www.tarunyo.com

কুমকুম (১ম পর্ব)

বারবার নিষেধ করলাম এতটুকু কথাও শুনলো না। কে আবার আমার মাসিতো বোন কুমকুম। বসয় হয়েছে। তবে বুড়ি নয়। বলা চলে আমারই বয়েসি। দূর, আমিও কেমন! আমার বয়স কত সেটাও তো কেউ জানেনা তাহলে বুঝবে কি করে? আমার বয়স ১৪ হলে কুমকুমের বয়স ১৫ বছর। আমার চেয়ে মাত্র ১ বছরের বড় সে।

বারবার বললাম এমন প্রেম কখনও কেউই মানবে না। এতটুকুও যদি শুনতো। বললাম, এ বয়সে প্রেম! এও বললাম, বয়স তো পড়ে রয়েছে। পড়ে এসব বিষয়ে মাথা ঘামালে হতো না। কে শুনে কার কথা। বলে কিনা- সে আমাকে খুব ভালোবাসে। যদি ওকে ভালো না বাসী তাহলে সে আত্মহত্যা করবে।

শুনো, প্রেম করবে তবে এ বয়সে কি তুমি কখনো এ প্রেম অর্থাৎ যে কোনো বাধাঁকে সামলে নিতে পারবে? জবাবে হ্যাঁ ছাড়া আর কোন উত্তরই পেলাম না। ঠিক আছে প্রেম করো তবে যদি কখনো প্রয়োজন হয় তাহলে জানাবে। আমি তো আর এখানে একেবারে থাকতে আসিনি। তবে যাবার আগে তোমার স্বপ্নের পুরুষকে দেখাবেনা বুঝি?

কুমকুমঃ কোথা থেকে দেখাবো। ও যে এখন শহরে। তবে নাম বলতে পারি।
আমিঃ তাই না হয় বল।
কুমকুমঃ চন্দ্র।
আমিঃ নাম শুনে মনে হচ্ছে যেন আকাশের চাঁদ। ওর পরিচয়.....
কুমকুমঃ উঁ.... ১ ভাই ২ বোন। ১ বোন বড়, ওকালতি পড়ছে। আর ও মেঝ। এইচ.এস.সি. ফাইনাল দিবে এইবার। ছোট বোন এখনও ক্লাস ফাইভে পড়ছে।
আমিঃ দারুন তো! খুব ছোট পরিবার। তবে এটাই বলি, যা করছো ভেবে শুনে করো।
কুমকুমঃ আর কখন আসবে?
আমিঃ বলতে তো পারিনা বোন আর কখন আসি। তবে প্রয়োজনে পাশে পাবে আমাকে।

তারপর আর কি, আমি তো চলে এসেছি মাসির বাড়ি থেকে। সেই থেকে আর কোন খবর কিংবা চিঠি পায়নি তাই এটাই ভেবে নিয়েছিলাম, হয়তো সে সুখেই আছে। এভাবে কোন সময় যে দুই দুইটা বছর কেটে গেল টেরই পেলাম না। এইদিকে আমার এস.এস.সি. পরীক্ষাও শেষ তাই মাসিকে দেখার ইচ্ছে নিয়ে চলে গেলাম মাসির বাড়ী।

মাসিঃ এতদিন পর বুঝি মনে পড়লো মাসির কথা।
আমিঃ কি করবো বলো। পড়ালেখা যে পিছু ছাড়ে না। তা কুমকুম কোথায়?
মাসিঃ কুমকুম সে তো কলেজে। যা তুই হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।

খাওয়া দাওয়া সেরে ভাবলাম একটু ঘুমিয়ে নিই। চোখ বন্ধ করে ঘুমের চেস্টা করতেই কুমকুম এর শব্দ শুনতে পেয়ে কান দুটো খারা হয়ে গেল। ভাবলাম যাই গিয়ে দেখা করে আসি। আবার ভাবলাম থাক সে নিজেই ফ্রেশ হয়ে দেখা করতে আসবে।

মাসিঃ শান্ত এসেছে। ভাত দিতে দিতে কুমকুমকে বলছিল মাসি।
কুমকুমঃ কি..... শান্ত এসেছে? সত্যি নাকি?
মাসিঃ ভিতরের ঘরে গিয়ে দেখ হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে।

তারপর আর কি। চটজলদি খাওয়া শেরে ঘরে ঢুকে নাম ধরে ডাকতে শুরু করে দিল কুমকুম।

কুমকুমঃ শান্ত এই শান্ত তুই কি ঘুমিয়ে পড়েছিস।

তখনও আমি কুমকুমের বিপরীত দিকে মুখ করে শুয়ে ছিলাম আর বললাম হ্যাঁ ঘুমিয়েছি এ বলে ফিরতেই কুমকুমের চোখের দিকে আমার চোখ গিয়ে পড়ে।

আমিঃ কিরে কাঁদছিস? তোদের প্রেম কেমন চলছে।

কোন উত্তর নেই। আরও আমায় এতদিনে আমার কথা মনে পড়ল তোর? আমি একটু দুষ্টমি করে বলি, তোর কথা নয় মাসির কথা মনে পড়েছে তাই এসেছি। কথায় আছে না “মার বোন মাসি মায়ের চেয়েও বেশি”।

কুমকুমঃ তাহলে আমি তোর কেউ না।
আমিঃ তুই আমার দিদি। কিন্তু কথা কাটাচ্ছিস কেন। আমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিস না যে। কি হয়েছে বলনা আমায়।
কুমকুমঃ সত্যিই তুই ঠিক বলেছিলি এ বয়সে প্রেম না করতে।
আমিঃ কেন কি হয়েছে। কোন সমস্যা?
কুমকুমঃ আমার মা-বাবা সবাই জেনে গেছে।
আমিঃ কিভাবে?
কুমকুমঃ আমার সবচেয়ে আপন বান্ধবীরাই বলে দিয়েছে।
আমিঃ খুব উচিৎ হয়েছে। তুই ওদের কিছুই বলিস নি।
কুমকুমঃ ওরা আর আমার সাথে কথা বলে না। ওদের কথা শুনে মা আমার পড়ালেখা বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল।
আমিঃ আমি তো তোকে বলেছিলাম তুই পারবিনা কখনো নিজের পরিবারকে ট্যাকেল দিয়ে রাখতে। তবুও তো ন্যাকা কান্না কেঁদেছিলি। এবার তার ফল পাচ্ছিস। ও এখন কোথায়? শহরে নাকি বাড়িতে?
কুমকুমঃ ও শহরে। তবে আসবে ২/১ দিনের মধ্যে।
আমিঃ ওকি জানে তোর এসব কথা।
কুমকুমঃ না। ওর সাথে প্রায় ১ মাস দেখা হয়নি।
ওর চোখ মুখ স্পষ্ট বুঝিয়ে দিচ্ছিল যে ও মিথ্যা কথা বলছে।
আমিঃ আচ্ছা আমি দেখছি কি করতে পারি। তুই কিছু চিন্তা করিসনা। তুই বলেছিলি ওর কোন একটা বোন ...... আরে বলনা কি যেন পড়ছিল?
কুমকুমঃ ওকালতি। পড়া শেষে এখন প্যাকটিস করছে।
আমিঃ ওকালতি করে এর সাথে কি কথা বলা যাবে।
কুমকুমঃ তুই পাগল হয়ে গেছিস নাকি। যদি মা বাবা জানতে পারে.... না না তুই ওদেও কারো সাথে কথা বলিস না তাহলে মা খুব রাগ করবে।
আমিঃ কেন? ওদের সাথে কথা বললে কি হয়েছে তাতে।
কুমকুমঃ তোকে তো বলাই হয়নি, ওদের সাথে আগে থেকে আমাদের সাথে ঝগড়া ছিলো।
আমিঃ কি? তুই আমাকে হাসালি। সবকিছু জেনেও তুই কিনা.....। ঠিক আছে ওর বোনের সাথে না হোক অন্তত ওর সাথে কথা তো বলতে পারি।
কুমকুমঃ কিভাবে?
আমিঃ ও আমার বন্ধু। তার উপর তোদের মধ্যে আইমিন পারিবারিক ভাবে কি হয়েছে তা তো আমি জানিনা। তো এতে কোন অসুবিধাও দেখছিনা।
কুমকুমঃ তোবুও কেমন.....।
আমিঃ আর কেমন তেমন নয়। আমি যেটা বলেছি সেটাই হবে অর্থাৎ আমি করেই নিবো।

হঠাৎ একদিন আমি ঘরে বসে রেডিওতে গান শুনছিলাম ঠিক তখনই বাইওে থেকে ঝড়ের বেগে কুমকুম ছুটে আসে আর হাঁপাতে শুরু করে।
আমিঃ কিরে কি হয়েছে। অমন করে হাঁপাচ্ছিস কেন। মাসি কোথায়?

কুমকুমঃ মা পাশের বাড়ী গেছে। জানিস ও এসেছে।
আমিঃ কে?
কুমকুমঃ চন্দ্র।
আমিঃ আমি আধশোয়া থেকে উঠে বসলাম। সত্যি।
কুমকুমঃ হ্যাঁ এ মাত্র দেখে এলাম।

কথাগুলো বলতে বলতে কুমকুমের মুখে এমন হাসি দেখতে পেলাম যেন হারানো জিনিস কুড়িয়ে পাওয়ার সুখ। সত্যি কুমকুম চন্দ্রকে অনেক বেশি ভালোবাসে। তবে মনে মনে এটাও ভাবছি যে, যাকে কোনদিন দেখিনি কিংবা যাকে চিনিও না তার সাথে কথা বলবো কিভাবে? হে ভগবান তুমিই সহায়।

সত্যি ভগবান আমার কথা শুনেছেন। কেননা সেইদিন বিকালে রাস্তায় সে নিজে থেকে আমাকে জিজ্ঞাসা করছিল- কিছু মনে করবেন না, আমি চন্দ্র এই গ্রামে থাকি। আপনি কি এই গ্রামে নতুন এসেছেন বেড়াতে।

আমিঃ হ্যাঁ।
চন্দ্রঃ কাদের বাড়ী?
আমিঃ কুমকুমদের বাড়ী।
চন্দ্রঃ কাদের বাড়ী.....! কথাটা শুনতেই বিচলিত হল চন্দ্র।
আমিঃ কুমকুমদের বাড়ী। আমরা কি বন্ধু হতে পারি।
চন্দ্রঃ ওমা একি বললেন। অবশ্যই বন্ধু হতে পারি।
আমিঃ তাহলে আমাকে আপনি না ডেকে তুমি করে ডাকলে খুশি ভাববো মন থেকে বন্ধু ভেবেছেন।
চন্দ্রঃ আচ্ছা বাবা ঠিক আছে। কথাটা বলতে বলতে হেঁসে উঠল চন্দ্র। তা কুমকুম কেমন আছে।
আমিঃ ভালো। কিন্তু একটা সমস্যা হয়েছে।
চন্দ্রঃ সমস্যা মানে.... ভ্রæ কুঁচকে নিল সে।
আমিঃ তোমাদের ভালোবাসার কথা ওর পরিবার জেনে গিয়েছে।
চন্দ্রঃ তুমিও জানো এইসব!
আমিঃ হ্যাঁ। আমার মতে সমস্যাটা কুমকুম নিজেই করেছে।
চন্দ্রঃ যেমন..... কৌতুহলী চাহনীতে কথাটা বলল।
আমিঃ কি দরকার ছিল বান্ধবীদের এইসব বিষয় শেয়ার করার। এতেই সৃষ্টি হল যতসব সমস্যা।
চন্দ্রঃ ঠিক বলেছো ভাই। আমি ওকে বারবার বলেছিলাম এইসব বিষয় আপাতত কেউকে বলার দরকার নেই। কে শুনে কার কথা।
আমিঃ সে যদি শুনতো তাহলে আজকে এই দিন দেখতে হতোনা।

এইসব কথা চলতে থাকে বেশ কিছুক্ষণ আর সাথে সাথে আমরা হাঁটতে থাকি সামনের দিকে। মাঝের কোন এক সময় আমার পরিচয়টাও ওকে জানিয়ে দিই। আবার সে তার পরিচয়টা জানায় আমাকে। তবে যতবার কুমকুমের কথা ওর মুখে শুনছিলাম আর দেখছিলাম ওর মুখের দিকে। একদম স্পষ্ট ফুঁটে উঠছিল কুমকুমের প্রতি তার চাপা ভালোবাসা গুলো।

চন্দ্রের অনেক কথার মধ্যে একটা কথা আমাকে সত্যি ভাবিয়ে তুলল। “ওকে এতবার বললাম যে, তুমি শুধু পরিবারটাকে সামলে নিবে আর আমি বাকি সব সামলে নিব। কিন্তু ও আমার কথা শুনলো না। আমার প্রতি ভালোবাসা গুলো ছিল অভিনয়।”

আমিঃ না ভাই। ও তোমাকে সত্যি অনেক ভালোবাসে। আর সেই ভালোবাসা ও শুধু নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখতে পারেনি বলেই তো বান্ধবীদের সবাইকে জানিয়ে দিয়েছিল। তুমি জানো, ওর এইসব কথা জেনে আমার মাসি ওর পড়া বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল।
চন্দ্রঃ কি বল? এতকিছু হয়ে গেছে। আমার জন্যে একটা মেয়ের পড়ালেখা কেন বন্ধ হবে। আর যাই হোক আমার জন্যে ওর পড়ালেখা ওর ভবিষ্যৎ নষ্ট হতে দিব না। ওকে বলবে যেন পরিবারে জানিয়ে দেয় ওর কারো সাথে কোন প্রেম ভালোবাসা ছিল না। আর এও বলবে, ওকে আমি অতীতে যেমন ভালোবাসতাম এখনো তেমনই ভালোবাসি আর ভবিষ্যতেও ঠিক তেমনটাই ভালোবাসবো।

কথা বলতে বলতে কখন যে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো টেরই পেলাম না। কথার এক ফাঁকে হোটেলে বলে কিছু খাওয়া দাওয়াও সেরে নিলাম আমরা। বিদায়ের কোন এক মুহুর্তে ও একটা কথা জানিয়ে দিয়ে গেল আমাকে। “ জানো শুধুমাত্র ওকে দেখার জন্য আমি গ্রামে আসি নাহয় আসতাম না।” সন্ধ্যার আলো আঁধারিতে একসময় যে যার যার পথে অদৃশ্য হয়ে গেলাম।

বাড়ি ফিরে দেখি কুমকুম চুলোতে ভাত ফুটতে দিয়ে সামনে বসে কাঁদছে।

আমিঃ কিরে বোন কাঁদছিস কেন।
কুমকুমঃ তুই সেই বিকেল থেকে ওর সাথে ছিলি যদি কেউ তোদের দেখে ফেলে বা কিছু তোদের বলে এইসব ভেবে চোখে জল এসে গিয়েছিল যে। তো কি বললি আর কি শুনলি বল।
আমিঃ তোকে কেন বলবো। যা বলার সবটাই ওকে বলে দিয়েছি।

দুষ্টুমি করে বললাম কিন্তু ওর চোখে মুখে ভয়ের ছাপ ভেসে উটলো। অনেক বার সে আমার কাছে একই প্রশ্ন করলেও আমি বলিনি তাকে কিছুই। রাতটাও এইদিক সেইদিক করে কেটে গেল।

পরদিন সকালে খাবার দাবার খেয়ে বাইরে উঠানে গিয়ে বসলাম ঠিক তখনই মেসো আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন- শান্ত কেমন লাগছে এখানে। আমি বললাম ভালো লাগছে মেসো। কোন এক কথা প্রসঙ্গে মেসো আমাকে জিজ্ঞাসা করে বসলেন- চন্দ্রের সাথে তোমার কেমন পরিচয় শান্ত। মাসি ও কুমকুম সবাই সামনে ছিল তখন। মনে মনে ভাবছিলাম কেউকে বিপদ থেকে বাঁচাতে যদি মিথ্যা বলতে হয় বা পাপ গ্রহণ করতে হয় তাতেও সুখ। এ কথা মনকে বুঝিয়ে বলে ফেললাম- ওতো মেসো আমার শহরের বন্ধু। এখন যে জায়গায় বাসা নিয়েছি সেখানে ওদেরও বাসা। আর ওখানেই পরিচয় চন্দ্রের সাথে। কিন্তু কেন মেসো দরকার ছিল কি।

মেসোঃ না তেমন কিছু না এমনিতে জানতে চাইলাম। কারণ, কালকে তোমাকে ওর সাথে কথা বলতে দেখেছিলাম তো। তার উপর ওদের সাথে আমাদের সমাজের লোকদের সাথে ঝগড়া। বলতে পারো ওরা বেসমাজি।
আমিঃ কি বলেন মেসো। আমি তো এইসব নিয়ে কিছুই জানিনা।

একদিকে মেসোর সাথে চন্দ্রকে নিয়ে কথা হচ্ছিল আবার অন্যদিকে কুমকুম আমাকে তার রাগ দেখাচ্ছিল। এক সময় কুমকুম চলে গেল কলেজে আর মেসো চলে গেলো শহরে সাথে মাসিও গেল খামার বাড়িতে। সারাটাদিন এপাশ ওপাশ করে কাটিয়ে দিলাম একা। মাঝের কিছুটা সময় হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে নিজেকে করলাম শীতল। বৃষ্টির কারণে মাসি খামার থেকে আসতে দেরি করছিলেন। এইদিকে কুমকুম আধভেজা অবস্থায় বাড়ী ফিরে এলো। তখনও ওর চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ। আমাকে দেখে একেবারে গাল দুটো আরো ফুলিয়ে রেখেছে সে। তাও রাগের মাথায় আমাকে বলল- বাড়ি ফেরার পথে ওর সাথে দেখা হয়েছে আমার।

আমিঃ কি বলিস। কিছু বলেছে নাকি।
কুমকুমঃ আমার বান্ধবীরা ওকে জিজ্ঞাসা করেছে ওকে কোথায় যাচ্ছো।
আমিঃ ও কি বললো। ভ্রæঁ কুঁচকে আমি জানতে চাইলাম।
কুমকুমঃ আর কি বলবে বল। ও নাকি গতকাল বিকেলেই চলে যেতো।

তাও কিসব বিশেষ কাজ থাকাতে যেতে পারেনি। এসব বলে ও চলে গেল। একবারও পিছনে ফিরে তাকালো না সে আমার দিকে।
অবশেষে আমি মুখ খুললাম কুমকুমের সামনে। “শুন কুমকুম- ও আমাকে সব কিছু বলেছিল অর্থাৎ ও গ্রামের ছেলে হওয়া স্বত্তেও বাড়ি আসতো একমাত্র তোকে একটু দেখার জন্যে, তোর সাথে কথা বলার জন্যে।” আমি তোর সাথে ঘটে যাওয়া সব সমস্যার কথা ওকে খুলে বলেছিলাম গতকাল। সব শুনে ও আমাকে একটাই কথা বলেছে- “ও তোকে অতীতে যেমন ভালোবাসতো বর্তমানেও তেমনই ভালোবাসে আর ভবিষ্যতেও একই ভাবে ভালোবেসে যাবে। তোর জন্য ওর হৃদয়ের দরজা সবসময় খোলা ছিল আছে থাকবে।”

আমার কথাগুলো শুনতেই একদম কেঁদে ফেলল কুমকুম। দেখ আমি তোকে আজকে থেকে দুই বছর আগেও নিষেধ করেছিলাম কিন্তু তুই আমার কথা শুনিসনি। চন্দ্র চন্দ্র করে পাগল হয়ে গিয়েছিলি। তোর একটাই সমস্যা ছিল বোন- তুই জানতিস তোরা আর ওরা সমাজি আর বেসমাজিতে ফেঁসে আছিস তাও কেন যে ওকেই তোর ভালবাসতে হতো? সত্যি অবাক করে ভালোবাসা তোর। আবার অন্যভাবে দেখলে এখানে তোকে দোষ দেয়াটাও অন্যায় হবে তোর উপর। সবটাই উনার (বিধাতা) ইসারা। উনি হয়তো এটাই চেয়েছিলেন বোন।

আসলে সত্যিকারের ভালোবাসা তারাই বাসতে পারে যারা নিজের চেয়ে বেশি খুশি হয় তার ভালোবাসার মানুষটার মুখে হাসি দেখে। চন্দ্র জানতো সে যদি সাহস করে কুমকুমের দিকে এক পা বাড়ায় তাহলে কুমকুমের পড়াশুনাও বন্ধ হয়ে যেত। হয়তো তার ঘর থেকে বেড়োনোটাই হয়ে যেতো কাল। তার সুখের কথা ভেবে চন্দ্র কঠিন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বলে আজ তারা দুরে থেকেও একে অপরকে আগের মতই ভালোবেসে যাচ্ছে নিরবে।

আর দুই একদিন থেকে আমিও ফিরে এলাম বাসায়। আর ওদের নিয়ে লিখতে বসে গেলাম এলোমেলো শব্দে গল্প। গল্পের শেষ একটাই- “ভালোবাসা কখনো মরেনা, মরে শুধু ভালোবাসার মানুষগুলো। ভালোবাসা কখনো হারেনা, হারে শুধু ভালোবাসার মানুষগুলোর মন।”

চলমান-------
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩৩১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৭/০৬/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

 
Quantcast