কাঁকনবালা
কে?
কোন এক করুন কণ্ঠী, ওপাশ থেকে যেন কোন এক অজানা ভয়ে আঁতকে ওঠা করুন ধ্বনি তে বলছে কে। শব্দ খুঁজে পেলাম না, আমি কি বলবো, আমি কে?
আবার ওপাশ থেকে বললে, কে?
আমি নিশ্চুপ পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে রইলাম। যেন কোন এক অপরাধ বোধ আমাকে ঘিরে ধরল। বারবার চেষ্টা করলাম কিছু বলার কিন্তু মুখে সব জড়তা এসে বাসা বাঁধল।
বলি, নাম বললে পাপ হবে না। এ কথা বলতে বলতে দ্বার দেশের এক প্রান্ত আধ খোলা রেখে অবয়বের এক পাশ বের করে দিয়ে কাঁচা বয়সীর এক মেয়ে সহাস্যে বলল, ভেতরে আসুন।
বুকটা ধড়ফড় করছে, কি যেন এক ভয় বুকের ভিতর শেলের ন্যায় আঘাত করছে। বারবার চেষ্টা করছি এড়িয়ে যাবার কিন্তু কোন ভাবেই পেরে উঠছি না।
আপনি কাঁপছেন কেন? বাইরে কি অনেক শীত?
আমি অপরাধীর ন্যায় মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম।
সেই কখন থেকেই দেখছি আপনি তো কিছুই বলছেন না?
আমি এখানে পাপ করতে আসিনি।
সহাস্যে বললে, হাসালেন আমায়। এ জগতের প্রতিটি কোণে পাপের পদও চিহ্ন সহাস্যে বিরাজ করে। আপনি কোন জগতে বাস করেন?
এ এক তন্দ্রা চুরির মায়াজাল, তাছাড়া আর কি?
এ হাতের কাঁকন বালা দেখছেন, এ হাজার রাতের সাক্ষী। এরা সবাই কাঁকনে কাঁকন ধ্বনি শুনতে আসে বা বলতে পারেন হাত বদলের নেশায় দরজায় কড়া-নাড়ে।
বুঝিনে এ বৃক্ষে তবে কেন ছিন্ন মুকুল?
স্পর্শে। স্পর্শে। লোলুপ দৃষ্টি যে পুষ্প পদ্মে, আপনিই বলুন বৃন্তিতে সে থাকে কি করে?
বৃন্ত তে বৃতি কেবল ঈশ্বরের কৃপা।
এ জগত, ঈশ্বর ভিন্ন অন্য জগত? এ শব্দ কেবল মায়ের আঁচলে ঘুমিয়ে থাকা শিশুর মুখে মানায়। যদি ঘুম ভেঙ্গে যায় দেখবেন ঈশ্বর ঐ পল্লীতেই নেই।
ঈশ্বর তত্ত্ব আমি অত বুঝি নে। তবে এ ছাড়া আত্ম শুদ্ধি নেই।
জ্ঞানের কথা কেবল পদ্যে, গদ্যে, পুঁথিতে সাজে, এখানে না। এখানে শুধু মহাজাগতিক আত্ম তৃপ্ত নেশার দৃশ্য সাদৃশ্য। আপনি এ জগতে পা দিতে এসেছেন কেন?
মৃত্যু যন্ত্রণাকে ভুলে থাকতে, দু’দণ্ড শান্তির আশায়।
এ জগতে যে একবার এসেছে, মৃত্যু ভিন্ন এ জগত থেকে বের হয়ে আশা সম্ভব নয়। পা রাখার আগে একটু ভেবে দেখবেন।
আমি তর্ক জানি না, তবে মৃত্যু ভিন্ন অন্য কোন শান্তি আমার কপালে নেই।
আপনাকে দেখেই বুঝেছি।
কি বুঝেছেন?
থাক। বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।
না বললে জোর করব না। আমি তাহলে চলি এবার।
আমি আপনাকে এত রাতে যেতে দেব না। পাছে যদি আপনি গাড়ি চাপা পরতে চান তখন কি হবে।
এমন কথা কেন বলছেন?
আপনাকে দেখলেই বোঝা যায় আপনি অনেক দুঃখ কষ্ট ভেদ ভাও করে এত দূর পর্যন্ত এসেছেন। তাই সামান্য কথাতেই আপনার মনে হয়, কেউ উপহাস করছে আপনার সাথে। তাতেই মনে হয় আপনি অনেক কষ্ট পান।
বলতে পারিনে কিন্তু যখন বিষবৃক্ষ কর্ণ পাতে বিষ ঢালে তখন নিজেকে অপরাধী মনে হয়।
আপনি কি আমার থেকেও বেশী কষ্টে আছেন? আপনি কি তাই মনে করেন?
আমি তা বলছি না। আপনার আর আমার ব্যবধান শুধু এতটুকুই, বাইরের জগত আমার থেকে দূরে থাকতে চায় আর এদিকে আপনার কাছে থেকে বাইরের জগত দূরে যেতে চায় না।
আর কিছুক্ষণ পর ভোর হবে বাজারে মানুষের কোলাহল হবে, নানান স্বপ্ন বুনবে শুধু কেবল বেঁচে থাকার ইচ্ছা নেই আপনার আর আমার। সকালে আপনি যখন বের হয়ে যাবেন কখনো যদি মৃত্যুর কথা চিন্তায় আসে ভাববেন আপনার থেকেও অভাগা কেউ আছে এবং বেঁচে আছে।
তাহলে চলি। ভালো থাকবেন।
আপনার নামটা জানা হল না।
আবার যদি কখনো দেখা হয় তখন আমিও জেনে নেবো আপনিও জেনে নেবেন। আসি তাহলে। ভালো থাকবেন।এই বলে ক্ষীণ পদে আমি বের হয়ে আসলাম কিছু দূর যাবার পর, পিছু ফিরে দেখতেই চোখে জল চলে আসলো, সেই মেয়ে এক দ্বার প্রান্ত আঁকড়ে ধরে কাঁদছে। সে কোন পথে তাকিয়ে আছে কিসের আশায়। আজ এ বিশ্ব তাকে উপহাস করে অথচ নিদ্রা ভুলে তার কাছেই যায় এবং তাই করে।জীবনানন্দ দাশের কবিতার কিছু অংশ মনে পরছে -
সে যে মন্বন্তর, মৃত্যুর দূত, অপঘাত, মহামারী-
মানুষ তবু সে, তার চেয়ে বড় – সে যে নারী, সে যে নারী!
কোন এক করুন কণ্ঠী, ওপাশ থেকে যেন কোন এক অজানা ভয়ে আঁতকে ওঠা করুন ধ্বনি তে বলছে কে। শব্দ খুঁজে পেলাম না, আমি কি বলবো, আমি কে?
আবার ওপাশ থেকে বললে, কে?
আমি নিশ্চুপ পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে রইলাম। যেন কোন এক অপরাধ বোধ আমাকে ঘিরে ধরল। বারবার চেষ্টা করলাম কিছু বলার কিন্তু মুখে সব জড়তা এসে বাসা বাঁধল।
বলি, নাম বললে পাপ হবে না। এ কথা বলতে বলতে দ্বার দেশের এক প্রান্ত আধ খোলা রেখে অবয়বের এক পাশ বের করে দিয়ে কাঁচা বয়সীর এক মেয়ে সহাস্যে বলল, ভেতরে আসুন।
বুকটা ধড়ফড় করছে, কি যেন এক ভয় বুকের ভিতর শেলের ন্যায় আঘাত করছে। বারবার চেষ্টা করছি এড়িয়ে যাবার কিন্তু কোন ভাবেই পেরে উঠছি না।
আপনি কাঁপছেন কেন? বাইরে কি অনেক শীত?
আমি অপরাধীর ন্যায় মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম।
সেই কখন থেকেই দেখছি আপনি তো কিছুই বলছেন না?
আমি এখানে পাপ করতে আসিনি।
সহাস্যে বললে, হাসালেন আমায়। এ জগতের প্রতিটি কোণে পাপের পদও চিহ্ন সহাস্যে বিরাজ করে। আপনি কোন জগতে বাস করেন?
এ এক তন্দ্রা চুরির মায়াজাল, তাছাড়া আর কি?
এ হাতের কাঁকন বালা দেখছেন, এ হাজার রাতের সাক্ষী। এরা সবাই কাঁকনে কাঁকন ধ্বনি শুনতে আসে বা বলতে পারেন হাত বদলের নেশায় দরজায় কড়া-নাড়ে।
বুঝিনে এ বৃক্ষে তবে কেন ছিন্ন মুকুল?
স্পর্শে। স্পর্শে। লোলুপ দৃষ্টি যে পুষ্প পদ্মে, আপনিই বলুন বৃন্তিতে সে থাকে কি করে?
বৃন্ত তে বৃতি কেবল ঈশ্বরের কৃপা।
এ জগত, ঈশ্বর ভিন্ন অন্য জগত? এ শব্দ কেবল মায়ের আঁচলে ঘুমিয়ে থাকা শিশুর মুখে মানায়। যদি ঘুম ভেঙ্গে যায় দেখবেন ঈশ্বর ঐ পল্লীতেই নেই।
ঈশ্বর তত্ত্ব আমি অত বুঝি নে। তবে এ ছাড়া আত্ম শুদ্ধি নেই।
জ্ঞানের কথা কেবল পদ্যে, গদ্যে, পুঁথিতে সাজে, এখানে না। এখানে শুধু মহাজাগতিক আত্ম তৃপ্ত নেশার দৃশ্য সাদৃশ্য। আপনি এ জগতে পা দিতে এসেছেন কেন?
মৃত্যু যন্ত্রণাকে ভুলে থাকতে, দু’দণ্ড শান্তির আশায়।
এ জগতে যে একবার এসেছে, মৃত্যু ভিন্ন এ জগত থেকে বের হয়ে আশা সম্ভব নয়। পা রাখার আগে একটু ভেবে দেখবেন।
আমি তর্ক জানি না, তবে মৃত্যু ভিন্ন অন্য কোন শান্তি আমার কপালে নেই।
আপনাকে দেখেই বুঝেছি।
কি বুঝেছেন?
থাক। বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।
না বললে জোর করব না। আমি তাহলে চলি এবার।
আমি আপনাকে এত রাতে যেতে দেব না। পাছে যদি আপনি গাড়ি চাপা পরতে চান তখন কি হবে।
এমন কথা কেন বলছেন?
আপনাকে দেখলেই বোঝা যায় আপনি অনেক দুঃখ কষ্ট ভেদ ভাও করে এত দূর পর্যন্ত এসেছেন। তাই সামান্য কথাতেই আপনার মনে হয়, কেউ উপহাস করছে আপনার সাথে। তাতেই মনে হয় আপনি অনেক কষ্ট পান।
বলতে পারিনে কিন্তু যখন বিষবৃক্ষ কর্ণ পাতে বিষ ঢালে তখন নিজেকে অপরাধী মনে হয়।
আপনি কি আমার থেকেও বেশী কষ্টে আছেন? আপনি কি তাই মনে করেন?
আমি তা বলছি না। আপনার আর আমার ব্যবধান শুধু এতটুকুই, বাইরের জগত আমার থেকে দূরে থাকতে চায় আর এদিকে আপনার কাছে থেকে বাইরের জগত দূরে যেতে চায় না।
আর কিছুক্ষণ পর ভোর হবে বাজারে মানুষের কোলাহল হবে, নানান স্বপ্ন বুনবে শুধু কেবল বেঁচে থাকার ইচ্ছা নেই আপনার আর আমার। সকালে আপনি যখন বের হয়ে যাবেন কখনো যদি মৃত্যুর কথা চিন্তায় আসে ভাববেন আপনার থেকেও অভাগা কেউ আছে এবং বেঁচে আছে।
তাহলে চলি। ভালো থাকবেন।
আপনার নামটা জানা হল না।
আবার যদি কখনো দেখা হয় তখন আমিও জেনে নেবো আপনিও জেনে নেবেন। আসি তাহলে। ভালো থাকবেন।এই বলে ক্ষীণ পদে আমি বের হয়ে আসলাম কিছু দূর যাবার পর, পিছু ফিরে দেখতেই চোখে জল চলে আসলো, সেই মেয়ে এক দ্বার প্রান্ত আঁকড়ে ধরে কাঁদছে। সে কোন পথে তাকিয়ে আছে কিসের আশায়। আজ এ বিশ্ব তাকে উপহাস করে অথচ নিদ্রা ভুলে তার কাছেই যায় এবং তাই করে।জীবনানন্দ দাশের কবিতার কিছু অংশ মনে পরছে -
সে যে মন্বন্তর, মৃত্যুর দূত, অপঘাত, মহামারী-
মানুষ তবু সে, তার চেয়ে বড় – সে যে নারী, সে যে নারী!
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মশিউর ইসলাম (বিব্রত কবি) ২০/০৪/২০২০গল্পটা অসাধারণ। মস্তিষ্কের তৃপ্তি দেয়
-
অনিরুদ্ধ বুলবুল ১১/০১/২০১৯আলোর মিছিলে'র সফল অগ্রযাত্রায় এর ৪র্থ সংখ্যাটি প্রকাশিত হতে যাচ্ছে।
সুন্দর প্রকাশ!
ভাল লাগল বেশ। অভিনন্দন!
মাতৃভাষা দিবস সংখ্যার জন্য লেখা আহ্বান করা হয়েছে।
https://www.bangla-kobita.com/oniruddho/matryvasa-dibos/
গল্প প্রবন্ধ কবিতা - যে কেউ পাঠাতে পারেন। ধন্যবাদ। -
হুসাইন দিলাওয়ার ০৬/০১/২০১৯সুন্দর লেখনি
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ০১/০১/২০১৯আরেকটু গোছানো হলে ভালো হতো।
-
সিন্ধু সেঁচে মুক্তা-আব্দুল কাদির মিয়া ২৮/১১/২০১৮sundor
-
মোঃ নূর ইমাম শেখ বাবু ২৮/১১/২০১৮চমৎকার।