www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

সতী স্ত্রী (গল্প - প্রথম পর্ব)

।। পর্ব ১ ।।

বিয়ের পর আমি কলকাতায় একটা ফ্ল্যাটে স্ত্রী রানিকে নিয়ে ভাড়া আছি। আমার অফিস এখানেই, আমার নিজের বাড়ি থেকে এখানে ডেলিপ্যাসেঞ্জারি করতে খুব অসুবিধা হচ্ছিল। তবে রানির এখানে ভালো লাগছিলো না, ও কথায় কথায় বলে
- শহরে কত প্রবলেম ! খোলা আকাশ নেই,বাতাস নেই, বিকালে বাগানে ঘুরবো সে উপায় নেই। এভাবে কি বাঁচা যায়?  আমি তাকে বোঝায়,
- রানি,কলকাতাতে  তো হাজার হাজার মানুষ আছে, তারা বেঁচে নেই? কত সুযোগ সুবিধা বলো তো এখানে,আর আমরা তো শুধু শুধু এখানে পড়ে নেই,আমার চাকরি আছে। আর তুমি তো বলতে শহরে যারা থাকে তারা স্ট্যান্ডার্ড-স্মার্ট, তবে তুমি থাকতে চাইছো না কেন?

         রানি মৌন মুখে তাকালো,দেখে মনে হচ্ছে রাগ করেছে আমার ওপর। কিন্তু কি করবো সেটা বুঝে উঠতে পারছি না। কলকাতার মতো যায়গায় কি না সুন্দরী একটা মেয়ে থাকতে চাইছে না!
দিন দুয়েক পর আমরা আবার নিজের বাড়ি ফিরে এলাম। থাক কলকাতার সুবিধা! আমাকে প্রতিদিন জার্নি করেই অফিসে আসতে হবে। রানি বাড়িতে একাই থাকে। ওর যেখানে ভালো লাগে সেখানেই থাকতে হবে।
সন্ধ্যা বেলায় রানি ছাদে উঠে আমাকে বললো -
- দেখো, আকাশে কত তারা! ওফঃ কী সুন্দর!
রানি আনন্দে নাচতে লাগলো। দেখে আমিও খুশি হলাম, কিন্তু কষ্টটা আমার। আর ভালো লাগে না। ট্রামে বাসে যা ভিড় ।
রানি বাড়ির কাজ করতো না,তাই গোবিন্দ নামে একটা কাজের লোক রাখা ছিল। গোবিন্দর কাজ ছিল রান্না করা এবং বাসন মাজা। তাকে খবর দিতে তখনই চলে এলো, রাতের খাবার তৈরি করার জন্য।

একদিন অফিস থেকে বাড়ি ফিরেছি সবে, রানি আমাকে বললো, কাল আমার বন্ধুর জন্মদিন,দুপুরে ওর বাড়ি যেতে হবে,কিছু টাকা দাও তো।
আমি অত্যন্ত ক্ষুন্ন হলাম,রানি যেন একথা বলার অপেক্ষায় ছিল আমি কখন আসি। আমি বললাম,
- কখন নিমন্ত্রণ পেলে রানিদেবী?
রানি বললো,'সকালে।'
রানির অনেক বন্ধু-বান্ধবী আছে,সবাইকে আমি চিনি না,শুধু স্বপ্না নামে মেয়েটার সমন্ধে জানি। আমি রানিকে বললাম -
- ভালো,তো কোন্ বন্ধুর জান হঠাৎ? নাম কী তার?
-রানি কৌতুহলী হয়ে উল্টে আমাকে প্রশ্ন করলো,
- হঠাৎ বন্ধুর নাম শুনতে চাইছো কেন? এর আগে তো...
আমি তার কথায় বাধা দিয়ে বললাম
- এই দেখ,বন্ধুর বাড়ি যাবে নিমন্ত্রণ খেতে, এর আগেও বহুবার গেছো এসেছো,আজ যদি সেই বন্ধুর নামটা শুনতে চাই,তাও কি অপরাধ?
রানি মৃদু স্বরে বললো 'অরবিন্দ ঘোষ ।'
- তোমার কলেজের বন্ধু নাকি অরবিন্দ?
- হ্যাঁ, আমি আর স্বপ্না যাবো।
- ঠিক আছে ! কত টাকা দেবো?
রানি আমাকে বললো, 'পাঁচশো টাকা।' আমি তাকে টাকা দিয়ে বললাম,
- যা হোক, তাড়াতাড়ি ফিরে এসো, ড্রিকস্-ফ্রিকস্ কোরো না যেন। সন্ধ্যার মধ্যে ফিরে আসবে।
রানি কোনো জবাব দিল না। ও মাঝে মাঝেই বন্ধুদের সঙ্গে সিনেমা, শপিং মল,গার্ডেন যায়। আমি সে বিষয়ে ভ্রূক্ষেপ করি না। তাছাড়া রানি যেখানে যায় আমাকে বলে যায়,তার প্রতি আমার কোনো সন্দেহ নেই।

আমি রানিকে বিশ্বাস করি,সংসারে স্বামী কিংবা স্ত্রী যদি কেউ কাউকে সন্দেহ করে,তবে সংসারে অশান্তি দেখা দেয়। কাজেই আমি ওকে সন্দেহ করি না,যথেষ্ট বিশ্বাস করি আর ভালোবাসি। রানিও আমাকে খুব কম ভালোবাসে বলে মনে তো হয় না।

যাই হোক,সন্ধ্যাবেলা বাড়ি ফিরে দেখি রানি বাড়িতে নেই। সন্ধ্যার মধ্যে চলে আসার কথা। আমি গোবিন্দকে জিগ্গেস করলাম
- গোবিন্দ,রানি থেকে বেরিয়েছে জানো?
গোবিন্দ মুখ চুলকে বললো -
- সকালে তো বৌদিমনিকে ডাকতে এসেছিলো ও পাড়ার মেয়েটা, তারপর... দাদা,আমি ফিরে গেছিলাম বাড়ি।
মনে মনে রাগ হল রানির ওপর। আমাকে বললো,দুপুরে বেরোবে,আর কিনা সকালেই চলে গেছে। নিশ্চয় ড্রিক করে পড়ে আছে। ওফঃ, রানিকে নিয়ে আর পারি না। আসুক আজ বাড়ি,দেখাচ্ছি ওর মজা।

রাত দশটা বেজে গেলো,রানি এখনো ফেরেনি। টেনশনে বশে থাকলাম চুপচাপ,কী হতে কী হবে তার নেই ঠিক। গোবিন্দ রাতের খাবার রেডি করে চলে গেলো। আমি রানির প্রতিক্ষায় রইলাম ।হ্যাঁ,হতেই পারে দেরি,হয়তো রাতে অরবিন্দ বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যাবে। একবার মনে হল,একটা ফোন করি ওকে,পকেট থেকে মোবাইলটা বার করে কল করতেই খানের ওপর রানির মোবাইল বেজে উঠলো। একি,রানি মোবাইল নিয়ে যায়নি! নিশ্চয়ই ভুলে গেছে।
আশা ছেড়ে আমার মতো আমি খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়লাম।

অ্যালার্ম ঘড়ির শব্দে আমার ঘুম ভাঙলো। ভোর চারটে বাজে। আমি অফিস যাবার জন্য তৈরি হতে থাকলাম। তখনি খেয়াল হল, আরে রানি তো রাত্রে আসেনি। মাথাটা চট করে গরম হয়ে গেলো। কী করবো ভেবে পাচ্ছি না। এমন সময় দেখি রানি বাড়িতে ঢুকছে,পাঁচটা বাজে। আমি রাগে ফুলে উঠলাম। মনে হচ্ছিলো ওর গলা টিপে জিবটা টেনে ছিঁড়ে ফেলি । রানি আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে ঘরে ঢুকে গেলো। আমি ক্ষিপ্ত ভাবে বললাম - রাত্রে তোমার ব্যবস্থা করছি।
রানি কোনো জবাব দিল না,আমি হন্তদন্ত হয়ে অফিস চলে এলাম।
সন্ধ্যা বেলা বাড়ি ফিরে রাগ অনেকটা কমে গেলো। কিন্তু তবুও রানিকে তীব্র মেজাজে ডাকলাম।
- রানি ! রানি!
ও আমার সামনে এসে দাঁড়াল,কিন্তু কোনো কথা বললো না। বুঝলাম ওই ভুলের শাস্তি ও পেতে চাই। বললাম,
- নিজেকে কী ভেবেছ হ্যাঁ?
ও হকচকিয়ে গেল, ওর সঙ্গে কোনোদিন কোনো সময় এমন মেজাজে কথা বলিনি,ও আমার দিকে নির্বাক হয়ে চেয়ে রইল ।আমি কিছুটা নরম হয়ে বললাম,
- তুমি কাল সারারাত কোথায় ছিলে?
- কেন তুমি জানো না?
রানির উল্টা প্রশ্ন আমার মাথাটা পূর্বকার মতো গরম হয়ে উঠলো। দু'চোখ বিস্ফারিত ক'রে বললাম,
- কী! কী বলছো তুমি? কী বলছো?
আমি রাগে জ্বলে উঠলাম,ইচ্ছা হচ্ছিলো ওর গালে ঠাস্ করে একটা চড় কষিয়ে বলি,আমি তোমার স্বামী,আমার কথা মতো চলতে হবে,নিজের ইচ্ছে মতো নয়। কিন্তু তার মধ্যেই রানি বেশ মেজাজের সঙ্গে আমাকে বললো,
- তোমার জন্য কী আমি আমার পুরনো বন্ধুদের ভুলে যাবো?
আমি বললাম,
- হ্যাঁ যেতে হবে! হ্যাঁ তাই যেতে হবে। তুমি একজনের স্ত্রী,ঠিক আছে? বন্ধুর বাড়ি রাত কাটানো যাবে না।
রানি ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে কটু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
- তুমি আমাকে কী বলতে চাচ্ছ ?

এই ঘটলো মহা বিপদ....


(এরপর পরবর্তী পর্বে)
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩৬৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৫/০১/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast