www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

তোমার আমার গল্পটা -(তৃতীয় পর্ব)

কিছু গল্পের শুরু হবার আগেই শেষ হয়ে যায়। এরপর মনে মনে গড়ে নিতে হয় গল্পটার একটা হ্যাপী এনডিং। নীলামা আর আমার গল্পটা সেরকম ই কিছু। একে ত বন্ধুত্বের গন্ডি অন্যদিকে নীলিমা অন্য কারো ঘরনী হবার পথে।
কিছু কিছুু স্বপ্ন পূরণের পরিশ্রম বৃথা হয়। হয় তার পিছনে ব্যয়িত সময় গুলো......আমার স্বপ্ন টা হয়তবা এরকম কিছু।

"চা খাবি তুই মেহেদী?" মায়ের গলা। আমি ঘরের লাইটটা জ্বালালাম। শোয়া থেকে উঠে বসে পাশের জানালায় তাকালাম, সন্ধ্যে শেষ হয়ে রাতের আধার নামছে নামছে।
'খাব মা।" বিছানা ছাড়তে ছাড়তে বললাম।
মা চলে গেল, আমি বারান্দার দিকে পা বাড়ালাম লালচে আকাশটা দেখব বলে।

ইদানীং সব কিছু কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে, কেমন যেন ঘোর লাগা কাজ করছে নীলিমার। যেন ওর আশে পাশে যা ঘটছে তা নিছক ই একটা কল্পনাসৃষ্ট স্বপ্ন। যেমন এইযে সায়মন কে বিয়ে করতে হবে, নীলিমা কি কখনো এমনটা ভেবেছিল? ভেবেছিল কি কোথা থেকে কোন উজবুক এসে ওর বাবা মাকে ইম্প্রেস করে ফেলবে? সবটা যেন কোন দুঃস্বপ্নের কারসাজি লাগছে।

"নীলা" "নীলা" সায়মনের আওয়াজ। নীলিমা পাশের ঘরে গেল, সায়মনের ডাকে।
"এ কি তুমি এখনো রেডি হওনি?"
নীলিমা মাথাটা টিপতে টিপতে বলল- "আজ কোথাও আর যাব না প্রচন্ড মাথা ব্যাথা।"
"সে কি! হঠাত মাথায় ব্যথা কেন? রাতে ঘুম হয়নি বুঝি?" কন্ঠে উদ্বেগ নিয়ে সায়মন বলল।
"না তা না আসলে, মাঝেমাঝে ই এমনটা হয়"
"তাহলে ত ডাক্তার দেখানো উচিত। মাঝেমাঝে হয় মানে নিশ্চই কিছু ব্যাপার আছে"
"আরেহ তেমন কিছু না, কফি খেলেই ঠিক হয়ে যাবে।"
"আচ্ছা ঠিকাছে বসো এখানে"
নীলিমাকে সায়মন সোফায় বসতে বলে ও গেল রান্না ঘরে,কিছুক্ষণ বাদে ফিরে এল।
"কিছুক্ষণ বাদেই কফি চলে আসব, চল বারান্দাতে নয়ত ছাদে যাই চমতকার চাদ উঠেছে আকাশে।"
যদিও নীলিমার সায়মনের সঙ্গ ভালো লাগেনা কিন্তু জোছনাময় চাদের কথায় কেন যেন ছাদে যেতে চাইছে মন। অনেকদিন চাদটাকে নিজেদের ছাদ থেকে দেখা হয়নি।

ছাদের একপাশে পরিপাটি করে গুছিয়ে কফি খাওয়ার আয়োজন করেছে সায়মন। খুব বেশি গোছগাছ। মেয়েদের একটা কমন স্বভাব হচ্ছে তারা ছেলেদের অগোছালো ব্যাপারগুলো বেশি লাইক করে।
এই যেমন কোন পারফেক্ট ছেলে যদি ঠিক পারফেক্ট ভাবে কোন মেয়েকে প্রোপোজ করে মেয়েটা খুব সম্ভবত হ্যা করবেনা যদিও সে ছেলেটাকে পছন্দ করে থাকে।
সে চাইবে ছেলেটি এসে আগে আমতা আমতা করুক, তার মনের কথা জানাব্র কিছু অভিনব পন্থা বের করে তাকে চমকে দিয়ে তারপর বলুক "ভালবাসি"। আর মেয়েটা একরাজ্য অবাক হওয়া চোখ নিয়ে তাকিয়ে বলবে- "এটা বলতে এত ভনিতা করা লাগে" যদিও সে সেটা আগেই বুঝেছিল।

নীলিমাও একটুও ব্যতিক্রম নয়, সে সায়মন কে এই একটা ব্যাপারে অপছন্দ করে। ছেলেরা কেন এত পরিপাটি হবে? পরিপাটি ই যদি হয় তবে বউ কি করবে? সে কিভাবে তার স্বামী কে পারফেক্ট করার মিশন হাতে নিবে!!!

শেষবার মেহেদী ছিল চাদ দেখার সময়। সেদিনের মত পূর্ণ চাদ নীলিমা তার গোটা জীবনে দেখেনি। রূপালি চাঁদের থালাটা যে তাদের থেকে যেন এই এক হাত দূরে।

অন্যদিকে, সায়মনের ইদানীং সকাল-বিকেল এমন কি বিরক্তিকর যে দুপুরটা ছিল সেই দুপুর টাও বেশ ভাল লাগে। ভাল লাগার অবশ্য কারন ত একটা আছে, সেটা হল নীলিমা। এই রাতে দুটো চাদ জেগে আছে একটা ওর পাশে বসে থাকা নীলিমা অন্যটা ঐ দূরের চাদটা।
"কত নিষ্পাপ একটা মুখ, কত নির্মল হাসি তার। আচ্ছা কাজল চোখে নীলিমাকে যে অসম্ভব সুন্দর লাগে এটা কি ও জানে?
ও কি জানে ওর প্রতিটা ব্যাপার আমার ভালো লাগে, এইযে কফির পটটা ধরে আছে আর আকাশের দিকে চেয়ে আছে অপলক ও এই দৃশ্যপট টা যে আমি কল্পনায় কত এঁকেছি কখনো কি ওর হাতটা ধরে এমন কোন জোছনাময় রাতে ওকে বলতে পারব! কেন পারব না? আগামী সব জোছনাগুলো ত এক ছাদের নিচে থেকেই দেখা হবে আমাদের। তখন সব বলব ওকে, সব।"

"কিছু বলছেন না যে" নীলিমা বলল।
সায়মন সম্বিৎ ফিরে পেল- "না মানে বলছি তো, তোমার মাথা ব্যথা কমেছি কি?"
"হু, অনেকখানি"
"আচ্ছা ভাল, আচ্ছা আমি শুনেছি তুমি ভাল গান কর?"
"আরে না তেমন না আগে একটু আধটু রেওয়াজ করতাম।"
"একটা শোনাও না"
"ইচ্ছে করছে না" নীলিমা উদাস ভঙ্গিতে আকাশে তাকালো কথাটা বলে।
সায়মন আবারো বলল- "কয়েক লাইন শুধু"
সায়মনের আবদারে না আজ সত্যি ই নীলিমার গাইতে ইচ্ছে করছে,
"চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙেছে , উছলে পড়ে আলো ।
ও রজনীগন্ধা , তোমার গন্ধসুধা ঢালো ॥
পাগল হাওয়া বুঝেত নারে ডাক
পড়েছে কোথায় তারে –
ফুলের বনে যার পাশে যায় তারেই লাগে ভালো ॥

অপূর্ব কন্ঠ, জোছনার স্নিগ্ধ মমতা যেন নীলিমার গলায় ঠেলে পড়ছে। সায়মন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে সে গান শুনছে....

সকাল পৌনে আটটা, সাড়ে আটটায় ক্লাস। আজ কয়েকদিন যাবত মেহেদীর দেখা নেই। নীলিমা এই ছেলেটার রহস্য এখনো ধরতে পারছেনা। হঠাত হঠাত কেন তাকে গায়েব হতে হবে? কেন নীলিমার প্রয়োজনে তাকে কাছে পাবেনা। বলা নেই কওয়া নেই উধাও। মোবাইল টা পর্যন্ত বন্ধ করে রেখেছে বজ্জাতটা।
"সেদিন মেহেদী বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে গলির মাথায় কি করছিল? আমি ঠিকই দেখেছিলাম ওকে, ও যতই নিজেকে আড়ালে লুকানোর চেষ্টা করুক। প্রায়ই বৃষ্টিতে মেহেদি গলির সামনে দাড়িয়ে থাকে, ভিজে। আচ্ছা ও ওকি আমার জন্যই আসে।" হাজারটা প্রশ্ন জমে আছে নীলিমার মনে।কে দিবে উত্তর?

হুট খোলা রিক্সায় পাশাপাশি নীলিমা আর সায়মন। কাচা হলদে রঙের শাড়ী আর সায়ময়ন সাদা পাঞ্জাবী। হ্যা, আজ বসন্তের প্রথম দিবস।
চারিদিকে হলদে-সাদা কাপল। সায়মন ঘুরে বেড়ানো, মেয়েদের ভাল লাগা -না লাগা তেমন একটা পটু না। আজ যে নীলিমাকে নিয়ে বের হতে হবে সেটাও সে বেমালুম ভুলে যেত যদি তপন না বলত -তপন হচ্ছে সায়মন এর বন্ধু। সেই স্কুল লাইফের থেকে আজ অবধি কত বন্ধু ছিল, গেল কিন্তু এই একমাত্র তপন টাই ফেভিকলের আঠা লাগিয়ে রয়ে গেল সায়মনের পাশে।
বন্ধুত্ব্বটার শুরুটাও হয়েছিল মারামারি দিয়ে। ক্লাসে কে কার আগের বেঞ্চে বসতে পারে সে থেকে তুমুল মারামারি-রেশ। একসময় প্রতিপক্ষ ভাবা মন বন্ধুত্ব তে রূপ নিল, সে আরেক গল্প। তপনের ৮বছরের রিলেশনে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে সে হল সায়মন। টাকা হোক বা ব্যাকগ্রাউন্ড সাপোর্ট সায়মন মানেই তপনের কাছে "ভরসা"।
"আজকের আবহাওয়াটটা চমৎকার, না?"- নীলিমা বলে উঠল। "ইয়ে মানে, হ্যা খুব। আর তোমাকে আজ সুন্দর লাগছে" সায়মন বলে উঠল।
"ও অন্যদিন আমাকে সুন্দর লাগেনা?" চাপা হাসিতে নীলিমা প্রশ্ন করল সায়মন কে।
"আরে না না" সায়মন কে বলতে না দিয়েই নীলিমা বলে উঠল- "সুন্দর লাগেনা?"
"আমি আসলে সেটা বলিনি, তোমাকে সবসময় ই সুন্দর লাগে" সায়মন বলল। নীলিমা হেসে ফেলল সায়মনের কথা বলার ভঙ্গি দেখে। সায়মন এবার বুঝল নীলিমা মজা করছে ওর সাথে।

টিএসসির টং দোকানে বসে আছে সায়মন আর নীলিমা। হাতে চায়ের কাপ। প্রায়শই এখানে এসে আড্ডা চলত ঘন্টার পর ঘন্টা। আজ ক্যাম্পাস জুড়ে উতসব চলছে। ছাত্র-সাধারণ মানুষ সবাই হাসি হাসি মুখ। হাসি মুখ সায়মনের ও। কিন্তু নীলিমা এখানে থেকেও কেন যেন নেই। কিছু একটা খুঁজছে। সায়মন ব্যাপারটা লক্ষ্য করল- "কাউকে খুজছো নাকি?"
"হ্যা? না না। " নীলিমা বলল।
"নীলা, তুমি এমন উদাস হয়ে থাকো কেন সবসময়?" সায়মন প্রশ্ন করল।
"কই নাতো" বললেই নীলিমা কৃত্রিম হাসি দিল।
আসলেই, এমন উসাস ভাব নিয়ে কারো সাথে ঘুড়ে বেরানো মানে পাশে থাকা মানুষটাকে অবহেলা করা, নাহ আর উদাস থাকা যাবেনা যা নেই তা ভেবে আর সময় নষ্ট করা বোকামি- মনে মনে ভাবল নীলিমা।

দুজন টং থেকে উঠে হাটা ধরল। বসন্তের বিকেলে সজীব এই প্রকৃতির নব উদয় মনে কেড়ে নিচ্ছে। মুহুমুহু বাতাস, খুনসুটি, নাহ বেশ!
জীবনটায় এক অন্য মোড় এল নীলিমাকে পেয়ে। আচ্ছা নীলিমাকে আমি সত্যি পেলাম তো? নাকি অন্য সব এরেঞ্জ ম্যারেজ এর মতো এটা কেবল একটা কম্প্রোমাইজ হয়েই রবে? -সায়মন নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে গেল। অব্যক্ত করা প্রশ্নের উত্তর টা জানতে তাগাদা দিচ্ছেনা এখন। এখন হাতটা বাড়িয়ে নীলিমার হাতটা ধরে এ পথটা পাড়ি দিতে ইচ্ছে করছে খুব.....খুব।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১৬৫৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১২/০৫/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast