www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ভূতের বাচ্চা

বার বার এপাশ ওপাশ করছি, কিন্তু ঘুম আসছেনা। একটা বিষয় নিয়ে চিন্তার কারনেই হয়তো এরকম হচ্ছে। না মাথা থেকে সব চিন্তা দুর করতে হবে, তা নাহলে হয়তো সারাটা রাত এমন ছটফট করেই কাঁটাতে হবে। সকালে আবার একগাদা কাজ আছে। চোখ দুটি ঘুম না হওয়ার কারণে জ্বলছে, ঘুম আসুক এই প্রত্যাশা করছি। হয়তো দুচোখে ঘুমও এসেছিল কিন্তু হঠাৎই মনে হলো একটা আলো ঘরে ঘুরছে। এই বাড়িতে আমি একাই থাকি লোকজন বলতে তেমন কেউ নেই। কিন্তু মনে হলো কেউ সারা গায়ে আলো মেখে উড়ে উড়ে ঘুড়ছে। ব্যপারটা কি! না আমি তো চোখ মেলেই আছি স্বপ্ন দেখার কোন সম্ভাবনা নেই । আমি বিছানায় উঠে বসলাম, বিষয়টা ভালভাবে দেখতে হবে। আমার উঠে বসা দেখে মনে হলো আলোটা থেমে গেল। আমি চোখ দুটো কচলে তাঁকালাম। এ কি এই বাচ্চা মেয়েটি কোথা থেকে এলো? দুই হাত কোলের কাছে ধরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ভূতগুলোর মতো।
সিহাব কিছুক্ষণ ভেবে বলল- এই ব্যাপার কি? তুমি এতো রাতে কোথা থেকে এলে? আর আমার ঘরে ঢুকলে কিভাবে। মেয়েটি কোন কথা বলল না। ঠিক আগের মতোই আমার দিকে তাঁকিয়ে আছে।
সিহাব- এই কথা বলিস না কেন?
তারপরও মেয়েটি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
সিহাব- এই বেয়াদব কথা বলছি উত্তর দিচ্ছিস না কেন? থাপ্পর দিয়ে গালটা ফাটিয়ে দেব।
এবার মেয়েটি কেঁদে ফেল। সিহাব অবাক হয়ে ওর কান্না দেখছে। মেয়েটি কাঁদছে য়্যাও ম্যাও করে।
সিহাব- এই চুপ। এমন করে বিড়ালদের মতো কাঁদছিস কেন?
মেয়েটি ফোপাতে ফোপাতে বলল - তুই আমাকে বকা দিলি কেন?
সিহাব- ভারি বেয়াদব মেয়ে তো! এই তুমি কে? বাড়ি কোথায়? আমার ঘরে ঢুকলে কেমন করে?
মেয়েটি সিহাবের কথা শুনে হাসলো। হেসে বলল- আমি ভুতের বাচ্চা।
সিহাব- কি!
ভ‚তের বাচ্চা- হ্যা আমি ভ‚তের বাচ্চা। তোদের সমাজেই আমরা বেড়ে উঠি।
ভূতের কথা শুনে শরিরটা শিউরে উঠল। বলেকি এই মেয়ে! হতেও পারে। তাছাড়া আমিতো ঘরের দরজা বন্ধ করেই শুয়েছি এখনও তাই আছে। ভূত ছাড়াতো কেউ এভাবে ভিতরে ঢোকারও কথা নয়। ভয় পেলেও কেন জানি মনে হলো এতো ছোট ভূত আমার কিছু করতে পারবেনা। তাই সাহস করে বলল-
সিহাব- আচ্ছা ভূতের বাচ্চা, তা তুমি আমার ঘরে কি জন্য এসেছ?
ভুতের বাচ্চাটি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল
ভ‚তের বাচ্চা- আসলে আমি এসেছি তোদেরকে দেখতে, মানে এটা এক ধরনের পরীক্ষা।
সিহাব- কিসের পরীক্ষা?
ভ‚তের বাচ্চা- ভূত হওয়ার পরীক্ষা!
সিহাব- ভ‚তকে আবার ভ‚ত হবারও পরীক্ষা দিতে হয়? তুমিতো ভুতই তাইনা?
ভ‚তের বাচ্চা- হ্যা তা ঠিক। আমাদেরও কিছু পরীক্ষা থাকে, যেমন মানুষ কেমন? কেমন করে মানুষের ঘার মটকাতে হয়, কেমন করে মানুষের মাথায় বসতে হয় আরো অনেক পরীক্ষা আছে।
সিহাব- তা তুমি কি ঘার মটকানো শিখেছ?
ভ‚তের বাচ্চা- না এখনো শিখিনি। তবে শিখতে হবে।
সিহাব- আচ্ছা এই যে তুমি আমাকে তুই তুই করে বলছ কেন? তোমরা পড়া লেখা শেখনা?
ভ‚তের বাচ্চা - না। পড়া লেখা আমরা করিনা। কারণ পড়া লেখা করলে ভুত আর ভুত থাকেনা।
সিহাব- তবে ভূত কি হয়?
ভ‚তের বাচ্চা- তা এখনো শুনিনি, তবে শুনেছি আমাদের ভদ্রতা শিখতে হয়না। তাছাড়া ওটা শিখে কি হবে?
সিহাব- কেন! ভদ্র হবা, শিক্ষিত ভ‚ত হবা, আমার মতো সুন্দর করে কথা বলতে পারবে।
ভ‚তের বাচ্চা- তোর মতো সুন্দর করে কথা বলে আমার কাম নাই। তাছাড়া তোরা পড়া শিখে কি করেছিস। পড়া শিখেতো আমাদের মতো ভুতই হয়ে আছিস।
সিহাব- কিভাবে আমরা ভুত হই?
ভ‚তের বাচ্চা - এই যেমন তোরা যেটাকে শিক্ষিত বলিস সেটা হয়ে তোরা অন্য মানুষের ঘারে চেপে বসিস।
সিহাব- মানে?
ভ‚তের বাচ্চা- মানে, চাকরি করিস, বেতন নিস কিন্তু ভুতের মতো ফাইলপত্র আটকে রাখিস আরো টাকার জন্য। টাকা দিলে ফাইল ছাড়বি; না দিলে ছাড়বিনা। এটা কি ভুতের কাজ না?
সিহাব- কিন্তু এটা তো সবাই করে।
ভ‚তের বাচ্চা - সেই জন্য তো তোরা সবাই ভূত।
সিহাব- আচ্ছা মানলাম কিন্তু এই একটাই কি কারণ?
ভ‚তের বাচ্চা - নাহ্, এই যে তুই ঠান্ডার মথ্যে আরাম করে লেপ গায়ে ঘুমাচ্ছিস অথচ বাইরে কত মানুষ ঠান্ডায় কাঁপছে। লাভ কি পড়া লেখা শিখে?
আমি ভূতের বাচ্চার কথা শুনে রিতিমত অবাক হচ্ছি, কি বলছে!
ভূতটি আবার য়্যও ম্যয়ও করে কাঁদতে লাগল।
সিহাব- তুমি আবার কাঁদছো কেন?
ভ‚তের বাচ্চা - কারন আমি প্রথম পরীক্ষায় ফেল করেছি।
সিহাব - কি ভাবে ফেল করলা?
ভ‚তের বাচ্চা- এই যে তোর ঘাড় না মটকে এতোক্ষন কথা বললাম সে কারণে।
সিহাব- তুমি কি সত্যিই আমার ঘার মটকাবে নাকি?
আমার কথার উত্তর পেলাম না। ভুতটি খন্ডিত হয়ে কয়েকটা আলোর টুকরো হয়ে কিছুক্ষণ আমার ঘরে ঘুড়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। স্বপ্নের মতো ঘটে যাওয়া এই ঘটনাটি নিয়ে ভাবলাম। ঘড়িতে সময় দেখলাম রাত ৩টা। অনেক হয়েছে এখন একটু ঘুমানো দরকার। যখন ঘুম থেকে উঠলাম তখন অনেক বেলা। সারাদিনের ব্যস্ততায় বেমালুম ভূলে গেলাম গত রাতের ঘটনা। বিকেলে অফিসের পাশে খালি গায়ে একটি মেয়েকে দেখে হঠাৎই মনে হলো ভুতের বাচ্চার কথা। মলিন চেহারায় ক্ষুধার ছাপ। হাড় লিকলিকে শরীরে টলটলে চোখে সিহাবের দিকে তাঁকিয়ে থাকল। কিন্তু সময় কোথায়, ঘড়ির কাটার মতো মানুষকে ছুটতে হয়। একবার মেয়েটার দিকে দেখে সিহাব বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে যায়।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩৭২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২১/০৩/২০২২

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast