www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

অভ্যাসের ওপিঠে ভালোবাসার রোদ

কেউকেউ আলোয় অন্ধকার খুঁজে। আবার ভোরের আলোয় চোখ বুজে। কারোর হাসিতে আমরা বুদ হয়ে রই, আবার কারোর হাসির অর্থ বুঝে থমকে যাই। আমাদের চরিত্রের একেক ভঙ্গি আমাদের একেক রূপ দেখায়। কি অদ্ভুত এ সৃষ্টি, কি অদ্ভুত তার নিয়ম। সম্পর্কের আবছায়া আলোয় পুড়ে মানুষ আবার  ভাসেও এই আবছায়ার রোদে।

কখনো কি খেয়াল করেছেন স্নিগ্ধ সকালে আপনার জন্য কারোর প্রগাঢ় ভালোবাসার অত্যাচার কতটা মধুর হয়? কিংবা কথায় কথায় গাল ফুলিয়ে রাখা রাজকন্যের নাকের ডগায় অভিমান জমানো একরাশ ভালোবাসা দেখতে কেমন লাগে? অভিযোগের সবটুকু কষ্ট লুকানো থাকে ঐ আখি যুগলের কাজল ভেজানো পদ্ম গুলোয়! আজকাল রব উঠে আগের সেই ভালোবাসা নাকি এখনকার সময়ে নেই। আগের সেই মনের টান নাকি এখনকার ম্যাসেঞ্জারের অনলাইন আর অফলাইনের মাঝের পার্থক্যতে ঝুলানো। ব্লকের আগে ভালোবাসা আর ব্লক করার পর ভালো হয়না "ভাষা"।
এতসবের ভীড়ে যদি আমি আমার আর লুবনার গল্পটা বলি তাহলে কি খুব বেমানান হয়ে যাবে? হোক সেটা এখনের। ভালবাসা কি সময় জানে?  

ওর ভালো নাম মাহফুজা নাওয়ার। ডাক নাম লুবনা। পরিচয়ের দিন এভাবেই নাম বলেছিল, আমি শুধু একটাই প্রশ্ন করেছিলাম-
"এটা ভালো নাম হলে লুবনা নামটা কি খারাপ?"।
ওর চোখ পড়ে গেল আমার উপর, ওর মুখভঙ্গি দেখে বুঝেছিলাম ওর ঐ চোখ যদি ভাইরাস স্ক্যানার হয় আমি হলাম ৯৯% স্ক্যানের পর পাওয়া একমাত্র ভাইরাসটা
ও আচ্ছা, পরিচয়টা ভার্সিটির ল্যাবে। কোন বিষয়ের ল্যাব মনে পড়ছে না। সেবারের মত স্ক্যানিং ১০০% হয়নি সেটা বুঝতে পারলাম পরেরদিন। সকালে না খেয়ে ঘুম থেকে উঠেই ভার্সিটি চলে এলাম, এসেই শুনি একটা এসাইনমেন্ট করতে হবে স্যার  নাকি গ্রুপ করে দিয়েছে আর আমি পড়েছি লুবনার গ্রুপেই। যথারীতি গিয়ে দাড়ালাম, লুবনাই সবাইকে সব বুঝাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে আনসার দিচ্ছে, বুঝেনা কেউ সেটা বুঝাচ্ছে। এসব দেখে আমি বিরক্ত বোধ করতে লাগলাম কখন যে ঝিমুতে ঝিমুতে চোখ লেগে গেছে বুঝিনি, চোখ খুলে ত আমার চোখ ছানাবড়া। তখন মনে হচ্ছিল কেন চোখ খুললাম আচ্ছা খুললাম ই যখন কেন নিজেকে বিছানায় পেলাম না।
স্যার আমার দিকে তাকিয়ে আছে, পাশে লুবনা তার পাশে কেউ কেউ ভিডিও করছে আর আরেক হারামজাদা সেলফি নিচ্ছে।
চোখের চশমাটা ঠিক করতে করতে ঝাড়ি শুরু স্যারের। সব এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে বের করে দিলাম। এরপর থেকে যতটা সম্ভব কনসেন্ট্রেট করার চেষ্টা করলাম। গ্রুপের সবাইকেই ভালভাবে আগ্রহ নিয়ে কাজ করছে অথচ আমার প্রশ্ন কিংবা আগ্রহকে পাত্তাই দিল না লুবনা। আমি যেন মি. ইন্ডিয়ার ছবির মত গায়েব কেউ। আমিও জেদ করে ভাবলাম থাক এই এসাইনমেন্ট টা যাক তাহলেই বাচি। গা বাচিয়ে বাচিয়ে চললাম পুরোটা সময়।
এর পর বেশ গ্যাপ, লুবনার সাথে দেখা হয় কখনো সিঁড়িতে কখনো ক্যাফেটেরিয়ায় কখনো কখনো ক্লাসের চোখাচোখিতে। সে আমাকে স্ক্যান করে আর আমি ভাইরাস ভেংচি মেরে পালাই। কি এমন প্রশ্ন করেছিলাম যার জন্য মহারানী একটা ছেলের অস্তিত্ব ই যেন টের পায়না! দু তিনবার নিজ থেকেই কথা বলতে চাচ্ছিলাম কিন্তু ঐযে মি. ইন্ডিয়া ভেবে বসেছে, আমি ততক্ষণে বুঝে গেছে এ মেয়ের ঘাড়ের রগ একটা ত্যাড়া। জেদ খুব।

বর্ষাকাল, এই বৃষ্টি আবার রোদ। ক্যাফেটেরিয়ার এক কোনে বসে ছিলাম। আমার একটা বদ অভ্যেস ছিল, এই টুকিটাকি কবিতা লিখতাম আর সে কাজটাই করছিলাম। হঠাত পাশ ফিরে দেখি লুবনা। আমার পাশের চেয়ারে বসে সিংগারা খাচ্ছে।
"সস টা দাও ত" লুবনা বলল।
আমি পাশে থাকা সসের বোতলটা দিলাম। বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছি, আমার অস্তিত্ব তাহলে আছে!খাওয়া শেষে উঠে চলে গেল। আজ এই চলে যাওয়া টা ত্রিশূলের মতো বিঁধল বুকে।
এই ব্যথিত হৃদয়ে কলম কিন্তু বেশ চলল। কবিতার প্রতিটি বাক্য যেন আমার কলমটা শুধু খাতায় ছোঁয়ানোর অপেক্ষায় ছিল। কিছুটা লাইন আবৃত্তি ও করলাম লেখা শেষে,

"শুধু তোমায় ঘিরে তৈরি হবে আরেক মহাকাব্য,
যদি লিখতে বসি শেষ করা যে হবে দুষ্প্রাপ্য।
শুধু তোমায় ঘিরে ভালোলাগার অন্য পৃথিবী,
তাই তোমার প্রতি এই অবুঝের আছে যত দাবী।

রাত জাগা আমার গুটিকয়েক স্বপ্ন যেসব থাকে,
স্নিগ্ধ তোমার হাসি ও মুখটা ক্ষণে ক্ষণে আকে।
আগলে রাখে এই আমাকে মিষ্টি কিছু হাওয়া,
আকাশ ভরা জোছনা হলে উদাস হয়ে যাওয়া।

হাতটা তোমার হাতে রেখে হাটব হয়ত কখনো,
ষাটোর্ধ বয়সেও বলব দেখো ভালবাসি এখনো।
বলব দেখ এই বুড়োটার সকাল-বিকেল তুমি,
গোধূলির কোন শেষ বিকেলে কপালে খাব চুমি।"

সাইকেলটা আমার প্রিয় বন্ধু, আমার সকল কাজের সঙ্গী। সাইকেলে ঢুঁ মেরে এদিক সেদিক ছুটে চলাটা সেই ক্লাস সেভেন থেকে। সেদিন বিকেলেও এভাবেই ঘুরছিলাম, এগলি থেকে ও গলি আর এখান থেকে সেখানে। হঠাত চোখ আটকে গেল হালকা ছাই রঙের ৪ তলা বাড়ির দোতলার বারান্দায়। একটি মেয়ে বারান্দাটায়। চিনতে সময় লাগল না এটা লুবনা।
সবুজ সেলওয়ার আর মাথায় ঘুমটা দিয়ে নিচে থাকা এক পিচ্চি কে উপরে যেতে বলছে আমি গিয়ে পিচ্চিটার সামনে সাইকেলটা থামালাম। ওর ভাই লাবিব। আমাকে দেখে লুবনা যেন ভূত দেখল, চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। আমি মৃদু হাসলাম আর ইশারায় বললাম আমি ওকে উপরে দিয়ে যাই? লুবনাও মাথা নেড়ে হ্যা বলল।
ওর ভাইকে কোলে তুলে নিয়ে গেলাম দো তলায়, বলা বাহুল্য আমার পকেট থেকে কিছু খরচাপাতি গেছে ছোট পুচকাকে পটিয়ে উপরে নিতে। তাও সার্থক হত যদি একটা ধন্যবাদ পেতাম। ধন্যবাদ দূরে থাক এক কাল মূহুর্ত থামলো না। হেচকা টানে ভাইকে কোলে নিয়ে চলে গেল। আমি ব্যথিত এ মন টাকে আগলে ভূ পৃষ্ঠের মায়ায় মাটিতে নেমে এলাম। সাইকেলে উঠতেই মোবাইলে ম্যাসেজ টোন বেজে উঠে। "ধন্যবাদ তোমাকে"। আননোন নাম্বার, আমি দোতলায় তাকাতেই দেখি লুবনা দাঁড়িয়ে, এক হাতে টাটা দিচ্ছে। সেই প্রথম আমি কোন মেয়ের চোখে এত মায়া দেখেছি, সেই প্রথম বুঝেছিলাম হৃদয়ে "সুখের মতো ব্যথা" কথাটার অর্থ। অস্ত যাওয়া সূর্যকে সাথে নিয়ে বাড়ি ফিরলাম আর স্মৃতিতে রইল এক মায়াময় অবয়ব।

ভার্সিটির ক্যাফেটেরিয়ার সেই কোনে টেবিলের দু প্রান্তে দুজন, হ্যা আমি আর লুবনা। এত চুপচাপ থাকতে কখনো ই দেখিনি ওকে। প্রায় ২০ মিনিট ধরে চুপ দুজন। আমি নার্ভাস না ঠিক, কিন্তু কি বলে শুরু করব বুঝতেছি না তাই চুপ কিন্তু ও কেনো? ও কি কম্ফোর্টেবল না?  না আমি ই বলি। "আজ বোধহয় বৃষ্টি হবেনা, তাইবা লুবনা?" লুবনা আমতা আমতা করতে লাগল।
আমি আবারো বললাম, "চা টা ঠান্ডা হয়ে গেছে তুমি ত খেলে না"
এবারো চুপ। আমার মেজাজ খারাপ হতে লাগল। এত ইগো এই মেয়ের।
"চা আমি রেগুলার খাই না, মাঝেমধ্যে খাওয়া হয়। এখন খেতে ইচ্ছে করছেনা আর তোমাকে না ও করতে ইচ্ছে করছিল না" লুবনা মুখ ফুটে কথা গুলি বলেই পাশের জানালায় চোখ রাখল। আমি একটু রিল্যাক্স হলাম যাক অভিমান নয়। সেদিন ঝুম বৃষ্টি হয়। আমি আর লুবনা অনেকক্ষণ কথা বললাম, আরেকটা মনে রাখার মতো ঘটনা হচ্ছে আমরা একই রিকসায় করে ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে বাসায় ফিরেছি। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকানো আকাশ দেখে এ মেয়ে একটুকু ভয় ও পায় নি। খিলখিল করর হেসেই গেছে। মেঘের গর্জন নাকি শুনতে তার খুব ভালো লাগে, কি অদ্ভুত। আরেকটা সিক্রেট ব্যাপার শেয়ার করল, লুবনার একটা ছেলের সাথে রিলেশন ছিল এখন যা শুধুই অতীত ওর কাছে।
জানালার পাশে বৃষ্টির ঝাপটা এসে আমার মুখটা ভিজিয়ে দিচ্ছে, কি চমৎকার এক অনুভূতি। মনে হচ্ছে মেঘ যেন ছুয়ে ছুয়ে যাচ্ছে।

অতি জটিল সব ম্যাথের প্রেমে যখন হাবুডুবু খাই, চারিদিকে ঘোর অমানিশা নামে তখন ই ব্রিলিয়ান্ট লুবনাকে খুঁজে বেড়াই। গতকালের এসাইনমেন্ট টার সাবমিট করার ডেট আরো দুদিন বাড়ানো হয়েছে। আমি কাল বিলম্ব না করে লুবনার কাছে হাজির, সিঁড়িটার মাথায় আসতেই দেখি সিনিয়র এক ভাইয়ের সাথে কথা হচ্ছে লুবনার। আমি আর গেলাম না।

বিকালের রোদ গায়ে মেখে সেই চেনা রাস্তায় আমার সাইকেলটা নিয়ে আমি, চেনা রাস্তাটা লুবনাদের মহল্লা। বারন্দায় ছোট ভাইকে কি যেন বোঝাচ্ছে, অল্প রাগি আর অল্প অভিমানি সেই মুখটা দেখেই আমি প্রেমে পড়ে যাই। এই অবয়বে কতবার যে হারিয়ে গেছি তা খাতায় না তুলে রেখেও হিসেব করে বলে ফেলতে পারি।  লুবনা হাত নাড়ালো, আমি ও হাই বললাম।
"কই যাচ্ছ?" আমাকে বলল লুবনা।
"কই আর যাব, এ গলির টানে ফিরে ফিরে আসি"
আমার কথা শুনে মুচকি একটা হাসি এসে গেল মুখে, আমি ও যোগ দিলাম তাতে। বাসায় আসার দাওয়াত পেলাম, ইচ্ছে থাকলেই এড়িয়ে গিয়ে বিদেয় হলাম। প্রিয় মানুষের যত কাছাকাছি থাকব, যত বেশিক্ষণ থাকব মায়াটা ততোটাই বাড়বে। একে অপরের সমানুপাতিক। আমি মায়াহীন থাকতে চাই। প্যাডেলে অয়া চালাচ্ছি কিন্তু পা চলছে না, আরেকটু সময় কি বেশি থাকা যেত না?
গল্প গুলোও কি অদ্ভুত হয়, আমার জীবনে তকমা লাগিয়ে দিচ্ছে। সকালে ফোন বেজে উঠে তাও লুবনার। আধঘণ্টার ভেতর রেডি হয়ে ওদের গলির সামনে সাইকেল নিয়ে থাকতে বলেছে। সাইকেল চালানো শিখবে ও। সময় ৫ মিনিট থাকতেই পৌছে গেলাম। গলির মাথায় ই দাঁড়িয়ে আছে লুবনা , সাধারণ সাজ কিন্তু অসাধারণ প্রতিমূর্তি। আমি মায়া অগ্রাহ্য করে ওকে নিয়ে চললাম পাশের মাঠে। হোচট খেয়ে, ব্যাথা পেয়ে ৪৫% এর সাইকেলের চালানো কৌশল রপ্ত করল লুবনা। দুপুরের কড়া রোদে দুজন ই ক্লান্ত। পাশের রেস্টুরেন্ট এ বসে ঠান্ডা পানীয় খাচ্ছি , ঐ সিনিয়র ভাইয়ের এখানেই আগমন। আমাকে বসিয়ে রেখে ওরা দুজন একটু দূরে কিছুক্ষণ কথা বলল, কথা বলা ত নয় কথা কাটাকাটি হলো। বুঝতে বাকি রইল না ইনি ই সেই অতীত লুবনার।
স্নিগ্ধ হাসিমাখা মুখটা এখন বৈশাখের কালো মেঘ ভর করে আছে, যেকোন মূহুর্তে চোখের কাজল লেপ্টে গিয়ে জল গড়িয়ে পড়বে। কেবল আমার একটা কথাই পারে এ জল নামাতে "কি হয়েছে" বললেই মেঘ ঝরবে। আমি চুপ করে রইলাম।
একপাশে সাইকেল অন্যপাশে লুবনা। আমার চোখের দিকে তাকাচ্ছে না। আমি সাইকেলটা পাশে ফেলে ওর হাত ধরলাম, "কি হয়েছে"।
লুবনা একদৃষ্টি তে তাকিয়ে থেকে কেঁদে দিল। আমি চোখের জল মুছে দিচ্ছি-
"তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?" লুবনার সোজাসাপ্টা প্রশ্ন!
আমি হতভম্ব! আমার হাত থেমে গেছে, আমি নির্বিকার ভাবে চেয়ে রইলাম ওর দিকে। বলার মত শব্দ পাচ্ছিনা যাতে একটা পূর্ণাঙ্গ বাক্য আমি এই মুহূর্তে বলব।
"বাসো না?" লুবনা এতটুকু বলেই হাটতে লাগল। আমি স্থির জড় বস্তুর ন্যায় ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম ওখানে। আমি পরিস্থিতিটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। যতক্ষণ এ নিজেকে ঠিক করে নিলাম, লুবনাকে দেখা গেল না গলিটায়। দৌড়ে গেলাম ওদের গলিতে,  নাহ নেই এখানেও। বেলকনিটাও ফাকা। আমি অবাক শূন্য চোখে সেই ভেজা চোখের মায়া পড়ার চেষ্টা করলাম নিজের চোখ বুজে।
বিকেলে ফের ছুটলাম ওদের গলিতে। লুবনার ফোন বন্ধ। আমার কাধের ব্যাগে ৩ টা লাল গোলাপ। আমি সত্যি ই এ মায়ায় পড়ে গেলাম। আমিও ভালোবেসে ফেলেছি ওকে। এ মায়া কাটানো সম্ভব নয়। সাইকেলের প্যাডেলে পা রেখে ছুটে চললাম। হঠাত চোখ গেল পাশের পার্কের বেঞ্চটায়, লুবনার মত কেউ। পাশে পাঞ্জাবী পড়া লোক। আমি সাইকেল নিয়ে ঢুকলাম পার্কে। একটু এগুতেই স্পষ্ট হল, এটা লুবনাই। পাশে সেই সিনিয়র ভাইটা। হাতে বড়সড় একটা ফুলের তোড়া। লুবনার মুখে রাজ্যের হাসি। বাঁধভাঙা হাসিটাকে আলতো করে ছুয়ে দিল লোকটা। লুবনার গালে যে টোল পড়ে আজ ভালোভাবে দেখলাম। আমি অজান্তেই তাদের সামনে গিয়ে সাইকেল থামালাম। লুবনা আমাকে দেখে এগিয়ে এসে বলল,
"স্যরি দোস্ত আমি দুপুরে তোকে একটা বাজে অবস্থায় ফেলে দিয়েছিলাম। সব হয়েছে ওর জন্য। ও আমার সাথে ঝগড়া করেছিল বলে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায় আর...." ওকে থামিয়ে লোকটা বলল-
"আরে অনয় যে, আসো কি হালচাল? কোথা থেকে আসলে? আজকে তোমার বান্ধবীকে ২ বার প্রপোজ করেছি, ওয়েট তোমাকে সাক্ষী রেখে আরেকবার প্রপোজ করি।" লোকটা হাটু গেড়ে বসে ফিল্মি স্টাইলে প্রপোজ করল আর সেটা আনন্দের সাথেই লুবনা গ্রহন করল। আমাই তখন ও কিছুহ বলিনি। বলার মত কিছু ছিল কি?

ওদের থেকে বিদেয় নিলাম, আমি আর আমার সাইকেল। পিছু ফিরে তাকালাম না, যত মায়া জমে ছিল তা পিছনে ফেলে এসেছি। মায়ার খপ্পড়ে পড়ে গোলাপ কেনা হল। একটু দূরেই দুজন ভিক্ষুক স্বামি স্ত্রী ভিক্ষা করছিল। ১০ টাকা বের করে দিলাম সাথে গোলাপ ৩ টা। ভালোবাসা কেবল মায়ায় বন্দি ওই সুন্দর মুখের অবয়বেই খুঁজে ছিলাম। সত্যিকারের মায়া ত এদের ভেতর। শুনেছিলাম একই ছাদের নিচে বছরের পর বছর থাকতে থাকতেই নাকি একজনের প্রতি অন্যজনের মায়া জন্মে। কিন্তু কিছু মায়ার বিপরীত পৃষ্ট টা ভালোবাসা। এরা একই ছাদের নিচে নয় এক আকাশের নিচে নিজেদের কে নিজেরা আগলে রেখে বাচে। এদের মায়া জন্মানোর প্রয়োজন পড়েনা এদের কৃত্রিম মায়াটাই ভালোবাসা। দুইটা ফুল ভিক্ষুক টা তার স্ত্রীর চুলে গুজে দিল, আমি মোবাইলে ছবি তুলে আবার ও সাইকেলে পা চালালাম। অভিমান অভিযোগ সব ধুয়ে যাক অনাগত বৃষ্টিতে, আবারো দিন চলুক। হয়ত আবারো কোন লুবনার মায়াময় দৃষ্টির প্রেমে পড়ব, হয়ত আবারো ফিরে ফিরে আসব গলির মাথায়। তাকে না পেয়ে অবাক শুণ্য দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রইব বেলকনিটায়। শেষ বিকেলে হয়ত আবারো সে মায়া কেটে যাবে, আমি শুন্য হয়ে ফিরব ঘরে।
ঠিক পুরোনো অভ্যাসে।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১৩০৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৬/০৩/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • মুহিব ১৯/০৩/২০১৭
    সত্যিই অসাধারণ...!♥
  • মোনালিসা ১৮/০৩/২০১৭
    অসাধারন
  • স্নিগ্ধ সকাল, আবছায়ার রোদ, গাল ফুলিয়ে রাখা রাজকন্যা, নাকের ডগায় অভিমান, ম্যাসেঞ্জারের অনলাইন, ভাইরাস স্ক্যানার, ভার্সিটির ল্যাব, ক্লাসের চোখাচোখি, ভেংচি, মহারানী, বর্ষাকাল (রোদ-বৃষ্টির মিলন), মেঘের গর্জন, ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, অনুভূতি, মেঘ যেন ছুঁয়ে ছুঁয়ে, মায়ায় বন্দি, বিপরীত পৃষ্ঠ, মায়াময় দৃষ্টির প্রেম, মোেবাইল ছবি, ভিক্ষুকের প্রেম, নির্বিকার সহ আরও অনেক অসারণ সব শব্দ চয়নের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা এক অসাধারণ এবং স্বার্থক ছোট গল্প।।।
  • তাবেরী ১৭/০৩/২০১৭
    সত্তিই সুন্দর গল্প
  • অস্পষ্ট ছবি ১৭/০৩/২০১৭
    লুবনা নামের আমার এক বন্ধু আছে। ভীষণ ইগো টাইপের। গল্পটায় তাকে খুব ভালো মতোই খুঁজে পেয়েছিলাম! বাই দা ওয়ে, কাকতালীয় মিল! গল্পটা বেশ। শু্ভেচ্ছা জানবেন।
  • গল্পের প্লট বেশ ইন্টারেস্টিং। পরে আরও সময় নিয়ে পড়তে হবে।
 
Quantcast