোট লেখক লেখিকা দু'চার লাইন অন্তমিল রেখে মনের ভাব প্রকাশকেই ছন্দের কবিতা ভাবে, হয়তো তারা অনেকেই এই অনুপ্রাস কে এই ছন্দবদ্ধ কাব্য ভাবে । যদিও একালের শ্রেষ্ঠ কবিতা কেবল গদ্য কবিতা, এবং বিশাল আধুনিকও বটে । ছন্দের কাল পেড়িয়ে গেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় থেকেই । তবু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং সমকালীন কবি/লেখক রা বহু অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত, পয়ার ষ, মহাপয়ার, সনেট, ত্রিপদি কবিতা লিখেছেন, একালেও বহু কবি লিখছেন । তবু একটাই কথা ফিরে ফিরে আসে গদ্য কবিতা আধুনিক কালের কবিতা ।
"যতটা সহজ ভাবা হয় গদ্য কবিতা কে, এক বিন্দু ততটা সহজ নয়, শুধু লাইন গুলোই গল্পের মতো এলোমেলো থাকে, এলো মেলো চিন্তাও থাকে বটে কিন্তু তা অদৃশ্য অনুভবের শিকলে বাঁধা ।"
"গল্প লিখলেও গদ্য কবিতা রচনা করা হয় না, এর ভিতর অন্যরকম আর্ট আছে । গদ্য কাব্য রচনা মানে শিল্পীর পরিচয় দেওয়া, যদি তা যতার্থ গদ্যকাব্য হয় । এর ভিতর অন্য বৈশিষ্ট লুকিয়ে থাকে যা সকল পাঠক বা লেখক ধরতে পারে না । যারা ধরতে পারে তারা নিশ্চিত সাহিত্য প্রেমিক অথবা গভীর ভাবে সাহিত্য তথা কাব্যকে অনুভব করেছেন এবং নিবীর ভাবে কাব্যের সাথে জড়িয়ে গেছেন ।"
আপাতত দৃষ্টিতে গদ্য কবিতা কিছু ছন্নছাড়া লাইন, কিন্তু মন সেই লাইনে এনে দেখলে অন্য পরিচয় পাওয়া যায় নিজের, গদ্য রচনা থেকে ।
যেমন ধরা যায় - " আমার এ শরীর রাতের আঁধারে, দুঃস্বপ্নের মতন তোমাকে ছুঁয়ে দিয়েছে বহুবার,
রজনীগন্ধা সুবাসে অশরীরী সহবাসে তবু এ মন
তোমার মনটি পারেনি ছুঁতে ---- আজও তাই তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখ খোঁজে
রাত্রি সরিয়ে, তোমার হৃদয় দুয়ার ।"
এই কথা গুলি মন দিয়ে পড়লেই কেবল অন্তর্নিহিত অর্থ খুঁজে পাই তা সরল রুপে লিখলে অনেকটা গল্পের মত লাগবে, কিন্তু বাক্য গুলি এভাবেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একটু অন্য স্বদের ভাব রেখে লিখলে তবে তা কাব্য রুপ পাই এবং একটি অনুভূতি মূলক স্বাদও পাওয়া যায় । আর যদি এই কথা গুলিই গল্পের মতন হুড়মুড় করে পড়ি খামখেয়ালিপনায় তবে তা গল্পও বোধহয় লাগে না, এলো মেলো ফাল্তু কথায় লাগে ।
কাজেই এটুক স্পষ্ট যে গদ্য কবিতার ভাব,ছন্দ,মাত্রা,পঙক্তি আর বিন্যাস অক্ষরবৃত্ত কিংবা সনেট জাতিয় কিংবা পয়ার জাতিয় কবিতার মতন নয়, এর সমস্ত ব্যাপার টাই অন্যরকম ভাবনাময় গভীর এক । পাঠকের চিন্তা শক্তি, পঠন ধরন ও সাহিত্যের প্রতি আনুগত্য থাকার উপর নির্ভরশীল ।
ছন্দযুক্ত কাব্য আমিও রচনা করি এবং এও আমার অত্যন্ত প্রিয়, ছন্দহীন কাব্যে রস থাকে না । কিন্তু ভালো করে বিচার করে দেখলে এটা বোঝা যায় যে গদ্য কবিতার ও একটি ছন্দ থাকে, তা অন্তমিল হোক, অনুপ্রাষ হোক বা শ্লেষ । ছন্দ বিষয় টা অনেক বড়, এক জন সাহিত্যিকের এ বিষয়ে সাধারন দক্ষতা থাকে, সকল পাঠকের এ বিষয়ে জ্ঞান নাও থাকতে পারে । ছন্দ কেবল কাব্যে নয় গল্পেও থাকে , তা আবিষ্কার করার মতো দক্ষতা প্রয়োজন হয় । তবে আমি সেখানে বলেছি মাত্রা বৃত্ত বা অক্ষর বৃত্ত যে ছন্দ আমরা আজ কাল কাব্যে ব্যবহার করি তা প্রাচিন কালের আধুনিক রচনার প্রধান বৈশিষ্ট ছিল । একালের কাব্যে তা খুব কম দেখা যায়, কেননা আধুনিক কবিতা কেবল গদ্যকেই বলা হয়েছে সেকালে, স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ই বলেছেন । এবং এও বলেছেন যে " গদ্য কবিতা বাঁধন ছাড়া কবিতা" এর ভিতরেও ছন্দ বিরাজমান, তা অলংকারে সজ্জিত হতে পারে আবার কেবল ছন্দের কোনো একটি নিয়ম যুক্ত ।
সেকালে অর্থাৎ আধুনিক কালের পূর্বের কবি বিহারীলাল চক্রবর্তী, ঈশ্বর গুপ্ত প্রমুখ সাহিত্যিক গন সে সময় ছন্দযুক্ত কাব্য রচনা করে বিখ্যাত হয়েছেন, সেটা সেকালে আধুনিক ছিলো । একালে তা যথেষ্ট কমেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গদ্য ছন্দ, মধুসূদনের অমিত্রাক্ষর ছন্দ এসে । একালে ছন্দযুক্ত কাব্যের তুলনায়, গদ্য কাব্যকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়, একালের বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিক গনের রচনাতে দেখবেন গদ্য কবিতা কতটা যুক্তিযুক্ত । কবি সুনীল গঙ্গোপাযায়, কবি জয় গোস্বামী, কবি শ্রীজাত এবং তসলিমা নাসরিন কে সকলেই জানেন, তাঁরাও ছন্দযুক্ত কাব্য রচনা করেছেন এবং গদ্য রচনাও করেছেন তা বিশেষ ভাবে আধুনিক একারনেই যে একালের কবিরাই এ ধরনের রচনার স্রষ্ঠা (যদিও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গদ্য কবিতার জন্মদাতা) । সেকালের কবিরা বিহারীলাল, ঈশ্বর গুপ্ত কিন্তু গদ্য কবিতা লেখেন নি । তাঁরদের এ বিষয়ে ধারনা ছিল না ।
আমরা বিভিন্ন "সাহিত্য পত্রিকা" গুলোতে দেখতে পাই প্রথম পাতা গুলোতে কেবল অখ্যাত লেখক হলেও গদ্য কবিতাই ছাপা হয় বিশিষ্ট কবিদের ছন্দযুক্ত কবিতাও শেষের পাতায় । এমনকি এটাও ভালো করে দেখতে পাই যে যখন একটি শ্রেষ্ট ছন্দযুক্ত কবিতা সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশের জন্য পাঠানো হয় তখন সম্পাদক মহাশয় তা এত ভালো লেখা দেখেও শেষ পাতায় ছাপায় এবং যখন নিকৃষ্ঠ মানের গদ্য কবিতা পাঠানো হয় তখন তা প্রথম পাতায় প্রকাশ পাই । এর থেকে সবটুকু না বোঝা গেলেও ---
এটুক বোঝা যায় গদ্য কবিতা কতটা আধুনিক তথা একালের জন্য গুরুত্বপূর্ণ । আমাকে একজন বিশিষ্ট কবি বলেছিলেন (যখন আমি ছন্দের কবিতা লিখতাম) --- " আপনি গদ্য কবিতা লিখুন আপনার ভাষা ভালো, একালে গদ্য কবিতাকে আধুনিক মানা হয়" তার পর আমি গদ্য কবিতা নিয়ে বেশ চর্চা শুরু করি, তার কিছু অভিজ্ঞতা প্রকাশ এখানে ।
গ্রহন যোগ্য কথা বলেছি কি জানি না, তবে যেটা বাস্তব এবং প্রমানিত তা বলেছি । ছন্দের সময় পেড়িয়ে গেছে সেই রবীন্দ্রনাথের সময়েই বলতে আমি শুধু এটুক বুঝিয়েছি যে --- একালে গদ্য কবিতা অধিক খ্যাত এবং এর স্রষ্ট্রা রবীন্দ্রনাথ তিনিই শেষ প্রাচীন কালের এবং তিনিই শুরু আধুনিক কালের (যদিও ঈশ্বর গুপ্তের সময় কাল থেকে আধুনিক যুগ শুরু হয়) । একালের খ্যাতনামা সাহিত্যিক তথা সম্পাদক মন্ডলীরা গদ্য কবিতাকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন । ছন্দ কবিতা একালের বিখ্যাত কবিরাও লেখেন, তবে তা প্রাচীন কালের বৈশিষ্ট । আধুনিক কালে অনেক কিছুই বদলে এসেছে সেকাল আর এ কালের ব্যবধান খুব । যেমন ধরুন সেকালে কবিতা ছিল - সাধু ভাষায় কিন্তু একালে চলিত ভাষা, যদিও ছোট ছোট অখ্যাত বহু লেখক তাদের লেখায় সাধু ভাষা ব্যবহার করেন, তবে আধুনিক কালে খ্যাত কবিরা তা করেন না । এমনকি আমি এখনকার উঠতি কিছু লেখককে দেখেছি সাধু আর চলিত ভাষা মিশিয়ে কবিতা রচনা করতে, "গুরুচন্ডালি আরকি" । তবে আধুনিক সাহিত্য এসব মানে না । চলিত ভাষায় গদ্য কবিতা একালের কবিতা, এবং চলিত ভাষা,সাধু ভাষার ছন্দের কবিতা কিছুটা পুরানো । এটাই আমার কথা । সকলের কাছে, সঠিক নাও লাগতে পারে তবে এটাই বাস্তব সত্য ।
হ্যাঁ, পাঠকরা তবে একটু মশলাও পছন্দ করেন । গদ্য কবিতায় হয়তো একটু মশলা কম থাকে, তাই পাঠকশ্রেনী দেখেও না দেখার মতন চলে যান । কখনো কখনো গদ্য কবিতার প্রথম দু'এক লাইন পড়ে তাতে যদি কোনো ছন্দের দোলা অনুভব না করতে পারেন তবে তো আগেই সে লেখা পরিত্যাগ । তবে এমনো বেশ কিছু পাঠক আছেন যারা কবিতাকে হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে পারেন, তারাই কেবল গদ্য কবিতা পড়ার পর, মতামত দিতে বাধ্য হন । তবে একালে কিছু সংখক পাঠক/পাঠিকা যেমন ছন্দযুক্ত কবিতা চান, তেমনি কিছু সংখক পাঠক/পাঠিকা গদ্য কবিতা চান । কেননা এর মাঝে এক অন্য তৃপ্ততা আছে । হ্যাঁ তবে গদ্য কবিতা, গদ্য কবিতার মতন লিখতে হবে, যেন তা পড়ামাত্র শরীরে শিহরণ লাগে, হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, কখনো চোখে জল, কখনো দীর্ঘশ্বাস । এমন ধরনের লেখক কম আমার মনে হয় যিনি লেখার মাধ্যমে পাঠক/পাঠিকাকে বশ করতে পারেন, তাই হয়তো গদ্য কবিতা পড়ার মতো পাঠকও কম ।
Mohan Das
26.02.2020
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আমিনুল ইসলাম সৈকত ১২/০৬/২০২১অনেক ধন্যবাদ কবি
-
সাইকান ২৪/০৪/২০২০ভালো লাগো
-
অধীতি ১২/০৪/২০২০ভালো,বলেছেন।গদ্য ছন্দে একবার মিশে যেতে পারলে তারমত ঘোর আর আসবেনা পাঠকের মনে।
-
হুসাইন দিলাওয়ার ০৯/০৪/২০২০বাহ
-
স্বপন রোজারিও (মাইকেল) ০৮/০৪/২০২০সুন্দর হয়েছে।
-
পি পি আলী আকবর ০৬/০৪/২০২০সুন্দর
-
ফয়জুল মহী ০৬/০৪/২০২০Good post