মায়াজাল-১ (উপন্যাস)
আফসার চৌধুরী মারা গেছে মাস দুয়েক আগে। তখন তার মৃত দেহের অাশেপাশে বা কোন কাগজে সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি। তাই বিস্তর ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। সবাই বলা বলি করছিল কেন সে মারা যাবে। কি কারন থাকতে পারে। কেউ কেউ সন্দেহের দৃষ্টিতেও দেখেছে। অনেকেই মনে করছিল কেউ হয়ত মেরেছে। গুলশান থানার পুলিশ বেশ ঝামেলা পাকিয়েছিল। মেডিকেল হাসপাতালে পোষ্ট মার্টম রিপোর্ট দিল বিষ পানে মৃতু্য, তবুও পুলিশ লাশ দিতে চায়না। নানান টালবাহানা শেষে আফসার চৌধুরীর প্রভাবশালী বন্ধুরা থানাকে বেশ ভাল নাড়া দিয়ে তবেই মৃতদেহ পুলিশ হেফাজত থেকে উদ্ধার করে আনে। বিস্তর ঝামেলা পোহাতে হয়েছে তাদের।
মেরিনা ভোরের ফুটফুটে আলোয়, কোকিলের ডাক আর বাতাসের শব্দ শুনতে শুনতে তার বাবার সুইসাইড নোটটার দিকে সম্মোহিতের মতো চেয়ে থাকে। কপালের উপর চুলের ঝাপটা নেমে আসছে মাঝে মাঝে। সে কি তার বাবার ইষৎ ভগ্ন কিন্তু গুরু গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছে? -লাইফ ওয়াজ অল ফান, ইট ইজ ফানিয়ার টু টেক ইট অ্যাওয়ে। .......বাই।
ওয়ার্ড ওরত্থ ক্লাসিক প্রকাশিত কারলওটি ব্রন্টির 'সারলি' বইটি এই ভোরে খুজে পাওয়ার কোন প্রয়োজন ছিল না মেরিনার। গল্প সে পড়ে না কিংবা কবিতা। দু মাস বাদে আজই আবার ভোর রাত থেকে সে শুরু করেছিল তার ফিজিক্যাল ওয়ার্ক আউট। প্রতিদিন সে দু থেকে তিন কিলোমিটার দৌড়ায় লেকের পাড় ধরে। একমাস বিরতির জন্য আজ অবশ্য অর্ধেকেও পারল না। হাফাতে লাগল। উরু আর পায়ের গোড়ালী ব্যাথায় অবশ করে আনল। সেই সাথে হাপ। বুকটা মনে হয় বেশী উপর নিচ করছে আর হাতুর পেটানোর মত র্হদপিন্ড লাফাচ্ছে আর শব্দ করছে। সেই সাথে একটা ক্লান্তি, হতাশা, ঘাম, বিরক্তি। মনে হচ্ছিল বৃথা শ্রম। তাই বাড়ী ফিরে বারান্দায় স্কিপিং করছিল অার মনে হচ্ছিল বাদরের মত করে লাফাচ্ছে সে। ধ্যাৎ কি হবে এসব করে। ভাল লাগছিল না। তাই ঘরে ঢুকে ফ্যান ছেড়ে মেঝেতে গা এলিয়ে সোজা শুয়ে পড়ল। গরম লাগছিল খুব। তাই মেঝের ঠান্ডাটা বেশ ভাল লাগছিল। মেঝেতে শুয়ে ছিল বলেই দেখতে পেল বিয়য়টা। বুক কেসের একেবারে নিচের তাকে একটা বই উল্টাে ভাজ করে রাখা। মেরিনা গোছানো মেয়ে তাই সব কিছু গোছানোই থাকে বাড়ীতে। এতগুলো কাজের লোক তাদের। অথচ একটা বই এভাবে উল্টো করে রাখা কেন থাকবে। মেঝেতে শুয়েই গড়িয়ে গিয়ে সে বুক সেল্ফের কেস খুলে বইটা সোজা করে রাখতে গিয়ে দেখল একটা সাদা কাগজ এর কোন বের হয়ে আছে। তাই সে কাগজটা বের করে ভাজ খুলতেই তার চক্ষু স্হির হয়ে গেল।
এই আবিস্কারের বর্তমানে কোন মূল্য নেই। কারন তার বাবার দাফন হয়ে গেছে দু মাস হয়ে গেছে। শরীর মিশে গেছে মাটিতে। তবুও কেন জানি মেরিনার মনে হল সে তার বাবার উপস্থিতি টের পাচ্ছে। বাবা যেন তার কাছেই আছে। এখন হয়ত তার পাশে। আবার সেই দমকা বাতাস দোলা দিল শরীরে।
এ বাড়ীতে কারও কোন বিষয় নিয়ে মাথাব্যাথা নেই। সবাই যার যার মত আছে। তবে মন সবার খারাপ, কেউ কাউকে বুঝতে দিতে চায় না। আবার কেউ কাউকে ঘাটাতেও চায়না। তবে একদিক দিয়ে সবাই এক, তা হল নামায, রোজা, এসব নিয়ে কারও কোন মাথাব্যাথা নেই। ইহকাল পরকাল যেমন কেউ বিশ্বাস করেনা তেমনি ভুত প্রেত কেও। এটাকে নাস্তিক বলা যায়না তবে একটু হচ্ পচ্ । তবে আল্লাহ বা অন্য কোন ধর্ম নিয়ে তারা ভাবেনা। মেরিনার বাবা মারা যাবার পর তার লাশের পাশে কোরআন শরীফ পড়েছে মাদ্রাসার হুজুরেরা। তবে সবাই যাবার পর সব নরমাল হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে একটু আধটু কান্নাকাটি। যখন আত্মীয় স্বজন রা আসছিল। চারদিনের দিন মিলাদ হল। শোক, কান্না, আত্মীয় স্বজন সমাগম ইত্যাদির পর ছোট চাচা আজগর চৌধুরী, যিনি ইংল্যান্ড থেকে এসছিলের দিন পনেরো আগে। এখন যাবার সময় হয়ে গেছে অথচ এবার সে দেশে আসার পর ভাইএর মৃত লাশ দেখে গেল। সেটাও অপমৃতু্য। ব্রেকফাষ্টের টেবিলে সে বলল, গতরাতে আমার ঘুম হলনা। কেমন একটা শব্দ। অ্যান্ড আই হার্ড সামবডি ওয়াকিং অন দা রুফ।
আশ্চর্যের বিষয় হল এমন একটা কথায় কেউ কোন প্রতিবাদ করলনা। সবাই চুপ করে রইল।
বিকেলে রকি বলল, তোমাকে বলিনি মা, আই হিয়ার সামবডি কাশি দিচ্ছিল তখন মিডনাইট।
মেরিনার মা সায়লা চৌধুরী কেমন যেন বিবর্ণ হয়ে বলল, ও সব কিছু না। এর বেশী বাস্তব সম্মত ব্যাখ্যা সায়লা দিতে চেষ্টা করলনা।
তবে সবচেয়ে বেশী প্রতিক্রিয়া দেখা গেল নিলার মাঝে। সে এ বাড়ির সবক্ষনিক কাজের মানুষ। সাভারের এই চব্বিশ পচিশ বছরের এই যুবতীটি বেশ স্পষ্ট ভাষায় একদিন বলল, ও খালাম্মা, খালুজান কিন্তু এখনও আছে। কাল দেখতে পেলাম দোতালার ভিতরের বারান্দায় রেলিং ধরে ঝুকে দাড়িয়ে কে যেন সিগারেট খাচ্ছে। আমি দেখতেই আমার দিকে তাকালো। আমি দৌড়ে পালালাম। খালু যদি না থাকে তাহলে ঐ লোকটা কে? তখন রাত দুইটা আড়াইটা হবে। খালুজানের মতই মোটা সোটা..........!!!!!
চলবে................
মেরিনা ভোরের ফুটফুটে আলোয়, কোকিলের ডাক আর বাতাসের শব্দ শুনতে শুনতে তার বাবার সুইসাইড নোটটার দিকে সম্মোহিতের মতো চেয়ে থাকে। কপালের উপর চুলের ঝাপটা নেমে আসছে মাঝে মাঝে। সে কি তার বাবার ইষৎ ভগ্ন কিন্তু গুরু গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছে? -লাইফ ওয়াজ অল ফান, ইট ইজ ফানিয়ার টু টেক ইট অ্যাওয়ে। .......বাই।
ওয়ার্ড ওরত্থ ক্লাসিক প্রকাশিত কারলওটি ব্রন্টির 'সারলি' বইটি এই ভোরে খুজে পাওয়ার কোন প্রয়োজন ছিল না মেরিনার। গল্প সে পড়ে না কিংবা কবিতা। দু মাস বাদে আজই আবার ভোর রাত থেকে সে শুরু করেছিল তার ফিজিক্যাল ওয়ার্ক আউট। প্রতিদিন সে দু থেকে তিন কিলোমিটার দৌড়ায় লেকের পাড় ধরে। একমাস বিরতির জন্য আজ অবশ্য অর্ধেকেও পারল না। হাফাতে লাগল। উরু আর পায়ের গোড়ালী ব্যাথায় অবশ করে আনল। সেই সাথে হাপ। বুকটা মনে হয় বেশী উপর নিচ করছে আর হাতুর পেটানোর মত র্হদপিন্ড লাফাচ্ছে আর শব্দ করছে। সেই সাথে একটা ক্লান্তি, হতাশা, ঘাম, বিরক্তি। মনে হচ্ছিল বৃথা শ্রম। তাই বাড়ী ফিরে বারান্দায় স্কিপিং করছিল অার মনে হচ্ছিল বাদরের মত করে লাফাচ্ছে সে। ধ্যাৎ কি হবে এসব করে। ভাল লাগছিল না। তাই ঘরে ঢুকে ফ্যান ছেড়ে মেঝেতে গা এলিয়ে সোজা শুয়ে পড়ল। গরম লাগছিল খুব। তাই মেঝের ঠান্ডাটা বেশ ভাল লাগছিল। মেঝেতে শুয়ে ছিল বলেই দেখতে পেল বিয়য়টা। বুক কেসের একেবারে নিচের তাকে একটা বই উল্টাে ভাজ করে রাখা। মেরিনা গোছানো মেয়ে তাই সব কিছু গোছানোই থাকে বাড়ীতে। এতগুলো কাজের লোক তাদের। অথচ একটা বই এভাবে উল্টো করে রাখা কেন থাকবে। মেঝেতে শুয়েই গড়িয়ে গিয়ে সে বুক সেল্ফের কেস খুলে বইটা সোজা করে রাখতে গিয়ে দেখল একটা সাদা কাগজ এর কোন বের হয়ে আছে। তাই সে কাগজটা বের করে ভাজ খুলতেই তার চক্ষু স্হির হয়ে গেল।
এই আবিস্কারের বর্তমানে কোন মূল্য নেই। কারন তার বাবার দাফন হয়ে গেছে দু মাস হয়ে গেছে। শরীর মিশে গেছে মাটিতে। তবুও কেন জানি মেরিনার মনে হল সে তার বাবার উপস্থিতি টের পাচ্ছে। বাবা যেন তার কাছেই আছে। এখন হয়ত তার পাশে। আবার সেই দমকা বাতাস দোলা দিল শরীরে।
এ বাড়ীতে কারও কোন বিষয় নিয়ে মাথাব্যাথা নেই। সবাই যার যার মত আছে। তবে মন সবার খারাপ, কেউ কাউকে বুঝতে দিতে চায় না। আবার কেউ কাউকে ঘাটাতেও চায়না। তবে একদিক দিয়ে সবাই এক, তা হল নামায, রোজা, এসব নিয়ে কারও কোন মাথাব্যাথা নেই। ইহকাল পরকাল যেমন কেউ বিশ্বাস করেনা তেমনি ভুত প্রেত কেও। এটাকে নাস্তিক বলা যায়না তবে একটু হচ্ পচ্ । তবে আল্লাহ বা অন্য কোন ধর্ম নিয়ে তারা ভাবেনা। মেরিনার বাবা মারা যাবার পর তার লাশের পাশে কোরআন শরীফ পড়েছে মাদ্রাসার হুজুরেরা। তবে সবাই যাবার পর সব নরমাল হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে একটু আধটু কান্নাকাটি। যখন আত্মীয় স্বজন রা আসছিল। চারদিনের দিন মিলাদ হল। শোক, কান্না, আত্মীয় স্বজন সমাগম ইত্যাদির পর ছোট চাচা আজগর চৌধুরী, যিনি ইংল্যান্ড থেকে এসছিলের দিন পনেরো আগে। এখন যাবার সময় হয়ে গেছে অথচ এবার সে দেশে আসার পর ভাইএর মৃত লাশ দেখে গেল। সেটাও অপমৃতু্য। ব্রেকফাষ্টের টেবিলে সে বলল, গতরাতে আমার ঘুম হলনা। কেমন একটা শব্দ। অ্যান্ড আই হার্ড সামবডি ওয়াকিং অন দা রুফ।
আশ্চর্যের বিষয় হল এমন একটা কথায় কেউ কোন প্রতিবাদ করলনা। সবাই চুপ করে রইল।
বিকেলে রকি বলল, তোমাকে বলিনি মা, আই হিয়ার সামবডি কাশি দিচ্ছিল তখন মিডনাইট।
মেরিনার মা সায়লা চৌধুরী কেমন যেন বিবর্ণ হয়ে বলল, ও সব কিছু না। এর বেশী বাস্তব সম্মত ব্যাখ্যা সায়লা দিতে চেষ্টা করলনা।
তবে সবচেয়ে বেশী প্রতিক্রিয়া দেখা গেল নিলার মাঝে। সে এ বাড়ির সবক্ষনিক কাজের মানুষ। সাভারের এই চব্বিশ পচিশ বছরের এই যুবতীটি বেশ স্পষ্ট ভাষায় একদিন বলল, ও খালাম্মা, খালুজান কিন্তু এখনও আছে। কাল দেখতে পেলাম দোতালার ভিতরের বারান্দায় রেলিং ধরে ঝুকে দাড়িয়ে কে যেন সিগারেট খাচ্ছে। আমি দেখতেই আমার দিকে তাকালো। আমি দৌড়ে পালালাম। খালু যদি না থাকে তাহলে ঐ লোকটা কে? তখন রাত দুইটা আড়াইটা হবে। খালুজানের মতই মোটা সোটা..........!!!!!
চলবে................
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মোহাম্মদ হাবিব বেন আব্দুস ছোবান ৩১/০৮/২০১৪উপন্যাসটি PDF আকারে দেবেন প্লিজ, অনেক ভালো হোয়েছে।
-
সৌমিতা ২৭/০৮/২০১৪হুম রোমাঞ্চেভরা গল্প, অনেক রহস্য, বেশ লাগছে ।।
-
Shopnil Shishir(MD.Shariful Hasan) ২৭/০৮/২০১৪chaliye jan asha kori khub sundor vave sash hobe
-
সুশান্ত মান্না ২৭/০৮/২০১৪গুরু চালিয়ে যাও ,দারুন........................।।