ভূতুড়ে জানালা (৪)
তবে কি বেচারী এখান দিয়েই পালিয়েছে? ভাবতে ভাবতে ভাঙ্গা শিকের মধ্য দিয়ে উকি মেরে চাই । কিন্তু অন্ধকার থাকায় কিছুই দেখলাম না । এবার শাড়ির প্রান্তটা ধরে টান দেই । বেশ ভারি ভারি মনে হল । বুঝতে আর বাকি রইল না ঘটনাটা ।’ বলে অঝোড়ে কাঁদতে লাগলেন সোবহান সাহেব ।
আমি বললাম, ‘কাঁদবেন না যা হয়ে গেছে……..।’ কিন্তু আমিও আর বলতে পারিনা । আমার চোখেও এতক্ষণে পানি এসে গেছে ।
সোবহান সাহেব কান্নাজড়ানো কন্ঠে বললেন, ‘বাকিটা না হয় কাল শুনবেন । আপনার নিশ্চয়ই ঘুম পেয়েছে ।’
আমি বললাম, ‘না না আপনি বলেন । আমার বেশ আগ্রহ হচ্ছে ।’
‘ঠিক আছে তবে শুনুন । নিজেকে খুব অপরাধী মনে হতে লাগল । আমার জন্যই আজ মেয়েটাকে এক বুক স্বপ্ন নিয়েই পৃথিবী ছেড়ে যেতে হল ।এখন আমি কি করব? আত্নহত্যা? হ্যা আমাকে তাই করতে হবে ।কিন্তু আমার মত কাপুরুষ তাও করতে পারল না ।পারুলের টেবিলের উপর একটি চিঠি পেয়েছিলেয়াম । তাতে লেখা ছিল আমি চলে যাচ্ছি বাবা । তুমি বলেছিলে জোর করে আমাকে বিয়ে দিবে । কিন্তু সুমন ছাড়া কারো কথা আমি ভাবতেও পারি না । তাই চলে গেলাম । তবে এই যাওয়াই শেষ যাওয়া নয় । যখন আমাকে মনে পড়বে এই জানালার পাশে এসে ডেকো । দেখবে আমি তোমার সাথে কথা বলছি ।’
‘আমার স্ত্রীও দিন দিন জানি কেমন হয়ে যেতে থাকে । কারো সাথে কথা বলত না তেমন একটা । খেত না ঠিকমত । একদিন অফিস থেকে ফিরে এসে দেখি জানালার পাশে পড়ে আছে আমার স্ত্রী তবে দেহটাতে আর প্রাণ নেই ।’
‘আমি কখনো খুলে দেখিনি জানালাটা । জানিনা ওই জানালাটা খুললে সত্যিই আমার মেয়ের কথা শুনতে পারব কিনা । মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় ঠিকই । কিন্তু আমি কোন মুখ নিয়ে আমার মেয়ের সামনে দাঁড়াব । আমি যে ওকে নিজ হাতে বিষ খাইয়ে মেরেছি । আমি যে মহাপাপী । আমি যে...……..…।’ কান্নায় কথা জড়িয়ে যায় সোবহান সাহেবের ।
আমি জিজ্ঞেস করি, ‘আর এটাই কি সেই জানালা ?’
‘হ্যা ফয়েজ সাহেব এটাই সেই জানালা । আপনি ইচ্ছে করলে চলে যেতে পারেন । আমি আপনার ভাড়ার টাকাটা ফেরত দিয়ে দেব । তবে মনে হয় ওই জানালা না খুললে আপনার কোন ক্ষতি হবে না । আপনি কি থাকবেন ?
‘হ্যা অবশ্যই । এ পর্যন্ত যখন কিছুই হয়নি ভবিষ্যতেও আর কিছু হবে বলে মনে হয়না ।’
একটু থেমে আবার বলি, ‘আপনার চা তো জুড়িয়ে গেছে । আমি বরং আরেক কাপ করে আনি ।’
‘তার আর প্রয়োজন হবে না । চা এখনো জুড়ায়নি ।’
কাপ ধরে দেখলাম, ঠিকই তো চা এখনো গরম রয়েছে ।
অবাক হয়ে বললাম, ‘এটা কি করে সম্ভব? কতক্ষণ ধরে গল্প করছি অথচ…………!’
‘সেটা আরেক রহস্য ফয়েজ সাহেব । অনেকদিন এ রুমে পত্রিকা পড়তে পড়তে চা খাওয়ার কথা ভুলে গেছি । কিন্তু যখন মনে হয়েছে তখন দেখেছি চা জুড়ায়নি ।’
বিরবির করে বলি আমি, ‘How is it possible?’
কয়েকদিন জানালার কাছে যাইনি । কেমন যেন ভয় ঢুকে গিয়েছিল মনে । তারপর একদিন গভীর রাতে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম জানালার দিকে ।
(চলবে.........।)
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
হাসান কামরুল ২৭/০১/২০১৫আমার ভালো লেগেছে। চলতে থাকুক।
-
সায়েম খান ২৫/০১/২০১৫অদ্ভুত গল্প।
-
রাফি বিন শাহাদৎ ২১/০১/২০১৫রহস্যের লুকোচুরি ভাল লাগছে আমার
-
সবুজ আহমেদ কক্স ২১/০১/২০১৫প্রিয় কবি অ দাদা , আমি এর আগে ৩ টি লিখা পড়েছি ফাইন । ধন্যবাদ