www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

তোমার আমার গল্পটা -(দ্বিতীয় পর্ব)

প্রচন্ড্র আওয়াজে ঘুম ভাঙলো, ঘটনা কি জানতে হুড়মুড় করে
উঠলাম। আওয়াজটা আম্মার। দৌড়ে গেলাম আব্বা আম্মার ঘরে, দেখি আম্মা কাদতেছেন। জিগেস করলাম কি হইছে।
আম্মা আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাদতেঁ লাগলেন।
"মেহেদী তোর আব্বা ত হার্ট এট্যাক করছে"
বলেই আম্মা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন, আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। আব্বাকে ভর্তি করানো হল হসপিটালে। তিনদিন যাবত্ হসপাতালে আমি।

আজ আব্বার অবস্থার উন্নতি হয়েছে, তাই বাসায় ফিরছি। এই ৩ দিন বন্ধুদের সাথে দেখা বলতে দু একজনের সাথে হয়েছে। ওরা আব্বাকে দেখতে আসছিল। আমি খুব চাইছিলাম নীলিমা হয়তো আসবে, আসেনি ও।
বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়েই কল দিলাম ওকে, নাম্বার বন্ধ।
কল করলাম তনুশ্রী কে - "হ্যাঁ, তনু"
তনুশ্রী অপারশেন থেকে জবাব দিল "কে মেহেদী"
আমি হ্যা বললাম।
"নাম্বার কার এটা?"
"এটা বাসার ফোন আমারটায় ব্যালেন্স নেই।"
"আঙ্কেল কেমন আছেন? আজ যাব ভাবছিলাম .."
"আজ মোটামুটি ভালো, আচ্ছা নীলিমার কি খবর? কিছু জানিস?"
"না রে, ও ত গত ৩ দিন ধরে ভার্সিটিতে আসছেনা। ফোন ও বন্ধ"
"আচ্ছা ঠিকাছে, রাখি"

বিকেলের বিষন্নতা যখন সর্বত্র ছড়িয়ে যায়, মিষ্টি চায়ের কাপের চুমুকটাও তেতো লাগে। সিগারেটের কয়েকটা টানে দুঃখ ঘুচেনা, প্রতিটা টানে ধুঁয়া করে বিষন্নতা ছাড়ি বাতাসে। বাতাসের কান আছে? ওকে যদি বলি বাতাস আমার লুকানো বাক্যটা নীলিমাকে জানিয়ে দিও ফিসফিসিয়ে, একদম কাছে গিয়ে। যাতে অন্য কেউ না শোনে, এটা যে খুব মুল্যবান বাক্য। বাতাস কি পারবে বলতে? কি জানি ।

ফোনে মা বলল বাবাকে কাল বাসায় নিতে পারব একটু আগে ডাক্তার বলে গেছেন।সন্ধ্যা শেষে হাসপাতলে গেলাম। একি, নীলিমা যে। আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমাকে দেখে নীলিমা মুচকি হাসলো।
আমি গিয়ে বাবার পাশে আর নীলিমার বিপরীতে দাড়ালাম।
আম্মা প্রশ্ন করলো -
"ছিলি কই সারাদিন? মোবাইলটাও বন্ধ। "
আমি পকেট থেকে মোবাইল বের করে চেক করলাম আসলেই বন্ধ হয়তো চার্জ নেই।
"চার্জ নেই মোবাইলে কখন অফ হল বুঝিনাই"
নীলিমা সাথে সাথেই বলে উঠল-
"বলেছিলাম না আন্টি এ কথাই বলবে! মিললো ত "
আম্মাও ওর সাই দিল -"হুম, তাইতো দেখছি"
দুজনে মিটিমিটি হাসতে লাগলো,আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না।

হাসপাতালের বারান্দার করিডোরে আমি আর নীলিমা দাড়িয়ে। মুহুমুহূ বাতাস বইছে সে বাতাসে নীলিমার চুল বারবার সামনে এসে যাচ্ছে আর ও তা সরাচ্ছে।
"থাক না, এভাবেই সুন্দর লাগে তোকে" আমি নীলিমার দিকে তাকিয়ে বললাম। হয়তো ও লজ্জা পেল। আর সরালো না।
"নীলিমা, তোকে আজ খুব সুন্দর লাগছে"
"সেটা ত সবসময়ই বলিস"
"কি করবো বল,সুন্দরকে ত সুন্দর ই বলব তাইনা?" মনে মনে বললাম, কখনোই ত চোখ ফেরাতে পারিনা একবার তাকালে। মনে হল নীলামা এই কথাটা শুনেছে ও যেন নীলিমা আবারো লজ্জা পেল, নিশ্চুপ হয়ে রইলাম দুজন ক্ষানিক্ষণ। এত চেনা বন্ধু কত কথা হয় অথচ আজ একা দুজন তাও আমার মুখের ভাষা যেন ফুরিয়ে গেছে। পাথরের মতো কেবল ই দাঁড়িয়ে রইলাম ।

বারান্দায় একটা লোক প্রবেশ করল। লোকটাকে দেখে নীলিমা এগিয়ে গেল, এরপর দুজনেই আমার সামনে এল।
"মেহেদি, এ হচ্ছে সায়মন। আর সায়মন এই সেই মেহেদি"
হ্যান্ডশেক করলাম, আলাপ করলাম ভদ্রলোকের সাথে। অবশেষ জানতে পারি ইনি হতে পারেন নীলিমার ভবিষ্যৎ বর!।
আমার আর কিছুই বলার ছিল না। কিছুক্ষণ বাদে সায়মন নীলিমা কে নিয়ে বেরিয়ে গেল হাসপাতাল থেকে। কড়িডোরে দাড়িয়ে থেকে আজও নীলিমার চলে যাওয়া দেখলাম! যাওয়ার শেষ মুহূর্তে নীলিমা একবার চেয়ে দেখল আমায়!।

টিপটিপ বৃষ্টি পড়ার সময় খুব খারাপ একটা সময়। বৃষ্টির একেকটা ফোটা যেন বয়ে নিয়ে বর্ষিত হয় একেকটা স্মৃতি।
একদিন ঝুম বৃষ্টির দিনে আমার পাশে বসে ছিল নীলিমা, গিটারে সেদিন ওর প্রিয় গানটাই ধরেছিলাম।
হঠাতই নীলিমা বলে উঠল বৃষ্টিতে ভিজবে। বৃষ্টির বেগ দেখে ও যেন ছোট বাচ্চা হয়ে গিয়েছিল সেদিন। কিন্তু....
সেদিন ভেজা হয়নি দুজনের একসাথে। আজ সকাল থেকে ঝুম বৃষ্টি, আচ্ছা নীলিমা, আজ যদি ভিজতে চাই তোমার হাতে হাত রেখে, ভিজবে কি তুমি? প্রশ্নটা তোলা রইল যেমনটা সবসময় ই থাকে । জানিনা কখনো করতে পারব কি না। হয়ত করব আবার নয়তো কখনোই না ।

ভিজতে ভিজতে চলে গেলাম নীলিমাদের বাড়ির কাছে, আমার ধারনা ভুল না হলে নীলিমা এখন বারান্দায় চেয়ারে বসে বৃষ্টি দেখছে। অনেকবার লুকিয়ে থেকে দেখেছি ওকে, চেয়ারে বসে হাতে একটা কফির পট নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বৃষ্টি দেখতে। তুমি জানো নীলিমা? বৃষ্টি না আমার একদম পছন্দ না, শুধু তোমার জন্য বৃষ্টি এখন প্রিয় হয়ে উঠেছে আমার! কেননা এতটা কাছ থেকে এতটা সময় ধরে তোমাকে দেখার সুযোগ যে এই বৃষ্টির অবদান।
বলেছিলাম না আমার ধারনা ভুল হবেনা। আকাশী রঙের সেলওয়ার কামিজ পড়ে চেয়ারে বসে আছে আমার নীলাম্বরী। চোখটা একটু বাঁদিক এ সরতেই চোখে পড়ল সায়মন কে। ওর পাশেই দাড়িয়ে আছে।
মনে হতে লাগলো নীলিমা যেন অনেকটা দূরে সরে আছে আমার থেকে বাস্তবিকটাই এমন অথচ এর আগে যতবার দেখেছি এ ব্যাপারাটা অনুভব করিনি ,কি অদ্ভুত।মনে হয় অনেকটা দূরত্ব যেন দুজনের মাঝে। বৃষ্টিটাও অনেক অভিমানী, আরো বেশি করে ঝরছে। চোখ দিয়ে কখন অশ্রু ঝরল বুঝলামই না, আজ অশ্রু মুছতে হবেনা বৃষ্টিরছোয়ায় এমনেই ধুয়ে যাবে, কেউ বুঝবেওনা। এমনকি নীলিমাও না।

মেঘের প্রবল গর্জন যেন আমার হৃদয়েও তোলপাড় করছে। নীলিমাকে একবার দেখে নিলাম ফিরতে হবে, শহরের চেনা পথে হেটে চললাম। দেহ ভিজে চুপসে গেছে, ভেতরটা যে তখনো খাঁখাঁ রোদ্দুরে চৌচির।

আবার ও পিছন ফিরে তাকালাম আরেকটাবার, নীলিমা চেয়ে আছে আমার দিকেই পাশে সায়মন নেই। অনেকটা উদ্বিগ্নতা ওর চেহারাজুড়ে। চোখ জোড়া চকচক করছে, আচ্ছা ওর চোখ কি অশ্রুতে ছলছল করছে? কান্নার আগে কি চোখ যুগল এমনই চকচক করে? নীলিমা কাঁদবে কেন? ওর ত সব আছে। নেই আমার, আমি কাঁদবো।
গিয়ে জিজ্ঞাস করব? নীলিমা তোর চোখে জল কেন? এটা কি আমার জন্য?
যদি আমার জন্য নাও হয় মিথ্যে করে একবার বল "হ্যা মেহেদী, তোর শূন্যতায় আমার এই আঁখিজল"

আকাশ মেঘলা করে ইদানীং ঝুম বৃষ্টি নামে। দুপুরের তপ্ত রোদ বলি আর বিকেলের সোনালী আলো কোনটাই সপ্তাহখানেক দেখা মিলছেনা। সকালের আলোয় চোখ খুলে যা দেখি সেটা হল ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। রাতটুকু মাঝেমধ্যে নিরবই থাকে।
দু একবার ভিজেছি ও। আজ প্ল্যান হচ্ছে কদম ফুল কেনা। বাদল দিনের কদম ফুলের মহত্ত্ব অনেক।বিন্দুকে ফোন দিলাম।
"হ্যালো" অপাশ থেকে বিন্দু।
আমি ভনিতা না করে বললাম, "হ্যা বিন্দু কদম ফুল কোথায় পাব রে?"
"কেন কি দরকার?"
"আছে, তুই বল" আমি বললাম।

বিন্দু মিচকি একটা হাসি দিয়ে বলল-"হু হু বুঝি ত! এমন দিনে কদম কেন লাগে। ঠিকাছে বলব তার আগে বল ত কদম ফুলের আরেকটা নাম আছে সেটা কি?"
যা ভেবেছিলাম সেটাই। এই মেয়েটাকে প্রশ্ন করে সরাসরি উত্তর পাওনি আজো, উল্টো প্রশ্নের তীর ছুড়ে প্রশ্নকর্তার দিকে।
যেহেতু আমি পারিনা সেহেতু চুপ করে রইলাম।
"শুনে রাখ, জানি ত পারবিনা কদম ফুলের আরেকটি নাম হচ্ছে নীপ" ওপাশ থেকে। আমি বুঝেছি ভাব নিয়ে বললাম
"ও আচ্ছা"
"বিকেলে এসে নিয়ে যাস।"
"কোত্থেকে?" আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম বিন্দুকে।
"তুই এভাবে কদম পাবিনা, আমার এক বান্ধবীর বাগানে কদম গাছ আছে আমি এনে রাখব"।
আমি আশ্বস্ত হয়ে বললাম "থ্যাংকস রে, আচ্ছা শোন কদম ৫ টা নিস"
"সে নেয়া যাবে কিন্তু কথা হচ্ছে বিকেলে আমাকে ফুচকা খাওয়াতে হবে"
"ওকে, যথা আজ্ঞা" বলে কথা শেষ করে রেখে দিলাম ফোনটা। যাক কদমের ব্যাপারটা তাহলে ক্লিয়ার।

খোলা চুল মুহুর্মুহু বাতাসে উড়ছে, মেয়েটি অপলক চেয়ে আছে বরষার ঝুম বৃষ্টি বুকে জমানো আকাশের দিকে। মেঘদের ভেলা কালো করে ঘিরে রেখেছে পৃথিবির বুক। আমি দাড়িয়ে আছি ওদের গলির মাথায়। কদম গুলো আমার হাতেই।কদম দিব কিভাবে? এভাবে গিয়েই দিয়ে আসব? বেশি ন্যাকামি হয়ে যায়। কি করি ভেবে পাচ্ছিনা । কিছুক্ষন বাদে চেয়ে দেখি নীলিমা নেই বারান্দায় । আমি ও ফিরে আসি কদম হাতে , কদম গুলির যায়গা হয় আমার ঘরের টবে । দিনে দিনে হয়ে আসে নিষ্প্রাণ , একসময় পাপড়ীহীন কেবল ই ডাল পরে রয়......
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১৩৪৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৩/০১/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • গাজী তৌহিদ ১৪/০২/২০১৬
    লেখনিতে মুগ্ধ!
  • আগেও বলেছি আপনার লেখার হাত ভালো , লিখে যান । লেখা দেবার আগে বানান আর ছাপার ভুল দেখে নিতে হবে।
  • ধ্রুব রাসেল ২৬/০১/২০১৬
    অনেক সুন্দর করে ঘুচিয়ে লিখেছেন। বেশ লাগলো। এরকম আরো গল্প চাই।
  • অভিষেক মিত্র ২৫/০১/২০১৬
    চমৎকার!
  • ভাল লাগলো। আরো ভাল ভাল গল্প চাই।
 
Quantcast