www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বেঁচে আছি এই যা

সবার স্বপ্ন বুনতে গিয়ে কখন যে নিজের স্বপ্নগুলোকে গঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়ে এলাম টেরই পেলাম না। এই যদি ইচ্ছে ছিল ভগবানের তাহলে এতটা পথ এনে কি মজা পেল। মানুষের লোভ যেমন আছে ঠিক তার শাস্তিও ভোগ করে যেতে হয় মানুষেরই। তাই বলে কি স্বপ্ন বুনার স্বপ্ন দেখাটাকেও লোভ বলে আখ্যায়িত করতে হবে ভগবান। এইটুকুনি মাত্র বয়েস। এতেই তুমি ত্রিভুবনের চিন্তা এনে চাপিয়ে দিলে মাথায়। একদিকে মনের জোর অন্য দিকে মস্তিষ্কের ওলটপালট ভাবনা। সবমিলিয়ে আমার যে কি পরিস্থিতি হচ্ছে তা কেবল তুমি ছাড়া আর কেউ অনুভব করতে পারছে না ভগবান। কিন্তু এইভাবে আর কতদিন?

যদি বলি তুলে নাও তখনো মনটা ব্যাথায় ছটফট করে উঠে। কি আর করা, মানুষের মন বলে কথা। দিন শেষে যখন হিসেব মিলাতে বসি তখন কেবল একটাই প্রশ্ন চোখের সামনে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে। কি করছি কেন করছি কেইবা করিয়ে নিচ্ছে??? হয়তো এটাই অন্ধকার ভবিষ্যতের প্রাথমিক লক্ষণ। তবে এটাও যে না মেনে উপায় নেই- কে কার ভবিষ্যত দেখেছে।

প্রকৃত পুরুষ কখনো হাল ছাড়েনা -এই উক্তিকে হৃদয়ে পোষন করা যতটা সহজ ততটা সহজ কিন্তু বাস্তবতাকে গ্রহন করা নয়। চারপাশটা হরহামেশাই প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে তা কি আর এড়িয়ে যাওয়া যায়? শুধুমাত্র ভালোবাসার মুখগুলো সব ব্যাথাকে হার মানায় বলে আজো বেঁচে থাকার লড়াই করছি। নাহয় কবে হারিয়ে যেতাম না ফেরার দেশে। বারংবার হেরে যেতে যেতে জেতা কিন্তু সহজ নয়। এইভাবেই হয়তো কোন এক সময় হারকে অভ্যাসে পরিণত করে নিতে বাধ্য হব।

আজকাল সহজ কথাগুলোকেও জটিল মনে হয়। হয়তো এটাই স্বাভাবিক চিন্তাযুক্ত মস্তিষ্কের জন্য। এখন আর আগের মতো কারো সাথে আড্ডাবাজি হয়ে ওঠে না। ভুলেও গেছি শেষ কবে মন খুলে হেসেছিলাম। গান ধরেছিলাম উচ্চ সুরে। কারণ একটাই সঠিক বয়সের চেয়ে বেশি বড় হয়ে গেছি আমি। সব নাকি বুঝতে শিখে গেছি সময়ের আগে। এখন পালানোর পথও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ওই যে সবার কাতারে আমি এখন পরিপূর্ণ পুরুষ। যার নাকি কষ্ট থাকা বারণ। চিন্তা থাকা বারণ। যার চারপাশটা শুধুই সুখ আর সুখ। হাহাহাহা।

কত করে বললাম নিজেকে যা কালকে করবে ভাবছ তা আজকে করলে ক্ষতি কি? কিন্তু কে শোনে কার কথা। মনে হয় বয়সের কদরটা সবার মত নিজের কাছেও মূল্যহীন ছিল। হয়ত ভেবেছ অভিজ্ঞতাহীন তুচ্ছ আবদার। আজকে সেই সব অতীত গুলোয় বর্তমানকে দংশন করছে। বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে যা হয়েছে ভালো হয়নি। আরো ভালো হতে পারতো। সব কিছু কি আর সরি বলে সমাধান হয়? তার উপর এক শব্দ কতবারই বা শুনতে ভালো লাগে মানুষের। ভগবান কিছু বিষয় আগাম জানান দিলেও মানুষের ছোট মস্তিষ্ক তা গ্রহণ করতে পারেনি পারবেও না। সময় শেষে হিসেবের অংকটা ভগবানের খাতায় গিয়ে এলোমেলো জটলা পাকানো ছাড়া আর কি বা ভালো আশা করা যাবে।

একা বসলে বুকের ভেতরটা কেবল দুমরে মুচকে উঠতে চায়। আসল সমস্যাটা একটা নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে স্থির। পরিবার সংসার মায়া মমতা ভালোবাসা সবমিলিয়ে বন্ধন। আমার মত অতি সাধারণ মানুষকে দুর্বল করার জন্যে যথেষ্ট একটি শব্দ। অসহায় মানুষগুলোর মুখ দেখলে একদিকে যেমন অনুভূতি হয় স্বর্গের সুখ অন্যদিকে আবার তাদের ভূত ভবিষ্যত নিয়ে ভাবলে রাত দিনের আর হিসেব মিলাতে পারি না। এখন নিজেকে কেবল অপরাধী মনে হয়। দশ টাকার মধ্যে এক এক টাকার হিসেব ছোট বেলা থেকে মিলিয়ে দিতে গিয়ে হাজার টাকার লোভ আর আমাকে গ্রাস করতে পারেনি। আর এটাই হল আমার কাল।

টাকার কাছে মেধা মূল্যহীন এটা এখন হারে হারে টের পাচ্ছি। ভুলগুলোর মাশুল দিতে হবে তাই বলে এতটা... সত্যি আমি হতবাক। ভাবতাম অদ্ভুত কোন মেধা ভগবান আমার সাথে উপহারস্বরূপ পাঠিয়েছেন। কিন্তু সবটাই স্বপ্নদোষ। রাতের শেষে সবটাই অগোছালো। এককথায় অপরিপূর্ণতা। কেমন যেন ছোটবেলা থেকেই মনে হতো- টাকাতো রিক্সা ওয়ালাও কামায়, তাহলে এই টাকার পেছনে মেধা ছেড়ে ছুটে চলার জন্যে এত পড়াশোনা করছি কেন। মেধা যদি থেকেই থাকে তাহলে তো এভাবে হোক বা ঐভাবে টাকার যোগান ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু কিছু একটা করে দেখানোর সময় যদি একবার চলে যায় তাহলে কি আর নিজেকে প্রমাণ করতে পারবো কখনো? তখনকি আর বুঝতে পেরেছিলাম, আমার মত পাগল আমিই একজন।

পড়াশোনাকে দুটি ভাগে ভাগ করে নিয়েছিলাম নিজের মত করে। একভাগ ছিল তত্ত্বীয়। যা আমাকে পালিয়ে বেড়াতে বাধ্য করতো। আর অপরভাগ ছিল তত্ত্বীয় বহির্ভূত। যা আমাকে সবার মাঝে আলাদা সম্মান আলাদা পরিচয় এনে দিতো। আজ আমি যতটা পথ জীবন সংগ্রামে অতিবাহিত করেছি তার পুরোটাই তত্ত্বীয় বহির্ভূত যাত্রার ফল। কিন্তু হিসেব কষে ডেবিট ক্রেডিট এক হয়ে গেল। অতীতের সব রেকর্ড বলছে মেধা নিজের মাথায় রাখার চেয়ে অন্যকারো হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়াটাই জনপ্রিয়তা। কার কি জানা আছে, কার কি অভিজ্ঞতা আছে তাতে পাছে লোকের কি যায় আসে। এখন বেলা শেষে একটি বিশেষ দৌড় "টাকা আর টাকা"।

কারো কি এখন মেধা পরিমাপের সময় আছে নাকি। নাকি নিজেকে যাচাই করার তাগিদ। সবাইতো এখন একটাই সহজপাঠ নিয়ে ব্যস্ত "টাকা"। আমিও এখন ঐ পাঠশালায় নাম লিখাতে ব্যস্ত। কি করবো চারপাশটা যে আমার মত মেধাবীর অপেক্ষা করে না। আমি থাকলেও কি আবার না থাকলেও কি। শিখছি সমাজ যা শেখাচ্ছে। দেখছি সবাই যা দেখাচ্ছে। থিওরিটা খুব সহজ। No money no talent. ধীরে ধীরে সব আশা সব স্বপ্ন নিজের হাতে চোখের জলে ভাসিয়ে দিচ্ছি নিজেকে অন্যের চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করতে গিয়ে। সহজ বাংলায় আমি আমাকে হারিয়ে ফেলেছি। এখন বেঁচে আছি এই যা।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩১১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৭/০৬/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast