www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ভূত (একটি রহস্যময় বাড়ির গল্প

জিনে ধরা---পর্ব ৭
------
একদা কোন এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে বিয়ের নিমন্ত্রণ এলো। পরিবারের সবাইকে বিয়ে বাড়িতে নিমন্ত্রণ জানানো হয়। বাড়ির মুরববী হিসাবে দাদী সেই বিয়ে বাড়িতে যাবেন। এমনিতে দাদী বাড়ির বাহিরে কোথায়ও বেড়াতে যান না।এই বিয়েটি দাদীর বাপের বাড়ির কোন এক আত্মীয়ের হওয়াতে দাদী নিজ থেকে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। বিয়ের আগের দিন বিকেলে গাড়ি ডাকা হয় দাদীকে বিয়ে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। যথা সময়ে গাড়ি এসে উপস্থিত। দাদী গাড়িতে উঠলেন সাথে আদরের নাতনি ছোট বোন মনিকে নিয়ে । দাদি বয়স্ক মহিলা। নিজের দেখভালের জন্য মনিকে সঙ্গে নিলেন। মনির বয়স তখন ১৪কিংবা ১৫হবে।
কথা ছিল দাদি সপ্তাহ খানেক বিয়ে বাড়িতে থাকবেন। কিন্তু বিধি বাম। বিয়ের একদিন পর হঠাৎ ছোট বোন মনির শরীর খুবই খারাপ করলো। অসম্ভব জ্বর এবং মাথা ধরা। বিয়ে বাড়ির লোকজন ডাক্তার ডাকলেন। ডাক্তার এসে ঔষধ দিয়ে গেলেন। মনিকে ঔষধ খাওয়ানো হলো। প্রথম দিন ঔষধ খাওয়ার পর একটু ভালো দেখা গেল। কিন্তু পরদিন থেকে আবার জ্বর। দাদী মনির এমন অবস্থায় খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েন।মনস্থির করলেন বাড়ি ফিরবেন। গাড়ি ডেকে মনিকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। বাড়িতে আসার পরদিন মনিকে নিয়ে ভালো ডাক্তার দেখানো হলো। শহরের নামকরা ডাক্তার ঔষধ দিলেন। ঔষধ খাওয়ানোর পর জ্বর কমে গেল।মনি সুস্থ স্বাভাবিক। কয়েকদিন চলে গেল।
হঠাৎ মা লক্ষ্য করলেন মনি
একা একা কথা বলে। রাতে ঘুমের ঘোরে বিড়বিড় করে। কি যেন আবুল তাবুল বকে। ?জিজ্ঞেস করলে চোখ বড় বড় করে রাগ করে উঠে।
আম্মার সন্দেহ হলো মনে হয় ওর উপর কোন কিছুর আচর পড়েছে। মনি প্রায়ই অসুস্থ থাকে।
কোন কিছু খেতে চায় না। যখন খুশি যা তাই করে।
আম্মা দাদীর সাথে পরামর্শ করলেন। দাদী আমাদের পাশের গ্রামের এক জিনের হুজুরকে ডাকলেন। হুজুর এসে মনিকে দেখে ঝাড়ফুঁক দিয়ে চলে গেলেন। তিনি শুধু বলে গেলেন ওকে জিনে ধরেছে। ওর জন্য তালাবী করতে হবে। হুজুর দুদিন পর আসবেন। দুদিন পর হুজুর এসে আমাদের বাড়ির কাছারি ঘরে আসর বসালেন।
পুরো কাছারি ঘর ভর্তি মানুষ। মনিকে হুজুরের সামনে বসানো হয়। হুজুর ঝাড়ফুঁক দেওয়া শুরু করলেন। আস্তে আস্তে মনির সাথে কথা বলার চেষ্টা করছেন।কিন্তু মনি কোন কথা বলে না। শুধু চোখ বড় বড় করে এদিক ওদিক তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ কোন কথা না বলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। চোখে মুখে পানি দেওয়া হলো। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরে এলো। জ্ঞান ফিরে আসার পর হুজুর শক্ত করে মনির হাতের কনিষ্ঠ আঙুলে ধরলেন। ধরে ফুঁক দিলেন। ফুঁক দিতেই মনি হুজুরকে দমক দিয়ে উঠলো। মনির ধমকে উপস্থিত সবাই কেঁপে উঠলেন। হুজুর ও ধমক দিয়ে উঠে এক থাপ্পড় মেরে চুলের মুঠিতে ধরলেন। ধরা মাত্রই মনি হুজুরকে বলল আর মারিস না। নতুবা তোকে মেরে ফেলবো। তোর বংশ মেরে ফেলবো।তুই চিনিস না আমি কে?বলে চিৎকার দিয়ে উঠে।
উপস্থিত সবাই একটু ভয় পেয়ে গেলেন। হুজুর তার কৌশল পাল্টালেন। সবাইকে একটু সরে যেতে নির্দেশ দিলেন। হুজুর লাল রংয়ের কি যেন তার পাঞ্জাবির পকেট থেকে বের করলেন। বের করে এক গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে জোর করে মনিকে খাইয়ে দিলেন।মনির হাতে এবং চুলে দুটো তাবিজ বেঁধে দিলেন। হুজুর তাবিজ বেঁধে দেওয়া মাত্রই মনি মাটিতে গড়াগড়ি করতে লাগল।
তখন হুজুর এগিয়ে এসে মনিকে জিজ্ঞেস করলেন বল তুই কে? কোথায় থাকিস ।কোথায় থেকে এসেছিস এরকম নানান প্রশ্ন করতে লাগলেন।
কিন্তু মনি কোন কথা বলে না বার বার হুজুরকে নানান ধমক দিতে থাকে। হুজুর ও নাছোড়বান্দা কোন অবস্থায় ছাড় দিচ্ছেন না।
এভাবে ঘন্টা খানেক চলে গেল।
হুজুর ও তাঁর ঝাড়ফুঁক দিয়ে যাচ্ছেন অনবরত।
হঠাৎ মনি লাফ দিয়ে উঠে দৌড় দিতে চাইলো।হুজুর তাঁর হাতের লাঠি দিয়ে আঘাত করে ধরে ফেললেন।
এবার হুজুর হাতের লাঠির উপরিভাগে একটি তাবিজ বেঁধে আস্তে আস্তে আঘাত করতে লাগলেন।
মনি ও কথা বলতে শুরু করেছে। প্রথমে ৩২ দাঁত বের করে একটা অট্টহাসি দিয়ে সবাইকে ভয় পাইয়ে দেয়। এমন জোরে অট্টহাসি দেয় সমস্ত বাড়ি কেঁপে উঠে।
হুজুর ও মাঝে মধ্যে লাঠি দিয়ে চতুর্দিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ধমক দিচ্ছেন আর আঘাত করতে থাকেন।
মনিও গড়গড় করে সব কথা বলতে লাগল।
হুজুর জিনকে অনুরোধ করলেন মনিকে ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য।
অনেক কথাবার্তা ও লাঠির আঘাতের উপর আঘাত মনে হয় আর সহ্য করতে না পেরে মনিকে ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য জিন রাজি হয়। হুজুর চলে যাওয়ার নিদর্শন চাইলেন। হঠাৎ কাছারি ঘরের পাশের আম গাছের একটি ডাল ভেঙ্গে নীচে পড়তে দেখা গেল। এমন সময় মনিও মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। হুজুর নির্দেশ দিলেন মনিকে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেওয়ার জন্য। জিনে চলে গেছে।সবাই ধরা ধরি করে মনিকে বাড়ির ভিতরে বড় ঘরে নিয়ে শুইয়ে দিলেন।।মনি লম্বা একটি ঘুম দিচ্ছে। হুজুর কিছু তাবিজ ও ঝাড়ফুঁক দিয়ে সেদিনের মতো বিদায় নিলেন।
মনি পরদিন দুপুরে ঘুম থেকে উঠে দেখে শরীরের খুবই ব্যথা।

মাকে জিজ্ঞেস করে তাঁর কি হয়েছে।?শরীরের এমন ব্যথা কেন। মা কিছু না বলে শুধু মুচকি হেসে বললেন যাও গোসল করে ভাতের টেবিলে এসো।মনি আর কথা না বাড়িয়ে সোজা বাথরুমে গিয়ে গোসল সেরে নিল।
মনির খুব খিদে পেয়েছে তাই আর দেরি না করে ভাতের টেবিলে গিয়ে পেঠ ভরে ভাত খেয়ে নেয়।। মনে হয়েছে সে অনেক বছর ভাত খায়নি।

মনি বুঝতে পারে ঘরের সবাই তাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করছেন। সে কারো সাথে কোন কথা না বলে নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। এভাবে মন মরা অবস্থায় কয়েক দিন চলে যায়। মনি কারো সাথে কোন কথা বলে না। সারাদিন বিছানায় শুইয়ে থাকে।
সপ্তাহ খানেক লেগে গেল সুস্থ স্বাভাবিক হতে। সপ্তাহ খানেক পর থেকে মনি পুরোদমে সুস্থ স্বাভাবিক হয়ে স্কুলে যাওয়া আশা করতে লাগল।
মনির স্কুলে যাওয়া আশা এবং মনিকে সুস্থ স্বাভাবিক হয়ে চলাফেরা করতে দেখে পরিবারের সবার ভূতের ভয় কেটে গেল। মনিও আগের মতো তাঁর স্বাভাবিক সুন্দর জীবন ফিরে পেল।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৫৯০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১২/০৯/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ভুতের ভয়, করতে হবে জয়।
  • লেখনী চমৎকার ও প্রকাশ
  • লেখনী চমৎকার
  • চমৎকার লেখন
  • ফয়জুল মহী ১২/০৯/২০২০
    কমনীয় লেখনী ।
 
Quantcast