www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

দ্বিপ্রহরের ছায়ানট

-অভ্র আমি তোকে ভালবাসিনা।
-সত্যি বলছিস?
-আরে মিথ্যে কেন বলব? এতক্ষণ
তোকে যা বলছি সব সত্যি, তিল পরিমাণ
মিথ্যে নেই। বন্ধু হিসেবে যদি ধরিস তাহলে বলব তুই
সবচেয়ে বেস্ট। প্লিজ আমাকে এই
ভালবাসা বাসিতে টানিস না
-একবার মিথ্যে করে হলেও বল ভালবাসি?
-নাহ বলব না।
অভ্রর চেহারা টা দেখতেও বিরক্ত
লাগছে অথৈর। কেন আর কেমন করে যে ওর
মাথায় এই "প্রেম" নামক ভাইরাস টা ঢুকল
কিছুতেই বুঝছেনা অথৈ। দেখ সেই কখন
থেকে ক্যাবলার মত তাকিয়ে আছে অথৈর দিকে।
চক্ষু লজ্জাটুকুও বিসর্জন দিয়েছে।
অথৈ যাই বলে বসা থেকে উঠে হাটা দিল। কিছুদূর
যেতেই অভ্র
দৌড়ে এসে পাশাপাশি হাটতে লাগল। প্রতিবার
এভাবে অভ্র উঠে এসে পাশে একসাথে হাটে,
কেন জানি এই ব্যাপারটা অথৈর কাছে খুব
ভালো লাগে। কেন ভালো লাগে এই প্রশ্নের
উত্তর অথৈর জানা নেই। তবে এ নিয়ে এত
চিন্তা করতে কোন কারন নেই এমন ছোট
খাটো ভাললাগা যে কোন সময় লাগতেই পারে।
-হাতটা দে ধরি।
-এই না, ছুবি না আমার হাত।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
-হুম অনেক্ষন নিরবতা, দুজনেই চুপচাপ হাটছে।
নিরবতা ভাঙা দরকার। অভ্রই বলল-
-তাহলে তুই.....
-দেখ অভ্র আর বলিস না প্লিজ।
আমি তোকে ভালবাসি না।
-আরে আমি বলছি তাহলে তুই কি এখন
সোজা বাসায় যাচ্ছিস নাকি অন্য কোথাও...
-একটু নীলক্ষেত যাব, বই কিনব।
-আমি আসি?
-না থাক।
-আরে আসি না প্লিজ। তোর বডিগার্ড
হিসেবে গেলাম।
-উফফ! আচ্ছা চল।

সন্ধ্যা নামে নামে অবস্থা, আকাশটাও
মেঘলা। অভ্র বারবার আকাশে তাকাচ্ছে।
বৃষ্টি আসবে নাকি? মেঘে মেঘে নীলাচল
ছেয়ে গেছে। ফুটপাতের
দোকানি রা সতর্কভাবে কেউ দোকান বন্ধ
করছে কেউ সরাচ্ছে আবার কেউ উপরে পলিথিন
টানাচ্ছে। অথৈ ও সেগুলো দেখছে।
-অথৈ , চুলের ক্লিপ নিবি?
-কেন?
-এমিনি। ধর আমি গিফট করলাম তোকে.....বন্ধু
হিসেবে?
-আচ্ছা। অনেক কষ্টে এক
দোকানি কে রাজি করিয়ে অথৈ কে ৪ টা ক্লিপ
কিনে দিল অভ্র। যদি সেগুলোর দাম বেশি না খুবই
নগণ্য তারপরও অথৈ মনে মনে খুব খুশি হল এতে।
-না দিলেও পারতি।
-তোর চুল গুলি আটকানো অবস্থায় ভাল লাগে,
আমার স্বার্থতেই কিনে দিলাম।
-তোর স্বার্থ?
-হুম, ভালো লাগার জিনিস টা দেখতে পাচ্ছি।
এটা একধরণের স্বার্থই ত।
-হাহাহা, ফাজিল একটা। তুই এখন বাসায়
যাবি?
-হ্যা যাব, চল তোকে দিয়ে আসি।
-না থাক আমি খুকি না, একাই যেতে পারব।
অভ্র অথৈর দিকে তাকিয়ে মিটমিটেয়ে হাসছে।
অথৈ ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছে।
-ক্যাবলার মত হাসছিস কেন?
-তুই কানের দুল একটা ছোট আরেকটা বড় পড়েই
বাইরে চলে এলি? হাহাহা।
-সত্যি?
-হুম, আচ্ছা বাদ দে সুন্দর ই লাগছে।
-কি বলিস বেকুব। এমন দু রকমের জিনিস পড়াতেও
তোর ভালোলাগা লুকায়ে থাকে। ইস মানুষ জন
কি ভাবছে দেখে।
-দেখা যাবেনা দাড়া।
অভ্র অথৈর চুল নাড়াচাড়া করে এক কান
চুলের অদৌলে ঢেকে দিল। তারপর একটু
সরে গিয়ে দেখল কেমন লাগছে।
-আচ্ছা অভ্র বাদ দে, রাস্তায় কি করছিস।

আবার দুজন হাটছে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। অভ্র
আর অথৈ তার মাঝে ভিজে ভিজে হাটছে। অভ্র
দেখল বেশিক্ষণ
এভাবে চললে কাকভেজা হতে সময় লাগবেনা।
তার উপর অথৈর হাতে বই। ভিজলে ত পুরো শেষ।
মেইন রাস্তা টা পার হলেই সামনে দাড়ানোর
মত যায়গা পাওয়া যাবে।
-রাস্তা পার হতে আমার ভয় লাগে।
-বলিস কি? ফুটওভার ব্রীজ ও ত এখানে নাই।
গাড়িগুলাও স্পীডে যাচ্ছে।
আচ্ছা দে হাতটা দে আমার সাথে পার হবি।
অভ্র হাতটা বাড়াল, অথৈ একবার অভ্ররের
চোখের দিকে তাকাল। নারীরা চোখ দেখেই
পুরুষের মনের খবর বলে দিতে পারে, অথৈ ও
সে ক্ষমতার বাইরে পড়েনা। স্পষ্ট নিষ্পাপ
ভালবাসার ছাপ যেন অভ্রর দু চোখে জলছাপের
মত ভাসছে, অথৈ পড়ে নিল তা আর নির্দ্বিধায়
হাতটা অভ্রর হাতের মুঠোয় দিল।
সেদিনের মত যে যার বাড়ি গেল। দু দিন আর কোন
খোজ নেই অথৈর, ক্যাম্পাস, ফেসবুক, মোবাইলে সব
যায়গা থেকে হঠাৎ ই যেন গায়েব হয়ে গেল অথৈ।
কাউকে মিস করাটা একটা জ্বালা তার উপর
যদি সেই কাঙ্খিত ব্যাক্তি গায়েব হয়ে যায় তার
কোন খোজই না পাওয়া যায়
তাহলে সেটা বিষফোঁড়ারর মত
যন্ত্রণা দিতে থাকে। আর তা অভ্র খুব
ভালভাবে বুঝতেছে। ৩য় দিন অনেক কষ্টে অথৈ র
বাসার ঠিকানা বের করল অভ্র।
বিকেলে অথৈদের ফ্লাটে গিয়ে দেখা গেল
বাইরে দিয়ে তালা ঝুলছে। অভ্র খোজ
নিয়ে জানল অথৈ আর ওর বাবা মা ইন্ডিয়ার
চেন্নাই শহরে এখন।
আগামী সপ্তাহে আসবে হয়ত।
মনে বিষন্নতা নিয়ে অভ্র বেরিয়ে গেল সেখান
থেকে। রাত ৭ টা অভ্র বসে আছে অথৈর প্রিয়
যায়গাটাতে, এত রাতে টহল দেয়া পুলিশ
দেখলে সমস্যা হবে।
অভ্র উঠে বাড়ির পথে হাটা দিল। মনে অনেক
প্রশ্ন জমা হয়ে আছে, তার মধ্যে একটি এই
যে অথৈ অভ্রকে না জানিয়েই ইন্ডিয়া চলে গেল।
যদিও মনে কষ্ট পেয়েছে তাও নিজে যুক্তি দাড়
করাল হয়ত ভুলে গেছে হয়তো অথৈ।

ঘুম জরানো চোখে বেজে উঠা মোবাইল এর
কলটা রিসিভ করল অভ্র। ওপাশে মেয়েলি কন্ঠ
বলে উঠল -
-কিরে ক্যাবলা, এতক্ষণ লাগে তোর কল রিসিভ
করতে?
অভ্রর ঘুম নিমিষেই পুরোপুরি গায়েব হয়ে গেল,
মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখল
অন্যদেশি নম্বর। কন্ঠটা অথৈর চিনতে বিন্দুমাত্র
বিলম্ব হলনা অভ্রর।
-তুই? তুই কইরে অথৈ? এমনে কেউ
না বলে চলে যায়? জানিস এই কয়দিন কত
খুজছিলাম তোকে? গতকাল তোর বাসায়
গিয়ে জানলাম তুই দেশের বাইরে, না বল
এভাবে কেউ কাউকে কষ্ট দেয়?
-কষ্ট পাইছিস?
-হুম.....না।
-আচ্ছা সরি, আজ তোকে কিছু কথা বলব। হয়ত
পরে আর সময় পাব না।
-কি হইছে তোর? কন্ঠ ভাঙা ভাঙা। অসুস্থ?
নিশ্চয় ঠান্ডা লাগাইছিস। না?
ওপর পাশে অথৈর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার
আওয়াজ পেল অভ্র। চুপ হয়ে গেল ও।
-এত....এত কেন ভালবাসিস হ্যা?
কি আছে আমার মাঝে? কেন বাসিস বল?
-জানিনা।
-কেন আমি পেয়েও পাইনা কিছু? কেন
আমাকেই সবসময় হারাতে হয় বলতে পারিস?
-মানে?
-তুই জানিস আমি আমার বাবা মায়ের এডোপ
নেয়া সন্তান, আমি একজন এতিম মেয়ে অভ্র।
আমাকে এনারা ৪ বছর
বয়সে এতীমখানা থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত
পিতা-মাতার স্নেহে লালনপালন করছেন।
-সরি..... -সরি তুই কেন বলছিস। আমার
বলা উচিৎ, তোকে দুইটা সংবাদ দিব যার
একটা ভাল আরেকটা খারাপ।
-বল।
-আমিও তোকে ভালবাসি অভ্র। অভ্র চমকে উঠল,
উত্তেজনায় বলতে লাগল
-আবার বল।
-হুম আমি সত্যিই তোকে ভালবাসি কিন্তু.....
-কি কিন্তু?
-আমি চেন্নাই কেন আসছি জানিস?
-নাহ।
-আমি অসুস্থ। কঠিন কোন রোগ হইছে আমার।
আমি এখনো জানিনা রোগটা কি, তবে আম্মু আব্বু
আমাকে দেখলেই কেঁদে উঠেন। কেন জানি মনে হয়
আমি বাচবনা।
-কি বলিস এসব? একদম চুপ।
-হুম..এখন কি শ্রাবণ মাস?
-হ্যা।
-আচ্ছা অভ্র! যদি ফিরে আসি আমার
সাথে ছাদে বৃষ্টিতে একসাথে ভিজবি? তারপর
বৃষ্টি শেষে বিকেলের আকাশের রংধনু আমাদের
প্রিয় যায়গাটায় বসে আমায় তোর
কাধে রেখে দেখতে দিবি? আর মেইন
রাস্তা গুলি আমার হাতটি ধরে পার
করিয়ে দিবি।
অথৈ বুঝতে পারল অপরপ্রান্তে অভ্র কাঁদছে।
ছেলেদের কান্না বড়ই অদ্ভুত। খুব কষ্ট পেলেও
আওয়াজ করে কাঁদতে নেই,
তাহলে মেয়েলি ব্যাপার হয়। অভ্রর
ইচ্ছে করছে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে।
-অভ্র, ভাল থাকিস। রাখি। অভ্র কিছুই আর
বলতে পারলনা। অথৈ লাইন কেটে দিল।

৫ দিন পর মাঝ দুপুরে একটা ফোন এল অভ্রর
ফোনে।
-হ্যালো অভ্র?
-জি, কে?
-আমি অথৈর বাবা
-জি আঙ্কেল বলুন।
-বাবা তুমি কি স্কয়ার হসপিটালে একবার
আসতে পারবে?
-আঙ্কেল আপনারা ঢাকায়? অথৈ কই অ কেমন
আছে? অপর প্রান্ত নিরব, কোন জবাব নেই। অভ্র
আবার বলল।
-বলুন? কোথায় ও? কেমন আছে?
-বাবা, আমার মেয়েটা ত আর বাচবেনা।
-কি বলছেন, কি হইছে ওর।
-ওর দুইটা কিডনি ই নষ্ট হয়ে গেছে। তোমাকে খুব
দেখতে চাচ্ছে। আসবা তুমি? ওর সময় খুব কম।

অভ্র দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এল,
অথৈ কে দেখতে হবে, ওর যে অনেক
ইচ্ছে সেগুলো পূরণ করতে হবে। ওকে কোথাও
হারাতে দিবেনা অভ্র, এইত বৃষ্টি আসবে একটু পর
অভ্র আকাশে তাকিয়ে চিৎকার
করে বলতে লাগল"অথৈ অপেক্ষা কর তোর অভ্র
আসছে, প্লিজ আমাকে ছেড়ে কোথাও যাসনে,
প্লিজ"
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭৬৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২২/০৯/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • আবিদ আল আহসান ২৪/০৯/২০১৪
    অনেক সুন্দর
  • একনিষ্ঠ অনুগত ২৪/০৯/২০১৪
    সত্যিই ভালো লেখা...
  • ভালোবাসা কেনা এত অসহায়। সত‌্যি চোখ দুটো ছল ছল করে উঠলো। ভাই কেনো জানি না ইদানিং খুব বেশি ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছি। লেখাটা চমৎকার হয়েছে।
  • দারুণ, অপূর্ব হয়েছে।
 
Quantcast