www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

স্বপ্নযাত্রা

প্রকৃতি কত রঙে সাজে। এই ক্ষুদ্র জীবনটায় অনেক আক্ষেপ নিয়ে মানুষ তার অবধারিত জীবনটাকে বয়ে চলছে। প্রতিদিন একটি স্বপ্নের গঠন হয় অন্য একটি স্বপ্ন হত্যার মাধ্যমে। ঐ আকাশ ছোয়ার আশা মানুষগুলো বৃষ্টির ফোটা ছুয়ে অনুভব করে। এরপরও জীবনে একসময় মনে হয় -"জীবনটা এতো ছোট কেন?"
মেডিকেলের বিলাস বহুল কেবিনের জানালার গ্রিল ধরে দাড়িয়ে থাকা ঐ ছেলেটা যে আকাশ দেখছে সেও
প্রতিদিন বিকেলে সূর্যাস্তের সময় মৃত্যুর দিন গুনতে গুনতে একথাটাই বলে। ছেলেটার ব্রেইন ক্যান্সার।
আমার পাশের সিটে কয়েক ঘন্টা আগেও জিতু নামের ১৬ বছরের একটা ছেলে ঘুমুচ্ছিল তবে এখন মর্গে পরে থাকা নিথর একটা দেহ। অপারেশন থিয়েটারে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা গেছে ছেলেটি। ছেলেটার হাসিটা খুবই অমায়িক, এত সুন্দর হাসি বিধাতা মানুষকে কেবল তখনই দেয় যখন সে এই নশ্বর পৃথিবী
ছেড়ে যায়। আমি ছেলেটার লাশ দেখে ভেবেছিলাম ঘুমাচ্ছে বোধহয়।
সত্যিই ঘুমিয়ে গেল। আর জাগবেনা জিতু। জাগবেনা ওর আর্মিতে জয়েন করার সুপ্ত স্বপ্নটাও। ওর সমাধিতেই অর্পণ হল আরেকটি স্বপ্নের লাশ।

একজন অসুস্থ মানুষের প্রয়োজন হয় একটি হাতের, যে সবসময় সেই মানুষটির ছায়াসঙ্গী হয়ে থাকবে। কিন্তু এই হাসপাতাল নামের বিল্ডিং টা যেন অন্য আরেক জগৎ। হাত ঠিকই পায় অসুস্থ ব্যক্তি তবে তা নেহায়েত করুনার । দিপ্তী নামের মেয়েটার বোনমেরো হয়েছে। ফর্শা মেয়েটার চেহারা এখন এতটুকুনু হয়ে চুপসে গেছে। ও প্রতিদিন একটা বেলুনে কিনে ওর ইচ্ছে গুলো একটা চিরকুটে লিখে সেই চিরকুট সুতোতে বেধেঁ ছেড়ে দেয়। আকাশে উড়ে যায় ওর ইচ্ছে গুলো। ও ভাবে এগুলো চলে যায় ইচ্ছের দেশে যেখানে বিধাতা ওর চিরকুট পেয়ে সেগুলো পূর্ণ করেন, ওর ইচ্ছের মধ্যে ওর পাওয়ার কোন ব্যপার নেই সব অন্যদের জন্য। মেয়েটার বাবা উঠে পড়ে লেগেছে মেয়েকে সুস্থ করতে। ওর বাবা যখন বলে মা তুই ভালো হয়ে যাবি, দিপ্তী কিছু বলেনা শুধু একটা মুচকি হাসি দেয়।

এত মানুষ আশেপাশের যাদের নিভু প্রায় স্বপ্ন ফু দিলেই নিভে যাবে ঠিক এরই ভীড়ে নতুন স্বপ্নেরা উকি দেয়। দোতলার বিথীর মেঘলা দুপুরে ফুটফুটে একটা মেয়ে হয়েছে আমাকে নামকরণ করতে বলে আমি নাম দিলাম "প্রীতিলতা"।
আমার আরেকপাশে সিদ্দিক থাকত ও আমার বয়সী আজ ডাক্তার ওকে রিলিজ দিয়ে দিয়েছে ওর বাইপাস সার্জারি হয়েছিল। এখন ও চায় বাকিটা সময় ছেলেমেয়েদের বাচ্চাদের সাথে হাসিখুশি কাটাবে।
ওর শিশু সুলভ হাসি দেখে মনটা প্রশান্তিতে ভরে গেছে। তবে আক্ষেপ একটা এই কটা দিন অনেক কথা হয়েছে ওর সাথে এখন আমি একলা হয়ে
গেলাম।
রাতের আকাশে চাঁদটা যেন তার সবটুকু জোছনা ঢেলে দিয়েছে আজ, বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। চোখ বন্ধ করলে কারও স্পর্শ পাই। চেনা একটা গন্ধ কেবিনটা জুড়ে মৌ মৌ করে।
আকাশে কারও প্রতিচ্ছবি ভাসে। স্নিগ্ধ মায়াকাড়া সেই পরিচিত মুখটা ভেসে ভেসে উঠে। মনটা ডুকরে কেদে
উঠে। আমার স্ত্রী রেহানা, হ্যাঁ ঐ। ডায়েরীর পাতাজুড়ে যার স্মৃতি বন্দী সে আজ ডায়েরি ছেড়ে বাস্তবে চলাচল করে। আমি নির্বাক হয়ে দেখি। ছেলেকে বলিনা যদি বুড়ো বয়সের ভ্রম ভাবে।
কল্পনা সব? আচ্ছা থাকুকনা কল্পনা গুলো জীবন্ত হয়ে এই কঠিন বাস্তবে। প্রাণ ভরে নিশ্বাস নেক, কাগজের পাতায় আর কদিন ?

সকাল ৯ টায় আমার কিডনির অপারেশন। একটা কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে সেটার বিচ্ছেদ ঘটাবে ডাক্তার। নিজেদের প্রয়োজনে বিধাতার জিনিস নিতে যেমন কার্পণ্য করিনা আমরা, প্রয়োজনে ফেলে দিতেও কালক্ষেপন করিনা।
ইদানিং ঘুমের ঘোরে দেখি কে যেন বলে আমায় "মোশতাক সাহেব আপনার স্বপ্নগুলো বেচবেন? ভালো দাম
পাবেন " আমি কিছু বলতে চাইলেও বলতে পারিনা ছটফট করতে থাকি। লোকটা অট্টহাসি দিয়ে কি যেন একটা থলিতে ভরে তা কাধেঁ বয়ে নিয়ে যায়। আমি তাকিয়ে ছটফট করি কিছু করতে পারিনা, একসময় লোকটা অদৃশ্য হয়ে যায় আর আমার চারপাশ সাদা হয়ে যায়, শুভ্র সাদা......
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১১৮৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৮/০৫/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • অসাধারন লাগলো লেখক। একদম অন্য ধাঁচের লেখার ভঙ্গি।
  • মিজান রহমান ২৮/০৫/২০১৫
    চমতকার
 
Quantcast