মায়াজাল ৩-১ উপন্যাস
বিকেলে সায়লার কিছুই ভাল লাগছিল না। কি করবে বুঝতে পারছিল না? ইদানিং খুব লোড সেডিং হচ্ছে। জেনারেটর আছে কত আর চালানো যায়। সেই কোন দুপুরে কারেন্ট চলে গেছে আসার খবরই নেই। অনেকদিন পর টেলিফোনের ডায়েরীটা হাতে নিল। অনেকের প্রয়োজনীয় নম্বর আছে এখানে ইদানিং কাউকে তেমন ফোন করা হয়না। পাতা উল্টালো মনসুর সাহেব নামে একজন বন্ধু ছিল আফসার সাহেবের বেশ ভাল সম্পর্ক্ক। সায়লাও তাকে চিনে বেশ ভাল করে। টেলিফোন সেট হাতে নিয়ে কানে দিয়ে দেখল সেটা ডেড হয়ে আছে। কি যে হচ্ছে মোবাইল থেকে নম্বরটি ডায়াল করল। মনসুর সাহেব আফসারের বিজনেস প্ল্যান সম্পক্কে অনেক কিছু জানে সে তার সাথে সবসময় আফসারের যোগাযোগ ছিল। কারন মনসুর সাহেব ইনকাম ট্যাকস্ প্যাবটশনার ও সেই সাথে অডিটর। আর তাই ব্যাবস্যা সম্পক্কিত সকল বিষয় তার সাথে শেয়ার করতো। এখন অবশ্য সে অনেক ব্যস্ত লোক। সায়লা পরিচয় দিতেই সে চিনতে পারল। দু এক কথা বলার পর সায়লা তাকে বিস্তারিত বলল। সব শুনে সে বলল ভাবী এসব ক্ষেত্রে অ্যাসেট রেখে কোন লাভ নেই। আফসার যে আপনাকে ডুবিয়ে রেখে গেছে তা আমি বেশ বুঝতে পারছি। এখন করার তো কিছু নেই। দেনা যা তা তো শোধ করতেই হবে।
সায়লা করুন গলায় বলল অ্যাসেট বলতে তো শুধু এই বাড়ীটা। আর কিছুই তো নেই।
মনসুর সাহেব বললেন বুঝতে পারছি। তবে গুলশানে দোতলা বাড়ী সেটাও লেক সাইডে বেশ ভাল দাম পাবেন। সে টাকা দিয়ে অন্য কোথাও না হয় ছোট খাট একটা ফ্ল্যাট কিনে নিবেন। তারপরও দেনা শোধ করে হাতে কিছু থাকবে। আপনি যদি চান তাহলে আমি ব্যাবস্থা করে দিতে পারি। আমার কাছে অনেক লোক আছে এসব জায়গায় বাড়ি কেনার। সায়লা হাফ ছাড়ল বলল, ঠিক আছে পরে আপনাকে জানাবো। মনসুর সাহেব ফোন রেখে দিলেন। সায়লা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল। তাহলে আর কিছুই করার নেই। এই বাড়িটাই বিক্্রী করতে হবে।
রাতে খাবার টেবিলে সায়লা সবাইকে বলল তোমরা খেয়ে বসার ঘরে বস আমি আসছি খুব জরুরী কথা আছে তোমাদের সাথে। সবাই নিশব্দে খেল। বসার ঘরে সবার মুখোমুখি হল সায়লা। শোনো তোমাদের বাবা অনেক ধারদেনা করে গেছেন বিশাল বড় বড় লোন আমাদের ব্যাবস্যা থেকে শুরু করে সব হাত ছাড়া হয়ে যাবে। নতুন করে সেগুলো চালানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এত টাকা আমরা পাবোও না। তাই তোমাদের লাইফ স্টাইল বদলাও। আমাদের হাতেও বিশেষ ক্যাশ টাকা নেই। আমাদের অ্যাসেট বলতে কিছু্ই নেই শোধ করবার। সব তোমার বাবা বন্ধ করে রেখে গেছেন। সবাই বলছে এই বাড়িটা বিক্রি করে দিতে।
শুনে কেউ চমকালো না। মনে হয় এরা আড়াল থেকে সবই শুনেছে। বা আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছিল। তবে মুখগুলো খুব গম্ভির ও থমথমে দেখালো। অাফরিনের চোখ গুলো ভিজে গিয়েছিল। তিন জনের মাঝে সেই সবচেয়ে নরম।
সায়লার চোখে জল নেই ঠিকই কারন তার কান্না পাথর হয়ে গেছে। কেঁদে কি হবে। আর এমন ঝামেলায় পড়েছে কাঁদার কথাও ভুলে গেছে। অনেক কষ্টে এমন একটা কথা সে বলল ওদের যা বলতে তার খুব খারাপ লাগছে কিন্তু বলতে হবে। তোমাদের সুখের দিন শেষ তাই কষ্টের জন্য তৈরী হও। তা আমি আগে থেকেই জানিয়ে রাখলাম।
হটাৎ মেরিনা বলল মা বাবা এ বাড়িতে মারা গেছেন।
সায়লা অবাক হয়ে বলল তাতে কি হয়েছে?
মেরিনা একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল কিছু না। হটাৎ যেন ঘুম থেকে জেগে উঠল সে বলল জাস্ট সেন্টিমেন্ট মা।
সায়লা কোন উত্তেজনা দেখাল না, কারন এদের কে বোঝাতে হবে ঠান্ডা মাথায়। মাথা গরম করা চলবে না। তাই সে বলল আমাদের সেন্টিমেন্ট আর মানায় না। খুব খুউব খারাপ অবস্থায় আমাদের রেখে গেছেন তোমাদের বাবা। তোমরা বুঝতে পারছো না কতটা অসাহায় হয়ে গেছি আমরা। আমাদের সব থেকেও কিছুই নেই। এ বাড়ি ছাড়তে আমারও ইচ্ছে নেই কিন্তু কি করবো বিকল্প কোন রাস্তা নেই।
আফসার সাহেবের তিন ছেলে মেয়েই যেন শক্ত পাথর হয়ে গেছে। ঘাড় শক্ত হয়ে গেছে কেউ কিছু বলছেনা। এটা বোঝা গেল যে এমন ডিসিশন কারো মন মতো হয়নি।
সায়লার ভেতরটা টনটন করছিল অনেকক্ষন। ছেলে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থেকে হটাৎ তার ভিতরটা মোচর দিয়ে উঠল। পিতৃ হারা এই তিন অসহায় শিশুদের জন্য বা কে জানে হটাৎ কোন কারনে তার দু চোখ বেয়ে অঝোড়ে জল আসতে শুরু করল। সে অার নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। বাড়ি মানে কি শুধু ইট কাঠ পাথর? আর কিছু নয়। বাড়ি মানে সকলে মিলেমিশে একাকার হয়ে থাকা নয়। এ বাড়ি কবেই তাদের আত্মার আত্বীয় হয়ে গেছে। আফরিন, মেরিনা, রকি, আফসার যেমন ঠিক অনেকটা তেমনি। সায়লা অঝোরে কাঁদতে লাগল। মাকে কি ভাবে সান্তনা দিতে হবে বা কি করত হবে তা তার ছেলে মেয়েদের জানা নেই। তেমন পরিস্থিতিতে পরেনি কোন দিন কেউ। তাই তারা নিশব্দে উঠে চলে গেল। সায়লা দেখল তার তিন সন্তান উঠে চলে গেল যেন তারা তার অদ্ভুত অনাত্বীয় সন্তান।
চলবে।
সায়লা করুন গলায় বলল অ্যাসেট বলতে তো শুধু এই বাড়ীটা। আর কিছুই তো নেই।
মনসুর সাহেব বললেন বুঝতে পারছি। তবে গুলশানে দোতলা বাড়ী সেটাও লেক সাইডে বেশ ভাল দাম পাবেন। সে টাকা দিয়ে অন্য কোথাও না হয় ছোট খাট একটা ফ্ল্যাট কিনে নিবেন। তারপরও দেনা শোধ করে হাতে কিছু থাকবে। আপনি যদি চান তাহলে আমি ব্যাবস্থা করে দিতে পারি। আমার কাছে অনেক লোক আছে এসব জায়গায় বাড়ি কেনার। সায়লা হাফ ছাড়ল বলল, ঠিক আছে পরে আপনাকে জানাবো। মনসুর সাহেব ফোন রেখে দিলেন। সায়লা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল। তাহলে আর কিছুই করার নেই। এই বাড়িটাই বিক্্রী করতে হবে।
রাতে খাবার টেবিলে সায়লা সবাইকে বলল তোমরা খেয়ে বসার ঘরে বস আমি আসছি খুব জরুরী কথা আছে তোমাদের সাথে। সবাই নিশব্দে খেল। বসার ঘরে সবার মুখোমুখি হল সায়লা। শোনো তোমাদের বাবা অনেক ধারদেনা করে গেছেন বিশাল বড় বড় লোন আমাদের ব্যাবস্যা থেকে শুরু করে সব হাত ছাড়া হয়ে যাবে। নতুন করে সেগুলো চালানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এত টাকা আমরা পাবোও না। তাই তোমাদের লাইফ স্টাইল বদলাও। আমাদের হাতেও বিশেষ ক্যাশ টাকা নেই। আমাদের অ্যাসেট বলতে কিছু্ই নেই শোধ করবার। সব তোমার বাবা বন্ধ করে রেখে গেছেন। সবাই বলছে এই বাড়িটা বিক্রি করে দিতে।
শুনে কেউ চমকালো না। মনে হয় এরা আড়াল থেকে সবই শুনেছে। বা আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছিল। তবে মুখগুলো খুব গম্ভির ও থমথমে দেখালো। অাফরিনের চোখ গুলো ভিজে গিয়েছিল। তিন জনের মাঝে সেই সবচেয়ে নরম।
সায়লার চোখে জল নেই ঠিকই কারন তার কান্না পাথর হয়ে গেছে। কেঁদে কি হবে। আর এমন ঝামেলায় পড়েছে কাঁদার কথাও ভুলে গেছে। অনেক কষ্টে এমন একটা কথা সে বলল ওদের যা বলতে তার খুব খারাপ লাগছে কিন্তু বলতে হবে। তোমাদের সুখের দিন শেষ তাই কষ্টের জন্য তৈরী হও। তা আমি আগে থেকেই জানিয়ে রাখলাম।
হটাৎ মেরিনা বলল মা বাবা এ বাড়িতে মারা গেছেন।
সায়লা অবাক হয়ে বলল তাতে কি হয়েছে?
মেরিনা একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল কিছু না। হটাৎ যেন ঘুম থেকে জেগে উঠল সে বলল জাস্ট সেন্টিমেন্ট মা।
সায়লা কোন উত্তেজনা দেখাল না, কারন এদের কে বোঝাতে হবে ঠান্ডা মাথায়। মাথা গরম করা চলবে না। তাই সে বলল আমাদের সেন্টিমেন্ট আর মানায় না। খুব খুউব খারাপ অবস্থায় আমাদের রেখে গেছেন তোমাদের বাবা। তোমরা বুঝতে পারছো না কতটা অসাহায় হয়ে গেছি আমরা। আমাদের সব থেকেও কিছুই নেই। এ বাড়ি ছাড়তে আমারও ইচ্ছে নেই কিন্তু কি করবো বিকল্প কোন রাস্তা নেই।
আফসার সাহেবের তিন ছেলে মেয়েই যেন শক্ত পাথর হয়ে গেছে। ঘাড় শক্ত হয়ে গেছে কেউ কিছু বলছেনা। এটা বোঝা গেল যে এমন ডিসিশন কারো মন মতো হয়নি।
সায়লার ভেতরটা টনটন করছিল অনেকক্ষন। ছেলে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থেকে হটাৎ তার ভিতরটা মোচর দিয়ে উঠল। পিতৃ হারা এই তিন অসহায় শিশুদের জন্য বা কে জানে হটাৎ কোন কারনে তার দু চোখ বেয়ে অঝোড়ে জল আসতে শুরু করল। সে অার নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। বাড়ি মানে কি শুধু ইট কাঠ পাথর? আর কিছু নয়। বাড়ি মানে সকলে মিলেমিশে একাকার হয়ে থাকা নয়। এ বাড়ি কবেই তাদের আত্মার আত্বীয় হয়ে গেছে। আফরিন, মেরিনা, রকি, আফসার যেমন ঠিক অনেকটা তেমনি। সায়লা অঝোরে কাঁদতে লাগল। মাকে কি ভাবে সান্তনা দিতে হবে বা কি করত হবে তা তার ছেলে মেয়েদের জানা নেই। তেমন পরিস্থিতিতে পরেনি কোন দিন কেউ। তাই তারা নিশব্দে উঠে চলে গেল। সায়লা দেখল তার তিন সন্তান উঠে চলে গেল যেন তারা তার অদ্ভুত অনাত্বীয় সন্তান।
চলবে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
বিজয় রায় ১০/০৯/২০১৪ভাল লাগতেছে মৃদূলদাদা।।চালিয়ে যান
-
একনিষ্ঠ অনুগত ১০/০৯/২০১৪শেষ পর্যন্ত সায়লা কে কাঁদিয়েই ছাড়লেন।।
বেশ ভালো হচ্ছে। -
মাসুম মুনাওয়ার ০৯/০৯/২০১৪মুগ্ধ হলাম।আশা করি আমরা আপনার নিয়মিত ভাল লেখা পাব।