www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

শ্মশানের ভূত

সজিবদের বাড়িটা বারবলদীয়া গ্রামের বেশ পুরাতন একটি বাড়ি। আজ থেকে ষাট বছর আগে এই বাড়িটি নির্মান করেছিলেন সজিবের দাদা সোলেমান শেখ। এক তলা বিল্ডিং-এর বিভিন্ন স্থান শ্যাওয়ালা জমে আছে। বাড়িটিতে ঢুকলে মনে হয় যেকোন সময় এই ঘরগুলো মাথার উপর ভেঙ্গে পড়বে। সেখানেই প্রতিদিন বিকালে সজিবের বন্ধুরা মিলে বসে আড্ডা দেয়। সজিবরা সবে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। গ্রামে ছেলেরা সাধারণত সব সময় লুঙ্গি পরেই থাকে। আজ ওরা চার বন্ধু মিলে আলাপ করছে ভূত নিয়ে। এদের সবার মধ্যে ফিহাদ খুব সাহসি। ও বিশ্বাস করে পৃথিবীতে ভূত বলতে কোন কিছু নেই।
ফিহাদ - শোন এসব কল্প কাহিনী, এটা শুধু মাত্র সিনেমা নাটকেই মানায়।
সজিব- শোন আমি আমার দাদির কাছে শুনেছি শ্মশানে অসংখ্য ভূতেরা বসবাস করে। গভির রাতে শ্মশানের পাশ দিয়ে ভুল করে ওই সময় কেউ গেলে তার ঘার মটকে দেয়।
সাজু - তোর তো এতো সাহস! তুই কি শ্মশানে যেতে পারবি? যদি রাতের বেলা শ্মশানে যেতে পারিস তবে তোকে দু'শো টাকা দিবো।
ফিহাদ - ঠিক আছে আমি যাবো, দেখি ভূতেরা আমার কি করে?
রাজু ভয়ে বলে- এরকম সাহস দেখানোর কোন মানে হয় না।
ফিহাদ- আমি ওসব মানিনা বা ভূতকে ভয়ও পাইনা। তোরা যদি আমার সঙ্গে যেতে চাস তবে যেতে পারিস।
অন্যরা ভয়ে বলে- না ভাই আমরা তোর সঙ্গে নাই। যেতে চাস তুই একা যা।
ফিহাদ - বেশ একাই যাবো।
ফিহাদ যে শ্মশানে যাবে তার কি প্রমান। ফিহাদ বলল - বল কি প্রমান দিতে হবে?
সাজু - তুই শ্মশানে যেয়ে একটি লাল পতাকা গেড়ে আসবি, যেটা দেখে আমরা বুঝতে পারি তুই এসেছিলি।
ফিহাদ - বেশ তাই হবে।
সাজু - আজ রাতে কেউ বাড়ি যেতে পারবি না। সবাই এখানেই থাকবি। রাত বারটার পর ফিহাদ শ্মশানে যাবে এবং আমরা ও ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করব।
যে রকম কথা সে রকম কাজ, সবাই মিলে সজিবদের বাড়িতে থাকলো। যত সময় ঘনিয়ে আসছে ততো সবার মধ্যে একটা উত্তেজনা দেখা দিচ্ছে। রাজু তো ভয়ে বিছানায় কম্বল গায়ে দিয়ে বসে থাকলো। সজিবদের বাড়ির অন্য কেউ বিষয়টা জানে না, ভেবেছে বন্ধুরা অনেকদিন পর এক সঙ্গে হয়েছে তাই গল্প-গুজব করে রাত কাটাবে। বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘড়ির কাটায় বারটা বাজতেই সাজু ফিহাদকে বলল, যা এবার। আর শোন তোর কোন ক্ষতি হলে আমাদেরকে দোষ দিতে পারবি না, কথাটা যেন মনে থাকে। বাহিরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। ফিহাদ এক হাতে একটা বাঁশে লাল পতাকা ও অন্য হাতে একটা টচলাইট নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেল। ফিহাদ যেতেই সাজু বলল- শোন যতোই হোক ফিহাদকে একা ছাড়া যাবে না, আমরা দূর থেকে ওকে ফলো করবো দেখি ও কি করে।
রাজু- আমি ভাই যাবো না, তোরা কে যাবি যা।
সাজু - ভিতুর ডিম আমরা তিনজন একত্রে থাকলে কোন ক্ষতি হবে না, চল চল তাড়াতাড়ি যাই ফিহাদ এতোক্ষণে অনেক দূর চলে গেছে।
চার দিক নিরব নিস্তব্দ। ব্যাঙ আর ঝিঁঝিঁ পোকার হাক-ডাক ছাড়া কোন সাড়া শব্দ নেই। ফিহাদ টর্চের আলোয় পথ দেখে দেখে এগিয়ে যাচ্ছে। আর একটু পথ গেলেই বড় বট গাছটা, ওটা পার হলেই তবেই শ্মশান। বিশাল বিস্তৃণ মাঠ জুড়ে শ্মশান। শীতের কুয়াশায় চারদিক যেন অদ্ভুত ও ভয়ঙ্কর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। ফিহাদ কোন ভয়-ভিতি মনে না এনে বড় বটগাছটা যেই পার হবে তখনি যেন বট গাছের ডালপালা সব নড়ে চড়ে উঠলো। পাখিরা ভয়ঙ্কর চিৎকার দিয়ে ডেকে উঠতে লাগলো। কয়েকটি কালো কুৎকুতে বাদুর হঠাৎই সামন দিয়ে উড়ে চলে গেল। বট গাছের নিচের ঝোপ ঝাড় যেন হেলে দুলে উঠলো। ফিহাদ যথেষ্ট সাহসি, সে সব সময় চিন্তা করে অকারণে ভয় পাবার কোন মানেই হয় না। সে লাইট জ্বালিয়ে ঝোপ ঝাড়গুলোর দিকে তাঁকালো, মনে হলো কিছু একটা জোড়ে চিৎকার দিয়ে ছুটে পালালো। জন্তুটা কি তা সে বুঝতে পারলো না। শরীর কিছুটা শিউরে উঠলেও সে এগিয়ে গেল শ্মশানের মাঠের দিকে। এই যে এটাই শ্মশান। ঐতো সামনের ঐ বেদিতেই হিন্দুরা মরা পুড়ায়। ফিহাদ লাল কাপড় বাঁধা বাঁশের খুটিটি যেই মাটিতে পুততে লাগলো ওমনি যেন ওর পাশে হাড় লিকলিকে দু'টো ছেলে খালি গায়ে বসে থাকতে দেখলো। ছেলে দুটো ওর দিকে তাঁকিয়ে আছে। ওদের চোখ থেকে যেন আগুন বেরুচ্ছে। ফিহাদ মনে মনে ভাবে কি ব্যাপার এতোক্ষণ তো এখানে কেউ ছিল না, তবে এরা কারা! হঠাৎই তার গা শিউরে উঠলো। ভয়ে ভয়ে ছেলে দুটোকে বলল- তোমরা কে? কিন্তু কোন উত্তর নেই। ফিহাদের সব সাহস নিমিশেই যেন বাতাসে উড়ে গেলো সে উঠে দাঁড়িয়ে দৌঁড়াতে যাবে এমন সময় তার মনে হলো কে যেন ওর লুঙ্গিটা টেনে ধরেছে। তাড়াহুড়োয় তার হাত থেকে লাইট টা পড়ে বন্ধ হয়ে গেল। রাতের আলো আধারের মাঝে সে দেখলো হাজার হাজার হাড় লিকলিকে মানুষ যেন শ্মশানের মাঠে বসে আছে। তাদের সবার চোখগুলো থেকে যেন আগুন বের হচ্ছে। ফিহাদের সমস্ত শরির যেন ঠান্ডায় হিম হয়ে গেল। কণ্ঠ দিয়ে কোন শব্দ বেড় হচ্ছে না, হাত পা গুলো অসাড় হয়ে পড়েছে। সে খুব চেষ্টা করছে এখান থেকে দৌঁড়ে পালাবে কিন্তু সেটাও পারছে না, কে যেন ওর কাপড় টেনে ধরে আছে। ফিহাদ চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারালো।
অনেক দূর থেকে ফিহাদের বন্ধুরা লক্ষ্য করছিল ফিহাদ চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল, আর ফিহাদের চার পাশে অসংখ্য আগুন নেচে নেচে বেড়াচ্ছে। রাজু ভয়ে ওখানেই জ্ঞান হারালো। সাজু দৌঁড়ে পাশেই কছির চাচার বাড়িতে যেয়ে চিৎকার করতেই সে বাড়ির লোকজন সবাই মশাল হাতে শ্মশানের ছুটে এসে ফিহাদকে বাড়িতে নিয়ে আসে। সকাল হতে না হতেই এই ঘটনা সবাই জানা জানি হলে ফিহাদের বাড়ির সবাই ছুটে আসে। প্রায় এক সপ্তাহ লাগে ফিহাদের সুস্থ্য হতে।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ২৯০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১০/০১/২০২২

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast