দহন
গল্পটি বেশ জমে উঠছে, সিগারেটে টান দিয়ে এসব গল্প শুনতে বেশ ভালই লাগে। গল্পের সব কথা এখানে উল্লেখ করা সম্ভব হচ্ছেনা। তবে গল্পের মূল বিষয়টি হচ্ছে প্রেম বা নারী বিষয়ক। বাপ্পি বলল আরে দোস ঐ মাইয়াটা দেখতে যা জব্বর চিন্তাই করতে পারবি না! ইস..! টনি রাতুলকে খোঁচা দিয়ে বলল রাতুল কিরে চুপ কইরা আছোস ক্যান? রাতুল হয়তো অন্য কোন বিষয়ে চিন্তা করতেছিল তাই টনি নাড়া দেয়াতে সে একটু টলে ওঠে। এরা সবে ক্লাস টেনে উঠেছে। এখন লাইফটাকে বেশ অন্যরকম লাগে কেননা স্কুলের মধ্যে ওরাই সিনিয়র। আর সাতটা মাস গেলে কলেজে উঠে যাবে এখনকার উচ্ছ¡াস যেন অফুরান। কথায় কথায় তারা সিদ্ধান্ত নিলো পয়েন্টে যাবে। পয়েন্ট বলতে সীমান্তবর্তী এলাকা। সেখানে অনেক জিনিস পাওয়া যায় যেগুলো খেলে নাকি শরীরে ফুর্তি আসে। শহর থেকে পয়েন্টের দূরত্ব বার কিলো হওয়ায় বিকেল হলেই শহরের ছেলেরা মটর সাইকেল টান দিয়ে পয়েন্টে চলে যায়। রাতুল অবশ্য পয়েন্টে যেতে চাচ্ছে না কিন্তু অন্যান্য বন্ধুদের কারণে যেতে হবে। রাতুলের এ নিয়ে বেশ ভয় কাজ করছে যদি কেউ দেখে ফেলে আর বাড়িতে জানিয়ে দেয় তবেই হয়েছে। যে যার মতো চলে গেল কিন্তু কথা হলো তিনটার মধ্যে সবাইকে এখানে উপস্থিত হতে হবে আর দুশো করে টাকা আনতে হবে। কথা মাফিক বিকালে সবাই পয়েন্টে চলে এলো । যখন পয়েন্টে এলো তখন বিকাল। রতনের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকায় জিনিস পেতে সময় লাগল না। ওরা সেগুলো নিয়ে নদীর পারে বসে খেতে লাগল। রাতুলরা এই প্রথম খাচ্ছে বলে মাথাটা কেমন যেন ঝিম মেরে গেছে। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে বাতাসের সঙ্গে ফিলিংসটা নির্ভর করছে, বাতাস জোড়ে উঠলে ফিলিংসটাও বেড়ে যায় তখন কেন যেন অন্যরকম একটা মানুষ মনে হয়। বাড়িতে ফিড়তে সন্ধ্যা পার হয়ে গেল। রাতুল চুপ চাপ রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে শুয়ে পরল। রাতুলের ছোট বোন মিম এসে দু বার ডেকে গেল কিন্তু রাতুল দরজা খুললো না। কিচ্ছুক্ষণ শুয়ে থেকে সে বাথরুমে ঢুকে গোসলটা করে নিলো। এর মধ্যে মা কয়েকবার ডেকে গেছে। রাতুল চিন্তা করল যদি সে স্বাভাবিক ভাবে কথা না বলে তবে বাবা এসে রাগা রাগি করবে। তাই সে গোসলটা করে বই নিয়ে বসল। মিম আর একবার এসে চা দিয়ে গেল। মিম ক্লাস সেভেনে পড়ে টুকটুকে একটা মেয়ে। মিমের সঙ্গে রাতুলের যেমন ঝগড়া লাগে তেমন মিলও অনেক। রাতুল বই উল্টাচ্ছে কিন্তু পড়তে ইচ্ছে করছে না। রাতুল একেবারে খারাপ ছাত্র নয়, এক থেকে দশের মধ্যে ওর রোল থাকে। মিম অংকের বইটা নিয়ে রাতুলের কাছে এলো- ভাইয়া এই অংকটা করে দাওতো।
-এখন পাবো না, যা।
- কেন কি হয়েছে তোমার?
- না কিছু না।
- তবে করে দিচ্ছনা কেন?
- আমার ভাল লাগছে না।
- ঠিক আছে আমি মাকে বলছি।
- হয়েছে আর ডাকতে হবে না, বস। বলে রাতুল অংকটা করতে লাগলো।
- ভাইয়া তোকে একটা কথা বলব?
রাতুল অংক করতে করতে বলল- বল।
তোর বন্ধুগুলো বেশি একটা ভাল না। তুই ওদের সঙ্গে মিশিস কেন?
রাতুল মিমের দিকে তাঁকিয়ে বলল কেন, কি হয়েছে? তোকে কিছু বলেছে?
- না তেমন কিছু নয়, তবে ছেলেগুলো আমার কাছে খারাপ মনে হয়। বাবা কিন্তু তোকে ওদের সঙ্গে মিশতে মানা করেছে।
রাতুল কোন কথা বলল না অংকটা করে মিমকে বুঝিয়ে দিল। বাড়ির নিয়ম হচ্ছে রাতে এক সঙ্গে খেতে হবে। আর খাবার টেবিলে বসে কম বেশি বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়ে থাকে। এই যেমন রাতুল তোমার লেখা পড়া দিন দিন খারাপ হচ্ছে ঠিক মতো মনযোগ দিচ্ছো না, মিমটা বেশি টিভি দেখছে এইসব । আজো খাবার টেবিলে রাতুল মিম চুপ চাপ খাচ্ছে। রাতুলের বাবা মেরাজ উদ্দিন রাতুলের দিকে তাঁকিয়ে বলল- রাতুল। রাতুল খাওয়া বন্ধ করে বাবার মুখের দিকে তাঁকালো-জি বাবা।
- তুমি কি মনে করো এসএসসিতে তুমি গোল্ডেন বা এ প্লাস পাবে?
রাতুল কথার উত্তর না দিয়ে চুপ চাপ থাকলো। কেননা সে তার বাবাকে চরম ভয় পায়। মার সাথে সারাদিন ইয়ার্কি ফাজলামো করে কিন্তু বাবা বাড়িতে থাকলে সে একদম চুপ, তাই চুপ করে থাকলো।
- কথার উত্তর দিচ্ছো না কেন?
- চেষ্টা করব বাবা।
- চেষ্টা করবে মানে? তার মানে তোমার নিজের উপর বিশ্বাস নেই? আর তোমাকে বলেছি মেলা মেশা করলে ভাল ছেলেদের সাথে মেশো ওদের মতো বখাটে ছেলেদের সাথে নয়, কিন্তু তারপরও তুমি তাদের সাথে মিশছো!
- আমি ওদের সঙ্গে মেশা বন্ধ করেছি।
- বন্ধ করলেই ভাল। আর মিম তোমাকে বলেছি টিভি একটু কম করে দেখ, আমি প্রায় সব সময় তোমাকে টিভির সামনে বসে থাকতে দেখি।
রাতুল মুক্তি পাওয়ায় একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে মিমের দিকে তাঁকিয়ে মুচকি হাসতে লাগল। তার বিপদের সময় ভাইয়া এরকম হাসলে মিমের আরো কান্না পায়। মিম হঠাৎ কেঁদে ফেলল।
- তুমি ওভাবে কাঁদছো কেন? কান্না করার মতো তো তোমাকে কিছু বলা হয়নি। নাটক আমিও দেখেছি আমিও পড়েছি কিন্তু সেখানে কি আছে? বেশির ভাগই মানুষকে ভুল জিসিন সেখায়, মানুষকে ধাবিত করে আবেগের দিকে। শুধুমাত্র আবেগ দিয়ে জীবন কখনো চলে না, বাস্তবতা মানুষকে শিক্ষা দেয় তাঁকে কি করতে হবে? অপরিনীত বয়সে প্রেম ভালবাসা যেমন ধ্বংস করে তেমন নাটক প্রেম ভালবাসাকে একটি লোভনিয় বস্তু হিসাবে তৈরী করে। রাতুলের মা রুমি এবার কথা বলল- তুমি কি এভাবে ছেলে মেয়ে দুটোকে খাওয়া বাদ দিয়ে শাসন করবে? অনেক হয়েছে এবার একটু থামো।
- এই তো তোমরা বুঝতে চাওনা। আমি কি ছেলে মেয়েদের শত্রæ? আমি ওদেরকে আসল কথাগুলো বোঝাচ্ছি। ওরা এখন আমার কথাগুলোকে সহ্য করতে পারছেনা কিন্তু একটা সময়ে এসে মনে হবে আমার কথাগুলো তাদের কতটা প্রয়োজন ছিল বলে মেরাজ খাবার শেষ করে উঠে পরল। সবাই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।
টিফিনে মিম ও ওর বান্ধবী উর্মি, রুমা, ঝুমা মিলে স্কুলের উত্তর পাশের কদম গাছটির নিচে বসে পড়া লেখা ও অন্যান্য বিষয়ে গল্প করছে। রুমা মিমের হাতটা ধরে বলল ইস্ আমি যদি ছেলে হতাম তবে তোকে বিয়ে করতাম। রুমা বরাবরই এই কথাটা বলে এতে মিম খুব লজ্জা পায়। যদিও অনেক ছেলে তার স্কুলে যাওয়া আসার পথে বিভিন্ন ভাবে দৃর্ষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে, কিন্তু মিম ওসব এড়িয়ে চলে, কেননা তাকে এসএসসিতে একটা ভাল রেজাল্ট করতে হবে। মিম ভাইয়াকে বলেনি যে তার দুটো বন্ধু মিমকে রাস্তায় খুব বিরক্ত করে। সেদিনতো সামনে এসে জোর করে মিমের হাতে একটা চিঠি গুজে দিয়ে বলে গেল দুই দিনের মধ্যে যেন তাকে রেজাল্ট দেয়। সেদিন মিমের ভয়ে হাত পা কাঁপতে লাগল, কি করবে সে কোনরকম বাড়িতে এলো। ভয়ে চিঠিটা খুলে দেখার সাহস হচ্ছে না। কিছুটা স্বভাবিক হতে সে চিঠিটা খুলল, চিঠি পড়ে শরিরটা আরো কাঁপতে লাগল। এতো নোংরা ভাষায় লেখা। মিম সিদ্ধান্ত নিলো মাকে বিষয়টি জানাতে হবে। রুমা বলল- কিরে তোর ঐ বিষয়টি কি হলো খালা আম্মাকে বলেছিস?
- নারে ভয়ে বলতে পারি নাই । আজো স্কুলে আসার সময় কত বাজে কথা বলল।
রুমি- না তোকে বিষয়টি খুলে বলতে হবে। নতুবা কবে কি করে বসে? আচ্ছা শুনলাম ছেলেটা তোর ভাইয়ের বন্ধু? তার পরও সে কিভাবে এরকম আচরণ করতে পারে?
উর্মি- বলবেই তো তুই যে দেখতে একটা আগুন, ছেলেদেও তো মাথা নষ্ট হবেই।
- আমি দেখতে সুন্দর এটা কি আমার দোষ?
ঝুমা- এটাই সমস্যা মেয়েরা সুন্দর হলে সব ছেলেদের নজর সেখানে থাকে মনে হয় যেন একটা আজব জিনিস দেখছে। শোন বিষয়টি বাড়িতে না বললে পড়ে আরো বড় সমস্যা হতে পারে।
- ওরা বলেছে আমি যদি ওর প্রস্তাবে রাজি না হই তবে আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে---। মিম কেঁদে ফেলে।
রুমা- কান্না থামা। আমরাও তোর সঙ্গে আছি, তোর একা বলতে ভয় লাগলে পরশু শুক্রবার আছে আমরা তোদের বাড়িতে যেয়ে খালা আম্মাকে বিষয়টি বলব।
স্কুল ছুটি হলে মিম রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে আছে রিক্সায় যেতে পারলে ওদের হাত থেকে বাঁচবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য একটা রিক্সাও নেই নিরুপায় হয়ে হাঁটতে লাগল। নির্দিষ্ট জায়গায় এসে বুকটে কেঁপে উঠল কি জানি কি হয়। মিম ভাল করে চারপাশে তাঁকিয়ে দেখল না কাউকে দেখতে পাচ্ছে না, সে আস্বস্ত হয়ে হাঁটতে লাগল। হঠাৎই বাপ্পি সামনে এসে বলল আমি দুঃখিত।
মিম হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো।
বাপ্পি- প্লিজ! আমাকে ক্ষমা করো। তোমাকে অনেক বিরক্ত করেছি, কিন্তু আর করবো না শুধুমাত্র একটাবার যদি তুমি আমার মৃতপ্রায় মার সঙ্গে দেখা করো। মা তোমাকে দেখতে চেয়েছে একবার মা তোমাকে দেখলে আমি আর জীবনেও তোমার সামনে এসে দাঁড়াবো না।
হঠাৎ বাপ্পির এরকম আচরণে মিম যেন বোকা হয়ে গেল। কি ব্যাপার, যে ছেলেটি তাকে দেখলে নোংরা নোংরা কথা বলতো আজ সে ভদ্র হয়ে গেল। নাহ্ মিম কিছুতেই বুঝতে পারছে না। মিম ঝুমার হাতটি ধরল। ঝুমা মিমকে কানে কানে বলল ওর কথা যদি সত্য হয় তবে তোর একবার যাওয়া উচিৎ। মিম ভয়ে কাঁপছে কি করবে? সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো বাপ্পির মার কাছে যাওয়ার কারণে যদি এই সমস্যার সমাধান হয় তবে সে যাবে। বাপ্পি একটা রিক্সাওয়ালার সাথে কিছু কথা বলে মিমকে বলল আমি বাড়ির ঠিকানা রিক্সা ওয়ালাকে বলে দিয়েছি তুমি এসো বলে বাপ্পি গলির মধ্য দিয়ে চলে গেল। ঝুমা থাকায় মিম সাহস পাচ্ছে। ওরা রিক্সায় উঠে কিছু দূর যাওয়ার পর হঠাৎ ঝুমার বাবার সঙ্গে দেখা। ঝুমার বাবা একটা মটর সাইকেলে আসছিল। ঝুমাকে দেখে বলল, মা তোকে নেয়ার জন্য এলাম, তোর মা বাথরুমে পড়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ঝুমা ওর বাবার কথা শুনে রিক্সা থেকে নেমে ওর বাবার মটর সাইকেলে চলে গেল। মিম এখন সম্পূর্ণ একা হয়েগেল। কি আর করা বুকে সাহস নিয়ে সে চলল। একবার ভেবেছিল সে ফিরে যাবে কিন্তু আবার ভাবল ফিরে গিয়ে লাভ কি আবার পরদিন বিরক্ত করবে তার চেয়ে বরং আজই এটার সমাধান করা ভাল। রিক্সাটা শহরের উল্টো দিকে রেলওয়ে কলোনীর শেষ মাথায় চলে এলো । বাপ্পি সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো, সে রিক্সাওয়ালাকে ভাড়া দিয়ে মিমকে ভিতরে নিয়ে গেল। এই বাড়িগুলো বিট্রিশ আমলে তৈরী। কেমন যেন স্যাঁত স্যাতে আর ময়লার দুর্গন্ধ। বাপ্পি মিমকে ভিতরের একটা রুমে নিয়ে বসালো। মিম লক্ষ করল বাড়িতে আর কোন মানুষ নেই। ভয়ে ওর হাত পা ঠান্ডা হয়ে এলো, ভয়ে ভয়ে সে বাপ্পিকে বলল আপনার মা কোথায়? ওনার কাছে নিয়ে চলুন আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
বাপ্পি ওর কথায় তেমন একটা পাত্তা দিলোনা সে ঘর থেকে বের হয়ে গেল কিছুক্ষণ পর ফিরে এলো। বাপ্পি বিস্কুট চানাচুর আর ড্রিংস খেতে দিয়ে বলল তুমি খাও আমি মাকে নিয়ে আসছি।
- না আমি খাবো না আমাকে ওনার কাছে নিয়ে চলুন।
-ঠিক আছে কিছু না খেলেও ড্রিংসটা খাও প্লিজ। না খেলে আমি বুঝবো আমাকে ক্ষমা করোনি।
- আচ্ছা ঠিকা আছে খাচ্ছি কিন্তু আমি আর দেরি করতে পারবো না। বলে মিম এক প্লাস ড্রিংস খেলো।
- বেশ বেশ আমি এখুনি আম্মুকে নিয়ে আসছি বলে বাপ্পি ঘরের বাহিরে এসে দরজায় তালা দিয়ে দিলো ।
মিম বুঝতে পারিনি বাপ্পি তাকে তালা বন্দি করে রেখেছে। কিছুক্ষণের মধ্যে মিমের দুচোখে ঘুমে জড়িয়ে যেতে লাগল। হঠাৎ মিমের মনে হলো সে ফাঁদে আটকা পরেছে। কি করবে এখন নিজেকে আর কোন ভাবে জাগনা রাখতে পারছে না। তখন সম্ভবত রাত তিনেট কিম্বা চারটে হবে, ঘুম ভাংতেই মিম ধরফরিয়ে উঠলো। উঠে দেখলো ওর পরনের কাপড়গুলো এলোমেলো ভাবে মেঝেতে পরে আছে আর বাপ্পি ঘুমিয়ে পড়েছে। মিম কি করবে বুঝতে পারছে না, বুঝতে পেরেছে সে ঘর্ষিত হয়েছে। সে বিছানা থেকে নেমে স্কুলড্রেসটা পরে নিয়ে দরজা খুলে বেড় হয়ে এলো। মিম হাঁটতে পারছে না, হাঁটতে খুব কষ্ট হচ্ছে। বাবার কথা খুব মনে পরতেই কান্নায় বুক ফেটে যাচ্ছে। হঠাৎ একটা গাড়ির আলো মুখের উপর পরল মিম আর হাঁটতে পারছে না, রাস্তায় পরে গেল। গাড়িটা মিমের পাশে এসে দাড়াতে কয়েকজন পুলিশ নেমে মিমকে গাড়িতে উঠিয়ে মিমদের বাড়িতে নিয়ে এলো। মিমকে দেখে বাবা মা দৌড়ে এসে মিমকে জড়িয়ে ধরল। মিমের কথা শুনে পুলিশ ভ্যানটি চলে গেল। বাপ্পিকে তারা এ্যারেস্ট করেছে। সে মোবাইল ফোনে মিমের নগ্ন শরীরের ছবি তুলেছিল সেটা সহ ওকে ধরে নিয়ে গেছে। কিন্তু মিমের কি হবে? এসব ভাবতে ভাবতেই মিম বাড়ির ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ল। মিমের ভাই রাতুল বদলে গেছে। বখাটেদের সঙ্গে আর ঘোরে না । অন্ধকার জগত থেকে সে ফিরে এসেছে।
না মিমের গল্প এখানেই শেষ নয়। ভাবছেন মিম মারা যাবার পর আর কোন গল্প থাকতে পারেনা। না, মিম ভাগ্যগুণে বেঁচে যায়। পরের দিন স্কুলের সব মেয়েরা মিমের সঙ্গে দেখা করতে আসে। বিভিন্ন স্কুলের ছেলে, মেয়ে ও শিক্ষকরা মিমের ধর্ষকদের শাস্তির দাবীতে সড়ক অবরোধ করে। বাপ্পির ফাঁসি দাবী করে আন্দোলনে নামে। এতে প্রশাসনের টনক নড়ে যায়। কিন্তু তাতে মিমের কি যায় আসে? কলঙ্কের বোঝা মাথায় চেঁপে তাকে সারা জীবন পার করতে হবে।
-এখন পাবো না, যা।
- কেন কি হয়েছে তোমার?
- না কিছু না।
- তবে করে দিচ্ছনা কেন?
- আমার ভাল লাগছে না।
- ঠিক আছে আমি মাকে বলছি।
- হয়েছে আর ডাকতে হবে না, বস। বলে রাতুল অংকটা করতে লাগলো।
- ভাইয়া তোকে একটা কথা বলব?
রাতুল অংক করতে করতে বলল- বল।
তোর বন্ধুগুলো বেশি একটা ভাল না। তুই ওদের সঙ্গে মিশিস কেন?
রাতুল মিমের দিকে তাঁকিয়ে বলল কেন, কি হয়েছে? তোকে কিছু বলেছে?
- না তেমন কিছু নয়, তবে ছেলেগুলো আমার কাছে খারাপ মনে হয়। বাবা কিন্তু তোকে ওদের সঙ্গে মিশতে মানা করেছে।
রাতুল কোন কথা বলল না অংকটা করে মিমকে বুঝিয়ে দিল। বাড়ির নিয়ম হচ্ছে রাতে এক সঙ্গে খেতে হবে। আর খাবার টেবিলে বসে কম বেশি বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়ে থাকে। এই যেমন রাতুল তোমার লেখা পড়া দিন দিন খারাপ হচ্ছে ঠিক মতো মনযোগ দিচ্ছো না, মিমটা বেশি টিভি দেখছে এইসব । আজো খাবার টেবিলে রাতুল মিম চুপ চাপ খাচ্ছে। রাতুলের বাবা মেরাজ উদ্দিন রাতুলের দিকে তাঁকিয়ে বলল- রাতুল। রাতুল খাওয়া বন্ধ করে বাবার মুখের দিকে তাঁকালো-জি বাবা।
- তুমি কি মনে করো এসএসসিতে তুমি গোল্ডেন বা এ প্লাস পাবে?
রাতুল কথার উত্তর না দিয়ে চুপ চাপ থাকলো। কেননা সে তার বাবাকে চরম ভয় পায়। মার সাথে সারাদিন ইয়ার্কি ফাজলামো করে কিন্তু বাবা বাড়িতে থাকলে সে একদম চুপ, তাই চুপ করে থাকলো।
- কথার উত্তর দিচ্ছো না কেন?
- চেষ্টা করব বাবা।
- চেষ্টা করবে মানে? তার মানে তোমার নিজের উপর বিশ্বাস নেই? আর তোমাকে বলেছি মেলা মেশা করলে ভাল ছেলেদের সাথে মেশো ওদের মতো বখাটে ছেলেদের সাথে নয়, কিন্তু তারপরও তুমি তাদের সাথে মিশছো!
- আমি ওদের সঙ্গে মেশা বন্ধ করেছি।
- বন্ধ করলেই ভাল। আর মিম তোমাকে বলেছি টিভি একটু কম করে দেখ, আমি প্রায় সব সময় তোমাকে টিভির সামনে বসে থাকতে দেখি।
রাতুল মুক্তি পাওয়ায় একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে মিমের দিকে তাঁকিয়ে মুচকি হাসতে লাগল। তার বিপদের সময় ভাইয়া এরকম হাসলে মিমের আরো কান্না পায়। মিম হঠাৎ কেঁদে ফেলল।
- তুমি ওভাবে কাঁদছো কেন? কান্না করার মতো তো তোমাকে কিছু বলা হয়নি। নাটক আমিও দেখেছি আমিও পড়েছি কিন্তু সেখানে কি আছে? বেশির ভাগই মানুষকে ভুল জিসিন সেখায়, মানুষকে ধাবিত করে আবেগের দিকে। শুধুমাত্র আবেগ দিয়ে জীবন কখনো চলে না, বাস্তবতা মানুষকে শিক্ষা দেয় তাঁকে কি করতে হবে? অপরিনীত বয়সে প্রেম ভালবাসা যেমন ধ্বংস করে তেমন নাটক প্রেম ভালবাসাকে একটি লোভনিয় বস্তু হিসাবে তৈরী করে। রাতুলের মা রুমি এবার কথা বলল- তুমি কি এভাবে ছেলে মেয়ে দুটোকে খাওয়া বাদ দিয়ে শাসন করবে? অনেক হয়েছে এবার একটু থামো।
- এই তো তোমরা বুঝতে চাওনা। আমি কি ছেলে মেয়েদের শত্রæ? আমি ওদেরকে আসল কথাগুলো বোঝাচ্ছি। ওরা এখন আমার কথাগুলোকে সহ্য করতে পারছেনা কিন্তু একটা সময়ে এসে মনে হবে আমার কথাগুলো তাদের কতটা প্রয়োজন ছিল বলে মেরাজ খাবার শেষ করে উঠে পরল। সবাই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।
টিফিনে মিম ও ওর বান্ধবী উর্মি, রুমা, ঝুমা মিলে স্কুলের উত্তর পাশের কদম গাছটির নিচে বসে পড়া লেখা ও অন্যান্য বিষয়ে গল্প করছে। রুমা মিমের হাতটা ধরে বলল ইস্ আমি যদি ছেলে হতাম তবে তোকে বিয়ে করতাম। রুমা বরাবরই এই কথাটা বলে এতে মিম খুব লজ্জা পায়। যদিও অনেক ছেলে তার স্কুলে যাওয়া আসার পথে বিভিন্ন ভাবে দৃর্ষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে, কিন্তু মিম ওসব এড়িয়ে চলে, কেননা তাকে এসএসসিতে একটা ভাল রেজাল্ট করতে হবে। মিম ভাইয়াকে বলেনি যে তার দুটো বন্ধু মিমকে রাস্তায় খুব বিরক্ত করে। সেদিনতো সামনে এসে জোর করে মিমের হাতে একটা চিঠি গুজে দিয়ে বলে গেল দুই দিনের মধ্যে যেন তাকে রেজাল্ট দেয়। সেদিন মিমের ভয়ে হাত পা কাঁপতে লাগল, কি করবে সে কোনরকম বাড়িতে এলো। ভয়ে চিঠিটা খুলে দেখার সাহস হচ্ছে না। কিছুটা স্বভাবিক হতে সে চিঠিটা খুলল, চিঠি পড়ে শরিরটা আরো কাঁপতে লাগল। এতো নোংরা ভাষায় লেখা। মিম সিদ্ধান্ত নিলো মাকে বিষয়টি জানাতে হবে। রুমা বলল- কিরে তোর ঐ বিষয়টি কি হলো খালা আম্মাকে বলেছিস?
- নারে ভয়ে বলতে পারি নাই । আজো স্কুলে আসার সময় কত বাজে কথা বলল।
রুমি- না তোকে বিষয়টি খুলে বলতে হবে। নতুবা কবে কি করে বসে? আচ্ছা শুনলাম ছেলেটা তোর ভাইয়ের বন্ধু? তার পরও সে কিভাবে এরকম আচরণ করতে পারে?
উর্মি- বলবেই তো তুই যে দেখতে একটা আগুন, ছেলেদেও তো মাথা নষ্ট হবেই।
- আমি দেখতে সুন্দর এটা কি আমার দোষ?
ঝুমা- এটাই সমস্যা মেয়েরা সুন্দর হলে সব ছেলেদের নজর সেখানে থাকে মনে হয় যেন একটা আজব জিনিস দেখছে। শোন বিষয়টি বাড়িতে না বললে পড়ে আরো বড় সমস্যা হতে পারে।
- ওরা বলেছে আমি যদি ওর প্রস্তাবে রাজি না হই তবে আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে---। মিম কেঁদে ফেলে।
রুমা- কান্না থামা। আমরাও তোর সঙ্গে আছি, তোর একা বলতে ভয় লাগলে পরশু শুক্রবার আছে আমরা তোদের বাড়িতে যেয়ে খালা আম্মাকে বিষয়টি বলব।
স্কুল ছুটি হলে মিম রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে আছে রিক্সায় যেতে পারলে ওদের হাত থেকে বাঁচবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য একটা রিক্সাও নেই নিরুপায় হয়ে হাঁটতে লাগল। নির্দিষ্ট জায়গায় এসে বুকটে কেঁপে উঠল কি জানি কি হয়। মিম ভাল করে চারপাশে তাঁকিয়ে দেখল না কাউকে দেখতে পাচ্ছে না, সে আস্বস্ত হয়ে হাঁটতে লাগল। হঠাৎই বাপ্পি সামনে এসে বলল আমি দুঃখিত।
মিম হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো।
বাপ্পি- প্লিজ! আমাকে ক্ষমা করো। তোমাকে অনেক বিরক্ত করেছি, কিন্তু আর করবো না শুধুমাত্র একটাবার যদি তুমি আমার মৃতপ্রায় মার সঙ্গে দেখা করো। মা তোমাকে দেখতে চেয়েছে একবার মা তোমাকে দেখলে আমি আর জীবনেও তোমার সামনে এসে দাঁড়াবো না।
হঠাৎ বাপ্পির এরকম আচরণে মিম যেন বোকা হয়ে গেল। কি ব্যাপার, যে ছেলেটি তাকে দেখলে নোংরা নোংরা কথা বলতো আজ সে ভদ্র হয়ে গেল। নাহ্ মিম কিছুতেই বুঝতে পারছে না। মিম ঝুমার হাতটি ধরল। ঝুমা মিমকে কানে কানে বলল ওর কথা যদি সত্য হয় তবে তোর একবার যাওয়া উচিৎ। মিম ভয়ে কাঁপছে কি করবে? সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো বাপ্পির মার কাছে যাওয়ার কারণে যদি এই সমস্যার সমাধান হয় তবে সে যাবে। বাপ্পি একটা রিক্সাওয়ালার সাথে কিছু কথা বলে মিমকে বলল আমি বাড়ির ঠিকানা রিক্সা ওয়ালাকে বলে দিয়েছি তুমি এসো বলে বাপ্পি গলির মধ্য দিয়ে চলে গেল। ঝুমা থাকায় মিম সাহস পাচ্ছে। ওরা রিক্সায় উঠে কিছু দূর যাওয়ার পর হঠাৎ ঝুমার বাবার সঙ্গে দেখা। ঝুমার বাবা একটা মটর সাইকেলে আসছিল। ঝুমাকে দেখে বলল, মা তোকে নেয়ার জন্য এলাম, তোর মা বাথরুমে পড়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ঝুমা ওর বাবার কথা শুনে রিক্সা থেকে নেমে ওর বাবার মটর সাইকেলে চলে গেল। মিম এখন সম্পূর্ণ একা হয়েগেল। কি আর করা বুকে সাহস নিয়ে সে চলল। একবার ভেবেছিল সে ফিরে যাবে কিন্তু আবার ভাবল ফিরে গিয়ে লাভ কি আবার পরদিন বিরক্ত করবে তার চেয়ে বরং আজই এটার সমাধান করা ভাল। রিক্সাটা শহরের উল্টো দিকে রেলওয়ে কলোনীর শেষ মাথায় চলে এলো । বাপ্পি সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো, সে রিক্সাওয়ালাকে ভাড়া দিয়ে মিমকে ভিতরে নিয়ে গেল। এই বাড়িগুলো বিট্রিশ আমলে তৈরী। কেমন যেন স্যাঁত স্যাতে আর ময়লার দুর্গন্ধ। বাপ্পি মিমকে ভিতরের একটা রুমে নিয়ে বসালো। মিম লক্ষ করল বাড়িতে আর কোন মানুষ নেই। ভয়ে ওর হাত পা ঠান্ডা হয়ে এলো, ভয়ে ভয়ে সে বাপ্পিকে বলল আপনার মা কোথায়? ওনার কাছে নিয়ে চলুন আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
বাপ্পি ওর কথায় তেমন একটা পাত্তা দিলোনা সে ঘর থেকে বের হয়ে গেল কিছুক্ষণ পর ফিরে এলো। বাপ্পি বিস্কুট চানাচুর আর ড্রিংস খেতে দিয়ে বলল তুমি খাও আমি মাকে নিয়ে আসছি।
- না আমি খাবো না আমাকে ওনার কাছে নিয়ে চলুন।
-ঠিক আছে কিছু না খেলেও ড্রিংসটা খাও প্লিজ। না খেলে আমি বুঝবো আমাকে ক্ষমা করোনি।
- আচ্ছা ঠিকা আছে খাচ্ছি কিন্তু আমি আর দেরি করতে পারবো না। বলে মিম এক প্লাস ড্রিংস খেলো।
- বেশ বেশ আমি এখুনি আম্মুকে নিয়ে আসছি বলে বাপ্পি ঘরের বাহিরে এসে দরজায় তালা দিয়ে দিলো ।
মিম বুঝতে পারিনি বাপ্পি তাকে তালা বন্দি করে রেখেছে। কিছুক্ষণের মধ্যে মিমের দুচোখে ঘুমে জড়িয়ে যেতে লাগল। হঠাৎ মিমের মনে হলো সে ফাঁদে আটকা পরেছে। কি করবে এখন নিজেকে আর কোন ভাবে জাগনা রাখতে পারছে না। তখন সম্ভবত রাত তিনেট কিম্বা চারটে হবে, ঘুম ভাংতেই মিম ধরফরিয়ে উঠলো। উঠে দেখলো ওর পরনের কাপড়গুলো এলোমেলো ভাবে মেঝেতে পরে আছে আর বাপ্পি ঘুমিয়ে পড়েছে। মিম কি করবে বুঝতে পারছে না, বুঝতে পেরেছে সে ঘর্ষিত হয়েছে। সে বিছানা থেকে নেমে স্কুলড্রেসটা পরে নিয়ে দরজা খুলে বেড় হয়ে এলো। মিম হাঁটতে পারছে না, হাঁটতে খুব কষ্ট হচ্ছে। বাবার কথা খুব মনে পরতেই কান্নায় বুক ফেটে যাচ্ছে। হঠাৎ একটা গাড়ির আলো মুখের উপর পরল মিম আর হাঁটতে পারছে না, রাস্তায় পরে গেল। গাড়িটা মিমের পাশে এসে দাড়াতে কয়েকজন পুলিশ নেমে মিমকে গাড়িতে উঠিয়ে মিমদের বাড়িতে নিয়ে এলো। মিমকে দেখে বাবা মা দৌড়ে এসে মিমকে জড়িয়ে ধরল। মিমের কথা শুনে পুলিশ ভ্যানটি চলে গেল। বাপ্পিকে তারা এ্যারেস্ট করেছে। সে মোবাইল ফোনে মিমের নগ্ন শরীরের ছবি তুলেছিল সেটা সহ ওকে ধরে নিয়ে গেছে। কিন্তু মিমের কি হবে? এসব ভাবতে ভাবতেই মিম বাড়ির ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ল। মিমের ভাই রাতুল বদলে গেছে। বখাটেদের সঙ্গে আর ঘোরে না । অন্ধকার জগত থেকে সে ফিরে এসেছে।
না মিমের গল্প এখানেই শেষ নয়। ভাবছেন মিম মারা যাবার পর আর কোন গল্প থাকতে পারেনা। না, মিম ভাগ্যগুণে বেঁচে যায়। পরের দিন স্কুলের সব মেয়েরা মিমের সঙ্গে দেখা করতে আসে। বিভিন্ন স্কুলের ছেলে, মেয়ে ও শিক্ষকরা মিমের ধর্ষকদের শাস্তির দাবীতে সড়ক অবরোধ করে। বাপ্পির ফাঁসি দাবী করে আন্দোলনে নামে। এতে প্রশাসনের টনক নড়ে যায়। কিন্তু তাতে মিমের কি যায় আসে? কলঙ্কের বোঝা মাথায় চেঁপে তাকে সারা জীবন পার করতে হবে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
Md. Rayhan Kazi ০২/০৩/২০২২অনন্য
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ০২/০৩/২০২২সুন্দর
-
ফয়জুল মহী ০১/০৩/২০২২Excellent
-
আব্দুর রহমান আনসারী ০১/০৩/২০২২সমৃদ্ধ লেখনীতে একরাশ মুগ্ধতা