www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

হলদে রোদে ক্লান্ত দু চোখ

বাহিরে প্রচন্ড রোদ। স্টেশনে বসে থাকতে থাকতে একসময় বিরক্ত প্রকাশ করল মফিজ
এটা কোন দেশে থাকি বলেন?
মফিজের কথা প্রথমে ঠিক বুঝতে পারেনি; তাই কিছুটা বিস্ময়ে ওর দিকে তাঁকালো, কিছু বললেন?
মফিজ বিরক্ত হয়ে বলল এই কথাটা বুঝলেন না?
না, ঠিক কি অর্থে বললেন আমি বুঝিনি।
আরে ভাই এই যে ট্রেন আসার কথা সকাল দশটা ত্রিশে, আর এখন কত হয়েছে দেখেছেন? দুপুর একটা বাজে! কিন্তু এখন ট্রেনের টিক্কিটিও দেখতে পেলাম না। এই হলো আমাদের দেশ ও দেশের সময় সূচী।
মফিজের কথায় আমি হাসলাম- এসব আমাদের স্বয়ে গেছে। রেলের প্রতিটি ট্রেনের এরকম অবস্থা, আমরাও কিছু বলিনা বা বললেও শোনেনা। উপায় না পেয়ে সহ্য করে আমাদেরকে ট্রেনে যাতায়ত করতে হয়।
কি জন্যে যে এখানে এলাম? দেশে এসেছি দিন কুড়ি হলো যেখানেই যাচ্ছি এরকম বিরম্বনার শিকার হচ্ছি। অথচ বিদেশে এরকম কোন ঘটনাই ঘটেনা। সময়ের এক মিনিট এদিক সেদিক হলে কত জবাব দিতে হয়, অথচ এদেশে সেটা নেই।
আমি মফিজকে বললাম আর চিন্তা করার প্রয়োজন নেই ট্রেন এসে গেছে বলে আমি উঠে দাঁড়ালাম। মফিজের সঙ্গে পরিচয় এই প্লাট ফর্মে। লোকটার কথায় যথেষ্ট যুক্তি আছে এবং মিশুক। খুব সহজেই সবার সঙ্গে মিশে যেতে পারে, কথাও বলে খুব বেশি। ট্রেনটি হেলেদুলে প্লাটফর্মে এসে দাঁড়াতে ভিড় ঢেলে কামরায় উঠে পরলাম। ভাগ্যগুণে একটু বসার জায়গাও পেয়ে গেলাম। এখান থেকেই মফিজের সঙ্গে বিচ্ছেদ হলো সে হয়তো পরের কামড়ায় উঠে পড়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যে ট্রেনের কামরাটি মানুষে ভরে গেল, বসার জায়গা ছাড়াও মাঝের ফাকা যায়গা জুড়ে মানুষ। ট্রেনের জানালা দিয়ে ঝির ঝিরি বাতাস আসছিল, সেই বাতাসে গরমের ক্লান্তিতে ঝিমুনি আসছে বার বার। একটি ঝাকি দিয়ে ট্রেনটি থেমে যেতেই ঘুমটাও ভেঙ্গে গেল। দোখ মেলে দেখি স্টেশন এসেছে। বেশ কিছু মানুষ নেমে গেল উঠলও সে পরিমান। ট্রেনটি আবার ছেড়ে দিল। আমি যেখানটায় বসে আছি সেখানে একটি মহিলা স্কুল ড্রেস পরা দুটি ফোর/ফাইভে পড়া বাচ্চাকে নিয়ে দাঁড়ালো। পুরুষের চাপাচাপিতে মহিলাটা বড় বিপাকে পড়েছে বুঝতে পারলাম। আমার পাশে বসা ছিল একটি জিন্স পড়া যুবক ছেলে। আমি দাঁড়িয়ে বললাম আপা ইচ্ছে করলে আমার এখানে বসতে পারেন। মহিলাটি আমার দিকে না তাঁকিয়ে আমার উঠে যাওয়া যায়গাটির দিকে তাঁকিয়ে সঙ্গে থাকা মেয়ে দুটোকে কাছেটেনে বসে পড়ল। পরের স্টেশনে ভির কিছুটা কমেগেল। আমি একটু বসার জায়গা খুঁজলাম কিন্তু পেলাম না। আমাকে সিট ছেড়ে দেয়া দেখে হয়তো যুবক ছেলেটিও বাচ্চা দুটোকে বসার জায়গা করে দিয়ে উঠে গেল। আমি কিছুটা চিন্তায় ডুবেছিলাম আর একটি স্টেশন এলে পিছন থেকে একটি বাচ্চা মেয়ে আমাকে বলল কাক্কু এখানে বসেন, আমি কিছুটা ক্লান্তির আচ্ছাদনে নিজেকে ঢেকে বসে পরলাম। বসেই চোখ পরল যাকে কিছুক্ষন আগে আমার সিটে বসতে দিয়েছিলাম সেই মহিলার দিকে। একি! এই চোখ, মুখ সবটাই যে বড় চেনা, অতি আপন। চোখে চোখ পরতেই মেয়েটিও কিছুক্ষণ আমার দিকে তাঁকিয়ে থেকে বলল- কেমন আছেন? ওর কথায় আমার মুখ থেকে প্রথমে কোন কথা বের হলো না। আবার জিজ্ঞেস করতে ঢোক গিলে বললাম - ভাল কিন্তু একি অবস্থা তোমার? সে কৃঞ্চিৎ হেসে বলল- কেন কি অবস্থার কথা বলছেন?
- না এই যে কত পরিবর্তন।
- পরিবর্তন কি শুধু আমার?
- না, মানে চেহারা অনেকক্ষানি নষ্ট হয়েগেছে।
- কত কিছুই নষ্ট হয়ে যায় কিন্তু সে সব ধরে এখন আর লাভ কি?
- আমাকে আঘাত করে কথাগুলো বলছো তা আমি বেশ বুঝতে পারছি, কিন্তু আমারই বা কি দোষ ছিল?
হাত উঁচিয়ে আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল- থাক সে সব কথা বলে মিছে মিছি বিবাদের সৃষ্টি নতুন করে আর নাই বা করলেন। এখন বলেন কি করছেন? ভাবি বাচ্চারা কেমন আছে?
- থাক সে সব কথা, আপনি কি করছো?
- কেন থাকবে? ও নিজের সুখের কথা বুঝি কারো সঙ্গে শেয়ার করতে চান না?
- না তা নয়।
- তবে কি?
- আগের তোমারটাই শুনি শেষে আমি বলব।
- আমি করিমগঞ্জ বালিকা বিদ্যালয়ে আছি। ওখানেই থাকি ছোট বোনটার বিয়ে দিলাম ভাইটা ডাক্তারি পরছে এইতো।
- বিয়ে?
আমার কথায় হাসলো কিন্তু উত্তর দিলোনা।
- আচ্ছা থাক আমার কথা অনেক বললাম এখন আপনারটা শুনি।
- হ্যাঁ বিয়ে করেছিলাম কিন্তু..।
- কিন্তু মানে?
- না কিছু নয়। তবে সে আমার কাছে থাকেনা।
- থাকেনা মানে?
- আমাকে রেখে অন্য একজনের ঘর আলো করেছে।
- মানে!
- মানে সোজা, আমাকে ত্যাগ করে সে অন্যের সাথে বসবাস করছে। খবর নিয়ে জেনেছি সুখেই আছে সে।
- আর আপনি?
- আমি? আমি ভালই আছি সব কিছু পেছনে ফেলে ছুটে বেড়াই গ্রামের পথে ঘাটে। খেটে খাওয়া গ্রামের মানুষগুলোকে নিয়ে কাজ করি। যা বেতন পাই তা দিয়ে চলে যায়।
সন্ধ্যা আর কথা বাড়ালো না জানালা দিয়ে কিছুক্ষণ বাহিরে তাঁকিয়ে থেকে আঁচলে চোখ মুছে মেয়ে দুটির হাত ধরে উঠে দাঁড়ালো।
- আমার স্টেশন এসেগেছে। এখন নেমে পড়ব।
- গন্তব্য আসলে সকলকেই নেমে যেতে হয় তাই তুমিও নামবে। কতটা সময় আর বাঁচবো দুজন? এই সময়ে হয়তো আবার আমাদের দেখা হবে, নাও হতে পারে কিন্তু বুকের মধ্যে জমে থাকা কিছু দুঃখ আর হতশা আমাদেরকে মাঝে মাঝেই তাড়া করবে।
- যদি মনে হয় মনের ঝড় থামিয়ে দিবে তবে এসো এই অচেনা জায়গায়। বলে সন্ধ্যা ট্রেন থেকে নেমে গেল। জানালা দিয়ে মুখ বেড় করে দেখার চেষ্টা করলাম কোন দিকে সে গেল কিন্তু সন্ধ্যাকে দেখতে পেলাম না। সন্ধ্যা হারিয়ে গেল রাতের আধারে।

= ০ =
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩৬৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৭/০২/২০২২

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast