www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

তোমার আমার গল্পটা -(প্রথম পর্ব)

নিভৃত ভালবাসা অনেক বেশি গাঢ় হয়, হয় শক্ত। সে ভালবাসা লুকায়িত থাকলেও তার আবেশ কিন্তু সবটা জুড়ে থাকে। ঘোর লাগা কাজ করে এতে।
লুকানো ভালবাসা হয় পবিত্র। কোনরূপ দাবীদাওয়া নেই যেন, শুধু ভালবেসে যাওয়া। আর বিনিময়? সেটা জমা থাকে সম্পর্কের শুভ্রতায়।

নীলামার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারি হাজার ঘন্টা তবে আমার চোখে ওর চোখ পড়লেই আর তাকিয়ে থাকতে পারিনা, চোখে যেন কাটা ফুটে। আমি চোখটা সরিয়ে নিই।
আমার ও বিনিময় কিছু চাইনা। আমি কেবল ভালবেসে যেতে চাই। যেমনটা স্রোতস্বিনী নদীর মতো কিংবা আকাশের অগনিত তারাদের সম।
সেদিন ক্যাম্পাসের বাইরেই দাড়িয়ে ছিলাম, কটা বাজবে এই হয়তো সোয়া বারোটা। নীলিমা,দীপ, আমি আর তনুশ্রী আড্ডা দিচ্ছিলাম হঠাৎ কথা প্রসঙ্গে নীলিমাকে দীপ জিজ্ঞেস করল সন্ধ্যার পর ওর কি প্ল্যান। নীলিমা বলল প্ল্যান নেই। দীপ নীলিমাকে কফির
অফার করল। নীলিমা অনেক্ষণ ভেবে বলল ও যাবে কিন্তু সাথে আমাকেও নিতে হবে। দীপের মুখটা হয়ে গেল বাংলার পাচের মতো তবুও বললো ঠিকাছে।
সবার যাওয়ার পর আমি নীলিমাকে বললাম
"কি দরকার ছিল, তুই যা। আমার কাজ আছে"
"দেখ তোকে ত যেতেই হবে, কথা বললে থাপ্পড় খাবি"
"না বাপ থাক থাপ্পড় খেতে চাইনা, ওকে যাব"
"তাহলে তুই কফিশপে সন্ধ্যায় চলে আসিস"
কথাটা বলে নীলিমা তার নীলাম্বরী হাসি দিয়ে চলে গেল, আমি, আমি কেবল চেয়ে থেকে চলে যাওয়া দেখলাম।
রাস্তায় আমাকে দীপ ডাকল।
"দোস্ত একটা রিকুয়েস্ট আছে"
দীপ হাতটা জোড় করে বলল।
"বলে ফেল"
"সন্ধ্যায় তুই আসিস না কফি শপে"
"কিন্তু নীলিমা ত..."
আমাকে থামিয়ে দিয়ে দীপ বলতে লাগলো।
"আরে ঐটা আমি ম্যানেজ করব"
আমি বুঝে গেলাম ঘটনা কি হতে যাচ্ছে। একটা মৃদু হাসি দিয়ে বল্লাম আসব না। দীপ এর মুখে তখন রাজ্যেরহাসি। আমার হাসি ম্লান হয়ে গেছে। তবে বুঝতে দিলাম না দীপকে। সেদিনকার মতো চলে এলাম ক্যাম্পাসে থেকে বাসায়।

গিটারে কেবল সুর তুলেছি, নতুন একটা টিউন। মোবাইলটা বেজে উঠল। তনুশ্রী ফোন করেছে।
"হ্যাঁ বল তনু "
"সেইরকম খবর আছে একটা দোস্ত!"
আমি ওর মতো করে বললাম -
"অবশেষে বিয়েটা করেই ফেললি? মাহি শেষমেষ পালিয়েই বিয়ে করল তোকে? "
"এই গাধা পালিয়ে যদি বিয়ে করে ফেলতাম তাহলে তোকে ফোন দেই? তাছাড়া পালালে তুই থাকবি খাস
সাক্ষী
"হাহা আরে মজা করলাম, তোর বিয়েতে আমি থাকব না মানে, তুই
দাওয়াত না দিলেও আসব"
"হেহেহে সেটাই, শোন খবরটা বাসি তবে আমাদের কাছে সদ্য গরম খবর"
"আচ্ছা বল"
"নীলিমা আর দীপের এংগেজমেনট খুব তাড়াতাড়ি"
আমি ওর কথায় অবাক হয়ে গেলাম।
আমার কথা বুলি সব নির্বাসিত হয়েছে। অপরপ্রান্তে তনুশ্রী বলেই যাচ্ছে -
"হ্যালো মেহেদী, কিরে কথা বলিসনা কেন? হ্যালো"
কি বলব, তারপর ও বললাম- "আচ্ছা"
তনুশ্রী বলল "ওরা গভীর জলের মাছ বুঝলি, এতকিছু হচ্ছে অথচ আমরা টের ও পেলাম না "
আমি একটা দীর্ঘশ্বাসের সুর তুললাম "হুম"

সপ্তাহ খানেকের জন্য চলে গেলাম চিটাগাং। সাগরের খুব কাছাকাছি যেয়ে নীল কষ্ট গুলো ধুয়ে ফেলার এ এক ভিন্ন অভ্যাস আমার। সাগরের গর্জন যেন আমার নিরব গর্জনের কাছে শিশু।
চিতকার করে বলতে ইচ্ছে হয় কই সেই হুঙ্কার? কই সেই তেজ হে জলরাশি? আমার হৃদয় জোয়ার যে তোমার উত্তাল বেগের চেয়েও বেশি বেগবান আরও
বেশি ক্ষুরধার তার স্রোত।
এখানে গভীর রাতে সুর তুলি গিটারে। আমার নীলাম্বরী মেঘ গুলো জুড়ে থাকে নীলিমার ভালবাসাপূর্ণ আকাশে, এসবই স্বপ্ন আর নিছক কল্পনা।

আবারো ফিরে আসি চিরচেনা শহরে, পরেরদিন ক্যাম্পাসে যাই। নীলিমা আমাকে দেখেই ছুটে এলো।
"ত জনাব ছিলেন কোথায় এতদিন?"
"এইতো নিজেকে শুদ্ধ করে এলাম"
বলে একটু হাসলাম।
"সমুদ্র বিলাস তাইতো?"
বলেই নীলিমা হোহো করে হেসে উঠল। আমি মাথা
চুলকলাম। নীলিমা আমার চালচলন সম্পর্কে বেশ ভালই জানে, অন্তত অন্য বন্ধুদের তুলনায় বেশি ই জানে।
আমি একটু হাস্য করে বললাম-
"তা এংগেজমেন্ট কবে? দাওয়াত কি পাব?"
নীলিমা যেন আকাশ থেকে পড়ল।
"মানে কি? কিসের এংগেজমেন্ট"
আমি সাথে সাথেই বলে উঠলাম-
"আরে পুরো ক্যাম্পাস জানে এখন না লুকালেই পারিস"
নীলিমার মুখের অবয়বে তীক্ষ্ণ ক্ষোভ আর রাগে লাল হওয়াটা কেমন অস্বাভাবিক লাগলো আমার কাছে।
"তুই আমার সাথে কোন কথা বলবিনা মেহেদী"
কথাটা বলে ই নীলিমা হনহন.করে হেটে চলে প্রতিউত্তরে কিছুই বলার সুযোগ হলো না। শুধু চেয়ে রইলাম ওর চলে যাওয়ার পথের দিকে। আমার কি দৌড়ে গিয়ে ওর পাশে হাটা উচিৎ ?

নীলাভ জোছনায় আমার সঙ্গী কে জানেন? নীলিমা। ওর উষ্ণ হাতের স্পর্শ মৃতপ্রায় হাতের কোষ গুলোকে প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছে। খোলা চুলে বাতাসে উড়ুউড়ু চেহারাটা কি মাধুর্য পূর্ণ এই এক লিখনিতে বিশ্লেষণ সম্ভব নয়। আমরা হাটছি, গন্তব্য জানিনা কেউ। আচমকা বজ্রপাতে নীলিমা শিউরে উঠে আমার বাহুতে আরো শক্ত করে নিজেকে আবৃত করল। আমি অভয় দিলাম "আছি আমি"।
কাজল চোখা এই মেয়ের প্রতি আমার ভালবাসা নিখাদ। আমি ওর দুটি হাত ধরে বললাম-
"নীলাম্বরী ভালোবাসি"
ও মুচকি হাসলো। আবার বললাম-
"ভালোবাসি নীলাম্বরী"
হঠাৎ নীলিমা রেগে গেল
"মেহেদী বন্ধুতে ভালবাসা আনলে, আমার পক্ষে বন্ধু সম্পর্ক রাখাও সম্ভব না"
আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। নিজেকে আবিষ্কার করি খাটের নিচে। এতবড় দুঃস্বপ্নে খাট থেকে পড়েছি, এটা ত কমই। ততক্ষনাত মনে এল এই কথাটা আজই ক্যাম্পাসে দীপকে নীলিমা বলেছিল।
আমি একরাশ হতাশা নিয়ে মোবাইল টা নিই। নীলিমার বন্ধু ত আমিও, যদি ওকে প্রোপোজ করি তাহলে বন্ধুত্ব টাও শেষ হয়ে যাবে। না না দরকার নেই, ছায়াসঙ্গী না হই অন্তত বন্ধু হয়েই থাকি।
কাল নীলিমার জন্মদিন, এখন রাত ১১ টা। মোবাইলটা নেয়ার কারণ আমার আগে উইশ করা। কিন্তু মোবাইলে? না। সরাসরি করব উইশ নীলিমা কে। ঝটপট পাঞ্জাবিটা পড়েই বেরিয়ে পড়লাম।
১২ টা বাজার ৫ মিনিট আগে গিয়ে পৌছালাম নীলিমার বাসার দিকে। ফোন দিয়ে অনেক গাঁইগুঁই করে বের করলাম৷ ওকে। নীলিমা হালকা সবুজ শাড়ি পড়া, পরিপাটি সাজ। এতো রাতে নীলিমা সেজেছে কেন?
আমার হাতে ২ টা কাগজের ফুল। এগুলো আমার বানানো, কাগজের কারসাজি একটু আধটু আমি নিকাম্মা পারি।
"চল চা খাব নীলিমা"
"এত রাতে? না আমার কাজ আছে আমি যাবনা। কি বলবি বল "
"আরে একটু দম নে। তোকে ত অনেক সুন্দর লাগছে"
"হুম"
"আচ্ছা তুই দাড়া আমি চা নিয়ে আসি, গলির শেষ মাথার দোকানটা খোলা"
"কি দরকার, থাক মেহেদী"
"আরে এক দৌড়ে যাব আর আসব ওয়েট"
আমি দৌড়ে গেলাম। প্রায় ১৫ মিনিট পর ফিরে এলাম দু কাপ চা নিয়ে। এসে দেখি নীলিমা নেই।
ফোন দিলাম সুইচ অফ। মনটাই খারাপ হয়ে গেল, উইশ ও করা হলনা। মোবাইলে একটা টেক্সট পাঠিয়ে বাসার পথে হাটা ধরলাম।
পিছনে একবার কি মনে করে তাকালাম দেখি নীলিমার ঘরের লাইটটা জ্বলে উঠেছে। আমি আবারো হাটা শুরু করলাম। হিম বাতাস বইছে, ঝড় হবে হয়তো। নিঃশব্দ প্রহরীদের মতো রাতটা এগলি ওগলি ঘুরে কাটালে মন্দ হয়না। রাতের ঢাকার রূপই অন্যরকম।
প্রকৃতি যেন তার নিভৃত সৌন্দর্যের কিছুটা এই ঘুমিয়ে থাকা শহরে ঢেলে দিয়েছে।
সোডিয়াম আলোর পসরা আর নিশ্চুপ নিরবতায় হঠাৎ ডেকে উঠা কুকুরের আওয়াজ, না বেশ।
"ধরনী তুমি শান্ত হলে জগৎ ভালো,
প্রলয় তুললে আধার কালো।"

এই কালো আধারে নীলিমা আর আমি হাতে হাত রেখে হাটছি। ব্যাপারটা কি খুব রোমান্টিক হয়ে যাবে?
পাগলামি ত অবশ্যই।
মোবাইলটা বেজে উঠল। নীলিমার ম্যাসেজ- "সাবধানে বাসায় যেও"
আমার ঠোটের কোনে মৃদু হাসি ফুটল। একটা ব্যাপার ম্যাসেজে খেয়াল করলাম, নীলিমা আমাকে তুমি বলে
সম্বোধন করেছে।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১২৭৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৪/০৭/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • আপনার নামের বানানটা হওয়া উচিত ছিল স্বপ্নিল। আপনার লেখার হাত ভালো , গল্প লিখুন। লেখা দেবার আগে বানান আর ছাপার ভুল দেখে নিন।
    • স্বপ্নীল মিহান ২৮/০১/২০১৬
      ধন্যবাদ। স্বাভাবত নামের বানানে ভুল ধরা হয়না বলেই জানতাম তাছাড়া আমি সবসময় স্বপ্নিল না লিখে স্বপ্নীল ই লিখি, এতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। আর পরের থেকে ভুল গুলো ধরিয়ে দিলে কৃতজ্ঞ থাকব।
  • ২৯/০৭/২০১৫
    সুন্দর আবেগময় ।
  • ভালো লাগলো।
  • next plz. Really fantastic...................
  • কিশোর কারুণিক ১৫/০৭/২০১৫
    পড়তে ইচ্ছা করছে
  • অভিষেক মিত্র ১৫/০৭/২০১৫
    পড়ে বেশ লাগলো। পরেরটার অপেক্ষায় থাকলাম।
 
Quantcast