www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মায়াজাল-(৩) উপন্যাস

তিন

মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মত অবস্থা। যে খবর পাওয়া গেল তাতে মনে হবে কোন এক সমূদ্রের মাঝে ডিঙ্গি নৌকায় বসিয়ে খাবার না দিয়ে ছেড়ে দেবার মত অবস্থা। কোন কুল কিনারা নাই বাচার আশা নাই। এমন এক পরিস্থিতি। তাহসান মামা যখন থলের বেড়ালটা বের করলেন তখন সায়লা কি করবে বুঝতে পারল না? সে দিন বেশ ঝড় বৃষ্টি হচ্ছিল তাহসান মামা এল সকাল এগারটা নাগাদ। এসে সোজা উপরে উঠে গেল ডাইনিং হলে তখন সায়লা বসা। ওয়েদার বদল হচ্ছে তাই একটু শীত শীত ভাব যেন। তাহসান মামা স্যাুট পড়ে এসেছিলেন। বেশ ভারী কাপড় অন্তত এই সময়ে স‌্যুট ঠিক মানায় না তার মাঝে বৃষ্টির দিনে। তবে যাই হোক এবার মনে হয় ঠান্ডা খুব বেশী পড়বে।
বেলা এগারটা এ সময়টা কিন্তু বেশ ব্যস্ত থাকার সময়। রান্না দেখিয়ে দেওয়া, ঘরদোড় গোছানোর কাজ দেখা, গোসল করা নানান ঝামেলা। তার মাঝে ইদানিং সায়লার সময় কাটে না টিভি দেখে আর কত ভাল লাগে। তাই সময় কাটাতে ওল সুতা দিয়ে সোয়াটার বানাচ্ছিল রকির জন্য। গতবছর আফরিনকে দিয়েছিল একটা। এবার রকির জন্য। খুব সাদামাটা ডিজাইন। মেরুন রং এর ওলের সাথে ডার্ক ব্লু কম্বিনেশন করে বুনছেন। শুধু বুকে একটা মনোগ্রাম থাকবে। অনেকটা অডোমাসের মতো। মিলির খুব প্রিয় জিনিষ সোয়াটার বোনা। তার মার কাছ থেকে শিখেছিল। আর তাই বাড়ীর প্রতিটা লোকের একাধিক সোয়াটার আছে যা সায়লা দিয়েছে। মুখ না তুলেই জিঞ্গেস করলো কিরে তাহসান, কোথা থেকে এলি এত সকাল সকাল।
-ওফ আপা অনেক ঘুরে এলাম। আর বলোনা কি যে ঝামেলায় আছি তার মাঝে তোমাদের কাজ। একেবারে লেজে গোবরে অবস্থা। শোন আপা ব্যাপারটা হোপলেস।
-সায়লা যেন একটু কুকড়ে গেল। কেন ! মানে কি রকম?
-অবস্থা খুব খারাপ। এ বাড়িরটার দরুন এখনও অনেক আউটষ্ট্যান্ডিং লোন রয়ে গেছে। দুলা ভাইয়ের অফিসে বিস্তর লায়াবিলিটিজ। পার্টনার শীপ বিজনেস যে গুলো তারা তেমন সাহায্য করছেনা। তারা বলছে অনেক টাকা তারা পাবে। আর দুলাভাইয়ের নিজের ব্যাবস্যার অবস্থা কি বলব? পাঁচটা প্রোজেক্ট মার খেয়ে গেছে। ব্যাংক চাপ দিচ্ছে। ফ্যাক্টরী বন্ধ হবার উপক্রম। পাওনাদার ঘুরে ঘুরে যাচ্ছে। মতিঝিলের অফিসের ভাড়া চার মাস বাকী। ষ্টাফদের বেতন বাকী। অফিসের সব মালামাল বিক্রি করলেও বেতন শোধ হবেনা। এত টাকা ঋণ রেখে গেছে। কি ভাবে কি করবে?
-আমাকে তো কিছু বলতো না কখনও।
-কত কিছু কিনেছে। কি ভাবে টাকা উড়িয়েছে। একবার ভাবো তো। কয়েকটা ব্যাংকে ঋণ করে গেছে। বাড়ীঘর যা ছিল সবই তো বাধা ব্যাংকে। গাড়ীও তো ব্যাংক লোনে কেনা।
-সায়লা কি করবে? উল বোনা থামিয়ে সামনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কি যেন ভাবতে লাগল? সেই ভাবার কোন অর্থ নেই।
-তাহসান মাথা নেড়ে বলে এর কোন মানে নেই। কোন মানে হয়না।
-এখন আমরা কি করবো?
-দেনা মেটাতে গেলে কত কোটি টাকা লাগবে তা একাউন্ট থেকে কালেক্ট করতে হবে। আর যদি সব ব্যাবসা চালু কর তাহলে এই মুহুর্তে বিশাল অঙ্কের টাকা প্রয়োজন। ব্যংক ইন্সটলমেন্ট সব উফ আমি ভাবতে পারছিনা। তার মাঝে কিছু যে বিক্রি করবে সে উপায় নেই সব তো বাধা আছে। শুধু বাকী আছে এ বাড়িটা। এ বাড়ি বিক্রি করলে না হয় চল্লিশ বা পঞ্চাশ কোটি টাকা পাবে। তাতে দেনা শোধ হবেনা।
-আমার গয়না যদি বিক্রি করি তাহলে।
-তোমার গয়না আর কত টাকা পাবে।
-হবেনা। তবে আপাদত এই বাড়িটাই বিক্রি করতে হবে এ ছাড়া তো কোন রাস্তা আমি দেখছিনা।
-সে তো বুঝতে্ই পারছি কিন্তু একবার ভাবতো। তিনটা বাচ্চা নিয়ে আমি কোথায় গিয়ে দাড়াবো। আর সংসার বা চলবে কিভাবে?
-ওঠবার ভাবনা কি? আপাদত আমার বাসায় উঠবে। তারপর দেখা যাবে আস্তে ধীরে।
-সায়লা মাথা নাড়লো আমার ছেলে মেয়েদের তুই চিনিসনা। ওরা কোথাও যাবেনা। কারও ডিপেন্ড হওয়া ওদের ধাতে নেই। বাপের স্বভাব পেয়েছে। ও আইডিয়া ছাড়তে হবে।
-তাহলে কি করবে? আপা আমার কাছে তেমন টাকা নেই না হয় আমি দু কোটি টাকা দিলাম কারন আমার ব্যাস্যা তো জান কি অবস্থা।
-নাহ নাহ তোর টাকা দিতে হবে না। দরকারে আমি চাইবো।
-কিন্তু এক দু কোটিতে তো কিছু হবেনা। তাহলে কি করবে। তুমি সিচুয়েশন বুঝতে পারছোনা। অফিসের ওরা একসময় পাগল হয়ে বাসায় এ্যাটাক করতে পারে। কেস ফেস কত ঝামেলা।
সায়লা নিষ্ফল উল আর কাঁটায় ভুল ঘর তুলতে লাগল আনমনে। ভ্রু কোচকাল। খুব স্তিমিত গলায় বলল, খুব পারছি। আমি এখন অগাধ জলে রে। এই তো বলছিস!
-বলতে গেলে তাই আপা।
-এ বাড়ী বিক্রি করলে কত পাওয়া যাবে।
-ইটস ডিপেন্ড। কারন প্রয়োজন তোমার তাই দাম উঠবে না। এমনিতে তো শ কোটি হবার কথা পঞ্চাশ ষাট কোটি হবে।
- তার থেকে দেনা শোধ করলে কত থাকবে আমার হাতে।
-দাড়াও একাউন্টসে ফোন করে দেখি ওরা কমপ্লিট করেছে নাকি।
-শুধু বেতন, ভাড়া, লোন যা পারসোনাল ব্যাংকের গুলো ছাড়া।
-তাহসান ফোন করলো একাউন্টসে ডিটেইলস চাইল। ফ্যাকস্ পাঠাতে বলল।
-মিলি বলল তুই নাস্তা খা আমি আসছি। দেখি চিন্তা করে কি করা যায়?
ফ্যাকস্ চলে আসছে। দেনা সব মিলিয়ে প্রায় চল্লিশ কোটি টাকা।
-সায়লা বলে চল্লিশ কোটি। এত কেন।
-দুলাভাইয়ের পারসোনাল লোনের হিসাব দিয়েছে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে নেয়া, পুরো ষ্টাফের বেতন, ভাড়া, প্রোজেক্ট গুলো মার খাওয়াতে ঋণ করেছে অনেক।
যদি ষাট কোটি টাকা বাড়ি বিক্রি করে পাওয়া যায় তার থেকে চল্লিশ দিলে বিশ কোটি থাকবে। হিসেব করে চললে তোমার চলে যাবে। আর যদি ঠিক মত ইনভেষ্ট করতে পার তাহলে ভালই চলবে। তবে এখনকার মত ভাল নয়। কারন কিছুই কিন্তু থাকবেন ব্যাবস্যা। সব তো শেষ।
-এ ছাড়া আর কোন রাস্তা নেই।
-তোমার আর এ্যাসেট কোথায় আপা। কি দিয়ে দেনা শোধ করবে বলো? শুধু বাড়িটার কথাই বলছি কারন বাড়িটাই শুধু তোমার নামে। দুলাভাইয়ের নামে কাগজ থাকলে অবশ্য জান বের হয়ে যেত।
তোমার ভাগ্য ভাল যে জামাইবাবু এ বাড়িটি তোমার নামে দিয়েছিল। দি ওনলি ক্লেভার থিং হি এভার ডিড।
সায়লা হটাৎ ভাইয়ের দিকে কঠিন চোখে তাকালো সোজা হয়ে বসে বলল ঝলসানো ঝাঝালো গলায় বলল আচ্ছা লোন বা দেনা সব তো ওর। কিন্তু বাড়িটা তো আমার। আমি যদি ওর দেনা শোধ না করতে চাই। তাহলে আমাকে কি করবে? লোন ও করেছে দায় ওর থাকবে। তার প্রোপাটি ব্যাবস্যা গাড়ি সব তো নিয়েই নিচ্ছে তাহলে আমি কেন আমার শেষ জিনিষটা ছেড়ে দিব।
-তাহসান এবার একটু হাসলো, স্বামী স্থ্রীর এ্যাসেট আলাদা করে কিছু নেই। সবই সমান। এসব বলে কি পার পাওয়া যাবে। ওটা হয়না তবুও আমি লয়ারের সাথে একটু বুঝি। তোমার কাছে নিয়ে আসি কথা বলে দেখ। দেনা যদি শোধ করতে না চাও তাহলেও বিপদ আছে। দুলাভাই চড়া সুদে ঋণ গুলো নিয়েছে। যত দেরি করবে তত সুদ বাড়বে। সবার পাওনাই বাড়বে। আমার ধারনা তখন যদি সবাই মিলে ক্রিমিনাল কেস করে বসে তখন আদালত এ বাড়িটাও ক্রোক করবে। পাওনাদাররা এত সহজ পাত্র নয় আপা।
-তারা কারা তুই কি কিছু জানিস। কে কে আছে বা আমি চিনি কাকে কাকে?
সবাই কে তো আমি চিনি না তবে তোমাদের অফিসের ওরা চিনে। দুলাভাই একটা হউজিং সোসাইটির ব্যাবস্যা দিয়েছিল জানো তুমি। সেটাও হয়নি। অনেকের টাকা এডভান্স নেয়া আছে। সে সব নিয়ে বিস্তর ঝামেলা হবে। কি থেকে যে কি হবে আমার মাথায় কুলুচ্ছে না। অথচ দেখ সে তার ব্যাবস্যা ঠিক মত দেখতোই না। শেষে তো বাড়িতেই বসে থাকল।
-সায়লা সোয়েটারে ভুল ঘর ধরেই আনমনে কাটা গেথে যেতে লাগল। আমাকে আর কয়েকটা দিন ভাবার সময় দে। মনে হচ্ছে বাড়িটাই বিক্রি করতে হবে। কত কষ্ট করে এ বাড়িটা সে করেছিল। এটা গেলে আমাদের আর কিছুই থাকবেনা। কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে এ বাড়ি জুড়ে।
-শোন আপা তুমি কি আমাকে আবার ভিলেন ভাবছো নাতো। একটা পরিবারের কাছে নিজের বাড়ি কিরকম সেন্টিমেন্টাল জিনিষ হয় তা কিন্তু আমি জানি। তার মাঝে এমন একটা জায়গায়। যা একবার হাত ছাড়া হলে আর কোন দিন পাওয়া যাবেনা। আর চাইলেও কোন ভাবেই সমস্যা সমাধান করা যাচ্ছেনা। অন্য কোন পথ খোলা নেই বলেই আমি বাড়ি বিক্রির কথা বলছি। ভিলেনের মতো শোনালেও আসলে আমি যা বলছি তা
প্যাকটিক্যাল। তোমার বাড়ি তুমি বিক্রি করবে কিনা ভেবে দেখ অবশ্যই তা ভাল করে। পরে আমাকে দোষ দিতে পারবেনা। আর পারলে একটু অফিসে গিয়ে খোজ খবর নাও।
-আমি কোন দিন যাইনি তো অফিসে।
-যাওনি বলে যে যাওয়া যাবেনা তা তো নয়।
-তবুও আমি অতসব বুঝিনা তাই তো তোকে বলছি। তুই খুব ভাল করে সব কিছু বোঝ। সব খোজ খবর নে।
-আচ্ছা আপা দুলাভাইয়ের ভাইদের কাছ থেকে কোন সাহায্য পাওয়া যাবেনা।
-মনে হয়না। একজন তো এসেছিল সেদিন সে চলে গেল। যাবার সময় বলে গেল বাংলাদেশে আর আসবোনা। সম্পর্ক্ক নাকি শেষ। আসলে ওদের দোষ নেই। তোর দুলাভাই কারও সাথে সম্পর্ক্ক ও ভাবে রাখতো না। কারও কাছে যেতোও না। তাই তারা কেউ আসবে না। লাশ দেখতে এসেছিল ব্যাস তাদের দায়িত্ব শেষ। কেউ কি জানতে চেয়েছে কখনও এই তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে আমি কোথায় যাব কি করবো। কেউ খোজ নেয়না পর্যন্ত।
-আচ্ছা আপা আমি দেখি কি করতে পারি। তুমি আমার বোন আমি জান প্রান দিয়ে সব করবো যতটা আমার সাধ্যে কুলায়।
-তুই ছাড়া আর কাউকে তো পাচ্ছিও না রিলায়বল। কষ্ট হলেও তোরই করতে হবে সব।
-তাহসান মনে মনে খুশি হল। যাই হোক আপা তাকে গুরুত্ব দিয়েছে।
-আচ্ছা শোন তুই বসে টিভি দেখ আমি গোসল সেড়ে আসি। তারপর খাবার টেবিলে কথা বলি।
-যাই করো আপা যত খুশি সময় নাও। তবে মনে রেখ সেটা যেন লিমিট ক্রস না করে। তাহলে সবার বিপদ।
-ছেলে মেয়ে আছে ওদের ও মতামত আছে বুঝিস তো। সবার মনের অবস্থা।
-তা বুঝি তবে
-যাই হোক তুই বস আমি দেখি কি করা যায়? আমি যে কিসের মাঝে আছিরে তা তোরা বুঝবি না।

চলবে........
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭৯৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৪/০৯/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • বিজয় রায় ০৭/০৯/২০১৪
    আজকের কাহিনীটাও ভাল লাগল ।।
    মৃদুল ভাইয়া আমার গল্প"অনন্ত শিকড়ে ভালবাসি তোমায়" লিখতে যাচ্ছি আশা করি চেয়ে থাকবেন গল্পটি ।।
  • একনিষ্ঠ অনুগত ০৬/০৯/২০১৪
    কাহিনীটা খুবই উচ্চবিত্ত পরিবারের। হজম করতে কষ্ট হয়... যাইহোক ভালো এগুচ্ছে।
  • সাইদুর রহমান ০৫/০৯/২০১৪
    কবিতায় যেমন উপন্যাসেও
    আপনার বেশ প্রতিভা।
    চলুক মৃদুল ভাইয়া।
 
Quantcast