ভুল জায়গায় টিপ
এমন কি কখনও হয়েছে যে কাউকে ম্যাসেজ দিয়েছেন মোবাইলে সেটা চলে গেছে অন্য কারো কাছে। পরবর্তীতে যা নিয়ে দারুন হৈ চৈ। তেমনি এক ঘটনা বলছি। কেমন লাগবে জানিনা তবুও শেয়ার করলাম। কিছু দিন আগের কথা আমাদের কোম্পানী ইন্টারন্যাশনাল, গ্লোবাল বিজনেস। কোম্পানীর ফ্যাক্টরী আছে বেশ কয়েক জায়গায়। America te 3M, Italy te Bozzetto Group, Italy te Garmon, Tarky, China Pakistan এভাবে ছড়িয়ে আছে। যাই হোক কোম্পানীর নাম Garmon & Bozzetto Group, বাংলাদেশে ছিল Mukashi Associates BD Ltd. আমি এ কোম্পানীর বিডি ম্যানেজার ছিলাম। এডমিন এইচআর হিসাবে। যাই হোক কয়েকজন বাংলাদেশী ছাড়া সবাই ফরেইনার। শুধু মার্কেটিং এ যারা তারা বাংলাদেশী আর উপরের লেভেলে সবাই ফরেনার। আমি শুধু ছিলাম বাংলাদেশী। তাদের সাথে পরিচয়ের সূত্রটা বলি তবে বুঝতে সুবিধা হবে। বাংলাদেশের একটি গ্রুপ অব কোম্পানী এশিয়ান গ্রুপ। এ নামে অনেক গ্রুপ আছে অবশ্য তেমনি এক গ্রুপ এশিয়ান অফিস ছিল নয়াপল্টন আর বারিধারা ডিওএইচএস। আমি তখন এশিয়ানের ম্যানেজার মানে সব গ্রুপের ম্যানেজার। আমার বস শুধু এমডি আর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর। মুকাশী তখন বাংলাদেশে এলো এশিয়ান পেল তাদের ডিলারশীপ। অামি পেলাম দায়িত্ব একদিন সুন্দর এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে হোটেল রেডিসনের কনফারেন্স রুমে কোম্পানী লঞ্চ করল। বাংলাদেশের সব টেক্সটাইল মিলস এর মালিক সহ গুরুত্বপুর্ন ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত হল সবাই ইনভাইটেড। আমাকে দেয়া হল সবাইকে ওয়েলকাম জানানো সেই সাথে প্রত্যেককে একটা করে গিফট বক্স ধরিয়ে দেয়া। সবাই ফরেনার লেকচার চলছে বিশাল ক্রীনে প্রডাক্ট ইন্ট্রােডিউস হচ্ছে। আমি সহ আমাদের এখান থেকে মি. সাইমন আর একজন হাবীব গিয়েছিলাম। আমাকে দিল দায়িত্ব যাই হোক অনুষ্ঠান চলার মাঝে মুকাশীর এমডি এসে সায়মন কে বলল, তোমার ছেলেটাকে বেশ পছন্দ হয়েছে আমাদের যদি কিছু মনে না কর তাহলে দিয়ে দাও আমাদের সাথে। এমডি অষ্ট্রালিয়ান কিন্তু পাকিস্থানী বংশদ্ভুত। তার নাম মি. তারেক দারুন একজন মানুষ। আমার বস বলল না এটা হবেনা ও যাবে না আর আমাদের এমডির সব কাজ সে করে পুরো কম্পানীর দায়িত্বে আছে এমডি রাজি হবেনা। আলাপের এ পর্যায়ে মুকাশীর কয়েকজন ডিরেক্টর এসে জয়েন করল, তারা বলল আমরা তো নতুন এখানে সব ঠিক মত চিনিনা, তাই ওকে সাথে দাও আমাদের সাথে ঘুরুক ফ্রী টাইমে। মাঝে মাঝে সাথে নিয়ে যাব মি. সায়মন বলল সেটা ঠিক আছে। তা কয়েকদিন গেলাম তাদের সাথে কখনও আশুলিয়া কখনও গাজীপুর, কখনও নারায়নগঞ্জ। এভাবে বেশ ভাল সম্পর্ক্ক হয়ে গেল। একদিন তারা আমার বসকে রিকোয়েষ্ট করে তাদের বিডি ম্যানেজার করে নিল। সবাই থাকে বাইরে ৬ মাস ১ বছরে আসে এদেশে। আমি এখানকার বস সব নিয়োগ টিয়োগ দিই। হটাৎ এল ঝামেলা রেজিষ্টার বিওআই, ইমপোর্ট লাইসেন্স নিয়ে হল ঝামেলা কারন ততদিনে এশিয়ান কে তারা তালাক দিল। আমি পড়লাম ঝামেলায়। সব কাগজ পত্র করতে বলল আমার নামে যেহেতু আমি বাংলাদেশী। আমি তো রাজি হইনা এটা কি করে সম্ভব। এশিয়ান দিল আরও এক ধাক্কা যে এরা এখানে ব্যবস্যা করছে বৈধ কাগজ পত্র ছাড়া ব্যাস শুরু হল ঝামেলা। সব জায়গায় আমাকে ফেস করে তারা থাকে লুকিয়ে। অনেক ঘটনা তার পর কোম্পানী ঠিক করল এভাবে নয় বৈধ কোন কোম্পানী লাগবে। এভাবেই পরিচয় স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের সাথে। তাদের এমডি কে বানালো এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আমাদের কোম্পানীর। আর একটা কথা তখন টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসাবে এসছে আমার আর এক বস পাকিস্থানী। শুরু হল আজব এক খেলা ষ্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের মালিক উনি বনানীতে থাকেন বয়স হবে ৬০ এর উপর। বদমেজাজি লোক প্রথম দিন থেকেই লেগে গেল আমার সাথে। আমার বস রেহান সে আমাকে বলল প্লীজ ভাই এ বুড্ডেকো আপ হেন্ডেল কি জে। বহত খাতারনাগ চীজ বাত করনেকা স্টাইল আচ্ছা নেহি যাই হোক আমার সাথে লাগল চরম ঝগড়া। সে যা বলে আমি মানি না আমি বললে সে রেগে যায়। আমার চ্যায়ারম্যান, এমডি, ডিরেক্টর, সবাই প্রতিদিন অনলাইনে মিটিং করে আমার সাথে আর বলে কেন এমন করছেন তার সাথে। আমি বললাম সব। তারা বলল বাদ দেন আপনি শুধু কাজ গুলো করান আমরা তাকে বলেছি যে আপনাকে ছাড়া কিছু হবেনা। এরপর বহু ঘটনা যা বলে শেষ করা যাবেনা। অনেকক্ষন বিরক্ত করলাম সবাইকে এখন আসল কথায় আসি। আমাদের কোম্পানী অফিস তখন গুলশান ১ সেখান থেকে ঝামেলার জন্য সিফট করলাম কয়েকদিনের মধ্যে বারিধারা জে ব্লকে। ফ্ল্যাট কিনে নিল কোম্পনী। আমাদের কাজ যত দ্রুত সম্ভব সব কাগজ পত্র তৈরী করা নয়ত কোম্পানী ব্ল্যাক লিষ্টেড হবে। যারা সিএ করেছেন তারা অডিট ফার্ম 'আবেদীন' মন্জু স্যারের নাম জানেন অবশ্যই। আমরা সব সময় ঐখানে করি অডিট ওমা এ বুড়া বলে এবার এখানে হবে না অনেক টাকা ওখানে দিতে হয়। আমার এক ফার্ম আছে পরিচিত সেখান থেকে করব। আমি বসদের জানালাম তারা বলছে ঠিক আছে যা বলে মেনে নিন কিন্তু কাজটা দ্রুত শেষ করুন। কোথাও গেলে আমি তার গাড়ীতে উঠিনা আর সে আমার গাড়ীতে উঠেনা আলাদা যাই সবজায়গায়। যাই হোক কাকরাইলের মতিন এন্ড কোং এ গেলাম আগে পিছে। দেখি বুড়ো বিরাট শার্ট পড়েছে ঝলমলা। মেজাজ খারাপ হয়ে গেল সাদা চুল একটা কাঁচা চুল নেই। আমাকে দেখে সেদিন হাত বাড়ালো আমিও হ্যান্ডশ্যাক করলাম। সেদিন তার পরিচিত অফিস তাই মনে হয় একটু ভিন্ন আচরন। গেলাম মতিন সাহেবের সাথে পরিচয় হল। তিনিও তাকে চিনেনা প্রথম দেখা অথচ আগে বলল অনেক দিনের পরিচয়। অনেক কথা হল। মতিন সাহেব দেখি বিরক্ত হয়ে গেছে একের পর এক প্রশ্নে। সে তারকাছে জানতে চাচ্ছে সব কিছু কিভাবে কি করবে কিভাবে কি করতে হয়? মতিন সাহেব আমার সাথে প্রথম কয়েক কথায় বুঝে গেছে আগে করিয়েছি তাই সে বলেছে দেখুন ভাই এত তো আমার সময় নেই উনার কাছ থেকে জানুন সে তো সবই জানে। ব্যাস বুড়োর চান্দি গরম আমি কেন বুঝি আগ বাড়িয়ে কেন বলতে গেলাম। আমি মোবাইলে সব আপডেট দিচ্ছি আমার বসদের। তারাও রিপ্লাই দিচ্ছে। কথার এক পর্যায়ে মেজাজ গেল খারাপ হয়ে লেখলাম এক ম্যাসেজ চ্যায়ারম্যানকে যে মিষ্টার সোয়েভ প্রবলেম ক্রিয়েট করছে। অডিট অফিস থেকে তাকে সব জানানোর পর সে তার মত করে সব করাতে চাচ্ছে যা অসম্ভব। এই লোকটা একটা উল্লুক কেন যে তাকে দিয়েছেন এই কাজে বুঝিনা। মতিন সাহেব হয়ত কাজটা করবেনা কারন তার বাজে ব্যাবহারের জন্য। এভাবেই লেখা ম্যাসেজ দিলাম সেন্ড বাটনে চাপ হটাৎ দেখি ম্যাসেজ সো করছে সোয়েভ সাহেবের নাম্বরে যাচ্ছে আমি তাে অবাক তাড়াতাড়ি কাটি ওমা পাশেই তো দেখি ম্যাসেজ রিসিভ এর সাউন্ড টিট টিট। কি করি এখন এ কি হল উনার নম্বারে চাপ লাগল কিভাবে? পাশে বসা আমি শুধু ভাবছি এখন যদি মোবাইলটা বের করে তাহলে কি বলব। দেখলাম হাতটা নিয়ে যাচ্ছে আলাপে এত মশগুল তাই আমি হাতের ফাইলটা এগিয়ে দিলাম বললাম একটু ধরুন আমি আসছি। কি করব কিভাবে বলব আপনার মোবাইলটা দিন। নাহ সেটা সম্ভব নয়। দিলাম ফোন রেহান কে বললাম প্রবলেম হয়ে গেছে সে বলে আবার কি? আমি বললাম সব সে তো হাসতে হাসতে গড়াগড়ি একি শোনালেন আপনি। আমি বললাম ভাই এখন কি করব? সে বলে কি বলব আমি কিছুই মাথায় আসছেনা। এটা কিভাবে সম্ভব। আমিও বলি ভাই এটা কিভাবে হল। সে বলে ম্যা আভি মেরা মোবাইল সুইচড অফ কররাহিহু যেসে ভি হো ইয়ে আপ ম্যানেজ কিজিয়ে। কি আর করা আমি তো আর যেতে চাইনা তিনতলায় এতক্ষনে তো সে নিশ্চয়ই পড়েছে। তবুও গেলাম যাওয়ার পর বলল চলুন উঠা যাক। আমিও বেশ ভাল ভাবে বললাম হ্যা চলুন। বুঝলাম এখনও দেখেনি। কথা বলতে বলতে নামলো নিচে আজ বিরাট খুশি আমাকে বলছে আপনি যে এতকিছু জানেন আগে তো বলেননি। আমি কিন্তু মাঝে মাঝে আপনার কাছ থেকে দেখবো আমি বলি হ্যা ঠিক আছে ঠিক আছে। বিদায় নিয়ে তাড়াতাড়ি ম্যাসেজ সেন্ড করলাম চ্যায়ারম্যান, এমডি, ডিরেক্টরদের। এসেছি মৌচাক মার্কেটের সামনে দেখি সোয়েভ সাহেব। ধরলাম বলল মৃদুল সাহেব একটু আসবেন খুব জরুরী। আমি বললাম আমি তো মৌচাক পার হয়ে গেছি সে বলে আমি ওয়েট করছি আপনি ঘুরিয়ে আসুন। কি করা গেলাম। সে জানতে চাইল আপনি কি কোন মেইল পাঠিয়েছেন কাউকে, আমি বলি না তো। সে বলে কাউকে মেইল পাঠাননি। আমি বলি মেইল তো সারাদিন পাঠাই কোন মেইল জানতে চাইছেন সেটা না বললে বুঝবো কিভাবে। সে বলে এখানে বসে এই সময়ে কাকে মেইল পাঠিয়েছেন। আমি বলি নাতো কাউকে পাঠাইনি, সে বলে কিছুই পাঠাননি, অবশ্যই পাঠিয়েছি তবে তা মেইল নয় ম্যাসেজ, বেচারা মুখ রাগে লাল। কাকে পাঠিয়েছেন এই মাসেজ। আমি বলি আমি টাইপ করছিলাম হটাৎ চাপ লেগে আপনার নাম্বরে চলে গেছে। কার নাম্বারে চলে গেছে। আপনার নম্বরেই চলে গেছে। আমার নামে কমপ্লীন লিখে আমাকেই পাঠালেন আর আমি এমন এমন। আমি বলি দেখুন সে বলে কাকে জানাচ্ছিলেন এমডি না চ্যায়ারম্যান, আমি ভাবলাম যা হয় হোক বললাম কাউকে নয় আমি রাগে লিখছিলাম বড়জোড় পাঠালে রেহান কে কারন ও আপডেট চাচ্ছিল। আমার নামে কমপ্লেন দিয়ে কি করবেন আমার রেহান কি করবে। আমি বললাম দেখুন আপনি শুধু শুধু উত্তেজিত হচ্ছেন, সে বলে উত্তেজিত হবনা আমার নামে কমপ্লীন লিখে আমাকে বলছেন তা আর আমি এমন। আমি বলি দেখুন সোয়েভ সাহেব যদি এ ম্যাসেজটা কাউকে দিতাম তাহলে একটা কথা ছিল আমি তো তা আপনাকেই দিয়েছি যেন এমনটি আর না করেন বেশ যুৎসই জবাব ভাল লাগল আমার। সে রাগে গিয়ে গাড়ীতে উঠল বলল, যতদিন আপনি থাকবেন ততদিন আমি আর আসবো না। আমি কিছু না বলে চুপচাপ আসছি খুব সম্ভব মালিবাগ রেললাইন পাড় হয়েছি অমনি চ্যায়ারম্যানের ফোন। আমি তো বুঝেছিই কি হয়েছে? ধরলাম বললাম ভাই সরি বলেন কি বলবেন, সে বলল কি করেছেন এটা কি ধরনের কাজ এটা, সে তো ভিষন রাগ করেছে। আর আপনি যার নামে কমপ্লিন লিখে তা তার নামে কিভাবে পাঠালেন আমি বললাম ভুল হয়ে গেছে সে বলে এটা কেমন ভুল এটলিষ্ট নম্বর দেখে তো সেন্ড করবেন তা না আপনি দেখলেন না কার নম্বরে যাচ্ছে। আর আমি তো বলেছি সবসময় মেইল পাঠাতে ম্যাসেজ কেন পাঠালেন। আমি বলি সরি ভাই যা হবার হয়ে গেছে এখন কি করব। সে বলল দেখুন সে সবাইকে কমপ্লীন করেছে আপনার নামে আমরা তো বিডিতে নেই যে সল্ভ করবো অতএব সব আপনাকেই করতে হবে। আমরা যেন সবাই শুনি ব্যাপারটা সল্ভ হয়েছে। তারপর তাদের কি হাসি। কি বলব। পরে আমি ফোন দিয়ে তার কাছে মাপ চেয়েছি এখনও যখন মনে পড়ে এ কথাটা তখন মনের অজান্তেই হেসে ফেলি।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
অনিরুদ্ধ বুলবুল ২৯/১০/২০১৪
-
সাইদুর রহমান ১২/১০/২০১৪ভুল জায়গায় টিপ
দিয়ে এমনই হয় প্রায়ই।
শুভেচ্ছা। -
ইঞ্জিনিয়ার সজীব ইমাম ১২/১০/২০১৪কিছু বলার নাই............
-
আফরান মোল্লা ১১/১০/২০১৪হা হা হা।
আপনি এত লিখতে পারেন! এতবড় এক্সিকিউটিভ হয়ে এত প্যাচালের সময় পান কি করে?
দাড়ি কমা হীন রচনা থামার নাম নেই। এক প্যারায় এত বড় রচনা কেউ লেখে (গরুর রচনা হলেও নাহয় কথা ছিল)?
সত্যি বলছি; রচনাটা বিরক্তিকর লেগেছে।
সত্য বলায় কিছু মনে করবেন না প্লিজ।