হযরত ঈসা (আঃ) মানুষের বিশ্বাস এবং প্রকৃত সত্য
ঈসা (আ:) সম্পর্কে মানুষের বিশ্বাস:
১। ইহুদীদের বিশ্বাস: ইহুদীদের বিশ্বাস এই যে, ঈসা (আঃ) নবুওয়তের মিথ্যা দাবীদার ছিলেন। এ জন্য তৌরাতের ব্যবস্থা (দ্বিতীয় বিবরণ - ২১:২৩ দ্রষ্টব্য) অনুযায়ী তাঁকে শূলে দিয়ে অভিশপ্ত করে বধ করা হয়েছে।
২। খ্রীস্টানদের বিশ্বাস: খ্রীস্টানরা বিশ্বাস করে যে, ঈসা (আঃ) খোদার পুত্র ছিলেন। তিনি পাপী মানব জাতির পাপের প্রায়শ্চিত্তের জন্য শূলে অভিশপ্ত মৃত্যুবরণ করে তিন দিন পর পুনরায় জীবিত হয়ে আকাশে উঠে খোদার দক্ষিণ পার্শ্বে বসে আছেন। (ইব্রীয়-৯:২৭-২৮, মার্ক-১৬:১৯ দ্রষ্টব্য)
৩। অ-আহ্মদীদের বিশ্বাস: গয়ের আহ্মদীদের বিশ্বাস এই যে, ঈসা (আঃ) আল্লাহ্র এক নবী ছিলেন। তাঁকে ইহুদীগণ শূলে দিয়ে বধ করতে চেষ্টা করেছিল, কিন্তু আল্লাহ্ তাঁকে উঠিয়ে চতুর্থ আকাশে নিজের কাছে নিয়ে গিয়েছেন, আর ঈসা (আঃ)-এর আকৃতি বিশিষ্ট অন্য এক ব্যক্তিকে শূলে দিয়ে বধ করেছে।
৪। আহ্মদীদের বিশ্বাস: আহ্মদীগণ বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহ্র নবী ঈসা (আঃ) কে ইহুদীরা অভিশপ্ত করে বধ করবার জন্য শূলে দিয়েছিল। কিন্তু তিনি শূলে প্রাণত্যাগ করেননি। শিষ্যদের চেষ্টায় মুর্ছিত অবস্থায় শূল থেকে নামবার পর বহু বৎসর জীবিত থেকে তিনি স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেছেন।
ঈসা আঃ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ কি বলেন:
শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)এর প্রায় সাড়ে পাঁচশ' বছর আগে পৃথিবীর বুকে আগমন করেছিলেন হযরত ঈসা (আঃ)। হযরত ঈসা (আঃ) একদিকে ছিলেন মানবপ্রেম ও ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রগামী অন্যদিকে ছিলেন জুলুম, বৈষম্য ও অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অনুকরণীয় আদর্শ। মহান আল্লাহ তাঁকে তাওরাত, ইঞ্জিল ও বিজ্ঞান শিক্ষা দিয়ে বনী ইসরাইলীদের কাছে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছিলেন।
তাঁর সম্পর্কে সঠিক ও বিস্তৃত ধারণা দেওয়া অত্যন্ত জরুরী বিবেচনা করে আল্লাহ পাক শেষনবী মুহাম্মদ (সঃ)-এর মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন। উল্লেখ্য যে, মূসা (আঃ)-এর অনুসারী হওয়ার দাবীদার ইহুদীরা তাঁকে নবী বলেই স্বীকার করেনি। অত্যন্ত লজ্জাষ্করভাবে তারা তাঁকে জনৈক ইউসুফ মিস্ত্রীর জারজ সন্তান বলে আখ্যায়িত করেছে (নাঊযুবিল্লাহ)। অন্যদিকে ঈসা (আঃ)-এর ভক্ত ও অনুসারী হবার দাবীদার খৃষ্টানরা বাড়াবাড়ি করে তাঁকে ‘আল্লাহর পুত্র’ (তওবাহ ৯/৩০) বানিয়েছে’। বরং ত্রিত্ববাদী খৃষ্টানরা তাঁকে সরাসরি ‘আল্লাহ’ সাব্যস্ত করেছে এবং বলেছে যে, তিনি হলেন তিন আল্লাহর একজন (ثَالِثُ ثَلَثَةٍ =মায়েদাহ ৭৩)। অর্থাৎ ঈসা, মারিয়াম ও আল্লাহ প্রত্যেকেই আল্লাহ এবং তারা এটাকে ‘বুদ্ধি বহির্ভূত সত্য’ বলে ক্ষান্ত হয়। অথচ এরূপ ধারণা পোষণকারীদের আল্লাহ দ্ব্যর্থহীনভাবে ‘কাফের’ বলে ঘোষণা করেছেন ।
“তারা কাফের, যারা বলে যে, মরিময়-তনয় মসীহ-ই আল্লাহ; অথচ মসীহ বলেন, হে বণী-ইসরাঈল, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর, যিনি আমার পালন কর্তা এবং তোমাদেরও পালনকর্তা। নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই।” (মায়েদাহ ৫/৭২)।
“নিশ্চয় তারা কাফের, যারা বলেঃ আল্লাহ তিনের এক; অথচ এক উপাস্য ছাড়া কোন উপাস্য নেই। যদি তারা স্বীয় উক্তি থেকে নিবৃত্ত না হয়, তবে তাদের মধ্যে যারা কুফরে অটল থাকবে, তাদের উপর যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি পতিত হবে।” (মায়েদাহ ৫/৭৩)।
তিনি কিতাবধারী রাসূল ছিলেন এবং পালন কর্তার নিকট থেকে নিদর্শনসমূহ নিয়ে এসছেন। তিনি জন্মের পর অর্থাৎ দোলনা থেকেই কথা বলতে পারতেন এবং তিনি যা বলতেন, সত্য বলতেন। সেই ছোটবেলা থেকেই তাঁর ওপর দায়িত্ব বর্তিত হয়েছিল বনী ইসরাঈলকে এক আল্লাহর ইবাদত বা তৌহিদের পথে আহ্বান জানানোর। তিনি তাঁর নবুয়্যতের প্রমাণ স্বরূপ বহু মোজেযা দেখিয়েছেন। তিনি ভাস্কর্য তৈরীর কাদামাটি দিয়ে পাখি তৈরী করেন এবং তার ভেতর ফুঁ দিলে আল্লাহর আদেশে পাখিটার ভেতর প্রাণের সঞ্চার হয়। প্রাণিত হবার পর মাটি দিয়ে তৈরী পাখিটা উড়ে যায়। তিনি জন্মান্ধ এবং বধিরদেরকে আল্লাহর দেওয়া মোজেযার সাহায্যে সুস্থ করে দিতেন। কুষ্ঠ রোগীরাও তাঁর হাতের ছোঁয়ায় সুস্থ হয়ে যেত। এমনকি মৃতদেরকেও তিনি আল্লাহর দেওয়া অলৌকিক শক্তি বলে জীবিত করে দেন। তার বর্ণনা প্রসঙ্গে সূরা আলে ইমরানের ৪৮ ও ৪৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন-
“আর তাকে তিনি শিখিয়ে দেবেন কিতাব, হিকমত, তওরাত, ইঞ্জিল।”
“আর বণী ইসরাঈলদের জন্যে রসূল হিসেবে তাকে মনোনীত করবেন। তিনি বললেন নিশ্চয়ই আমি তোমাদের নিকট তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে এসেছি নিদর্শনসমূহ নিয়ে। আমি তোমাদের জন্য মাটির দ্বারা পাখীর আকৃতি তৈরী করে দেই। তারপর তাতে যখন ফুৎকার প্রদান করি, তখন তা উড়ন্ত পাখীতে পরিণত হয়ে যায় আল্লাহর হুকুমে। আর আমি সুস্থ করে তুলি জন্মান্ধকে এবং শ্বেত কুষ্ঠ রোগীকে। আর আমি জীবিত করে দেই মৃতকে আল্লাহর হুকুমে। আর আমি তোমাদেরকে বলে দেই যা তোমরা খেয়ে আস এবং যা তোমরা ঘরে রেখে আস। এতে প্রকৃষ্ট নিদর্শন রয়েছে, যদি তোমরা বিশ্বাসী হও।”
সূরা মারিয়ামের ১৬ থেকে ৩৪ এবং ৩৭-৩৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহপাক ঈসা (আঃ)-এর জন্ম-পরিচয় তাঁর মা মারইয়ামের সম্পর্কে বলেছেন-
“এই কিতাবে মারইয়ামের কথা বর্ণনা করুন, যখন সে তার পরিবারের লোকজন থেকে পৃথক হয়ে পূর্বদিকে এক স্থানে আশ্রয় নিল।” ১৬।
“অতঃপর তাদের থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্যে সে পর্দা করলো। অতঃপর আমি তার কাছে আমার রূহ প্রেরণ করলাম, সে তার নিকট পুর্ণ মানবাকৃতিতে আত্নপ্রকাশ করল।” ১৭।
“মারইয়াম বললঃ আমি তোমা থেকে দয়াময়ের আশ্রয় প্রার্থনা করি যদি তুমি আল্লাহভীরু হও।” ১৮।
“সে বললঃ আমি তো শুধু তোমার পালনকর্তা প্রেরিত, যাতে তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করে যাব।” ১৯।
“মরিইয়াম বললঃ কিরূপে আমার পুত্র হবে, যখন কোন মানব আমাকে স্পর্শ করেনি এবং আমি ব্যভিচারিণীও কখনও ছিলাম না ?” ২০।
“সে বললঃ এমনিতেই হবে। তোমার পালনকর্তা বলেছেন, এটা আমার জন্যে সহজ সাধ্য এবং আমি তাকে মানুষের জন্যে একটি নিদর্শন ও আমার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ স্বরূপ করতে চাই। এটা তো এক স্থিরীকৃত ব্যাপার।” ২১।
“অতঃপর তিনি গর্ভে সন্তান ধারণ করলেন এবং তৎসহ এক দূরবর্তী স্থানে চলে গেলেন।” ২২।
“প্রসব বেদনা তাঁকে এক খেজুর বৃক্ষ-মূলে আশ্রয় নিতে বাধ্য করল। তিনি বললেনঃ হায়, আমি যদি কোনরূপে এর পূর্বে মরে যেতাম এবং মানুষের স্মৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে, যেতাম!” ২৩।
“অতঃপর ফেরেশতা তাকে নিম্নদিক থেকে আওয়ায দিলেন যে, তুমি দুঃখ করো না। তোমার পালনকর্তা তোমার পায়ের তলায় একটি নহর জারি করেছেন।” ২৪।
“আর তুমি নিজের দিকে খেজুর গাছের কান্ডে নাড়া দাও, তা থেকে তোমার উপর সুপক্ক খেজুর পতিত হবে।” ২৫।
“যখন আহার কর, পান কর এবং চক্ষু শীতল কর। যদি মানুষের মধ্যে কাউকে তুমি দেখ, তবে বলে দিওঃ আমি আল্লাহর উদ্দেশে রোযা মানত করছি। সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোন মানুষের সাথে কথা বলব না।” ২৬।
“অতঃপর তিনি সন্তানকে নিয়ে তার সম্প্রদায়ের কাছে উপস্থিত হলেন। তারা বললঃ হে মারইয়াম, তুমি একটি অঘটন ঘটিয়ে বসেছ।” ২৭।
“হে হারূণ-ভাগিনী, তোমার পিতা অসৎ ব্যক্তি ছিলেন না এবং তোমার মাতাও ছিল না ব্যভিচারিনী ”২৮।
“অতঃপর তিনি হাতে সন্তানের দিকে ইঙ্গিত করলেন। তারা বললঃ যে কোলের শিশু তার সাথে আমরা কেমন করে কথা বলব?” ২৯।
“সন্তান বললঃ আমি তো আল্লাহর দাস। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী করেছেন।” ৩০।
“আমি যেখানেই থাকি, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যতদিন জীবিত থাকি, ততদিন নামায ও যাকাত আদায় করতে।” ৩১।
“এবং জননীর অনুগত থাকতে এবং আমাকে তিনি উদ্ধত ও হতভাগ্য করেননি।” ৩২।
“আমার প্রতি সালাম যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, যেদিন মৃত্যুবরণ করব এবং যেদিন পুনরুজ্জীবিত হয়ে উত্থিত হব।” ৩৩।
“এই মারইয়ামের পুত্র ঈসা। সত্যকথা, যে সম্পর্কে লোকেরা বিতর্ক করে।” ৩৪।
“অতঃপর তাদের মধ্যে দলগুলো পৃথক পৃথক পথ অবলম্বন করল। সুতরাং মহাদিবস আগমনকালে কাফেরদের জন্যে ধবংস।” ৩৭।
“সেদিন তারা কি চমৎকার শুনবে এবং দেখবে, যেদিন তারা আমার কাছে আগমন করবে। কিন্তু আজ জালেমরা প্রকাশ্য বিভ্রান্তিতে রয়েছে।” ৩৮।
মারিয়াম পুত্র ঈসা (আঃ) এবং মারিয়ামকে আল্লাহ বিশ্ববাসীর জন্য নিদর্শন করেছিলেন। আল্লাহ পাক নিজেই মারিয়ামের সতীত্ব সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ সম্পর্কে সূরা আম্বিয়ার ৯১ আয়াত এবং সূরা তাহরীমের ১২ আয়াতে আল্লাহ বলেন-
“এবং সেই নারীর কথা আলোচনা করুন, যে তার কামপ্রবৃত্তিকে বশে রেখেছিল, অতঃপর আমি তার মধ্যে আমার রূহ ফুঁকে দিয়েছিলাম এবং তাকে তার পুত্রকে বিশ্ববাসীর জন্য নিদর্শন করেছিলাম।”
“আর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন এমরান-তনয়া মরিয়মের, যে তার সতীত্ব বজায় রেখেছিল। অতঃপর আমি তার মধ্যে আমার পক্ষ থেকে জীবন ফুঁকে দিয়েছিলাম এবং সে তার পালনকর্তার বানী ও কিতাবকে সত্যে পরিণত করেছিল। সে ছিল বিনয় প্রকাশকারীনীদের একজন।”
আল্লাহপাক মানব জাতিকে একত্ববাদের দিকে আহ্বান করার জন্যে যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। নবী-রাসূলগণ আল্লাহর প্রতি মানুষের সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য একত্ববাদের কথা বলতে গিয়ে তাঁরা নানা ধরনের বাধা-বিপত্তি, ভয়-ভীতি, জুলুম নির্যাতন ও জানমালের ক্ষতির শিকার হয়েছেন। হযরত ঈসাও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিলেন না। মানুষের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে তাঁকে যেমন ত্যাগ-তিতিক্ষা সহ্য করতে হয়েছে তেমনি তাঁর কুমারী মাতা হযরত মারিয়াম (সা.আ.)কেও অনেক দুঃখ-কষ্ট ও অপমান সহ্য করতে হয়েছে।
হযরত মারিয়াম ছিলেন হযরত ইমরান (আ.) এর মেয়ে । আল্লাহর দরবারে মারিয়াম ছিলেন অসম্ভব মর্যাদার অধিকারী । আল্লাহ তাঁর ইবাদাত কবুল করেছেন এবং আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ চার জন নারীর একজন বলে মনে করতেন।
হযরত মারিয়াম ছোট্টবেলা থেকেই হযরত যাকারিয়া (আ.) এর তত্ত্বাবধানে ছিলেন। তিনি তাঁর প্রতিটা মুহূর্ত আল্লাহর ইবাদাতসহ অন্যান্য ধর্মীয় দায়িত্ব পালনে কাটাতেন। হযরত মরিয়ম আল্লাহর ইবাদত ও ধ্যানে এত মশগুল থাকতেন যে, নিজের খাবারের কথাও ভুলে যেতেন । কিন্তু মারিয়ামের অভিভাবকের দায়িত্বপালনকারী হযরত যাকারিয়া (আঃ) যখনই তাঁর কক্ষে যেতেন, তখনই সেখানে বেহেশতি খাবার দেখতে পেতেন। তিনি এত মর্যাদার অধিকারী হয়েছিলেন যে, নবী-রাসূল না হওয়া সত্ত্বেও তাঁর কথা পবিত্র কোরআনের অনেক জায়গায় বর্ণনা করা হয়েছে।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কি বলেন:
১(ক) আবু হুরাইরা (রাঃ)হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন-ঐ সত্ত্বার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ, অচিরেই তোমাদের মাঝে মারিয়ামের পুত্র ঈসা (আঃ) শাসক ও ন্যায় বিচারক হিসাবে অবতরণ করবেন। তিনি ক্রুশ ভেঙে ফেলবেন, শূকর নিধন করবেন, এবং তিনি যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটাবেন। তখন সম্পদের স্রোত বয়ে চলবে। এমনকি কেউ তা গ্রহণ করতে চাইবে না।তখন আল্লাহকে একটি সেজদা করা দুনিয়া এবং দুনিয়াতে যা কিছু আছে তারচেয়ে উত্তম হবে। অতঃপর আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন-যদি চাও তাহলে কুরআনের ঐ আয়াত পাঠ করঃ কিতাবীদের মধ্যে প্রত্যেকে তাঁর (ঈসা আঃ এর) মৃত্যুর পূর্বে তাঁকে বিশ্বাস করবেই এবং কিয়ামতের দিন তিনি তাদের সম্পর্কে সাক্ষ্য দিবেন।(বুখারি হাদীস নং-৩২০৫ ইফাবা)
(খ) আবু হুরাইরা (রাঃ)হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন-তখন তোমাদের কেমন (আনন্দের) হবে যখন তোমাদের মাঝে মারিয়াম তনয় ঈসা (আঃ) অবতরণ করবেন এবং তোমাদের ইমাম তোমাদের মধ্য থেকেই হবে।(বুখারি হাদীস নং-৩২০৬ ইফাবা)
পর্যালোচনা:
সূরা নিসা এর ১৫৭, ১৫৮, ১৫৯ আয়াতঃ
“আর তাদের একথা বলার কারণে যে, আমরা মরিয়ম পুত্র ঈসা মসীহকে হত্যা করেছি যিনি ছিলেন আল্লাহর রসূল। অথচ তারা না তাঁকে হত্যা করেছে, আর না শুলেতে চড়িয়েছে, বরং তারা এরূপ ধাঁধায় পতিত হয়েছিল। বস্তুতঃ তারা এ ব্যাপারে নানা রকম কথা বলে, তারা এক্ষেত্রে সন্দেহের মাঝে পড়ে আছে, শুধুমাত্র অনুমান করা ছাড়া তারা এ বিষয়ে কোন খবরই রাখে না। আর নিশ্চয়ই তাঁকে তারা হত্যা করেনি।”
“বরং তাঁকে উঠিয়ে নিয়েছেন আল্লাহ তা’আলা নিজের কাছে। আর আল্লাহ হচ্ছেন মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”
“আর আহলে-কিতাবদের মধ্যে প্রত্যেকে তাঁর (ঈসা আঃ এর) মৃত্যুর পূর্বে তাঁকে বিশ্বাস করবেই এবং কিয়ামতের দিন তিনি তাদের সম্পর্কে সাক্ষ্য দিবেন।”
সূরা আল ইমরান আয়াত ৫৫:
“আর স্মরণ কর যখন আল্লাহ বললেন, হে ঈসা! আমি তোমাকে ওফাত দিব এবং তোমাকে আমার কাছে তুলে নেব এবং তোমাকে কাফিরদের হাত থেকে মুক্ত করব। আর যারা তোমার অনুসরণ করবে, তাদেরকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত কাফিরদের বিরুদ্ধে বিজয়ী করে রাখবো। অতঃপর তোমাদের সবাইকে আমার কাছে ফিরে আসতে হবে, তখন আমি তোমাদের মধ্যকার বিবাদীয় বিষয়ে ফায়সালা করে দেব।”
সূরা যুখরুফ আয়াত ৬১:
“ঈসার দুনিয়াতে পুনরায় আগমন কিয়ামতের একটি নিশ্চিত নিদর্শন। অতএব তোমরা কিয়ামতে সন্দেহ পোষণ করো না। আর আমার অনুসরন কর, এটাই সরল সঠিক পথ।”
সূরা আল ইমরান আয়াত ১৪৫:
“আর আল্লাহর আদেশে ধারযকৃত লিপিবদ্ধ নির্দিষ্ট সময় ব্যতীত কেউ মৃত্যুমুখে পতিত হয় না। বস্তুতঃ যে লোক দুনিয়ায় বিনিময় কামনা করবে, আমি তাকে তা দুনিয়াতেই দান করব। পক্ষান্তরে-যে লোক আখেরাতে বিনিময় কামনা করবে, তা থেকে আমি তাকে তাই দেবো। আর যারা কৃতজ্ঞ তাদেরকে আমি প্রতিদান দেবো”
সূরা মায়িদা আয়াত ১১৭:
“আমি তো তাদেরকে কিছুই বলিনি, শুধু সে কথাই বলেছি যা আপনি বলতে আদেশ করেছিলেন যে, তোমরা আল্লাহর দাসত্ব অবলম্বন কর যিনি আমার ও তোমাদের পালনকর্তা আমি তাদের সম্পর্কে অবগত ছিলাম যতদিন তাদের মধ্যে ছিলাম। অতঃপর যখন আপনি আমাকে লোকান্তরিত করলেন, তখন থেকে আপনিই তাদের সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। আপনি সর্ববিষয়ে পূর্ণ পরিজ্ঞাত।”
সূরা আম্বিয়া ৭, ৮, ৯ আয়াতঃ
“আপনার পূর্বে আমি ওহীসহ বহু পুরুষই প্রেরণ করেছি,। অতএব তোমরা যদি না জান তবে যারা স্মরণ রাখে(জ্ঞানী) তাদেরকে জিজ্ঞেস কর।”
“আমি তাদেরকে এমন দেহ বিশিষ্ট করিনি যে, তারা খাদ্য ভক্ষণ করত না এবং তারা চিরস্থায়ীও ছিল না।”
“অতঃপর আমি তাদেরকে দেয়া আমার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করলাম সুতরাং তাদেরকে এবং যাদেরকে ইচ্ছা বাঁচিয়ে দিলাম এবং ধবংস করে ছিলাম সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে।”
সূরা আম্বিয়া ৩৪, ৩৫ আয়াতঃ
“আপনার পূর্বেও কোন মানুষকে আমি অনন্ত জীবন দান করিনি। সুতরাং আপনার মৃত্যু হলে তারা কি চিরঞ্জীব হবে?”
“প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।”
সূরা ফাতির আয়াত ৪৩:
“পৃথিবীতে ঔদ্ধত্যের কারণে এবং কুচক্রের কারণে। কুচক্র কুচক্রীদেরকেই ঘিরে ধরে। তারা কেবল পূর্ববর্তীদের দশারই অপেক্ষা করছে। অতএব আপনি আল্লাহর বিধানে পরিবর্তন পাবেন না এবং আল্লাহর রীতি-নীতিতে কোন রকম বিচ্যুতিও পাবেন না।”
সূরা যুমার আয়াত ৩০:
“নিশ্চয় তোমারও মৃত্যু হবে এবং তাদেরও মৃত্যু হবে।”
সূরা বানীইসরাইল আয়াত ৩৬:
“যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তার পিছনে পড়ো না। নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে।”
আল্লাহ হযরত ঈসা (আঃ)কে তাঁর দিকে উঠিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন (আল ইমরান আয়াত ৫৫)এবং আল্লাহ তাকে নিজের দিকে উঠিয়ে নেয়ার স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন (নিসা আয়াত ১৫৮)।ঈসা (আঃ)কে কেউ হত্যা্ কিংবা ক্রুশ বিদ্ধও করতে পারেনি। প্রকৃতপক্ষে ঈসা (আঃ) এর কি হয়েছিল সে সম্পর্কে তখনকার লোকেরা সন্দেহের মধ্যে ছিল; কল্পনার অনুসরণ ব্যতীত তাদের কোন জ্ঞান ছিল না এবং পকৃত পক্ষে তারা তাঁকে হত্যা করেনি (নিসা আয়াত ১৫৭)।
অতএব এ কথা পরিষ্কার যে, মহান আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ও ঘোষণা অনুযায়ী ঈসা (আঃ)কে আল্লাহ তাঁর কাছে তুলে নিয়েছেন।
এখন প্রশ্ন হলো তাঁকে জীবিত অবস্থায় নাকি স্বাভাবিক মৃত্যুর মাধ্যমে উঠিয়ে নিয়েছেন।
ঈসা (আঃ) এখনও জীবিত না তাঁর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে এ বিষয়ে আল্লাহ পরিষ্কার কিছু বলেননি।
যারা ঈসা (আঃ) মারা গেছেন বলে দাবী করে তাদের যুক্তি হলো যদি আল্লাহ তাঁকে জীবিত উঠিয়ে নিয়ে থাকেন তবে তিনি কেমন করে অনন্তকাল বেঁচে আছেন (আম্বিয়া ৩৪, যুমার ৩০)। মৃত্যু না হলে মাটির দেহ উপরে উঠতে পারে না। আর মানুষের মৃত্যুর পর আবার পৃথিবীতে ফিরে আসা আল্লাহর নিয়মের ব্যতিক্রম।আল্লাহর নিয়মের কোন ব্যতিক্রম হয় না(ফাতির ৪৩)। তাই তিনি আর পৃথিবীতে ফিরে আসবেন না। তারা এটিও দাবী করে যে, মহানবী (সঃ) মেরাজের রাতে তাঁর পূর্বে গত হওয়া নবী-রাসূলদের সাথে ঈসা (আঃ)কেও দেখেছেন। এজন্য তারা ‘রাফা’ শব্দটি ‘সম্মানজনক মৃত্যু’ অর্থে ব্যবহার করেছে। আবার ‘তাওয়াফ্ফাইতানী’ শব্দটিকেও তার ‘মৃত্যু’ অর্থে ব্যবহার করেছে।যার অন্য অর্থ ‘লোকান্তরিত করা’, “তুলে নেওয়া”, “হরণ করা”, “করায়ত্ত করা”।
আল্লাহ মানুষের প্রাণ দুইভাবে তুলে নিতে পারেন। (১) মৃত্যুর মাধ্যমে, (২) মৃত্যু না হয়েও ঘুমের মাধ্যমে।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সূরা যুমার এর ৪২ নং আয়াতে বলেন-
“আল্লাহ মানুষের প্রাণ উঠিয়ে নেন তার মৃত্যুর সময়, আর যে মরে না, তার নিদ্রাকালে। অতঃপর যার মৃত্যু অবধারিত করেন, তার প্রাণ ছাড়েন না এবং অন্যান্যদের ছেড়ে দেন এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।”
সূরা আন আম এর ৬০ আয়াতে আল্লাহ বলেন-
“আর সেই মহা প্রভুই রাত্রিকালে নিদ্রারূপে তোমাদের এক প্রকার মৃত্যু ঘটিয়ে থাকেন, আর দিনের বেলা তোমরা যা কর তা তিনি সম্যক পরিজ্ঞাত; অতঃপর তিনি নির্দিষ্ট সময়কাল পূরণের নিমিত্ত তোমাদেরকে নিদ্রা থেকে জাগিয়ে থাকেন, তার পর পরিশেষে তাঁর কাছেই তোমাদেরকে ফিরে যেতে হবে, তখন তিনি তোমাদেরকে তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অবহিত করবেন।”
এখানে “নিদ্রারূপ মৃত্যু” অর্থে তাওয়াফফা শব্দটি ব্যবহার হয়েছে।
অতএব, দেখা যায়, মহান আল্লাহ মানুষকে মৃত্যু না দিয়েও তার প্রাণ তুলে নিতে পারেন বা করায়ত্ত করতে পারেন।
তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেয়া হয় যে, আল্লাহ তাঁকে জীবিত অবস্থায় উঠিয়ে নিয়েছেন এবং তিনি এখনও জীবিত তাতেও কোন সমস্যা নেই। কারণ আল্লাহর পক্ষে এমন কাজ কোন কঠিন ব্যাপার নয়। তাছাড়া যারা ঈসা (আঃ)কে মৃত দাবী করে তাদের যুক্তি অনুযায়ী মহানবী (সঃ) মেরাজের রাতে তাঁর পূর্বে গত হওয়া নবী-রাসূলদের সাথে ঈসা (আঃ)কে জীবিতই দেখেছেন, মৃত নয়। আল্লাহর ধার্যকৃত লিপিবদ্ধ নির্দিষ্ট সময় ব্যতীত কেউই মৃত্যুমুখে পতিত হয় না (আল ইমরান ১৪৫)। মানুষের মৃত্যুর জন্য ধার্যকৃত সময় কার কখন এটা কেউ জানে না। ঈসা (আঃ) এর জন্য ধার্যকৃত নির্দিষ্ট মৃত্যুর সময় কেবল আল্লাহই ভাল জানেন। এটি অনন্তকাল পরে হলেও কোন সমস্যা নেই। ঈসা (আঃ) এর জন্ম, অন্তর্ধ্যান এবং ফিরে আসা আল্লাহর অসীম ক্ষমতা ও কুদরতের দৃষ্টান্ত বা নিদর্শন(আল ইমরান ৫৯)।
আর যদি ধরে নেয়া হয় যে, তাঁর স্বাভাবিক মৃত্যুর মাধ্যমে আল্লাহ তাঁকে উঠিয়ে নিয়ে গেছেন। মৃত্যুর পর কিভাবে আবার দুনিয়াতে আসবেন। তাতেও কোন সমস্যা নেই, কারণ আল্লাহ জীবিতকে মৃত এবং মৃতকে জীবিত করতে পারেন (আল ইমরান ২৭)।
অনেকের প্রশ্ন ঈসা (আঃ)-এর অনন্তকাল বেঁচে থাকা কিংবা মৃত্যুর পর আবার ফিরে আসা আল্লাহর নিয়মের ব্যতিক্রম নয় কি?
আল্লাহর নিয়মের ব্যতিক্রম হয় না এর অর্থ এই নয় যে, আল্লাহ নিজে ইচ্ছা করলে ব্যতিক্রম করতে পারেন না। তিনি ইচ্ছা করলে তার নিয়মের ব্যতিক্রম করতে পারেন। আল্লাহ চাইলে সূরযকে পূর্ব দিকের বদলে পশ্চিম দিক থেকে উদিত করতে পারেন। কিন্তু কোন মানুষের পক্ষে এই নিয়মের ব্যতিক্রম করা সম্ভব নয় কিংবা নিজে থেকে এই নিয়মের ব্যতিক্রম হবে না। এ জন্য বলা হয়ে যে, আল্লাহর নিয়মের ব্যতিক্রম হয় না। কুরআনের বহু আয়াতে বলা হয়েছে “ইন্নাকা আলা কুল্লি শায়্যিন ক্বাদির” অর্থ-নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাশীল (আল ইমরান ২৬)। তিনি ইচ্ছা করলে সব কিছুই করতে পারেন।
যেহেতু ঈসা (আঃ)-এর জন্মগ্রহণের ব্যাপারটি সম্পূর্ণভাবে অলৌকিক, তাই তাঁকে তাঁর মায়ের গর্ভধারণের মেয়াদ স্বাভাবিক নিয়মের বহির্ভূত ছিল বলেই ধরে নিতে হবে। নয় মাস দশদিন পরে সন্তান প্রসব শেষে চল্লিশ দিন ‘নেফাস’ অর্থাৎ রজঃস্রাব হ’তে পবিত্রতার মেয়াদও এখানে ধর্তব্য না হওয়াই সমীচীন। অতএব ঈসাকে গর্ভধারণের ব্যাপারটাও যেমন নিয়ম বহির্ভূত, তার ভূমিষ্ট হওয়া ও তার মায়ের পবিত্রতা লাভের পুরা ঘটনাটাই নিয়ম বহির্ভূত এবং অলৌকিক। আর এটা আল্লাহর জন্য একেবারেই সাধারণ বিষয়। স্বামী-স্ত্রীর মাধ্যমে সন্তান জন্ম হবে, মাকে দশ মাস গর্ভধারণ করতে হবে ইত্যাদি নিয়ম আল্লাহরই সৃষ্টি এবং এই নিয়ম ভেঙ্গে সন্তান দান করাও তাঁরই এখতিয়ার। এদিকে ইঙ্গিত করেই আল্লাহ আলে ইমরান ৩/৫৯-৬০ আয়াতে বলেন,
“নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত হচ্ছে আদমেরই মতো। তাকে মাটি দিয়ে তৈরী করেছিলেন এবং তারপর তাকে বলেছিলেন হয়ে যাও, সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেলেন।”
“যা তোমার পালকর্তা বলেন তাই হচ্ছে যথার্থ সত্য। কাজেই তোমরা সংশয়বাদী হয়ো না।”
মাটির দেহ নিয়ে কেহ উপরে উঠতে পারে না কথাটি সত্য হলেও মহান আল্লাহ উঠাতে পারেন না এমনটি নয়। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাও করতে পারেন। মহানবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর জীবনে মেরাজের ঘটনা তা প্রমাণ করে। পবিত্র কুরআনের সূরা বানী ইসরাইলের ১নং আয়াতে আল্লাহ বলেন-
“পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যান্ত-যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল।”
এক রাতে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা, সেখান থেকে আরশে আযীম পর্যন্ত ভ্রমণ করা প্রমাণ করে যে, মাটির দেহের মানুষ সশরীরে উপরে উঠতে পারে। কেননা মুহাম্মদ (সঃ) এর অল্প সময়ে এই ভ্রমণ স্থল বা নদী পথে মানুষের তৈরি কোন যান্ত্রিক যানে কখনও সম্ভব ছিল না। কেবল আকাশ পথেই সম্ভব, তাও সে সময়ের কোন যান্ত্রিক যানে নয়, কেবল আল্লাহর অশেষ কুদরতের যানে করে। ঈসা (আঃ) এর উপরে উঠাও আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন। এটি অবিশ্বাস করার কিছু নেই। আর আল্লাহর কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেয়ার জন্যই মুহাম্মদ (সঃ) এর জীবনে মেরাজের ঘটনা ঘটেছিল যার কথা আল্লাহ স্পষ্ট করে মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন।
মহানবী (সঃ) মেরাজের রাতে তাঁর পূর্বে গত হওয়া নবী-রাসূলদের সাথে ঈসা (আঃ)কে দেখেছেন বলে যারা ঈসা (আঃ) এর মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত প্রমাণ করতে চাইছেন তাদের জ্ঞাতার্থে একটি কথা বলা প্রয়োজন মনে করছি। মানুষের জীবন দুইটি। একটি হলো তার জন্মের পরে দুনিয়ার জীবন। আরেকটি হলো মৃত্যুর পরে আখেরাতের জীবন। আখেরাতের জীবনে প্রবেশ করতে হলে তাকে মৃত্যুবরণ করতে হবে। মৃত্যু না হলে মানুষ আখেরাতের জীবনে প্রবেশ করতে পারবে না। আর মৃত্যুর পর আখেরাতের জীবন থেকে মানুষ আর দুনিয়ার জীবনে ফিরে আসতে পারবে না। তাহলে মহাননবী (সঃ) এর পূর্বে গত হওয়া নবী-রাসূলগণ আখেরাতের জীবনে চলে গেছেন। তাদের সাথে দুনিয়ার মানুষেরতো দেখা হওয়ার কথা নয়। অথচ এটিই সত্য যে, তাঁদের সাথে তাঁর দেখা হয়েছিল। তাহলে কি মাহনবী (সঃ) মেরাজের রাতে মৃত্যুবরণ করে আখেরাতে জীবনে প্রবেশ করেছিলেন? যদি তাই হয় রাতের মধ্যেই দুনিয়ার জীবনে কিভাবে ফিরে এলেন? রাতের মধ্যে আখেরাতের জীবনে প্রবেশ এবং আবার দুনিয়াতে ফিরে আসা এটি কি আল্লাহর নিয়মের ব্যতিক্রম নয়? আসলে এসব ঘটনা মহান আল্লাহর অসীম ক্ষমতার দৃষ্টান্ত। এগুলো বিনা তর্কে বিশ্বাস করতে হবে।
ডিজিটাল যুগে একটি ডিজিটাল উদাহরণ:
মনেকরুন কোন ব্যক্তি একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করে বাজারে ছেড়েছে যার সিকিউরিটি কোড কেবল তিনিই জানেন। অন্য কেউ এর পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন, সম্পাদনা ইত্যাদি করতে পারবে না। কেবল যে এর সিকিউরিটি কোড জানে সে-ই পারবে। তবে দুর্বল কোডের জন্য হেকিংয়ের শিকার হওয়া স্বতন্ত্র ব্যাপার।
তদ্রুপ মহান আল্লাহ এই বিশ্বজগত সৃষ্টি করে যে প্রোগ্রামের আওতায় পরিচালনা করছেন তার সিকিউরিটি কোড কেবলমাত্র তিনিই জানেন। এই কোড এতই শক্তিশালী যে, কারো পক্ষে এটি ভেঙ্গে এর পরিবর্তন বা নতুন কিছু সংযোজন করা সম্ভব নয়।কিংবা আপনা থেকে এটিতে কোন পরিবর্তন হবে না। মহান আল্লাহই কেবল এর পরিবর্তন বা ব্যতিক্রম করতে পারেন। মহান আল্লাহ যে, সবকিছু পারেন তা কিছু ব্যতিক্রমী ঘটনার মাধ্যমে মানুষের নিকট নিদর্শন স্থাপন করেছেন। সাধারণ নিয়ম আর ব্যতিক্রমী ঘটনা এক করে ফেলা ঠিক নয়।
আলোচনায় যেসকল সত্য বেরিয়ে আসে:
১। ঈসা (আঃ)নিজে আল্লাহ, বা আল্লাহর পুত্র নন; (মায়েদাহ ৭২-৭৩)
২। তিনি পবিত্র মাতা মারিয়ামের পুত্র; (মারিয়াম ১৯)
৩। তিনি নবুয়্যতের মিথ্যা দাবীদার ছিলেন না। তিনি কিতাবধারী সত্য দ্বীনের নবী ও রাসূল; (আল ইমরান ৪৮-৪৯, মারিয়াম ৩০)
৪। তাঁর পাপের জন্য তাঁকে কেউ হত্যা কিংবা ক্রশবিদ্ধও করতে পারেনি। (নিসা ১৫৭)
৫। তাঁকে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী উপরে তুলে নেয়া হয়েছে; (নিসা ১৫৮)
৬। মহান আল্লাহ মানুষকে মৃত্যু না দিয়েও তার প্রাণ তুলে নিতে পারেন বা করায়ত্ত করতে পারেন। (যুমার ৪২, আনআম ৬০)
৭। তিনি এখনও জীবিত নাকি মারা গেছেন এ বিষয়ে কোন জ্ঞান আল্লাহ মানুষকে দেননি; (নিসা ১৫৭)
৮। তাঁর স্বাভাবিক মৃত্যু হবে এবং পুনরুত্থান দিবসে আল্লাহর কাছে তাঁর কওম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন; (নিসা ১৫৯)
৯। কেহ চীরঞ্জীব থাকবে না, সবাইকে একদিন মরতে হবে; (যুমার ৩০)
১০। তিনি কেয়ামতের পূর্বে আবার পৃথিবীতে আসবেন; (সূরা যুখরুফ ৬১, বুখারী হাদীস নং ৩২০৫, ৩২০৬ ইফাবা অনুদিত, তাফসীর ইবনে কাসীর ২য় খণ্ড ৭২ পৃষ্ঠা, আল কুরআনুল কারীম-অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ রঈসুদ্দীন)
১১। মাটির দেহধারী মানুষকে আল্লাহ সশরীরে উপরে তুলতে পারেন; (বানী ইসরাইল ১)
১২। আল্লাহ জীবিতকে মৃত এবং মৃতকে জীবিত করতে পারেন; (আলইমরান ২৭)
১৩। তাঁর জন্ম, অন্তর্ধ্যান এবং আবার পৃথিবীতে ফিরে আসা আল্লাহর স্বাভাবিক নিয়মের ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত; এসকল দৃষ্টান্ত আল্লাহর অসীম ক্ষমতার নিদর্শন; (আল ইমরান ৫৯, মারিয়াম ২১)
১৪। মারিয়াম পুত্র ঈসা আঃ এবং মারিয়ামকে আল্লাহ বিশ্ববাসীর জন্য নিদর্শন করেছিলেন; (আম্বিয়া ৯১, মারিয়াম ২১)
১৫। আল্লাহর এসব নিদর্শন দেখানোর জন্যই আল্লাহ মহানবী (সঃ)কে মেরাজে নিয়েছিলেন; (বানী ইসরাইল ১)
১৬। আল্লাহর সাধারণ নিয়মের কোন ব্যতিক্রম হয় না, তবে আল্লাহ ইচ্ছা করলে তার ব্যতিক্রম করতে পারেন; কারণ আল্লাহ সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান; (আলইমরান ২৬)
১৭। যে বিষয়ে মানুষের কোন জ্ঞান নেই সে বিষয়ের পিছে পড়া যাবে না; (বানী ইসরাইল ৩৬)
১৮। আল্লাহর ক্ষমতার বিষয়ে সংশয় পোষণ করা যাবে না; (আল ইমরান ৬০)
১৯। আল্লাহর ধার্যকৃত লিপিবদ্ধ নির্দিষ্ট সময় ব্যতীত কেউই মৃত্যুমুখে পতিত হয় না; (আল ইমরান ১৪৫)
২০। পালনকর্তা আল্লাহ যা বলেন তাই হচ্ছে যথার্থ সত্য; এ কথা বলে এসকল সত্য বিষয়ের সত্যায়ন আল্লাহ নিজেই করেছেন।(আল ইমরান ৬০)
উপসংহার:
আল্লাহ, আল্লাহর কিতাব এবং নবী-রাসূলদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা ঈমানের মৌলিক বিষয়। যে বিষয়ে মহান আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল পবিত্র কুরআন ও হাদীসে পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন সে বিষয়ে অযথা তর্ক করা কিংবা নিজেদের মনগড়া যুক্তি দাঁড় করানো আল্লাহর নির্দেশের সুস্পষ্ট লংঘন।
অতএব, আল্লাহর কুরআন এবং রাসূলের হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এতগুলো প্রতিষ্ঠিত সত্য যে অস্বীকার করবে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় আল্লাহ তাকে কাফের ঘোষণা করেছেন। আর কাফেরের জন্য আল্লাহ নির্ধারণ করে রেখেছেন জাহান্নামের কঠিন আযাব।
আল্লাহ আমাদেরকে জাহান্নামের কঠিন আযাব থেকে রক্ষা করে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করুন।
আমীন।
মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান
বিতর্ক সহ-সম্পাদক
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়
ঢাকা।
(তথ্যসূত্রঃ www.holyquranonline.com, নবীদের কাহিনী-প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, bangla.irib.ir-24-12-2012, http://www.ahmadiyyabangla.org/Articles/Jesus/jesus1.htm, তাফসীর ইবনে কাসীর, অনুবাদ-প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান, আল কুরআন-আরবি-বাংলা অনুবাদ অনলাইন ভার্সন- প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান, ইসলামী ফাউন্ডেশান কর্তৃক অনুদিত বুখারী শরীফ)
১। ইহুদীদের বিশ্বাস: ইহুদীদের বিশ্বাস এই যে, ঈসা (আঃ) নবুওয়তের মিথ্যা দাবীদার ছিলেন। এ জন্য তৌরাতের ব্যবস্থা (দ্বিতীয় বিবরণ - ২১:২৩ দ্রষ্টব্য) অনুযায়ী তাঁকে শূলে দিয়ে অভিশপ্ত করে বধ করা হয়েছে।
২। খ্রীস্টানদের বিশ্বাস: খ্রীস্টানরা বিশ্বাস করে যে, ঈসা (আঃ) খোদার পুত্র ছিলেন। তিনি পাপী মানব জাতির পাপের প্রায়শ্চিত্তের জন্য শূলে অভিশপ্ত মৃত্যুবরণ করে তিন দিন পর পুনরায় জীবিত হয়ে আকাশে উঠে খোদার দক্ষিণ পার্শ্বে বসে আছেন। (ইব্রীয়-৯:২৭-২৮, মার্ক-১৬:১৯ দ্রষ্টব্য)
৩। অ-আহ্মদীদের বিশ্বাস: গয়ের আহ্মদীদের বিশ্বাস এই যে, ঈসা (আঃ) আল্লাহ্র এক নবী ছিলেন। তাঁকে ইহুদীগণ শূলে দিয়ে বধ করতে চেষ্টা করেছিল, কিন্তু আল্লাহ্ তাঁকে উঠিয়ে চতুর্থ আকাশে নিজের কাছে নিয়ে গিয়েছেন, আর ঈসা (আঃ)-এর আকৃতি বিশিষ্ট অন্য এক ব্যক্তিকে শূলে দিয়ে বধ করেছে।
৪। আহ্মদীদের বিশ্বাস: আহ্মদীগণ বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহ্র নবী ঈসা (আঃ) কে ইহুদীরা অভিশপ্ত করে বধ করবার জন্য শূলে দিয়েছিল। কিন্তু তিনি শূলে প্রাণত্যাগ করেননি। শিষ্যদের চেষ্টায় মুর্ছিত অবস্থায় শূল থেকে নামবার পর বহু বৎসর জীবিত থেকে তিনি স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেছেন।
ঈসা আঃ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ কি বলেন:
শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)এর প্রায় সাড়ে পাঁচশ' বছর আগে পৃথিবীর বুকে আগমন করেছিলেন হযরত ঈসা (আঃ)। হযরত ঈসা (আঃ) একদিকে ছিলেন মানবপ্রেম ও ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রগামী অন্যদিকে ছিলেন জুলুম, বৈষম্য ও অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অনুকরণীয় আদর্শ। মহান আল্লাহ তাঁকে তাওরাত, ইঞ্জিল ও বিজ্ঞান শিক্ষা দিয়ে বনী ইসরাইলীদের কাছে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছিলেন।
তাঁর সম্পর্কে সঠিক ও বিস্তৃত ধারণা দেওয়া অত্যন্ত জরুরী বিবেচনা করে আল্লাহ পাক শেষনবী মুহাম্মদ (সঃ)-এর মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন। উল্লেখ্য যে, মূসা (আঃ)-এর অনুসারী হওয়ার দাবীদার ইহুদীরা তাঁকে নবী বলেই স্বীকার করেনি। অত্যন্ত লজ্জাষ্করভাবে তারা তাঁকে জনৈক ইউসুফ মিস্ত্রীর জারজ সন্তান বলে আখ্যায়িত করেছে (নাঊযুবিল্লাহ)। অন্যদিকে ঈসা (আঃ)-এর ভক্ত ও অনুসারী হবার দাবীদার খৃষ্টানরা বাড়াবাড়ি করে তাঁকে ‘আল্লাহর পুত্র’ (তওবাহ ৯/৩০) বানিয়েছে’। বরং ত্রিত্ববাদী খৃষ্টানরা তাঁকে সরাসরি ‘আল্লাহ’ সাব্যস্ত করেছে এবং বলেছে যে, তিনি হলেন তিন আল্লাহর একজন (ثَالِثُ ثَلَثَةٍ =মায়েদাহ ৭৩)। অর্থাৎ ঈসা, মারিয়াম ও আল্লাহ প্রত্যেকেই আল্লাহ এবং তারা এটাকে ‘বুদ্ধি বহির্ভূত সত্য’ বলে ক্ষান্ত হয়। অথচ এরূপ ধারণা পোষণকারীদের আল্লাহ দ্ব্যর্থহীনভাবে ‘কাফের’ বলে ঘোষণা করেছেন ।
“তারা কাফের, যারা বলে যে, মরিময়-তনয় মসীহ-ই আল্লাহ; অথচ মসীহ বলেন, হে বণী-ইসরাঈল, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর, যিনি আমার পালন কর্তা এবং তোমাদেরও পালনকর্তা। নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই।” (মায়েদাহ ৫/৭২)।
“নিশ্চয় তারা কাফের, যারা বলেঃ আল্লাহ তিনের এক; অথচ এক উপাস্য ছাড়া কোন উপাস্য নেই। যদি তারা স্বীয় উক্তি থেকে নিবৃত্ত না হয়, তবে তাদের মধ্যে যারা কুফরে অটল থাকবে, তাদের উপর যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি পতিত হবে।” (মায়েদাহ ৫/৭৩)।
তিনি কিতাবধারী রাসূল ছিলেন এবং পালন কর্তার নিকট থেকে নিদর্শনসমূহ নিয়ে এসছেন। তিনি জন্মের পর অর্থাৎ দোলনা থেকেই কথা বলতে পারতেন এবং তিনি যা বলতেন, সত্য বলতেন। সেই ছোটবেলা থেকেই তাঁর ওপর দায়িত্ব বর্তিত হয়েছিল বনী ইসরাঈলকে এক আল্লাহর ইবাদত বা তৌহিদের পথে আহ্বান জানানোর। তিনি তাঁর নবুয়্যতের প্রমাণ স্বরূপ বহু মোজেযা দেখিয়েছেন। তিনি ভাস্কর্য তৈরীর কাদামাটি দিয়ে পাখি তৈরী করেন এবং তার ভেতর ফুঁ দিলে আল্লাহর আদেশে পাখিটার ভেতর প্রাণের সঞ্চার হয়। প্রাণিত হবার পর মাটি দিয়ে তৈরী পাখিটা উড়ে যায়। তিনি জন্মান্ধ এবং বধিরদেরকে আল্লাহর দেওয়া মোজেযার সাহায্যে সুস্থ করে দিতেন। কুষ্ঠ রোগীরাও তাঁর হাতের ছোঁয়ায় সুস্থ হয়ে যেত। এমনকি মৃতদেরকেও তিনি আল্লাহর দেওয়া অলৌকিক শক্তি বলে জীবিত করে দেন। তার বর্ণনা প্রসঙ্গে সূরা আলে ইমরানের ৪৮ ও ৪৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন-
“আর তাকে তিনি শিখিয়ে দেবেন কিতাব, হিকমত, তওরাত, ইঞ্জিল।”
“আর বণী ইসরাঈলদের জন্যে রসূল হিসেবে তাকে মনোনীত করবেন। তিনি বললেন নিশ্চয়ই আমি তোমাদের নিকট তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে এসেছি নিদর্শনসমূহ নিয়ে। আমি তোমাদের জন্য মাটির দ্বারা পাখীর আকৃতি তৈরী করে দেই। তারপর তাতে যখন ফুৎকার প্রদান করি, তখন তা উড়ন্ত পাখীতে পরিণত হয়ে যায় আল্লাহর হুকুমে। আর আমি সুস্থ করে তুলি জন্মান্ধকে এবং শ্বেত কুষ্ঠ রোগীকে। আর আমি জীবিত করে দেই মৃতকে আল্লাহর হুকুমে। আর আমি তোমাদেরকে বলে দেই যা তোমরা খেয়ে আস এবং যা তোমরা ঘরে রেখে আস। এতে প্রকৃষ্ট নিদর্শন রয়েছে, যদি তোমরা বিশ্বাসী হও।”
সূরা মারিয়ামের ১৬ থেকে ৩৪ এবং ৩৭-৩৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহপাক ঈসা (আঃ)-এর জন্ম-পরিচয় তাঁর মা মারইয়ামের সম্পর্কে বলেছেন-
“এই কিতাবে মারইয়ামের কথা বর্ণনা করুন, যখন সে তার পরিবারের লোকজন থেকে পৃথক হয়ে পূর্বদিকে এক স্থানে আশ্রয় নিল।” ১৬।
“অতঃপর তাদের থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্যে সে পর্দা করলো। অতঃপর আমি তার কাছে আমার রূহ প্রেরণ করলাম, সে তার নিকট পুর্ণ মানবাকৃতিতে আত্নপ্রকাশ করল।” ১৭।
“মারইয়াম বললঃ আমি তোমা থেকে দয়াময়ের আশ্রয় প্রার্থনা করি যদি তুমি আল্লাহভীরু হও।” ১৮।
“সে বললঃ আমি তো শুধু তোমার পালনকর্তা প্রেরিত, যাতে তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করে যাব।” ১৯।
“মরিইয়াম বললঃ কিরূপে আমার পুত্র হবে, যখন কোন মানব আমাকে স্পর্শ করেনি এবং আমি ব্যভিচারিণীও কখনও ছিলাম না ?” ২০।
“সে বললঃ এমনিতেই হবে। তোমার পালনকর্তা বলেছেন, এটা আমার জন্যে সহজ সাধ্য এবং আমি তাকে মানুষের জন্যে একটি নিদর্শন ও আমার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ স্বরূপ করতে চাই। এটা তো এক স্থিরীকৃত ব্যাপার।” ২১।
“অতঃপর তিনি গর্ভে সন্তান ধারণ করলেন এবং তৎসহ এক দূরবর্তী স্থানে চলে গেলেন।” ২২।
“প্রসব বেদনা তাঁকে এক খেজুর বৃক্ষ-মূলে আশ্রয় নিতে বাধ্য করল। তিনি বললেনঃ হায়, আমি যদি কোনরূপে এর পূর্বে মরে যেতাম এবং মানুষের স্মৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে, যেতাম!” ২৩।
“অতঃপর ফেরেশতা তাকে নিম্নদিক থেকে আওয়ায দিলেন যে, তুমি দুঃখ করো না। তোমার পালনকর্তা তোমার পায়ের তলায় একটি নহর জারি করেছেন।” ২৪।
“আর তুমি নিজের দিকে খেজুর গাছের কান্ডে নাড়া দাও, তা থেকে তোমার উপর সুপক্ক খেজুর পতিত হবে।” ২৫।
“যখন আহার কর, পান কর এবং চক্ষু শীতল কর। যদি মানুষের মধ্যে কাউকে তুমি দেখ, তবে বলে দিওঃ আমি আল্লাহর উদ্দেশে রোযা মানত করছি। সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোন মানুষের সাথে কথা বলব না।” ২৬।
“অতঃপর তিনি সন্তানকে নিয়ে তার সম্প্রদায়ের কাছে উপস্থিত হলেন। তারা বললঃ হে মারইয়াম, তুমি একটি অঘটন ঘটিয়ে বসেছ।” ২৭।
“হে হারূণ-ভাগিনী, তোমার পিতা অসৎ ব্যক্তি ছিলেন না এবং তোমার মাতাও ছিল না ব্যভিচারিনী ”২৮।
“অতঃপর তিনি হাতে সন্তানের দিকে ইঙ্গিত করলেন। তারা বললঃ যে কোলের শিশু তার সাথে আমরা কেমন করে কথা বলব?” ২৯।
“সন্তান বললঃ আমি তো আল্লাহর দাস। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী করেছেন।” ৩০।
“আমি যেখানেই থাকি, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যতদিন জীবিত থাকি, ততদিন নামায ও যাকাত আদায় করতে।” ৩১।
“এবং জননীর অনুগত থাকতে এবং আমাকে তিনি উদ্ধত ও হতভাগ্য করেননি।” ৩২।
“আমার প্রতি সালাম যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, যেদিন মৃত্যুবরণ করব এবং যেদিন পুনরুজ্জীবিত হয়ে উত্থিত হব।” ৩৩।
“এই মারইয়ামের পুত্র ঈসা। সত্যকথা, যে সম্পর্কে লোকেরা বিতর্ক করে।” ৩৪।
“অতঃপর তাদের মধ্যে দলগুলো পৃথক পৃথক পথ অবলম্বন করল। সুতরাং মহাদিবস আগমনকালে কাফেরদের জন্যে ধবংস।” ৩৭।
“সেদিন তারা কি চমৎকার শুনবে এবং দেখবে, যেদিন তারা আমার কাছে আগমন করবে। কিন্তু আজ জালেমরা প্রকাশ্য বিভ্রান্তিতে রয়েছে।” ৩৮।
মারিয়াম পুত্র ঈসা (আঃ) এবং মারিয়ামকে আল্লাহ বিশ্ববাসীর জন্য নিদর্শন করেছিলেন। আল্লাহ পাক নিজেই মারিয়ামের সতীত্ব সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ সম্পর্কে সূরা আম্বিয়ার ৯১ আয়াত এবং সূরা তাহরীমের ১২ আয়াতে আল্লাহ বলেন-
“এবং সেই নারীর কথা আলোচনা করুন, যে তার কামপ্রবৃত্তিকে বশে রেখেছিল, অতঃপর আমি তার মধ্যে আমার রূহ ফুঁকে দিয়েছিলাম এবং তাকে তার পুত্রকে বিশ্ববাসীর জন্য নিদর্শন করেছিলাম।”
“আর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন এমরান-তনয়া মরিয়মের, যে তার সতীত্ব বজায় রেখেছিল। অতঃপর আমি তার মধ্যে আমার পক্ষ থেকে জীবন ফুঁকে দিয়েছিলাম এবং সে তার পালনকর্তার বানী ও কিতাবকে সত্যে পরিণত করেছিল। সে ছিল বিনয় প্রকাশকারীনীদের একজন।”
আল্লাহপাক মানব জাতিকে একত্ববাদের দিকে আহ্বান করার জন্যে যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। নবী-রাসূলগণ আল্লাহর প্রতি মানুষের সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য একত্ববাদের কথা বলতে গিয়ে তাঁরা নানা ধরনের বাধা-বিপত্তি, ভয়-ভীতি, জুলুম নির্যাতন ও জানমালের ক্ষতির শিকার হয়েছেন। হযরত ঈসাও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিলেন না। মানুষের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে তাঁকে যেমন ত্যাগ-তিতিক্ষা সহ্য করতে হয়েছে তেমনি তাঁর কুমারী মাতা হযরত মারিয়াম (সা.আ.)কেও অনেক দুঃখ-কষ্ট ও অপমান সহ্য করতে হয়েছে।
হযরত মারিয়াম ছিলেন হযরত ইমরান (আ.) এর মেয়ে । আল্লাহর দরবারে মারিয়াম ছিলেন অসম্ভব মর্যাদার অধিকারী । আল্লাহ তাঁর ইবাদাত কবুল করেছেন এবং আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ চার জন নারীর একজন বলে মনে করতেন।
হযরত মারিয়াম ছোট্টবেলা থেকেই হযরত যাকারিয়া (আ.) এর তত্ত্বাবধানে ছিলেন। তিনি তাঁর প্রতিটা মুহূর্ত আল্লাহর ইবাদাতসহ অন্যান্য ধর্মীয় দায়িত্ব পালনে কাটাতেন। হযরত মরিয়ম আল্লাহর ইবাদত ও ধ্যানে এত মশগুল থাকতেন যে, নিজের খাবারের কথাও ভুলে যেতেন । কিন্তু মারিয়ামের অভিভাবকের দায়িত্বপালনকারী হযরত যাকারিয়া (আঃ) যখনই তাঁর কক্ষে যেতেন, তখনই সেখানে বেহেশতি খাবার দেখতে পেতেন। তিনি এত মর্যাদার অধিকারী হয়েছিলেন যে, নবী-রাসূল না হওয়া সত্ত্বেও তাঁর কথা পবিত্র কোরআনের অনেক জায়গায় বর্ণনা করা হয়েছে।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কি বলেন:
১(ক) আবু হুরাইরা (রাঃ)হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন-ঐ সত্ত্বার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ, অচিরেই তোমাদের মাঝে মারিয়ামের পুত্র ঈসা (আঃ) শাসক ও ন্যায় বিচারক হিসাবে অবতরণ করবেন। তিনি ক্রুশ ভেঙে ফেলবেন, শূকর নিধন করবেন, এবং তিনি যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটাবেন। তখন সম্পদের স্রোত বয়ে চলবে। এমনকি কেউ তা গ্রহণ করতে চাইবে না।তখন আল্লাহকে একটি সেজদা করা দুনিয়া এবং দুনিয়াতে যা কিছু আছে তারচেয়ে উত্তম হবে। অতঃপর আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন-যদি চাও তাহলে কুরআনের ঐ আয়াত পাঠ করঃ কিতাবীদের মধ্যে প্রত্যেকে তাঁর (ঈসা আঃ এর) মৃত্যুর পূর্বে তাঁকে বিশ্বাস করবেই এবং কিয়ামতের দিন তিনি তাদের সম্পর্কে সাক্ষ্য দিবেন।(বুখারি হাদীস নং-৩২০৫ ইফাবা)
(খ) আবু হুরাইরা (রাঃ)হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন-তখন তোমাদের কেমন (আনন্দের) হবে যখন তোমাদের মাঝে মারিয়াম তনয় ঈসা (আঃ) অবতরণ করবেন এবং তোমাদের ইমাম তোমাদের মধ্য থেকেই হবে।(বুখারি হাদীস নং-৩২০৬ ইফাবা)
পর্যালোচনা:
সূরা নিসা এর ১৫৭, ১৫৮, ১৫৯ আয়াতঃ
“আর তাদের একথা বলার কারণে যে, আমরা মরিয়ম পুত্র ঈসা মসীহকে হত্যা করেছি যিনি ছিলেন আল্লাহর রসূল। অথচ তারা না তাঁকে হত্যা করেছে, আর না শুলেতে চড়িয়েছে, বরং তারা এরূপ ধাঁধায় পতিত হয়েছিল। বস্তুতঃ তারা এ ব্যাপারে নানা রকম কথা বলে, তারা এক্ষেত্রে সন্দেহের মাঝে পড়ে আছে, শুধুমাত্র অনুমান করা ছাড়া তারা এ বিষয়ে কোন খবরই রাখে না। আর নিশ্চয়ই তাঁকে তারা হত্যা করেনি।”
“বরং তাঁকে উঠিয়ে নিয়েছেন আল্লাহ তা’আলা নিজের কাছে। আর আল্লাহ হচ্ছেন মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”
“আর আহলে-কিতাবদের মধ্যে প্রত্যেকে তাঁর (ঈসা আঃ এর) মৃত্যুর পূর্বে তাঁকে বিশ্বাস করবেই এবং কিয়ামতের দিন তিনি তাদের সম্পর্কে সাক্ষ্য দিবেন।”
সূরা আল ইমরান আয়াত ৫৫:
“আর স্মরণ কর যখন আল্লাহ বললেন, হে ঈসা! আমি তোমাকে ওফাত দিব এবং তোমাকে আমার কাছে তুলে নেব এবং তোমাকে কাফিরদের হাত থেকে মুক্ত করব। আর যারা তোমার অনুসরণ করবে, তাদেরকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত কাফিরদের বিরুদ্ধে বিজয়ী করে রাখবো। অতঃপর তোমাদের সবাইকে আমার কাছে ফিরে আসতে হবে, তখন আমি তোমাদের মধ্যকার বিবাদীয় বিষয়ে ফায়সালা করে দেব।”
সূরা যুখরুফ আয়াত ৬১:
“ঈসার দুনিয়াতে পুনরায় আগমন কিয়ামতের একটি নিশ্চিত নিদর্শন। অতএব তোমরা কিয়ামতে সন্দেহ পোষণ করো না। আর আমার অনুসরন কর, এটাই সরল সঠিক পথ।”
সূরা আল ইমরান আয়াত ১৪৫:
“আর আল্লাহর আদেশে ধারযকৃত লিপিবদ্ধ নির্দিষ্ট সময় ব্যতীত কেউ মৃত্যুমুখে পতিত হয় না। বস্তুতঃ যে লোক দুনিয়ায় বিনিময় কামনা করবে, আমি তাকে তা দুনিয়াতেই দান করব। পক্ষান্তরে-যে লোক আখেরাতে বিনিময় কামনা করবে, তা থেকে আমি তাকে তাই দেবো। আর যারা কৃতজ্ঞ তাদেরকে আমি প্রতিদান দেবো”
সূরা মায়িদা আয়াত ১১৭:
“আমি তো তাদেরকে কিছুই বলিনি, শুধু সে কথাই বলেছি যা আপনি বলতে আদেশ করেছিলেন যে, তোমরা আল্লাহর দাসত্ব অবলম্বন কর যিনি আমার ও তোমাদের পালনকর্তা আমি তাদের সম্পর্কে অবগত ছিলাম যতদিন তাদের মধ্যে ছিলাম। অতঃপর যখন আপনি আমাকে লোকান্তরিত করলেন, তখন থেকে আপনিই তাদের সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। আপনি সর্ববিষয়ে পূর্ণ পরিজ্ঞাত।”
সূরা আম্বিয়া ৭, ৮, ৯ আয়াতঃ
“আপনার পূর্বে আমি ওহীসহ বহু পুরুষই প্রেরণ করেছি,। অতএব তোমরা যদি না জান তবে যারা স্মরণ রাখে(জ্ঞানী) তাদেরকে জিজ্ঞেস কর।”
“আমি তাদেরকে এমন দেহ বিশিষ্ট করিনি যে, তারা খাদ্য ভক্ষণ করত না এবং তারা চিরস্থায়ীও ছিল না।”
“অতঃপর আমি তাদেরকে দেয়া আমার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করলাম সুতরাং তাদেরকে এবং যাদেরকে ইচ্ছা বাঁচিয়ে দিলাম এবং ধবংস করে ছিলাম সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে।”
সূরা আম্বিয়া ৩৪, ৩৫ আয়াতঃ
“আপনার পূর্বেও কোন মানুষকে আমি অনন্ত জীবন দান করিনি। সুতরাং আপনার মৃত্যু হলে তারা কি চিরঞ্জীব হবে?”
“প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।”
সূরা ফাতির আয়াত ৪৩:
“পৃথিবীতে ঔদ্ধত্যের কারণে এবং কুচক্রের কারণে। কুচক্র কুচক্রীদেরকেই ঘিরে ধরে। তারা কেবল পূর্ববর্তীদের দশারই অপেক্ষা করছে। অতএব আপনি আল্লাহর বিধানে পরিবর্তন পাবেন না এবং আল্লাহর রীতি-নীতিতে কোন রকম বিচ্যুতিও পাবেন না।”
সূরা যুমার আয়াত ৩০:
“নিশ্চয় তোমারও মৃত্যু হবে এবং তাদেরও মৃত্যু হবে।”
সূরা বানীইসরাইল আয়াত ৩৬:
“যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তার পিছনে পড়ো না। নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে।”
আল্লাহ হযরত ঈসা (আঃ)কে তাঁর দিকে উঠিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন (আল ইমরান আয়াত ৫৫)এবং আল্লাহ তাকে নিজের দিকে উঠিয়ে নেয়ার স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন (নিসা আয়াত ১৫৮)।ঈসা (আঃ)কে কেউ হত্যা্ কিংবা ক্রুশ বিদ্ধও করতে পারেনি। প্রকৃতপক্ষে ঈসা (আঃ) এর কি হয়েছিল সে সম্পর্কে তখনকার লোকেরা সন্দেহের মধ্যে ছিল; কল্পনার অনুসরণ ব্যতীত তাদের কোন জ্ঞান ছিল না এবং পকৃত পক্ষে তারা তাঁকে হত্যা করেনি (নিসা আয়াত ১৫৭)।
অতএব এ কথা পরিষ্কার যে, মহান আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ও ঘোষণা অনুযায়ী ঈসা (আঃ)কে আল্লাহ তাঁর কাছে তুলে নিয়েছেন।
এখন প্রশ্ন হলো তাঁকে জীবিত অবস্থায় নাকি স্বাভাবিক মৃত্যুর মাধ্যমে উঠিয়ে নিয়েছেন।
ঈসা (আঃ) এখনও জীবিত না তাঁর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে এ বিষয়ে আল্লাহ পরিষ্কার কিছু বলেননি।
যারা ঈসা (আঃ) মারা গেছেন বলে দাবী করে তাদের যুক্তি হলো যদি আল্লাহ তাঁকে জীবিত উঠিয়ে নিয়ে থাকেন তবে তিনি কেমন করে অনন্তকাল বেঁচে আছেন (আম্বিয়া ৩৪, যুমার ৩০)। মৃত্যু না হলে মাটির দেহ উপরে উঠতে পারে না। আর মানুষের মৃত্যুর পর আবার পৃথিবীতে ফিরে আসা আল্লাহর নিয়মের ব্যতিক্রম।আল্লাহর নিয়মের কোন ব্যতিক্রম হয় না(ফাতির ৪৩)। তাই তিনি আর পৃথিবীতে ফিরে আসবেন না। তারা এটিও দাবী করে যে, মহানবী (সঃ) মেরাজের রাতে তাঁর পূর্বে গত হওয়া নবী-রাসূলদের সাথে ঈসা (আঃ)কেও দেখেছেন। এজন্য তারা ‘রাফা’ শব্দটি ‘সম্মানজনক মৃত্যু’ অর্থে ব্যবহার করেছে। আবার ‘তাওয়াফ্ফাইতানী’ শব্দটিকেও তার ‘মৃত্যু’ অর্থে ব্যবহার করেছে।যার অন্য অর্থ ‘লোকান্তরিত করা’, “তুলে নেওয়া”, “হরণ করা”, “করায়ত্ত করা”।
আল্লাহ মানুষের প্রাণ দুইভাবে তুলে নিতে পারেন। (১) মৃত্যুর মাধ্যমে, (২) মৃত্যু না হয়েও ঘুমের মাধ্যমে।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সূরা যুমার এর ৪২ নং আয়াতে বলেন-
“আল্লাহ মানুষের প্রাণ উঠিয়ে নেন তার মৃত্যুর সময়, আর যে মরে না, তার নিদ্রাকালে। অতঃপর যার মৃত্যু অবধারিত করেন, তার প্রাণ ছাড়েন না এবং অন্যান্যদের ছেড়ে দেন এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।”
সূরা আন আম এর ৬০ আয়াতে আল্লাহ বলেন-
“আর সেই মহা প্রভুই রাত্রিকালে নিদ্রারূপে তোমাদের এক প্রকার মৃত্যু ঘটিয়ে থাকেন, আর দিনের বেলা তোমরা যা কর তা তিনি সম্যক পরিজ্ঞাত; অতঃপর তিনি নির্দিষ্ট সময়কাল পূরণের নিমিত্ত তোমাদেরকে নিদ্রা থেকে জাগিয়ে থাকেন, তার পর পরিশেষে তাঁর কাছেই তোমাদেরকে ফিরে যেতে হবে, তখন তিনি তোমাদেরকে তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অবহিত করবেন।”
এখানে “নিদ্রারূপ মৃত্যু” অর্থে তাওয়াফফা শব্দটি ব্যবহার হয়েছে।
অতএব, দেখা যায়, মহান আল্লাহ মানুষকে মৃত্যু না দিয়েও তার প্রাণ তুলে নিতে পারেন বা করায়ত্ত করতে পারেন।
তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেয়া হয় যে, আল্লাহ তাঁকে জীবিত অবস্থায় উঠিয়ে নিয়েছেন এবং তিনি এখনও জীবিত তাতেও কোন সমস্যা নেই। কারণ আল্লাহর পক্ষে এমন কাজ কোন কঠিন ব্যাপার নয়। তাছাড়া যারা ঈসা (আঃ)কে মৃত দাবী করে তাদের যুক্তি অনুযায়ী মহানবী (সঃ) মেরাজের রাতে তাঁর পূর্বে গত হওয়া নবী-রাসূলদের সাথে ঈসা (আঃ)কে জীবিতই দেখেছেন, মৃত নয়। আল্লাহর ধার্যকৃত লিপিবদ্ধ নির্দিষ্ট সময় ব্যতীত কেউই মৃত্যুমুখে পতিত হয় না (আল ইমরান ১৪৫)। মানুষের মৃত্যুর জন্য ধার্যকৃত সময় কার কখন এটা কেউ জানে না। ঈসা (আঃ) এর জন্য ধার্যকৃত নির্দিষ্ট মৃত্যুর সময় কেবল আল্লাহই ভাল জানেন। এটি অনন্তকাল পরে হলেও কোন সমস্যা নেই। ঈসা (আঃ) এর জন্ম, অন্তর্ধ্যান এবং ফিরে আসা আল্লাহর অসীম ক্ষমতা ও কুদরতের দৃষ্টান্ত বা নিদর্শন(আল ইমরান ৫৯)।
আর যদি ধরে নেয়া হয় যে, তাঁর স্বাভাবিক মৃত্যুর মাধ্যমে আল্লাহ তাঁকে উঠিয়ে নিয়ে গেছেন। মৃত্যুর পর কিভাবে আবার দুনিয়াতে আসবেন। তাতেও কোন সমস্যা নেই, কারণ আল্লাহ জীবিতকে মৃত এবং মৃতকে জীবিত করতে পারেন (আল ইমরান ২৭)।
অনেকের প্রশ্ন ঈসা (আঃ)-এর অনন্তকাল বেঁচে থাকা কিংবা মৃত্যুর পর আবার ফিরে আসা আল্লাহর নিয়মের ব্যতিক্রম নয় কি?
আল্লাহর নিয়মের ব্যতিক্রম হয় না এর অর্থ এই নয় যে, আল্লাহ নিজে ইচ্ছা করলে ব্যতিক্রম করতে পারেন না। তিনি ইচ্ছা করলে তার নিয়মের ব্যতিক্রম করতে পারেন। আল্লাহ চাইলে সূরযকে পূর্ব দিকের বদলে পশ্চিম দিক থেকে উদিত করতে পারেন। কিন্তু কোন মানুষের পক্ষে এই নিয়মের ব্যতিক্রম করা সম্ভব নয় কিংবা নিজে থেকে এই নিয়মের ব্যতিক্রম হবে না। এ জন্য বলা হয়ে যে, আল্লাহর নিয়মের ব্যতিক্রম হয় না। কুরআনের বহু আয়াতে বলা হয়েছে “ইন্নাকা আলা কুল্লি শায়্যিন ক্বাদির” অর্থ-নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাশীল (আল ইমরান ২৬)। তিনি ইচ্ছা করলে সব কিছুই করতে পারেন।
যেহেতু ঈসা (আঃ)-এর জন্মগ্রহণের ব্যাপারটি সম্পূর্ণভাবে অলৌকিক, তাই তাঁকে তাঁর মায়ের গর্ভধারণের মেয়াদ স্বাভাবিক নিয়মের বহির্ভূত ছিল বলেই ধরে নিতে হবে। নয় মাস দশদিন পরে সন্তান প্রসব শেষে চল্লিশ দিন ‘নেফাস’ অর্থাৎ রজঃস্রাব হ’তে পবিত্রতার মেয়াদও এখানে ধর্তব্য না হওয়াই সমীচীন। অতএব ঈসাকে গর্ভধারণের ব্যাপারটাও যেমন নিয়ম বহির্ভূত, তার ভূমিষ্ট হওয়া ও তার মায়ের পবিত্রতা লাভের পুরা ঘটনাটাই নিয়ম বহির্ভূত এবং অলৌকিক। আর এটা আল্লাহর জন্য একেবারেই সাধারণ বিষয়। স্বামী-স্ত্রীর মাধ্যমে সন্তান জন্ম হবে, মাকে দশ মাস গর্ভধারণ করতে হবে ইত্যাদি নিয়ম আল্লাহরই সৃষ্টি এবং এই নিয়ম ভেঙ্গে সন্তান দান করাও তাঁরই এখতিয়ার। এদিকে ইঙ্গিত করেই আল্লাহ আলে ইমরান ৩/৫৯-৬০ আয়াতে বলেন,
“নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত হচ্ছে আদমেরই মতো। তাকে মাটি দিয়ে তৈরী করেছিলেন এবং তারপর তাকে বলেছিলেন হয়ে যাও, সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেলেন।”
“যা তোমার পালকর্তা বলেন তাই হচ্ছে যথার্থ সত্য। কাজেই তোমরা সংশয়বাদী হয়ো না।”
মাটির দেহ নিয়ে কেহ উপরে উঠতে পারে না কথাটি সত্য হলেও মহান আল্লাহ উঠাতে পারেন না এমনটি নয়। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাও করতে পারেন। মহানবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর জীবনে মেরাজের ঘটনা তা প্রমাণ করে। পবিত্র কুরআনের সূরা বানী ইসরাইলের ১নং আয়াতে আল্লাহ বলেন-
“পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যান্ত-যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল।”
এক রাতে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা, সেখান থেকে আরশে আযীম পর্যন্ত ভ্রমণ করা প্রমাণ করে যে, মাটির দেহের মানুষ সশরীরে উপরে উঠতে পারে। কেননা মুহাম্মদ (সঃ) এর অল্প সময়ে এই ভ্রমণ স্থল বা নদী পথে মানুষের তৈরি কোন যান্ত্রিক যানে কখনও সম্ভব ছিল না। কেবল আকাশ পথেই সম্ভব, তাও সে সময়ের কোন যান্ত্রিক যানে নয়, কেবল আল্লাহর অশেষ কুদরতের যানে করে। ঈসা (আঃ) এর উপরে উঠাও আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন। এটি অবিশ্বাস করার কিছু নেই। আর আল্লাহর কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেয়ার জন্যই মুহাম্মদ (সঃ) এর জীবনে মেরাজের ঘটনা ঘটেছিল যার কথা আল্লাহ স্পষ্ট করে মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন।
মহানবী (সঃ) মেরাজের রাতে তাঁর পূর্বে গত হওয়া নবী-রাসূলদের সাথে ঈসা (আঃ)কে দেখেছেন বলে যারা ঈসা (আঃ) এর মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত প্রমাণ করতে চাইছেন তাদের জ্ঞাতার্থে একটি কথা বলা প্রয়োজন মনে করছি। মানুষের জীবন দুইটি। একটি হলো তার জন্মের পরে দুনিয়ার জীবন। আরেকটি হলো মৃত্যুর পরে আখেরাতের জীবন। আখেরাতের জীবনে প্রবেশ করতে হলে তাকে মৃত্যুবরণ করতে হবে। মৃত্যু না হলে মানুষ আখেরাতের জীবনে প্রবেশ করতে পারবে না। আর মৃত্যুর পর আখেরাতের জীবন থেকে মানুষ আর দুনিয়ার জীবনে ফিরে আসতে পারবে না। তাহলে মহাননবী (সঃ) এর পূর্বে গত হওয়া নবী-রাসূলগণ আখেরাতের জীবনে চলে গেছেন। তাদের সাথে দুনিয়ার মানুষেরতো দেখা হওয়ার কথা নয়। অথচ এটিই সত্য যে, তাঁদের সাথে তাঁর দেখা হয়েছিল। তাহলে কি মাহনবী (সঃ) মেরাজের রাতে মৃত্যুবরণ করে আখেরাতে জীবনে প্রবেশ করেছিলেন? যদি তাই হয় রাতের মধ্যেই দুনিয়ার জীবনে কিভাবে ফিরে এলেন? রাতের মধ্যে আখেরাতের জীবনে প্রবেশ এবং আবার দুনিয়াতে ফিরে আসা এটি কি আল্লাহর নিয়মের ব্যতিক্রম নয়? আসলে এসব ঘটনা মহান আল্লাহর অসীম ক্ষমতার দৃষ্টান্ত। এগুলো বিনা তর্কে বিশ্বাস করতে হবে।
ডিজিটাল যুগে একটি ডিজিটাল উদাহরণ:
মনেকরুন কোন ব্যক্তি একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করে বাজারে ছেড়েছে যার সিকিউরিটি কোড কেবল তিনিই জানেন। অন্য কেউ এর পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন, সম্পাদনা ইত্যাদি করতে পারবে না। কেবল যে এর সিকিউরিটি কোড জানে সে-ই পারবে। তবে দুর্বল কোডের জন্য হেকিংয়ের শিকার হওয়া স্বতন্ত্র ব্যাপার।
তদ্রুপ মহান আল্লাহ এই বিশ্বজগত সৃষ্টি করে যে প্রোগ্রামের আওতায় পরিচালনা করছেন তার সিকিউরিটি কোড কেবলমাত্র তিনিই জানেন। এই কোড এতই শক্তিশালী যে, কারো পক্ষে এটি ভেঙ্গে এর পরিবর্তন বা নতুন কিছু সংযোজন করা সম্ভব নয়।কিংবা আপনা থেকে এটিতে কোন পরিবর্তন হবে না। মহান আল্লাহই কেবল এর পরিবর্তন বা ব্যতিক্রম করতে পারেন। মহান আল্লাহ যে, সবকিছু পারেন তা কিছু ব্যতিক্রমী ঘটনার মাধ্যমে মানুষের নিকট নিদর্শন স্থাপন করেছেন। সাধারণ নিয়ম আর ব্যতিক্রমী ঘটনা এক করে ফেলা ঠিক নয়।
আলোচনায় যেসকল সত্য বেরিয়ে আসে:
১। ঈসা (আঃ)নিজে আল্লাহ, বা আল্লাহর পুত্র নন; (মায়েদাহ ৭২-৭৩)
২। তিনি পবিত্র মাতা মারিয়ামের পুত্র; (মারিয়াম ১৯)
৩। তিনি নবুয়্যতের মিথ্যা দাবীদার ছিলেন না। তিনি কিতাবধারী সত্য দ্বীনের নবী ও রাসূল; (আল ইমরান ৪৮-৪৯, মারিয়াম ৩০)
৪। তাঁর পাপের জন্য তাঁকে কেউ হত্যা কিংবা ক্রশবিদ্ধও করতে পারেনি। (নিসা ১৫৭)
৫। তাঁকে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী উপরে তুলে নেয়া হয়েছে; (নিসা ১৫৮)
৬। মহান আল্লাহ মানুষকে মৃত্যু না দিয়েও তার প্রাণ তুলে নিতে পারেন বা করায়ত্ত করতে পারেন। (যুমার ৪২, আনআম ৬০)
৭। তিনি এখনও জীবিত নাকি মারা গেছেন এ বিষয়ে কোন জ্ঞান আল্লাহ মানুষকে দেননি; (নিসা ১৫৭)
৮। তাঁর স্বাভাবিক মৃত্যু হবে এবং পুনরুত্থান দিবসে আল্লাহর কাছে তাঁর কওম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন; (নিসা ১৫৯)
৯। কেহ চীরঞ্জীব থাকবে না, সবাইকে একদিন মরতে হবে; (যুমার ৩০)
১০। তিনি কেয়ামতের পূর্বে আবার পৃথিবীতে আসবেন; (সূরা যুখরুফ ৬১, বুখারী হাদীস নং ৩২০৫, ৩২০৬ ইফাবা অনুদিত, তাফসীর ইবনে কাসীর ২য় খণ্ড ৭২ পৃষ্ঠা, আল কুরআনুল কারীম-অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ রঈসুদ্দীন)
১১। মাটির দেহধারী মানুষকে আল্লাহ সশরীরে উপরে তুলতে পারেন; (বানী ইসরাইল ১)
১২। আল্লাহ জীবিতকে মৃত এবং মৃতকে জীবিত করতে পারেন; (আলইমরান ২৭)
১৩। তাঁর জন্ম, অন্তর্ধ্যান এবং আবার পৃথিবীতে ফিরে আসা আল্লাহর স্বাভাবিক নিয়মের ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত; এসকল দৃষ্টান্ত আল্লাহর অসীম ক্ষমতার নিদর্শন; (আল ইমরান ৫৯, মারিয়াম ২১)
১৪। মারিয়াম পুত্র ঈসা আঃ এবং মারিয়ামকে আল্লাহ বিশ্ববাসীর জন্য নিদর্শন করেছিলেন; (আম্বিয়া ৯১, মারিয়াম ২১)
১৫। আল্লাহর এসব নিদর্শন দেখানোর জন্যই আল্লাহ মহানবী (সঃ)কে মেরাজে নিয়েছিলেন; (বানী ইসরাইল ১)
১৬। আল্লাহর সাধারণ নিয়মের কোন ব্যতিক্রম হয় না, তবে আল্লাহ ইচ্ছা করলে তার ব্যতিক্রম করতে পারেন; কারণ আল্লাহ সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান; (আলইমরান ২৬)
১৭। যে বিষয়ে মানুষের কোন জ্ঞান নেই সে বিষয়ের পিছে পড়া যাবে না; (বানী ইসরাইল ৩৬)
১৮। আল্লাহর ক্ষমতার বিষয়ে সংশয় পোষণ করা যাবে না; (আল ইমরান ৬০)
১৯। আল্লাহর ধার্যকৃত লিপিবদ্ধ নির্দিষ্ট সময় ব্যতীত কেউই মৃত্যুমুখে পতিত হয় না; (আল ইমরান ১৪৫)
২০। পালনকর্তা আল্লাহ যা বলেন তাই হচ্ছে যথার্থ সত্য; এ কথা বলে এসকল সত্য বিষয়ের সত্যায়ন আল্লাহ নিজেই করেছেন।(আল ইমরান ৬০)
উপসংহার:
আল্লাহ, আল্লাহর কিতাব এবং নবী-রাসূলদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা ঈমানের মৌলিক বিষয়। যে বিষয়ে মহান আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল পবিত্র কুরআন ও হাদীসে পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন সে বিষয়ে অযথা তর্ক করা কিংবা নিজেদের মনগড়া যুক্তি দাঁড় করানো আল্লাহর নির্দেশের সুস্পষ্ট লংঘন।
অতএব, আল্লাহর কুরআন এবং রাসূলের হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এতগুলো প্রতিষ্ঠিত সত্য যে অস্বীকার করবে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় আল্লাহ তাকে কাফের ঘোষণা করেছেন। আর কাফেরের জন্য আল্লাহ নির্ধারণ করে রেখেছেন জাহান্নামের কঠিন আযাব।
আল্লাহ আমাদেরকে জাহান্নামের কঠিন আযাব থেকে রক্ষা করে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করুন।
আমীন।
মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান
বিতর্ক সহ-সম্পাদক
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়
ঢাকা।
(তথ্যসূত্রঃ www.holyquranonline.com, নবীদের কাহিনী-প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, bangla.irib.ir-24-12-2012, http://www.ahmadiyyabangla.org/Articles/Jesus/jesus1.htm, তাফসীর ইবনে কাসীর, অনুবাদ-প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান, আল কুরআন-আরবি-বাংলা অনুবাদ অনলাইন ভার্সন- প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান, ইসলামী ফাউন্ডেশান কর্তৃক অনুদিত বুখারী শরীফ)
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
কামরুজ্জামান সাদ ১০/০১/২০১৮গবেষণাধর্মী লেখা।ভাল লাগল।
-
সোলাইমান ২৩/১০/২০১৬বেশ, খুব ভাল লেখাগুলো।
-
মোঃ সোহেল মাহমুদ ২২/১০/২০১৬তথ্যবহুল লেখা। এটাই সত্য। আমার ভালো লেগেছে। অনেক কিছু জানলাম। এরকম লেখা আরো লেখবেন।