মায়াজাল পর্ব ২
দুই
আফসার চৌধুরী মারা যাবার পর কোন সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি। বা সুইসাইড কোন নোট রেখে গিয়েছিলেন কিনা তা তন্ন তন্ন করে খোজা হয়েছে। কোথাও পাওয়া যায়নি। কেন এমন করল বা কি তার কারন? কোন কিছুই ক্লিয়ার নয় কেউ।
তাহসান মামা শেষ অবধি বিরক্তি নিয়ে বলেছিল। হি ওয়াজ এ ভেরি ইররেসপনসিবল গাই। নয়ত নিজের পরিবার কে কেউ এভাবে নাজেহাল করে সেটাও মারা গিয়ে। সে কি চেয়েছিল মৃতু্য পর তার ফ্যামেলি হ্যারাস্ড হোক। কোন ভদ্রলোক কিংবা বিবেকবান মানুষ কি তা চাইতে পারে?
বিরক্ত সায়লাও হয়েছিল। তবে তা প্রকাশ করেনি। তবে তার চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছিল সে খুব বিরক্ত।
কেন নোটটা তখন পাওয়া যায়নি তা ধীরে ধীরে আজ সকালে মেরিনার কাছে পরিস্কার হল। বাবা সবসময় একগাদা বই বিছানায় নিয়ে শুয়ে শুয়ে পড়তো। ঘুম পেলে বই উল্টে রেখে বেড সুইচ অফ করে পাশ ফিরে ঘুমিয়ে যেত। সকাল বেলায় বিছানা থেকে বই গুলো সরিয়ে আবার বুক কেসে রেখে দিত ঠিকে কাজের মেয়ে সুবেদা। সে দিনও সে তাই করেছিল। সুবেদা তো আর জানতো না যে বইএ সুইসাইড নোট ভাজ করে গুজে রাখা আছে। সে যখন আফসার সাহেবের বিছানা থেকে বই সরায় তখন যে আফসার সাহেব মরে পড়ে আছে একথা সে বুঝতে পারেনি। আফসার সাহেব রোজকার মতোই কাত হয়ে কোলবালিশ জড়িয়ে শুয়ে ছিল। প্রায় চার দিন তুমুল বৃষ্টির পর সেদিনই পরিস্কার আকাশে ভোরের রোদ দেখা দিয়েছিল। চমৎকার আবহাওয়া ছিল। তাই মেরিনা জগিং করতে বের হয়েছিল। সেদিন খবরের কাগজে খুন জখম মারামারির দুর্ঘটনা খবর ছিল খুব কম। সেদিন একটি টিয়ে পাখি পাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল ট্যা ট্যা করে। আর একটি দোয়েল শিস দিয়ে যাচ্ছিল একের পর এক। কালো গোলাপ গাছে শরতের প্রথম ফুল ফুটেছিল তাই দেখে আফরিন উল্লাসে ডাকছিল মা দেখে যাও গাছে কালো গোলাপ ফুল।
বাবাহীন পৃথিবীতে দু মাস কেটে গেল। কাটবে বলে বিশ্বাস ছিল না মেরিনার। নোটটা হাতে নিয়ে মেরিনা খুব ধীর পায়ে রান্দায় আরও আলোর মধ্যে এসে দাড়ালো। টানা হাতের লেখা গুলো খুবই জোড়ালো কোন হাত কাপেনি স্পষ্ট করে লেখা। বাগানে শুনতে পেল ফুলে ফুলে মৌমাছির শব্দ। বাড়ীর গ্যারেজের ঠিক পিছন দিকে রাজ মিস্তিরা একটা ঘর তৈরী করেছিল টিনের বাড়ি করার সময় তাদের থাকার জন্য। সেটা আর ভাঙ্গা হয়নি। আজও আছে ঘরখানা। তবে সে খানে বাড়ির অব্যাবহূত জিনিষ পড়ে থাকে। সেই ঘরের ভিতরে বিশাল এক মৌমাছির বাসা বেধেছিল।
আফসার সাহেব বেচে থাকতে রোজ ঐ চাক টা দেখে আসতো। নরম রোদে দাড়িয়ে মেরিনা একটু ভাবলো।
মরবার আগে বাবা কি একবারও ভাবেনি মেরিনার কথা। কি করে থাকবে তার মেয়েটা তাকে ছাড়া। সে খুব কাঁদবে? মেরিনার খুব কষ্ট হবে? একটুও ভাবল না বাবা?
কোকিলটা যখন আবার আর এক দফা ডাকা শুরু করলো তখন মেরিনা টের পেল সে কাঁদছে। তার চোখ বেয়ে অঝোড়ে পানি পড়ছে।
চোখের পানি মুছে দোতালায় উঠে এল। চায়ের গন্ধ পাচ্ছে। রুটি সেকার গন্ধ পাচ্ছে, বাসন কসন মাজার শব্দ কানে আসছে।
সায়লা ডায়নিং টেবিলে বসা একা। সামনে চা।
মেরিনা মায়ের সামনে কাগজটা রেখে খুব স্বাভাবিক গলায় বলল এই নাও মা বাবার সুইসাইড নোট।
সায়লা খুব অবাক হয়ে কাগজটা হাতে নিয়ে বলল, কী এটা? কী বললি?
- বাবার সুইসাইড নোট। পড়ে দেখ।
হাতটা একটু কেঁপে গেল কিনা বোঝা গেলনা। সায়লা কাগজের ভাজ টা খুলতে একটু সময় নিল। লেখাটা পড়তে প্রয়োজনের চেয়ে সময় আরও অনেকটা বেশী লাগল। তারপর উৎকন্ঠ গলায় বলল, এই তো! কোথায় ছিল এটা? কোথায় পেলি?
- একটা বইয়ের মধ্যে। সুবেদা ওটা বুক কেসে তুলে রেখেছিল।
সায়লা সভয়ে, আতঙ্কের সাথে আফসার চৌধুরীর জোরালো হাতের লেখা কয়েকটি লাইনের দিকে চেয়ে খেকে অসহায় মুখখানা তুলে মেরিনাকে যখন বলল "এখন এটা দিয়ে আর কি হবে?" ঠিক তখনই মেরিনার অনেকদিন বাদে হটাৎ অবাক হয়ে লক্ষ করল তার মা কী অসম্ভব সুন্দরী!!
ছোটোখাটো, ক্ষীনাঙ্গঅ এক মহিলা এখন মনে হচ্ছে কোন সিনেমার নায়িকা না ঠিক নায়িকা নয় অপ্সরা। হ্যা অপ্সরা তবে হুর নয়। সায়লার চেহারায় একটা আভিজাত্যের ভাব আছে। ছিমছাম গোছানো চেহারা। বেশ মার্জিত। দেখলে ভক্তি চলে আসে। হুর হুর ভাব নেই। তবে তার সৌন্দয্যের ঝাঁজ আছে, সেই সাথে আছে আক্রমন।
মেরিনা হাত বাড়িয়ে কাগজটা হাতে নিতে নিতে বলল তুমি চা খাও। এটা আমার কাছে থাকুক।
চলবে..................
আফসার চৌধুরী মারা যাবার পর কোন সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি। বা সুইসাইড কোন নোট রেখে গিয়েছিলেন কিনা তা তন্ন তন্ন করে খোজা হয়েছে। কোথাও পাওয়া যায়নি। কেন এমন করল বা কি তার কারন? কোন কিছুই ক্লিয়ার নয় কেউ।
তাহসান মামা শেষ অবধি বিরক্তি নিয়ে বলেছিল। হি ওয়াজ এ ভেরি ইররেসপনসিবল গাই। নয়ত নিজের পরিবার কে কেউ এভাবে নাজেহাল করে সেটাও মারা গিয়ে। সে কি চেয়েছিল মৃতু্য পর তার ফ্যামেলি হ্যারাস্ড হোক। কোন ভদ্রলোক কিংবা বিবেকবান মানুষ কি তা চাইতে পারে?
বিরক্ত সায়লাও হয়েছিল। তবে তা প্রকাশ করেনি। তবে তার চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছিল সে খুব বিরক্ত।
কেন নোটটা তখন পাওয়া যায়নি তা ধীরে ধীরে আজ সকালে মেরিনার কাছে পরিস্কার হল। বাবা সবসময় একগাদা বই বিছানায় নিয়ে শুয়ে শুয়ে পড়তো। ঘুম পেলে বই উল্টে রেখে বেড সুইচ অফ করে পাশ ফিরে ঘুমিয়ে যেত। সকাল বেলায় বিছানা থেকে বই গুলো সরিয়ে আবার বুক কেসে রেখে দিত ঠিকে কাজের মেয়ে সুবেদা। সে দিনও সে তাই করেছিল। সুবেদা তো আর জানতো না যে বইএ সুইসাইড নোট ভাজ করে গুজে রাখা আছে। সে যখন আফসার সাহেবের বিছানা থেকে বই সরায় তখন যে আফসার সাহেব মরে পড়ে আছে একথা সে বুঝতে পারেনি। আফসার সাহেব রোজকার মতোই কাত হয়ে কোলবালিশ জড়িয়ে শুয়ে ছিল। প্রায় চার দিন তুমুল বৃষ্টির পর সেদিনই পরিস্কার আকাশে ভোরের রোদ দেখা দিয়েছিল। চমৎকার আবহাওয়া ছিল। তাই মেরিনা জগিং করতে বের হয়েছিল। সেদিন খবরের কাগজে খুন জখম মারামারির দুর্ঘটনা খবর ছিল খুব কম। সেদিন একটি টিয়ে পাখি পাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল ট্যা ট্যা করে। আর একটি দোয়েল শিস দিয়ে যাচ্ছিল একের পর এক। কালো গোলাপ গাছে শরতের প্রথম ফুল ফুটেছিল তাই দেখে আফরিন উল্লাসে ডাকছিল মা দেখে যাও গাছে কালো গোলাপ ফুল।
বাবাহীন পৃথিবীতে দু মাস কেটে গেল। কাটবে বলে বিশ্বাস ছিল না মেরিনার। নোটটা হাতে নিয়ে মেরিনা খুব ধীর পায়ে রান্দায় আরও আলোর মধ্যে এসে দাড়ালো। টানা হাতের লেখা গুলো খুবই জোড়ালো কোন হাত কাপেনি স্পষ্ট করে লেখা। বাগানে শুনতে পেল ফুলে ফুলে মৌমাছির শব্দ। বাড়ীর গ্যারেজের ঠিক পিছন দিকে রাজ মিস্তিরা একটা ঘর তৈরী করেছিল টিনের বাড়ি করার সময় তাদের থাকার জন্য। সেটা আর ভাঙ্গা হয়নি। আজও আছে ঘরখানা। তবে সে খানে বাড়ির অব্যাবহূত জিনিষ পড়ে থাকে। সেই ঘরের ভিতরে বিশাল এক মৌমাছির বাসা বেধেছিল।
আফসার সাহেব বেচে থাকতে রোজ ঐ চাক টা দেখে আসতো। নরম রোদে দাড়িয়ে মেরিনা একটু ভাবলো।
মরবার আগে বাবা কি একবারও ভাবেনি মেরিনার কথা। কি করে থাকবে তার মেয়েটা তাকে ছাড়া। সে খুব কাঁদবে? মেরিনার খুব কষ্ট হবে? একটুও ভাবল না বাবা?
কোকিলটা যখন আবার আর এক দফা ডাকা শুরু করলো তখন মেরিনা টের পেল সে কাঁদছে। তার চোখ বেয়ে অঝোড়ে পানি পড়ছে।
চোখের পানি মুছে দোতালায় উঠে এল। চায়ের গন্ধ পাচ্ছে। রুটি সেকার গন্ধ পাচ্ছে, বাসন কসন মাজার শব্দ কানে আসছে।
সায়লা ডায়নিং টেবিলে বসা একা। সামনে চা।
মেরিনা মায়ের সামনে কাগজটা রেখে খুব স্বাভাবিক গলায় বলল এই নাও মা বাবার সুইসাইড নোট।
সায়লা খুব অবাক হয়ে কাগজটা হাতে নিয়ে বলল, কী এটা? কী বললি?
- বাবার সুইসাইড নোট। পড়ে দেখ।
হাতটা একটু কেঁপে গেল কিনা বোঝা গেলনা। সায়লা কাগজের ভাজ টা খুলতে একটু সময় নিল। লেখাটা পড়তে প্রয়োজনের চেয়ে সময় আরও অনেকটা বেশী লাগল। তারপর উৎকন্ঠ গলায় বলল, এই তো! কোথায় ছিল এটা? কোথায় পেলি?
- একটা বইয়ের মধ্যে। সুবেদা ওটা বুক কেসে তুলে রেখেছিল।
সায়লা সভয়ে, আতঙ্কের সাথে আফসার চৌধুরীর জোরালো হাতের লেখা কয়েকটি লাইনের দিকে চেয়ে খেকে অসহায় মুখখানা তুলে মেরিনাকে যখন বলল "এখন এটা দিয়ে আর কি হবে?" ঠিক তখনই মেরিনার অনেকদিন বাদে হটাৎ অবাক হয়ে লক্ষ করল তার মা কী অসম্ভব সুন্দরী!!
ছোটোখাটো, ক্ষীনাঙ্গঅ এক মহিলা এখন মনে হচ্ছে কোন সিনেমার নায়িকা না ঠিক নায়িকা নয় অপ্সরা। হ্যা অপ্সরা তবে হুর নয়। সায়লার চেহারায় একটা আভিজাত্যের ভাব আছে। ছিমছাম গোছানো চেহারা। বেশ মার্জিত। দেখলে ভক্তি চলে আসে। হুর হুর ভাব নেই। তবে তার সৌন্দয্যের ঝাঁজ আছে, সেই সাথে আছে আক্রমন।
মেরিনা হাত বাড়িয়ে কাগজটা হাতে নিতে নিতে বলল তুমি চা খাও। এটা আমার কাছে থাকুক।
চলবে..................
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সৌমিতা ৩১/০৮/২০১৪ভাল লাগছে ।।
-
একনিষ্ঠ অনুগত ২৯/০৮/২০১৪বেশ ভালো... আর হ্যাঁ একটা কথা দোয়েল কিন্তু বর্ষাকালে ডাকে না...
-
আবু সাহেদ সরকার ২৯/০৮/২০১৪সুন্দর, পড়লাম কবি।
-
শিমুল শুভ্র ২৯/০৮/২০১৪দারুণ ভাবে এগুচ্ছে । একটা কথা জানিয়ে রাখি এখানে ও নিমন্ত্রণ দেওয়া এডমিনের নিয়মের বাইরে । ভালোবাসা জেনো ভালো থেকো ।
-
মুস্তাকিম মান্না ২৮/০৮/২০১৪মন্তব্যের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি