www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

অবশেষে উপসংহার

বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা নেই আর রোদ ও
তেমন প্রখর নয় তবুও ইসহাক সাহেবের
হাতে পুরনো ময়লা হয়ে যাওয়া ছাতা।
খাটের
নিচে পড়ে থাকা পুরনো ছাতাটা বের
করে পরিষ্কার করলেন, পরিষ্কার
করতে গিয়ে দেখলেন এক পাশে ২
আঙ্গুল
পরিমাণ যায়গা ইঁদুর
কেটে ফুটো করে ফেলেছে। সেই
ফুটো নিজের হাতেই সারলেন। আজ
শায়লা বেগমের কথা খুব
মনে পরছে ইসহাক সাহেবের,
শায়লা বেগম
বেচে থাকলে হয়তো সেই
ফুটোটা সিলাই করে দিত। ইসহাক
সাহেবের একমাত্র ছেলে ইমরুল
যে কিনা জীবন মরণ
সন্ধিক্ষণে ঢাকা মেডিক্যাল এর
বেডে শুয়ে আছে।

৬ মাস আগে ইমরুল
বাবা মাকে না জানিয়ে বিয়ে করে এক
বড়লোক ঘরের মেয়েকে তাও শর্ত ছিল
তাকে চাইলে মধ্যবিত্ত ঘরের
বুড়ো বাবা মাকে তার ত্যাগ
করতে হবে ছেলেকে। ইসহাক দেখেছিল
৪ মাস আগে যখন শায়েলার মৃত্যুর ৪০ দিন
পূর্ণ হয়। ছেলের অবাধ্যতার
শোকে সারাদিন-রাত অঝোর কেঁদেই
যেত শায়লা মাঝে মাঝে অজ্ঞান
হয়ে যেত, পাশের বাসার
মহিলারা এসে অনেক বুঝিয়েছিল
সাহায্য করেছিল কিন্তু কে শুনে কার
কথা রাতে শোবার সময় যখন
কুকরে কুকরে কেদে উঠত তখন ইসহাক
সাহেব জিজ্ঞেস করত "কাদোঁ কেন
শায়লা! ইমরুল তো আর দূরে কোথাও না!
ঢাকাতেই আছে, যখন ডাকব চলে আসবে"
শায়লা বেগম অশ্রু চোখে ইসহাক
সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলত
"ছেলেটাকে অনেক
বকেছি আমি তাইনা ?" এই প্রশ্ন
শুনে ইসহাক সাহেব মনে মনে বলত-
"হায়রে মাতৃমন, সারাক্ষণ অসহ যন্ত্রনায়
থেকেও সন্তানের কোন
জিনিসটা খারাপ লাগল
তা নিয়ে ভেবে মরিস।"

একমাত্র
ছেলে মা বাবাকে না জানিয়ে বিয়ে করছে কেবল
মাত্র অর্থ সম্পদের লোভে পড়ে।
সরকারি চাকরি করে part-time কাজ করে,
বাসের টাকা, খাবার টাকা আর
নিজেদের ছোট্ট ছোট্ট
ইচ্ছে গুলি বিসর্জন দিয়ে পাই পাই
জমানো টাকায় ছেলেকে অনার্সের
সার্টিফিকেট
টা তুলে দিতে পেরেছেন
ইসহাক সাহেবের চখের কোনো জল
এসেছিল যেদিন
একটা চাকরি পেয়ে ইমরুলের
মুখে শুনেছিল "বাবা এখন
থেকে তুমি আর মা নামাজ রোজা কর মন
দিয়ে, আমাদের ছোট্ট এই সংসারের
পুরো দায়িত্ব এখন তোমাদের ছেলের
ঘাড়ে "
দ্বিতীয় বার এসেছিল যখন ইমরুল
বলেছিল "আমাকে পড়াশোনা আর
খাওয়ানোর দায়িত্ব ছিল তোমাদের
আর
সেটাই পালন করেছ তোমরা।"
ওকে নিয়ে দেখা ইসহাক সাহেবের
স্বপ্ন
গুলি সেদিনি হোচট খায় আর
থমকে যায়।

ইসহাক সাহেব ঢাকার বাস
ধরেছে ছেলেকে দেখতে যেতে। ইমরুল
এর দুটো কিডনি ই নষ্ট
হয়ে গেছে বাচারসম্ভাবনা নেই
বললেই
চলে। বড়লোক শশুর আর বউ
সেইযে হাসপাতালে ভর্তি করে গেছে আর
কতবার এসেছিল
ওকে দেখতে তা হয়তো তাদের ই
মনে নেই। ইসহাক সাহেবের বুক
ফেটে যাচ্ছে। অসীম কষ্ট হচ্ছে, বাসের
জানালা দিয়ে আকাশের
দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতে লাগলেন-
"শায়লা, যে কাধেঁ তুলে ইমরুল কে স্কুল
নিয়ে যেতাম উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এর জন্য
আজ তাকেই এই কাধেঁ নিয়ে কবরের ঐ
অন্ধকারে কেমনে রেখে আসব? এ যে কত
কষ্টের তা তুমি বুঝবেনা" নিজের
অজান্তেই চোখ থেকে তখন কয়েক
ফোটা জল বেরিয়ে আসে ইসহাক
সাহেবের , হয়তো দূরে থেকেও
শায়লা বেগম ও কেদে উঠে! মাতৃমন
তো.......
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৯২৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৪/১২/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • অসমাপ্ত গল্পটি ০৪/০১/২০১৫
    ভালিবাসি মা তোমায়
  • ভাল হয়েছে।
  • আহমাদ সাজিদ ২৬/১২/২০১৪
    ভালো..
  • সাইদুর রহমান ২৫/১২/২০১৪
    খু-ব সুন্দর লিখেছেন।
    অনেক শুভেচ্ছা।
  • রেজাউর রাতুল ২৫/১২/২০১৪
    লেখালেখির অভ্যাস চালিয়ে যাও মিহান । একদিন অনেক ভালো করবা ।
  • বাহ! সত্যি আপনার লেখার প্রশংসা করতে হয়। আর গল্পটি সম্পর্কে শুধু একটা কথাই বলবো এরকমটা যেনো গল্পেই হয়। শুভেচ্ছা রইলো।
  • সায়েম খান ২৪/১২/২০১৪
    চমতকার একটি গল্প,শুভেচ্ছা রইলো।
  • শিমুল শুভ্র ২৪/১২/২০১৪
    বেশ চমৎকার একটি কবিতা মন টা ভরিয়ে দিলেন ।
    অসম্ভব সুন্দর আবৃত্তি করার মত কবিতা ।
 
Quantcast