www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মায়াজাল২ (উপন্যাস)

শায়লা খুবই দুর্বল গলায় বলল, নিলা, এ বাড়িতে বাচ্চারা আছে। এ ধরনের কথা আর কখনও বলবে না। কারন ওদের মনে বিরূপ ধারনা জন্মাবে। আর তোমরা গায়ের মানুষ এসব অনেক কিছু তোমরা বিশ্বাস কর। কিন্তু আমরা এসব বিশ্বাস করিনা। তাই তোমাকে নিষেধ করলাম আর কখনও যেন এ ধরনের কথা না শুনি।

নিলা আর উচ্চবাচ‌্য করল না তখনকার মতো। কিন্তু ছাড়লও না। ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করল। কাজ করতে থাকে আর একা একাই বলতে থাকে কি দেখেছে। নানান ধরনের ঘটনা বলতে লাগল। নিজ চোখে দেখেছি সেটা বলতে পারবোনা। এ যে ভুতুড়ে পরিবেশ। এসব অশ‌ৈলী কান্ড....এই তো শুনলাম দুপুর বেলা খালুর ঘর থেকে খুট খাট আওয়াজ আসছে। রাতে বারান্দায় কে যেন হাটে। আমি না হয় মিথ্যাে বললাম করিম তো আর কানা নয়। সে তো নিজ চোখে দেখেছে, ঘর ছেড়ে রাতে বের হয়েছিল সিগারেট খাবে বলে, তাকিয়ে দেখে ছাদে কে যেন ঝুকে বাগানের দিকে তাকিয়ে আছে। অপঘাত বলে কথা। অপঘাতে মৃতু্য হলে তার আত্মা ঘুরে বেড়ায়।
এখন এটা কাকে বোঝাবো। আহ মরন দেখলে বলতেও পারবোনা। কবে কোন দুর্ঘটনা ঘটবে শেষে আমাকে বলতে পারবেনা যে বলিনি।

দুদিন পরে নিলা কাজ ছেড়ে দেবার হুমকি দিল কারন তার দরজায় কে যেন ধ্বাক্কা দিয়েছে রাতের বেলা। সে কে কে বলে জানতে চেয়েছে কথা বলে না তবে নিশ্বাসের শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। সে ভয়ে দরজা খুলেনি। সারারাত ভয়ে কেঁপেছে। এভাবে তো থাকা যায়না। সায়লা শুনে দিয়েছে এক ধমক।

এ বাড়িতে কেউ ভুত প্রেত বিশ্বাস করেনা। এটা ঠিক তবে আফসার সাহেব মারা যাবার পর থেকে সবাই একে একে কিছু সঙ্কচো নানান টালবাহানা করে নানা অমোঘ অযুহাত করে ঘর বদল করে ফেলল। রকি চলে এল তার মায়ের ঘরে। শায়লাও কিছু বললনা। দেখে মনে হল যেন খুশিই হল। নিলা একতলা থেকে দোতালায় আফরিনের ঘরে চলে এল। মেঝেতে বিছানা পেতে শোবে তবুও নিচে শোবেনা। করিম তার ঘর ছেড়ে একতলায় বসার ঘরে সোফা কাম বেডে বিছানা করে শুতে লাগল রাতের বেলায়।

মেরিনাও তার নিজের নিজের ঘর বদলাল। তবে সেটা বাড়ির সবার প্রতি প্রতিবাদী হয়ে। তার নিজের বাবা মারা গেছে। তার বাবা তাকে কেন ভয় দেখাবে। আর যদি তার বাবাকে সে দেখতে পায় তাতে বরং সে খুশিই হবে। কারন সে তার বাবাকে অনেক ভালবাসাতো। মৃত বাবাকে তার কোন ভয় নেই। জীবিত থাকা কালীন সে তার বাবার অনেক আদর পেয়েছে। তাই সে নিজের ঘর ছেড়ে চলে এল একতলায় তার বাবার ঘরে। যে ঘরে তার বাবা আত্মহত্যা করেছে।

শায়লা বেশ রাগ করেছিল। এটা কেমন তর পাগলামী মেরিনা। খুব খারাপ কাজ করছো তুমি। বেশী বেশী কিছুই ভালনা। সে বলেছিল মা আমি ভুত প্রেত বিশ্বাস করিনা। আর মা আমার বাবা মারা গেছে সেটা ভুলে যেওনা। বাবা মরে ভুত হয়ে আমাদের ধরতে আসবে। মা বলেছিল কিন্তু মানুষের মনের ইমপ্রেশন তার চারদিকের অ্যাটমাসফিয়ারে থেকে যায় মেরিনা। তোমার নিজের দক্ষীন খোলা ঘর থাকতে তুমি ও ঘরে যাচ্ছ কেন?
মেরিনা চুপ করে ছিল। কোন উত্তর দেয়নি। তবে মায়ের কথাও সে শোনেনি।

গত দুমাস হবে মেরিনা এ ঘরে বাস করছে। একা। সে তার বাবার খাটেই শোয়। বাবার টেবিলেই বসে তার লেখা পড়া চালাচ্ছে। সেটাও গভীর রাত অবধি। কত কথা ভাবে। গভীর রাতে যখন সব সুনসান তখন সে একা জেগে অনেক কিছু ভাবে। যেমন জন্ম কিংবা মৃতু্‌্যর কথা। কিভাবে মানুষ মারা যায়। মারা গেলে কেমন বোধ হয়। মৃত্যু দেখতে কেমন।
সে আজ অবধি পায়ের শব্দ কিংবা কাশির শব্দ শোনেনি। সিগারেটের গন্ধও পায়নি। কখনও কোন জায়গায় কোন ধরনের ছায়া মূর্তি দেখেনি। বাথরুমের টেপ থেকে পানি পড়ার শব্দও শোনেনি। এমন কোন অদ্ভুত কিছু যা অন্য কিছু মিন করে সে ধরনের কিছুও চোখে পড়েনি।

বেশ কয়েকবার সে তার বাবাকে ডেকেছেও কোন জবাব পায়নি। গভীর রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেলে ঘুমহীন মেরিনা একা একা সারাবাড়ি তন্ন তন্ন করে খুজেছে, কয়েকবার একা একা ছাদেও গেছে কখনও কিছু তার চোখে পড়েনি। একটা মূহুর্তের জন্যও তার ভয় করেনি। এমন নাগরিক জীবনে এসব কিছু নেই। মাঝে মাঝে পাহারাদারদের বাশির শব্দ আর কিছু গাড়ী হুস করে বের হয়ে যাবার শব্দ ছাড়া তেমন কোন শব্দও রাতে পাওয়া যায়না।

তবে আজ সকালের বাবার লেখা সুইসাইডাল নোটটা পাবার পর সেটা চেয়ে দেখে তার মনে হচ্ছিল বাবা যেন তার খুব কাছে। হয়ত তার সামনেই দাড়িয়ে আছে। আর এই যে, ভুতুড়ে বাতাস আজ আর কোকিলের ডাকের ভিতর দিয়ে তার বাবাই যেন তাকে কিছু বলতে চাইছে। দরজায় পর্দাটা যের একটু বেশীই দোল খেল................

চলবে।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৬১৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৭/০৮/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সাইদুর রহমান ২৮/০৮/২০১৪
    আপনার উপন্যাস পড়ি
    সময় পেলেই। বাহ কবিতা
    উপন্যাস এতো কিছু কিভাবে
    ম্যানেজ করেন, মৃদুল ভাইয়া ?
    শুভেচ্ছা।
    • অনেক ধন্যবাদ। পরবর্তী পর্ব পড়ার অনুরোধ রইল। কারন এক সাথে এত গুলো লেখা সম্ভব নয়। আর আমি এ উপন্যাস এখানে বসেই লিখছি। দোয়া করবেন।
  • একনিষ্ঠ অনুগত ২৮/০৮/২০১৪
    নতুন কিছু চরিত্র এসে গেল পূর্বপরিচিতির আগেই। তাই ধরতে একটু কষ্ট হচ্ছিল। যাইহোক ভালো এগুচ্ছে গল্প। সামনের পর্ব পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
    • কাহিনীটা সাজিয়েছি ওভাবেই। সামনেই দেখবেন সব পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে কারন একেক গল্প একেক ভাবে লিখতে ইচ্ছে হয়। তবে যেহেতু একটা পরিবাবের কথা অতএব নিশ্চই ধরে ফেলেছেন তারা ভাই বোন কজন। বা পরিবারের বর্ননা কেমন। ভাল থাকুন।
  • সৌমিতা ২৮/০৮/২০১৪
    খুব সুন্দর ভাবে গল্প এগিয়ে চলেছে তার পথে ।। আমি কবিতা ক্লাবে কিছুতেই লগ ইন করতে পারছি না ।। ভাবলাম পাসোয়ারড ভুলে গেছি নতুন দিলাম সেটা মেইলে এল, কিন্তু তাও লগ ইন করা যাচ্ছে না ।।
    • হুম ওখানে ঢুকতে একটু কষ্ট হয় তারপর একবার ঢুকে গেলে পরে আর সমস্যা হয় না। ভালবাসা রইল। ভাল থেক।
      • সৌমিতা ৩১/০৮/২০১৪
        না, আমার লগ ইন হচ্ছে না ।। এডমিন কে ফেবুতে মেসেজ দিলাম উত্তর পেলাম না ।।
        • সমস্যা কি বলতো। তুমি হয়ত পাসওয়ার্ড ভুলে গেছ। অামার কবিতা কিন্তু সিলেক্ট হয়েছে যা লাগাতার শো করছে দেখেছো।
          • সৌমিতা ০২/০৯/২০১৪
            না আমি পাসওয়ারড ভুলে গেছি ভেবে ওটা forgot password করেওছি, নতুন দিয়েছি আমার আইডি তে মেলও এসেছে কিন্তু সেটা দিয়েও খোলা যাচ্ছে না, আগে ফেবুতে এডমিন কে জানালে উত্তর পেতাম, এখন তাও পাই না।। জানি না কেন আমায় চাইছে না ।। না দেখতে পাই নি, তবে অনেক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা ।। আসলে ভেবেছিলাম এখানের জন্য গল্প লিখব আর কবিতা ওখানেই দেবো, তাই চেষ্টা করছিলাম ।।
  • শিমুল শুভ্র ২৮/০৮/২০১৪
    খুব সুন্দর করে এগুচ্ছে বেশ লাগছে কিন্তু ।
  • নাবিক ২৮/০৮/২০১৪
    ভালো লাগছে..চালিয়ে যান|
  • সুশান্ত মান্না ২৮/০৮/২০১৪
    ধ্রুব সত্য
 
Quantcast