মায়াজাল পর্ব ২-১ (উপন্যাস)
দুই-১
পৃথিবীতে সব মহিলারই স্বামী সম্পর্ক্কে কিছু না কিছু অভিযোগ থাকে। সায়লাও ব্যাতিক্রম নয়। তাই তারও অনেক অভিযোগ আছে। মেরিনা জানে তার বাবা শুধু, বাবা হিসাবে অসাধারন একজন বাবা ছিলেন। কিন্তু স্বামী হিসাবে অতটা নয়। শুধু তাই কেন! বন্ধু হিসাবে, আত্বীয় হিসেবে, মালিক হিসেবে, বা মনিব হিসাবে অনান্য মানুষের কাছে হয়ত ততটা ভাল ছিল না।
একজন অসহায় স্ত্রীর মত সায়লার অবস্থান ছিল। তার একক কোন সিদ্ধান্ত নেবার সামর্থ ছিলনা, কোন কিছু নির্ধারন করতে পারেনা। কোন মানুষ কেমন তা বিচার করতে পারেনা। কোন দিন কি রান্ন হবে তা নির্ধারন করতে পারেনা। সায়লা ভিসিডি বা এলডি চালাতে জানেনা। মোবাইলে শুধু কথা বলা আর শোনা ছাড়া আর কিছু করতে পারেনা। সায়লা চৌধুরীর এসব বিষয়কে কখনও নেগেটিভ সাইড বলে ভাবে না মেরিনা। কে জানে এসবের কোন প্লাস পয়েন্টও থাকতে পারে।
সায়লা মেয়ের দিকে অপলক চেয়ে ছিল অনেক্ষন। স্বামী আত্মহত্যা করলে সন্তানরা কি ভাবে বাবার মৃতু্র পিছনে মায়ের গঞ্জনা আছে। সায়লা আজকাল ছেলেমেয়েদের দিকে যেরকম ভয়ে ভরা চোখে তাকায় তাকে ইংরেজীতে বলে শীপিশ।
মেরিনার পরনে এখনও ছাই রংএর ট্রেকস্যুাট, পায়ে কেডস। আচ এগুলো খুলার খেয়ালও ছিলনা।
চিঠিটার কথা কি সবাইকে বলা দরকার। সবার তো জানার অধিকার আছে।
মেরিনা ইয়ৎ ভু্রু কুচকে বলল, না। এ চিঠির আর এখন কোন মূল্য নেই। এটা আমার কাছে থাকবে।
- কি দরকার এ চিঠি তোর কাছে রেখে। এটা কি কোন ভাল চিঠি।
মেরিনা মাথা নেড়ে বলে ভাল খারাপ কিছু নয়। থাক না মা।
-আমার কেমন যেন ভয় করছিল চিঠিটা পড়তে। কি সব চিঠিতে লিখেছে। কেমন মানুষ ছিল তোর বাবা।
পঁচিশ বছর ঘর করার পর এমন কথা সায়লাই বলতে পারে। এমন অকপট ভাবে স্বামী সম্পক্কৃে এভাবে বলতে পারে।
মেরিনা বলল মাই ড্যাড ওয়াজ ফ্যান্টাসটিক। সিম্পলি ফ্যান্টাসটিক একজন মানুষ। যার কোন তুলনা চলেনা।
সায়লা চা খেল। খুব ধীরে ধীরে।
-তুই আবার আজ থেকে দৌড় ঝাপ শুরু করলি?
-হ্যা মা।
-ওসব করলে তাের চেহারা বড্ড রুক্ষ হয়ে যায়। তাই আমার পছন্দ নয়।
-তা যায়, তাতে কি?
সায়লা মাঝে মাঝে ভ্রু কোঁচকায়। ওটা তার মূদ্রাদোষ। এখনও কোঁচকান। বাইরের ঘরে পুরো দেয়াল জুড়ে মস্তবড় এক শো-কেস। সায়লার চোখ এখন সেখানে স্থির।
শো-কেসে দেখার কিছু নেই। যা আছে তা সবই পুরনো। নতুন কিছু নেই যা দেখার মত। তবুও তাকিয়ে আছে আসলে মানুষ স্মৃতির মধ্যে ডুবে থাকে অতীতকে খুজে পেতে। এটাই সহজ পদ্ধতি। অতীতও তার চারদিকে মিলেমিশে একাকার এক সময়হীন উল্টাপাল্টা ছঁঁবি বিছিয়ে দেয়।
সায়লাকে এ অবস্থায় রেখে মেরিনা নিচে চলে এল।
বাথরুমে ঢুকে গীজার চালু করল। হট অ্যান্ড কোল্ড শাওয়ার তার খুব প্রিয়। তারপর পোশাক না ছেড়েই সে বাবার ঘরখানা ভাল করে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল। আনমনে সব চোখ বুলাতে লাগল। দেখার কিছুই নেই এবং বহুবার দেখা সব। তবুও একমাসে বাবার সব জিনিষ সে ছুয়ে ছুয়ে দেখেছে। অনুভুতি পেয়েছে বাবার। এ ঘরে বাবার কোন ছবি নেই। আফসার সাহেব ছবি তুলতে ভাল বাসতো না। আরও অপছন্দ করতো ফটো ডিসপ্লে করতে। বাবাকে মন করার জন্য অবশ্য মেরিনার কোন ছবি দেখার দরকার পড়েনাই।
দুটো বুক কেস কারন বাবার বই পড়ার পোকা ছিল। একটা খুব সুন্দর ডিভান। ছোট হাফ সেক্রেটারিয়েট টেবিল, ভারী একটা হতল ওয়ালা কাঠের চেয়ার। বসার জন্য এক সেট সোফা। একটা কাঠের আলমারী ব্যাস। ডায়েরী লেখার কোন অভ্যাস ছিল না আফসার সাহেবের। তবে মেরিনা খুজে বেশ কয়েকটা ডায়েরী পেয়েছে। বেশীর ভাগের মাঝেই কোন লেখা নেই। তবে দু একটা পাতায় কিছু মন্তব্য করা আছে যেমন দু বছর আগে তারিখ দেয়া একটা পাতায় লেখা ওঃ ইটস গোয়িং টু বি অ্যান অফুল ডে। গড। আর একটাতে ছিল, আননোন। আর একটাতে ছিল অ্যাডিউ স্মোকিং।
সিগারেট ছাড়তে আফসার চৌধুরীর বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। অনেক কষ্ট করতে হয়েছে লবঙ্গ চিবিয়ে ছিবড়ে করে ফেলত আর ঝালের চোটে উঃ আহঃ করতো।
অদ্ভুত মন মানসিকতা বোঝা যাচ্ছে না। মরবেই যদি তাহলে এত কষ্ট করে সিগারেট ছাড়লো কেন। বাচার জন্য তো। তাহলে!!! কিছু বোঝা যাচ্ছিল না। সায়লা বলেছিল তোমার কোন লাইফ প্ল্যানিং নাই।
গোসলের আগে মেরিনার কিছু ব্যায়াম, কিছুক্ষন যোগ ব্যায়াম এটা তার অভ্যাস। মেরিনা যন্ত্রের মত সব শেষ করলো তার পর বাথটাবে নেমে গোসল শেষ করল। ঘরে এসে জিনস আর টিশার্ট পড়ল।
সিড়িতে প্রবল পায়ের শব্দ তুলে মেরিনার ঘরে হামলে পড়ল দুজন। রকি আর আফরিন।
রকি বলল বাবার সুইসাইড নোট পাওয়া গেছে?
মেরিনা বলল হ্যা দেখবি।
মেরিনা বের করে দিল।
রকি তাদের তিন ভাই বোনের মাঝে সবচেয়ে শান্ত। একটু মোটা সোটা। খুব খেতে ভালবাসে। রকির সঙ্গে বাবার একটু আড়াআড়ি ছিল বরাবরই। রকি বাবার ছেলে থেকে বেশী ছিল মায়ের ছেলে। রকির ভুবনজুড়ে ছিল মা। এখনও সে মায়ের কোল ঘেষে থাকে শোয়। এখনও বায়না করে। বাবাকে বেশ ভয় পেত। তাই একটু এড়িয়ে চলতো।
আফরিন আর মেরিনা দু বোন। আফরিন বড় আর মেরিনা ছোট। মেরিনা সবার ছোট। তবে আফরিনের সাথে মেরিনার কোন মিল নেই। আফরিন বেশ ফর্সা যাকে বলে উজ্জ্বল ফর্সা। অসম্ভব সুন্দরী। সে তুলনায় মেরিনার গায়ের রং একটু ময়লাই। আফরিনের চেহারা অসাধারন তুলতুলে একটা ভাব আছে। আর মেরিনার একটু রুক্ষ আর কঠোর। মনের মিলও তাদের দুজনের নেই। বেশ আলাদা।
চলবে............................
আজ বিকাল ৩টায় কবিতা ক্লাবের পক্ষ থেকে আমার কবিতা ফ্রেরন্ড এফ এম এ পাঠ করে শোনালো কবিতার নাম অনিঃশেষ পথ মিউজিকের সাথে। ভাল লাগছে খুব।
পৃথিবীতে সব মহিলারই স্বামী সম্পর্ক্কে কিছু না কিছু অভিযোগ থাকে। সায়লাও ব্যাতিক্রম নয়। তাই তারও অনেক অভিযোগ আছে। মেরিনা জানে তার বাবা শুধু, বাবা হিসাবে অসাধারন একজন বাবা ছিলেন। কিন্তু স্বামী হিসাবে অতটা নয়। শুধু তাই কেন! বন্ধু হিসাবে, আত্বীয় হিসেবে, মালিক হিসেবে, বা মনিব হিসাবে অনান্য মানুষের কাছে হয়ত ততটা ভাল ছিল না।
একজন অসহায় স্ত্রীর মত সায়লার অবস্থান ছিল। তার একক কোন সিদ্ধান্ত নেবার সামর্থ ছিলনা, কোন কিছু নির্ধারন করতে পারেনা। কোন মানুষ কেমন তা বিচার করতে পারেনা। কোন দিন কি রান্ন হবে তা নির্ধারন করতে পারেনা। সায়লা ভিসিডি বা এলডি চালাতে জানেনা। মোবাইলে শুধু কথা বলা আর শোনা ছাড়া আর কিছু করতে পারেনা। সায়লা চৌধুরীর এসব বিষয়কে কখনও নেগেটিভ সাইড বলে ভাবে না মেরিনা। কে জানে এসবের কোন প্লাস পয়েন্টও থাকতে পারে।
সায়লা মেয়ের দিকে অপলক চেয়ে ছিল অনেক্ষন। স্বামী আত্মহত্যা করলে সন্তানরা কি ভাবে বাবার মৃতু্র পিছনে মায়ের গঞ্জনা আছে। সায়লা আজকাল ছেলেমেয়েদের দিকে যেরকম ভয়ে ভরা চোখে তাকায় তাকে ইংরেজীতে বলে শীপিশ।
মেরিনার পরনে এখনও ছাই রংএর ট্রেকস্যুাট, পায়ে কেডস। আচ এগুলো খুলার খেয়ালও ছিলনা।
চিঠিটার কথা কি সবাইকে বলা দরকার। সবার তো জানার অধিকার আছে।
মেরিনা ইয়ৎ ভু্রু কুচকে বলল, না। এ চিঠির আর এখন কোন মূল্য নেই। এটা আমার কাছে থাকবে।
- কি দরকার এ চিঠি তোর কাছে রেখে। এটা কি কোন ভাল চিঠি।
মেরিনা মাথা নেড়ে বলে ভাল খারাপ কিছু নয়। থাক না মা।
-আমার কেমন যেন ভয় করছিল চিঠিটা পড়তে। কি সব চিঠিতে লিখেছে। কেমন মানুষ ছিল তোর বাবা।
পঁচিশ বছর ঘর করার পর এমন কথা সায়লাই বলতে পারে। এমন অকপট ভাবে স্বামী সম্পক্কৃে এভাবে বলতে পারে।
মেরিনা বলল মাই ড্যাড ওয়াজ ফ্যান্টাসটিক। সিম্পলি ফ্যান্টাসটিক একজন মানুষ। যার কোন তুলনা চলেনা।
সায়লা চা খেল। খুব ধীরে ধীরে।
-তুই আবার আজ থেকে দৌড় ঝাপ শুরু করলি?
-হ্যা মা।
-ওসব করলে তাের চেহারা বড্ড রুক্ষ হয়ে যায়। তাই আমার পছন্দ নয়।
-তা যায়, তাতে কি?
সায়লা মাঝে মাঝে ভ্রু কোঁচকায়। ওটা তার মূদ্রাদোষ। এখনও কোঁচকান। বাইরের ঘরে পুরো দেয়াল জুড়ে মস্তবড় এক শো-কেস। সায়লার চোখ এখন সেখানে স্থির।
শো-কেসে দেখার কিছু নেই। যা আছে তা সবই পুরনো। নতুন কিছু নেই যা দেখার মত। তবুও তাকিয়ে আছে আসলে মানুষ স্মৃতির মধ্যে ডুবে থাকে অতীতকে খুজে পেতে। এটাই সহজ পদ্ধতি। অতীতও তার চারদিকে মিলেমিশে একাকার এক সময়হীন উল্টাপাল্টা ছঁঁবি বিছিয়ে দেয়।
সায়লাকে এ অবস্থায় রেখে মেরিনা নিচে চলে এল।
বাথরুমে ঢুকে গীজার চালু করল। হট অ্যান্ড কোল্ড শাওয়ার তার খুব প্রিয়। তারপর পোশাক না ছেড়েই সে বাবার ঘরখানা ভাল করে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল। আনমনে সব চোখ বুলাতে লাগল। দেখার কিছুই নেই এবং বহুবার দেখা সব। তবুও একমাসে বাবার সব জিনিষ সে ছুয়ে ছুয়ে দেখেছে। অনুভুতি পেয়েছে বাবার। এ ঘরে বাবার কোন ছবি নেই। আফসার সাহেব ছবি তুলতে ভাল বাসতো না। আরও অপছন্দ করতো ফটো ডিসপ্লে করতে। বাবাকে মন করার জন্য অবশ্য মেরিনার কোন ছবি দেখার দরকার পড়েনাই।
দুটো বুক কেস কারন বাবার বই পড়ার পোকা ছিল। একটা খুব সুন্দর ডিভান। ছোট হাফ সেক্রেটারিয়েট টেবিল, ভারী একটা হতল ওয়ালা কাঠের চেয়ার। বসার জন্য এক সেট সোফা। একটা কাঠের আলমারী ব্যাস। ডায়েরী লেখার কোন অভ্যাস ছিল না আফসার সাহেবের। তবে মেরিনা খুজে বেশ কয়েকটা ডায়েরী পেয়েছে। বেশীর ভাগের মাঝেই কোন লেখা নেই। তবে দু একটা পাতায় কিছু মন্তব্য করা আছে যেমন দু বছর আগে তারিখ দেয়া একটা পাতায় লেখা ওঃ ইটস গোয়িং টু বি অ্যান অফুল ডে। গড। আর একটাতে ছিল, আননোন। আর একটাতে ছিল অ্যাডিউ স্মোকিং।
সিগারেট ছাড়তে আফসার চৌধুরীর বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। অনেক কষ্ট করতে হয়েছে লবঙ্গ চিবিয়ে ছিবড়ে করে ফেলত আর ঝালের চোটে উঃ আহঃ করতো।
অদ্ভুত মন মানসিকতা বোঝা যাচ্ছে না। মরবেই যদি তাহলে এত কষ্ট করে সিগারেট ছাড়লো কেন। বাচার জন্য তো। তাহলে!!! কিছু বোঝা যাচ্ছিল না। সায়লা বলেছিল তোমার কোন লাইফ প্ল্যানিং নাই।
গোসলের আগে মেরিনার কিছু ব্যায়াম, কিছুক্ষন যোগ ব্যায়াম এটা তার অভ্যাস। মেরিনা যন্ত্রের মত সব শেষ করলো তার পর বাথটাবে নেমে গোসল শেষ করল। ঘরে এসে জিনস আর টিশার্ট পড়ল।
সিড়িতে প্রবল পায়ের শব্দ তুলে মেরিনার ঘরে হামলে পড়ল দুজন। রকি আর আফরিন।
রকি বলল বাবার সুইসাইড নোট পাওয়া গেছে?
মেরিনা বলল হ্যা দেখবি।
মেরিনা বের করে দিল।
রকি তাদের তিন ভাই বোনের মাঝে সবচেয়ে শান্ত। একটু মোটা সোটা। খুব খেতে ভালবাসে। রকির সঙ্গে বাবার একটু আড়াআড়ি ছিল বরাবরই। রকি বাবার ছেলে থেকে বেশী ছিল মায়ের ছেলে। রকির ভুবনজুড়ে ছিল মা। এখনও সে মায়ের কোল ঘেষে থাকে শোয়। এখনও বায়না করে। বাবাকে বেশ ভয় পেত। তাই একটু এড়িয়ে চলতো।
আফরিন আর মেরিনা দু বোন। আফরিন বড় আর মেরিনা ছোট। মেরিনা সবার ছোট। তবে আফরিনের সাথে মেরিনার কোন মিল নেই। আফরিন বেশ ফর্সা যাকে বলে উজ্জ্বল ফর্সা। অসম্ভব সুন্দরী। সে তুলনায় মেরিনার গায়ের রং একটু ময়লাই। আফরিনের চেহারা অসাধারন তুলতুলে একটা ভাব আছে। আর মেরিনার একটু রুক্ষ আর কঠোর। মনের মিলও তাদের দুজনের নেই। বেশ আলাদা।
চলবে............................
আজ বিকাল ৩টায় কবিতা ক্লাবের পক্ষ থেকে আমার কবিতা ফ্রেরন্ড এফ এম এ পাঠ করে শোনালো কবিতার নাম অনিঃশেষ পথ মিউজিকের সাথে। ভাল লাগছে খুব।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মুস্তাকিম মান্না ০৪/০৯/২০১৪সুন্দর
-
একনিষ্ঠ অনুগত ৩১/০৮/২০১৪নিয়মিত পড়ছি... এবার আফসার সাহেবের আত্মহত্যার কারণটা তবে খুঁজে বের করা উচিৎ সকলের...
-
রূপক বিধৌত সাধু ২৯/০৮/২০১৪ভাল লাগল।