গল্পের শেষাংশে নেই তুমি
দৃশ্যপটঃ ১
টিয়া রঙের শাড়ি পড়া ছিল মেয়েটি। নবীন বরণের দিনে আমি গ্যালারির যে পাশটায় বসে ছিলাম ঠিক তার বিপরীতে ছিল সে। আমার চশমা দেয়া চোখে তাকে কেবল অবলোকন করে গেলও সেই মেয়েটি আমাকে সেদিন ভুলক্রমেও দেখেছিল কিনা জানা নেই আমার।খুব অদ্ভুত সুন্দর তার হাসি। তবে আমার ভালো লাগটা হলো তার চোখে। অসম্ভব মায়া জমে আছে চোখ দুটোই। মেয়েটা ক্যামিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ আর আমি ম্যাথমেটিকস। ভার্সিটি লাইফের এইত শুরু হয়। ক্যাম্পাস আড্ডা, ক্যাফেটেরিয়া বা টঙ দোকানের পাশেই সদা হাসি হাসি মুখে আড্ডায় তাকে দেখে দেখে চলছিল আমার ভার্সীটির দিনলিপি। আমি তাকে ফলো করেছি বলব না আবার তার পিছু নেই নি তাও বলব না। অঙ্ক কষে কষে ঠিক দেড় বছরের মাথায় আমি বুঝলাম আমি তাকে ভালোবেসে ফেলেছি। আচ্ছা মেয়েটার নাম মীরা। আমি সজীব, পরিচিতি বুঝাতে চসমিশ সজীব বলা যেতে পারে। ক্যাম্পাস জুড়ে ইতিমধ্যে মীরার যাদু ছড়িয়ে পড়েছে, সুন্দরী হলে যেটা হয়। সিনিয়র থেকে ক্লাসমেট বা ব্যাচমেট কোন ধাপ বাদ পড়েনি তাকে প্রোপোজ করতে। আমি দূর হতে দেখে যাই কেবল, বড্ড ভীতু কিনা। মীরাও কোন রিলেশন এ যায় না, আমিও হাফ ছাড়ি "নাহ বেশ"
...
দৃশ্যপটঃ ২
সেদিন ভার্সিটির একটা অনুষ্ঠান হবে রাতের দিকে। নামি এক মিউজিক ব্যান্ড আসছে, হলে থাকার কারনে সিনিয়র রা কাজে লাগিয়ে দিল। আমি স্টেজের দিকে ছিলাম। এই কাজ সেই কাজে যখন মন বসিয়ে ফেললাম। সেই টিয়া রঙের শাড়িটায় দেখলাম মীরা হেটে আসছে স্টেজের দিকে। বিকেল টা প্রায় শেষ তখন সময়টা জানি না। তাড়াহুড়ো তে চলছে স্টেজের শেষ পর্ব। আমি থমকে গেলাম খানিক্ষণের জন্য।চেয়ে আছি মীরার দিকে। সিনিয়র ভাইয়ের আওয়াজে ঘোর ভাঙে। কাজের অসাড়তা কাটিয়ে আবার শুরু করি। কাজ শেষে খুজতে থাকি মীরাকে, এদিক সেদিক করে করে কোথাও পেলাম না। সন্ধ্যের দিকে দল বেধে চা খেতে গেলাম টঙে। চায়ে চুমুক দিয়ে তাকাতেই দেখি মীরা আমার পাশে দাড়িয়ে কথা বলছে। আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। কেন হয়েছিলাম তার সংজ্ঞা দিতে পারবনা। ধোয়া উঠা গরম চা ও তখন শীতল পানি। ঢকঢক করে গিলে ফেললাম সবটা, যেন আমি পিপাসায় কাতর ছিলাম আর হাতের পানিটা খেলে বাচি। খানিকবাদে বুঝলাম এত কাছে থেকেও এই আমাকে লক্ষ করেনি মীরা। আমি আড়ালে রইলাম কাছে থেকেও...
...
দৃশ্যপটঃ ৩
"সজীব?" মিরার আওয়াজ মনে হচ্ছে।ক্লাসের বেঞ্জের উপর বিভোর হয়ে মাথা গুজে ঘুমাচ্ছিলাম।মিষ্টি আওয়াজে চোখ খুলে দেখি মীরা। আজ মীরাকে অন্যরকম লাগছে। চুল গুলো রোজকার মত বেধে রাখা নেই। খুলে রেখেছে চুল। নাকের ডগায় একটা মোটা ফ্রেমের চশমা ও রয়েছে। আমি এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছি। "সজীব?" আমি তখনো চেয়ে আছি। "সজীব?" এবার আমার খটকা লাগলো, আমি বললাম "আরে আমি ত শুনছি এর পরের বাক্য বলো মীরা? " মীরা কেবল এক বাক্য ই পুনরাবৃত্তি করে যাচ্ছে....হঠাত ই কর্কশ আওয়াজ। মীরার কন্ঠটা ছেলেদের মত শোনাচ্ছে। প্রচন্ড ঝাকিতে চোখ খুলে গেল, চোখ খুলে যা দেখি তা হল মাথার উপর পুরাতন রঙহীন ফ্যানটটা বাতাস না দিয়েই ঘুরে যাচ্ছে।বুঝলাম হলের বেডে শুয়ে আছি। বায়ে তাকালাম রুমমেট বন্ধু মুচকি হাসলো।ব্যাপারটা বুঝলাম "সজীব?" বলে এতক্ষণ ও ই ডাকছিল। আবার চোখ বূঝলাম, দেখি আবার আসেনা কিনা স্বপ্নটা.....
...
দৃশ্যপটঃ ৪
রুমমেট বন্ধুর সাথে বিকালে হাটছি, হাটতে হাটতে মেয়েদের হলের সামনে পৌছালাম। এ পথে যাতায়াত টা পানিভাত আমাদের তবে হল গুলোর একটায় চোখটা আটকে গেল, মীরা বসে আছে বারান্দার দেয়াল ঘেষে। হাতে মোটাসোটা বই। দূর থেকে মনে হল মীরা একবার তাকালো আমার দিকে! আমি ভাব নিলাম আমি তাকে দেখিনি। এদিকে বন্ধু যে ড্যাবড্যাব করে মীরাকে দেখছিল সে খেয়াল নেই আমার। আমাকে অবাক করে বন্ধু মীরাকে হাত নাড়িয়ে হ্যালো বললো। ওদিক থেকে মীরাও হাত নাড়িয়ে জবাব দিল হ্যালোর।কিছুক্ষণ তাদের ইশারায় আলাপ চলল। আমি একবার মীরার দিকে আরেকবার বন্ধুর দিকে তাকাতে লাগলাম।শেষ সময় বন্ধু ইশারায় ফোন করতে বলল, মীরাও বাধ্য মেয়ের মত হ্যা সূচক মাথা নাড়ল। আমি ব্যাপারটা বুঝতে বন্ধুকে জিজ্ঞেস করি, ও হাসে। এ হাসির কারণ সহজে বের হবে বলে মনে হল না।
...
দৃশ্যপটঃ ৫
রাতের জোছনাটা মীরার মত, আমি ত জোছনাকে ভালোবেসে সিক্ত হই। চোখ ভরে দেখি কিন্তু জোছনা এই ধরনীর বুকে এই ছোট দেশের ভেতরের এক অস্পষ্ট শহরের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা বিল্ডিং নামক হলের এতটুকু বারান্দায় এইটুকু মানুষকে গণ্য করেনা। যাক জোছনা তুমি দূরেই থাকো ভালো থাকো।
বন্ধুর হাসির রহস্য টা উদঘাটন করে ফেলেছি, মীরা আর রুমমেট বন্ধুর মধ্যে প্রেম চলছে। কথাটা আমাকে এতটুকুও আঘাত করেনি, সত্যি বলছি। শুধু বন্ধু মীরার কল পাওয়ার পর রুমটা ছাড়তেই চোখ থেকে অনবরত অশ্রু ঝড়তে লাগলো। অবাধ্য চোখ, মূল্যহীন চোখের জল। মোবাইলে লেখা কনফেশনটা ডিলিট করে দিলাম......
...
দৃশ্যপটঃ ৬
নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছি, ছয়টা মাস মীরার ব্যপারে একটা খোজ ও নেই নি। আজ মীরার আর রুমমেট বন্ধুর এক বছরের রিলেশনের পূর্তি, আজ আমি ওদের উইশ করব।খাওয়া দাওয়া হবে। ভার্সিটি লাইফের শেষ বছর এটা। তাছাড়া সামনেই এক্সাম, এসময় ই বাসায় যেতে হবে বাবা অসুস্থ। মা ৩ দিন ধরে ফোন দিচ্ছে। বিকেলে মীরার আর বন্ধুর জন্য কেনা গিফট টা দিয়ে রাতের বাসে বাসার জন্য বের হব।হটাত ই আজ ক্যাম্পাস টাকে নিজের কাছের মনে হচ্ছে, মনে হচ্ছে এ ক্যাম্পাসটাকে চোখে ক্যাপচার করি নি এখন ই।সাথে হলের গলি গুলো, গণ রুমের রাত জেগে আড্ডা, নতুন রুমের বারান্দায় কাটানো নির্ঘুম রাত গুলো। জেগে থেকে মীরাকে নিয়ে লেখা আমার ছন্দহীন শত কবিতা আর লুকিয়ে রাখা সবটুকু আবেগের ডায়রির পাতাগুলো কেও বাক্স বন্দি করি।সে সাথে রাতের ক্যাম্পাসে বন্ধুদের গলা ছেড়ে গান, সবটাই বাক্স বন্দি করি। চোখ বুঝলে আজ কেবল মীরার কাজল চোখ দেখতে পাচ্ছি। অসম্ভব মায়া চোখ দুটোয়। এইত মীরা, "মীরা তোমাকে আজ একটা গিফ...."
"কি হয়েছে সজীব?" মীরা প্রশ্ন করল। আচ্ছা মীরা কালো শাড়ি কেন পড়েছে? আমার না শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে এখন। এইত মেসের বন্ধুটা হাসতে হাসতে মীরার পাশে এসে দাঁড়াল। শক্ত করে নিজের বাহুতে নিয়ে নিল মীরাকে। মীরা আর আমার দিকে তাকাচ্ছেনা, চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে আমার।
"বাবা সজীব? কখন আসবি?" মায়ের গলা না এটা? হ্যা মা ই ত। ঐত মা, বাবার পাশে বিছানায় বসে মোবাইলে কথা বলছে। বাসের হেল্পারটা হাটছে বাবার বেডের পাশে মা কি দেখছেনা? আমি কি বাসে এখন?
চোখ খুলার বৃথা চেষ্টা করছি আমি, চোখের পাতা ভারী হয়ে আছে।হঠাত সবাই নাই হয়ে গেল, শুভ্র সাদা......
কি হচ্ছে এসব? মীরা কোথায়? বাবা মা কোথায়? হঠাত এত আলো কিসের , ক্ষণেই অন্ধকার চারপাশ! মাথায় প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করলাম। হাত নিলাম মাথায়, তরল কিছু হাত লাগছে। বাইরে একটু আলো উকি দিচ্ছে হাতটা ধরলাম তাতে, লাল কিছু হাতে লেগে আছে। "রক্ত?" নিজেকেই প্রশ্ন ছুড়লাম। হ্যা মনে পড়েছে বিকেলে মীরাকে গিফট টা দিয়ে সাড়ে ৭ টার বাসে উঠেছিলাম আমি....হ্যা মনে পড়েছে।গড়িটার সাই সাই করে রাস্তাধরে এগুচ্ছিল আমি কল্পনা করছিলাম অতীত।
আমার চোখ বুঝে আসছে। বাইরে প্রচন্ড শোরগোল, কি হয়েছে? নিজেকে আবিষ্কার করি বাসের ভেতরের ই এক কোনে, আমার গায়ে পড়ে আছে পাশে বসা বয়স্ক লোকটার নিথর দেহ। আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে খুব। জানালাটা অল্প খোলা মনে হচ্ছে। কেউ জানালাটা খুলে ধরেন... একটা লোক আসছে মনে হচ্ছে.. আমার ডাক শুনবে? মুখ থেকে কোন শব্দ ও বের করতে পারলাম না। আচ্ছা এদিকে কি তাকাবে লোকটা? হ্যা দেখেছে আমাকে লোকটা। আমার চোখটা ঝাপসা হয়ে আসছে। অনেক ক্লান্তি লাগছে চোখ জুড়ে, ভারী হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে চোখ দুটোকে যদি বন্ধ করি তাহলে শান্তি লাগবে...আস্তে আস্তে নিভে যাচ্ছে চোখের আলো, বুঝতে পারছি। চোখের পরতে ভাসছে হলের পথটা, বাবার চেহারাটা। বাবা ই কি আসলো? লোকটা কি বাবা ই? তাকাতে পারছিনা.... আলো কমে আসছে। মাথা চুইয়ে রক্ত ঠোটের কোনে লেগেছে, নোনতা স্বাদ। জানালার ফাক দিয়ে আসা আলো ও কমে গেল একদম ক্ষীণ.....কেউ জানালা খুলুন আমি শ্বাস নিতে পারছিনা চিতকার করতে চেয়েও মুখে একটা শব্দ ও বেরুলো না...বাইরে এম্বুল্যান্সের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে ,কি অদ্ভুত আওয়াজ।
টিয়া রঙের শাড়ি পড়া ছিল মেয়েটি। নবীন বরণের দিনে আমি গ্যালারির যে পাশটায় বসে ছিলাম ঠিক তার বিপরীতে ছিল সে। আমার চশমা দেয়া চোখে তাকে কেবল অবলোকন করে গেলও সেই মেয়েটি আমাকে সেদিন ভুলক্রমেও দেখেছিল কিনা জানা নেই আমার।খুব অদ্ভুত সুন্দর তার হাসি। তবে আমার ভালো লাগটা হলো তার চোখে। অসম্ভব মায়া জমে আছে চোখ দুটোই। মেয়েটা ক্যামিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ আর আমি ম্যাথমেটিকস। ভার্সিটি লাইফের এইত শুরু হয়। ক্যাম্পাস আড্ডা, ক্যাফেটেরিয়া বা টঙ দোকানের পাশেই সদা হাসি হাসি মুখে আড্ডায় তাকে দেখে দেখে চলছিল আমার ভার্সীটির দিনলিপি। আমি তাকে ফলো করেছি বলব না আবার তার পিছু নেই নি তাও বলব না। অঙ্ক কষে কষে ঠিক দেড় বছরের মাথায় আমি বুঝলাম আমি তাকে ভালোবেসে ফেলেছি। আচ্ছা মেয়েটার নাম মীরা। আমি সজীব, পরিচিতি বুঝাতে চসমিশ সজীব বলা যেতে পারে। ক্যাম্পাস জুড়ে ইতিমধ্যে মীরার যাদু ছড়িয়ে পড়েছে, সুন্দরী হলে যেটা হয়। সিনিয়র থেকে ক্লাসমেট বা ব্যাচমেট কোন ধাপ বাদ পড়েনি তাকে প্রোপোজ করতে। আমি দূর হতে দেখে যাই কেবল, বড্ড ভীতু কিনা। মীরাও কোন রিলেশন এ যায় না, আমিও হাফ ছাড়ি "নাহ বেশ"
...
দৃশ্যপটঃ ২
সেদিন ভার্সিটির একটা অনুষ্ঠান হবে রাতের দিকে। নামি এক মিউজিক ব্যান্ড আসছে, হলে থাকার কারনে সিনিয়র রা কাজে লাগিয়ে দিল। আমি স্টেজের দিকে ছিলাম। এই কাজ সেই কাজে যখন মন বসিয়ে ফেললাম। সেই টিয়া রঙের শাড়িটায় দেখলাম মীরা হেটে আসছে স্টেজের দিকে। বিকেল টা প্রায় শেষ তখন সময়টা জানি না। তাড়াহুড়ো তে চলছে স্টেজের শেষ পর্ব। আমি থমকে গেলাম খানিক্ষণের জন্য।চেয়ে আছি মীরার দিকে। সিনিয়র ভাইয়ের আওয়াজে ঘোর ভাঙে। কাজের অসাড়তা কাটিয়ে আবার শুরু করি। কাজ শেষে খুজতে থাকি মীরাকে, এদিক সেদিক করে করে কোথাও পেলাম না। সন্ধ্যের দিকে দল বেধে চা খেতে গেলাম টঙে। চায়ে চুমুক দিয়ে তাকাতেই দেখি মীরা আমার পাশে দাড়িয়ে কথা বলছে। আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। কেন হয়েছিলাম তার সংজ্ঞা দিতে পারবনা। ধোয়া উঠা গরম চা ও তখন শীতল পানি। ঢকঢক করে গিলে ফেললাম সবটা, যেন আমি পিপাসায় কাতর ছিলাম আর হাতের পানিটা খেলে বাচি। খানিকবাদে বুঝলাম এত কাছে থেকেও এই আমাকে লক্ষ করেনি মীরা। আমি আড়ালে রইলাম কাছে থেকেও...
...
দৃশ্যপটঃ ৩
"সজীব?" মিরার আওয়াজ মনে হচ্ছে।ক্লাসের বেঞ্জের উপর বিভোর হয়ে মাথা গুজে ঘুমাচ্ছিলাম।মিষ্টি আওয়াজে চোখ খুলে দেখি মীরা। আজ মীরাকে অন্যরকম লাগছে। চুল গুলো রোজকার মত বেধে রাখা নেই। খুলে রেখেছে চুল। নাকের ডগায় একটা মোটা ফ্রেমের চশমা ও রয়েছে। আমি এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছি। "সজীব?" আমি তখনো চেয়ে আছি। "সজীব?" এবার আমার খটকা লাগলো, আমি বললাম "আরে আমি ত শুনছি এর পরের বাক্য বলো মীরা? " মীরা কেবল এক বাক্য ই পুনরাবৃত্তি করে যাচ্ছে....হঠাত ই কর্কশ আওয়াজ। মীরার কন্ঠটা ছেলেদের মত শোনাচ্ছে। প্রচন্ড ঝাকিতে চোখ খুলে গেল, চোখ খুলে যা দেখি তা হল মাথার উপর পুরাতন রঙহীন ফ্যানটটা বাতাস না দিয়েই ঘুরে যাচ্ছে।বুঝলাম হলের বেডে শুয়ে আছি। বায়ে তাকালাম রুমমেট বন্ধু মুচকি হাসলো।ব্যাপারটা বুঝলাম "সজীব?" বলে এতক্ষণ ও ই ডাকছিল। আবার চোখ বূঝলাম, দেখি আবার আসেনা কিনা স্বপ্নটা.....
...
দৃশ্যপটঃ ৪
রুমমেট বন্ধুর সাথে বিকালে হাটছি, হাটতে হাটতে মেয়েদের হলের সামনে পৌছালাম। এ পথে যাতায়াত টা পানিভাত আমাদের তবে হল গুলোর একটায় চোখটা আটকে গেল, মীরা বসে আছে বারান্দার দেয়াল ঘেষে। হাতে মোটাসোটা বই। দূর থেকে মনে হল মীরা একবার তাকালো আমার দিকে! আমি ভাব নিলাম আমি তাকে দেখিনি। এদিকে বন্ধু যে ড্যাবড্যাব করে মীরাকে দেখছিল সে খেয়াল নেই আমার। আমাকে অবাক করে বন্ধু মীরাকে হাত নাড়িয়ে হ্যালো বললো। ওদিক থেকে মীরাও হাত নাড়িয়ে জবাব দিল হ্যালোর।কিছুক্ষণ তাদের ইশারায় আলাপ চলল। আমি একবার মীরার দিকে আরেকবার বন্ধুর দিকে তাকাতে লাগলাম।শেষ সময় বন্ধু ইশারায় ফোন করতে বলল, মীরাও বাধ্য মেয়ের মত হ্যা সূচক মাথা নাড়ল। আমি ব্যাপারটা বুঝতে বন্ধুকে জিজ্ঞেস করি, ও হাসে। এ হাসির কারণ সহজে বের হবে বলে মনে হল না।
...
দৃশ্যপটঃ ৫
রাতের জোছনাটা মীরার মত, আমি ত জোছনাকে ভালোবেসে সিক্ত হই। চোখ ভরে দেখি কিন্তু জোছনা এই ধরনীর বুকে এই ছোট দেশের ভেতরের এক অস্পষ্ট শহরের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা বিল্ডিং নামক হলের এতটুকু বারান্দায় এইটুকু মানুষকে গণ্য করেনা। যাক জোছনা তুমি দূরেই থাকো ভালো থাকো।
বন্ধুর হাসির রহস্য টা উদঘাটন করে ফেলেছি, মীরা আর রুমমেট বন্ধুর মধ্যে প্রেম চলছে। কথাটা আমাকে এতটুকুও আঘাত করেনি, সত্যি বলছি। শুধু বন্ধু মীরার কল পাওয়ার পর রুমটা ছাড়তেই চোখ থেকে অনবরত অশ্রু ঝড়তে লাগলো। অবাধ্য চোখ, মূল্যহীন চোখের জল। মোবাইলে লেখা কনফেশনটা ডিলিট করে দিলাম......
...
দৃশ্যপটঃ ৬
নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছি, ছয়টা মাস মীরার ব্যপারে একটা খোজ ও নেই নি। আজ মীরার আর রুমমেট বন্ধুর এক বছরের রিলেশনের পূর্তি, আজ আমি ওদের উইশ করব।খাওয়া দাওয়া হবে। ভার্সিটি লাইফের শেষ বছর এটা। তাছাড়া সামনেই এক্সাম, এসময় ই বাসায় যেতে হবে বাবা অসুস্থ। মা ৩ দিন ধরে ফোন দিচ্ছে। বিকেলে মীরার আর বন্ধুর জন্য কেনা গিফট টা দিয়ে রাতের বাসে বাসার জন্য বের হব।হটাত ই আজ ক্যাম্পাস টাকে নিজের কাছের মনে হচ্ছে, মনে হচ্ছে এ ক্যাম্পাসটাকে চোখে ক্যাপচার করি নি এখন ই।সাথে হলের গলি গুলো, গণ রুমের রাত জেগে আড্ডা, নতুন রুমের বারান্দায় কাটানো নির্ঘুম রাত গুলো। জেগে থেকে মীরাকে নিয়ে লেখা আমার ছন্দহীন শত কবিতা আর লুকিয়ে রাখা সবটুকু আবেগের ডায়রির পাতাগুলো কেও বাক্স বন্দি করি।সে সাথে রাতের ক্যাম্পাসে বন্ধুদের গলা ছেড়ে গান, সবটাই বাক্স বন্দি করি। চোখ বুঝলে আজ কেবল মীরার কাজল চোখ দেখতে পাচ্ছি। অসম্ভব মায়া চোখ দুটোয়। এইত মীরা, "মীরা তোমাকে আজ একটা গিফ...."
"কি হয়েছে সজীব?" মীরা প্রশ্ন করল। আচ্ছা মীরা কালো শাড়ি কেন পড়েছে? আমার না শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে এখন। এইত মেসের বন্ধুটা হাসতে হাসতে মীরার পাশে এসে দাঁড়াল। শক্ত করে নিজের বাহুতে নিয়ে নিল মীরাকে। মীরা আর আমার দিকে তাকাচ্ছেনা, চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে আমার।
"বাবা সজীব? কখন আসবি?" মায়ের গলা না এটা? হ্যা মা ই ত। ঐত মা, বাবার পাশে বিছানায় বসে মোবাইলে কথা বলছে। বাসের হেল্পারটা হাটছে বাবার বেডের পাশে মা কি দেখছেনা? আমি কি বাসে এখন?
চোখ খুলার বৃথা চেষ্টা করছি আমি, চোখের পাতা ভারী হয়ে আছে।হঠাত সবাই নাই হয়ে গেল, শুভ্র সাদা......
কি হচ্ছে এসব? মীরা কোথায়? বাবা মা কোথায়? হঠাত এত আলো কিসের , ক্ষণেই অন্ধকার চারপাশ! মাথায় প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করলাম। হাত নিলাম মাথায়, তরল কিছু হাত লাগছে। বাইরে একটু আলো উকি দিচ্ছে হাতটা ধরলাম তাতে, লাল কিছু হাতে লেগে আছে। "রক্ত?" নিজেকেই প্রশ্ন ছুড়লাম। হ্যা মনে পড়েছে বিকেলে মীরাকে গিফট টা দিয়ে সাড়ে ৭ টার বাসে উঠেছিলাম আমি....হ্যা মনে পড়েছে।গড়িটার সাই সাই করে রাস্তাধরে এগুচ্ছিল আমি কল্পনা করছিলাম অতীত।
আমার চোখ বুঝে আসছে। বাইরে প্রচন্ড শোরগোল, কি হয়েছে? নিজেকে আবিষ্কার করি বাসের ভেতরের ই এক কোনে, আমার গায়ে পড়ে আছে পাশে বসা বয়স্ক লোকটার নিথর দেহ। আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে খুব। জানালাটা অল্প খোলা মনে হচ্ছে। কেউ জানালাটা খুলে ধরেন... একটা লোক আসছে মনে হচ্ছে.. আমার ডাক শুনবে? মুখ থেকে কোন শব্দ ও বের করতে পারলাম না। আচ্ছা এদিকে কি তাকাবে লোকটা? হ্যা দেখেছে আমাকে লোকটা। আমার চোখটা ঝাপসা হয়ে আসছে। অনেক ক্লান্তি লাগছে চোখ জুড়ে, ভারী হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে চোখ দুটোকে যদি বন্ধ করি তাহলে শান্তি লাগবে...আস্তে আস্তে নিভে যাচ্ছে চোখের আলো, বুঝতে পারছি। চোখের পরতে ভাসছে হলের পথটা, বাবার চেহারাটা। বাবা ই কি আসলো? লোকটা কি বাবা ই? তাকাতে পারছিনা.... আলো কমে আসছে। মাথা চুইয়ে রক্ত ঠোটের কোনে লেগেছে, নোনতা স্বাদ। জানালার ফাক দিয়ে আসা আলো ও কমে গেল একদম ক্ষীণ.....কেউ জানালা খুলুন আমি শ্বাস নিতে পারছিনা চিতকার করতে চেয়েও মুখে একটা শব্দ ও বেরুলো না...বাইরে এম্বুল্যান্সের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে ,কি অদ্ভুত আওয়াজ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মাসুমি ২৭/১২/২০১৯মন ছোয়া । শুভেচ্ছা ।
-
রাফি বিন শাহাদৎ ১২/১১/২০১৯ভাল লাগল
-
কামরুজ্জামান সাদ ১৮/০৮/২০১৭সুন্দর