www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

পবিত্র কুরআনে বর্ণিত বিস্ময়কর সত‌্য ঘটনা আসহাবে কাহাফ বা গুহাবাসীর গল্প

‘কাহাফ’ বলা হয় পাহাড়ের গর্ত বা গুহাকে। পূর্বযুগে কয়েকজন যুবক যারা নিজেদের ‘ঈমান’ রক্ষার জন্যে একটি পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাদেরকে ‘আসহাবে কাহাফ’ বা গুহাবাসী যুবক বলা হয়। সুরা কাহাফের শুরুর দিকে তাদের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে, এবং এই ঘটনা থেকেই সুরাটির নামকরণ করা হয়েছে সুরা কাহাফ। ঘটনাটি ঘটেছিল ঈসা ইবনে মারইয়াম আ’লাইহিস সালাতু আস-সালাম কে নবী ও রাসূল হিসেবে পাঠানোর অনেক পূর্বে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ জর্ডান সীমান্ত অঞ্চলের দিকে ‘দাকিয়ানুস’ নামে একজন উদ্ধত ও কঠোর প্রকৃতির অত্যাচারী বাদশাহর আমলে। কুরআনে বর্ণিত আসহাবে কাহাফ বা গুহাবাসীর আশ্চর্যজনক ঘটনা কুরআনের শিক্ষণীয় ঘটনাসমূহের অন্যতম একটি ঘটনা।
ইমাম ইবনে জরীর তাবারী হযরত ইবনে-আব্বাসের রেওয়ায়েতে বর্ণনা করেনঃ যখন মক্কায় রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) -এর নবুওয়াতে দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়ে মহান আল্লাহর নির্দেশে দ্বীনের প্রচার শুরু করেন তখন কোরাইশরা তাতে বিব্রত বোধ করতে থাকে। অনেকে সন্দেহ পোষণ করতে থাকে যে তিনি সত‌্য দ্বীনের নবী কিনা। তারা নযর ইবনে হারেস ও ওকবা ইবনে আবী মুয়ী’তকে মদীনার ইহুদী পন্ডিতদের কাছে প্রেরণ করে। রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) সম্পর্কে তারা কি বলে তা জানার জন‌্য।
ইহুদী পন্ডিতরা তাদেরকে বলে দেয় যে, তোমরা তাঁকে তিনটি প্রশ্ন করো। তিনি এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিলে বুঝে নেবে যে, তিনি আল্লাহর রাসূল এতে কোন সন্দেহ নেই। যদি তিনি উত্তর দিতে না পারেন তবে তাঁর মিথ‌ধ্বিাদী হওয়া সম্পর্কে কোন সন্দেহ নেই। তখন তোমরা তাঁর ব‌্যাপারে যা ইচ্ছা তাই করতে পার।
প্রশ্নগুলো হলো:-
(১) তাঁকে ঐসব যুবকের অবস্থা জিজ্ঞাস কর, যারা প্রাচীনকালে শহর ছেড়ে চলে গিয়েছিল। তাদের ঘটনা কি? কেননা, এটা অত্যন্ত বিস্ময়কর ঘটনা। যা কোন সাধারণ মানুষের জানা থাকার কথা না।
(২) তাঁকে সে ব্যক্তির অবস্থা জিজ্ঞেস কর, যে পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম এবং সারা বিশ্ব সফর করেছিল। তার ঘটনা কি?
৩) তাঁকে রূহু সম্পর্কে প্রশ্ন কর যে, এটা কি?
যদি তিনি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারেন তবে তাঁকে নবী স্বীকার করে তাঁর অনুসরণ করবে। আর যদি উত্তর দিতে না পারেন তবে জানবে যে তিনি মিথ‌্যাবাদী। তখন তোমরা যা ইচ্ছা তা-ই করবে।
উভয় কোরাইশই মক্কায় ফিরে এসে ভ্রাতৃসমাজকে বললঃ আমরা নবী দাবীদার মুহাম্মদ (সঃ) সম্পর্কে একটি চূড়ান্ত ফয়সালার পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ফিরে এসেছি। অতঃপর তারা তাদেরকে ইহুদী আলেমদের উপদেশ জানিয়ে দিল। কোরাইশরা রসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর কাছে এ প্রশ্নগুলো নিয়ে হাযির হলো।
প্রশ্ন শুনে নবী (সঃ) বিব্রত হলেন না, বিচলিত হলেন না। শুধু বললেনঃ আগামীকাল উত্তর দেব। কিন্তু তিনি ইনশাআল্লাহ্ বলতে ভুলে গেলেন। কোরাইশরা ফিরে গেল। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) অপেক্ষায় রইলেন তাঁর সেই প্রতিপালকের যাঁর নির্দেশে তিনি দ্বীনের মহান দায়িত্ব পালনে ব্রতী হয়েছেন। ওহীর আলোকে জবাব দেবার জন্যে আল্লাহর তরফ থেকে ওহী আসার অপেক্ষায় রইলেন। কিন্তু ওয়াদা অনুযায়ী পর দিবস পর্যন্ত ওহী নিয়ে জিবরাইল (আঃ) আগমন করল না; বরং পনের দিন এ অবস্থায় কেটে গেল। প্রশ্নের জবাব না পেয়ে কোরাইশরা ঠাট্টা-বিদ্রূপ আরম্ভ করে দিল। তাঁকে যারা এতদিন আল-আমীন বলে যানত তারা তাঁকে ভন্ড প্রতারক বলতে পিছপা হলো না। এতে রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) খুবই দুঃখিত ও চিন্তিত হলেন। পনের দিন পর মহান আল্লাহ জিবরাঈল (আঃ)কে ডেকে বলেন-হে জিবরাইল, আমার হাবীব বড়ই চিন্তিত। আমার সত‌্য দিনের নবী মুশরিকদের নিকট মিথ‌্যা প্রতিপন্ন হতে চলেছে। আর দেরি না করে তুমি আমার হাবীবের কানে জানিয়ে দিয়ে আস ইহুদিদের কঠিন প্রশ্নের জবাব। আল্লাহর নির্দেশ পেয়ে জিবআইল (আঃ) সূরা কাহফ নিয়ে অবতরন করলেন। এতে ওহীর বিলম্বের কারণও বর্ণনা করে দেয়া হল যে, ভবিষ্যতে কোন কাজ করার ওয়াদা করা হলে ইনশাআল্লাহ্ বলা উচিত।
ওহী পেয়ে রাসূল (সঃ) জানিয়ে দিলেন কঠিন সেই তিন প্রশ্নের উত্তর।
প্রথম প্রশ্নের জবাব মহান আল্লাহ জানিয়ে দিলেন সূরা কাহফের ৯থেকে ২৬ নং আয়াতে। মহান আল্লাহ বলেন-

“আপনি কি ধারণা করেন যে, গুহা ও গর্তের অধিবাসীরা আমার নিদর্শনাবলীর মধ্যে বিস্ময়কর ছিল ? [সুরা কা’হফ: ৯]

যখন যুবকরা পাহাড়ের গুহায় আশ্রয়গ্রহণ করে তখন দোআ করেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে নিজের কাছ থেকে রহমত দান করুন এবং আমাদের জন্যে আমাদের কাজ সঠিকভাবে পূর্ণ করুন। [সুরা কা’হফ: ১০]

তখন আমি কয়েক বছরের জন্যে গুহায় তাদের কানের উপর নিদ্রার পর্দা ফেলে দেই। [সুরা কা’হফ: ১১]

অতঃপর আমি তাদেরকে পুনরত্থিত করি, একথা জানার জন্যে যে, দুই দলের মধ্যে কোন দল তাদের অবস্থানকাল সম্পর্কে অধিক নির্ণয় করতে পারে। [সুরা কা’হফ: ১২]

আপনার কাছে তাদের ইতিবৃত্তান্ত সঠিকভাবে বর্ণনা করছি। তারা ছিল কয়েকজন যুবক। তারা তাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল এবং আমি তাদের সৎপথে চলার শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। [সুরা কা’হফ: ১৩]

আমি তাদের মন দৃঢ় করেছিলাম, যখন তারা উঠে দাঁড়িয়েছিল। অতঃপর তারা বললঃ আমাদের পালনকর্তা আসমান ও যমীনের পালনকর্তা আমরা কখনও তার পরিবর্তে অন্য কোন উপাস্যকে আহবান করব না। যদি করি, তবে তা অত্যন্ত গর্হিত কাজ হবে। [সুরা কা’হফ: ১৪]

এরা আমাদেরই স্ব-জাতি, এরা তাঁর পরিবর্তে অনেক উপাস্য গ্রহণ করেছে। তারা এদের সম্পর্কে প্রকাশ্য প্রমাণ উপস্থিত করে না কেন? যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা উদ্ভাবন করে, তার চাইতে অধিক গোনাহগার আর কে? [সুরা কা’হফ: ১৫]

তোমরা যখন তাদের থেকে পৃথক হলে এবং তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের এবাদত করে তাদের থেকে, তখন তোমরা গুহায় আশ্রয়গ্রহণ কর। তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্যে দয়া বিস্তার করবেন এবং তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজ কর্মকে ফলপ্রসু করার ব্যবস্থা করবেন। [সুরা কা’হফ: ১৬]

তুমি সূর্যকে দেখবে, যখন উদিত হয় তাদের গুহা থেকে পাশ কেটে ডান দিকে চলে যায় এবং যখন অস্ত যায় তাদের থেকে পাশ কেটে বামদিকে চলে যায় অথচ তারা গুহার প্রশস্ত চত্বরে অবস্থিত। এটা আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অন্যতম। আল্লাহ যাকে সৎপথে চালান, সেই সৎপথ প্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, আপনি কখনও তার জন্যে পথপ্রদর্শনকারী ও সাহায্যকারী পাবেন না। [সুরা কা’হফ: ১৭]

তুমি মনে করবে তারা জাগ্রত, অথচ তারা নিদ্রিত। আমি তাদেরকে পার্শ্ব পরিবর্তন করাই ডান দিকে ও বাম দিকে। তাদের কুকুর ছিল সামনের পা দুটি গুহাদ্বারে প্রসারিত করে। যদি তুমি উঁকি দিয়ে তাদেরকে দেখতে, তবে পেছন ফিরে পলায়ন করতে এবং তাদের ভয়ে আতংক গ্রস্ত হয়ে পড়তে। [সুরা কা’হফ: ১৮]

আমি এমনি ভাবে তাদেরকে জাগ্রত করলাম, যাতে তারা পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের একজন বললঃ তোমরা কতকাল অবস্থান করেছ? তাদের কেউ বললঃ একদিন অথবা একদিনের কিছু অংশ অবস্থান করছি। কেউ কেউ বললঃ তোমাদের পালনকর্তাই ভাল জানেন তোমরা কতকাল অবস্থান করেছ। এখন তোমাদের একজনকে তোমাদের এই মুদ্রাসহ শহরে প্রেরণ কর; সে যেন দেখে কোন খাদ্য পবিত্র। অতঃপর তা থেকে যেন কিছু খাদ্য নিয়ে আসে তোমাদের জন্য; সে যেন নম্রতা সহকারে যায় ও কিছুতেই যেন তোমাদের খবর কাউকে না জানায়। [সুরা কা’হফ: ১৯]

তারা যদি তোমাদের খবর জানতে পারে, তবে পাথর মেরে তোমাদেরকে হত্যা করবে, অথবা তোমাদেরকে তাদের ধর্মে ফিরিয়ে নেবে। তাহলে তোমরা কখনই সাফল্য লাভ করবে না। [সুরা কা’হফ: ২০]

এমনিভাবে আমি তাদের খবর প্রকাশ করে দিলাম, যাতে তারা জ্ঞাত হয় যে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য এবং কেয়ামতে কোন সন্দেহ নেই। যখন তারা নিজেদের কর্তব্য বিষয়ে পরস্পর বিতর্ক করছিল, তখন তারা বললঃ তাদের উপর সৌধ নির্মাণ কর। তাদের পালনকর্তা তাদের বিষয়ে ভাল জানেন। তাদের কর্তব্য বিষয়ে যাদের মত প্রবল হল, তারা বললঃ আমরা অবশ্যই তাদের স্থানে মসজিদ নির্মান করব। [সুরা কা’হফ: ২১]

অজ্ঞাত বিষয়ে অনুমানের উপর ভিত্তি করে এখন তারা বলবেঃ তারা ছিল তিন জন; তাদের চতুর্থটি তাদের কুকুর। একথাও বলবে; তারা পাঁচ জন। তাদের ছষ্ঠটি ছিল তাদের কুকুর। আরও বলবেঃ তারা ছিল সাত জন। তাদের অষ্টমটি ছিল তাদের কুকুর। বলুনঃ আমার পালনকর্তা তাদের সংখ্যা ভাল জানেন। তাদের খবর অল্প লোকই জানে। সাধারণ আলোচনা ছাড়া আপনি তাদের সম্পর্কে বিতর্ক করবেন না এবং তাদের অবস্থা সম্পর্কে তাদের কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ ও করবেন না। [সুরা কা’হফ: ২২]

আপনি কোন কাজের বিষয়ে বলবেন না যে, সেটি আমি আগামী কাল করব। [সুরা কা’হফ: ২৩]

‘আল্লাহ ইচ্ছা করলে’ বলা ব্যতিরেকে। যখন ভুলে যান, তখন আপনার পালনকর্তাকে স্মরণ করুন এবং বলুনঃ আশা করি আমার পালনকর্তা আমাকে এর চাইতেও নিকটতম সত্যের পথ নির্দেশ করবেন। [সুরা কা’হফ: ২৪]

তাদের উপর তাদের গুহায় তিনশ বছর, অতিরিক্ত আরও নয় বছর অতিবাহিত হয়েছে। [সুরা কা’হফ: ২৫]

বলুনঃ তারা কতকাল অবস্থান করেছে, তা আল্লাহই ভাল জানেন। নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান তাঁরই কাছে রয়েছে। তিনি কত চমৎকার দেখেন ও শোনেন। তিনি ব্যতীত তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। তিনি কাউকে নিজ কর্তৃত্বে শরীক করেন না। [সুরা কা’হফ: ২৬]”

তাফসীর ইবনে কাসীরের ব‌্যাখ‌্যা অবলস্বনে আসহাবে কাহফের ঘটনা-
ঈসা ইবনে মারইয়াম আ’লাইহিস সালাতু আস-সালাম কে নবী ও রাসূল হিসেবে পাঠানোর অনেক পূর্বে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ জর্ডান সীমান্ত অঞ্চলের দিকে ‘দাকিয়ানুস’ নামে একজন উদ্ধত ও কঠোর প্রকৃতির অত্যাচারী বাদশাহ ছিলো। সে তার জাতির লোকদেরকে শিরকের শিক্ষা দিতো এবং সকলকে ‘মূর্তিপূজা’ করতে বাধ্য করতো। এ উপলক্ষ্যে দাকিয়ানুস প্রতিবছর একটা মেলা বা উৎসবের আয়োজন করতো, যেখানে সবাই মূর্তিপূজা করতো এবং তাদের দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করতো। এক বছর এমনই এক মেলায় কয়েজন যুবক শরীক হয়েছিলো, যারা তাদের জাতির লোকদের মূর্তিপূজা এবং জাহেলিয়াতের তামাশা দেখে তাদের মনে এই ধারণা জন্ম নেয় যে, মূর্তিপূজা নিছক বাজে কাজ। মহান আল্লাহ এই যুবকদেরকে সঠিক পথ দেখানোর ইচ্ছা করেন এবং তাদের অন্তরে এই কথাগুলো প্রক্ষিপ্ত করলেনঃ ইবাদত বা উপাসনার একমাত্র যোগ্য সত্ত্বাতো সেই মহান আল্লাহ, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি সারা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক। যুবকেরা মূর্তিপূজাকে ঘৃণা করে সেই মেলা থেকে সরে পড়েন। এক এক করে তারা কয়েকজন একটি গাছের নিচে একত্রিত হন এবং একজন আরেকজনকে মেলা থেকে চলে আসার কারণ জিজ্ঞেস করেন। তখন একজন বলেন, আমার জাতির প্রথা, চাল-চলন ও রীতি-নীতি আমার মোটেও ভালো লাগেনা। আসমান ও জমীনের এবং আমাদের এবং আপনাদের সৃষ্টিকর্তা যখন একমাত্র আল্লাহ, তখন আমরা তাঁকে ছাড়া অন্যের উপাসনা কেনো করবো? তার একথা শুনে দ্বিতীয়জন বললো, আল্লাহর কসম! আমার জাতির লোকদের প্রতি এই ঘৃণাই আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে। তৃতীয়জনও একই কথা বললেন। যখন সবাই একই কারণ বললেন, তখন সবার অন্তরে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার ঢেউ খেলে গেল। ‘তাওহীদ’ বা একত্ববাদের আলোকে আলোকিত এই যুবকেরা পরস্পর সত্য ও খাঁটি দ্বীনি ভাইয়ে পরিণত হল। তারা লোকালয়ের বাইরে একটা জায়গা নির্দিষ্ট করে নেন, যেখানে তারা একত্রিত হয়ে গোপনে আল্লাহর ইবাদত করতেন এবং সমস্ত মূর্তিপূজার শিরক থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখতেন। আস্তে আস্তে জাতির লোকেরা তাদের কথা জেনে যায় এবং তাদেরকে ধরে ঐ অত্যাচারী বাদশাহর কাছে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করে। বাদশাহ দাকিয়ানুস তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে, যুবকেরা অত্যন্ত সাহসিকতা ও বীরত্বের সাথে তাদের তাওহীদের প্রতি বিশ্বাস এর কথা জানিয়ে দেন। এমনকি স্বয়ং বাদশাহ, তার সভার লোকদের এবং জাতির সকলকে মূর্তিপূজা ত্যাগ করে এক আল্লাহর উপাসনা করার জন্যে দাওয়াত দেন। তারা মন শক্ত করে নেন এবং পরিষ্কারভাবে বলেন,
“আমাদের রব্ব তিনিই, যিনি আসমান ও যমীনের সৃষ্টিকর্তা। তাঁকে ছাড়া অন্য কাউকে মাবূদ বানিয়ে নেওয়া আমাদের জন্যে অসম্ভব। আমাদের দ্বারা এটা কখনো হতে পারেনা যে, আমরা তাঁকে ছেড়ে অন্য কারো কাছে দুয়া করবো বা ডাকবো। কেননা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে আহবান করা শিরক। এটা অত্যন্ত বাজে ব্যপার, অনর্থক কাজ ও বক্র পথ বা গোমরাহী। আমার জাতির লোকেরা মুশরিক, তারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে দুয়া করে বা অন্যদেরকে আহবান করে তাদের ইবাদতে মগ্ন হয়ে রয়েছে। এর কোন দলিল-প্রমান তারা পেশ করতে পারবেনা, সুতরাং তারা মিথ্যাবাদী ও অত্যাচারী।”
বর্ণিত আছে যে, যুবকদের এই স্পষ্টবাদীতায় বাদশাহ অত্যন্ত রাগান্বিত হয় এবং তাদেরকে শাসন-গর্জন ও ভয় প্রদর্শন করে। সে তাদের পোশাক খুলে নেওয়ার জন্যে আদেশ দেয় এবং তাদেরকে তাদের বক্তব্য প্রত্যাহার করার জন্যে সুযোগ দেয়।
বাদশাহ মনে করেছিলো যে, তারা হয়তো ভয় পেয়ে আবার বাতিল ধর্মে ফিরে আসবে। আসলে এটা ছিলো আল্লাহ সুবহা’নাহু তাআ’লার পক্ষ থেকে বাদশাহর অবচেতন মনে তাদেরকে সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার একটা সুযোগ দান। যুবকেরা যখন বুঝতে পারলো যে, সেখানে থেকে তারা দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারবে না, তখন তারা তাদের জাতি, দেশ ও আত্মীয় স্বজন ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্যে দৃঢ় সংকল্প করেন। সুযোগ বুঝে সেখান থেকে পালিয়ে যায় এবং একটি পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নেন। যখন এই যুবকেরা দ্বীন রক্ষা করার জন্যে এত বড় ত্যাগ স্বীকার করতে উদ্যত হন, তখন তাদের উপর আলাহর রহমত বর্ষিত হয়। পালিয়ে যাবার পথে একটি কুকুর তাদের সাথী হয়ে গেল, একই পথে চলতে লাগল, তাদের সাথে ভালবাসার বন্ধনে আটকে গেল এবং তাদের প্রহরী হওয়ার দায়িত্ব পালনে নিজেকে নিজেই মনোনিত করল। ভালকে ভালবাসলে এবং সৎ লোকের সাহচর্যে গেলে আল্লাহর প্রিয় হওয়া যায় , এই প্রাণীটি হয়তবা তা অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছিল। পথ চলতে চলতে এক সময় তারা গুহায় পৌছে গেলেন। হয়তবা সেখানে তারা আল্লাহর দেয়া রিজিক থেকে ফল-ফলাদি পেয়ে গেলেন এবং ঝর্ণার পরিচ্ছন্ন মিষ্টি পানি পান করলেন। দীর্ঘ পথ চলার পর সফরের ক্লান্তি দূর করার জন্য পরিশ্রান্ত শরীর নিয়ে সেখানে তারা সামান্য বিশ্রামের নিয়তে গুহার মধ্যকার যমীনে মাথা রেখে শুয়ে পড়লেন। শুয়ে পড়ার সাথে সাথেই হালকা ঘুম অনুভব করলেন এবং সেই হালকা ঘুমের পথ ধরেই গভীর নিদ্রা চলে আসল।
পরের দিন নির্দিষ্ট সময়ে বাদশাহর দরবারে হাজির না হওয়াতে তার লোকেরা তাদের অনুসন্ধানে বের হল। এমন কি তারা সেই গুহার দরজা পর্যন্ত পৌঁছে গেল। কিন্তু হিজরতের পথে মক্কার মুশরিকরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আবু বকর (রাঃ)এর সন্ধানে বের হয়ে গারে ছাওর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েও যেভাবে অন্ধ হয়ে গিয়েছিল আল্লাহ তায়ালা সেভাবেই তাদেরকে অন্ধ করে দিলেন।

এখানে ঘটে গেল আল্লাহ তায়ালার এক বিষ্ময়কর ঘটনা।

দিনের পর আসে রাত। রাতের পর দিন। পার হয়ে গেল বছরের পর বছর। যুবকগণ শুয়ে আছেন। গভীর নিদ্রা তাদেরকে আচ্ছন্ন করে আছে। বাইরের কর্ম ব্যস্ত জীবনের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই, আকাশে বিজলীর গর্জন, বাতাসের প্রচন্ডতা এবং পৃথিবীর কোন ঘটনাই তাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে নি। সূর্য উদিত হওয়ার সময় ডান পাশে হেলে গিয়ে গুহার ছিদ্র দিয়ে সামান্য আলো প্রবেশ করে এবং আল্লাহর হুকুমে তাদেরকে সামান্য আলো ও তাপ প্রদান করে। কিন্তু সূর্যের প্রখর উত্তাপ তাতে প্রবেশ করে না। আল্লাহর ইচ্ছায় তাদের শরীরকে হেফাজতের জন্য অস্ত যাওয়ার সময়ও সূর্য একটু বাম দিকে হেলে যায়। কুকুরটি তার দুই বাহু প্রসারিত করে বীরের মত প্রহরীর কাজে গুহার বাইরে অবস্থানরত।
তারা সেখানে মাঝে মাঝে ডানে বামে পার্শ্ব পরিবর্তন করছেন। কে আছে এমন যে এই দৃশ্য দেখে ভয় পাবে না?
গভীর নিদ্রায় তিনশ নয় বছর পার হয়ে গেল। এবার তারা ক্ষুধা ও পিপাসায় দুর্বল শরীর নিয়ে জাগ্রত হলেন। তারা ভাবলেন সময় বেশী অতিক্রম হয় নি এবং ইতিহাসের চাকা গুহার মুখেই থমকে রয়েছে। তাদের একজন বললেনঃ হে বন্ধগণ! আমার মনে হয় এখানে আমরা দীর্ঘ সময় ঘুমিয়ে পার করেছি। তোমাদের মতামত কি?
অন্যজন বললেনঃ আমার মনে হয় পূর্ণ একদিন আমরা নিদ্রিত ছিলাম। কারণ যে ধরণের ক্ষুধা ও পিপাসা আমরা অনুভব করছি, তাতে তাই মনে হয়।
তৃতীয়জন বললেনঃ সকালে ঘুমিয়েছি। এই দেখো সূর্য এখনও ডুবে যায় নি। আমার মনে হয় একটি দিবসের কিয়দাংশই আমরা নিদ্রায় অতিক্রম করেছি।
চতুর্থজন বললেনঃ ছাড়ো এ সব মতভেদ। আল্লাহই ভাল জানেন, আমরা কতকাল এখানে ঘুমিয়েছি। মূল কথা হচ্ছে আমার প্রচুর ক্ষুধা অনুভব হচ্ছে। মনে হচ্ছে কয়েক দিন যাবৎ না খেয়ে আছি। আমাদের একজনের উচিত এখনই শহরে গিয়ে কিছু খাদ্য ক্রয় করে নিয়ে আসুক। তবে তাকে অবশ্যই সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ লোকেরা যদি আমাদের অবস্থান সম্পর্কে জেনে ফেলে তবে তারা আমাদেরকে হত্যা করতে পারে কিংবা আমাদেরকে ফিতনায় ফেলে দ্বীন পালন থেকে বিরত রাখতে পারে। তাকে আরেকটি বিষয়ে সাবধান হতে হবে। কোনভাবেই যেন হারাম খাদ্য ক্রয় করা না হয়। সে জন্য সে যাচাই-বাছাই করে হালাল খাদ্যটিই ক্রয় করবে।

তাদের একজন সাবধানতা ও পূর্ণ সতর্কতার সাথে ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় শহরে প্রবেশ করলেন। তিনি দেখলেন কোন কিছুই আর আগের মত নেই। ঘরবাড়িগুলো পরিবর্তন হয়ে গেছে। পুরাতন পরিত্যাক্ত ঘরের স্থলে বিশাল প্রাসাদ শোভা পাচ্ছে। আগের রাজপ্রাসাগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তিনি এখন যে সমস্ত চেহারা দেখছেন সেগুলো পরিচিত কোন লোকের চেহারা নয়। নদীর স্রোত আগের মতই চলছে বয়ে, পরিবর্তিত রূপ ধারণ করে ঘরবাড়ি ও বন-বনানী ঠিকই আছে। শুধু নেই আগের মানুষগুলো।
তার দৃষ্টি বিচলিত হল, এদিক সেদিক চোখ ঘুরানোতে লোকেরা সন্দেহ পোষণ করতে লাগল এবং তার চলার ভঙ্গিতে মানুষের সন্দেহ দানা বেঁধে উঠল। পরিশেষে লোকেরা তাকে ঘিরে ধরল। উপস্থিত লোকদের একজন তাকে জিজ্ঞেস করলঃ আপনি কি এখানে অন্য দেশ থেকে এসেছেন? এত চিন্তা করছেন কি নিয়ে? অনুসন্ধানই বা করছেন কী?

তিনি বললেনঃ আমি এখানে অপরিচিত কেউ নই। আমি কিছু খাদ্য ক্রয় করতে চাই। কিন্তু কোথায় তা বিক্রি হচ্ছে আমি তা জানি না। একজন লোক তার হাত ধরে খাদ্যের দোকানে নিয়ে গেল। সেখানে গিয়ে তিনি রোপার তৈরী কয়েকটি দিরহাম বের করলেন। দোকানের মালিক দিরহামগুলো হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলেনঃ এ তো তিনশ বছরের অধিক সময় আগের তৈরী! সে ভাবল এই ব্যক্তি হয়ত কোন গুপ্তধন পেয়েছেন। সম্ভবতঃ এই দিরহামগুলো ছাড়াও তার কাছে বিপুল পরিমাণ দিরহাম রয়েছে। দোকানের মালিক বাজারের লোকদেরকে ডেকে একত্রিত করল।
এবার গুহাবাসী লোকটি বললেনঃ হে লোক সকল! দেখুনঃ আপনার যা ভাবছেন, বিষয়টি আসলে তেমন নয়। এই মূদ্রাগুলো লুকায়িত অসংখ্য সম্পদের কোন অংশ নয়। গতকাল মানুষের সাথে কোন এক লেনদেনের সময় তা আমার হস্তগত হয়েছে। আর এই তো আজ আমি তা দিয়ে কিছু খাদ্য ক্রয় করতে চাচ্ছি। আপনারা তাতে এত আশ্চর্যবোধ করছেন কেন? এর কোন কারণ তো আমি খুঁজে পাচ্ছি না। আর কেনই বা সন্দেহের উপর নির্ভর করে আমার বিরুদ্ধে গুপ্তধন পাওয়ার এবং তা লুকিয়ে রাখার অপবাদ দিচ্ছেন?
এই কথা বলে তাদের ব্যাপারটি মানুষের কাছে প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার ভয়ে তিনি স্থান ত্যাগ করতে চাইলেন। কিন্তু লোকেরা কিছুতেই তাকে ছেড়ে দিতে রাজি হল না। ভিড় ভেঙ্গে দিয়ে কিছু লোক একাকী তার সাথে নম্র ভাষায় কথা বলতে লাগল। কথা-বার্তার এক পর্যায়ে তারা যখন জানতে পারল যে, তিনি হচ্ছেন তিন শত নয় বছর পূর্বে জালেম ও কাফের বাদশাহর পাকড়াও থেকে পলায়নকারী সম্ভ্রান্ত বংশের সাত জন যুবকের একজন তখন তারা আরও আশ্চার্যান্বিত হল। তারা আরও জানতে পারল যে, তারা হলেন ঐ সমস্ত যুবক যাদের অনুসন্ধানে বাদশাহ সকল প্রচেষ্টাই করেছিল, কিন্তু তাদের কোন সন্ধান পাওয়া যায় নি। যুবকটি এবার আরও শঙ্কিত হয়ে পড়লেন। কারণ এখন লোকেরা তাদের ব্যাপারটি জেনে ফেলেছে। তাই তিনি নিজের ও তাঁর সাথীদের জীবন নাশের ভয়ে পালাতে উদ্যোত হলেন।
লোকদের মধ্যে হতে একজন বললঃ হে ভাই! তুমি ভয় করো না। তুমি যেই জালেম বাদশাহর ভয় করছ, সে তো প্রায় তিনশ বছর আগেই ধ্বংস হয়েছে। এখন যিনি এই রাজ্যের বাদশাহ তিনি আপনিও আপনার সাথীদের মতই একজন মুমিন বান্দা। এবার বলুনঃ আপনার অন্যান্য সাথীগণ কোথায়?
যুবকটি এবার আসল ঘটনা জানতে পারলেন। ইতিহাসের সেই দীর্ঘ দূরত্বও তিনি উপলব্ধি করতে পারলেন, যা তাকে মানব সমাজ থেকে আলাদা করে রেখেছে। তিনি বুঝতে পারলেনঃ এখন তিনি মানুষের মাঝে চলমান একটি ছায়া ব্যতীত আর কিছুই নন। এরপর তিনি লোকদের উদ্দেশ্যে বললেনঃ আমাকে গুহার অভ্যন্তরে বন্ধুদের কাছে যেতে দাও। আমি তাদেরকে আমার ও আপনাদের অবস্থা সম্পর্কে সংবাদ দেব। তারা দীর্ঘক্ষণ যাবৎ আমার অপেক্ষায় আছেন। আমার আশঙ্কা হচ্ছে, তারা আমার ব্যাপারে চিন্তিত আছেন। লোকেরা তাকে বাদশাহের নিকট নিয়ে গেল। সব শুনে বাদশাহ এবং সমস্ত জনতা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলো! অবশেষ সমস্ত লোক তার সংগী হয়ে বললো, আচ্ছা আমাদেরকে তোমরা গুহাবাসী বাকি সংগীদের কাছে নিয়ে চলো এবং তোমাদের গুহাটি দেখিয়ে দাও। গুহাবাসী লোকটি তাদেরকে সাথে নিয়ে চললেন। গুহার কাছে পৌঁছে তিনি তাদেরকে বললেন, আপনারা বাইরে অপেক্ষা করুন, আমি আমার সংগীদের খবর দিয়ে আসি। গুহাবাসী লোকটি জনতা থেকে পৃথক হওয়া মাত্রই আল্লাহ তাদের ও গুহাবাসীর মাঝে একটি ‘গায়েবী’ বা অদৃশ্য পর্দা নিক্ষেপ করলেন। লোকেরা আর জানতেই পারলোনা যে, তিনি কোথায় গেলেন। অতঃপর তারা আল্লাহর নৈকট্য লাভের আবেদন করলেন, তাঁর কাছে ফেরত যাওয়াকেই পছন্দ করলেন এবং তাঁর প্রশস্ত রহমত দ্বারা তাদেরকে ঢেকে নিতে প্রার্থনা করলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন। দেহ থেকে তাদের প্রাণ চির দিনের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।

এভাবে আল্লাহ তাআ’লা আসহাবে কাহাফের রহস্য মানুষের কাছ থেকে গোপন করলেন। অতঃপর আল্লাহ আসহাবে কাহাফের লোকদের গুহার ভেতরে স্বাভাবিক মৃত্যু দান করেন। গুহাবাসীরা অদৃশ্য হয়ে গেলে লোকদের মাঝে কেউ বললো, সেই গুহার দরজা বন্ধ করে তাদেরকে এইভাবেই ছেড়ে দেওয়া হোক। আবার কেউ বলে, তাদের স্মৃতি রক্ষার জন্যে তাদের উপরে সৌধ নির্মান করা হোক। কিন্তু যারা ক্ষমতাশালী লোক ছিলো তারা তাদের উপরে মসজিদ নির্মাণ করেছিলো।

আসহাবে কাহাফের ঘটনা থেকে কতিপয় শিক্ষা:
পবিত্র কুরআনে বর্ণিত আসহাবে কাহাফের ঘটনা দ্বারা মহান অল্লাহ মানুষকে যেসকল বিষয়ে শিক্ষা দিতে চেয়েছেন তা উল্লেখযোগ‌্য কয়েকটি হলো:-

১। নবী মুহাম্মদ (সঃ) এর নবুয়তের সাক্ষ‌্য। কোরাইশরা যখন মহানবীর নবুয়‌্যত সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করে ইহুদি আলেমদের শিখানো প্রশ্ন করে নিশ্চিত হতে চাইল তখন মহান আল্লাহ নবীর প্রতি ছুঁড়ে দেয়া তাদের কঠিন প্রশ্নের জবাব দিয়ে নবীর সত‌্যতা প্রমাণ করলেন।

২। আল্লাহর ওয়াদা সত‌্য ও কেয়ামত সত‌্য। মাহান আল্লাহ সূরা কাহাফের ২১ নং আয়াতে বলেন-“এমনিভাবে আমি তাদের খবর প্রকাশ করে দিলাম, যাতে তারা জ্ঞাত হয় যে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য এবং কেয়ামতে কোন সন্দেহ নেই।”
৩। খাদ‌্য ছাড়া বেঁচে থাকা। আল্লাহ ইচ্ছা করলে কোন মানুষকে খাদ‌্য ছাড়াই বাঁচিয়ে রাখতে পারেন;যেমন রেখেছিলেন আসহাবে কাহফদের ৩০৯ বছর।

৪। “সূর্য ঘুরে না পৃথিবী ঘুরে” বিজ্ঞানের এই বক্তব‌্য অসার প্রমাণিত। সূরা কাহফের ১৭ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন-“ তুমি সূর্যকে দেখবে, যখন উদিত হয় তাদের গুহা থেকে পাশ কেটে ডান দিকে চলে যায় এবং যখন অস্ত যায় তাদের থেকে পাশ কেটে বামদিকে চলে যায় অথচ তারা গুহার প্রশস্ত চত্বরে অবস্থিত। এটা আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অন্যতম। আল্লাহ যাকে সৎপথে চালান, সেই সৎপথ প্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, আপনি কখনও তার জন্যে পথপ্রদর্শনকারী ও সাহায্যকারী পাবেন না।”

৫। সৎ পথের দিশা আল্লাহর দান। “আল্লাহ যাকে সৎপথে চালান, সেই সৎপথ প্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, আপনি কখনও তার জন্যে পথপ্রদর্শনকারী ও সাহায্যকারী পাবেন না।”

৬. আসহাবে কাহাফের সংখ‌্যা। আসহাবে কাহাফের লোক আসলে কতজন ছিলো, তারা কোথায়, কত সালে বসবাস করতো এইগুলো জানা আমাদের ঈমান ও আমলের জন্যে জরুরী নয়, সেইজন্য আল্লাহ এর বিস্তারিত বর্ণনা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম জানানোর প্রয়োজন মনে করেন নি, এবং এনিয়ে আহলে কিতাবীদের কাউকে প্রশ্ন করতেও তিনি নিষেধ করে দিয়েছেন। তবে তাদের ঘটনা থেকে আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা রয়েছে, সেজন্যে সেই ঘটনা সাধারণভাবে আলোচনা করেছেন। এ আলোকে বলা যেতে পারে, আমাদের উচিৎ আমাদের জন্যে যেই জিনিসটা জানা জরুরী, শুধুমাত্র সেই ব্যপারেই প্রশ্ন করা। দ্বীন শিক্ষার্থীদের জন্যে জানা জরুরী নয়, এমন অহেতুক প্রশ্ন করার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। এনিয়ে হাদীসেও সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে।

৭. আল্লাহর ক্ষমতার নিদর্শন। আসহাবে কাহাফের লোকেরা একটানা ৩০৯ বছর ঘুমিয়ে ছিলেন, এরপর আল্লাহ তাদেরকে জাগ্রত করেন। এটা আল্লাহর একটা ক্ষমতার নিদর্শন। এর দ্বারা কাফের মুশরেকদের এই সন্দেহ দূর করা হয়েছে যে, এমনিভাবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ সমস্ত মানুষকে পুনরায় সমবেত করতে পারবেন, এনিয়ে সংশয়ের কিছু নেই।

৮. সৎসঙ্গে থাকার চেষ্টা করা। আসহাবে কাহাফের লোকদের সাথে একটা কুকুর সংগী হয়েছিলো। নেককার মানুষদের সংগী হওয়ার জন্যে একটা সাধারণ কুকুরের কথা ক্বুরান মাজীদের মতো শ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর দ্বারা প্রমানিত হয় যে, নেককার লোকদের সংস্পর্শ ও তাদের অনুসরণের দ্বারা একজন পাপী লোকও অনেক বড় মর্যাদার অধিকারী হতে পারে। সেইজন্যে আমাদেরকে মুত্তাক্বী লোকদের সাহচর্য ও বন্ধুত্বের জন্যে চেষ্টা করতে হবে। মানুষের জীবনে বড় সংগী হচ্ছে তার স্বামী বা স্ত্রী। সে হিসেবে, বিয়ের জন্যে সৌন্দর্য, সম্পদ, বংশ মর্যাদা, দুনিয়াবী শিক্ষা-দীক্ষা থেকে তাক্বওয়া, সৎচরিত্র, দ্বীনি জ্ঞানকে প্রাধান্য দিতে হবে।

উপসংহার:
মহান আল্লাহ আমাদেরকে ইমান সংরক্ষণ করার শক্তি দান করুন এবং সৎ মানুষের সাহচর্যে থাকার তৌফিক দান করুন। আমীন।


মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান
বিতর্ক সহ-সম্পাদক
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়।
তারিখ: ২৩-১০-২০১৬
বিষয়শ্রেণী: অন্যান্য
ব্লগটি ২৯৪৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৬/১১/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

 
Quantcast